বন্ধ হলো অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি আশার দুয়ার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৯/২০১৫ - ৪:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মৌলভীবাজার কলেজের কোন এক অনুষ্টান, হল ভর্তি ছাত্র, কোন কোন বক্তা দাড়িয়ে বক্তব্য রাখছেন, কিন্তু শ্রোতারা সে দিকে কান দিচ্ছে না, কথোপকথন চলছে, কেউবা খুনসুটিতে ব্যাস্ত, একদিকে বক্তা মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন, অন্যদিকে শ্রোতাদের হইহোল্লোড়, সবমিলিয়ে যা-তা অবস্থা। প্রধান অতিথি হিসেবে কোন ব্যাক্তির নাম ঘোষনা করা হলো, তখনও হইহোল্লোড় চলছেই। ঠিক সেসময় সেই প্রধান অতিথি মাইকের সামনে দাড়ালেন, প্রথমে তিনটি টোকা দিয়ে মাইক টেষ্ট করার পর বজ্র কন্ঠে বক্তৃতা শুরু করলেন, হঠাৎ সে আওয়াজ শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ঘুরে তাকালেন ছাত্ররা, প্রায় ১ ঘন্টার দীর্ঘ বক্তৃতা, ছাত্রদের হইহোল্লোড় নেই, হলের মধ্যে পিনপতন নিরবতা, মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে ছাত্ররা, বক্তব্য শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এক মূহুর্তের জন্যও অমনযোগী হওয়ার সুযোগ নেই । বক্তব্য শেষে “এলেন, দেখলেন, জয় করলেন” এমন ভাব নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে গেলেন একাত্তরের সাহসী গেরিলা যোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মহসিন আলী !

সেদিনের সেই হলে এসেছিলেন, দেখেছিলেন, বক্তা হিসেবে শ্রোতাদের মনও জয় করেছিলেন, কিন্তু জীবনের অন্য ধাপে রাজনীতিবীদ, গেরিলা যোদ্ধা, সহযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কতটুকু জয় করতে পেরেছেন ?

সমাজকল্যানমন্ত্রী মহসিন আলী আমার বাবার সহযোদ্ধা ছিলেন। সে সুবাধে খুব কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে, কারণে অকারণে বহুবার বিরক্ত করেছি, তিনিও আমাদের আপন ভাতিজার মতই দেখতেন।

একদম অল্প বয়স থেকেই মহসিন আলী নামক এক সাহসী গেরিলা যোদ্ধা আমার মনে বিশেষ স্থান দখল করে নেন, বাবা প্রায়ই তার গল্প শুনাতেন। বাবার মুখে গল্প শুনে মহসিন আলীকে দেখার শখ হয় আমার, তার মধ্যে হঠাৎ একদিন বাবা কোন এক কাজে তার বাসায় যাওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। তার বাসায় যাওয়ার পর এক প্রকার আজব অভিজ্ঞতা হয়, ঢোকার পর মনে হল এটা বাসা নয়, কোন এক সমাবেসস্থল, মানুষের ভিড়, কেউ সোফায় বসে আছে কেউবা জায়গা না পেয়ে দাড়িয়ে আছেন। বাবা বলতেন এটা নাকি চায়ের স্টল, মানে উনার বাসায় যে মানুষ ই আসুক না কেন, চা-বিস্কুট না খেয়ে কেউ আসতে পারবে না।

সেদিন তার সাথে মাত্র কিছু সময়ে জন্য দেখা হয়েছিল, বাবার সাথে কথা বলার পর পরিচয় জেনে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন।

তারপর বহু বছর কেটে গেল, হঠাৎ একদিন বাবা মারা গেলেন, তার কয়েকমাস পর একদিন আমি আর আমার মা তার সাথে দেখা করার জন্য তার বাসায় গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর যেসব ঘটনা পত্যক্ষ করলাম সেগুলা আমার কাছে শুধু আজব নয় বরং বিরল ই মনে হলো।

ছোটকালে বাবা আমাকে বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যেতেন, সে সুবাধে খুব অল্প বয়সেই বিভিন্ন সময়ের বহু মন্ত্রী-এমপিদের বাসায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। তবে সেসব বাসা অথবা কার্যালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কখনই সুখকর ছিলোনা আমাদের জন্য। একাধিক সিকিউরিটি গার্ডের বিভিন্ন পশ্নের উত্তর দিয়ে, পুলিশ সদস্যদের জেরা (কখনও চেকাপ) পেরিয়ে, পিএ, এপিএসদের প্রশ্নের সদোত্তর দিয়ে, কমপক্ষে ৩-৪ ঘন্টার বিরক্তিকর অপেক্ষার পর অতি সৌভাগ্যবানদের কেউ কেউ পেত সেই সব মহামানবদের (!) সাথে সামান্য কিছু সময়ের জন্য দেখা করার সুযোগ, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বেরিয়ে আসতেন কড়া ধমক অথবা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। মনে হতো জনপ্রতিনিধি নয় কোন এক অতিমানবের (নেতিবাচক) সাথে দেখা করার জন্য জনবিচ্ছিন্ন কোন এক দুর্গে এসে হাজির হয়েছি আমরা। এমপি হওয়ার আগে বাবার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো এমন এক ব্যাক্তির সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছিলো তাই সেরকম কিছু একটা ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে মন্ত্রী মহসিন আলীর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলাম আমরা।

কিন্তু শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে খুব সহজেই তার বাসায় প্রবেশ করতে পেরে এক প্রকার অবাক হয়েছিলাম আমি, তারপর নিয়মিত যাতায়াতের প্রতিদিনই আমাকে অবাক করত বিচিত্র সব ঘটনা। একদিন তার বাসায় এসে এক ব্যাক্তির সাথে পরিচয় হয়, যিনি তার নির্বাচনি এলাকার কোন এক ওয়ার্ড অথবা থানার কর্মী। ময়লা শার্ট আর পুরনো প্যান্ট পরা এই ব্যাক্তি বললেন, অসুস্থ তাই মন্ত্রীর কাছে সাহায্যের জন্য এসেছেন, তারপর তিনি যা বললেন তা শুনে আমি রিতীমত আকাশ থেকে পড়লাম, তিনি নাকি তিন দিন ধরে মন্ত্রীর বাসায় থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন এবং চিকিৎসা শেষ হলে সেখান থেকে যাবেন। যেখানে বহু কাটখড় পুড়িয়েও বড় বড় পদবীধারী কর্মীরাও সদ্য নির্বাচিত কোন এক অখ্যাত এমপির সাথে দেখা করতে পারেনা, সেখানে একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার ভরণ পোষন পাওয়া এবং চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বাসায় থাকা, অন্যদের কাছে এ ঘটনা কেমন ঠেকবে জানিনা তবে খুব অল্প বয়স থেকে বহু জনপ্রতিনিধির (!) বাসায় গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া আমার কাছে ঘটনাটা বিরল মনে হয়েছে।

তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও একজন সদ্য পঙ্গু হওয়া ব্যাক্তির সাথে দেখা হয়েছিল আমার, যাকে তিনি ডেকে নিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন, সে ব্যাক্তির সাথেও আমার কথা হয়েছিল, তিনিও আমাকে বলেছিলেন গত রাতে তিনি মন্ত্রীর বাসায় থেকেছেন।

পৌরসভা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় একবার বাবার সাথে তার বাসায় গিয়েছিলাম, এবার মন্ত্রী হওয়ার পর গেলাম, কিন্তু তার বাসায় গিয়ে কখনই মনেই হয়নি কোন এক মন্ত্রীর বাসায় এসেছি, যে কেউ খুব সহজেই বাসায় প্রবেশ করছে, গেস্ট রুমের সোফায় বসার সাথে সাথেই চা আসছে, অল্প কিছুক্ষনের মিলছে তার সাথে দেখা করার সুযোগ, সব কিছু সেই আগের মত, শুধু বাসার ঠিকানা বদলে মৌলভীবাজার থেকে মিন্টুরোডের মন্ত্রীপাড়া হয়েছে আর তার পদবি পৌরসভা চেয়ারম্যান থেকে বদলে মন্ত্রী হয়েছে।

এমনকি মৃত্যুর কিছুদিন আগে যখন তাকে হত্যা করার হুমকী দিয়ে মৌলবাদীরা যখন লিস্ট প্রকাশ করলো তখনও তার বাসায় নিরাপত্তার কোন কড়াকড়ি ছিলোনা, মনে হচ্ছিল এসব নিয়ে ভাবার সময় তার নেই, থাকবেই কেন ? যে ব্যাক্তি বিশাল শক্তিশালী পাকিস্থানী বাহিনিকে ভয় পাননি, সে ব্যাক্তি এসব দু পয়সার মৌলবাদীদের ভয়ে জনগন থেকে বিচ্ছিন হবেন, সেটা চিন্তা করাই প্রশ্নই আসেনা ! উনার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করে আর কিছু অর্জন করি আর না করি, একজন জনপ্রতিনিধি কেমন হতে পারেন সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট ধারণা হয়েছে, যে কোন পরিস্থিতিতে একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধির একমাত্র সম্বল হচ্ছেন জনগন সে কথার বাস্তব উদাহারণ পেয়েছি তাকে দেখেই, মন্ত্রি - এমপিরা যে জনবিচ্ছিন্ন কোন পদার্থ নন সেটা হয়ত তাকে না দেখলে জানাই হতো না ।

কোন প্রকার সমস্যায় পড়লেই তাকে সরাসরি ফোন করতাম, সবসময় তার ফোন তিনিই রিসিভ করেতেন এবং সব কথা শুনে জবাব দিয়ে তারপর ফোন রাখতেন, জীবনের প্রথম যেদিন উনাকে ফোনে করি, সেদিন আমি ভেবেছিলাম হয়ত কোন সহকারী ফোন ধরবে, তাই ফোন রিসিভ হওয়ার পর বলেছিলাম আমি মন্ত্রী সাহেবের সাথে কথা বলতে চাই, আমাকে অবাক করে দিয়ে বিপরিত পার্শ থেকে উত্তর এসেছিল আমিই মন্ত্রী মহসিন আলী, তারপর পরিচয় দিয়ে অনেকক্ষন কথা বলেছিলাম। শুধু আমি নই যে কেউ ফোন করলেই তিনি নিজে কল রিসিভ করতেন এবং কথা বলতেন।

এতো গেল জনপ্রতিনিধি মহসিন আলীর কথা, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও মহসিন আলীর বীরত্ব ছিলো অসামান্য, বাবা কোন এক যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, সম্মুখযুদ্ধের কোন এক সময় একজন পাকিস্থানী সেনাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেন তারা , এবং আক্রমন করার প্রস্তুতি স্বরুপ হঠাৎ করে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে উঠেন মহসিন আলী, তিনি হঠাৎ এত জোরে স্লোগান দিয়েছিলেন যে ভয়ে সেই সেনার হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যায়, তারপর বেয়নেট ঢুকিয়ে দেন তার বুকে, সেই সেনার রক্ত নাকি মহসিন আলীর বুকে মুখে পড়েছিল, ছোটকালে শোনা সেই গল্প পরবর্তীকালে কোন এক টিভি অনুষ্টানে মহসিন আলীকে নিজের মুখে বলতে শুনেছি।

সেই টিভি অনুষ্টানে তিনি নিজের দু হাতের কনুই দেখিয়ে বলেছিলেন,

এই দেখুন (দুই হাতের কনুয়ে কালো দাগ) আমার হাতে এখনও ক্রলিংয়ের দাগ রয়ে গেছে।

। সেনাদের কাছ থেকে অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং এখনও সেই ব্যাথা বয়ে বেড়ান সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

সেই অনুষ্টানে তিনি আরো বলেছিলেন,

“এই শাহ আজিজ যে আমাদের বলোছিলো Bastard son of East pakistan, আমরা যদি যুদ্ধে হেরে যেতাম তাহলে আমরা Bastard থেকে যেতাম, আমরা জিতে গেছি তাই তার সে কথা আমরা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, He is Bastard. ”

তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কেমন দেশের স্বপ্ন দেখতেন সে কথাও বলেছিলেন

এই মালয়েশিয়া যারা একসময় আমাদের চেয়ে পিছিয়ে ছিলো, আজ আমরা সেখানে যাচ্ছি লেবার হয়ে, আমাদের কি কষ্ট হয়না ?

রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজসেবক প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহসিন আলির অসামান্য অনেক কৃত্তি আছে যা হয়ত আমরা তুলে ধরতে পারতাম, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তার শেষ সময় টুকুতে আমরা যতটা পেরেছি তাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছি। যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠনকারী, ইয়াবা ব্যাবসায়ী, গুন্ডা-মাস্তান-ক্যাডাররাও রাজনীতির ময়দানে স্বমহীমায় টিকে তাকে, সে দেশে শুধুমাত্র প্রকাশ্যে ধুমপানের কারণে তাকে আমরা কাটগড়ায় দাড় করিয়েছি। একবার ‘খবিস’ শব্দটি উচ্চারণ করে একাধিকবার ক্ষমা প্রর্থনা এবং ব্যাখ্যা প্রদানের পরও আমরা ক্ষমা করতে পারিনি ৬৮ বছর (সে সময়ের) বয়সী এ প্রবীণ রাজনীতিবিদকে। সাংবাদিকরা যখন তাকে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করতেন তখন তিনি মনে মনে অনেক কষ্ট পেতেন। আমাদের একটা বিশেষ সমস্যা আছে, ভালো জিনিস আমাদের সহজে হজম হয়না আর জীবিত থাকতে ভালো মানুষ আমাদের কাছে সম্মান পায়না, উনি জীবিত থাকতে এক সাংবাদিক বিশেষ এক অনলাইনে তাকে নিয়ে যা তা লিখেছিলেন, সেই সাংবাদিক আজ আবার কলাম লিখে তার গুণাগুণ বিবরণ করছেন, সেই কলামের এক যায়গায় তিনি লিখেছেন -

ঈদে এটিএন নিউজে একটা অনুষ্ঠান হয় ‘নিউজিক’ নামে। একজন কণ্ঠশিল্পীর সাথে আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে গান হয় এ অনুষ্ঠানে। গতবছর ঈদে এ অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন সৈয়দ মহসীন আলী। মুন্নী তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আসলে গ্রিল করার জন্য, হাস্যকর করার জন্য। কিন্তু ঘটেছে উল্টো ঘটনা। রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর মুন্নী তার ভক্ত বনে যায়। তার সেই মুগ্ধতা পরে আরো বেড়েছে। মহসীন আলীর মৃত্যুর পর প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন মুন্নী।

বাহ, একজন বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা এবং মন্ত্রীকে টিভি অনুষ্টানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে “গ্রিল” করার জন্য, হাস্যকর করার জন্য। কি বিচিত্র ! আর গ্রিল শব্দটাও অনেক সুন্দর, ঠিক না ?

মাঝে মাঝেই আজব সব কর্ম করে আলোচনায় আসতেন মহসিন আলী, কখনও গান গাইতেন, কখনও লাইভ শোতে প্রচার যোগ্য নয় এমন শব্দ উচ্চারন করতেন । এসব কারণে সমালোচকরা তাকে পাগল বলেন । হ্যা আমিও তাদের সাথে একমত, তিনি পাগল বলেই মুক্তিযোদ্ধে গিয়েছিলেন ! নিশ্চিত মৃত্যুর শতভাগ সম্ভাবনা থাকার পরও, আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্থানী বাহিনির বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া কি কোন সুস্থ মস্তিস্কের (সমালোকদের মত) মানুষের পক্ষে সম্ভব ?

মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতিও তার দায়বদ্ধতা ছিলো অনেক, সেই টিভি অনুষ্টানে তিনি বলেছিলেন,

মুক্তিযোদ্ধে আমার অনেক কলিগ নিহত হয়েছেন, আমার সাথে নিহত হওয়া ৩০-৩৫ জনের পরিবার, তাদের আন্ডা-বাচ্চা তাদের সবাইকে আমার পালতে হয়

। আমার বাবা তার সহযোদ্ধা এ কারণে গরিব হওয়ার পরও তাকে যথেষ্ট সম্মান করতেন, বাসায় গেলে না খেয়ে আসতে দিতেন না। আর তার সন্তান এ জন্য যতেষ্ট স্নেহ করতেন আমাদের, বাবা মারা যাওয়ার পর যতবার তার সাথে দেখা করতে গিয়েছি প্রতিবারই তিনি আমাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছেন, সান্তনা দিয়েছেন, তার আচরণ দেখে মনে হতো আমার বাবা তার আপনভাই ছিলেন ! শুধু আমাদের পরিবার নয়, এরকম অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের জন্য ভিবিন্ন ভাবে, বিভিন্ন সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

আমার এখনও মনে আছে, মন্ত্রী হওয়ার পর তার সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল, তারপর বহুদিন ধরে তার সাথে দেখা করতে যাইনি, ভেবেছিলাম তিনি বিরক্ত হবেন। প্রায় ছয়মাস পর আবার যখন বিশেষ এক কারণে তার সাথে দেখা করতে যাই তখন তিনি আমাকে প্রচুর ধমকেছিলেন, ধমকানোর এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন,

যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে আমার কাছে আসবি, আমাকে না পেলে ফোন করবি, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা !

ভাবতেই কষ্ট হয় সেই ব্যাক্তি আর নেই।

হ্যা, তার মৃত্যুর মাধ্যমে সৎ, দেশপ্রেমিক ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারি এক রাজনীতিবিদের চেয়ার শূণ্য হয়নি, বন্ধ হয়েছে সকল অসহায় মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের আরেকটি আশার দোয়ার।

অনেকের কাছেই তিনি হয়ত পাগল, মানসিক ভারসাম্যহীণ, জোকার। তার বিরুদ্ধে হয়ত অনেকেরই অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু দিনশেষে তিনি ছিলেন সতিক্যারের এক জনপ্রতিনিধি , ছিলেন দেশেপ্রেমে বলিয়ান এক সাহসী গেরিলাযোদ্ধা, সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের মধ্যে যতটুকু গুণাবলী থাকার কথা তার কোনটারই কমতি ছিলোনা তার মধ্যে।

উনার মত এত সহজ সরল আর সৎ মানুষ বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় আর আসবেন কিনা সন্দেহ আছে।

শেষযাত্রায় অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা রইলো আবেগী এ গেরিলা যোদ্ধার প্রতি।

Kazi Mamun Husain


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

বিষয়টি নিয়ে লেখার জন‍্য ধন‍্যবাদ। কিছু পরামর্শ -

  • প্রচুর বানান ভুল আছে। বানান ঠিক করতে হাতের কাছে অভিধান না থাকলে গুগলের সাহায‍্য নিতে পারেন। কোন শব্দের বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে শব্দটা গুগল করে দেখবেন যে শব্দটা কোন পত্রিকায় হুবহু লেখা হচ্ছে কিনা। এটা ফুলপ্রুফ পদ্ধতি না হলেও কাজ চলে।
  • সম্ভব হলে আরোও কিছু সাক্ষাতকার বা স্মৃতিচারণের লিংক কমেন্ট বক্সে যোগ করে দিতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

বানান ভুলের জন্য দুংখিত !

আসলে সচলায়তনে এই প্রথম লিখা প্রকাশ করলাম, ওখানে লিখা ছিলো সংরক্ষণ করুন, আমি ভেবেছিলাম ওটা হয়ত সেভ হবে, পরে বানান ঠিক করে প্রকাশ করতে পারব, কিন্তু দেখলাম সংরক্ষণ হওয়ার পর আর আমার পক্ষে এডিট করা সম্ভব হচ্ছিল না !

Kazi Mamun Husain

হাসিব এর ছবি
Jamil  এর ছবি

ধন্যবাদ এই রকম একজন দেশদরদি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে লেখার জন্য।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমরা শুধু 'আইসবার্গ' এর মাথাটাই দেখি। ধন্যবাদ কষ্ট করে লেখাটা লেখার জন্য।

শুভেচ্ছা হাসি

স্যাম এর ছবি

উনার সাথে কাজের স্মৃতি সুখকর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।