হিমালয়ের কোলে- ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক-২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১২/০৭/২০১৪ - ৫:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বঃ হিমালয়ের কোলে- ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক-১

ব্যাম্বুতে রাত্রিযাপন-

সন্ধে নামতেই বেশ ঠান্ডা পড়ে গেল। আমরা সহ অন্যান্য দেশের ট্রেকাররা ডাইনিংয়ে ফায়ারপ্লেসের বিনাপয়সার উষ্ণতায় যার যার মত আড্ডায় মেতে উঠলাম। সারাদিনের ক্লান্তির পর ট্রেকিংয়ের এই সময়টা বেশ ভালো লাগে। নানা দেশের মানুষজনের নানা ভাষা। কেউ নিজে এসে পরিচিত হয়, কারো সাথে যেচেই পরিচিত হই। সঙ্গে গরম গরম মোমো, স্যুপ কিংবা দারুন লেমন টি। বাংলাদেশ থেকে ট্রেকিং করতে এসেছি শুনে সাদা চামড়ারা একটু অবাকই হয় মনে হয়। তাদের কাছে হিমালয় ট্রেকিং একটি ব্যায়বহুল ইভেন্ট। ইউরোপ, আমেরিকা থেকে নেপাল পর্যন্ত আসতে প্লেন ভাড়াই অনেক পড়ে যায়, তারপর এরা অধিকাংশই ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ট্রেক এরেঞ্জ করে মাথা পিছু যা ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার, ইমার্জেন্সি ইভ্যাকুয়েশনের জন্য মোটা টাকা ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম দেয়, মোদ্দা কথা সমস্ত সেফটি প্রিকশন নিয়ে তারপর পথে নামে। গত বছর অন্নপুর্না ট্রেকে একদল জাপানী বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে প্রশ্নই করে ফেলল নিজ দেশে আমরা কি অনেক টাকা বেতন পাই কিনা? যদিও আমরা বাংলা সিষ্টেমে মোটামুটি সস্তার উপর দিয়ে চালিয়ে দেই। ইন্সুরেন্সের ব্যাপারটা স্রষ্টার উপর ছেড়ে দিয়েছি। লাক্সারী বলতে পোর্টার আর একজন গাইড। রাত আটটার পরেই দ্রুত খালি হয়ে গেল ডাইনিং। সবাই নিদ্রা দেবীর আরাধনা করতে চলে গেল। অগত্যা আমরাও যার যার রুমে চলে গেলাম। থাকার ব্যাবস্থা খুবই বেসিক। ছোট্ট ঘিঞ্জি রুমের দুপাশে ততোধিক ছোট দুটি খাট, উপরে পাতলা তোষক সাথে ভারি লেপ। ব্যাবস্থা দেখে ভরসা পেলামনা ডাউন স্লিপিংব্যাগ বের করে তার ভেতরে সেধিয়ে ঘুম। রাতের তাপমাত্রা প্রায় শুন্যের কাছাকাছি থাকলেও ডাউন স্লিপিংব্যাগ কিছুই টের পেতে দিলনা। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে লাক্সারী হিসেবে গাইডের ব্যাবস্থা করা একমগ গরম পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে গরম গরম পরিজ আর দুধের বিটকেলে মিক্সার কোন রকমে গলায় ঢেলে দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম। অন্যান্য দেশের ট্রেকাররা আমাদের বেশ আগেই রওনা হয়ে গিয়েছে।

ব্যাম্বু টু রিভারসাইড-

হিসাব মতে আজকের দিনটি সবচেয়ে কঠিন হবার কথা, ভার্টিক্যালি উঠতে হবে প্রায় ১৩০০ মিটার আর এই ১.৩ কিলোমিটার হাইট গেইন করতে দুরত্ব অতিক্রম করতে হবে প্রায় ১৫ কিলো। আজকের শেষ গন্তব্য ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় ল্যাঙ্গটাং ভিলেজ। মাঝখানে তিনটি বিরতি। প্রথমটি রিভারসাইড (২৮০০ মিটার), দ্বিতীয়টি ঘোড়াতাবেলা (৩০০০ মিটার) এবং সবশেষে থাংশিয়াপ গ্রাম (৩২০০ মিটার)। একদিনে ১৩০০ মিটার অলটিচ্যুড গেইন যে কোন বিচারেই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে আমাদের উপায় নেই। সুতরাং খেলারাম খেলে যা। শুরু থেকেই খাড়া পাথুরে সিড়ির বিরামহীন বিস্তার মনে হচ্ছিলো শেষ হবার নয়, হাটুর কঠিন পরীক্ষার কথা না হয় বাদই দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যেই হাড় কাপানো ঠান্ডা ধুয়ে মুছে গেলো জিহবা বের করা পরিশ্রমে। ঘন্টাখানেক একবেকে টানা ওঠার পর জানে পানি আনা প্রথম ব্রেক রিভারসাইডে। চারপাশে পাইন আর ওকে গাছের ছায়ায় মায়াময় এক জায়গা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অনেক উপরের গ্লেসিয়ার থেকে বয়ে আসা তীব্র খরস্রোতা ফেনিল দুধকোশী নদীর অন্যতম উৎস। এর পাশে বলেই জায়গাটির নাম রিভারসাইড। ঝর্নার ধারে ছোট্ট একটি গ্রোসারী, ট্রেকারদের আপ্যায়নের জন্য বসার ব্যাবস্থা, ঘোড়ার আস্তাবল এই ই। সেবা প্রকাশনীর পড়া ওয়েষ্টার্ন বই থেকে তুলে আনা দৃশ্য বলে মনে হবে প্রথম দর্শনেই। চটজলদি লেমন টি খেয়ে কিছু ফটুক তুলে দেশ থেকে নিয়ে আসা প্রানের ম্যাঙ্গোবার ঠেসে মুখে ঢুকিয়ে আবার যাত্রা। একটু ব্রেক পেয়ে মনে ফুর্তি কিন্তু কে জানতো কিছুক্ষন পরেই আমার দশ বছরের ট্রেকিং জীবনে সবচেয়ে বড় বাঁচা বেঁচে যাবো।

১। P1110621

২। P1110642

৩। P1110646

৪। Langtang_Nepal_Nov13_ 652

৫। P1110627

৬। P1110626

৭। P1110604

৮। P1110599

৯। P1110656

১০। Langtang_Nepal_Nov13_ 1476

রিভারসাইড টু ঘোড়াতাবেলা-

রিভারসাইড পার হয়ে পাথুরে ট্রেইল একেবেকে উপরে উঠে গেছে। যথারীতি এক পাশে অতলস্পর্শী খাদ, ঝর্নার পাড় পর্যন্ত নেমে গেছে আর অন্যপাশে পাথুরে গা উঠে গেছে অনেক উপরে। কিছু বড় গাছ থাকলেও বেশিরভাগই বামন আকৃতির গাছপালা আর ঝোপঝাড় পাথুরে গা ঢেকে রেখেছে দু পাশেই। মাঝেখানে এক দেড়শ মিটারের একটা জায়গা একদম এক্সপোজড্‌, ঐ অংশে ট্রেইল সরু হয়ে প্রায় দেড় ফিট মতো চওড়া আর কিনারা থেকে ভার্টিকেলি একদম খাড়া নেমে গেছে নিচে। কোন গাছপালার আড়াল ও নেই খাড়া গায়ে। আর উলটোদিকে প্রায় লম্বভাবে পাথুরে গা উঠে গেছে খাড়া। সেখানেও কোন গাছপালা ঝোপঝাড় নেই। আমার এক সঙ্গী আমাকে অতিক্রম করে বেশ এগিয়ে আর বাকী দুই সঙ্গী অনেক পেছনে পড়ে আছে। আমার শ’খানেক ফুট পিছনে এক তরুন বৃটিশ ট্রেকার আর বেশ কিছু পিছনে এক দল ফ্রেঞ্চ। ঐ এক্সপোজড্‌ জায়গাটা আস্তে আস্তে সাবধানে পার হচ্ছিলাম। মাঝামাঝি যখন গিয়েছি হঠাৎ দুটো আওয়াজ প্রায় একসাথে শুনলাম। পিছনে থেকে বৃটিশ তরুনের চিৎকার আর উপরে পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকি হলে যে ধরনের আওয়াজ হয় সে রকম আওয়াজ। উপরে তাকিয়ে দেখি পাথর ধ্বসে ছোট বড় নানা আকৃতির পাথর গড়িয়ে আসছে। এক সেকেন্ডের (কিংবা তার ভগ্নাংশ) ভিতর মাথার ভিতর অনেক চিন্তা খেলে গেল। প্রথম যে ভাবনার উদয় হলো তা হল সীমাহীন ভয়, আমি শেষ। তারপর যা করলাম তা সচেতন ভাবে আমার মস্তিষ্ক আমাকে দিয়ে করালো নাকি আমি আতঙ্কগ্রস্ত করেছি তা আমি আর এখন মনে করতে পারিনি। শুধু এটুকু মনে করতে পারি আমার পা দুটি ফ্রিজ হয়ে গেল। সামনে বা পিছনে গিয়ে পাথর ধ্বস এড়িয়ে যাবার সময় নেই। হাতের মুঠির সাইজের একটি পাথর উপর থেকে যে ভরবেগ নিয়ে আঘাত করবে তাই যথেষ্ট খুলি গুড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিচের অতল খাদে ফেলে দেবার জন্য। তখন আমি নিজের ইচ্ছাতেই করেছি কিনা কাজটা জানিনা কিন্তু যা করেছি ঐ সময়ের জন্য সেটাই সবচেয়ে সঠিক কাজ ছিলো। আমি দেয়ালের অল্প একটু অবতল অংশে যতটুকু পারি হাত দুদিকে ছড়িয়ে সেধিয়ে গেলাম। পাথর বৃষ্টি আমার মাথার উপর দিয়ে প্রক্ষেপক হয়ে নিচের খাদে পড়ে যেতে লাগলো। ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন হওয়া ছাড়া অবিশ্বাস্য ভাবে একটি আঁচড় ও লাগেনি।

পাথর ধ্বস শেষ হলে আর ও কিছুক্ষন ওভাবেই থাকলাম তারপর যত দ্রুত সম্ভব অপর পাড়ে গিয়ে মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম। গ্রাম দেশে ভ্যাবদা লেগে যাওয়া যাকে বলে ঠিক তাই অবস্থা। একটু পর বৃটিশ তরুনটি আসলো। সে বুঝলো যে আমার মনের উপর দিয়ে ঝড় গেছে তাই আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। তার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে তারপর রওনা হলাম। তার মতে আজকে আমি বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছি। সেই সাথে প্রশংসা করলো যে ঐসময় যা করেছি সেটাই নাকি সবচেয়ে সঠিক কাজ ছিলো। সামনে বা পিছনে দৌড় দিলে নাকি আমার আর বাঁচার কোন সম্ভাবনা ছিলনা যা সে আশংকা করেছিল। আর কিছু সামনে গিয়ে আমার সঙ্গীকে পেলাম, বিশ্রাম নিচ্ছে। তাকে সব খুলে বললাম, সে পরামর্শ দিলো দেশে ফিরে জানের সদকা হিসেবে কিছু দান করে দিতে। একটু পরেই পৌছে গেলাম ৩০০০ মিটার উচ্চতায় ঘোড়াতাবেলা, আমাদের দ্বিতীয় ব্রেক। দু পাশে আকাশ ছোয়া পর্বত ঘেরা গিরিখাতের ভিতর চমৎকার জায়গা। কোন জনবসতি নেই শুধু একটি টি হাউস ছাড়া। এক পাহাড়ী মহিলা সম্ভবত তামাং গোত্রের, পরিচালনা করে এটি। এখানেই লাঞ্চের সিদ্ধান্ত হলো, এবং খাবারের স্বাদ চমৎকার বলতেই হয়। ডেজার্ট হিসেবে সবাই খেলাম ইয়াকের দুধের তৈরী দই। হাতে সময় থাকলে এখানে একরাত কাটানো যেতো। অনেকক্ষন বিশ্রাম নিলাম চমৎকার এই জায়গায়। অর্জুন তাড়া দিতে লাগলো। ল্যাংটাং ভিলেজ পৌছতে নাকি আমাদের আজকে রাত হয়ে যাবে। অতএব আবার যাত্রা।

১১। রিভারসাইড থেকে ঘোড়াতাবেলা যাবার পথে ল্যাংটাং রেঞ্জের ছবি

P1110601

১২। P1110606

১৩। P1110602

১৪। P1110608

১৫। এই সেই জায়গা যেখানে পাথর ধ্বসের কবলে পড়েছিলাম
P1110651

১৬। Langtang_Nepal_Nov13_ 686

১৭।IMG_3728

১৮। P1110674

১৯। IMG_8342

ঘোড়াতাবেলা টু ল্যাংটাং ভিলেজ (ভায়া থাংশিয়াপ ভিলেজ)-

ঘোড়াতাবেলা থেকে গিরিখাতে আস্তে আস্তে ওপেন হচ্ছে ল্যাঙ্গটাং পর্বতমালায়। উচ্চতা তিন হাজার মিটারের অধিক। তাই গাছপালা কমে এসেছে। ঝোপঝাড়ই বেশী। অনেক নিচে পাহাড়ের ঢালে পাইনবনের বিস্তার দেখা যায়। ল্যাঙ্গটাং গ্রেসিয়ার থেকে বয়ে চলা ঝর্না অনেক নিচে সরু রুপালী ফিতার মতো দেখাচ্ছে। চারপাশ রুক্ষতা মেশানো সুন্দর। সামনে নেপাল আর্মির চেকপোষ্ট। সব কাগজপত্র আবার চেক করা হলো। নাম এন্ট্রি হলো। এখানে দায়িত্বরত এক সৈনিক বললেন বেশ কয়েক বছর পর বাংলাদেশ থেকে কেউ এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে ওদের বেশ আগ্রহ। ঢাকা কি কাঠমন্ডুর চেয়ে বড় শহর কিনা জানতে চাইল একজন। এখানে অল্টিচ্যুড সিকনেসের উপর সতর্কবানী করে একটি বড় সাইনবোর্ড টানানো যেখানে বলা আছে ৩০০০ মিটারের পর একদিনে ৩০০ মিটারের বেশী অলটিচ্যুড গেইন না করতে। তাছারা এএমএস এর সিম্পটম, করনীয়, এড়াতে হলে কিভাবে ট্রেকিং বা ক্লাইম্বিং করতে হবে ইত্যাদি অনেক উপদেশ। আমরা আর বললাম না অলরেডি এক হাজার মিটার উঠে এসেছি এবং আরো ৫০০ মিটার উপরে যাওয়ার প্ল্যান আজকেই। দ্রুত আলটিচ্যুড গেইনের মুল্য পরে অবশ্য আমাদের কয়েকজন কে দিতে হয়েছে। পুরো ট্রেকে খাবারের দামের কথা আর বল্লাম না। পানির দাম থেকেই ধারনা পাওয়া যাবে। ঘোড়াতাবেলার পর থেকে প্রতি লিটার পানির বোতল ২৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। তা ও ভালো যে পাওয়া গেছে। অন্নপুর্না ট্রেকে আপার সিনুয়ার পর থেকে মিনারেল ওয়াটার বোতল নিষিদ্ধ। ফিল্টার করা ঝর্নার পানি খেতে হয়েছে।

ধীরে ধীরে ল্যাংটাং ভ্যালির চূড়া গুলো চারপাশে মাথা উকি দিচ্ছে। উন্মুক্ত হওয়ায় বাতাস ও বেশী। রাস্তা ও বেশ রুক্ষ। আমাদের তৃতীয় স্টপেজ থাংশিয়াপ ভিলেজের আগের অনেক খানি রাস্তা বেশ বিপদজনক। অনেক বড় বড় বোল্ডারের ভিতর দিয়ে পথ চলে গেছে। আর একপাশে হাজার ফিটের পাথুরে খাড়া দেয়াল। চলার সময় খুবই অস্বস্তি হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি পাথরের নিচে চাপা পড়ি। শেষ বিকেলে থাংশিয়াপ পৌছলাম। ক্লান্তিতে আর পা চলছেনা। ল্যাংটাং ভিলেজ আরো দেড় ঘন্টার পথ। মনে হচ্ছিল কখনোই যেন পৌছতে পারবনা। শুধু চা পান করে আর পানি কিনে আবার পা চালালাম। চারিদিকের দৃশ্য বেশ মনোরম কিন্তু ক্লান্তি আর দ্রুত পৌছানোর তাড়ার কারনে প্রকৃতি উপভোগ করার মত অবস্থায় নেই কেউই । দ্রুত উচ্চতা গেইন করার কারনে মাথাও একটু একটু ভন ভন করছে। ল্যাংটাং ভিলেজে সন্ধার আলো জ্বলে উঠেছে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাঝের পথ মনে হচ্ছে এক সমুদ্র। সন্ধে গড়িয়ে প্রায় যখন অন্ধকার তখন ধুকতে ধুকতে ল্যাংটাং ভিলেজ পৌছলাম। উঠলাম টিবেটান লজে। এখানে ঠান্ডা অনেক। সন্ধের পরেই তাপমাত্রা শুন্যের নিচে নেমে যায় আর রাত গভীর হলে শুন্যের প্রায় ১০ ডিগ্রী নিচে নেমে যায়। রাতের খাবার খেয়ে দ্রুত যার যার রুমে চলে গেলাম। আজকে অনেক ধকল গেছে। এক সঙ্গীর সন্ধের পর থেকেই প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে। অলটিচ্যুড সিকনেসের প্রথম ধাপ। তাকে যতটা সম্ভব ফ্লুইড খাওয়ানো হলো। সাথে গার্লিক স্যুপ। অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেসের স্থানীয় টোটকা। অতঃপর বডি হিট ধরে রাখার জন্য জ্যাকেট পরা অবস্থায় স্লিপিং ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম। অবস্থার উন্নতি না হলে কালকে নামিয়ে দিতে হবে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের গতি বাড়তে লাগলো। গভীর রাতে বাতাসের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সেই আওয়াজ শুনলে অতি সাহসীর বুকেও কাপন ধরবে। ঠিক যেন সমুদ্রে ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেতের মতো। এই বাতাসে ১০ মিনিট দাঁড়ালে হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পুরোপুরি সম্ভাবনা আছে। বাইরে চাঁদের আলো চারপাশের চুড়ায় প্রতিফলিত হয়ে অদ্ভুত আলো আধারীর পরিবেশ তৈরী করেছে। কালকে একটু বেলা করে রওনা হব। কিয়ানজিন গোম্পা এখান থেকে ৩/৪ ঘন্টার পথ। সুতরাং বেশ তরিবত করে স্লিপিংব্যাগ গলা পর্যন্ত টেনে ঘুম।

অচিন পাখি
(আগামী খন্ডে সমাপ্য)

২০। IMG_3737

২১। মাউন্টেন সিকনেস থেকে সাবধান (ইট ক্যান এন্ড ডাজ কিল)
IMG_3735

২২। মাউন্টেন কিড
IMG_3753

২৩। Langtang_Nepal_Nov13_ 752

২৪। Langtang_Nepal_Nov13_ 766

২৫। Langtang_Nepal_Nov13_ 792

২৬। Langtang_Nepal_Nov13_ 793

২৭। P1110726

২৮। P1110724

২৯। P1120035

৩০। IMG_3743

৩১। P1110685

৩২। P1110702

৩৩। Langtang_Nepal_Nov13_ 788

৩৪। Langtang_Nepal_Nov13_ 823

৩৫। Langtang_Nepal_Nov13_ 825

৩৬। Langtang_Nepal_Nov13_ 1419

৩৭। অবশেষে ল্যাংটাং ভিলেজ
Langtang_Nepal_Nov13_ 850


মন্তব্য

মারভিন এর ছবি

সুন্দর সব ছবি। অসাধারণ জায়গা! আমি অবশ্য ভ্যালির নামের দ্বিতীয় ং টা প্রথমে খেয়াল করি নাই তাই একটু ভয়ে ভয়ে ১৮+ পোস্ট ভেবে ক্লিক করেছিলাম ম্যাঁও

সত্যপীর এর ছবি

তাপমাত্রার যে অবস্থা এইখানে ল্যাংটা ভ্যালি করলে সেইটা হইব ডেথ ভ্যালি মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

খুবই চমৎকার।

..................................................................
#Banshibir.

অচিন পাখি  এর ছবি

হাসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

শ্বাসরূদ্ধকর! উপর থেকে পাথর পড়ার যে বর্ণনা দিলেন তাতেই তো ভয় ধরে গেল ইয়ে, মানে...

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা আসলেই একদম আনএক্সপেক্‌টেড ছিলো, যদিও ট্রেকিংয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে। অন্নপুর্নাতেও কাছাকাছি একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। আমরা একটা জায়গা ক্রস করে প্রায় শ'খানেক ফুট গিয়েছি অমনি পাথর আর মাটির বড় এক স্তুপ ভেঙ্গে ট্রেইলের উপর চলে আসে। তবে এসব ছোটখাট ব্যাপার বাদ দিলে ট্রেকিংয়ের মজাই আলাদা। ভালো থাকবেন।
-অচিন পাখি

মুস্তাফিজ এর ছবি

চমৎকার লেখা আর তারচাইতেও বেশি সুন্দর ছবি (একটু বেশি স্যাচুরেটেড যদিয়ো, তারপরেও এই উচ্চতায় এমন ছবি মেলা ভার)।
পাঁচতারা
ধন্যবাদ।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

- অচিন পাখি

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার সব ছবি! উত্তম জাঝা!
আপনাকে হিংসাই।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

এক লহমা এর ছবি

রীতিমত রোমাঞ্চকর!
লেখা, ছবি সব ভাল লেগেছে। পরের পর্বের সাগ্রহ অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। বাকিটাও আশা করি তাড়াতাড়ি লিখতে পারব।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

লেখা ও ছবি দুটোই চমৎকার হাসি

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দুর্দান্ত। ছবি এবং বর্ণনা।
সচলায়তনে স্বাগতম।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মোরশেদ ভাই। ভালো থাকবেন।

-অচিন পাখি

অতিথি লেখক এর ছবি

গত পর্বে আপনাকে একজন সাধারণ ট্রেকার বলে মনে হয়েছিল তাই যখন আপনি বলেছিলেন যে আমিও পারব তখন মনে হয়েছিল হ্যাঁ আপনি পারলে আমিও এত দ্রুত এত উচ্চতা অতিক্রম করতে পারব কিন্তু এই পর্বে পরিষ্কার হল যে আমার আসলে আপনার মত ট্রেকিং করতে হলে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। যাই হোক আপনি যেভাবে নিজেকে বাঁচিয়েছেন 'তিন গোয়েন্দার' কিশোর সেভাবে নিজেকে বাঁচিয়েছিল। লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগল আর ঠিক করে ফেললাম যে জীবনে একবার এই জায়গায় যেতেই হবে।

ফাহিমা দিলশাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

না না, লেখা পড়ে আমাকে জবরদস্ত কোন ট্রেকার ভাবার কারন নেই। হিমালয়ে ট্রেকিং করতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার ও প্রয়োজন নেই। কিছু নিয়ম মেনে ট্রেকিং করলে ৪/৫ ঘন্টা হাটতে সক্ষম যে কেউই পারবে। ২০০৮ এ আমি প্রথম হিমালয় অঞ্চলে ট্রেকিং শুরু করি। তার আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চষে বেড়িয়েছি। মুলত ছুটি আর আর্থিক কারনেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও এর আগে হিমলয় অঞ্চলে টেকিং করতে পারিনি। আমার মতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ট্রেকিং করা হিমালয়ের চেয়েও ঝুকিপুর্ন, নানা কারনেই। হিমালয়ান ট্রেকিংয়ে উচ্চতাকে বশ মানাতে পারলে বাকি সব কিছুর চমৎকার বন্দোবস্ত আছে। আর ক্লাইম্ব হাই স্লিপ লো এই চিরায়ত টেকনিকের সঙ্গে অ্যাক্লামাটাইজেশনের জন্য যথাযত রেষ্ট ডে রাখলে উচ্চতাজনিত অল্প কিছু সমস্যা (যা সবারই হয়ে থাকে) ছাড়া খুব বড় কোন ঝামেলা হবার কারন দেখিনা। এভাবে আপনি প্রায় ২০,০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ট্রেকিং করতে পারবেন বলে আমার ধারনা। বেশি ঝামেলা হলে দ্রুত নেমে আসার অপশন তো আছেই, আমরা তো আর টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং করছিনা। এযাবত দেশের বাইরে যতো ট্রেকিং করেছি দেখেছি যে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ট্রেকার নারী। ইচ্ছাটাই আসল। হ্যাপি ট্রেকিং।

-অচিন পাখি

তারেক অণু এর ছবি

বাহ, যাবার খুব ইচ্ছে আছে ঐ দিকে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।