হোয়াট শর্ট অব আর্ট ইজ রিকশা আর্ট ?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৪/২০১৬ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


What sort of art is ricksha art - এক বিদেশিনি প্রশ্ন করেছিলেন এক সময়। অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই। রিকশার ছবি নিয়ে মুগ্ধতা ছিল জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিকের, শুধু মুগ্ধতাই নয় এই শিল্পধারা নিয়ে প্রশ্নও ছিল। তার এই কৌতুহল থেকেই রিকশা আর্ট নিয়ে আমরা কয়েকটা লেখাও পেয়ে গিয়েছি। এই লেখা গুলো তার ওয়বসাইট The Ricksha Arts of Bangladesh এ এখনও যে কেউই দেখে নিতে পারেন। রিকশার ছবি নিয়ে যারাই আগ্রহী হয়েছেন তারাই জানেন এই ওয়েবসাইটটার কথা। ওয়েবসাইটে জোয়ানার লেখা গুলো রিকশার ছবি নিয়েই মূলতঃ, কিন্তু এছাড়াও আরো কিছু বিষয় যেমন ট্রাক বা অন্য জনপরিবহনের অলঙ্করন নিয়েও লেখা আছে। শুধু রিকশার ছবি নিয়েই মনন সমৃদ্ধ লেখা জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক ছাড়া আর কোথাও বিশেষ দেখেছি বলে মনে পড়েনা। রিকশার ছবি যে ভাবনারও খোরাক জোগায় তা কার্কপ্যাট্রিকের লেখাতেই সম্ভবত প্রথম এসেছে। রিকশার ছবি নিয়ে যারাই দু’কথা লিখেছেন তার প্রসঙ্গ অবধারিত ভাবেই চলে এসেছে। তার “বাংলাদেশী আর্টস অফ দ্য রিকশা” প্রবন্ধে রিকশার অলঙ্করন শিল্পের আলোচনার মধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন রিকশার এই অলঙ্করন ঠিক কি ধরনের শিল্প। বাংলাদেশের রিকশার অলঙ্করন নিয়ে, তার বিকাশ নিয়ে বলতে গিয়েই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। তারপর নিজেই উদ্যোগী হয়ে এই শিল্পের গোত্র নির্ণয়ে বলেছেন,

From my outsider point of view, I consider it "peoples' art". It is not necessary to force it into a unitary category as it combines folkloric, movie, political and commercial imagery and techniques. It serves the expression of heart's desires of the man in the street for women, power, wealth, as well as for religious devotion. Ricksha art also serves prestige and economic functions for the people who make, use and enjoy it.

এতো গেল বিদেশিনির কথা। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে রিকশার ছবিকে আমরা কোন গোত্রে ফেলেছি? ঠিক কি ধরনের শিল্প এই রিকশার ছবি গুলো? রিকশার ছবি নিয়ে আমাদের দেশে খুব বেশি কলমের কালি খরচ করেননি কেউ। রিকশাওয়ালা বলতে সামাজিকভাবেই গরীব একটা শ্রেণীকেই চিহ্নিত করা হয়। অজ্ঞতা, অশিক্ষা, আচরনের কর্কশতা প্রভৃতিকেই রিকশাওয়ালা শ্রেণীর সাথেই সম্পর্কিত করে দেখানোর একটা সামাজিক প্রথা আছে। ভিক্ষুকদের একেবারেই নীচু শ্রেণীর আর তার থেকে একধাপ উপরের শ্রেণীতেই রিকশাওয়ালাকে ফেলা হয়। কেউ অমার্জিত আচরন করলে বলা হয় “রিকশাওয়ালাদের মত কথা বলছিস কেন”, বা চিন্তাধারায় অনগ্রসরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এ বলে যে “লোকটার চিন্তাধারা রিকশাওয়ালাদের মত”। এভাবে রিকশাওয়ালার সাথে সাথে তার রিকশাটিকেও তার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবেই দেখা হয়। সেই সূত্রে সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের মনে রিকশাওয়ালার অমার্জিত, অসংস্কৃত চরিত্রের সাথেই “তার” রিকশা ও সেই রিকশা সংক্রান্ত অলঙ্করন শিল্পও যে কোন ভাবনার আগেই অশিক্ষিত-অমার্জিত শ্রেণীতে পড়ে যায়। রিকশার ছবির অনাদরের সাধারন ভিত্তিই সম্ভবত এখানেই। সভ্য সমাজে রিকশার ছবি তাই নজর কেড়ে নিলেও ঠিক ভাবনার বা তা নিয়ে দু’কথা বলবার মত স্তরে উঠতে পারেনা। রিকশার ছবি অবজ্ঞেয় বা অমার্জিত একটা বিষয় এই জ্ঞানেই খুব সাম্প্রতিক কালের আগে রিকশা নিয়ে কারো ভাবনার কথা আমাদের বিশেষ গোচরে আসেনি। দু’একটা লেখা এদিকে ওদিকে প্রকাশিত হয়েছে। রিকশার শিল্পীদের ছবি নিয়ে ঢাকায় আঁলিয়াস ফ্রঁসেসে একবার একটা চিত্র প্রদর্শনী অবধি হয়েছে। খুব সম্প্রতি টিভি চ্যানেল গুলোতেও রিকশার ছবি নিয়ে, সেই ছবির আঁকিয়েদের নিয়ে প্রতিবেদন মাঝে মধ্যেই আসছে। অলঙ্কৃত রিকশাকে আমাদের ঐতিহ্য বলেই অনেকে পরিচয় দেন। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়, কোন গোত্রে পড়বে রিকশার ছবি।

রিকশার ছবির গোত্র নির্ণয় একটা সমস্যা। রিকশার ছবি যে কুলীন গোত্রের নয় এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। এই শিল্পধারাকে চারুশিল্পের মুখ্য ধারার সাথে এক করে দেখাবারও মানে হয়না। কৌলীণ্যে নয় রিকশার ছবির গুরুত্ব অন্যখানে। ফোকলোরে অন্যান্য লোকজ শিল্পের আলোচনায় রিকশার ছবি নিয়ে তেমন কোন লেখা দেখেছি বলে মনে হয়না। একেবারেই নেই বলা যাবেনা কিন্তু খুঁজতে গেলে প্রায় শূণ্যহাতেই ফিরতে হয় পরিস্থিতি অনেকটা তেমনই। মূলধারার পত্রিকা গুলোয় বা ব্লগে ফোকলোর নিয়েই লেখা কম। ফোকলোর বিষয় ভিত্তিক কোন পত্র-পত্রিকায় যে লেখা গুলো প্রকাশিত হয় তা কেবল ফোকলোরের ছাত্র-শিক্ষক আবর্তেই বন্দি। আমাদের চারপাশের লোকশিল্পের যে বহুমুখী ধারা চলছে তাকে দেখতে পারা, তার অন্তর্লীন স্পন্দনকে অনুধাবন করা ফোকলোর বিশেষজ্ঞের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা একটা নক্সা করা হাতপাখা হাতে নিয়ে হয়তো বলবো, “এটা একধরনের আর্ট” কিন্তু ঐ টুকুই । রিকশার ছবির গোত্র নির্ণয়ের ব্যাপারে ফোকলোরই নিশ্চিত করে বলতে পারে কিন্তু সে সম্পর্কিত লেখা কই। আমরা আমাদের সাধারন জ্ঞানে রিকশার ছবি নিয়ে প্রশ্ন করছি আর করছি সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা কিন্তু ফোকলোর বিশেষজ্ঞদের ভাবনা সমৃদ্ধ লেখা ছাড়া এ পথে খুব বেশি এগোবার উপায় নেই। ফোকলোর চর্চা একটা একাডেমিক গণ্ডীর মধ্যেই থেকে গেলে অন্ধের হস্তি দর্শনের মত আমরা আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে, আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে যথেষ্ট চিৎকার করেও তা সজীব রাখতে বা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে ব্যর্থই হব। যারা ফোকলোর নিয়ে পড়াশোনা করছেন, ভাবছেন তাদের আরো উদ্যোগী হয়ে ফোকলোর চর্চাকে প্রসারিত করতে হবে, সাধারন মানুষের দৃষ্টির গোচরে আনতে হবে। মুক্ত বুদ্ধির মানুষ গড়তে এর বিকল্প নেই।

রিকশার ছবি হয়তো ফোকলোরের গোত্রেই পড়বে। কিন্তু এই গোত্র নির্ণয়েও সমস্যা কম নেই। আমাদের দেশের প্রচলিত সংজ্ঞায় ফোকলোর বলতে অনেকেই বোঝেন এ এমন এক শিল্পধারা যা গ্রামীণ লোকজ উৎস থেকে উৎসারিত ও গ্রামীন সংস্কৃতিরই প্রকাশ। কেউ আবার ফোকলোর বলতে অতীতের আবহের চর্বিত চর্বন মাত্রই স্বীকার করেন তার বেশি নয়। রিকশার ছবির উৎস নগর ভিত্তিক, আবার ঠিক হাতপাখা, কিংবা নক্সীকাঁথার আঁতুড় ঘর থেকে যেহেতু আসেনি তাই ফোকলোর সংক্রান্ত লেখায় এই শিল্পধারা নিয়ে লিখতে অনেকেই কুণ্ঠিত থাকেন। গতিশীলতার ধারা যে ফোকলোরেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই রয়েছে তার দৃষ্টান্ত পাই ফোকলোর বিশেষজ্ঞ মাযহারুল ইসলামের বক্তব্যে। তার “দ্য থিয়োরিটিক্যাল স্টাডি অফ ফোকলোর” বইটিতে তাকে বলতে শুনি,

...the process of constant change within a society is a powerful phenomenon and folklore has a close link with that process, which many folklorists do not try to understand, All these happened and are still occurring in the field of folkloristics.

কেবল শহুরে হলেই যে ফোকলোর হয়না এ মত আর ধোপে টেকেনা। বাইরের দেশে রাস্তার পাশের দেয়ালে তরুনদের করা গ্রাফিটি বা দেয়ালচিত্র শুধু ফোকলোরেরই আলোচিত বিষয় নয় এক স্বতন্ত্র ঘরানার শিল্প হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছে। ল্যাট্রিনালিয়া বা গনশৌচাগারের দেয়ালের হাবিজাবি লেখা গুলোকেও এখন ফোকলোরের বিষয় হিসেবে গ্রহন করেই গবেষনা হচ্ছে। যত কুরুচীপূর্ণ বা কুৎসিত বাক্যই সেখানে লেখা হোকনা কেন জনমানসের অন্দরমহলের খবর জানতে এ ধরনের কাজকেও একটা বিষয় ভিত্তিক শ্রেণীতে ফেলেই অনুসন্ধানমূলক গবেষনা চলছে। ঠিক তেমনি মানি-গ্রাফিটি বা টাকার নোটের ওপর বিভিন্ন লেখা নিয়েও ফোকলোরবিদদের ভাবনা আলোচনার শেষ নেই। ফোকলোর সংক্রান্ত আধুনিক লেখা গুলো পড়লে ফোকলোরের বিশাল ক্ষেত্র সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। ঠিক কি বস্তু ফোকলোরের বিষয় নয় তাই ঠাহর করা মুশকিল হয়ে ওঠে। কিন্তু ফোকলোরের নিজস্ব ক্ষেত্র আছেই অস্বীকার করা যাবেনা। ফোকলোরবিদ মাযহারুল ইসলামকে তাই ফোকলোরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলতে শুনি,

Folklore is dynamic in the sense that with the social and cultural change, as an important part of culture, it also accepts some changes to suit the new situation. Any material of folklore may originate even today, but would be regarded as folklore if it survives the test of time and is accepted by the folk, composed of a family of minimum two persons, a village community, a tribe or a nation, who may be non-literate or illiterate or literate, no matter where they live, in a village, a town or modern city. Though basically traditional, a folklore may create its own tradition.

রিকশার ছবিকে এই আলোচনার সাপেক্ষেই ফোকলোরের গোত্রেই ফেলতে হয়। রিকশার ছবি অলঙ্করন প্রধান শিল্প। জোড়া ময়ুরের আলঙ্কারিক উপস্থাপন, পদ্মফুলের ওপর তাজমহলের ছবি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময়েও যেমন দেখেছি এখনও দেখি, রিকশার ছবিতে বিষয় গুলো ঘুরে ঘুরেই আসে। তেমনি রিকশার ছবিতে আধুনিক যানবাহনের ছবি যেমন বাস, ট্রাক, প্লেন, হেলিকপ্টার সহ শহরের দৃশ্য বা গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যও বার বারই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে রিকশার ছবি নিতান্ত প্রথাবদ্ধ একটা শিল্প প্রকরনে স্থির হয়ে যায়নি। আমরা বারবারই দেখেছি জনচিত্তকে রিকশার ছবিতে প্রতিফলিত হতে। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক যেমন বলেছেন রিকশার ছবিতে সাধারন মানুষের নারী, ক্ষমতা, সম্পদ বা ধর্মীয় ভক্তি বিষয়ক আকাঙ্খাই উঠে আসছে, ঠিক তেমনি সেই জনচিত্তের সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনও রিকশার ছবিকে পাল্টে দিয়েছে, অভিনব বিষয়ের আবির্ভাবও হয়েছে।

স্বাধীনতা উত্তরকালীন সময়ে যখন মানুষের চেতনায় যুদ্ধের ডামাডোল, ভয়ঙ্কর অত্যাচারের স্মৃতি তখনও মুছে যায়নি রিকশার ছবিতেও তার ছায়া পড়েছিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে, অত্যাচার করছে সেই সাথেই মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে এরকম ছবি রিকশাতে সে সময় প্রচুর আঁকা হতো। এছাড়াও ছিল ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান বিশিষ্ট যুদ্ধচিত্রের নিদর্শনও। আবার বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যার পরের বছর গুলোয় বিশেষ করে ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে রাজনীতির পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির ফলশ্রুতিতেই রিকশায় মানুষের ছবি আঁকার উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। তার প্রতিক্রিয়াতেই দেখি মানুষের জায়গায় বিভিন্ন পশু ব্যবহার করে ছবি আঁকা শুরু হয়ে গেল। সিংহ বরের টোপর পরে বিয়ে করতে চলেছে, সঙ্গে অন্য পশুরাও রয়েছে বরযাত্রী হিসেবে, এধরনের ছবি কোতুকপ্রদ হলেও এর মাধ্যমেই সাধারন মানুষের অব্যক্ত মনের কথাই উঠে এসেছিল। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক ঠিক এই সময়টার বর্ণনা দিচ্ছেন,

When human images submerge, the animal fable rises. Another fable showed a VIP parading in an open car, with animals holding garlands presenting them in raised salute. The VIP was a lion wearing a turban. Satirical?

আবার পরবর্তী বছর গুলোয় দেখেছি মানুষের ছবি রিকশায় আবার ফিরে এসেছে, দেদারসে আঁকা হচ্ছে চিত্রতারকাদের প্রতিকৃতি। চলচিত্রের সার্বজনীন ও সর্বগ্রাসী আবেদনই রিকশার ছবিতে এই ঐতিহ্যকে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিল সেই পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই। ১৯৭৭-৭৮ এর পর্বটা অতিক্রম করে সেই ঐতিহ্য আবার প্রাণ পেয়েছিল। ২০০০ সালের পরের বছর গুলোয় বাংলাদেশের চলচিত্র তার সার্বজনীণ আবেদন হারিয়ে বসলে তার জায়গায় রিকশার ছবিতে দেখি ভারতীয় হিন্দী ছবির চিত্রতারকাদের ভিড়। সাম্প্রতিক সময়ে রিকশার ছবিতে এসেছে আরো কিছু পরিবর্তন। জনচিত্তের সাথে সাথেই রিকশার ছবির সুর পাল্টে যাচ্ছে আর এখানেই বুঝি এই শিল্পধারার সাথে জনমানসের যোগাযোগটা রয়েই গেছে। লোকজ শিল্পধারার সাথে এই প্রাণের যোগটা অবধারিতভাবেই থাকতেই হয়।

রিকশার ছবির সাথে জনমানসের এই যোগাযোগটা রিকশার অলঙ্করন শিল্পীদেরই অবদান। বেশিরভাগ শিল্পীরই ছবি আঁকার কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন নেই। ছোটবেলার ছবি আঁকার নেশায় তাড়িত হয়েই এ পেশায় চলে এসেছেন তারা। যথোপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ পাননি তারা, অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল অনেককেই। ফলে রিকশার শিল্পীরা সৃজনী শক্তি থাকা সত্ত্বেও শিল্প নিয়ে মূলধারার শিল্পীদের মত ভাববার অবকাশ খুব বেশি পাননি আর তা সম্ভবও ছিলনা। চিত্রশিল্প নিয়ে পড়াশোনা বা তার ইতিহাস নিয়েও তারা ব্যাপৃত ছিলেননা। ফলে পেশার চাপে রিকশার ছবি আঁকাতে শুরু করলে ছবিতে শিল্পীর স্বাতন্ত্র্যের একটা পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে হবে এই তাগিদ তাদের ছিলনা। অবধারিত ভাবেই তাদের চালিত করেছে সাম্প্রতিক সময়ে জনচিত্তে যে বিষয় তরঙ্গ তুলেছে, যা জনমানসের আকাঙ্খায় জায়গা জুড়ে আছে এমন বিষয় গুলোই। ফলে এই শিল্পীরা হয়ে দাঁড়িয়েছেন একটা জনগোষ্ঠীর জীবন অভিজ্ঞতার শৈল্পিক প্রকাশের মুখপাত্র। তারা তাদের নিজের হৃদয়ের কথার চেয়ে গোষ্ঠীর কথাই বলতে অভ্যস্ত হয়েছেন। এভাবেই তাদের শিল্প অর্জন করেছে লোকজ একটা চরিত্র। রিকশার শিল্পীরা এই লোকজ চরিত্রটা বজায় রাখারই চেষ্টা করেছেন সব সময়। তারা জানেন তাদের ছবি গ্যালারীর আভিজাত্যময় প্রদর্শনীর জন্য নয়। পথ চলতে পথের মানুষই তার ছবির দর্শক। এই দর্শকের মনের সাথে যোগ না থাকলে তার শিল্প প্রাণ পাবেনা। রিকশার ছবি চলচিত্র নয় এখানে জীবনের গল্প বিশদ আকারে বলবার উপায় নেই। থাকার মধ্যে আছে চৌকো টিনের ক্যানভাসের ছোট ছোট ফ্রেম যা ধারন করে আছে কিছু স্থির চিত্র। এই স্থির চিত্রের মাধ্যমেই রিকশার শিল্পীকে ব্যক্ত করতে হবে সাধারন মানুষের আকাঙ্খার জগতটাকে। একটা মাত্র ফ্রেমে যা ধারন করা সম্ভব নয় বলেই রিকশায় রিকশায় ছবির এত খানি বৈচিত্র্য। এক সময় চলচিত্র নির্ভর বিষয়ের ব্যবহারে শিল্পী সাধারন মানুষের ক্ষোভকে ফুটিয়ে তুলতেন নায়কের ক্ষুব্ধ অভিব্যক্তির মাধ্যমে, বা নায়িকার লাস্যময়ী ভঙ্গীতে ফুটিয়ে তুলতে চাইতেন মানুষের চিরায়ত আকাঙ্খার ছবিটিকে। চলচিত্র জনচিত্ত থেকে তার আবেদন হারিয়ে ফেললে শিল্পীর তুলি সেই পরিবর্তনের ছন্দটাকেই ধরতে চাইলো। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমেই ব্যক্তি তার স্বাতন্ত্র্য নিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে। আগে যেখানে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিত, ভিড়ের একজন হয়ে ভিড়ের সাথেই মিশে থাকতো সেখানে ব্যক্তি এখন নিজের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে হয়ে উঠছে আত্মসচেতন। ক্রমেই আরো বেশি সংখ্যক মানুষ নিজের কথা বলতে চাইছে। ইন্টারনেটের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে কলকাকলী দিনকে দিন বাড়ছেই। রিকশার শিল্পীরা এই সমাজের ছবি আঁকার হাত হয়ে এই সমাজের আশা, আকাঙ্খাকেই রূপ দিয়ে চলেছেন রিকশার টিনের ক্যানভাসে। বহুদিন যাবত অসংখ্য তরুণের ঘরের দেয়ালে যে স্পোর্টসকারের ছবির পোস্টার শোভা পেত রিকশার ফ্রেমে সেই তারুণ্যের আকাঙ্খার ছবিই আঁকা হয়ে যায়। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গৌরবই এই সেতুর ছবি ফুটিয়ে তোলে রিকশায় রিকশায়। আবার টিভি বা ইন্টারনেটে দেখা লণ্ডনের টাওয়ার ব্রীজও জনচিত্তের মুগ্ধতায় জায়গা করে নেয় এখানে। ঠিক এভাবেই আসে পেঙ্গুইন পাখি বা জিরাফ। কখনও আবার ছবি সরিয়ে দিয়ে কেবল হরফ বসিয়ে লেখা হয়ে যায় “মানুষ কেন গরীব হয়” অথবা “ঘুম হারাম হয়েছে”। জীবিকার সংগ্রামে লড়াই করা মানুষটার অন্তর থেকেই উঠে আসছে এসব উক্তি গুলো। আকাঙ্খার সাথে সাধ্যের বৈসাদৃশ্যে যে অনুভব অন্তরে দানা বেঁধে ওঠে তাই প্রকাশ পেয়ে যায় রিকশার ফ্রেমে। আগে যেখানে খ্যাতিমান নায়কের প্রতিকৃতি শোভা পেত সেখানে রিকশা মালিকের নিজের ছেলেটার ছবি আঁকা হচ্ছে। আগে এমনটা হতে পারতোনা, ব্যক্তিকে সমষ্টির পছন্দের তলেই চাপা পড়ে যেতে হতো। আর এভাবেই রিকশার ছবি হয়ে ওঠে সামাজিক মনের খোলা জানালা। রিকশার ছবির শিল্পীরা সাধারন মানুষের নাড়ী ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছিলেন বলেই রিকশার ছবি এই এত গুলো বছর ধরে আঁকা হচ্ছে, এখনও বিলুপ্তির গর্ভে হারিয়ে যায়নি। রিকশার ছবির ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বলতে গেলে মাযহারুল ইসলামের উদ্ধৃতিটারই একটা অংশ আবার উদ্ধৃত করতে হয়, Though basically traditional, a folklore may create its own tradition. রিকশার ছবি তার ঐতিহ্যটা নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে। আবার ফিরে আসি সেই বিদেশিনির প্রসঙ্গেই। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক যখন এই সমাজে বহিরাগত, আউটসাইডার হয়েও রিকশা আর্টের প্রাণ স্পন্দনকে অনুধাবনের প্রয়াসী হয়েছেন তখন তাকেও বলতে হয়েছে I consider it "peoples' art". রিকশার ছবির পরিচয়টা এখানেই, এখানেই তার সার্থকতা।

তথ্যসূত্র :
১। Bangladeshi Arts of the Ricksha by Joanna Kirkpatrick
http://www.asianart.com/articles/ricksha/
http://www.artsricksha.com/
২। The Theoretical Study of Folklore : Mazharul Islam. Bangla Academy

সোহেল ইমাম

রিকশার ছবি নিয়ে অন্যান্য লেখা




মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

অন্যান্য লেখার লিংকটা আসেনি। নিজ দায়িত্বে জুড়ে দিলাম, এইখানে টিপি দ্যান। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

সোহেল ইমাম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখা ভালো হয়েছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি।

সোহেল ইমাম

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ব্যাস্ত ছিলাম সোহেল ইমাম, লেখাটা পড়ে উঠতে পারিনি। পড়লেই আপনাকে জানাবো।
----মোখলেস হোসেন

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আশরাফ ভাই।

সোহেল ইমাম

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দেরি করে পড়লাম বলে ক্ষমা চাইছি সোহেল ইমাম। আপনার সিরিজটা শুরু থেকেই দারুণ আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। ভাবছিলাম একটা কথা, হয়তো আগের পর্বগুলোতে জবাবটা দিয়ে রেখেছেন। এই শিল্পে শিল্পীর স্বাধীনতা কতখানি? সেকি নিজের পছন্দ মত আঁকতে পারে, নাকি কোন মালিকের সখ মিটিয়ে চলে নিরিন্তর? সময়ের সাথে সাথে রিকশার মালিকদের শ্রেণিগত কোন পরিবর্তন কি চোখে পড়েছে? আমার এক বন্ধু একবার একশ বিশটা রিকশা কিনে ভাড়ায় খাটিয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার রিকশার মার্কেটটা ধরা এবং ওয়াল্মার্ট মডেলের মতো করে এর সম্প্রসারণ। সে প্রায় আঠারো বছর আগের কথা। আর যোগাযোগ নাই, তাই জানিনা কী হয়েছিলো শেষটায়। তবে মনে আছে বন্ধুটি ফরমুলা ওয়ানের ভক্ত ছিল। কে জানে তার রিকশায় মাইকেল শুমাখারের ছবিই ছিল কিনা!

---মোখলেস হোসেন।

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনি পড়লেই ভালো লাগে। আমার মনে হয় রিকশা শিল্পীদের খুব একটা স্বাধীনতা নেই। প্রায় সময়ই চলমান প্রথাটা অনুসরন করতে হয় কখনও কখনও রিকশা মালিকের পছন্দ অনুসারেই আঁকতে হয়। তবে এখনকার সময়ে প্রকৃতিক বা গ্রামবাংলার দৃশ্য আঁকার ক্ষেত্রে তারা মনে হয় অনেকখানিই স্বাধীনতা নিচ্ছেন। অন্য কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঘটে থাকতে পারে তবে এখনও খেয়াল করে উঠতে পারিনি। আপনার প্রশ্নই এ বিষয়টায় আমাকে উৎসাহিত করলো। এই বিষয়টা আরেকটু খুটিয়ে দেখতে হবে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর আলোচনা।
আমি লোকসংস্কৃতি বা ফোকলোরের ছাত্র হিসেবে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি।
রিকশাচিত্র মূলত ‘আরবান ফোকলোরে’র বিষয়। বাংলাদেশে বা ভারতেও আরবান ফোকলোর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা, গবেষণার ধারা এখনো গড়ে ওঠেনি। সেকারণে অনেককিছু নিয়েই এখনো আলোচনা হয় না বা খুব সীমিতপর্যায়ে আলোচনা হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির বিবর্তিত রূপ: রিকশাচিত্র’ এই শিরোনামে এমফিল গবেষণার কাজ শেষ করেছি মাত্র। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশিত হয়নি বিধায় এ বিষয়ে তেমন কিছু লেখা হচ্ছে না।
সহজ করে বললে, মূলত বাহন হিসেবে রিকশাকে চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য রিকশাচিত্রের উদ্ভব। যানবাহন চিত্তাকর্ষক ও দৃষ্টিনন্দন করার ঐতিহ্য বেশ পুরোনো। রাজকীয় বাহন হিসেবে হাতি-ঘোড়ার অঙ্গসজ্জার কথা এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এক্ষেত্রে নৌকা, পালকি, ঘোড়া কিংবা গরুরগাড়ির অঙ্গসজ্জার কথাও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে রিকশাচিত্রের উদ্ভব ঘটে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। তবে শুরুর দিকে রিকশার সাজসজ্জা ও অলঙ্করণ কেমন ছিল তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে মনে হয়, পঞ্চাশের দশক থেকে রিকশাচিত্রের অলঙ্করণ বা রিকশাচিত্রের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। এর শুরু মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীদের হাত ধরে এবং ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে।

বিশ শতকের প্রথমভাগে, মূলত ত্রিশের দশকে, ঢাকাসহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি জায়গায় রিকশার প্রচলন ঘটে। তবে সেসময়কার অর্থাৎ ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে বাংলাদেশের রিকশাচিত্র সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানা না গেলেও পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকে এর ধারাবাহিক ইতিহাস জানা যায়।

বাংলাদেশে রিকশাচিত্র বিশ শতকের ঘটনা হলেও এর উৎস খুঁজতে আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে এবং খোঁজ নিতে হবে উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বাংলায় চিত্রশিল্পের ইতিহাসের। রিকশাচিত্র মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত তিনটি উৎস ক্রিয়াশীল রয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। এগুলো হলো :

১. ঐতিহ্যবাহী লোকচিত্রকলা
২. পপুলার প্রিন্ট/জনপ্রিয় ছাপাই ছবি
৩. সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং
এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আশা রাখি খুব শীঘ্রই।
আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------------------------------------------------------
অনার্য তাপস

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ এই মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। অনেক দিন থেকে অপেক্ষা করে আছি এ বিষয়ের উপর আপনার লেখা পবো। আপনার কিছু লেখা পড়েছি। আমার মনে হয় ফোকলোর বা ফোক আর্ট নিয়ে আপনার কাছ থেকেই আরো ভালো লেখা আমরা পেতে যাচ্ছি। ফোকলোর নিয়ে ফোক আর্ট নিয়ে আরো বেশি লেখা আসা উচিত আর সচলায়তনেও মনে হয় ফোকলোর আর নৃবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখার আলাদা ক্যাটাগরি থাকা দরকার।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ‘লোকশিল্পের রূপরেখা’ নামে শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ এর একখানি বই প্রকাশিত হয়েছে জার্নিম্যান, ঢাকা থেকে- বাংলা, ইংরেজি উভয় ভাষাতে। ১,৫০০টাকা দাম। এটা পাবেন আজিজে। পড়তে পারেন। বাংলাদেশের লোকশীল্প নিয়ে আমরা যা জানি তা দুই মলাটে পাবেন। একই লেখকের আর একখানি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে। সেখানা সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং নিয়ে। এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালার ৮ম খণ্ডে সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং নিয়ে শাওন আকন্দ এর একটা লেখা আছে, বেশ বড়। পড়তে পারেন। সিনেমার ব্যানার বলছি এই কারণে যে, রিকশাচিত্রের সাথে এই মাধ্যমটার মিল সবচাইতে বেশি।

সোহেল ইমাম এর ছবি

আবারও কৃতজ্ঞতা মূল্যবান তথ্যের হদিস দেবার জন্য। ভালো থাকবেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

শিরোনামটা ভুল হয়েছে। সঠিকটা হবে ‘বাংলাদেশের লোকশিল্পের বিবর্তিত রূপ: রিকশাচিত্র’

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
_______________
সৌমিত্র পালিত

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সৌমিত্রদা।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।