জনযুদ্ধের গণযোদ্ধাদের গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/১২/২০১৫ - ১:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শ্রীমঙ্গলের চারদিকে বিস্তীর্ণ কালেঙ্গা অরণ্য - আমাদের গেরিলাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মাঝে মধ্যে ভুল করে পা মাড়ালেও মুক্তিবাহিনীর এমব্যুশে ফিরে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানীদের। ২৪ শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১; বড় একটি পাকিস্তানী কলাম এগিয়ে আসছে বুনো পথ ধরে। পথ দেখিয়ে আনছে রাজাকার নাম্নী ২০/২৫ জনের এদেশীয় কিছু প্রভুভক্ত কুকুর।

নায়েব সুবেদার আবদুল মান্নানের নেতৃত্ব রাস্তার দুপাশে এমবুশে প্রস্তুত একটি গেরিলা দল। রুদ্ধশ্বাস নীরবতা, দৃষ্টি নিবদ্ধ রাস্তার দিকে। রাজাকারের দল হেঁটে চলছে রাস্তা দিয়ে, পাশেই রাস্তার ঠিক নীচে এসএমজি নিয়ে পজিশনে মুক্তিবাহিনী। নিরাপদেই রাজাকাররা হেঁটে পার হয়ে যায়, কারণ মুক্তিবাহিনীর লক্ষ্য রাজাকারদলের পেছনে থাকা পাকিস্তানী দলটি, নীচু গোত্রীয় রাজকাররা নয়।

এক সময় পাকিস্তানী সৈন্য দলটি দৃষ্টিগোচর হয় যোদ্ধাদের, কিন্তু গেরিলাদের উপর আদেশ রয়েছে শত্রুর চোখের সাদা অংশটি না দেখা পর্যন্ত অর্থাৎ একেবারে কাছে না আসা পর্যন্ত গুলি না চালাতে। এক সময় পুরো দলটিই এসে ঢুকে পড়ে আমাদের গেরিলাদের পাতা ফাঁদে। নিস্তব্ধ বনাঞ্চলের নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে এক যোগে গর্জে ওঠে আমাদের সব অস্ত্র। ঢলে পড়ে মৃত পাকিস্তানীদের দেহ রাস্তার দুপাশে। বেশ বড় দল হওয়াতে এক সময় পাকিস্তানীরা নিজেদের ক্ষতি সামলে শুরু করে পাল্টা আক্রমণ।

এরই মাঝে নায়েব সুবেদার আবদুল মান্নান জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নিজের নিরাপদ অবস্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এক আহত পাকিস্তানীর কাছে এসে চিৎকার করতে থাকে, "আমি ক্যাপ্টেন আজীজকে কথা দিয়েছি এক পাকিস্তানীকে জীবিত নিয়ে আসবো, তিনি আমাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেবেন।"

নাহ্‌, সুবেদার মান্নানের আর ফেরা হলো না সেই পাকিস্তানীকে নিয়ে, শত্রুর গুলিতে ঢলে পড়লেন সেই আহত সৈনিকের পাশেই।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কেবলই একটি যুদ্ধ ছিল না; ছিল সাধারণ মানুষের দেশপ্রেমের এক অপুর্ব নিদর্শন। যে কোন যুদ্ধে এক বা একাধিক নিয়মিত সামরিক বাহিনীর মধ্যেই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ এই যুদ্ধকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গণযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে। সম্মুখসমরের গনযোদ্ধাদের প্রায় সবাই ছিল গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ; ছাত্র, শ্রমজীবী, পকেটমার, সিঁধেল চোর, চরদখলের লড়াকু, গেরস্থের কামলা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ইতিহাসে সাধারণ মানুষের এই বিপুল আত্মত্যাগের কাহিনী খুব কমই পাওয়া যায়। তাই আমাদের কাছে অজানা থেকে যায় আজীবন ফার্স্ট হওয়া দশম শ্রেণীর ছাত্র ফারুকের নাম যে তার বাবাকে জীবনের শেষ চিঠিতে লিখেছিল - Mother and Motherland are superior to heaven.

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের বীরোচিত আত্মত্যাগের কাহিনী যতই পড়েছি ততই স্তম্ভিত হয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষদের সাহস দেখে। চোখের অশ্রুকে বাঁধ মানাতে পারি নি কোনভাবেই। সেই নাম না জানা কিশোরের কথা পড়ছিলাম। যুদ্ধ করতে এসে ধরা পড়েছে। পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন তাঁর দিকে বন্দুক তাক করে জিগ্যেস করছে, মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ইচ্ছা কি? সেই কিশোর গভীর মমতায় মাটিতে চুমু খেয়ে উত্তর দিচ্ছে, “চালাও গুলি। আমার রক্ত আমার মাতৃভূমিকে পবিত্র করবে, স্বাধীন করবে।“ এই বীরোচিত কিশোরের প্রদীপ্ত কণ্ঠ শুনে কি চোখের অশ্রু বাঁধ মানানো যায়?

কিংবা ফেনীর বিলোনিয়া যুদ্ধের ১৮-১৯ বছরের কিশোর আক্তারের কথাই ধরুন। সন্মুখ যুদ্ধে প্রচন্ড আহত সে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। অবিশ্রান্ত ধারায় রক্ত ঝরছে শরীর থেকে। গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে ঔষধ, সরঞ্জাম কিছুই নেই। ছেলেটি নিশ্চিত মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর আগে সহযোদ্ধাকে শুধু একটা কথাই বলে গেল যেন তাঁর বড় ভাইকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে সে যুদ্ধের মাঠে কাপুরুষের মত মরে নি। এলএমজি নিয়ে শত্রু হত্যা করতে করতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরেছে। তাঁর ভাইও কোন এক সেক্টরে যুদ্ধ করছে। জানা নেই সেই ভাই বেঁচে আছে কি না মরে গেছে।

পাত্রখোলা চা বাগানের কুলি হরির কথাই ধরুন। ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩৫ জনের একটি প্লাটুন সিলেটের শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনে পাকিস্তানী আর্মির অবস্থানে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত। একজন গাইড দরকার। হরি এগিয়ে আসল। তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। যাত্রা শুরু হয়েছে বিকেলে। সন্ধ্যায় খবর আসল হরির স্ত্রী একটি মৃত সন্তান প্রসব করে মারা গেছে। সবাই মর্মাহত এবং একইসাথে উদ্বিগ্ন কেননা হরিকে ছাড়া শ্রীমঙ্গল যাওয়া যাবে না। রেইড দলের কমান্ডার ক্যাপ্টেন হাফিজ হরিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। জিগ্যেস করলেন শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য অন্য কোন গাইড পাওয়া যাবে কি না। হরি চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিল, “স্যার, বউ মরছে তো কিতা অইছে। চিন্তা কইরেন না। আমিই লইয়া যামু শ্রীমঙ্গল।“ হরিরা হারিয়ে গেছে। তাঁদের খোঁজ কেউ রাখ নি।

ভারতীয়রা অনেক গর্ব করে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তাঁদের সাফল্যের কথা প্রচার করে বেড়ায়। কিন্তু একবারও তাঁরা তাঁদের সাফল্যের পিছনে মুক্তিবাহিনী কিংবা সাধারণ বাংলাদেশীদের অবদানের কথা বলে না। ভারতীয় সেনানায়করা কোথাও তাঁদের বইতে লিখেন নি – মুক্তিবাহিনী কিভাবে শত্রুকে ‘অন্ধ ও বধির’ করে ফেলেছিল। তাঁরা সেই ‘অন্ধ ও বধির’ শত্রুদেরকে কেবল নিধন করেছিলেন। তাঁরা লিখেন নি, তাঁদের পিটি-৭৬ উভচর ট্যাঙ্ক মেঘনা নদী সাঁতরে পার হতে পারছিল না যখন (আধা ঘন্টা পানিতে চললে এই ট্যাঙ্কের ইঞ্জিন গরম হয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়) তখন গ্রামবাসী কি করে দেশী নৌকা দিয়ে এগুলো টেনে পার করে। তাঁর লিখেন নি কাঁদার রাস্তায় আশুগঞ্জ-ভৈরবের যুদ্ধে কিভাবে তাঁদের ভারী মর্টার, ভারী সরঞ্জাম গ্রামের লোক বয়ে নিয়ে গেছে তাঁদের জন্য। একবারও তাঁরা উল্লেখ করেন নি কিভাবে রংপুরের বদরগঞ্জে হারিকেন হাতে আমাদের ছেলেরা ট্যাঙ্কের সামনে হেঁটে হেঁটে ওদের পথ দেখিয়েছে। অথচ তাঁরা ঠিকই লিখলেন কি করে ১.৮ : ১ আনুপাতিক সৈন্যের হারে তাঁরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।

এই যুদ্ধ ছিল একান্তই আমাদের যুদ্ধ। আমাদের যুদ্ধ ছিল বলেই দোহার থানার বাগড়া বাজারের চায়ের দোকানদার চুন্নু নিজের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী আর্মিদের খবরাখবর পৌঁছে দিত মুক্তিবাহিনীর কাছে। সেই খবরের উপর ভিত্তি করে মুক্তিবাহিনী অপারেশন চালাত। চুন্নুর ইচ্ছে ছিল দেশ স্বাধীন হলে কোন একটা সরকারী অফিসে পিয়নের চাকরি করবে। তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণ হয় নি। চুন্নু হারিয়ে যায়। অনেকদিন পর যখন তাঁর খোঁজ পাওয়া যায় তখন সে ফুলার রোড আর তৎসংলগ্ন এলাকায় রিকশা চালায়।

রাখাইন মেয়ে প্রিনছার কথা না বললে মুক্তিযুদ্ধে সব জাতি-গোষ্ঠীর ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের ব্যাপারটি আড়ালে থেকে যায়। টেকনাফের মেয়ে প্রিনছা খে একটা মেডিকেল টিম এর সাথে কাজ করত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত এলাকায়। জুলাই মাসে পাকিস্তানী বাহিনী যখন পাথরঘাটা আক্রমণ করে তখন প্রিনছা বন্দী হয় পাকিস্তানীদের হাতে। অবধারিতভাবেই পাকিস্তানীদের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত হয় সে। তবে প্রিনছা ছিল বুদ্ধিমতী। সে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মিশে যায়, তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করে। প্রিনছার রান্নার হাত ছিল খুবই ভাল। একদিন সুযোগ বুঝে সে খাবারে বিষ মিশিয়ে পরিবেশন করে পাকিস্তান আর্মির সৈন্যদের কাছে। ৪২ জন সৈন্যের ১৪ জনই মারা যায়। বাকিরা গুরুতর আহত হয়ে পড়ে থাকে। বীরাঙ্গনা প্রিনছার কোন খোঁজ কি আমরা এখন জানি?

একজন মুক্তিযোদ্ধার চিঠি পড়ুন। দেখুন দেশের প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা কাকে বলে। পারছি কি আমরা দেশটাকে এইভাবে ভালবাসতে?

মা,

তুমি আজ কোথায় জানি না। তোমার মত শত শত মায়ের চোখের জল মুছে ফেলার জন্য বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। আমি যদি মরে যাই তুমি দুঃখ করো না মা। তোমার জন্য আমার যোদ্ধাজীবনের ডায়েরি রেখে গেলাম আর রেখে গেলাম লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা সবাই তোমার ছেলে। আজ হাসপাতালে শুয়ে তোমার স্নেহমাখা মুখখানি বারবার মনে পড়ছে। আমার ডায়েরিটা তোমার হাতে গেলে তোমার সকল দুঃখ দূর হয়ে যাবে। দেখবে তোমার ছেলে শত্রুকে পেছনে রেখে কোনোদিন পালায় নি। যেদিন তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে আর বলেছিলে , শত্রু দেখে কোনোদিন পেছনে আসিসনে বাবা। তুমি বিশ্বাস কর মা, শত্রু দেখে আমি কোনোদিন পালাই নি। শত্রুর বুলেট যেদিন আমার বুকের বা দিকে বিঁধল সেদিনও তোমার কথা স্মরণ করেছিলাম। মা, আমার সবচেয়ে আনন্দ কোথায় জান? আজ থেকে চারদিন পূর্বে একটা গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, হঠাত বেদনাক্লিষ্ট একটা নারীকন্ঠ ভেসে এলো। কালবিলম্ব না করে সেদিকে দৌড়ে গেলাম। একটা গুলি আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল – আবার একটা। এবার বুঝলাম শত্রুরা আমাকে লক্ষ করেই গুলি ছুঁড়ছে। তবুও আমি এগিয়ে চলছি। বাড়িটার পেছনে একটা বাঁশঝাড়ের পেছনে আড়াল নিলাম। দেখলাম বিবস্ত্র একটা নাড়ীর দেহ নিয়ে কয়েকজন পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছে। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না না। মনে পড়ে গেল বাংলার লক্ষ লক্ষ মায়ের কথা। শত্রুকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়লাম। ওরাও অনবরত গুলিবর্ষণ শুরু করল। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে। জানতে পারলাম আমার গুলিতে ৫ জন নরখাদক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। দোয়া করো মা। ভাল হয়ে আবার যেন তোমার শত শত সন্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারি।

ইতি
তোমার ছেলে
বাংলাদেশ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

লিখলে শেষ করা যাবে না। প্রচণ্ড কষ্ট হয় যখন দেখি জনযুদ্ধের এই মহান গনযোদ্ধারা করুণ অবস্থায় দিন কাটায় আর স্বাধীনতার ফসল ঘরে তুলে সুবিধাবাদী কিছু গোষ্ঠী যারা জানতই না যুদ্ধ কাকে বলে। তিরিশের কোঠায় যে কৃষক স্ত্রী মিরাশের মা অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে সে নেত্রকোনায় স্বামী-সন্তানহারা পথের ভিখিরি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আখাউরার চোরাকারবারি বীর্যধারী যোদ্ধা তাজুল আবার তাঁর পুরাতন কাজেই ফিরে যায়। ট্রেনের পকেটমার ফজলু যুদ্ধ শেষে ময়মনসিংহের রেলস্টেশনে চা-বিস্কুটের দোকান করে। ফেনীর যুদ্ধাহত যোদ্ধা বীর প্রতীক তাহের হতাশায় পিজি হাসপাতালের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। আর পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকারগুলো গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। কত দীন হলে একটি জাতি তাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবজ্ঞা প্রদর্শন করতে পারে। যে দেশে বীরদের শ্রদ্ধা করা হয় না সে দেশে বীর তৈরিও হয় না। এ প্রবচন আমাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য।

এতসব হতাশার পরেও একসময় যা ছিল কল্পনা, আজ তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে সেটা বছর পাঁচেক আগেও কল্পনা করতে পারতাম না। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী কুচক্রিদের বেশ কয়েকজনকেই আমরা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাতে পেরেছি। ফাঁসির লাইনে আছে আরও কয়েকজন। মিথ্যা প্রলম্বিত হতে পারে কিন্তু বিজয়ী হতে পারে না সেটা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের যুদ্ধ কিন্তু এখনও শেষ হয় নি। পরাজিত শক্তিরা তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাঁচানোর জন্য মানবাধিকারের দরদী ব্যক্তি ও সংস্থা উঠেপড়ে লেগেছে। মিথ্যার বেসাতি ছাড়িয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইছে নতুন প্রজন্মের কিশোর, তরুণ আর যুবকদের। তাদের আছে অর্থ, আর আমাদের আছে দেশের প্রতি ভালোবাসা। বিজয় আমাদের হবেই হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। জানাতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের নৃশংসতা। শহীদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরীর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই প্রতি শ্রেণীতে ১০০ নম্বরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্তর্জালে প্রচুর লেখা ছড়িয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিবারের শিশুদেরকে দেশের প্রতি ভালোবাসার পাঠ দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গর্বে গর্বিত হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তবেই মুক্তিযোদ্ধাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

তথ্যসূত্রঃ
১. জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা - মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
২. বিজয়ী হয়ে ফিরব নইলে ফিরবই না - মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
৩. Bangladesh at War - মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ
৪. প্রাগুক্ত (একাদশ খন্ড), পৃষ্ঠাঃ ৮৫০-৮৫১
৫. ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জন্মযুদ্ধ'৭১

ফাহমিদুল হান্নান রূপক


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নজমুল আলবাব এর ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি সম্বোধন করা উচিত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুলটা অনিচ্ছাকৃত। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

রানা মেহের এর ছবি

প্রিয় রুপক,

আপনি তথ্যসুত্র হিসেবে জনযুদ্ধের গণযোদ্ধার নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই লেখার কিছু জায়গা এই বই থেকে হুবুহু কপি বলা যায়। কিছু বাক্যের গঠন হয়তো এদিক ওদিক হয়েছে কিন্তু একে তথ্যসুত্র থেকে নেয়া বলাটা অবান্তর। পরেরবার খেয়াল রাখবেন আশা করি।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

"জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা" বইয়ের ভূমিকা থেকে কিছু অংশ কপি করেছি। আমি ভেবেছিলাম রেফারেন্স অংশে বইয়ের নাম এবং লেখকের নাম দিলেই চলবে। এখন থেকে কোন অংশ কপি করলে উদ্ধৃতির মধ্যে দিয়ে দিব। বিষয়টা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ভারতীয়রা অনেক গর্ব করে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তাঁদের সাফল্যের কথা প্রচার করে বেড়ায়। কিন্তু একবারও তাঁরা তাঁদের সাফল্যের পিছনে মুক্তিবাহিনী কিংবা সাধারণ বাংলাদেশীদের অবদানের কথা বলে না।

৭১এর যুদ্ধ নির্ভর সকল ভারতীয়'র সকল লেখা পাঠ করার আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য করা একান্তই অনুচিত। আমি তাঁদের অনেকের লেখাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভুমিকাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে দেখেছি। অজ্ঞতার কারনে আপনি নিজের অজান্তেই রাজাকারি প্রোপাগান্ডায় শরিক হয়ে যাচ্ছেন কি না খেয়াল রাখবেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

এই অংশটুকু সম্ভবত লেখকের নয়, মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার।
লেখক যথাযথ উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার না করায় বিভ্রান্তিকর হয়ে গেছে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি "জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা" বইয়ের ভূমিকা থেকে কিছু অংশ কপি করেছি। অংশটুকু উদ্ধৃতির ভিতর দিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল, তাহলে আর বিভ্রান্তির সৃষ্টি হত না। আমি ভেবেছিলাম রেফারেন্স অংশে বই এবং লেখকের নাম দেওয়াই যথেষ্ট। পরেরবার থেকে সতর্ক হব।

অজ্ঞতার কারনে আপনি নিজের অজান্তেই রাজাকারি প্রোপাগান্ডায় শরিক হয়ে যাচ্ছেন কি না খেয়াল রাখবেন।

এই ব্যাপারটা ভাল বলেছেন। চেষ্টা করি দূরে থাকতে। আমি মেজর (অবঃ) কামরুল হাসান ভুঁইয়ার লেখার ভক্ত। উনার ব্যাপারে এমন কোন চিন্তা আসে না বলেই হয়ত নির্দ্বিধায় তার লেখার রেফারেন্স ব্যবহার করেছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

ঈশাণ কোণ এর ছবি

চার এর নামতা শেষ,এবার পাচের নামতা শুরু হবে।।
সব শু্য়ার একে একে ফাসি কাঠে যাবে।।

লেখায় চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

কোন ষড়যন্ত্রই ফাঁসির কাঠ থেকে এদেরকে বাঁচাতে পারবে না।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10151944036220783&set=a.10151944015420783.1073741835.579410782&type=3&theater

শহীদ আব্দুল মান্নান বীরউত্তমের কবর এখানে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটার জন্য ধন্যবাদ। এডিট করার সুযোগ হলে লেখায় ছবিটা এড করে দিব।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রূপক ভাই। ধন্যবাদ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়াকেও, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইতিহাসের দায় মিটিয়ে চলেছেন।

যখনই সাধারণ মানুষের এই আত্মত্যাগের কাহিনিগুলো পড়ি, যখন গেরিলা যোদ্ধাদের অভিযানগুলোর কাহিনি পড়ি, যখন সম্মুখ সমরের যোদ্ধাদের যুদ্ধজয়ের কাহিনিগুলো পড়ি, যখন শহীদ বুদ্ধিজীবিদের আত্মত্যাগের কাহিনি পড়ি তাদেরই স্বজনদের বয়ানে, তখন প্রচন্ড শিহরিত হই, গর্ব হয় এমন একটি জাতির উত্তরসূরি হিসেবে, কিন্তু একই সাথে হতাশায় ম্যুহমান হই যখন দেখি দেশের একটি অংশ এখনো অন্ধকারে, তাদের কাছে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধই শুধু এটি, দেশের একটি বড় দলের নেত্রীর উক্তিকে তোতাপাখির মত ধারণ করে নিয়ে তারাও 'পাকিস্তানি বাহিনী'কে হানাদার বাহিনী আখ্যায়িত করতে চায়, 'তিরিশ লাখ' সংখ্যাটাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে চায় এবং নিজের জাতীয় পরিচয়কেই অস্বীকার করতে চায়! কি দুর্ভাগা এরা! এরা নিজেদের চেনে না, জানে না, অন্যের পরিচয়ে বড় হয়ে উঠাতে কোন গৌরব নেই, সন্মান নেই - এই বোধটুকুও এদের হয়নি!

আমার মতে, শুধু ভৎসনা/গালমন্দ করে আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, আমাদের বোঝা দরকার, একটা দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু, রাজাকার, পাকিস্তানী সেনা ইত্যাদি শব্দ নিষিদ্ধ্ব ছিল এদেশের পাঠ্যপুস্তকে, মিডিয়ায়! আমি নিজেই মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো কিনেছি অনেক বড় হয়ে, কারণ একটা সময় পর্যন্ত এই বইগুলো হয় লেখা হয়নি, নয়তো সর্বত্র সুলভ ছিল না! আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধের এই আত্মত্যাগের কাহিনিগুলো নিয়ে আরও অনেক নাটক, চলচ্চিত্র নির্মান করতে হবে; মুক্তিযুদ্ধের উপর চলচ্চিত্র খুব অপ্রতুল, তাছাড়া ব্যাক্তি আত্মত্যাগকে হাইলাইট করে শিহরন সৃষ্টিকারী ছবিও তেমন হয়নি। অথচ রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে বা মর্মস্পর্শী আত্মত্যাগের কাহিনি নিয়ে হাজার হাজার চলচ্চিত্র বানানো সম্ভব। এই চলচ্চিত্রগুলো জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মূলধারার হলগুলোতে প্রদর্শন করতে হবে, প্রয়োজন হলে সরকারী অনুদান দেয়া যেতে পারে হলমালিকদের।

এছাড়া অনেক ইতিহাস বই পাঠ করি আমরা স্কুল-কলেজ জীবনে। ব্রিটিশ আমল, মোঘল আমল, সুলতানী আমল, পাল আমল, সেন আমল জানলেও জানি না আমাদের একান্ত জন্মের ইতিহাস। আমার মতে, প্রতি শ্রেনীতে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা চাপ্টার না রেখে একটা আলাদা সাবজেক্ট রাখা উচিত বাধ্যতামূলকভাবে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের উপর পূর্ণাংগ পাঠ্যপুস্তক থাকবে, মানে, বাংলা, ইংরেজী, ভুগোগ, সাধারণ বিজ্ঞানের মত 'মুক্তিযুদ্ধ' ও একটি সাবজেক্ট হিসেবে থাকবে। যেহেতু আমাদের দেশে পাঠোভ্যাস দুর্ভাগ্যজনকভাবেই কম, সেইহেতু আলাদা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আসতে হবে।

আর এভাবেই অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসতে পারব আমরা আমাদের দেশের একটি আত্মবিস্মৃত ও অসুস্থ জনগোষ্ঠিকে, যারা নিজের জাতীয় ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে, এই ইতিহাসকেই বুকে ধারণ করে সামনে এগোনোর প্রেরণা খুঁজবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মত।

।।।।।।।।
অনিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধের এই আত্মত্যাগের কাহিনিগুলো নিয়ে আরও অনেক নাটক, চলচ্চিত্র নির্মান করতে হবে; মুক্তিযুদ্ধের উপর চলচ্চিত্র খুব অপ্রতুল, তাছাড়া ব্যাক্তি আত্মত্যাগকে হাইলাইট করে শিহরন সৃষ্টিকারী ছবিও তেমন হয়নি। অথচ রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে বা মর্মস্পর্শী আত্মত্যাগের কাহিনি নিয়ে হাজার হাজার চলচ্চিত্র বানানো সম্ভব। এই চলচ্চিত্রগুলো জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মূলধারার হলগুলোতে প্রদর্শন করতে হবে, প্রয়োজন হলে সরকারী অনুদান দেয়া যেতে পারে হলমালিকদের।

সহমত।

প্রতি শ্রেনীতে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা চাপ্টার না রেখে একটা আলাদা সাবজেক্ট রাখা উচিত বাধ্যতামূলকভাবে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের উপর পূর্ণাংগ পাঠ্যপুস্তক থাকবে, মানে, বাংলা, ইংরেজী, ভুগোগ, সাধারণ বিজ্ঞানের মত 'মুক্তিযুদ্ধ' ও একটি সাবজেক্ট হিসেবে থাকবে। যেহেতু আমাদের দেশে পাঠোভ্যাস দুর্ভাগ্যজনকভাবেই কম, সেইহেতু আলাদা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আসতে হবে।

এই ব্যাপারটাই নুজহাত চৌধুরী উল্লেখ করেছেন। এই মুহূর্তে এটা বাস্তবায়ন করা খুবই দরকার।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।