দেশপ্রেম

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: সোম, ২৪/০৩/২০১৪ - ৫:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুমায়ুন আজাদের দেশপ্রেম কবিতা টি এই কয়েক দিন মাথার ভিতর ঘুরছে। কতটা বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে হুমায়ুন আজাদ এই কবিতাটি লিখেছেন এখন তা বুঝতে পারি। আসলে নিজেই এখন সেই চরম বিরক্তি, হতাশা আর ঘৃনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।

আপনার কথা আজ খুব মনে পড়ে, ডক্টর জনসন।
না, আপনি অমর যে-অভিধানের জন্যে, তার জন্যে নয়, যদিও আপনি
তার জন্যে অবশ্যই স্মরণীয়। আমি অত্যন্ত দুঃখিত তার জন্যে
আপনাকে পড়ে না মনে। আপনাকে মনে পড়ে, তবে আপনার
কবিদের জীবনীর জন্যেও নয়, যদিও তার জন্যেও আপনি অবশ্যই
স্মরণীয়। আমি আবার দুঃখিত, ডক্টর জনসন। আপনার কথা মনে পড়ে
সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে; আপনার একটি উক্তি আমার ভেতরে বাজে
সারাক্ষণ। আড়াই শো বছর আগে একবার আপনার মুখ থেকে
বের হয়ে এসেছিলো একটি সত্য যে দেশপ্রেম বদমাশদের
শেষ আশ্রয়। আপনার কাছে একটি কথা জানতে খুবই ইচ্ছে করে
স্যামুয়েল জনসন;-
কী ক’রে জেনেছিলেন আপনি
এই দুর্দশাগ্রস্ত গ্রহে একটি দেশ জন্ম নেবে একদিন,
যেখানে অজস্র বদমাশ লিপ্ত হবে দেশপ্রেমে? তাদের মনে ক’রেই কি
আপনার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিলো এই সত্য?
ডক্টর জনসন, আপনি আনন্দিত হবেন জেনে যে বদমাশরা
এখানে দেশের সঙ্গে শুধু প্রেমই করছে না, দেশটিকে
পাটখেতে অলিতে গলিতে লাল ইটের প্রাসাদে নিয়মিত করছে ধর্ষণ।

"দেশপ্রেম"
কাব্যগ্রন্থঃ 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু'

হুমায়ূন আজাদের এই কবিতাটি এখন চরম সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ। কোটি টাকা খরচ করে লক্ষ মানুষ দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বিশ্বরেকর্ড করার প্রতিযোগিতায় নামছি আমরা। দেশপ্রেম ও তাহলে এখন প্রতিযোগিতার বিষয়? বাঙালিই যেন পৃথিবীর সেরা দেশপ্রেমিক এটা প্রমাণ করতেই হবে এই পণে নেমেছে সরকার। কিন্তু সত্যি হলো বাঙালি মোটেও পৃথিবীর সেরা দেশপ্রেমিক দেশ নয়। এখনো এই দেশে হাজার হাজার মানুষ ভিনদেশী পতাকা নিজের মাঠে নিয়ে খেলা দেখতে যায়, মুখে নির্লজ্জের মতো সেই সব পতাকা আঁকে, নিজের বাড়ির ছাদে ভিনদেশী পতকা উড়ায় দিনের পর দিন। এগুলো কোনটাই করে তারা লজ্জিত হয় না কোনদিন। নিজেদের সংস্কৃতিকে এখানে বেশি ভাগ মানুষ ধারণ করেনা নিজের মাঝে, নিজেদের সঙ্গীত, চলচ্চিত্র কিংবা নাটক নিয়ে নাক সিটকায় আর মজে থাকে ভিনদেশী সংস্কৃতিতে।

একদিন জাতীয় সঙ্গীত গাইলে যেমন কেউ দেশপ্রেমিক হয় না তেমনি একদিনে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ায় দেশপ্রেমিক জাতি প্রমাণিত হয়না. আর এভাবে শিশুর মাঝে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দেওয়া যাবে এমনটাও আমি বিশ্বাস করি না। ছোটবেলা থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দিতে না পারলে বড় হয়ে যতই জাতীয় সংগীত চর্চা করা হোক তাতে কোন ফল আসবে না। যদি দেশপ্রেমকে সর্বক্ষেত্রে সমভাবে জাগ্রত করতে চান তাহলে সবার আগে মাদ্রাসাগুলোতে প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতা মূলক করুন। বিস্ময়কর হলেও সত্য বাংলাদেশের কোন মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসার শিশু ছোটবেলা থেকেই জাতীয় সঙ্গীত থেকে দূরে থাকবে, জাতীয় পতাকা আর দেশের ইতিহাস থেকে দূরে থাকবে আর আপনি আশা করবেন তারা সবাই খুব দেশপ্রেমিক হবে সেটা ভুল। আর ঠিক সেই কারনেই মাদ্রাসা পড়ুয়া কমবেশী সবাই তাই পাপিস্থান সাপোর্ট করে, আরব বিশ্ব-আরব বিশ্ব করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। সঠিক বয়সে সঠিক জায়গায় পরিবর্তনের বীজ (দেশপ্রেম) বপন করতে না পারলে কখনো ভিনদেশী প্রেমী হওয়া বন্ধ করা যাবে না. তাই সবার আগে মাদ্রাসাগুলোতে প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত চর্চা বাধ্যতামূলক করুন । এর পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম এবং শহরে বাসা বাড়িতে অবস্থিত কিন্ডার গার্ডেনেও এই আইনের সঠিক প্রয়োগ করুন। তাহলেই হয়তো নিজের মাঠে ভিনদেশী পতাকা হাতে দেখার লজ্জা আর পেতে হবে না।

মাসুদ সজীব


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

৫ তারা

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দাদা

মাসুদ সজীব

রংতুলি এর ছবি

চলুক চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

মাসুদ সজীব

rubai এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মেঘলা মানুষ এর ছবি

খুবই স্পর্শকাতর বিষয় আর ব্যস্ততার কারণে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকেও একটু দূরে ছিলাম -তাই সবকিছু না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।

তবে, আপনার সাথে আমি একমত, মাসুদ সজীব। সব বাংলাদেশিরাই সেরা দেশপ্রেমিক না,
তাহলে, বিদেশে কেউ কোন ক্রিকেটারকে বাংলাদেশি না মনে করে পাকিস্তানি মনে করলে সেকথা সানন্দে পত্রিকায় বলে বেড়াত না। (নাম মনে পড়ছে না আমাদের ক্রিকেটারটির, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাই যাঁর দায়িত্ব হবার কথা ছিল ।) তাহলে, কেউ ভারতীয় বা পাকিদের দেখলে নিজের হিন্দি/ঊর্দূ দক্ষতার পরীক্ষা দিতে বসত না।
তাহলে, একই মানে এবং দামে বাংলাদেশি পণ্য পেলেও বিদেশি জিনিসের পেছনে ছুটত না।
তাহলে, যোগ্য লোকজন থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশিদের কাজ করতে ডেকে আনত না।
তাহলে, কোন বাচ্চা বাংলা না শিখে বিদেশি ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠলে বাহবা দিতে যেতাম না।
তাহলে, অন্তত এখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলে দেশটাকে ময়লা করে ফেলতাম না।

সবকিছু নিয়েই কিছু কিছু অত‌্যুজ্জ্বল বিন্দু ব্যতীত আমাদের সার্বিক দেশপ্রেমের চিত্র বেশ করুণ। আমরা ভুলে যাই, বাংলাদেশের শত সহস্র সমস্যার জন‌্য বাংলাদেশ দায়ী না; দায়ী আমরাই -আমাদের মত নাগরিকেরাই যারা যার যার জায়গায় বসে দেশের জন্য যা যা করা দরকার ছিল, তা করতে পারিনি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা সামনে নিয়ে আসার জন্য।

ভাল থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ও শুভেচ্ছা আপনাকেও।

মাসুদ সজীব

guest_writer এর ছবি

চলুক চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সব কিছুরই বাণিজ্যকিকরণ ভাল না। তবে বেড়ালের গলাতে ঘন্টি বাধবে কে ভাই?

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

জাতীয় সঙ্গীত চর্চা বাধ্যতামূলক করা অবশ্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তাহলেই যে সবাই নিজের দেশকে মন দিয়ে ভালবাসবে তা মনে হয়না আমার। সমস্যাটা আরও গভীরে।
নিজের দেশের প্রতি ভালবাসা তো মানুষের এমনি আসার কথা কিভাবে কিছু মানুষের আসেনা বুঝিনা।
ছোটতে আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে রোজ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু সেসময় অনেককেই দেখতাম বিরক্ত হত। সুতরাং শুধু জাতীয় সঙ্গীত গাইলে হবেনা, দেশ আমাদের কতখানি সেটা ভিতর থেকে অনুভব করতে হবে। আসলে সব কিছুর শুরু করা উচিত একটা শিশুর জন্মের পর থেকেই। কোন বাচ্চা যদি একদম ছোট থেকে তার পরিবারের সদস্যদের ভালবাসার সাথে সাথে দেশকেও ভিতরে লালন করতে শেখে তাহলেই অনেক সমস্যার এমনিতেই সমাধান হয়।
তবে আপনার বক্তব্যর সাথেও একমত।

এমন লেখা আরও আসুক।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাসুদ সজীব

তাহসিন রেজা এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আয়নামতি এর ছবি

বিশ্ব রেকর্ডের এই ব্যাপারটায় একদম মত নেই আমার।
ধরে বেঁধে কী আর ভালোবাসা শেখানো যায়! তোতাপাখি বানানো যায় হয়ত বা।
সব মাদ্রাসার এই অবস্হা!
জাতীয় ইস্যুতে ঐক্য না থাকলে দেশের প্রতি কিভাবে ভালোবাসা জন্মানো সম্ভব জানিনা।
জাতীয় সঙ্গীত একটা দেশের জাতীয় ইস্যু- নাকি ভুল জানি আমি চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লিখেছেন চলুক ।খুব খারাপ/বিরক্ত লাগে যখন দেখি যারা জাতীয় সংগীতকে একবার হিন্দুয়ানী সংগীত বলে দাবি করে আবার তারাই ফেসবুকে স্টেটাস দেয় যে এই গান তাদের তাদের মন ও শরীরকে শিহরিত করে বা goose bumps এর জন্ম দেয়। এইসব লোক একবার বলে হিন্দি/উর্দু বলা খারাপ কিছু না আবার এরাই ফেসবুকে স্টেটাস দেয় যে টি-২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী শিল্পীদের অবমাননা করা হয়েছে।এরা বোঝেনা যে ভাষা দিয়েই শুরু হয় একটা জাতিকে ছোট করে দেখার, জুলুম করার প্রথম ধাপ, আর এই জুলুমকে রুখতেই ৫২-এর ভাষা আন্দোলন হয়েছিলো । আমরা শাহরুখ খাঁ, এ আর রহমান বা সনু নিগামকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আমাদের দেশে আনি আর ওদের সাথে আমরা আহলাদে গদ গদ হয়ে হিন্দিতে কথা বলি । আমরা যদি আমাদের শিল্পীদের নিজেরাই সম্মান না দেই, তো ওরা কি আমাদের বাংলাদেশী শিল্পীদের সম্মান দিবে ? এই সব বাংলাদেশীরাই মুক্তি বাহিনীর ভুমিকা নিয়ে সন্দিহান, আহলাদে গদ গদ হয়ে ভারতীয়দের কাছে বলে ভারতের বিমান বাহিনীর সহযোগিতা না পেলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। আবার এরাই ফেসবুকে স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা ধরনের দেশ প্রেম বিষয়ক স্টেটাস দেয় । আমাদের আত্মসম্মান বোধের খুবই অভাব । তো কারা আমাদের সম্মান দেবে ?

Hudai deshpremi

অতিথি লেখক এর ছবি

১০০ ভাগ সহমত চলুক
ইসরাত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।