শুশুক (২)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৩/২০১৬ - ৯:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(মোখলেস হোসেন)
প্রথম পর্বের লিঙ্ক
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/55630

আহুরামাযদার গেদাল

আহুরামাযদা আর আহির্মান যমজ ভাই। আহুরা অর্থ আলো আর মাযদা মানে জ্ঞান। আহুরামাযদা আলো এবং জ্ঞানের দেবতা, আকিমিনেড সম্রাটদের শক্তির উৎস। তিনি নিরাকার, একক এবং অনাদি। সম্রাট যখন যুদ্ধে চলেন, তাঁর রথের পাশে চলে সাদা ঘোড়ায় টানা আরেকটি রথ। যোদ্ধা বিহীন, যাত্রী বিহীন সে রথের সারথি যুবরাজ স্বয়ং। পারস্য জানে, জানে পারস্যের প্রবল শত্রুরাও, ওই শুন্য রথে অধিষ্ঠান করেন আহুরামাযদা। সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর সাইরাস প্রচলন করেছিলেন এই রীতির। আহুরামাযাদার কাহিনী অবশ্য সাইরাস দ্যা গ্রেটের উত্থানের চেয়েও অনেক পুরনো, সে কাহিনীর কিছুটা খুঁজে পাওয়া যায় জরস্ট্রিয়ান ধর্মগ্রন্থ ‘গাঁথা’য়, কিছুটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের অঞ্চলে প্রায় ভুলে যাওয়া বিভিন্ন উপকথায়।

মহাবিশ্ব তখনও নবীন, একদিক তার উদ্ভাসিত অনন্ত আলোয়, আরেক দিকে নিঃসীম অন্ধকার। এই দুইয়ের মাঝখানে অকল্পনীয় শুন্যতা। অযুত নিযুত কাল আলো আধারিতে কেটে যাবার পর পরম জ্ঞানী আহুরামাযদা ভাবলেন ‘এবার কিছু সৃষ্টি করা যাক’। তৈরি হল ঝকঝকে একটা আকাশ, অতঃপর পানি। আকাশ আর পানির আড়াল থেকে উত্থিত হল পৃথিবী, সেদিনের সে পৃথিবী সদ্যজাত শিশুর মতো নিটোল। জ্বলে স্থলে অন্তরীক্ষে ছড়িয়ে গেলো সৃষ্টির উল্লাস, এলো বৃক্ষরাজি, আসলো প্রাণী। অরণ্য শোভিত হল ফুলে ফলে, পত্র পল্লবে। এতো সৃষ্টির ভিড়েও আহুরামাযদা দারুণ একাকী, কথা কইবার কেউ নেই। আহির্মান, সেতো নিমজ্জিত তার সীমাহীন অন্ধকারে।

নিঃসঙ্গতা ঘুচাতে আহুরামাযদা তখন গড়লেন আকাশের মতো উজ্জ্বল, জলের মতো নিষ্কলুষ আর অরণ্যের মতো নিষ্কণ্টক একটি মূর্তি। প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে নাম রাখলেন গেওমার্দ, যার অর্থ প্রথম মানব। অনন্ত আলোর একটি কণিকাকে পাঠিয়ে দিলেন পৃথিবীতে, হিমশীতল রাত্তিরে উষ্ণতা হয়ে, নিরাপত্তা হয়ে সে গেওমার্দের সাথে সাথে রইলো। গেওমার্দ তাঁকে ডেকেছিল আগুন বলে।

ওদিকে অন্ধকারে তলিয়ে থাকা আহির্মান জানতেই পারেনি কী বিশাল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে মহাবিশ্বে। একদিন তার কানে ভেসে এলো আহুরামাযদার আহবান,

“আমার সৃষ্টিকে সাহায্য কর, তাদের সুমন্ত্রণা দাও, প্রশংসা কর। বিনিময়ে আমি ঘুচিয়ে দেব তোমার অন্ধকার। তুমিও পাবে অনন্ত আলোর পবিত্র স্পর্শ।”

মাথা উঁচিয়ে বিস্মিত হয় আহির্মান। চোখ তার ঝলসে যায় সুবর্ণ ছটায়, সৃষ্টি দেখে ধাঁধা লাগে মনে। তাকে গ্রাস করে একটা অদ্ভুত অনুভূতি, অবর্ণনীয় এক যন্ত্রণা, মহাবিশ্বে সেই প্রথম ঈর্ষা। ঈর্ষা থেকে ক্রোধ।

“কেন আমি তোমার সৃষ্টিকে সাহায্য করব? কেন প্রশংসা করবো ওই মরণশীল অস্তিত্বগুলোর, আমি তোমার চেয়ে কম কিসে? ধ্বংস করে দেব তোমার সকল কীর্তি, তোমাকেও।”

ক্রোধমত্ত আহির্মানের তর্জনি থেকে জন্ম নিলো মহাবিশ্বের প্রথম অশুভ শক্তি, পরাক্রমশীল এক দানব। তারপর আরেকটি, আরও একটি, অযুত, নিযুত, অগুনতি। যুদ্ধ তখন অনিবার্য।

আহুরামাযদা প্রত্যুত্তরে সৃষ্টি করলেন কেবল ছয়টি আত্মা।

প্রথম জনের নাম শাত্রা, আকাশের অভিভাবক তিনি। দ্বিতীয় আত্মা হউরভাতাত, শান্তি এবং পূর্ণতার প্রতীক, জলাধারের রক্ষাকর্তা। তৃতীয় জনের নাম স্পেন্টা আরমাইতি, পবিত্র মাতা - তিনি পৃথিবীর আশ্রয়। তারপর একে একে অরণ্য, প্রাণী, এবং আগুনের অভিভাবক, যথাক্রমে, আমেরিতাত, ভহু মানাহ, এবং আশা ভাহিস্তা। ছয়জনকে সাথে নিয়ে আহুরামাযদা নেমে আসলেন পৃথিবীতে, সেখানে চলছে দারুণ দুঃসময়।

আহির্মানের দানব বাহিনী পৃথিবীর সমস্ত জলাধার শুষে নিতে উদ্যত। বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন হউরাভাতাত। দানবরা পরাভূত হয়ে পালিয়ে যাবার সময় বদলে দিয়ে গেলো পানির রঙ এবং স্বাদ। নীলচে পানি পরিণত হল ঘোলাটে তরলে, তেঁতো আর বিষাক্ত সে তরল।

স্পেন্টা আরমাইতি লড়েছিলেন স্বয়ং আহির্মানের বিরুদ্ধে। পুরানে বর্নিত রয়েছে, পৃথিবীর আকাশ নাকি ছেয়ে গিয়েছিলো আহির্মানের কুহকী মায়ায়, দানবদের শরে। ভূপৃষ্ঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগণিত পাহাড়, পর্বত আর উপত্যকা সে আক্রমণের সাক্ষী।

দানবদের বিষ নিশ্বাসে বিবর্ন হয়েছিলো অরণ্য, সতেজ পাতা ঝলসে গিয়ে, ঝলমলে ফুল মলিন হয়ে এখানে ওখানে গজিয়ে উঠেছিলো হিলহিলে কাঁটা। সে কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন বনভুমির পালন কর্তা আমেরিতাত। ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়া তাঁর রক্ত থেকে জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীর প্রথম গোলাপ, রক্তের মতই লাল সে গোলাপ।

জ্বলে স্থলে অন্তরিক্ষে শুভ আর অশুভের লড়াই চলেছিল দিনের পর দিন। আহির্মানের দানবেরা সুখের পরিবর্তে বয়ে এনেছিল দুঃখ, আনন্দের বিপরীতে বেদনা, শুদ্ধতার প্রতিকূলে দূষণ। আহির্মানের সীমাহীন ঈর্ষা থেকে প্রবাহিত হয়েছিলো ক্ষমাহীন এক শীতল বাতাস। আশা ভাহিস্তার প্রতিরোধ গুড়িয়ে সে বাতাস নিবিয়ে দিয়েছিলো গেওমার্দের আগুন। পৃথিবীতে নেমে এসেছিলো জরা, প্রথম বারের মতো। প্রাণীকুলের রক্ষক ভহু মানাহ অমর, কিন্তু জরার কাছে তিনিও অসহায়। ভহু মানাহর মাথা দুলে উঠলো, অবসন্ন হাত থেকে খসে পড়লো ঢাল। প্রথম মানব গেওমার্দ তখন ঘোলাটে হ্রদের তীরে একলা দাঁড়িয়ে, সঙ্গী হীন, বান্ধব হীন, অভিভাবক হীন। তখন চরাচর প্রকম্পিত হল, সে আলোড়নে এলোমেলো উড়তে থাকা আকাশের পাখিরা খসে পড়লো যেমন খসে পড়ে হেমন্তের পুরনো পাতা, জলের মাছেরা খাবি খেতে খেতে তলিয়ে গেলো অতল গভীরে, অরণ্যের প্রাণীরা ছুটতে ছুটতে আছড়ে পড়লো হুমড়ি খেয়ে। অনন্ত আলোর দিকে দুহাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলতে চাইলো প্রথম মানব, তার সে আকুতি অস্ফুট একটা ধ্বনি হয়ে মিলিয়ে গেলো বিপন্ন বাতাসে।

আহির্মান নিজেকে বিজয়ী জেনেছিলো, ভেবেছিলো নিভে যাবে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা অনন্ত আলো। কিন্তু কী নির্বোধ আর নিষ্ফলা তার ভাবনা!

গেওমার্দের হাড় থেকে পৃথিবীর রুক্ষ মাটিতে জন্ম নিলো একটি রুবার্ব গাছ। চল্লিশ বছর নিষ্পত্র-নিষ্ফলা থাকার পর একদিন ফল ধরলো সে গাছে। দুটি মাত্র ফল, একজোড়া মানব মানবী। ছেলেটির নাম মাশিয়া, মেয়েটি মাশিয়ানা। আহুরামাযদার কাছে তাদের প্রার্থনা বাসযোগ্য একটি পৃথিবীর। তখন পরম জ্ঞানী আহুরামাযদা হউরভাতাতের অস্থি থেকে আলো নিয়ে তৈরি করলেন একটি সোনার চামচ, আহুরামাযদার গেদাল। মাশিয়া মাশিয়ানা চামচের হাতলটা পানিতে ছুঁইয়ে দিতে মলিন হল সোনা, মিশে থাকা বিষ টেনে নিয়ে কালচে হয়ে এলো হাতলের প্রান্ত। মাশিয়া মাশিয়ানা চামচ ভরে পান করলেন সুপেয় পানি, খানিকটা ছড়িয়ে দিলেন আকাশে। সে পবিত্র পানি, আহুরামাযদার আশীর্বাদে, বৃষ্টি হয়ে নেমে এলো পৃথিবীতে। বিনিময়ে মাশিয়া মাশিয়ানা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলেন তাঁরা এবং তাঁদের উত্তর প্রজন্ম আহুরামাযদাকে দেবেন তিনটে নৈবেদ্য - সৎ চিন্তা, ন্যায় বাক্য এবং ভালো কর্ম।

মাশিয়া মাশিয়ানা বেঁচেছিলেন অনেক অনেক বছর, পনেরো জোড়া সন্তান তাঁদের। পনেরো জোড়া যমজ, পনেরোটি ছেলে, আর পনেরোটি মেয়ে, জোড়ায় জোড়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। পনেরোটি জোড়া থেকে পনেরোটা জাতি, সমগ্র মানবজাতি।

জরস্ট্রিয়ান ধর্মগ্রন্থ ‘গাঁথা’য় গেদালের কোন উল্লেখ নেই, এই কাহিনী বিধৃত রয়েছে কেবলই উপকথায়। একপ্রান্তে আহির্মানের গরল, আরেকপ্রান্তে অনন্ত আশির্বাদ, আহুরামাযদার গেদাল অমিত শক্তির আধার।

সম্রাটের স্বপ্ন

শীতের রাত, কনকনে ঠাণ্ডায় জড়সড় দশদিক। খুব একটা বাতাস নেই বলে কাঁচভাঙা নীরবতায় আচ্ছন্ন পৃথিবী। সে নিস্তব্ধতা খানখান করে থেকে থেকে উড়ে যায় একটা দুটো নিশাচর পাখি। তাদের ডানার শব্দে চমকে উঠে তাঁবুর সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখা যুদ্ধের ঘোড়াগুলো, কান খাড়া করে টান টান হয়ে দাঁড়ায়, আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমায় পৃথিবী, ঘুমিয়ে রয়েছে রণ ক্লান্ত মানুষ - পিতা, পুত্র, প্রেমিক। সার বেঁধে ঘুমায় পাথুরে মাটিতে প্রাক বসন্তে গজিয়ে ওঠা সহস্র তাঁবু। ভেতরে অন্ধকার, বাইরে ধিকি ধিকি জ্বলে রাতভর পুড়ে খাক হয়ে আসা আগুনের কুণ্ডুলি।

আলেকজান্ডার এখনো নির্ঘুম। তাঁর উন্মীলিত নীল চোখে অপার মুগ্ধতা। তন্ময় হয়ে শুনছেন আশ্চর্য এক কাহিনী, যেমন শুনতেন কৈশোরে, ম্যাসিডোনিয়ার শহর চাতালে বসে পরম জ্ঞানী এক বৃদ্ধের কাছে। অ্যারিস্টটলের গল্পের ভাঁড়ার থেকে উঁকি দিয়ে যেতো স্বর্ণকেশী দেবতা, মোহময়ী দেবী, মরণশীল মানুষ - তাদের কেউ সাধারণ, কেউবা বীর। আজকের গল্পটা অন্যরকম, অন্য গন্ধ, অন্য একটা আমেজ, সদ্য কৈশোর পেরুনো তরুণ সম্রাটকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাঁর মুখোমুখি বসে থুড়থুড়ে এক বুড়ো, বলে চলেছেন অজানা একজন দেবতার ভালোবাসা, অদেখা কিছু মানুষের মানুষের সংগ্রাম, শুভ আর অশুভের মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা অশ্রুতপূর্ব এক উপাখ্যান। একটা পর্যায়ে কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে তার। মানব জাতি আহুরামাযদাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মর্যাদা রাখেনি। দিন দিন তাই ফুরিয়ে আসছে অমৃতের ভাণ্ডার, প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছে আহির্মানের বিষের প্রভাব। আহুরামাযদার মন্দিরের বিপন্ন পুরোহিত যরস্কান ইরাস্তিমা এসব দেখে দেখে বড়ই ক্লান্ত।

হঠাৎ ভেসে আসা একটা সোরগোলে সচকিত হয়ে তাকান সম্রাট, এক মুহূর্তই। নাহ, দারায়ুসের বাহিনী নয়, আকণ্ঠ মদ টেনে মাতাল হয়ে প্রলাপ বকছে কয়েকজন গ্রীক যোদ্ধা। হাতের ইশারায় গল্প চালিয়ে যেতে বলেন যরস্কানকে। আলেকজান্ডার আর দশজন নৃপতির মতো উদাসীন নন, গুণীর কদর করেন তিনি। যরস্কান যদিও বন্দী, সম্রাটের কাছে তাঁর সম্মান অ্যারিস্টটলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

রাত এখন অনেক গভীর। পুরোহিত চলে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে, আলেকজান্ডার তাঁর ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ভাবছেন রাত জেগে শোনা গল্পের কথা। বাইরের ধিকিধিকি আগুনের মৃদু আলোয় তাঁবুর দেয়ালে ছায়া পড়ে একদল মানুষের, দীর্ঘতম ছায়াটির মালিক আসানসার। সম্রাটের প্রধান রক্ষী, সমবয়সী বলে অনেকটা বন্ধুর মতোই। কাল সকালে আসানসারকে গল্পটি বলবেন আলেকজান্ডার। শোনাবেন কেমন করে কোন এক প্রদোষে দুর্গম এক উপত্যকায় আশ্চর্য একটা চামচ কুড়িয়ে পেয়েছিলো অনাথ একটি ছেলে। গড়ে তুলেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচুর্জমন্ডিত এক সাম্রাজ্য। সেই মহাবীর সাইরাসের হাত ঘুরে আশ্চর্য ওই চামচ এখন পারস্যের সম্রাট দারায়ুসের দখলে। দারায়ুস যে অজেয় সেকি আর এমনি!

ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন সম্রাট। তিরতির করে কাঁপছে তাঁর চোখের পাতা, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। বড় অদ্ভুত সে স্বপ্ন। একটা ঈগল উড়ছে আকাশে, বাঁকানো ঠোঁটে তাঁর সীমাহীন ঔদ্ধত্য। নখের ভাঁজে ছটফট করছে একটি পায়রা। কোথা থেকে যেন উড়ে এলো এক ঝলমলে বাজ। আচমকা ঝাঁপটায় বিপর্যস্ত সোনালি ঈগল, গোঁত্তা খেয়ে এড়াতে চায়, এঁকে বেঁকে সাই সাই করে উড়ে চলে নীল আকাশে। বাজটাও দারুণ একগুঁয়ে, ধাওয়া করে চলেছে যন্ত্রের মত। শেষমেশ নখের বাঁধন আলগা করে ঈগলটা রুখে দাঁড়ায়, খসে পড়ে পায়রা। বাজের নজর নেই সেদিকে, তার উষ্ণ রক্তে এখন বিজয়ের আহ্বান। মোহগ্রস্তের মতো আঁচড়ে চলে, ঠুকরে চলে, ঝাঁপটে চলে ক্লান্ত ঈগলকে। মহা দ্বৈরথের আড়ালে সহসা আবির্ভুত হয় একটি চিল, ক্রমশ অপস্রিয়মাণ পায়রাটাকে ছিনিয়ে নিয়ে হারিয়ে যায়, মিলিয়ে যায় দিগন্তের দিকে।

ঃ সৈন্যেরা তৈরি সম্রাট, আমরা আপনার আদেশের অপেক্ষায়।

আসানসারের ডাকে স্বপ্ন থেকে জেগে উঠেন আলেকজান্ডারের। ঘামে ভিজে সপসপ সমস্ত শরীর, মুখ-জিভ-কণ্ঠতালু শুকিয়ে কাঠ।

ঃ এক পেয়ালা পানি দাও। আর জ্যোতিষিকে বল সে যেন এখুনি আমার তাঁবুতে চলে আসে।

-----চলবে।


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়ার একটা বিশেষ আকর্ষণ ত আছেই, তার সাথে আপনার গল্প বলার শৈলীও মুগ্ধ করে রাখছে। পরের পর্বের জন্য সাগ্রহ অপেক্ষায় থাকলাম। (সামনের বার থিকা আবার পপ্পন-এর ছবিতে ফিরা যামু, মনে লইয়েন না, সময়ের টানাটানি চলতাসে।)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এক লহমা। সময়ের টানাটানি এখানেও, মাঝে মাঝে মনে হয় একমাসের জন্য হাওয়া হয়ে যাই।
---মোখলেস হোসেন।

মন মাঝি এর ছবি

দুর্দান্ত!
আচ্ছা এই উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য কি বাইবেলীয় 'হোলি গ্রেইল' খোঁজার নানা কাহিনির মতো "আহুরামাযদার গেদাল" খোঁজা বা পাওয়া? আর এই 'গেদাল' বোধহয় ইতিহাসের পথ পরিক্রমা শেষে বাংলাদেশের কোথাও কোনো বাঙালি নায়ক ঢাকিয়ানা জোন্স খুঁজে পাবে, তাই না?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ মন মাঝি। উপন্যাসের মুল প্রতিপাদ্য মানুষের স্বপ্ন-মৃত্যু-ভালোবাসা। আমরা তো জেনেই গিয়েছি গেদালটা শম্ভুনাথের কাছে এসেছিলো। মাস শেষে কত বেতন পাই সেটা কিন্তু রহস্য নয়, সেটি আগে থেকেই জানি। ওই বেতনে কীভাবে চলি সেটাই বিস্ময়। গল্প গুলো সেখানেই, কী বলেন?
---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

গত কয়েকদিন ধরেই দেখছি শুশুক-২, সময় করে উঠতে পারছিলামনা। অফিসে কাজের ফাঁকে ঝটপট পড়ে নেব ভাবতে ভাবতেই ক’টা দিন চলে গেল। পড়লাম আগ্রহ নিয়েই। চলুক লেখা। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সোহেল ইমাম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সোহেল ইমাম। আপনার লেখার খবর কী?
-----মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।