বেচুবাবুর রোজনামচা্-- বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ধাপে গেলে বৈশ্বিক হওয়া যায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৪/২০১৪ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বি.দ্রঃ এই পোস্ট শুধুমাত্র মারাত্মকভাবে কনফিউজডদের জন্য প্রযোজ্য।
==========

পেপারে প্রায় একটা বিজ্ঞাপণ দেখি।
" অস্ট্রেলিয়া যেতে চান? এক পা এখানে রাখুন, পরের পা মেলবোর্নে "
হাসি... কিন্তু আবার এইটাও ভাবি, নিশ্চয় বাজারে অমন ডিমান্ড আছে বলেই এই ধরণের বিজ্ঞাপণ প্রকাশিত হয়।

আমি ভাই গরীব মানুষ। এমন টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়া পোষাবে না আমার। সনাতনি পদ্ধতি মেনে ঐ সাবজেক্ট দেখে ঘেঁটে ঘেঁটে বিশ্ববিদ্যালয় বের করে প্রফেসর এর কাছে মেইল করে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই আমার। কিন্তু ওটাও তো, একটা জিনিসে হবে না, অনেক কিছু লাগে। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস, মোটামুটি ভালো রেজাল্ট, জব এক্সপেরিয়েন্স, ভালো রেফারেন্স, ভালো রাইটিং, এই সেই অনেক কিছু...

এগুলো শুনতে যতোটা ভয় লাগছে, ততোটা কিন্তু নয়। হলে সারা বিশ্ব এমন করে যেতো না, সবাই ঐ এক পা রেখে রেখে মেলবোর্ন যেতো।বরং এটা অনেক আশাব্যাঞ্জক যে এখন মোটামুটি অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখছি এই ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন। ভাবছেন কি করা যায়, কি করা যায়।

কিন্তু আবার একটা উল্টো দশাও দেখছি। ছুটতে গিয়ে অনেকেই গুলিয়ে ফেলছেন কয়েকটা বিষয়ে এবং ক্রমশ জটিল করে ফেলছেন সব।

অনেকেরই মনে এখন একটা বদ্ধমূল ধারণা এক্সট্রা কারিকুলার আর আইইএলটিস এই প্রধান। ঐ আইইএলটিস এমনেও দিলে হবে, অমনেও দিলে হবে, কিন্তু এক্সট্রা কারিকুলার চাই...অনেক অনেক অনেক...

ফলাফল-- একই মানুষ ডিবেট কম্পিটিশান আয়োজন করে, আবার একই সাথে শোকশোভায় কামলা খাটে।
মুখে মুখে শুধু একটা কথা-- " আমি ট্রু ভলান্টিয়ারিং এর নেশায় এসেছি" ( যদিও এদের ৯০% কে সার্টিফিকেট না দিলে আপনাকে নিশ্চিতভাবেই একটা দৌড়ানি দেবে )

আমার কথা বেশ সিম্পল। কেউ কোথাও কসম করায় নাই যে, অবশ্যই অনেক অনেক ভলান্টিয়ারিং করতে হবে। আরে ভাই, ভলান্টিয়ারিং একটা নেশা, কেন এটাকে গুলিয়ে ফেলেন বিদেশ যাওয়ার চাবিকাঠির সাথে? :@

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এখন খুব সিমপ্লি নিজের শিক্ষা জীবনকে ভাগ করে ফেলুন কয়েক ধাপে।

১ম বর্ষঃ থিম একটাই-- " যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ "। বুঝেন নাই তো? সবার সাথে মিশেন, শুনেন, জানেন, এবং ভুল করে শিখেন। ভলান্টিয়ারিং এইসময় করতে পারেন, শেখার জন্য, কিভাবে অনেক বেশি ইফেক্টিভ হতে পারেন আপনি। চান তো, পারলে লজ্জাশরম ছেড়ে অনেক অনেক কম্পিটিশনে যান, ডিবেট করেন, এবং গাল ভালো থাকলে সোজা এক্টিভিশনে যান। কাজ শিখবেন রে ভাই...কাজ...টাকা খুঁজবেন না। একদম না।

২য় বর্ষঃ এইটাকে আমি বলি, "ইনিশিয়েটিভ ইয়ার"। যা ইচ্ছা ইনিশিয়েট্টিভ নেওয়ার প্ল্যান করেন। কোচিং খোলা থেকে শুরু করে নিজের একটা স্টার্ট আপ, যা ইচ্ছে তাই ভাবেন। এইসময়ের লাভ হলো, আপনি যদি আটকে যানও নতুন করে আবার শুরু করতে পারবেন। সাথে চালিয়ে যান রিলেশনশিপ বিল্ডিং এর কাজ, অনেক অনেক সেমিনার, সিম্ফোজিয়ামে যান। এবং অবশ্যই ঢাকামুখী হওয়ার চেষ্টা করেন।

৩য় বর্ষঃ " আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ" -- গানটা নিশিদ্ধ এইসময়। প্রেম ট্রেম গাছের আগায়। এইসময়টাই চেষ্টা করেন বাইরে গিয়ে একটা/দুইটা সামার প্রোগ্রাম করে আসতে। বিলিভ মি, নজর খুলে যাবে। এবং আস্তে করে চেষ্টা করেন, পারলে কোন প্রোগ্রাম কোওর্ডিনেট করতে। অনেক কিছু শিখবেন, একদম ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ইন্টারনাল পলিটিক্স অফ কোম্পানি-- অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এইটা একটা মাস্ট এই সময়ে।

৪র্থ বর্ষঃ " সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ" -- আমি বলি, " ইনকিউবেটর ইয়ার"। এতোদিন যা শিখেছেন সব নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে বিচার করে দেখেন, ভুল না ঠিক। কেমনে বিচার করবেন? পড়েন, যত পারেন আর্টিকেল পড়েন, আজে বাজে লেখা পড়েন, যা ইচ্ছা টেলিভিশন কমার্শিয়াল দেখেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিলবোর্ড পড়েন। সোজা কথা অ্যাটেনশন টু ডিটেইলস বিল্ড আপ করেন। এবং প্রতিদিন যা দেখেছেন তার একটা খসড়া লিখে ফেলেন। এমন করে প্রথম ৩ মাস শুধু ঘাঁটেন আর পড়েন। এর পর লেগে যান আর্টিকেল লেখার কাজে, লক্ষ্য আপনার মৌলিক গবেষণা প্রকাশ করতে হবে আন্তর্জাতিক জার্নালে। নুন্যতম ২টা। এবং শেষ ৩ মাস জিম্যাট/জিআরই পড়া শুরু করেন যদি লাগে।

এমনভাবে রেডি হোন যাতে ৪র্থ বর্ষ শেষ করে বলতে না হয়, আমি তো এখনো কিছু করি নাই। ভুলে যান কি করছেন, বা করেন নাই। এখনো সময় আছে...শুরু করেন। এমনকি এই যে আমি, এতো কথা বললাম এতোক্ষণ, আমারও অনেক কিছু করার বাকি।কিন্তু আমি জানি এখনো সময় আছে। এবং আমি করবোই...

যে কয়টা জিনিস মাথা থেকে ফেলে দিতেই হবে---

> ঘরের দুয়ারে এসে আপনাকে অফার করে ওর ওখানে ভর্তি হওয়ার মাত্র আইইএলটিএস ৫ দিয়ে বা এই সেই গল্প নিয়ে, মাথায় রাখুন, ঐটা আমার দেশের সবার নিচের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি রেপ্লিকা মাত্র। ঐখানে এপ্লাই না করাই ভালো।

> সারাজীবন ভলান্টিয়ারিং না। দুস্থ মানুষের প্রতি খুব প্যাশনেট হলে ওদের এস্টাব্লিশমেন্ট এর জন্য সাস্টেইনএবল কিছু করুন, কিন্তু ফাউ ভলান্টিয়ারিং এর নামে এক প্যাকেট বেলা বিস্কুট দিয়ে সার্টিফিকেট না।

> লজ্জা নারী বা পুরুষ কারোর ভূষণ না। লাজ শরম ফেলুন। বি লজিক্যাল। লেজিটিমেট হয়, এমন যে কোন কিছু সাহস নিয়েই করুন, অন্যের অনেক বড় ক্ষতি না করে। চুপ থাকলে বুঝবেনও না, কখন কোন পাখি এসে আপনার ধান খেয়ে আপনাকেই গালি দিয়ে গেছে।

> আমি ফকির এই টেনশন ফেলুন। ভাবা শুরু করুন, আপনি সব, সব পারেন। টাকা ফ্যাক্টর না। আরে ভাই, দরকার হলে ২০ ঘন্টা কাজ করবেন। সমস্যা কি?

.........

এমন আরো অনেক কিছু!! অনেক...
কিন্তু প্লিজ শুরু করুন।
ঘরে বসে বসে সিনেমা দেখাটাও শুভ যদি সিনেমার কোন ইউটিলিটি থাকে।
কিন্তু হুদায় কে কবে এসে কি একটা সুযোগ করে দেবে এমন আশায় থাকা একটা চরমতম বোকামি।

বি.দ্রঃ যারা এই লেখা পড়ে ব্রেইন ড্রেইনের গন্ধ পান, তাঁদের জন্য সমবেদনা। কারণ আমি নিজেও জানি আপনারে চান্স দিলে আপনিও দৌড় দেবেন। আর আমরা পড়তে যেতে চাচ্ছি, শেখার জন্য। নিজেকে বেচে দিতে না...

( ...আর হ্যাঁ, একটা কথা ভুলেই গেছিলাম বলতে। একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনেন। টেম্পল রান গেমটা ডিলিট করে দিয়ে লিঙ্কডইন পালস সফটওয়ার ডাউনলোড করেন। প্রতিদিন কয়েকটা করে লেখা পড়েন। সাথে ডাউনলোড করেন লোগো কুইজ, জিম্যাট/জিআরই ফ্ল্যাশ কার্ড অ্যাপ্স। দিনে মাত্র ৩০ মিনিট দিবেন সময়... ব্যস। )

সাদামাটা বেচুবাবু


মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

মারাত্মকভাবে কনফিউজড না হয়েও পড়তে এসেছিলাম, সেটাই ছিল প্রথম ভুল। লেখকের সাবধান বাণী কানে তোলা উচিৎ ছিল!!

কে জানে, মন্তব্য করাটাও ভুল হলো কিনা!!

____________________________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নাই তাদের জন্য কী বাণী?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।