কবর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৩/০৫/২০১৫ - ২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আইফোনের এলার্মের কর্কশ কন্ঠে ধড়ফড় করে লেপ ছেড়ে উঠে বসে শাহেদ। লাল ঘুম জড়ানো চোখ, উস্কোখুস্কো চুল, একটু সময় লাগে ধাতস্ত হতে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, সাদা তুলার মত তুষারে ঢেকে আছে গাছ, পার্কিং লট, গাড়ি সব কিছু। গজগজ করতে করতে ভাবে, আজকেও অফিস যাওয়ার আগে গাড়ির বরফ সাফ করার হ্যাপা। টলমল পায়ে, আইফোনটা হাতে নিয়ে শাহেদ পা বাড়ায় বাথরুমের দিকে, আর আনমনে নিজের কোমর চুলকাতে থেকে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে।

রুমার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় আর্তচিৎকার শুনে। বাথরুমের ভেতর থেকে শাহেদের আর্তচিৎকার আবার শোনা যায় "আয় হায়!! আয় হায়!!! কী হইল এইটা!!" রুমা গলা চড়িয়ে বলে, "কী হইল! ঠিক আছো তো?" বাথরুমের ভেতর থেকেই শাহেদের চাপা গলা ভেসে আসে " অভিজিৎ রায়কে বইমেলায় মেরে ফেলসে, দেখসো?"
"অভিজিৎ রায় কে?"
"আরে নাম শুনো নাই? মুক্তমনায় লেখতো, তুমি তো অবশ্য চিনবাইনা, কোনো খবর রাখো না" শ্লেষ ঝরে শাহেদের গলায়।
"ও হ্যাঁ নাম শুনসি, পারভেজ লেখে তো ঐখানে, মেরে ফেলসে কারা? জঙ্গীরা?" রুমার গলায় উৎকন্ঠা।
"আমি এখোনো বিশ্বাস করতে পারতেসিনা, আসলেই মেরে ফেলসে" অবিশ্বাস আর হাহাকার মিলে শাহেদের নিশ্বাস দ্রুত হয়ে আসে।
"আচ্ছা এখন বাইর হও তো! এইগুলা নিয়ে এতো ভাবার কিসু নাই। আর তোমাকে না বলসি কখোনো বাথরুমে ফোন নিবানা? এই বিশ্রী অভ্যাস তুমি কবে বাদ দিবা?" গলা চড়ে রুমার।
বাথরুম থেকে বের হয় শাহেদ, "সরি। কিন্তু এইভাবে মেরে ফেলবে? তাকে কখনো দেখিনাই, তার লেখা পড়লাম কত, ভাবতেই পারতেসিনা তার মতো একজনকে এভাবে বইমেলাতেই মেরে ফেলবে! কী হইতেছে এইসব!"
"জঙ্গীরা বড় বাড় বাড়তেসে, এরা যে ইসলামের নামে এইসব কী শুরু করলো!!" আফসোস রুমার কন্ঠে।
"কিছু একটা করা দরকার..." আনমনে বলে শাহেদ।
একটু সাবধান হয় রুমা, "তোমার না একটা ডেডলাইন আছে কালকে কাজের? শাহেদ, তুমি কিন্তু আবার ডুবাইওনা, এইসব একেকটা খবর আসে, আর তুমি সারাদিন ধরে ফেসবুকে, আর বাংলা খবর আর ব্লগে পড়ে থাকো, এতো সময় নষ্ট করার সময় কী আছে আমাদের? আমাদর বাচ্চাদের কাজ, আমার পড়ার কাজ তোমার ভিসা, কত কাজ পড়ে আছে! জঙ্গীরা সারা জীবন এইগুলা করেই যাবে, আমাদের জেনারেল পিপল এইসব নিয়ে এতো মাখা ঘামালে কোনো লাভ আছে?"
চুপচাপ মুখে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় শাহেদ, কোনো কথা না বলেই। রুমার কথাগুলো শাহেদ মেনে নিয়েছে, না তর্ক করার ইচ্ছা নেই, কোনটা, সেটা বোঝা যায় না।

######

খুব মনোযোগ দিয়ে চুলায় চায়ের পানি ফোটাচ্ছে রুমা। খোলা জানালা দিয়ে পাখির ডাক ভেসে আসছে, বাইরে সামারের ভোরবেলার রোদ, তারই একচিলতে তার খাবার টেবিল আর চেয়ার আলো করে রেখেছে। চেয়ারে বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিতে দিতে রুমা আড়চোখে দেখতে পায়, সদ্য ঘুম ভাঙা শাহেদ কোমর চুলকাতে চুলকাতে বাথরুমে পা বাড়াচ্ছে। শাহেদ বাথরুমে ঢুকে কমোডে বসে, অভ্যাস বশে আইফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে।

বাথরুম থেকে ভেসে আসা হাহাকারে হঠাৎ সচকিত হয়ে ওঠে রুমা। শাহেদের গলা পাওয়া যায় "ইশশশশ!!!" রুমার মাথা ঘুরিয়ে বাথরুমের দিকে তাকায়। দুসেকেন্ড পরেই চোখ সরিয়ে নেয় সে, নির্লিপ্ত ভাবে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে চলে চুপচাপ।

(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

মনে হল জীবন থেকে নেয়া। মন খারাপ

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্পের শাহেদ-রুমার অবস্থান থেকে খুব বেশি কিছু করার নেই। যে শাহেদ-রুমারা বাংলাদেশে থাকে তাদেরও যে খুব বেশি কিছু করার আছে তা নয়। যা কিছু করার সেটা আছে সরকারের হাতে। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অ্যাকশন প্ল্যান কী হবে। সরকার ঠিক করে দেবে দেশে থাকা শাহেদ-রুমাকে কী করতে হবে আর বিদেশে থাকা শাহেদ-রুমাকে কী করতে হবে। বিষয়টা আর ব্যক্তিপর্যায়ে বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী/সংঘ পর্যায়ে মোকাবেলা করার অবস্থায় আর নেই। ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও উদ্যোগটা রাষ্ট্রের হতে হবে যাতে সকল শাহেদ-রুমা সেখানে কাজ করতে পারে। তারও আগে রাষ্ট্রকে ঠিক করতে হবে তার দর্শন ও মূলনীতি কী হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

গৌতম হালদার এর ছবি

'ধর্মানুরাগের ছদ্মাবরণে জগতের সবাই মৌলবাদী'- আমার মনে হয়। যদি এটা নির্ভুল হয়, তবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা সরকার বাঁধবে, সেটা নিছকই অলীক কল্পনা। ইতোমধ্যে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধ, তাতে তাদের নিরব ভূমিকার নীতিই স্পষ্ট।
তবে আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি যে অভ্রান্ত, সেইটে আমি বলি কী করে?

গৌতম হালদার

গৌতম হালদার এর ছবি

'ধর্মানুরাগের ছদ্মাবরণে জগতের সবাই মৌলবাদী'- আমার মনে হয়। যদি এটা নির্ভুল হয়, তবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা সরকার বাঁধবে, সেটা নিছকই অলীক কল্পনা। ইতোমধ্যে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধ, তাতে তাদের নিরব ভূমিকার নীতিই স্পষ্ট।
তবে আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি যে অভ্রান্ত, সেটা বলার মতো দুঃসাহসী আমি নই।
গৌতম হালদার

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই উত্তর আধুনিক কাব্যের গদ্যচিত্র:-

জনগণের কাছে মিনমিন করে গিয়ে বলি, বিচার
তারা বলে, জরুরী কাজে বাইরে আছি
ফিরে এসে জবাব দিব।

কৃতজ্ঞতাঃ চরম উদাস

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।