সংখ্যাতত্ত্ব না গল্পতত্ত্ব ? আগরতলা না চৌকির তলা ?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/১২/২০১৫ - ৮:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্প্রতি গয়েশ্বর রায়ের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্ষু্দ্ধ অামার প্রিয়বন্ধুর তার ফেসবুকে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া ও সেখানে অামার স্যাটায়ার মূলক কমেন্ট - 'হেতে কি কইছে ? নাবালক মানুষ দুঃখে না হয় ভুল কইচ্ছে' - নিয়ে আমার জন্য হয়ে গেল এক পীড়াদায়ক ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা ৷ আমার এই মন্তব্যের উদেশ্য ছিলো - গয়েশ্বর রায়কে একটু ব্যঙ্গ করা ৷ এই মন্তব্যের কিছুক্ষণ পর দেখি একজন এসে আমাকে গুরুতর অভিযোগ করে বসলেন- 'কাকে নাবালক বলছেন অরণ্য ত্রিপুরা (আমার ছদ্মনাম ব্যবহার করছি) । এই করে করে গয়েরশ্বর এর মত শয়তান , মীরজাফরদের , দেশদ্রোহীদের লাই দিয়ে মাথায় তুলেছেন । এদের যেতে আসতে জুতা মারা উচিৎ' ।

যিনি অামার বন্ধুর দিদি সম্পর্কিত ও ফেসবুক বন্ধু কিন্তু যার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা বা আমার কোন ফেসবুক বন্ধুও নন এমন অপরিচিত কেউ যদি এমন ক্ষুদ্ধ অভিযোগ করে বসে- আমার প্রথম মানসিক প্রতিক্রিয়া ছিলো - 'কেমন ধরণের মানুষ ইনি, অহেতুক গায়ে পড়ে মানুষকে অাক্রমণ করে' ! যেন কোন বন্ধুর সাথে আমাদের অতিপরিচিত স্টাইলে কোন বিষয়ে আলাপ আলোচনায় তৃতীয় অপরিচিত ব্যক্তির অহেতুক হঠাৎ ডুকে পড়া, ভুল বুঝা এবং আক্রমণ করে বসা ৷ মাথায় ছিলোনা ফেসবুক আর বাস্তবের আলোচনা এক না ৷

কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে আরো একটা প্রতিক্রিয়া হলো ক্ষোভ মিশ্রিত হাসির ৷ আমি কি এমন হনু হলামরে গয়েশ্বর রায় আমার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীর কথায় লাই পায় ! নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য বিশাল বড়ো কেউ মনে হলো ৷

অামার বা আমাদের মতো তরুণ অথবা যে কোন বয়সের লোক হোক না কেন - আমাদের ফেসবুকে লেখালেখিতে খালেদা, গয়েশ্বর কিংবা মহান সরকারের কি আসে যায় ! এটা শুধু আমাদের অক্ষমতার ক্ষোভ প্রকাশ মাত্র ৷ ফেসবুক লেখালেখিতে কিছু যদি এসে যেতো তাহলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের চেহারা হয়তো মিনিটে মিনিটে চেঞ্জ হতো ৷ কখনোবা স্বর্গ হয়ে যেতো চমৎকার কিছু মানুষের পোষ্টের জন্য ৷ কখনোবা সাক্ষাৎ নরক- কিছু নিকৃষ্ট মানুষের ধ্বংস করে দেওয়ার হুংকার ফেসবুকে যেমন শুনি ৷

কিন্তু নাহ্ আমার মানসিক অবস্থা কিছুটা সামলে উঠলাম, স্বস্তি পেলাম যখন আমার বন্ধু জানালো যিনি আমার মন্তব্যের পরে পাল্টা মন্তব্য করছিলেন তিনি শহীদ পরিবারের একজন ৷ হয়তোবা আমারই বুঝা বা লেখার ভুল ৷ অথবা অপর পক্ষেরও ৷ দুঃখিত হলাম আমার মন্তব্যে তিনি আহত হয়েছেন জেনে ৷ আমি যেটাকে স্যাটায়ার ভেবে লিখেছি উনি সেটাকে ধরে নিলেন আক্ষরিক অর্থে ৷ মুক্তিযুদ্ধ, শহীদদের ইস্যুগুলো কিছু মানুষের কাছে এতো আবেগের এবং স্পর্শকাতর যে আমার মত মানুষ হয়তো তা কখনো বুঝতে পারবোনা ৷ গয়েশ্বর রায়ের মন্তব্যে তিনি বা তাঁর মতো মানুষেরা কতটা আহত ও বিক্ষুদ্ধ সহজে অনুমেয় ৷ সে জন্য তার ব্যক্তিগত জীবনের পটভূমিকার কারণে অপরিচিত হওয়ার পরেও আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেছেন আপন তাগিদ হতে, ক্ষোভ ঝাড়লেন আমার করা মন্তব্যে ৷

আমার এই ঘটনার সাথে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার সন্দেহ প্রকাশ এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে পত্রিকায়, ফেসবুকে ও বিভিন্ন মাধ্যমে মাঝেমধ্যে পড়া বিভিন্ন লেখা বা বিতর্কের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো ৷ আমি বলছিনা খালেদা জিয়ার বক্তব্য সঠিক ৷ বরং অামার প্রশ্নজাগে কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষকের দাবিদার (অন্তত বিনপির দাবি, অন্যদিকে বিপক্ষ দলের অস্বীকার) জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, তার দলের লোক গয়েশ্বর রায় ও অন্যান্য এতদিন যে শহীদমিনার-স্মৃতিসৌধে ফুল দিলেন, শ্রদ্ধা জানালেন তাহলে তা সবই লোক দেখানো ? বিনপির কি এটা আসল চেহারা নাকি সময়ের পরিবর্তনে জামাতের জায়গা দখল করলো ? যেমন মুক্তিযুদ্ধের ধব্জাধারী লীগও বিনপি কিংবা জামাতের জায়গা দখল করছে বা করতে যাচ্ছে ৷ সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাদের জায়গা জমি লীগ -বিনপি-জামাত সব ভাই মিলে দখল, দেশ থেকে বিতাড়ন কিংবা নিশ্চুপ থেকে বিতাড়নে সাহায্য করা , প্রগতিশীলতার টুটি চেপে ধরা এই রকম হাজারো উদাহরণ বলে দেয় বর্তমান ঐ দলগুলোর মধ্যে খুব একটা ফারাক নাই ৷

খালেদা জিয়ার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক লেখা এবং অতীতের বিভিন্ন ঘটনা কিংবা লেখার বিরূদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা বা গনহত্যা নিয়ে যারা যুক্তি-তর্ক-তথ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কে বিরুদ্ধবাদীদের মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্যে লেখা লিখে থাকেন আমি অবশ্যই তাদের প্রশংসা করি ৷ কিন্তু একই সাথে ফেসবুকে আমার উপরের অভিমিশ্র অভিজ্ঞতার কারণে এও মনে হলো সংখ্যা কি সবকিছু প্রকাশ করতে পারে ? ধরুণ যে শিশুটি কখনো বাবা বা মা বা উভয় ডাক ছাড়া বোবা বেদনায় আজীবন ছটফট করেছেন, যে মা সন্তান জেলে ভাত পায়নি-মাটিতে ঘুমিয়ে অমানুষিক নির্যাতনে মারা গেছেন বলে আমৃত্যু ভাত ছোঁয়নি, মাটির বিছানাতে সার্মথ্য থাকা সত্বেও সন্তানের দূর্ভাগ্যকে স্মরণ করে আজীবন ঘুমিয়ে গেছেন অথবা যে তরুণী স্ত্রী আজীবন অপেক্ষা করে গেছেন হয়তো কোন আলৌকিক শক্তির বলে তার স্বামী ফিরে আসবেন এই আশায়- এই মানুষদের গভীর আবেগ-অভিজ্ঞতা-গল্প কোন সংখ্যায় কি পাওয়া যাবে ? যদি সংখ্যা ও নিরাবেগ তর্কের কুটচাল ঐ গল্পগুলো ধারণ করতে না পারে তাহলে গল্পেও সমান মনোযোগ দিতে হবে ৷ হয়তো বেশিও ৷ গণহত্যা, জাতিগত সহিংসতায় মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনাগুলোতে মানুষের গল্প, তাদের ভয়েস-অাবেগ-অনুভুতির ছোঁয়া যদি নাই থাকে তাহলে কেবলি তথ্য-তত্ত্বতো প্রাণহীন যুক্তির জালবোনা মাত্র ৷

শেষান্তে, আমার এক বন্ধুর পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংলাদেশের জন্মের পর হতে অাজ পর্যন্ত সংঘটিত মানবিক বির্পযয়ের কার্যকারণ সম্পর্কিত যুক্তিগুলোও মনে পড়ে গেল ৷ তার মতে - 'পার্বত্য চট্টগ্রামে গল্প আর মুক্তিযুদ্ধ চলাচালীন সে একই গল্প ৷ শুধু কুশীলবরা চেঞ্জ হয়েছে মাত্র ৷ বিগত চার দশকের বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে তবে তাদের সংখ্যা কখনোই হয়তো তিরিশ লাখে পৌঁছাবেনা ৷ হাজারো নারী ধর্ষিত হয়েছে তাদের সংখ্যাও কোনদিন দুই লক্ষ হবে না ৷ কারণ এই জনগোষ্ঠী সংখ্যায় এতো কম ৷ কিন্তু নির্যাতনের পটভূমি যদি দেখেন, একেকজন নির্যাতিতের গল্প-আবেগ-অভিজ্ঞতা যদি শুনেন , অনুভব করেন তাহলে সেই একই মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতদের বেদনা ও ক্ষোভের গল্প পাওয়া যাবে ৷ শুধু সংখ্যানামক ভেরিয়েবলের কমবেশিতে কি সবসময় নির্যাতনের- আপরাধের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধি পায় ?' কি অকাট্য যুক্তিরে বাবা !! আমি হাসি তার উর্বর মস্তিষ্কের প্রশংসায় ৷

তবে কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকির তলা ! তার কথা যদি সত্যি হতো তাহলে বাংলাদেশের এতগুলা সব প্রগতিশীল লেখক-কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক- রাজনীতিবিদ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- সুশীল ও সাধারণ নাগরিক আছে তারা কি চুপ থাকতেন এতো বৎসর ধরে ? তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে পাকিস্থানি কায়দা তারা কি কখনো মেনে নিতেন? তাহলে কতটা প্রাসঙ্গিক পাকিস্তানের নির্যাতনের সাথে মিলে যাওয়ার তত্ত্ব ? তাছাড়া শাহবাগের জাগ্রত তরুণরা ছিলো, এখনো কতো প্রগতিশীল তরুণরা আছে ৷ কই তেমন কারোর নজরে তো এই রকম তত্ত্ব মিল ধরা পড়লোনা ? হিল ট্র্যাকস্ বা পুরো বাংলাদেশের সংখ্যা লঘুদের সমস্যা নিয়ে কখনো কি প্রগতিশীলদের জাতীয় পযার্য়ের কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন শাহবাগ আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন নিয়ে ক্লাশ বর্জন, সুন্দরবন কিংবা দেশ বাচাঁনোর জন্য যে লংমার্চগুলো হয় সে রকম নিকট বা দূর অতীতে হয়েছিল ? কিংবা নিরীহ কোন বড় ধরণের মানববন্ধন ? আমি স্মৃতি হাতড়ায়, কিন্তু পেলাম না ৷ তাহলে বুঝা যায় সবইতো ঠিকঠাক চলছে ৷ অামার ঐ বন্ধুটি হয়তোবা একটু বেশি ক্রিটিকেল !

অামি নিজেকে এই রকম প্রশ্নগুলো করি, হাজারো বিষয় ভেবে দেখি কিন্তু আমার বন্ধুর তত্ত্বধাঁধা মেলাতে পারিনা ৷ না পারছি এই তত্ত্বকে সন্দেহের বাইরে রাখতে না পারছি মিথ্যা বলে রিজেক্ট করতে ৷

অরণ্য ত্রিপুরা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অরণ্য ত্রিপুরা, অনেক চেষ্টা করেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাবলীর ব্যাপারে আপনার অবস্থানটা বুঝতে পারলাম না। আমি নিজে স্বল্পবুদ্ধির মানুষ, তাই স্যাটায়ার-রিভার্স ইত্যাদি জটিল বিষয়গুলি ধরতে পারি না। 'হ্যাঁ' বা 'না'তে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো - পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঙালী জাতিগুলোর ওপর প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে চলা ঘটনাবলীকে আপনি কি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর সাথে তুলনীয় মনে করেন?

অরণ্য ত্রিপুরা এর ছবি

প্রথমে বলে নেওয়া ভালো বিষয়টা বিতর্ক সাপেক্ষ ৷ ব্যক্তির উপর নির্ভর করবে তিনি কোথায় কোথায় মিল খোঁজে পান আর কোথায় পাননা ৷ যুক্তিটি যেহেতু আমার বন্ধুর, সেহেতু এটার পিছনে তার আসলে ঠিক কি যুক্তি ছিলো আমি তা বলতে পারবোনা ৷ তবে অাপনার প্রশ্ন পড়ে আমার এই মুহুর্তে যে যুক্তি মাথায় আসছে তা এরকম ৷ ভুল থাকলে একটু জানাবেন ৷ ধরুণ বাংলাদেশের 1952 সালের ভাষা আন্দোলন ও ষাট দশকের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ৷ 'উর্দুই হবে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা' কিংবা পশ্চিম পাকিস্থানীদের অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে তখনকার পূর্ব পাকিস্থান বাংগালীদের শোষণ ৷ ভেবে দেখুন বাংগালীরা কেন এই চাপিয়ে দেওয়া ভাষা মানতে পারেননি এবং ছয় দফার জন্য কেন আন্দোলন করলেন ৷ বিপরীত দিকে, কি এমন নৈতিক বা পার্থিব ইুস্যগুলো এরকম কর্তৃত্বব্যজ্ঞক উক্তি ও শোষনে সাপোর্ট করে ৷ কেনবা পশ্চিম পাকিস্থানের অধিকাংশ মানুষ এগুলোকে তখন সাপোর্ট করে এবং এখনো কেন মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যাকে অস্বীকার করে ৷ এর পিছনে কি তাদের অজ্ঞতা না নাকি জেনেও এমন কোন ভাবার্দশে (পাকিস্থান রাষ্ট্রের আদর্শ) চালিত যা তাদেরকে ঐ ধরণের শোষন ও কর্তৃত্বকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মনে করায় ৷ অথবা কি পশ্চিম পাকিস্থানীরা যথেষ্ট গণতান্ত্রিক নয় কিংবা বাংগালীদের নিজেদের সমান মনে করে না ?

এবার আসা যাক পার্বত্য চট্টগ্রামে ৷ তার ইতিহাস পড়লে মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশে সেখানে গন্ডগোলের কারণ হিসেবে আপনি শুনতে পাবেন এক রাষ্ট্রনায়কের উক্তি- এখান থেকে উপজাতিরা ' সব বাংগালী হয়ে যা' ৷ জিন্নাহর উক্তির সাথে খুব বেশি কি পার্থক্য ? পার্থক্য এই যা, একজন বলছেন ভাষা ভুলে যাওয়ার কথা আরেকজন জাতি ৷ (দেখুন আবার ভাববেন না আমি মুক্তিযুদ্ধে একজন রাষ্ট্র নায়কের শুধুই সমালোচনা করছি বলে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তাঁদের ত্যাগ ও অবদানের কথা আমি শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করি ৷ কিন্তু সমালোচনার বাইরের কোন নবী / অবতার ভাবলে সেটা ভিন্ন কথা ) |

দ্বিতীয় এবার আপনি আসুন কোন জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া এ ধরণের পরিচিতি ও শোষণের বিরুদ্ধে কথা বললে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র প্রথমে কি হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং কি পদক্ষেপ নেয় ৷ রাষ্ট্র তার সাপোর্টার জনগোষ্ঠীকে বলবে এরা বিছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রের অখন্ডতার জন্য ভয়ংকর ৷ সুতরাং একমাত্র সমাধান শক্তিপ্রয়োগ ও রাষ্ট্রের অতন্ত্র প্রহরীদের নামাও ৷ এর প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানি বাহিনী, তাদের বর্বরতার সহযোগী বাহিনী ও এই ধরণের বর্বরতায় নৈতিকভাবে সমর্থন যোগানো মানুষের কথা চিন্তা করুন৷ পড়ুন/কল্পনা করুন মুক্তিযুদ্ধে কি বর্বরতার ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিলো তখন ৷

এখন আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনা বা গনহত্যার পক্ষের বিপক্ষের, পাহাড়ী-বাংগালী-আর্মি অফিসার- বিদেশি, স্কলার-নন স্কলার- অনলাইন ব্লগার তাদের লেখা পড়ুন- আপনার নিজের অবস্থানে ঘটনাগুলো বিচারের জন্য ৷আপনি সে সব লেখায় পাবেন রাষ্ট্র ও তার সহযোগী মানুষরা কেউ নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বললে, অহিংস বা সহিংস আন্দোলন শুরু করলে কি ভয়ংকর হয়ে ওঠতে পারে ৷ তার নৈতিক ভিত্তির জন্য আদর্শ, জ্ঞান, গল্প তৈরি করে৷ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশ - পাকিস্থান , মুক্তিযুদ্ধপন্থী - বিরোধী তাদের একই ঘটনার বিভিন্ন ভার্সন দেখুন সেখানে হয়তোবা এ রকম অজস্র পাবেন ৷

তবে অমিলও মনে পড়ছেনা তা নয় ৷ মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের আন্দোলন হচ্ছে জাতিগত পরিচয় ও তার সাথে জড়িত অধিকারবোধের জন্য - যেমন ক্ষমতার বিকেন্দ্রকরণ বা ন্যুনতম এটোনমি ৷ যে রকম শাসন ব্যবস্থা পাশের দেশ ইন্ডিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ এধরনের রাষ্ট্রীয় / রাজনৈতিক সমস্যায় প্রয়োগ করে ৷

তো এরকম মিল অমিলের যুক্তি, উদাহরণ আপনারও অনেক থাকবে জানি ৷ আমি মনে করি আমি বা আমার বন্ধু কি ভাবি না ভাবি তার চেয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনি বিষয়টাকে কিভাবে বিচার করেন সেটাই বড় কথা ৷ কারণ জ্ঞানীদের মতে দুনিয়ার অনেক বিষয়ে Absolute truth বলে কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়না ৷ প্রায়ই সময় বিতর্ক সাপেক্ষ ৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে প্রশ্নটি করার জন্য ৷ এবং আমি দুঃখিত অামি আপনার সংক্ষিপ্ত উত্তরের প্রত্যাশার বিপরীতে যা লিখেছি সেটা একটা রচনার সমতূল্য ৷ ভালো থাকুন ৷

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা ডাইকোটমাস প্রশ্নের উত্তরে কেউ যদি দীর্ঘ ব্যাখ্যা দেন, এবং সেই দীর্ঘ ব্যাখ্যার শেষেও যদি সেই এক শব্দের উত্তরটা পাওয়া না যায় তাহলে বুঝতে হবে যাকে প্রশ্নটা করা হলো তিনি সেই ডাইকোটমির মধ্যে যেতে আগ্রহী নন্‌।

প্রশ্নটা করা হয়েছিল পোস্টের লেখককে। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নকারী বা অন্যরা কী ভাবলো সেটা বিচার্য বিষয় নয় - অন্তত এই প্রশ্নটার প্রেক্ষিতে তো বটেই।

একটা রচনার সমতুল্য উত্তরেও কি পোস্টের লেখকের ডিসটিংকট সিদ্ধান্তটা বোঝা গেল? এই প্রশ্নটার উত্তর দেবার দরকার নেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।