রেমা-কালেঙ্গা অরণ্যে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৯/০৬/২০১৬ - ২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য একদম যাকে বলে স্বর্গীয়। ঝুম বৃষ্টির পরপর সেই সৌন্দর্য পূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত হয়। সেই সৌন্দর্যের মায়াভরা আহ্বান অবজ্ঞা করা প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য বেশ কঠিনই বটে। ট্রেন থেকে ব্যাকপেক আর হ্যান্ডব্যাগের বোঝা নিয়ে যখন স্টেশনে নামলাম তখনও চারদিকে বৃষ্টির রাজত্ব। আমার চোখ ফেলে আসা যাত্রাপথের মুগ্ধতায় তখনও স্বপ্নালু আর মন যারপরনাই আপ্লুত। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে যারা সিলেট যান তাঁরাই জানেন যাত্রাপথের সৌন্দর্য কি জিনিস। অবারিত সবুজ চাবাগানের মাঝ দিয়ে কু ঝিক ঝিক শব্দ তুলে ছুটে চলা ট্রেনের জানালা দিয়ে বৃষ্টির আবেশ অনুভব করার অনুভূতিই অন্যরকম।

আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জেলা মৌলভীবাজার (পার্বত্য চট্টগ্রামকে হিসাবের বাইরে রাখছি আপাতত)। এই জেলার প্রতিটি থানাতেই পা পড়েছে। হাওড়, অরণ্য, পাহাড়, চা-বাগান, বিল সবই আছে এখানে। এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব কম হওয়াতে চারদিকে সবসময় একটা শান্তি শান্তি ভাব বিরাজ করে। মৌলভীবাজার ভ্রমণ তাই সবসময়ই আমার কাছে আনন্দদায়ক। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটে নি। অফিসের এইবারের ট্যুরটা বেশ লম্বা। চিন্তা করেই এসেছি কাজের ফাঁকে অনেকগুলো জায়গা ঘুরে যাব। স্টেশনের ওয়েটিং রুমের আরামদায়ক সোফায় বসে ভাবছিলাম আকাশের কান্না কি আজ থামবে কি না। ঠিক এমন সময় লিফলেটটা চোখে পড়ল। শ্রীমঙ্গলের কোন একটা অতিথিশালার (এই মুহূর্তে নামটা মনে পড়ছে না) লিফলেট। লিফলেটে শ্রীমঙ্গল রাত্রিযাপন করে আপনি চারপাশে কোথায় কোথায় ঘুরতে পারেন তাঁর একটা তালিকা ছিল। এই তালিকাতেই রেমা-কালেঙ্গার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে।

রাতে থাকার ব্যবস্থা ছিল শ্রীমঙ্গল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে মৌলভীবাজার শহরে। জোনাল ম্যানেজার দেলওয়ার ভাই বাইক নিয়ে এসেছিলেন আমাকে নিয়ে যেতে। তাঁর কাছে রেমা-কালেঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাইলে খুব বেশি কিছু বলতে পারলেন না। রাতে হোটেলে পৌঁছেই গুগুলের সাহায্য নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেলাম যা কি না আমাকে ভ্রমণে উৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভ্রমণের ব্যাপারে আমি একটা নীতিবাক্য মেনে চলতে চেষ্টা করি। সেটা হচ্ছে কোন দর্শনীয় স্থান পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ করব এই ভেবে ফেলে আসতে নেই। কারণ জীবনে এই স্থানে আসার সুযোগ আপনার নাও হতে পারে। সময় থাকলে প্রথম সুযোগেই দেখে নেওয়া উচিৎ। রাতের খাবার খাওয়ার সময়ই তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এই ট্যুরেই রেমা-কালেঙ্গা অরণ্য ঘুরে দেখব।

রেমা–কালেঙ্গা অরণ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর আয়তনের এ বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে। তবে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এ বনের সম্প্রসারণ করা হয়। বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ী বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত। এটি বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলা নিয়ে গঠিত। এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে যাওয়া যায় দু’ভাবে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ। সেখান থেকে সিএনজি/বেবি টেক্সি/বাইক চেপে আসতে হবে কালেঙ্গা। কালেঙ্গা যাওয়ার অন্য পথটি ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল, সেখান থেকে জিপে চড়ে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে গেলে জঙ্গলের ভেতরের দীর্ঘ পথটি এক কথায় অসাধারণ। সৌভাগ্যক্রমে দুটি পথেই চলাচলের সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কালেঙ্গা তাই তাঁর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য নিয়েই আমার সামনে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম খুব ভোরে মৌলভীবাজার থেকে বাইকে করে। প্রথমে যাই চুনারুঘাট, সেখান থেকে রেমা-কালেঙ্গা। প্রথমদিকে রাস্তা বেশ ভালই ছিল। রাস্তার দু’পাশের বিস্তীর্ণ সবুজ চোখের জন্য ছিল খুবই তৃপ্তিদায়ক। অবশ্য এই তৃপ্তি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় নি। অচিরেই আমরা পাকা রাস্তা ছেড়ে কাচা রাস্তায় প্রবেশ করলাম। সকালে বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তায় প্রচুর কাঁদা ছিল। তাই মাঝে মাঝেই আমাদেরকে বাইক থামিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। এভাবে অনেকখানি যাওয়ার পর চোখে পড়ল রেমা-কালেঙ্গার নিমন্ত্রণ। পুরো অরণ্যের মানচিত্র দেওয়া আছে প্রবেশপথে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও কিছুই বুঝতে পারলাম না। তাই বুঝবার আশা বাদ দিয়ে জঙ্গলে প্রবেশের প্রস্তুতি নিলাম। গেটটা খুব একটা আকর্ষণীয় না। একটা টিকেট কাউন্টার আছে কিন্তু কেউ নেই। তাই ২০ টাকা প্রবেশ ফি না দিয়েই আমরা জঙ্গলে প্রবেশ করলাম।

অরণ্যে প্রবেশ করেই মনটা ভাল হয়ে গেল। প্রকৃতির কাছাকাছি হতে কার না ভাল লাগে? চারপাশ একদম নিস্তব্ধ। লাউয়াছড়াতে গেলে লোকজনের কোলাহলের কারণে এমন নিস্তব্ধতার আনন্দ অনুভব করা অসম্ভব। কালেঙ্গাতে লোকজন কালেভদ্রে আসে। প্রধান কারণ দূরত্ব, পরবর্তী কারণ থাকার জায়গায় অভাব। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এসব স্থানে লোকজনের আনাগোনা যত বাড়বে, বনের সৌন্দর্যও ততই ধ্বংস হবে। যারা পাখি প্রেমিক এবং পাখি নিয়ে গবেষণা করেন তাঁদের জন্য রেমা-কালঙ্গা আদর্শ জায়গা। তবে শর্ত একটাই, খুব ভোরে বনের ভিতর যেতে হবে। এবং সেই জন্য রাতে এখানে থাকা আবশ্যক। কিন্তু থাকার জায়গা? সেটিও আছে, ডাকবাংলো। তবে আগেই থেকেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। টিলার উপর সুন্দর এই বাংলো ঘরে একটা রাত কাটাতে পারলে মন্দ হত না। চারপাশে লোকজনের চিহ্নও নেই।

টিলা থেকে নেমে সামনে হাঁটা দিলাম। কিছুদুর অগ্রসর হতেই একটা বাঁশ ও খড় দিয়ে বানানো বসার জায়গা চোখে পড়ল। খড়ের ঘরটা পেরিয়ে হাতের ডান পাশে আরেকটা টিলার উপর বিজিবির ক্যাম্প। প্রচণ্ড পানির তেষ্টা পেয়েছিল। একজন জওয়ানকে অনুরোধ করায় তিনি পানির বন্দোবস্ত করে দিলেন। পানি পান শেষে আমরা আবারও জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। কিছুদূর যেতেই, এ কি? জঙ্গল শেষ হয়ে গেল নাকি? চারপাশে তো ধানক্ষেত ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। এই জঙ্গল তো শুনেছিলাম অনেক বড়। কিছুটা হতাশ হলাম। তারপরেও এগিয়ে চললাম। হতাশা কাটতে অবশ্য সময় লাগে নি। আমাদের বুঝতে ভুল হয়েছিল। অরণ্যের মূল অংশে আমরা প্রবেশই করিনি এতক্ষণ। এইবার আমরা মূল জঙ্গলে প্রবেশ করলাম।

যারা ট্র্যাকিং পছন্দ করেন তাঁদের জন্য একটা মানচিত্র দেওয়া আছে। রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে আছে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইল। প্রতিটি ট্রেইলই ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো। অভয়ারণ্যের ভেতরে আছে সুউচ্চ একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারের মাথাটি বনের উঁচু উঁচু গাছগুলোর মাথা ভেদ করে আকাশে উঁকি মেরেছে। টাওয়ারের উপর থেকে দেখা যায় বনের ভেতরের দূরদূরান্তের দৃশ্যাবলি। আর ঠিক নিচেই আছে আঁকাবাঁকা টলটলে জলের একটি লেক।

লেক এবং টাওয়ারের অবস্থান সহজে যেন বুঝতে পারেন সেই জন্যে গুগল থেকে পাওয়া একটা মানচিত্র দিলাম। মানচিত্রে নীল দাগ দিয়ে হাঁটার ট্রেইল চিহ্নিত করা হয়েছে। সাদা রেখা দিয়ে বাংলাদেশ আর ভারতের সীমানা আলাদা করা হয়েছে।

হাঁটা শুরু করলাম। যতই এগুছি অরণ্য ততই যেন চেপে ধরতে চাইছে। চারপাশের নিঃশব্দের মাঝে ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। মাঝে মাঝে নাম না জানা পাখিদের কলরব শুনতে পাচ্ছিলাম। এমন গহীন বনে কথা বললেই মনে হয় যেন বনের পবিত্রতা নষ্ট করছি। এরথেকে ভাল চুপচাপ বনের সৌন্দর্য অবলোকন করা।

প্রায় আধা ঘণ্টা হেঁটেছিলাম। পুরো ট্রেইল হাঁটতে গেলে ৪ ঘণ্টার মত লাগে। এত সময় ছিল না তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিরে চললাম। তবে আমার কল্পনাতেও ছিল না কি অপূর্ব বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য ফিরবার পথে। সময় বাঁচানোর জন্য ফিরবার পথে আমরা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বিকল্প রাস্তা ধরলাম। এই রাস্তা অরণ্যের ভিতর দিয়ে সিন্দুরখান ইউনিয়নে উঠেছে। সেখান থেকে পিচের রাস্তায় সোজা শ্রীমঙ্গল। এত চমৎকার রাস্তায় এর আগে ভ্রমণ করি নি (পরবর্তীতে হিমছড়ির রাস্তায় ভ্রমণ করে আরও বেশি আনন্দ পেয়েছি)। অরণ্যের বুক চিরে আঁকাবাঁকা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলছিল আমাদের পথচলা। চারপাশে বিশাল বিশাল সব গাছ। কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া পার হতে হয়েছে। আর কিছু স্থানে তো দ্বিমুখী রাস্তায় থমকে যেতে হয়েছে। কারণ কোন রাস্তায় যাব জানি না। এই গভীর অরণ্যে দিকনির্দেশনা দিবে এমন কাউকে কোথায়ই বা খুঁজে পাব।

একটা চমক অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। জঙ্গল শেষ হওয়ার পর হঠাত লেবুর গন্ধ লাগল নাকে। আরে বাহ, এ তো দেখি বিশাল জায়গা নিয়ে লেবু বাগান। তবে এর থেকেও বড় চমকটা ছিল পরে। চলতে চলতে আমরা যে কখন ভারতের সীমান্তে চলে এসেছি বুঝতেও পারি নি। ওয়াচ টাওয়ার আর ফ্লাডলাইট দেখে বুঝতে পারলাম যে আমরা বর্ডারে চলে এসেছি। একদম হাত ছোঁয়া দূরত্বে ছিল কাঁটাতারের বেড়া।

এরপর শুধুই চা-বাগানের গল্প। চা-বাগানের অপূর্ব সুন্দর রাস্তা ধরে অবশেষে আমরা শ্রীমঙ্গলের রাস্তায় উঠলাম। সমাপ্তি ঘটল আমাদের রেমা-কালেঙ্গা ভ্রমণের। প্রচণ্ড ক্লান্তি ভর করেছিল শরীরে। বাইকের পিছনে বসেছিলাম বলে প্রচুর ঝাঁকি সহ্য করতে হয়েছে। শরীর ব্যথা করছিল। দেলওয়ার ভাই বুদ্ধি দিলেন সাতরঙা চা'পানের। শ্রীমঙ্গলের এই চা বিখ্যাত, যদিও খেতে অতীব জঘন্য। ৭০ টাকা দিয়ে এক কাপ চা খাওয়ার দুঃখেই হোক কিংবা নতুন জায়গা ভ্রমণের সুখেই হোক অবসাদ কিছুটা হলেও কেটেছিল।

রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে আছে নানা রকম বিরল প্রাণীর বসবাস। পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে বিরল প্রজাতির মালায়ন বড় কাঠবিড়ালির বসবাস একমাত্র এ বনেই। এ বনের বাসিন্দা তিন প্রজাতির বানর—কুলু, রেসাস আর লজ্জাবতী’র দেখা মেলে এ অভয়ারণ্যে। এ ছাড়াও মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, বন্যশুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। এ বনের আঠারো প্রজাতির সাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা ইত্যাদি।

এখানে পাখি আছে প্রায় ২০৫ প্রজাতির। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল ইত্যাদি।

বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনধারাও দেখা যেতে পারে এখানে। রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরেই আছে চারটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পাড়া আছে এ বনের ভেতরেই। এ ছাড়াও সাঁওতাল, তেলুগু ও উড়ং আদিবাসীরও বসবাস আছে এখানে।

আমার চোখে অবশ্য তেমন পাখি বা প্রাণী চোখে পড়ে নি। তাই ইচ্ছে আছে আরেকবার সময় নিয়ে এখানে ঘুরতে আসব। পুরো ট্রেইলটা হাঁটব এ মাথা থেকে ও মাথা। কেউ কি আমার সঙ্গী হতে ইচ্ছুক?

ফাহমিদুল হান্নান রূপক


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

আগে নাম শুনিনি রূপক ভাই আপনার জন্যই জায়গাটা সম্পর্কে জানা হয়ে গেল। ভালো লাগলো। দু’চারটা বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার মত বিশেষ সময় বোধহয় ছিলনা, ছবি পেলে দারুন হতো। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার ইচ্ছে থাকলেও সময় ছিল না। সাকুল্যে ঘণ্টাখানেক ছিলাম বনে। সন্ধ্যার আগেই শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে হবে এমন একটা তাড়া ছিল। এসব জায়গায় একটা পুরো রাত আর দিন না কাটালে পুরো সৌন্দর্য অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এছাড়া আমরা পৌঁছেছিলাম দুপুরে, এবং বনের একদম গভীরে যাই নি। এই সময়টা বন্যপ্রাণী দেখার জন্য আদর্শ নয়। পাখি দেখার সেরা সময় ভোর ৬ টা। কিছু পাখি দেখেছি, তবে অনেক প্রজাপতি চোখে পড়েছে।

ইচ্ছে আছে আবারও সেখানে যাওয়ার। তখন সব প্রস্তুতি নিয়েই যাব ইনশাল্লাহ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক
আমার চোখে

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

Hasan Rahman এর ছবি

রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারন্য সম্পর্কে পড়ে বেশ ভাল লাগল, আপনি বেশ গুছিয়ে বর্ণনা করেছেন। সেখানে থাকবার জন্য দুইটি বেশ চমৎকার কটেজ আছে, একটী মালিকের নাম লাসু, দুর্দান্ত রান্না, এবং রাতে সেখানে থেকে খুব ভোরে জঙ্গলে ট্রেক করতে পারবেন, যেটা আরো অনেক বেশি আনন্দদায়ক। আরেকটা ব্যাপার জঙ্গলে গেলে স্থানীয় গাইড নিয়ে যাওয়া ভাল, উনারা সে যায়গায় বন্যপ্রাণী সম্পর্কে বেশ ভাল জানাতে পারবেন, এবং কোথায় গেলে কি দেখতে পাবেন মোটামুটি জানতে পারবেন। এরকম একজন এর নাম রহিম, উনি রেমা-কালেঙ্গার বন্যপ্রাণী সম্পর্কে বেশ ভালো জানেন। লাসু'র কটেজে থাকলে উনি আপনাকে রহিম সাহেব এর খোঁজ এনে দিবেন। রহিম সাহেব না থাকলে খোঁজ করতে পারেন স্বপন সাহেব এর, উনিও খারাপ না। হাসি শীতের মৌসুমে গিয়ে দেখতে পারেন, অন্যরকম ভাল লাগবে। রেমা-কালেঙ্গা, তথা হবিগঞ্জের ঐ অঞ্চলের সবচাইতে দুর্দান্ত হলো আরটিজান কুপের পানি। এরকম ঠান্ডা, আর মিষ্টি পানি আর কোথাও পাবেন না! সেই পানিতে লেবুর শরবত বানিয়ে দেখতে পারেন, আমরা টেস্টি স্যালাইন, লেবু আর এই পানি দিয়ে শরবত বানাতাম, আমার মনে হয়না হবিগঞ্জের এর ভয়ঙ্কর আর্দ্র দিনে এর থেকে ভালো রিফ্রেশিং কিছু হতে পারে।

বনের আয়তন এর ব্যাপারে আপনি যে তথ্য দিয়েছেন সেটা সরকারি তথ্য, স্বাভাবিকভাবেই এতে ভুল আছে, মানে রেমা-কালেনগার আয়তন ঠিকই আছে, কিন্তু পুরো দেশের বনের আয়তনের যে তুলনা সেটার কথা বলছি আর কি। সিলেট বিভাগেই এর চেয়ে বড় বনভূমি আছে। রেমা-কালনেগার ভালো দিক হলো কিছু যায়গা বেশভালভাবেই রক্ষিত। তাই কাকর হরিণ, বন্য শুয়োর, গন্ধগোকুল, কাঠবেড়ালি, নানা জাতের বানর, এবং হরেক রকমের পাখি বেশ ভালোভাবে টিকে আছে সেখানে।

এই বনের সমস্যা হলো সীমান্তের ঐ পারে কোন ভালো বন নেই, তাতে করে যে সব প্রাণীদের অনেক যায়গা লাগে সেগুলো এই বন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। আর স্থানীয় মানুষেরা নানাভাবে এখান থেকে নানা ধরনের বনজ দ্রব্য আহরন করে। চোরা শিকার বন্ধ থাকলে, এর বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রেমা-কালেনগাতে অনেক বন্য প্রাণীই বেঁচে থাকবে! হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

এতসব তথ্য জানতাম না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, পরবর্তী সময় ভ্রমণে গেলে কাজে লাগবে। চোরা শিকার বন্ধ এবং বনের সংরক্ষণের জন্য যতদূর জানি সরকার বনের ভিতর যেসব আদিবাসীরা রয়েছেন তাঁদেরকে মাসিক সম্মানীর বিনিময়ে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারপরেও অসাধু ব্যক্তি তো সবখানেই আছেন। আসল সমস্যা হচ্ছে মানসিকতায়। আমরা বাঙালীরা প্রকৃতিপ্রেমিক নই মোটেই। তাই বন-জঙ্গলের প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝি না। দেশের বেশিরভাগ বনের অবস্থাই তো তাই করুন। আর যারা পর্যটক তাঁদের বেশিরভাগই সেলফি তোলা ছাড়া বনের রক্ষণাবেক্ষণের দিকে মনোযোগী নন। তবে সময় বদলাচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করছি সামনে আমরা আরও সচেতন হব।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

হাসান রাহমান  এর ছবি

লাসু'র কটজ হলো আপনি যে প্রধান গেট এর ছবি দিয়েছেন সেটার ডান দিকে, যদি গেটের দিকে মুখ দিয়ে দাড়ান, আর যদি বাজারের দিকে মূখ করে দাড়ান তাহলে হাতের বাম দিকে। শীতের মৌসুমে প্রচুর মানুষের আনাগোনা থাকে তাই উনার ওখানে বুকিং পেতেও অনেক সময় বেশ বেগ পেতে হয়। আপনি যেহেতু শ্রীমঙ্গল যান, আপনি যদি লাউয়াছড়া বন পার হয়ে ভানুগাছে যান ওখান থেকে সি এন জি নিয়ে চলে যেতে পারেন রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্ট। চমৎকার আরেকটা বন। তবে যেহেতু তথাকথিত রক্ষিত এলাকা না তাই কোন রক্ষনাবেক্ষন নেই। তবে বেশ সুন্দর একটা বন। ওখানে গেলে বন বিভাগের ডাক বাংলো যেটা আদমপুর বিট অফিসের পাশে (১৯৫০ এর দশকে তৈরি), সেখানে গিয়ে সুরুজ মিয়াকে খুঁজে নিবেন, উনি আপনাদের জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখাবেন। অনেক পাখি, আরও অনেক কিছুই দেখতে পাবেন বলে আশা। তবে যাবেন শীতের দিকে! হাসি আরেকটা বনেও যেতে পারেন, এটাও রিজার্ভ ফরেস্ট, সেটা হলো পাথারিয়া (শাহরিয়ার কবীর এর পাথারিয়ার খনি রহস্যের পাথারিয়া), এটার অবস্থান জুড়ী আর বড়লেখাতে, অতি অতি অতি অপূর্ব এক যায়গা! লাঠিটীলা বিটে ঘুড়ে বেড়ালে বেশ এডভেঞ্চার বলেই মনে হবে। এর কাছাকাছিও একটা বন বাংলো আছে, ১৯২৬ সালে তৈরী।

মানুষ নিয়ে আর কি বলব? আমি ডেভিড এটেনবোরো এর কথা ধার করে বলি মানুষই সব শেষ করে দিল, আর দিচ্ছে। আমার প্রিয় ইকোলজিস্ট এডওয়ার্ড উইলসন (বায়োডাইভারসিটি শব্দটা উনারই আবিষ্কার) কিছুদিন আগে লিখেছেন যে পৃথিবীর অর্ধের ছেড়ে দিতে হবে মানুষ বাদে অন্যদের জন্য, তবেই কেবল আমরা আমাদের নিজেদেরকে বাঁচাতে পারব। আমরা যদি শুধু যেখানে সেখানে গিয়ে ময়লা না ফেলতাম তাহলেই বোধহয় বহুকিছুকেই বাঁচিয়ে রাখা যেত। :/

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

সেই পাথারিয়ায় যাবার ইচ্ছে রইলো।
রূপক ভাই এবং হাসান ভাই আপনাদের দুজনকেই ধন্যবাদ বিস্তারিত হদিস দেবার জন্যে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভানুগাছ পর্যন্ত গিয়েছিলাম কিন্তু রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে ঢোকা হয় নি। সেই আফসোস এখনও আছে। এই জন্যই তো বলছি কোথাও ভ্রমণে গেলে পরেরবারের জন্য ফেলে আসতে নেই। পাথারিয়ার নাম শুনেছি কিন্তু সেটা যে জুড়ি আর বড়লেখাতে টা জানতাম না। ধন্যবাদ। পরের সুযোগেই ঘুরে আসতে হবে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

হায় পপ্পন ওঁয়া ওঁয়া

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।