মনোজগতে পাকিস্তান

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০২/২০১৫ - ১০:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“তুমি কারও সাথে ছবি তুলতে যাবে না, সবাই তোমার সাথে ছবি তুলতে আসবে।“২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে সদ্য কৈশোরউত্তীর্ণ তামিম ইকবাল যখন সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়দের সাথে ছবি তুলতে ছুটে গিয়েছিল কোচ ডেভ হোয়াটমোর তাকে নিবৃত্ত করেছিলেন।

সচিন টেন্ডুলকার কেন গাভাস্কারের তুলনায় অনেক আগ্রাসী অথবা আজকের বিরাট কোহলী কেন মাঠে এবং মাঠের বাইরে সচীনের চাইতেও আক্রমণাত্মক? গাভাস্কারের বেড়ে ওঠার সময় ভারত ছিল নানা সমস্যা জর্জরিত সদ্য স্বাধীন একটি দেশ, নানা অজুহাতে ইংল্যান্ড –অস্ট্রেলিয়া ভ্রতে আসতে চাইত না। এমনকি ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে গরম আর মশার আজুহাতে নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলী ভারতে খেলতে আসেননি। পৃথিবী যখন প্রতিকুলে সেই সময় সহজ বলকেও সীমানা ছাড়া না করে ব্লক করতে হয়, প্রাক্তন প্রভূ, সাদা চামড়া সাহেবদের সাথে খেলছি এইত ঢের বেশী এমন একটা মনোভাব ।

সেই তুলানয় বালক শচীনের বেড়ে ওঠার সময়টা ভারত ইতিমধ্যে ৮৩ র বিশ্বকাপ আর ৮৫ র বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ চ্যাম্পিয়ন; অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক রাষ্ট্র ভারতের অবস্থান ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। আর এখন IPL এবং বিরাট কোহলী জামানায় তো ICC র অপর নাম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড, বিশ্ব রাজনীতিতে পরাশক্তি হবার পথে ভারত। এই জন্য খেলার ফলাফল যাই হোক না কেন কোহলী আর তার প্রজন্মের সকল ভারতীয় ক্রিকেটারদের আত্মম্ভরী আর আগ্রাসী মনোভাব দল হিসেবে তাদের অনেকটা এগিয়ে রাখে।

সেই তুলনায় আমদের ক্রিকেটাররা বড় হয়েছে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত পরিবেশে। ক্রিকেট মানেই পাকিস্তান, কিছুটা ভারত আর কখনো কখনো সিনেমার মাঝে বিজ্ঞাপনের মতো আই সি সি ট্রফি বা কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, ব্যাস এই পর্যন্তই। পেস বোলিংয়ের গল্প মানেই ওয়াসিম –ওয়াকার –ইমরান; হার্ড হিটিংয়ে আফ্রিদি সর্বকালের সেরা (এক সময়ে আফ্রিদির ছবি বিসিবি অফিসে পর্যন্ত বাঁধানো ছিল! ) আর স্পিনের জাদুকর সাকলাইন –সাঈদ আজমল। এই হচ্ছে বাংলাদেশের সিংহভাগ ক্রিকেটার আর ক্রিকেটপ্রেমীদের মনোজগত।

ওরা (বা পাকিস্তানীরা) ভালো আর আমরা খারাপ আজন্ম শৈশব এই কথা ক্রিকেটারদের মগজে ঢোকানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে দেখলাম বিশ্বের এক নম্বর আল রাউণ্ডারের ফেসবুক পেজে ইমরান খানের পরিসংখ্যানের পাশে খুব তমিজের সাথে নিজের তুলনা করছে আর মন্তব্যের ঘরে আহা-উহুর নহর বয়ে যাচ্ছে যাক আমাদের এক ক্রিকেটার পাকি ক্যাপ্টেনের চেয়েও ভালো। একই সঙ্গে সাকিবের আর তাঁর ফ্যানদের শ্রদ্ধা ঝরে পড়ছে ইমরান খানের জন্য।
ফিরে যাই যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেট ২০০৭ সালে। কাগজে কলমে সেই বাংলাদেশ দলের সাথে শিরোপা প্রত্যাশী ভারতের তুলনাই হয় না। ম্যাচের আগের দিন মাশরাফির সেই বিখ্যাত উক্তি “ভারতকে ধরা দেবানি” মন্ত্রে উজ্জিবিত বাংলাদেশ কি খেলাতাই না খেলল। তামিম হয়তো ৩০ রান আর শচীনের পিঠ চাপড়ানীতেই খুশী থাকতো ম্যাচ আর জেতা হতোনা; যদি না হোয়াটমোর তাঁর আত্মসম্মানটা উসকে না দিতেন।

সমস্যা হচ্ছে “পাকিদের ধরা দেবানি” এই মনোভাবটা আমদের ক্রিকেটারদের জীনে এখনো প্রবেশ করেনি। দেশের প্রধানতম দৈনিকে নিয়মিত পাকিস্তান ক্রিকেট টীমের বন্দনা করা হয়, এর পেছনে অন্যান্য অনেক কারনের মধ্যে পাঠকের চাহিদা আছে সেটাও একটা বড় সত্য। তাই মুশফিক-মিসবাহকে বড় ভাই –ছোট ভাই হিসেবে তুলনা করা, আফ্রিদিই দ্রুততম সেঞ্চুরির “যোগ্যতম” মালিক এই বিষয়ে জনমত জরিপ দেখে দেখে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে “পাকিস্তানকে যে হারানো সম্ভব” এই বিশ্বাসটাই তৈরি হয়না। পাকি ক্রিকেটারাই মুশি-সাকিব-তানিমদের আইডল, এদের সাথে জিতবে কিভাবে। তা না হলে পাকিস্তানের সাথে এতগুলো ক্লোজ ম্যাচে শুধু বাংলাদেশই কেন হারবে?

পরিশিষ্ট ঃ আজকে মুশফিকের পেজে এই গদগদ ছবিটা দেখে চরম মেজাজ খারাপ হল, লম্বা ফর্সা পাকি দেখে মুশফিক পারলে তার কোলে উঠে বসে।
https://www.facebook.com/MushfiqurOfficial/photos/a.10150291976577012.336604.106131822011/10152859983482012/?type=1&theatre

-পিায়াল
aa_pial@yahoo.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এই দেশ থেকে আরব সাগরের হাওয়া না যাওয়া পর্যন্ত যতই ফিল্টার করেন কোন লাভ নাই। পাকিস্থানি খেলোয়াররা তো রীতিমতো আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েদের কাছে স্বপ্নের পুরুষ। তার চাইতে কষ্টের আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।

---------
রাধাকান্ত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সাকিবের প্রিয় দল পাকিস্তান এটা জানা ছিল, মুশের একই অবস্থা হলে তো খবর খারাপ ইয়ে, মানে...
ছবিটা দেখে মন খারাপ হল, আর তাতে গোল গোল মন্তব্য দেখে হল মেজাজ খারাপ মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

গগন শিরীষ  এর ছবি

পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। কারন তাহলে গাভাস্কারের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ইংরেজদের তুলোধুনো করত কিভাবে? ওদের অবস্থা তো ভারতের চেয়ে চাল ছিলিনা।পাকিস্তানের কাছে বারবার হারাটা মনস্তাত্বিক কিন্তু হীনমন্যতা বলে আমার মনে হয়না।আমার ধারনা পুনঃরাবৃত্তির ভয় থেকে এটা হয়। যে কারনে ফেদেরার বারবার নাদালের কাছে হারতেন।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কড়া সাপোর্টার ছিলাম একসময় মন খারাপ
এখনও বাংলাদেশ বাদে যোকোন দেশের সাথে খেললে ওদের পক্ষ নিই।

মাসুদ সজীব এর ছবি

পাকিস্থান সাপোর্ট করার চেয়ে লজ্জা জনক কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে পাপিস্থান সাপুর্টার বেশি, আর সেই সাপোর্টের মূল কারণ জিয়ার ইতিহাস ভুলিয়ে রাখা, তার পথ ধরে তার বংশধরদের সেই চর্চা অব্যাহত রাখা। সাকিব-মুশফিক তাই পাপিস্থান সাপোর্ট করা বিস্ময়কর কিছু নয়।

তবে আপনার গাভাস্কার-টেন্ডুলকার-কোহলির আচরণ ব্যাখার সাথে একমত না। এটা অনেকটা সহজাত বৈশিষ্ট্য, যেমন আমাদের তামিম শারীরিক ও মানসিক ভাবে আক্রমনাত্নক, এককালে পাকু আমির সোহেল ছিলো আক্রমনাত্নক, এমনকি আফগান ক্রিকেটারও শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক আক্রমনাত্নক। এদের কারোই ক্রিকেট বোর্ড অনেক বেশি ক্ষমতাধর নয়।

পাকি ক্রিকেটারাই মুশি-সাকিব-তানিমদের আইডল, এদের সাথে জিতবে কিভাবে। তা না হলে পাকিস্তানের সাথে এতগুলো ক্লোজ ম্যাচে শুধু বাংলাদেশই কেন হারবে?

বিষয়টা ঠিক এমন নয় বোধহয়। পাকুর সাথে এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয়ের পর সাকিব-মুশফিকদের কান্না এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে। জয়ের বাসনা তীব্র না হলে এমন অভিব্যক্তি আসে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

বাংলাদেশের ক্রিকেট প্লেয়ারদের সাথে একটা লম্বা সময় ধরে কাজ করার সুবাধে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে এরা মোটেও রাজনৈতিক ভাবে সচেতন না। রাজনীতির ব্যাপারে মাথাব্যাথা নেই কোন। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। পত্রিকার পাতায় তারা সাধারণত পড়ে শুধু খেলার পাতা। এবং সেখানে (অধিকাংশ পত্রিকায়) পাকিদের বীরত্বগাঁথা খুব আবেগ দিয়ে লেখা হয়। তো আমাদের দেশের প্লেয়ারদের পাকি প্লেয়ারদের প্রতি প্রেম বেশি থাকবে সেটা অস্বাভাবিক না। আর আমি আপনি যতই গালি দেই না কেন এই অবস্থার উন্নতি এত সহজে হবে বলে মনে হয় না।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ছোটবেলা থেকে খেলার পাতায় শোয়েব আক্তার, সাকলাইন, ওয়াসিম, ইনজামাম দের ছবি আর বীরত্বগাঁথা পড়ে পড়ে বড় যে কারও মমগজ ধোলাই হয়ে যাবার কথা।

দিগন্ত এর ছবি

গাভাস্কারের আমলের চেতন শর্মা বা সন্দীপ পাতিল একালের মহম্মদ সামি বা রাহানের তুলনায় অনেক উদ্ধত ছিল। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি-নির্ভর।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই ক্রিকেটাররা তো শাহবাগে গিয়েছিলো।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সবাই কি?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
গাভাস্কার-সচীন-কোহলীর তুলনাতা একটা হাইপোথিসিস; ভুল-শুদ্ধ দুটোই হতে পারে। আমার লেখার মুল চেষ্টাটা ছিল জাতিগতভাবে সুগভীর পাকিস্তানপ্রীতির আর তার পরিনতি পর্যবেক্ষণের একটা উদাহারন। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নাই; আমারা যেমন; আমাদের দল ও তেমনই হবে।

-পিয়াল

ড়াষেল  এর ছবি

এই পোষ্টটা অতিরিক্ত উদ্দেশ্যমূলক। এই ছবিটাতে বা ছবি সংলগ্ন বর্ননাতে মুশফিকের পাকিপ্রীতির কোন নমুনা, কোলে উঠার ইচ্ছা বা লদ্গদ ভাব কিছুই প্রকাশ পায়নি। বেচারা দুনিয়ার সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটারের সাথে, একটা ছবি তুলেছে (ফান করেই তোলার কথা এবং নিজে অন্যতম খাটো বলেই হয়ত)। খুব লদগদ হলে ওই লম্বুকে বাদ দিয়ে আফ্রিদির সাথেই তুলত। এটা নিয়ে এত জল ঘোলা করার কিছু নাই।
আর এই ক্রিকেটারা রাজনীতি বা ইতিহাস সচেতন না কথাটা খুব সত্যি না। কয়েকজনকে জানি তারা খুবই সচেতন এবং শাহবাগে শামিল হওয়া যদি সেটার নির্দেশক হয় তবে তাদের অনেকেই আমাদের অনেকের থেকে আগানো। খেলা থামিয়ে মোমবাতি জালানো, মানব বন্ধনে শামিল হওয়া বা সরাসরি শাহবাগে যাওয়া ... সবই তো করেছে ...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পাকিস্তানের জল আমাদের জন্য বরাবরই ঘোলা বাহে, এইখানে বিন্দুমাত্র ফান করার অবকাশটুকুও নাই। মুশফিক যদি "না বুঝে" করে থাকে তাহলে "বোঝানোর" জন্যই এই পাকিপোন্দন ক্যাম্পেইন জারি রাখা উচিৎ। আপনার কথা ধার করেই বলিঃ

এটা নিয়ে এত জল ঘোলা করার কিছু নাই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

সমস্যা হচ্ছে “পাকিদের ধরা দেবানি” এই মনোভাবটা আমদের ক্রিকেটারদের জীনে এখনো প্রবেশ করেনি।... বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে “পাকিস্তানকে যে হারানো সম্ভব” এই বিশ্বাসটাই তৈরি হয়না... এদের সাথে জিতবে কিভাবে।

মিথ্যা কথা। বিদ্বেষমূলক ও অপপ্রচারমূলক লেখা। আর বাংলাদেশ টীম সম্পর্কে আপনার ধারণা যদি এতই খারাপ হয়, তাহলে ওদের খেলা আপনার দেখার দরকার নেই। অন্য কিছু করুন।

****************************************

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সবিনয়ে দ্বিমত করছি মাঝি ভাই। কোনও এক প্রত্রিকার (আলুও হতে পারে) সাক্ষাৎকার মারফত বাংলাদেশের নবীন খেলোয়াড়দের "প্রিয় দল কোনটি" এর জবাবে প্রায় ৬০% উত্তরে পাকিস্তান দেখেছিলাম। আমাদের কাছে পাকিস্তান আর দশটা দেশের মত একটা দেশ নয় আলাদা কিছু- এই কথাটা না কেউ বুঝলে তাঁকে নিয়ে আমি আশাবাদী হতে ভয় পাই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

১। ঐ পত্রিকায় কি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল? আমরা কিন্তু জাতীয় দলের বিষয়ে কথা বলছি, যেকোন নবীন খেলোয়াড়দের বিষয়ে না। দুইয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে।

২। আমরা কিন্তু এই জায়গায় কে কার "প্রিয় দল" এমনকি সেটি নিয়েও কথা বলছি না। কথা বলছি "ধরা দেবানি এই মনোভাবটা" নিয়ে। একে আপনি রাইভালরি বা কম্পিটিটিভ এ্যাটিচিউড, ফাইটিং স্পিরিট, কিলার ইন্সটিংক্ট বা ঐ রকম কোন নামেও ডাকতে পারেন। এই দুইয়ের ("ধরা দেবানি" ও "প্রিয় দল") মধ্যেও পার্থক্য আছে বলে মনে করি। কেউ আমার "প্রিয় খেলোয়াড়" বা "প্রিয় দল" হলেই খেলার সময় তার বিরুদ্ধে আমার যথোপযুক্ত রাইভালরির মানসিকতা বা ফাইটিং স্পিরিট চলে যাবে - এই ধরণের কথায় আমার বিশ্বাস নেই। তাছাড়া, এটা চূড়ান্ত আনপ্রোফেশনাল মানসিকতা। এটা খুব বেশি হলে গ্রামে বড়ভাইদের বিরুদ্ধে বাচ্চা মেয়েদের দাড়িয়াবান্ধা বা কুতকুত খেলায় মানাতে পারে। বাংলাদেশ টীম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছে। তাদের যদি এইটুকু ন্যূনতম প্রোফেশনালিজম না থাকে, কুতকুত খেলার পুতুপুতু মানসিকতার উর্ধ্বে উঠার ক্ষমতা না থাকে - তাহলে ওদের অবিলম্বে খেলা ছেড়ে বাড়ি ফিরে ন্যাপি পরে ফিডিং বটলের নিপ্‌ল চোষা উচিত। চুষতে চুষতে হামাগুড়ি দিতে দিতে টিভিতে খেলা দেখুকগে। আমরাও বাঁচি তাতে!

পৃথিবীর সব নবীন খেলোয়াড়েরই বোধহয় প্রিয় খেলোয়াড় বা দল থাকে। থাকতেই পারে। ইন্ডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, সাউথ আফ্রিকান, শ্রীলঙ্কান - এদের কারওরই কি থাকে না? অনেক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা কি পৃথিবীর অনেক ফুটবলারের আইডল না? সেজন্যে কি বাস্তবে খেলার মাঠে কোন সিরিয়াস খেলায় ঐ আইডল বা "প্রিয় দল"-কে কি কেউ ছাড় দেয়, ভয়ে নেতিয়ে যায়, আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে??? একবার ভাল করে ভেবে দেখুন - এমনটাই যদি হত, তাহলে ক্রিকেট কেন, পৃথিবীতে কস্মিনকালেও কোন কম্পিটিটিভ স্পোর্টই খেলা সম্ভব হত না। কোন বিখ্যাত দল বা প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কোন উদীয়মান দল বা খেলোয়াড়ই কোনদিন জিতা দূরে থাকুক, খেলতেই পারত না। হেগেমুতে মাঠ ছেড়ে ভেগে যেত। কিম্বা বিশ্বব্রম্মাণ্ডের কোন বিখ্যাত দল বা খেলোয়াড়ই অন্যকোন খেলোয়াড়ের "প্রিয়" হতে পারতেন না কোনদিনও! কিন্তু, বাস্তবে তাতো হচ্ছে না। আমাদের চারপাশেই সারা পৃথিবী জুড়েই প্রতিটি স্পোর্টেই "প্রিয়"-রা, আইডলরা, নানাভাবেই তাদের গুণগ্রাহীদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়েছেন, হচ্ছেন। তাঁদের শুন্য রানে আউট করে গুণগ্রাহী প্রতিপক্ষ, রেকর্ড রানে হারিয়ে দেয়, তাঁদের বিরুদ্ধে বেয়াদবের মত সেঞ্চুরি করে, গণ্ডা-গণ্ডা গোল দিয়ে দুনিয়া চমকে দেয়, নক-আউট পাঞ্চ কষে রিঙে শুইয়ে দেয়, আরও কত কিছু। কিন্তু এজন্যে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের "প্রিয়" হওয়া আটকায় না। কোন খেলোয়াড়কে প্রিয় বলা মানে তো তার কাছে নিজের পশ্চাদ্দেশ বিক্রি করে দেয়া নয়, আত্নমর্যাদা ও আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা নয়। বরং তার কোন একটা খেলোয়াড়ি গুন বা স্কিলে মুগ্ধ হয়ে সেটা এপ্রিশিয়েট করা। এই মুগ্ধতা বা ভালবাসাই কি একজন তরুনকে গোড়াতে ঐ খেলায় টেনে আনে না, এবং পরে উৎকর্ষের উচ্চস্তরে যেতে প্রেরণা যোগায় না? এই মুগ্ধতাবোধ যদি তার না থাকত, তাহলে কি সে খেলোয়াড়ই হত আদৌ? হতে পারত? কোনরকম প্যাশন বা মুগ্ধতাবোধ ছাড়া স্রেফ জীবিকা-উপার্জন বা ভবিষ্যতে কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা ও খ্যাতি কামানোর অতি বরফশীতল-মস্তিষ্কের সুদূরপ্রসারী ধান্ধাতেই বিশ্বব্যাপী কিশোর-তরুনরা মাঠে খেলতে আসে?

কি জানি, আমি এসব বিষয়ে আসলেই তেমন জানি না - আপনি বা লেখক হয়তো ভাল জানেন। আমি শুধু এটুকু বুঝি - স্কিল বা গুণের মূল্যায়ন আর আসল খেলার মাঠে ফাইটিং স্পিরিট মিউচুয়ালি-এক্সক্লুসিভ বা পরস্পর-বিবর্জিত কোন বিষয় না।

তাই আমি আবারও বলবো, পাকুরা আমাদের খেলোয়াড়দের "প্রিয়" হোক বা না হোক -

“পাকিদের ধরা দেবানি” এই মনোভাবটা আমদের ক্রিকেটারদের জীনে

প্রবেশ করতে বা তাদের সেই আত্নবিশ্বাস তৈরি হওয়াতে আমি কোন বাধা দেখছি না। যদি তাদের মধ্যে সেই ফাইটিং স্পিরিটে ঘাটতি দেখাও যায় (আমার মতে যায় না), তাহলে তার কারন অন্য। কোন "প্রিয় দল"-টল না। এবং এইরকম ক্ষেত্রে তাদের মনোবিজ্ঞানী বা স্পোর্টস্‌ সাইকোলজিস্ট দেখানো দরকার, পলিটিকাল এডুকেশন দিয়ে কাজ হবে মনে হয় না। তবে তার আসলে দরকার নেই মনে হয় - উপরে আরেকজন মন্তব্যকারী উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের কাছে হেরে বাংলাদেশ দলের তীব্র কান্নার কথা। জয়ের আকাঙ্খা - ধরা দেবানির আকাঙ্খা - যে তাদের কত তীব্র ছিল, তাদের ভিতর যে সেই আগুনটা ছিল, এটাই তার প্রমান।

সব কথার সার কথা - আসলে আমাদের সমস্যাটা হল বর্তমান বাংলাদেশ টীমের মধ্যে আমরা আমাদের কাঙ্খিত রাজনৈতিক, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সচেতনতা ও উপলব্ধি ও সেই উপলব্ধির প্রতি যথাযত্থ আনুগত্যের পূর্ণ বহিপ্রকাশ দেখছি না ঠিকমত বা মনোমত। এ ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ ঠিক আছে। এই চেতনা ও তার প্রতিফলন আমরা তাদের কাছে আশা করতেই পারি, যদিও সম ও সহপেশাজীবীদের সম্মেলনে যাদের সাথে একই সাথে পারফর্ম করতে হয় সেরকম একটা আন্তর্জাতিক পরিসর ও পরিবেশে, সেটা কতটুকু তীব্রভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব জানি না (জাতিসঙ্ঘ মিশনে এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনিকেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনি - ৭১-এর গণহত্যাকারীদের সরাসরি পেশাগত উত্তরাধিকারীদের - সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে হয় বা হয়েছে অনেক সময়। সিনিয়র পাকুদের স্যালুট করতে হয় বা কমান্ডে থাকলে এমনকি কমাণ্ডও মানতে হয় বলে শুনেছি!!!)। তবে তাদেরকে (ক্রিকেটার) টার্গেট করে একটা পলিটিকাল এওয়েরনেস বিল্ডিং ক্যাম্পেইন বা ইতিহাস-সচতনতা-বৃদ্ধি প্রকল্প চালাতে পারি। কিন্তু সেজন্যে বাস্তব সম্পর্ক-বহির্ভূতভাবে তাদের খেলোয়াড়ি প্রেফারেন্স আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের পদে পদে দৃশ্যমান-ভাবে অনুগামী বা পরিতোষক নয় বিধায় তারা জেনেটিকালি ক্রিপল্‌ড্‌, মেন্টালি রিটার্ডেড এবং স্পোর্টিভলি ইম্পোটেন্ট বা ইনকম্পিটেন্ট এবং সর্বোপরি ডিফিটিস্ট মানসিকতার বেশরম ধ্বজাধারী প্রায় বেঈমান - এইধরণের কথা বলা তাদের প্রতি চূড়ান্ত অবিচার বলেই মনে করি। উদ্ধৃত বাক্যগুলির এক্সপ্লিসিট ও ইমপ্লাইড অর্থ কিন্তু এরকমই। ঠিক একইভাবে তীব্রভাবে আপত্তি জানাই আমাদের প্রাক্তন জাতীয় ক্যাপ্টেন সম্পর্কে এইরকম অশ্লীল মন্তব্যে -

লম্বা ফর্সা পাকি দেখে মুশফিক পারলে তার কোলে উঠে বসে

তাই আমি এটাকে বিদ্বেষমূলক ও অপপ্রচারমূলক লেখাই বলব লেখকের কাছ থেকে জোরালোভাবে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত। আর তা না হলে বলব, বাংলাদেশের ক্রিকেট বাদ্দিয়ে উনি যেন অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করেন।

****************************************

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। যেকোনো নবীন খেলোয়াড় না, মাঝি ভাই, জাতীয় দলের সবার সাক্ষাৎকার ছিল ওখানে। আর তখন যারা নবীন ছিলেন, এখন তাঁরা সবাই সিনিয়র তারকা প্লেয়ার। (ওপরের মন্তব্যে আমার ভাষাগত দূর্বলতাজনিত বিভ্রান্তির দায় আমিই নিচ্ছি)

২। এ দুটোর মাঝে কোন কো-রিলেশন আছে কিনা আমিও নিশ্চিত নই। পাকিস্তানের ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। আবারও বলিঃ "আমাদের কাছে পাকিস্তান আর দশটা দেশের মত একটা দেশ নয় আলাদা কিছু- এই কথাটা না কেউ বুঝলে তাঁকে নিয়ে আমি আশাবাদী হতে ভয় পাই।"

বর্তমান বাংলাদেশ টীমের মধ্যে আমরা আমাদের কাঙ্খিত রাজনৈতিক, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সচেতনতা ও উপলব্ধি ও সেই উপলব্ধির প্রতি যথাযত্থ আনুগত্যের পূর্ণ বহিপ্রকাশ দেখছি না ঠিকমত বা মনোমত।

এই কথাটুকুই মনে হয় আমারও কথা। হাসি

লেখকের প্রতি করা প্রশ্নের উত্তরের জন্য লেখকের অপেক্ষাতেই রইলাম।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত; কয়েকটা নতুন মন্তব্য এসেছে, দেখা হয়নি। ক্যানবেরা- ব্রিসবেন গিয়েছিলাম খেলা দেখার জন্য, অনলাইনে সেভাবে আসা হয়নি ।

নাহ, কোন জোরালোভাবে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারছিনা, মন মাঝি ভাইয়ের বিশ্লেষণের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আর ভাববো না, লিখবো না। আগামীকাল বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য মেলবোর্ন যাবার কথা ছিল, টিকিটটা অন্য একজনকে দিয়ে দিলাম।

-পিয়াল

ড়াষেল  এর ছবি

এই লেখক এখন কি বলবেন? অন্তত তার এসে বলা উচিত যে তার বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভুল ছিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।