প্রবাসে পাকিরঙ্গ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৯/১২/২০১৪ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদেশে এসেও পাকিদের একেকটা কান্ড কারখানা শুনি, দেখি আর মনটা বিমলানন্দে ভরা যায়। বিজয়ের মাস শেষ হবার আগেই এক জোড়া + একটি পাকি-রস। এগুলোর কোনটাই কল্প-গল্প বা সৃজনশীল লেখা না, সবগুলোই ’জীবন থেকে নেয়া’।

১। উপমহাদেশের সবচেয়ে সভ্য জাতি
ল্যাবের ব্রেকরুমে বসে দুপুরে লাঞ্চ করছি। খাবারের মধ্যে মাছ-মাংশ থাকলে আমি হাত দিয়ে খাই, চামচ দিয়ে খাবার চেষ্টাও করি না। চামচ দিয়ে কাটা বা হাড্ডি বেছে ঠিক সুবিধা করতে পারি না বলে শুধু শুধু ভদ্রতা করে সেই চেষ্টা করতেও যাই না। তো আমাদের এক সৌদি ল্যাবমেট আছে, সে আমাকে ওভাবে খেতে দেখে জিজ্ঞেস করলো যে তোমরা কি সবসময় এভাবেই খাও? আমি বললাম হ্যা এভাবেই খাই, আমার দেশের বেশিরভাগ মানুষ এভাবেই খায় আর আমাদের খাবারের যে মেন্যু থাকে ওগুলো হাত না লাগিয়ে খাওয়া ঠিক সম্ভব না। অনেকে হাত না লাগিয়ে ওয়েস্টার্ন কায়দায় চামচ দিয়ে খায়, আমি ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনা। আমি ওকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম যে কেন এটা জিজ্ঞেস করলো। উত্তরে সে বললো, তার নাকি এক পাকিস্তানি ফ্রেন্ড আছে। সে কিছুদিন আগে তাকে বলেছে, উপমহাদেশের মধ্যে পাকিস্তানিরা জাতি হিসেবে সবচেয়ে সভ্য ও উন্নত, তার খাওয়ার সময় হাত লাগায় না, যেটা ইন্ডিয়ান আর বাঙাল রা করে এবং এটা তার খুবই অপছন্দ এবং অসভ্য লাগে। তো আমি বললাম, শোনো, পাকিস্তানিদেরকে বাংলাদেশিদের চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না।পাকিস্তানিদের প্রধান খাবার হলো রুটি, তার সাথে সবজি অথবা মাংশ খায়, আর আমাদের মতোন ভাতও চলে। এগুলো চামচ দিয়ে খাওয়া সম্ভব না, আর খাওয়ার সময় হাত লাগানো এতে কারো সভ্যতা/উন্নতি বা জাতি হিসেবে কে কতো উন্নত সেটার প্রমাণ হয়না। সে শুধু শুধুই তোমাকে এই মিথ্যা কথাটা বলেছে নিজেকে সুপিরিয়র প্রমাণ করার জন্য। আমাদের দেশের এক লেখক লিখে গেছেন পাকিস্তানিরা যা বলে তার ৯৯.৯৯% মিথ্যা, বাকি ০.০১% সত্যি। এটা আমি বিশ্বাস করি, তুমিও এটা যেনে রাখো আর এখন থেকে ওর কথা এইভাবে ফিল্টার করে বিশ্বাস করো। উত্তরে সে একটু অসন্তোষের সুরেই বললো না তুমি এভাবে বলতে পারো না, তুমি কিন্তু স্টেরিওটাইপিং করছো ইত্যাদি ইত্যাদি…। এখানে আর বলার কিছু থাকে না, আমি বললাম, হ্যা আমি স্টেরিওটাইপিং করছি, এই একটা জাত যাদের ব্যাপারে স্টেরিওটাইপিং করা যায়… দুঃখিত, পাকিস্তানিদের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা এরকমই!

২। চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড় ধরা
ফল সেমিস্টার শেষের ঘটনা, আমার এক ল্যাবমেট আস্তে করে বললো ব্রেক রুমে চলো, একটা মজার কথা বলবো। গেলাম। আমার সেই ল্যাবমেট একটা কোর্সের টিএ ছিলো, আর সেই কোর্সে একটা পাকিস্তানি স্টুডেন্ট ছিলো। তো সেই পাকি স্টুডেন্ট ফাইনালস উইক শেষে রেসাল্ট পাবলিশ হওয়ার পরে ফেসবুকে স্ট‍্যাটাস দিয়েছে এরকম যে ’...আলহামদুলিল্লাহ সবগুলা কোর্সে ফাটিয়ে দিয়ে হায়েস্ট গ্রেড (A) পেয়েছি...’ ব্লা ব্লা ব্লা। এটা তো আর কেউ ভেরিফাই করতে যাচ্ছে না, তার সব বন্ধুরা ওখানে এসে বেশ বাহবা দিয়ে যাচ্ছে। আমার ওই ল্যাবমেট যেহেতু ওই কোর্সের টিএ, সে পরীক্ষা হোমওয়ার্ক সবই দেখেছে, গ্রেড করেছে এবং সব স্টুডেন্ট এর আসল গ্রেড সে জানে এবং দুর্ভাগ্যবশত ওই পাকির ফেসবুক ফ্রেন্ডও ছিলো। অন্তত ওই কোর্সে তার আসল গ্রেড যা লিখেছে তার ধারে-কাছেও না, আসলে সে ওই কোর্সে কোনমতে পাশ করেছে ’C' নিয়ে!

৩। বন্যেরা বনে সুন্দর, মেয়েরা কিচেনে, আর পাকিরা জঙ্গলে
আফ্রিদি একবার একটা টিভি শো তে পাকিস্তানি নারীদের ক্রিকেটে ভবিষ্যত কি, এরকম একটা প্রশ্নের উত্তরে ক্যামেরার সামনে বলেছিলো যে মেয়েদের কিচেনেই থাকা উচিত বা কিচেনেই ওদের ভালো মানায়, হয়তো সবার মনে আছে। দূর্ভাগ্যবশত আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও একজন পাকি গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট আছে, ওইসময়ে আফ্রিদি বিতর্ক প্রসঙ্গে তার পোস্ট করা একটা স্ট‍্যাটাস ’The fact that Afridi prefers women to stay in the kitchen is his personal opinion. Is he supposed to have politically right opinions just because he’s been dubbed a ‘hero’? Learn to tolerate different opinions! - Farwa Zahra’
পাঠকদের জন্য সর্বশেষে একটুখানি টুইস্ট। এটা যার কাহিনী বা ফারা জাহরার এই উক্তিটি ক্যোট করে তার সাথে সহমত জানিয়ে যে পাকিস্তানি এটা পোস্ট করেছে, সে একজন নারী।

চন্দন
ই-মেইলঃ


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভালো লাগে নাই।
পাকু নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই, কিন্তু এইটা ঠিক পড়ে ভালো লাগার মতো কিছু হইল না। দ্বিতীয় গল্পটা খানিক কৌতুককর।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা কি মুছে দিবো?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লেখা মুছে কেন দেবেন! আরো বেশী লিখতে থাকেন!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

খাওয়ার ব্যাপারে অত লম্বা ব্যাখ্যা না দিয়ে আপনি সহজভাবে বলতে পারতেন, "নবী মুহাম্মদ স্বয়ং কোনদিন কাঁটাচামচ ব্যবহার করেননি। সুতরাং হাত দিয়ে খাওয়া নবীর সুন্নৎ।"

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

"উপমহাদেশের মধ্যে পাকিস্তানিরা জাতি হিসেবে সবচেয়ে সভ্য ও উন্নত" - এ অংশের সাথে একমত হবে এমন বাঙ্গালীর সংখ্যাও নেহাত কম না। আমি প্রচুর দেশি ভাইকে চিনি যারা বিদেশে রাস্তা-ঘাটে কোন পাকির সাথে সাক্ষাত হলে ব্রাদার-ব্রাদার বলতে বলতে অস্থির হয়ে যায়। কেউ কেউ স্থানীয় ভাষা রপ্ত করার আগেই উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে ফেলে (দীর্ঘশ্বাসের ইমো)

-সুবীর

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ভালো লাগে নি।
বিভিন্ন কাজে অনেক বিদেশীরা বাংলাদেশে আসেন, বিদেশে সমুদ্র সৈকতে ওরা সাধারণত বিকিনি পরে যায়, কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সম্মান করে ওরা কিন্তু এটা কখন আমাদের দেশে করে না। এটা শুধু একটা উদাহরণ মাত্র। যেকোনো দেশে যাবার আগে সবাই ঐ দেশের নিয়ম নীতি একটু পড়ে নেন। এবং ভদ্রতা অভদ্রতার বিশয়গুলো মেনে চলুন।
হাত দিয়ে খাবার আপনি বাসায় খান, কিন্তু ওদের সামনে এভাবে খাবার মানে হল চূড়ান্ত অভদ্রতা। পাকিস্তানী দের প্রতি আমার কোন প্রীতি নাই। কিন্তু নিজের দেশের সম্পর্কে আসলে এধরনের মন্তব্য আপনাদের মতো কিছু মানুষদের জন্যই শুনতে হয়, ছুরি ব্যবহার করুন যদি কাঁটা বা হাড় খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। অথবা বাসার বাইরে হাড্ডি অথবা কাঁটা মুক্ত খাবার খান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।