বোধ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/০৬/২০১৫ - ১০:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিজের প্রতি বসের মুগ্ধ দৃষ্টি চোখ এড়ায় না রিমির। অফিসের সর্বোচ্চ কর্তার এই মুগ্ধ দৃষ্টি রিমির গোপন অহঙ্কার। গোপন সুখও বটে! অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান এই লোকের জন্য অফিসের বেশীরভাগ মহিলা কর্মী পাগল হলেও বস যেন শুধু ওর দিকেই মুগ্ধ দৃষ্টি হানেন। যদিও রিমি জানে বস ফ্লার্টিং করছেন, তবুও ব্যাপারটা চরম পুলকের।

লোকটা অফিসে এসেই ঢুকে পড়েন নিজের খুপরিতে। ফলে সারাদিনে বার বার দেখা হওয়ার অবকাশ মেলে না দুজনের। তাতে কী? সকালে একবার আর সন্ধ্যায় একবার বসের সাথে দেখা হয় রিমির। ভাগ্য ভালো হলে দুপুরে আরেকবার। কিন্তু তাতেই দুই যোগ দুই, চার চোখের যা কথা হওয়ার, হয়ে যায়।

আজ অফিসে আসতে একটু দেরী করে ফেলেছে রিমি। নয়টায় অফিস। কিন্তু জ্যামের কারণে অফিসের গেটে পা রাখতে রাখতে নয়টা দশ বেজে গেছে। এমনিতে স্বাস্থ্য সচেতন বলে ও সিঁড়িই ব্যবহার করে, তবে আজ লিফটের দিকে দৌড়ালো। ছয় তলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় এখন নেই। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। দ্বিতীয় তলায় অ্যাডমিন ডিপার্টমেন্টে এসে লিফট থামলো।
রিমির কপাল কুঁচকে গেলো। আজ তাড়াহুড়া আছে আর... অতি অবশ্যই আজ প্রতি তলায় লিফটের থামতে হবে।

কিন্তু এ কী!
লিফটে ঢুকলেন রিমির বস। সাথে সাথে নাম না জানা পারফিউমের গন্ধে রিমির মাথা ঘুরে গেলো। “গুড মর্নিং” আদান প্রদান হওয়ার পর আর কী বলবে, রিমি ঠিক করে উঠতে পারলো না। ছয় তলায় পৌঁছাতে কমপক্ষে ত্রিশ সেকেন্ড সময় লাগবে। এই ত্রিশ সেকেন্ডকেই রিমির ত্রিশ বছর মনে হতে লাগলো। যে লোকটাকে ও এতো পছন্দ করে, তাকে হঠাৎ পাশে পেয়ে অদ্ভুত এক অস্বস্তি হতে লাগলো। অথচ এই সময়টুকু হওয়ার কথা আজকের দিনের শ্রেষ্ঠ সময়! লিফটের ভেতরে শুধু রিমি আর বস। ‘তুমি আর আমি ছাড়া এই ঘরে কেউ নাই’।

রিমির বুক উত্তেজনায় ধড়ফড় করতে লাগলো। না চাইতেও ওর চোখ চলে যেতে লাগলো বসের দিকে। আহা! সাদা শার্ট আর নীল টাই পরা, ক্লিন শেভ করা একটা লোক এতো সেক্সি হয় কী করে? বসও তাকালেন রিমির দিকে। মুচকি হাসলেন। লজ্জায় রিমির শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে গেলো। হায় হায়! বস কী ভাবছেন? রিমির দৃষ্টি কি হ্যাংলার মতো লাগছে?

‘ছয়তলা পর্যন্ত আপনার সিঁড়ি দিয়ে উঠার ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে।’ বসের কথায় চমকে উঠলো রিমি।
‘অ্যাঁ! হ্যাঁ, মানে আপনি খেয়াল করেছেন এটা?’ রিমির কণ্ঠে বিস্ময় ঝরে পড়লো।
বস ঠোঁট টিপে হাসলেন, ‘আমি এও জানি, আপনি খুব স্বাস্থ্য সচেতন। দুপুরে ভাত না, রুটি খান।’
রিমির হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। এই লোক এতো খবর রাখে! তার মানে কী...

আর ভাবার সময় পেলো না রিমি। লিফট যখন চারতলায় এলো, বস ওকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলেন। লিফটের গায়ে ঠেসে ধরে বললেন, “ইউ নো আই লাইক ইউ!” বলে হালকা চুমু দিলেন রিমির ঠোঁটে। তারপর কামড়ে ধরলেন। কয়েক সেকেন্ডের এক ঝড় বয়ে গেলো যেন! ছয়তলায় আসার টুংটাং এলার্ম বাজলে রিমিকে ছেড়ে দিয়ে সলজ্জ হেসে বললেন, “No one knows this, OK?”

এমনিতেই বসের পাশে দাঁড়িয়ে রিমির মাথা ঠিকমতো কাজ করছিলো না। কেমন একটা নেশা নেশা ভাব। তার উপর হঠাৎ বসের আদরে রিমির মাথা আরও ওলোট পালোট হয়ে গেলো।

কিন্তু এটা কি আদর? রিমির তো সায় ছিলো না! এটা তো হ্যারাসমেন্ট! দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হয়রানি করা।
রিমির যুক্তিবাদী মন জেগে উঠলো। মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আত্মসম্মানবোধ। মুহূর্তের ব্যবধানে ওর হাত থেকে বের হওয়া “ঠাস…!” শব্দটা খুব জোরে শোনা গেলো লিফটের ভিতর। বসের গাল লাল হয়ে গেলো। লজ্জায় নাকি ব্যথায়, রিমি সেটা বোঝার আগেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।
ঝিম ঝিম মাথা নিয়ে রিমি উত্তর দিলো, “Everybody will know this.”
...
...
...
- নির্ঝর রুথ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঠিকাছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

একদম।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ভালৈছে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই।

কাল্পনিক এর ছবি

আহারে বস !!!!!!!!!!!!!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেক গালেও দেওয়া উচিৎ ছিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

“Everybody will know this.” চমৎকার বোধ । ছোট্ট কিন্তু সেইরাম ঝাল উত্তম জাঝা!

মোস্তফা কামাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ!

অণির্বান অনিক   এর ছবি

ভালই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, ঠিকাছে চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরাই।

রানা মেহের এর ছবি

জোস দেঁতো হাসি

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে কোন ভালো গল্পের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার ঘটনার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ। এই গল্পের পুরোটাই আরোপিত লেগেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা সত্যিকারের একটা ঘটনা।

এক লহমা এর ছবি

ঘটনা একঃ রিমি জানে তার বস তার সাথে ফ্লার্ট করা চোখে তাকায়।
ঘটনা দুইঃ রিমি বসের ফ্লার্ট করা মনোযোগ উপভোগ করে।
ঘটনা তিনঃ বস রিমির কিছু খুঁটিনাটি খোঁজ খবর রাখে। হতে পারে, সে রিমিকে টার্গেট করেছে। হতে পারে, সে আচমকাই কোন ভাবে জেনেছে, আর সুযোগ মত এই সব খুঁটিনাটি খবর কাজে লাগানোর অভ্যাস তার আছে।
ঘটনা চারঃ বস সুযোগ নিয়েছে।
ঘটনা পাঁচঃ রিমি বসের এই সুযোগ নেয়ার প্রতিবাদ করেছে।
এখন, এই সব 'সত্যি' ঘটনাগুলো জুড়ে একটা সংবাদ প্রতিবেদন ধরণের ঘটনা-বিবরণ হতে পারে। আবার, সেই জুড়ে জুড়ে সৃষ্টি হওয়া লেখাটা একটা ঘটনার অতিরিক্ত কিছু, একটা কবিতা কি একটা গল্প হয়ে উঠতে পারে। পাঠক সংবাদ-বিবরণ-এর সাথে বেশী একাত্মতা অনুভব করবে কি গল্প/কবিতার সাথে, করলে কতটা, সেটা ঐ লেখা আর তাতে পাঠকের অনুভবের এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ওরে আপু! সুন্দর বলেছেন। কিন্তু গল্পের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়াটা তো জানা হল না।

এক লহমা এর ছবি

আমার প্রতিক্রিয়াঃ
রিমির বস গল্পের অন্তিম পর্বে যে কাজটি করলেন সেটি যে সব লোক করে, তাদের স্বভাবের এ দিকটির কথা চাপা থাকে না। সেক্ষেত্রে এ লোকের প্রতি, গল্পের প্রথমে যে রকম বলা হয়েছে, "অফিসের বেশীরভাগ মহিলা কর্মী পাগল" হয়ে আছে - সেটা কি ঠিক বর্ণনা হল? একটা হতে পারে - সব মেয়েরা ঐ লোকের জন্য পাগল হয়ে আছে, এইটা রিমির নিজের ধারণা। নূতন কাজে যোগ দেওয়া মানুষ হিসেবে তার অনেক কিছু না জানা থাকার ফলে সে এইরকম একটা ধারণ করলেও করে থাকতে পারে। আবার, প্রথম অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যটি থেকে মনে হচ্ছে রিমি বসের ফ্লার্টিং-কে প্রশ্রয় দিতে ভালবাসে। সেক্ষেত্রে গল্পের শেষে বসের প্রতি তার প্রত্যাঘাত-টা একটা হঠাৎ জেগে ওঠা আবেগের মত লাগে। সুনির্দিষ্ট চিন্তাধারার ক্রমপরিণতি বলে অনুভূত হয় না। ফলে গল্পের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এবং পোস্টের মন্তব্য থেকে বসের আক্রমণ ও তার প্রতিবাদে চড় মারার ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জ্ঞাত হলেও গল্পটির সাথে একাত্মতার অনুভবে খানিকটা খামতি রয়ে গেছে।

আপনার লেখা ঝরঝরে। পরের লেখার জন্য সাগ্রহ অপেক্ষায় আছি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

প্রথমদিন পড়ে চুপ করে চলে গিয়েছি। রিমির চরিত্রটা কেমন যেন গল্পের শেষের সাথে খাপ খায়নি। চলুক তবু।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে

গৌতম হালদার এর ছবি

চমতকার লেখা আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।