তাঁরাদের খোঁজে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৩/২০১৫ - ৭:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Stephen Hawking এক জায়গায় বলছেন - “… to me philosophy is dead". এই রকম ‘রুঢ় ধৃষ্টতা’র সাহস আমার অবশ্যই নেই তবে মুক্তচিন্তা মানে যে চিন্তার বিলাসিতা করা নয় তা অবশ্যই বোঝা যায়। গুরুবাদী দুর্বলতা আর অন্ধ বিশ্বাসী হয়ে মুক্তমনা হওয়া যায় না, সৌখিন ভাববাদী হওয়া যায় হয়তো। Einstein এর মতো বিজ্ঞানীও তার বিশ্বাস থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন Quantum Mechanics সম্পর্কে। কারণ বিজ্ঞানে যুক্তিই শেষ কথা কোন ব্যক্তি বিশেষের বা গোষ্ঠীর বিশ্বাস বা ধর্মশাস্ত্রের পবিত্র বাক্য নয়। তাই যুক্তিবাদী মানবধর্মী মুক্তচিন্তায় বিজ্ঞানের প্রবেশ অবশ্যম্ভাবী। আর তারই হাত ধরে প্লেটো অ্যারিস্টটলের বিশ্বভাবনা থেকে “God doesn't play dice” ছাড়িয়ে আজ আমরা অনেক দূর পথের পথিক।

মুক্তমনারা যেহেতু সমাজের তথাকথিত স্রোতের বিপরীতে হাঁটেন এবং তারা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তাই তাদের ভাবনাকে অন্যের কাছে মুক্তমনে পৌঁছে দেয়াও তাদেরই দায়িত্ব। তাই অন্যের ভাবনাকে বারংবার হাতুড়ি আঘাত করে শ্রোতা হিসেবে তাকে বিষিয়ে দিয়ে সেই মত বিনিময়ের সুসম্পর্ককে নষ্ট করা উচিত নয় বলেই আমার মনে হয়।

আপনি আস্তিক নাকি নাস্তিক তাতে আমার বয়েই গেল। আমি চাই আমি একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানবতাবাদী মানুষ হই। আমি চাই আপনিও একজন যুক্তিনিষ্ঠ অহিংস মানুষ হন। আমি চাই আমার কলমের জবাব আপনি কলম দিয়েই দিন। মুক্তমনে আমাদের আলোচনা হোক, হোক বিতর্ক, দ্বন্দ্ব। আপনি হন না আপনার ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু যখন প্রমাণ দিলাম এই পৃথিবী আপনার বাইবেলের মতো ছয় দিনে সৃষ্টি হয়নি, এই পৃথিবীর আজকের পৃথিবী হতে সময় লেগেছে কয়েক কোটি বছর, তখনও বলেছি সন্দেহ করুন আমার প্রমাণকে, প্রশ্ন করুন আমার বিজ্ঞানকে। মুক্তমন তো প্রশ্ন করবেই। কিন্তু তার সাথে সাথে অন্তত একটু সন্দেহ করুন আপনার পবিত্র গ্রন্থকে, তাকেও একটু প্রশ্ন করুন। আমি তো আমার নিজের তৈরি কোন পথে চলছি না। প্রতিদিন অল্প অল্প করে জ্ঞানের দ্বার খুলছে, যুক্তি তর্ক পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের পথ তৈরি হচ্ছে, আমি তাকেই অনুসরণ করছি। এই ফলাফল যদি আপনার কংক্রিটে বাঁধানো পথের সাথে মিশত তবে তো আমরা একই পথেরই পথিক হতাম। বলতে পারেন অনেকটা উদ্ভ্রান্ত হয়েই ঐ পথে চলতে শুরু করেছি আমি। আপনি বললেন আল্লাহ্‌ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি নিরাকার। আপনার মতই আর এক জ্ঞানী বললেন তিনি আকার ও নিরাকার উভয়ই, তিনি আছেন বহুরূপে। আপনার আল্লাহ্‌ এ ধরায় কখনো আসেন বলে শুনিনি। উনি বললেন তিনি আসেন এবং বারংবার আসেন, বহু রূপে আসেন। আপনি বললেন সবার বিচার হবে কেয়ামতের দিন। যিনি আজ মারা গেলেন তাকেও বিচারের জন্য সেই দিনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। উনি বললেন বিচার হবে ঝটপট, তারপর আবার এই কয়েদ খানায়, ‘হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শঙ্খ চিল শালিকের বেশে’। একটু আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবুন, একটু একটি দুটি প্রশ্ন করুন, দেখুন কতোটা জিলাপির প্যাঁচে পরে ঐ ‘অনিশ্চিত’ পথে চলতে শুরু করেছি আমি।

ধর্মের সাথে আমার দ্বন্দ্ব নয়। আমার পথ চলা মুক্তমনের সাথে, সত্য সন্ধানের সাথে। আর তাতে যদি দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে পড়ে তবে তার দায় আমার নয় বিজ্ঞানের। আমি অনেককে দেখেছি যারা তাদের নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস থেকে কী সুন্দর বেঁচে থাকার প্রেরণা, কঠিন সময়ে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ, কর্মোদ্যম খুঁজে পাচ্ছেন। আমি দেখেছি সেই অনাথ মানুষটিকেও যার অগাধ বিশ্বাস তার কেউ নেই তো কি হয়েছে - তিনি সেই অসীম করুণাময় আছেন সবসময় তার পাশে। আমি সেলাম জানাই তার এই সরল বিশ্বাসকে। দীপা মেহেতার Water সিনেমায় (যে সিনেমা ওয়েস্ট বেঙ্গলে শুট হতে পারেনি হিন্দুধর্মীও মৌলবাদীদের জন্য) সেই সব শতশত হিন্দু বিধবারা, সমাজের জাঁতাকলে পিষ্ট নারীরা হয়তো অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি না তারা তাদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকার এতটুকু সান্ত্বনা খুঁজে পেতেন। কে কিভাবে তাদের বেঁচে থাকার মানসিক রসদ খুঁজে পাবেন সে তো তাদের নিজ নিজ বিচার।

কিন্তু তারপর?

আমার এক ধর্মপ্রেমী (ধর্ম উন্মাদ নয়) বন্ধুকে এসএমএস করেছিলাম – মুক্ত চিন্তার সাথে কি ধর্মের বিভেদ আছে? আমার তো তাই মনে হয়। সে উত্তরে বলল – আপাত দৃষ্টিতে আমারও তাই মনে হয়, তবে সত্যিই বিভেদ আছে কিনা তার জন্য আমাকে আরও ধর্ম শাস্ত্র পড়তে হবে। সে আরও যুক্ত করল – তবে মুক্তমনারা যেভাবে অন্যের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করে তা নিয়েও তাদের ভাবা উচিত। আমি তার প্রত্যুত্তরে ধর্মবিশ্বাস শব্দটিকে কোটেশনে রেখে হেসেই ফেললাম। বললাম, মনেকর Geology, Anthropology, Image Processing, Carbon Dating আরও ইত্যাদি ইত্যাদি বিজ্ঞানের সহায়তায় তথ্য পাওয়া গেল রাম সেতু প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়েছে মনুষ্য সৃষ্ট নয় এবং তার উৎপত্তিকালও রামায়ণে বর্ণিত সময়কালের সাথে মিলছে না। এখন যদি এই ‘এক্সপেরিমেন্ট’ এর কথা অর্থাৎ পরীক্ষালব্ধ বাস্তবতার কথা সবাইকে বলা হয় তবে তো লক্ষ লক্ষ ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রচণ্ড আঘাত করা হবে।

২০০৭ এ ভারতবর্ষের সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছে এই রকমই বিষয়ে হলফনামা চাওয়ায় সরকার দাবি করেছিলেন Archaeological Survey of India (ASI) এর কাছে এই রকম কোন ঐতিহাসিক তথ্য নেই যার দ্বারা বলা যায় রাম সেতু মনুষ্য সৃষ্ট। আপনার ভাবাবেগে আঘাত লাগলো। আপনার ভাবাবেগ বেশ অদ্ভুতুড়ে ঠুনকো বলেই আমার মনে হয়। আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন কি যে এই ভাবাবেগ আপনার কোন গুন নাকি দুর্বলতা? যে ধর্মের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে অজন্তা, ইলোরা, খাজুরাহের সমকাম, পশুর সাথে যৌনতা, যে ধর্মে লিঙ্গ পুজোয় যোনি পুজোয় মা মেয়ে বউকে নিয়ে একসাথে ফুল জল ছেটাচ্ছেন (যারা বলেন শিব লিঙ্গ কেবল রূপক তারা অর্ধসত্য জানেন। হিন্দু ধর্মকে বাঁচানোর দায় আপনার আমার থেকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের যেহেতু অনেক অনেক বেশী, তাই তাদের পর্যালোচনামুলক গ্রন্থ গুলোকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরাই যায়। তাদের সনাতন ধর্ম সম্বন্ধীয় বইয়ে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রেফারেঞ্চ দিয়ে বলা হয়েছে শিব লিঙ্গ কোথাও রূপক আবার কোথাও বাস্তব), যে ধর্মে নগ্ন নারী মূর্তির বারোয়ারি পূজো হয় সেখানে কে কোন মকবুল নামের হরিদাস পাল কি আঁকলো তাতে আপনার ভাবাবেগে এতো আঘাত লাগলো? আজকাল বিজ্ঞাপনী প্রতিযোগিতামূলক দুর্গা পূজোয় দেবী যে অঙ্গ ভঙ্গিমায় সল্পবসনায় এক্সপোজড হন তখন তো আপনার ভাবাবেগে লাগতে দেখিনা।

একটি ১৫০ বছরের পুরনো প্রকৌশলী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন বিশেষ মানুষের বিশেষ বিশেষ ইমেজ কে হাইলাইট করে একটি হিন্দু আধ্যাত্মবাদী সঙ্ঘ জায়গা করে নিয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র শিক্ষক সমাবেশে যখন উচ্চস্বরে বলে- evolution এর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি স্বামী বিবেকানন্দ, তার থেকে ভাল কেউ আর আসবেনা আর আগেও কখনো ছিলনা, তখন সেই সমাবেশের একজন একটু আধটু বিজ্ঞান মনস্ক অপদার্থ হয়ে আমারও ভাবাবেগে আঘাত লাগে বন্ধু। CERN এর এত বড় একটি সত্য সন্ধানী পরীক্ষার পরে ইতিউতি হিগস-বোসন কণার কথা শোনা গেলেও এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উপর কোন সেমিনার আলোচনা না হলেও ‘হিন্দু ধর্ম ও কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর মেলবন্ধন’ নিয়ে আপনাদের দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনাও ভাবাবেগে আঘাত করে। যে বিজ্ঞানমহীয়সী নারী দুবার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যিনি রেডিও অ্যাক্টিভিটি নিয়ে গবেষণা করতে করতেই মৃত্যুবরণ করলেন, এই স্বনামধন্য বিজ্ঞান মন্দিরে একটি Girls Hostel ও তার নামে হতে পারেনা বা হওয়া উচিত বলে সেই ভাবনাই হয়তো মনে আসেনা; কারণ রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ অনুরাগী হয়ে মা সারদা, নিবেদিতার আগে অন্য নারীদের স্মরণে আসার কথা নয় যে আপনার। ভাবাবেগে আমারও আঘাত লাগছে বন্ধু।

আমি কখনো হিন্দুবাদী, ইসলামবাদী, বিবেকানন্দ বা মার্ক্স, গান্ধীবাদী হতে চাইনি। আমি ‘আমিবাদী’ হতে চেয়েছি। যে আমিবাদ অল্প অল্প করে গড়ে উঠবে আমৃত্যু। যা একটু মার্ক্স একটু গান্ধী একটু রবীন্দ্রনাথ একটু আপনি একটু আমি একটু পাড়ার ফুচকাওয়ালা, খবরের কাগজওয়ালা, কুলি, মুচি, মেথরের ভাবনা নিয়ে গড়ে উঠবে অল্প অল্প করে। যেখানে ঠুনকো ভাবাবেগ থাকবে না, থাকবে না কোন অন্ধ কৃষ্টি কালচারের বড়াই। সাহস থাকবে নিজের প্রগাঢ় বিশ্বাসকেও প্রশ্ন করার। প্রতিহিংসায় অস্ত্র তুলে নেয়ার কব্জির জোর নাই থাকল, থাকবে কলম ধরার আঙুলের জোর। তবে তা ‘বড্ড বেশী বাস্তব’। প্রিয়জনের কঠিন বিপদে যেখানে আমার করার মতো আর কিছুই রইল না তখন ‘ঈশ্বর তুমি আছো’ বা ‘আল্লাহ্‌ তুমি দেখ’ বলার মধ্যে যে সান্ত্বনা ও অলৌকিক কিছু ঘটার বিশ্বাস রয়ে যায় সেখানে ‘যা হবে তাই বাস্তব’ বা ‘সবই ভালো হবে’ গোত্রীয় কেবল নিজের প্রতি ও বাস্তবতার প্রতি প্রগার বিশ্বাসী হওয়ার মধ্যে হয়তো একটা অসহায়তার ও বেদনার ছবিই ধরা পরে। হয়তো এই জায়গা থেকেই অজ্ঞেয়বাদের (Agnosticism) জন্ম। হাজার বছরের সাইকোলজী যা প্রজন্মের পরে প্রজন্ম আমরা লালন করে এসেছি তার প্রাচীর ডিঙানো এতটা সহজ হবে কি?

সমাজের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে ধর্ম সংস্কৃতি থেকে আবার কখনো ধর্ম বিশ্বাসকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে সমাজের বিধানমালা, নিপীড়নের জাঁতাকল; যার দায় আপনার আমার সকলেরই কম বেশী। সত্যিই তো আমরা এত অজস্র বিভেদ মাথায় নিয়ে দিব্যি বেঁচে চলেছি - আপনি সাদা না কালো, হিন্দু না মুসলিম, নারী না পুরুষ, উঁচু জাতের না নিচু, ধনী না গরীব আরও কত কী তার জন্য ধর্মের পরোয়া নাই বা করা হল। Honor Killing, পোশাকের ফতোয়া, কে কি খাবে, কি দেখবে, কি পড়বে এত সবের দাদাগিরি করতে ধর্ম আপনাকে ইন্ধন জোগাতেই পারে তবে না জোগালেও কিছু যায় আসে কী? তবে ‘এ সহি ইসলাম নয়’ গোত্রীয় যারা এতক্ষণ পড়ে আত্মতুষ্টির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন তারা একটু ভেবে দেখুন না- এই মাতব্বরি, সংস্কৃতির ছলাকলা, তালিবান বোকোহারাম আইসিস আর ভঙ্গুর ভাবাবেগ বাদ দিয়ে যদি কিছু আর বাকী থেকেই থাকে আপনার ধর্মে তবে সেটি হয়তো মানবতা, মানুষই যার ঈশ্বর, যার হিন্দু মানবতাবাদ কি মুসলিম মানবতাবাদ বলে কিছু হয় না, যেমন হয় না মৌলবাদের। এবং এখানে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে আমার হয়তো অনেক মিল। শুধু আপনার বিশ্বাস বা পরজন্মের প্রেমে আপনার মানবতার এক সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ ঈশ্বর রয়েছেন আমার নেই। তাই হয়তো আমি ঘৃণ্য ‘নাস্তিক’, ছুরি ভোজালির আঘাতে খুন হওয়ার যোগ্য, আপনাদের একটি অভিজিৎ।

_______দেবাশীষ


মন্তব্য

অরফিয়াস এর ছবি

চিন্তাগুলো লেখা হিসেবে আসতে থাকুক। লেখা চলুক। চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চিন্তাকে মুক্ত করার সাহস ধর্মের নেই। চিন্তার কুপমণ্ডুকতার রসে ধর্ম বাঁচে। সেইজন্য আপনার আমিকে আপনার মতো করে উদার চোখে সত্য-মিথ্যা বিবেচনার অনুমতি ধর্ম দেয় না।
বিজ্ঞান তার উল্টো। বিজ্ঞান মুক্ত বিবেচনাতেই বাঁচে। বিজ্ঞানকে ভুল বললে বিজ্ঞান প্রতিরোধ করে না, বরং বিজ্ঞানকে যৌক্তিকভাবে ভুল প্রমাণ করলেই বিজ্ঞানের খাঁটি অংশটুকু প্রতিষ্ঠা পায়। বিজ্ঞানকে যে যুক্তি ভুল প্রমাণ করে, সেটাও বৈজ্ঞানিক যুক্তি। সেটাও বিজ্ঞানেরই অংশ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

“বিজ্ঞানকে যে যুক্তি ভুল প্রমাণ করে, সেটাও বৈজ্ঞানিক যুক্তি। সেটাও বিজ্ঞানেরই অংশ”। বেশ সুন্দর বলেছেন। তবে মানসিকতার অচলায়তন ভাঙতে সময় তো লাগবেই। সাথে সাথে আমাদেরও আরও ধৈর্যশীল হতে হবে। আমাদেরও তো অনেক পথ চলা বাকী। বিজ্ঞানমনস্কতাও যে একপ্রকার সাধনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। তবে লেখার সীমাবধ্যতাগুলোও বলবেন।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
চমৎকার একটা লেখা। আরও লিখুন হাত খুলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। প্রেরণা যোগাল।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এতো মাত্র শুরু। এখন কেউ হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু আরো যখন এগিয়ে যাবেন, তখন অভিজিৎকে মনে করিয়ে দেবে আপনাকে। এইখানেই পার্থক্য। এইখানেই মানবিকতার মৃত্যু হয়।

লিখতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

মানবিকতার কি সত্যিই মৃত্যু আছে? সে যে মনের বিবর্তন – এগিয়ে চলবে প্রজন্মের পরে প্রজন্ম। তাইতো আমরা স্বপ্ন দেখি নতুন ভোরের যখন কোন অভিজিতকে আর এভাবে হারাতে হবেনা।
_________দেবাশীষ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভালো লেখা। চলুক লেখালেখি।

বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ এখন একটা ট্রাঞ্জিশানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছি। বিজ্ঞানমনস্ক একটা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, বা আরও শুদ্ধভাবে বলা যায় প্রজন্মের একটা অংশ অন্তত ছোট অংশ হলেও কিছুটা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠছে। কিন্তু এর বিপরীত রাজনীতিটা খুব ভয়াবহ। অভিজিৎ রায় মারা যাবার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীলদের বুদ্ধিজীবি মুখপাত্রগোষ্ঠী যেন বিজ্ঞানমনস্কতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছেন। ফরহাদ মঝার আর ফাহাম সালামের অতি সাম্প্রতিক দুইটি [১] [২] আর্টিকেল অভিজিৎ রায় হত্যার এত দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশ হতে দেখে মনে হচ্ছে একটা ধর্মান্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ প্রজন্ম তৈরি করার রাজনীতির বীজটা অনেক গভীরে রোপন করার চেষ্টা হচ্ছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ফাহাম আবদুস সালাম দেখলাম নিজেকে "লাইফ সায়েন্সের লোক" বলে দাবী করেছেন। লেখা পড়ার তিনি "লাইফ সায়েন্স"-এর অর্থ বোঝেন কিনা, সে ব্যাপারে আমি কিছুটা সন্দিহান হয়ে গেলাম। আর লেখার মধ্যে নতুন কিছু নেই; সেই "এরাও যেমন খারাপ, ওরাও তেমন খারাপ"-টাইপের ব্যালেন্স করা লেখা, যা আদতে বিজ্ঞানবিরোধী।

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। ধর্মের কাছে এক অর্থে বিজ্ঞান শিশু। কারণ ধর্ম চলছে সহস্র বছর ধরে আর বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু তার অনেক অনেক পরে। তাই সময় লাগবে। আরও অনেক অভিজিৎ আত্মত্যাগ করবেন। কোন একদিন এই সকল লেখারই হয়তো আর প্রয়োজন পরবেনা।
_________দেবাশীষ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলে স্বাগতম দেবাশীষ! নিয়মিত লিখতে থাকুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। সময় করে আবার লিখব। যেহেতু কলম দিয়ে দ্বিচারিতা হবেনা তাই সময় লাগবে।
--------দেবাশীষ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম দেবাশীষ, লিখতে থাকুন।
আমরা বিজ্ঞানও চাই, বিজ্ঞানবাদিতাও চাই। শয়তানী হাসি

মডুরা কি কেউ শিরোনামের অনাবশ্যক চন্দ্রবিন্দুটা খসিয়ে দেবেন?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সাক্ষী সত্যানন্দ সঠিক বলেছেন। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমি দুঃখিত। সময় খুব কম পাচ্ছি নিজেকে নিয়ে ভাবার, তাই পরবর্তী লেখা আবার কবে হবে বলা যাচ্ছেনা। আপনি অবশ্যই জানেন যে শুধু লিখতে হবে বলেই লেখা যায়না। তবে আপনাদের সকলের মতামত প্রেরণা যোগাচ্ছে।
--------দেবাশীষ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো। বিজ্ঞান এবং বিশেষত যুক্তিবিদ্যা নিয়ে আরো লেখা প্রত্যাশা করি।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ স্বয়ম। অবশ্যই লিখব। বিজ্ঞানই আমার চেতনার উৎস। আমার পরবর্তী লেখার বিষয় হবে ভাগ্য; বিজ্ঞান কি বলছে এটি (Luck) নিয়ে; যদি না এর মধ্যে অন্য কোন অভিজিৎ চলে গিয়ে লেখার বিষয়টাকে পালটে দেয়।
_________দেবাশীষ ( অনুরণন )

moni seth এর ছবি

লেখাটা দারুন লাগল, কিন্তু আমার মনে বাস্তবের ১ ভিন্ন প্রশ্ন , আচ্ছা ভাই বলতে পারেন, আমার বাড়ির ঠিক পাশেই বিজ্ঞানের ১ অবদান (মোবাইলের টাওয়ার) বাসানো হয়েছে , জোর করে , কিছু লোককে দক্ষিনা দিয়ে । আমি তার জন্য হওয়া ক্ষতির হাত থেকে কেমন করে বাঁচি ? আমার ১টা ভিন্ন প্রশ্ন - ভাই বলতে পারো কোন ধর্ম বলেছে মানুষ কে মেরে কেটে যেখানে যা খুসি করো ? কোন ধর্ম বিশ্ব যুদ্ধ বাঁধিয়েছে ? বিজ্ঞানের বই পরে জেনেছি , শুধু মানুষই নয় , সমগ্র জীব কুলকেই নিজের বাঁচা নিশ্চিত করতে খুন করতে হয় অন্য জীবকে , আমাদের ধর্ম শুধু বলে ভাই , পূজা দিয়ে বলি দাও, তারপর তার কিছু অংশ বিতরণ কর, শেষে নিজে খাও , তোমরা পরিসংখ্যানে মাপো জীবনের ক্ষয়ক্ষতি, দাও কিছু পরিসংখ্যান, হোক তর্ক । দেখি কোন নির্দিষ্ট ১ ধর্মের আঁতুড় ঘর থেকে উঠে আসে কিনা কোন বিজ্ঞানভিত্তিক গালাগালি। হে হে , মানুষকে বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে / বিজ্ঞানের কারিকুরি দিয়ে যখন মানুষ মারা হয় তখন কোথায় থাকে ওই বিজ্ঞানের বিড়াল তপস্বীগণ, ১ বোম যখন নিমেষে ধ্বংস করে ১০০০- ১০০০০০ প্রাণ ? হ্যাঁ ধর্ম নিয়েও বহু হানা হানি হয়েছে- হচ্ছে -হবে, কারন ? ওই সব তথা কথিত শিক্ষিত বিজ্ঞানের অনুরাগীগুলো । তারা শিক্ষা পেয়ে বেদে কে সাপের চিকিৎসার হাথিয়ার করে তুলতে চায় না , শেখাতে চায় পুরুত কে। ওই বিজ্ঞানের দালাল গুলো ভাবের ঘরে চুরি করে চলেছে। এই সব কথা বললে বিজ্ঞানের এই আন্তরজাল ছেড়ে পালিয়ে বাঁচে , আয় দেখি নিয়ে চ তোদের শিক্ষিত এঁরে ডাক্তার গুলোকে প্রত্যন্ত গ্রামে , সত্যি যদি পারিস তখন দেখবি , কাদা মাখা জ্যান্ত দেহ গুলো আর পাথর পূজা করবে না , তোদেরই পুজবে, ভালোবেসে সেদিন যদি তোদের জন্য বলি দেয় তাদের আদরের ছাগলটাকে , হে হে , তখন দেখব কেমন তোদের শিক্ষিত জিভ দিয়ে নাল না বেড়িয়ে , বলে ওঠে "বলি দিস না, কুরবানি খারাপ" হয়ত তোর আঁতেল বন্ধু তোকে চোখ টিপে কানে কানে বলবে "বোকা গুলো যদ্দিন এমন থাকে তদ্দিন মঙ্গল"

দেবাশীষ (অনুরণন) এর ছবি

আপনার বলার দৃষ্টিকোণ আমি হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছি। তবে “১ বোম যখন নিমেষে ধ্বংস করে ১০০০- ১০০০০০ প্রাণ ?” – এগুলো বেশ সরলীকরণ হয়ে গেল। আমি একটি কলম দিয়ে লিখব নাকি খুঁচিয়ে কারো চোখ তুলে নেব সেটা আমার চেতনাবোধ বলবে, কোন ধর্মশাস্ত্র নয়। আর মোবাইল টাওয়ারে না হয় বিজ্ঞানের অনেক কাঠ-খর পোড়াতে হয়েছে কিন্তু বিঁড়ি বানাতে তো হয়নি; প্যাসিভ স্মকিং এও বেশ ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু। মানবতাবাদই যদি একমাত্র ধর্ম হয় তবে কোন ধর্ম, বিজ্ঞান বা অর্থনীতিই মানুষ মারতে বলেনি। সেই মানবাতাবাদের উন্মেষের জন্য বিজ্ঞানমনস্কতা অনেক বেশী জরুরী, ধর্ম নয়। ‘বিজ্ঞানের দালাল’ বা ‘বিড়াল তপস্বী’রা তাই অনেকটা ‘মূর্খ বন্ধুর থেকে জ্ঞানী বন্ধু শ্রেয়’ এর মতো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।