খেলা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/১১/২০১৫ - ১২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ঘণ্টা বাজছে। ভোরের নিস্তব্ধতা খান খান করে বেজে চলেছে একটানা……বারো………একুশ……আঠাশ...............উনচল্লিশ......তেতাল্লিশ...... । স্টিভ হার্মিসন স্বপ্নে নিমগ্ন, দারুন একটা স্বপ্নের একেবারে শেষ পর্যায়। তার সামনে টেবিল ভর্তি খাবার। ঝলসানো হাঁস, আস্ত ভেড়ার রোস্ট, সেদ্ধ বিট, তেল মাখানো জলপাই…….। হার্মিসন গুনে শেষ করতে পারেনা। রোস্টের দিকে কেবল হাতটা বাড়িয়েছে - ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত, আজকাল সয়ে গিয়েছে। কতদিন ধরে এই একটা স্বপ্ন দেখে চলেছে সে! আহা একবার, শুধু একবার যদি স্বপ্নটা শেষ হত! চোখ বুঁজে শুয়ে থাকে হার্মিসন | কিছুক্ষণই, তারপর সদ্য ঘুম ভাঙ্গা চোখে পিট পিট করে তাকায়। চোখে পড়ে খোলা আকাশ। আকাশের কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা কালো গ্রানাইটের চূড়ায় অস্পষ্ট দেখা যায় - একটি রুপোলি ঘন্টা। রুপোলি ঘন্টা দুলছে অবিরাম, ডান থেকে বাঁয়ে আর বাম থেকে ডানে। ঘন্টা বাজছে, ভোরের নিস্তব্ধতা খান খান করে বেজে চলেছে একটানা......তেষট্টি........সাতাত্তর......উনআশি.........নব্বই...... তিরানব্বই। অবরোধের আজ তিরানব্বই তম দিন।

ওরা এসেছিল শরতের শেষে, রাতের আঁধারে নিশ্বব্দ সরীসৃপের মতো। এসেছিল নদী পেরিয়ে, এসেছিল শ’য়ে-হাজারে। নদী আর শহরের মাঝখানে একফালি সবুজ হয়ে দাড়িয়ে থাকা অতিপ্রাচীন পাইনের জঙ্গল ডিঙিয়ে আগুন দিয়েছিল ফসলের ক্ষেতে। রক্ষা পায়নি পাইন গুলোও, কালো গ্রানাইটের পাঁচিলে ঘেরা শহরের চাতালে বসে হার্মিসন শুনতে পাচ্ছিল মটমট করে ভেঙ্গে পড়ছে মহা পাইনের সারি, বুঝতে পারছিল দাউদাউ করে পুড়ে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে গিয়েছিল বর্নের আকাশ। মুহূর্তেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়া নেকড়েদের অপস্রিয়মাণ যূথবদ্ধ আর্তনাদ জ্বলন্ত মাঠ আর ধোঁয়ার পাহাড় পেরিয়ে অদ্ভুত এক হিমেল অনুভূতি হয়ে আছড়ে পড়ছিল বর্নের দরজায়, জানালায়, দেয়ালে, বরগায়। সারা রাত ধরে পুড়েছিল বসন্তের পর লকলক করে বেড়ে ওঠা গমের সোনালি সোনালি শীষ। একটা রাতে, কেবল একটা রাতেই চেনা পৃথিবী কেমন অন্যরকম হয়ে যায়! রাতের অন্ধকার আর ভোরের আলোর সন্ধিক্ষণে গির্জার ঘণ্টাঘর থেকে নদীর দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে-আতংকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল হার্মিসন। হলদে-সোনালি গমের ক্ষেতটা যেন আচমকা তুষার ঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া নলখাগড়ার ছিন্নভিন্ন ঝোপ, নিভে যাওয়া আগুনের রেশ ছোপ ছোপ ধোঁয়া হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জেগে রয়েছে, যেমন জেগে থাকে শীতের সকালে রোদের উত্তাপে বিলীয়মান কুয়াশার কুন্ডুলি। মাঠ ঢেকে রাখা ওই শ্বেত শুভ্র চাদরটি তুষারের নয়, ওখানে ছাই হয়ে পড়ে রয়েছে বর্নের ভবিষ্যৎ।

নদীর তীরে, যেখানে সবুজ পাইনের সারি থাকার কথা ছিল সেখানে এখন অযুত তাবু। পুড়ে যাওয়া শস্য ক্ষেত্রে পিলপিল করছে অগণিত মানুষ। তাদের বর্ম, শিরস্ত্রান এবং বর্শার ফলায় লেগে ঠিকরে পড়ছে ভোরের আলো। সে আলোর ঝলকানিতে কোনও ওম নেই, উত্তাপ নেই। শহর জুড়ে একটাই অনুভূতি, আতংক। মেরুদণ্ড বেয়ে পিছলে নেমে যাওয়া হিম শীতল সাপের মতো হিলহিলে একটা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, আতঙ্ক থেকে উৎকণ্ঠা| এই বুঝি ধেয়ে আসে শত সহস্র তীর, জলন্ত পাথর। কে জানে কখন বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউ এর মত শহরের পাঁচিলে হামলে পড়ে অজানা শত্রু। বর্নের মানুষেরা ঘুমায়নি সে রাতে | ফটকে ফটকে পাহারা, বুরুজে বুরুজে তীরন্দাজ | কোথাও জলন্ত উনুনে ন্যাপ্থার হাড়ি, পাশেই ঢাই করে রাখা বড় বড় পাথর।  


বর্নের পাঁচিলের কথা ইউরোপের সবাই জানে। যুগ যুগ ধরে ট্রয়ের প্রাচীরের মত অটুট থেকে রক্ষা করেছে নগরবাসিদের। রণ ক্লান্ত নৃপতিরা হতোদ্যম হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন সে বহু কাল। দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আশা হেমন্তের গাঙচিলের মত কারা এই শত্রু? এরা কি তবে উত্তরের হিম শীতল সমুদ্র পারের সেই দানবগুলো যারা ধর্ম মানেনা? হার্মিসন তার বাবার কাছে শুনেছিল এদের গল্প। শুনেছিল এরা নাকি মন্ত্র জানে। পাথর এফোড় ওফোড় করে বেরিয়ে যায় এদের তীরের ফলা। এদের প্রশ্বাসে বিষ, স্পর্শে আগুনের হল্কা। তীব্র ঠান্ডার দেশে থেকে থেকে এদের হৃদয় নাকি জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। সে হৃদয়ে দয়া নেই মায়া নেই, নেই কোনো অনুকম্পা। এরা আসে ঝড়ের বেগে, পোড়ায় আগুনের মত, জীবন থেকে সব কিছু লুটেপুটে নিয়ে রেখে যায় মৃত্যু। এরা সাক্ষাত শয়তান, ডেভিল।   

কোনও একটা বাড়িতে ঢুকে যেতে পারলে ভালো হতো, নিদেন পক্ষে একটা দোকান কিংবা কোনও গোয়াল ঘর। আসন্ন আক্রমণের আশংকায় সব দরজায় আজ খিল। কোথায় যাবে হার্মিসন? গির্জার পাথুরে চাতালটায় বসে আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে সে, ভাবে বছর দুই আগের কথা, যখন মাথার উপর একটা ছাদ ছিল। কতদিন নরম একটা বিছানায় ঘুমায়নি, একটু ভালোমন্দ খায়নি সে কতকাল! হার্মিসনের কান্না পায়, নিঃশব্দে কাঁদে সে, যেমন কেঁদেছিল গত রাতে, তার আগের রাতে, অনাথ হবার পর থেকে প্রতিটি রাতে। তারপর চাতালেই জুবুথুবু হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে একটা সময়।

খোলা আকাশের নিচে হিম শীতল একটা চাতালে ঘুমিয়ে হার্মিসন। গির্জার উঁচু দেয়ালের ফাঁক দিয়ে মুখে এসে পড়েছে চাঁদের ক্ষীণ আলো। সে আলোয় বোঝা যায় চোখ দুটো তির তির করে কাঁপছে তার। হার্মিসন স্বপ্ন দেখছে, দারুন একটা স্বপ্নের একেবারে শেষ পর্যায়। সামনে টেবিল ভর্তি খাবার | ঝলসানো হাঁস, আস্ত ভেড়ার রোস্ট, সেদ্ধ বিট, তেল মাখানো জলপাই.......| হার্মিসন গুনে শেষ করতে পারেনা। রোস্টের দিকে কেবল হাতটা বাড়িয়েছে - ঘুম ভেঙ্গে গেল তার| আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে বেজে উঠেছে গির্জার ঘণ্টা। চোখ রগড়াতে রগড়াতে উঠে দাড়ায় সে। সকালে তো ঘন্টা বাজেনা! বাজে কেবল গোধুলিতে- যখন রাখালদের, চাষীদের ঘরে ফেরার কথা। এদিকটায় খুব নেকড়ের উৎপাত, আঁধার নামার পরপরই বন্ধ করে দিতে হয় নগরের ফটক। ঘণ্টাধ্বনি মানে ঘরে ফেরার আহবান।


ঘন্টার শব্দে একজন দুজন করে অনেকেই এসে জড়ো হয়েছে গির্জার কাছে। সাদা একটা আলখেল্লা পড়ে সিড়ির সবচেয়ে উপরের ধাপে দাড়িয়ে রয়েছেন ফাদার বার্ড। তার পাশেই দাড়িয়ে মেরি লি অফ বর্ণ, নগরাধিপতি। কিছু একটা বলতে চাইছেন কিন্তু সমবেত গুঞ্জনে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তার কণ্ঠস্বর।

আমাদের রক্ষা করুন মি লর্ড
…………………………
…………………………
বলে দিন কোথায় লুকবো
…………………………
…………………………
আমাদের সব ফসল ওরা জ্বালিয়ে দিয়েছে
…………………………
…………………………
আমাদের ভেড়ার খামার, গরুর বাথান সব শেষ
…………………………
…………………………

আমার ছেলেটা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল
…………………………
…………………………

দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বললেন ফাদার বার্ড। ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে গুঞ্জন। কেবল একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ শোনা যায়। কোলের বাচ্চা, সাত সকালে এত মানুষ দেখে ভয় পেয়েছে। মেরি লি অফ বর্ণ মুখ খুললেন-
 

"ইশ্বরের সন্তানেরা শোনো। একটা ভয়ংকর সময়ের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। তাকিয়ে দেখো পাঁচিলের বাইরে, অপেক্ষায় সাক্ষাৎ শয়তান। ভয় পেয়োনা, বিশ্বাস রাখো ইশ্বরের প্রতি। আস্থা রাখো বর্নের পাঁচিলের উপর। ইশ্বর সহায়, শয়তান সে যতই শক্তিশালী হোকনা কেন বর্নের পাঁচিল তাকে বাধা দেবে। আমার সৈন্যরা বুরুজে-বুরুজে, ফাটকে-ফাটকে পাহারায় রয়েছে। এ আক্রমণ আমরা প্রতিরোধ করে যাবো। প্রতি দিন ভোরের প্রথম আলো ফুটে উঠলেই ফাদার বার্ড গির্জার ঘন্টা বাজাবেন | আজ বাজিয়েছেন একবার, প্রতিরোধের একদিন পার হলো | কাল বাজবে দুবার, পরশু তিনবার। এইভাবে বেজে যাবে অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত, হওতে পারে সে কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর। ইশ্বর সহায়, আমরা ধ্বংস হবনা।"

শত শত কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো মেরি লি অফ বর্ণ এর শেষ কথা "ইশ্বর সহায়, আমরা ধ্বংস হবনা”।

প্রথম আঘাত টা এলো বিকেলে। বর্নের আকাশ ছেয়ে গেল তীর বর্শা আর ধেয়ে আসা জলন্ত পাথরে। জ্বলছে নগর, লক লক করে বাড়ছে আগুনের শিখা - মরছে মানুষ, যা হয় যুদ্ধে। নগর থেকেও প্রত্যুত্তরে শত্রুর দিকে ধেয়ে চলেছে সমরাস্ত্র। এই তান্ডব চলল মধ্যরাত অবধি। হার্মিসনের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একবার বুরুজের কাছে গিয়ে ভালো করে দেখে, সাহসে কুলোয় নি। পরদিন ঘুম ভেঙ্গেছিল ঘণ্টার শব্দে। ঝলসানো হাঁস টা এবার ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিল সে।


দিনের পর দিন যুদ্ধ চলছে। অবরুদ্ধ বর্ণ যে কীভাবে টিকে রয়েছে সে এক বিস্ময়। কিছুদিন যেতেই শত্রু পক্ষ ঘন্টার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই এই ঘন্টাধ্বনি তাদের উন্মাদ করে দেয়, মনে করিয়ে দেয় তাদের ব্যর্থতাকে। দূর থেকে তারা দেখতে পায় গির্জার চূড়ায় রুপোলি ঘন্টাটা দুলছে, ডান থেকে বাঁয়ে আর বাম থেকে ডানে। ঘন্টার দশ বারো ফিট নিচে একটি জানালা। তিনটে লোহার শিক দিয়ে সুরক্ষিত সেই জানালার ওপারে সাদা আলখেল্লা পড়া একটি মানুষ নিরলস ভাবে টেনে চলেছে ঘন্টার দড়ি। শত্রুর সকল আক্রোশ গিয়ে পড়ে ওই লোকটার উপর, তিন শিকের ওই জানালাটার উপর। ভাইকিং নৃপতি আদেশ দিয়েছেন "আর কিছুই চাইনা, ওই জানালাটা গুড়িয়ে দাও। হত্যা কর ওই লোকটাকে।" ভাইকিং আক্রমন জেঁকে বসে জানালার উপর। মেরি লি অফ বর্ণ তাঁর লোকজন নিয়ে রক্ষা করে চলেন ফাদার বার্ড কে।
অবরোধের আশিতম দিন। ভাইকিং নৃপতি এমুন্ডসন চিন্তিত মুখে পায়চারী করছেন তাবুর ভেতর। তাঁর সামনে দাড়িয়ে এস্গার্দ, ভাইকিং সেনাপতি। এস্গার্দ একটি দু:সংবাদ নিয়ে এসেছেন। যুদ্ধের রসদ প্রায় শেষের পথে, ক্যাটাপুল্ট দিয়ে ছুড়ে মারার মত বড় পাথর যা ছিল সব ফুরিয়েছে, ফুরিয়েছে ন্যাপ্থার মজুত। অল্প কিছু তীর, বর্শা আর তরবারি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু এগুলো আর খরচ করা ঠিক হবেনা। নগর পাঁচিল ভেদ করতে পারলে এগুলোর প্রয়োজন হবে। ব্যর্থ হয়ে যদি ফিরে যেতে হয় তাহলে যাত্রা পথে সুরক্ষার জন্যও চাই অস্ত্র।  

"এস্গার্দ, কতগুলো ক্যাটাপুল্ট অক্ষত আছে?"
"ছয়টি মি লর্ড"
"গোলান্দাজদের দল"
"একটি মি লর্ড, সেটিও বিভিন্ন দল থেকে যারা বেঁচে আছে তাদের নিয়ে বানানো "
"তার মানে একসাথে সব গুলো ক্যাটাপুল্ট ব্যবহার করা যাবেনা, ঠিক?"
"জি মি লর্ড, একটি একটি করে ব্যবহার করতে হবে"
"যাও, লোক পাঠিয়ে নদীর তীর থেকে কুড়িয়ে আনতে বল নুড়ি-পাথর যাই মেলে"
"কেন মি লর্ড?"
"এই নগর আমরা দখলে নিতে পারবনা, আমরা চলে যাব। কিন্তু যাবার আগে ওই লোকটা আর ওই জানালাটা গুড়িয়ে দিতে চাই। সারাদিন ধরে আক্রমন চালিয়ে যাও ওই একটি জায়গায় |

এই চলছে গত তের দিন ধরে। কত শত নুড়ি যে ধেয়ে এলো ! বর্নের মানুষেরা বুঝে গিয়েছে ডেভিলদের সামর্থ্য এখন তলানিতে, বলতে গেলে হাসি ঠাট্টার পর্যায়ে। মেরি লি অফ বর্ণ বাছা বাছা কিছু জওয়ান ছেলেকে মুগুর হাতে দাড় করিয়ে দিয়েছেন জানালার সামনে। তারা সারাদিন ধরে মুগুর দিয়ে ধেয়ে আসা নুড়ি পিটিয়ে যায়।


ভাইকিং আক্রমনের এক বছর পর। বসন্তের সকাল, চারিদিকে ঝলমল করছে রোদ্দুর। পুড়ে যাওয়া শস্য খেতে ইতিউতি উঁকি মারছে গমের চারা। ফাদার বার্ড আর মেরি লি অফ বর্ণ নগর পাঁচিলের বাইরে এসে কথা বলছেন। দুরে কয়েকটি ছেলে জটলা পাকিয়ে কী যেন করছে, বর্নের প্রবীনতম রাখাল ডেভিড দা শেফার্ড দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন সেটি। দুই বৃদ্ধের কৌতুহল হলো। এগিয়ে গেলেন। এরা সব নগরের অনাথ ছেলে, গোল হয়ে দাড়িয়ে সবাই। বৃত্তের মাঝখানে তিনটে লাঠি পুঁতে রাখা। একটি ছেলে মুগুর হাতে তার সামনে দাড়ানো, অন্য দিক থেকে নুড়ি ছুড়ে মারছে আরেক জন।

"কি করছো তোমরা?"
সস্নেহে জিগেশ করলেন ফাদার বার্ড |
"আমরা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছি, সেই ভাইকিং যুদ্ধের মত। ওই যে আমাদের জানালা, আপনি যেখানে দাড়িয়ে থেকে ঘন্টা বাজাতেন। নুড়ি হাতে ছেলেটির নাম ফ্লিনটফ। ফ্লিনটফ আজকে ভাইকিং, ও চাইছে জানালাটা গুড়িয়ে দিতে। মুগুর হাতে দাড়িয়ে আছে বয়কট। বয়কট টা দারুন, একটা নুড়িও ওকে ফাঁকি দিয়ে যেতে পারেনা।"

"দারুন খেলা তো! কে বানিয়েছে? কী নাম এই খেলার?"

"হার্মিসন বানিয়েছে| ওই যে হার্মিসন, গির্জার চাতালে ঘুমাতো | সারা দিন বক বক করত বলে আমরা ওকে বলতাম ঝিঝি পোকা। আমরা এই খেলাটিকে ক্রিকেট বলি। হার্মিসনের নামে নাম।”

"হার্মিসন কে দেখছিনা যে! কোথায় গেলো?"

ছেলেরা যেন শুনতে পায়নি, তারা আবার মন দিয়ে খেলছে। শিশুরা কষ্টের স্মৃতি মনে রাখতে চায়না।
মেরিলি অফ বর্ণ গভীর কৌতুহল নিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখছেন। তার এক দিকে ফাদার বার্ড আরেক দিকে রাখাল ডেভিড দা শেফার্ড। তিনকাঠি গুড়িয়ে গেল, ছেলেরা সমস্বরে চিত্কার করে উঠলো
"হাউজ দ্যাট?”
ফাদার বার্ড তর্জনী উঁচু করে সায় দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন
"নট ব্যাড, নট ব্যাড এট অল।”

(অনুবাদ নয়, ইতিহাস নয়। স্বপ্নে পাওয়া, ডবলু জি গ্রেসের আত্মা এসে বলে গিয়েছে- মোখলেস হোসেন)


মন্তব্য

সো এর ছবি

লা জবাব।

অতিথি লেখক এর ছবি

লা জবাব তো বটেই! আপনি ছাড়া আর কেউ লেখাটি পড়েছেন বলে তো মনে হচ্ছেনা। না পড়লে জবাব পাবো কীভাবে? পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সো। মন খারাপ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছ

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ,

মোখলেস হোসেন

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমি ভেবেছিলাম শহরটা হয়ত আত্মসমর্পন করবে। গল্পের বর্ণনা ভালো লেগেছে।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ। আমিও তাই ভেবেছিলাম। ডব্লিউ জি গ্রেসের কথা অবিশ্বাস করি কী করে বলুন!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।