সংযোজনা - ০১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৫/০৩/২০১৮ - ১২:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অতর্ণা হাসান

১২/৩১/২০১৭, রবিবার

এই বার আর ততটা ঠাণ্ডা পড়বে বলে মনে হচ্ছিল না। আর আবহাওয়া-বিদরা তো এ ব্যাপারে টুঁ শব্দটাও করেন নি। অথচ আজ ৩১ শে ডিসেম্বর, ঠাণ্ডা একেবারে জেঁকে বসেছে শহরটাতে। এমনিতেই যেন অলিখিত কারফিউ জারি করা হয়েছে, মানুষের যান্ত্রিক জীবনে দুমিনিট উৎসব করতেও নিষেধাজ্ঞার খড়গ এসে পড়েছে। তার উপর শীতের প্রকোপে রাস্তাঘাট একেবারে জনমানবশূন্য। আমারও তো এখন থার্টি-ফার্স্টের পার্টিতে থাকার কথা ছিল। শুধু ঐ হতচ্ছাড়া মোবাইল ফোনটাই যত গণ্ডগোল বাঁধাল। তাড়াহুড়ায় কখন যে ভুলে গেলাম মোবাইলটা ব্যাগে ভরার কথা, ধুর। এই শীতের মধ্যে সেই খিলগাঁও চৌরাস্তা থেকে এতদূর আসার কোন মানে হয়? এর মধ্যে রিকশার চেইনটাও এখানে এসেই পড়তে হবে!? রাস্তার এদিকটায় পরপর চারটা-পাঁচটা স্ট্রীট লাইট কানা হয়ে আছে গত মাস দুয়েক ধরে। কারো কোন ভ্রূক্ষেপও নেই। অন্যদের কথা বলে লাভ কি, আমিও তো তেমন পাত্তা দেই নি। আজকে রাতে এসে সেই জায়গাটাতেই রিক্সার চেইন পরে যাওয়াতে মেজাজ খারাপ করে নেমেই গেলাম। এমনিতেও অফিস এখান থেকে কাছেই। হেঁটেগেলেই বরং তাড়াতাড়ি পোঁছে যাবো।

মেজাজ খারাপ করার আরও কারণ আছে। স্কুটি দিয়েই তো সুন্দর আসতে পারতাম। কিন্তু আজ বিকেলে আর তেল ভরার কথা মনে ছিল না। কাজেই আমার পক্ষীরাজ আপাতত গ্যারাজে, আমাকে রীতিমতো খোঁড়া করে দিয়ে। ঋ ঠিকই বলে, আমি নাকি নারীসমাজে ভীষণ ব্যতিক্রম, অগোছালোর একশেষ। অবশ্য ঋ-ও তাই, বরং আমার চাইতে এককাঠি সরেশ। হঠাৎ করে এক ঝাপটা বাতাস ছুটে এলো। তাড়াতাড়ি কার্ডিগানের কলারটা আরও কিছুটা উঁচু করে দিলাম। ফ্লাইওভার থেকে কিছু বাস-গাড়ীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে, একটা ট্রেনের হুঁইসেল চারপাশে তীক্ষ্ণ বাড়ি খেতে খেতে হারিয়ে গেল। আমাকে আবার বারোটা বাজার আগে অবশ্যই পৌঁছুতে হবে পার্টিতে, জলদি তাই পা চালালাম। হাই-হিলের খটখট শব্দ ফুটপাতে। ঝনঝন শব্দে কি যেন বাড়ি খেল, কিছুটা চমকেই গেলাম। একটা টুলেট সাইন। আলগা ভাবে লাগিয়ে রেখেছে কোন বাড়িওয়ালা। নিজের মনেই হাসলাম। দিনেদুপুরে হাজারো বার এই পথ ধরে গিয়েছি, কিন্তু রাতের বেলার অভিজ্ঞতা, তাও যদি আবার সেটা এমন সুনসান রাত হয় - তবে আমার মতন মেয়েও ভড়কে যেতে পারে।

আবারো ট্রেনের হুঁইসেলটা চারপাশ কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো। প্রথমদিকে কি যে বিরক্ত লাগতো, এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবি, দূরে কোথাও গেলে ট্রেনের শব্দ রেকর্ড করে নিয়ে যেতে হয় নাকি আবার। অতটা খারাপ দশা অবশ্য এখন অব্ধি হয় নি। ফুটপাথ থেকে নেমে আসলাম। সামনেই ঢাকার অসংখ্য উদ্বাস্তুর মধ্যে কেউ একজন, এই তীব্র শীতের রাতেও ফুটপাতে শুয়ে আছে, ছালা মুড়ি দিয়ে। এসব দেখলে একসময় মন খারাপ হতো। এখন আর হয় না। একসময় ভাবতাম সব কিছু পালটে যাবে, সব কিছু পালটে দেবো। সময়ের সাথে সাথে বুঝেছি সবাই নিজেরাই পালটে যায় সবার আগে। এই শহর একটা ভীষণ রাক্ষুসির মতন মানুষের ভালোমানুষিটাকে খেয়ে ফেলে। তবুও এই শহর জাদুর শহর। প্রাণের শহর।

বাড়িওয়ালা চাচা গতকাল এসে এই কথা সেই কথা শেষে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন বাসা ভাড়া বাড়ানোর। আমিও চুপচাপ শুনে গেলাম। এই শহরে একলা কোন মেয়ের বাসা ভাড়া পাওয়াটা একরকম অসম্ভব। শুধুমাত্র চাচা ঋদ্ধির কিরকম দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয় বলে আমাকে দিয়েছেন। তাও দুদিন পর পরই আমার চলাফেরা, আচার আচরণ নিয়ে একরাশ উদ্বেগ জানিয়ে যান। সেটাও চুপচাপ শুনে যাই। দোষও খুব একটা দিতে পারি না। যখন এখানে অফিস দিয়েছিলাম, সবাই হেসেছিল। কিন্তু গত আট মাসে আমি আমার পথ ঠিকই তৈরি করে নিয়েছি। একেবারে ক্লায়েন্টের বাড়বাড়ন্ত না হলেও, নিয়মিতই কাজ পাচ্ছি। এর পিছনে আমার অবদান যতটুকু, ঋদ্ধির তার চাইতে কম নয়। ঋদ্ধির কথা ভাবতে ভালো লাগে। ও প্রায়ই বলে, আমি নাকি ওর সোনার কাঠি-রূপার কাঠি। আমার শুনতে ভালো লাগে।

“আপা, দুইটা টাকা দিয়া যান না।“ অন্ধকার কুয়াশার মধ্যে থেকে কালো অবয়বটা যেন মাটি ফুঁড়ে বের হল। আমার বুকটা ধক করে লাফ দিয়ে উঠল। টের পেলাম মেরুদণ্ড দিয়ে একতা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে চলে গেল। বুক ধড়ফড়টা আগে একটু কমার সুযোগ দিলাম। আরেকটু হলে একতা যাচ্ছেতাই ব্যাপার ঘটে যেত। ব্যাগের ভেতর পেপার স্প্রের ক্যানটা থেকে আমার মুঠোটা আলগা করলাম। “আপা, দেন না দুইটা টাকা।“ সাথে ঋ থাকলে আমাকে টেনে নিয়ে যেত, এসব ভীষণ অপছন্দ ওর। আমি, সত্যি বলতে কি দারিদ্র্যের সবচাইতে ভয়াল রূপ দেখে এসেছি জীবনে। কাজেই সময়ে অসময়ে সুযোগ পেলেই আমি চেষ্টা করি কিছুটা ভালোকাজ করতে। কিন্তু ঋদ্ধির কথা হচ্ছে, ওরা তোমার থেকে টাকাটা নেবে আর তারপর সোজা কোন ঠেক-এ গিয়ে একটা স্টিক কিনে মনের সুখে টান দেবে। আমি অবশ্য অত কিছু ভাবতে চাই না। আমার যতটুকু সাধ্য থাকে, সেটা করাটাই আমি যথার্থ মনে করি। দশজনের মধ্যে একজনও যদি স্টিক না খেয়ে রাতের খাবার কিনে বাড়ি নিয়ে যায় আর নিজের পরিবারের মুখে তুলে দেয় - সেটাই তো আমার সার্থকতা; তাই না।

কুয়াশাটা বেশ বাড়ছে। আমি চোখ কুঁচকে তাকালাম। দূরে কোথাও থেকে হালকা একটুখানি আলো আসছে, তা দিয়ে এক নজর তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই ভীষণ ঠাণ্ডায় আমি হাতমোজা, পা মোজা, কার্ডিগান আর মাফলার গায়ে দিয়ে চলছি আর আমার সামনের লোকটা একটা পাতলা শতচ্ছিন্ন জামা গায়েও কিভাবে এই হিম হিম ঠাণ্ডার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে? আমি যেখানে ভাবছি কখন আবার রুমের ভেতর ঢুকতে পারবো - সেখানে... থাক বাবা, অত ভাবলে আমার মাথাটা ওভারহিটেড হয়ে যাবে। ভ্যানিটিব্যাগের সামনের পকেটে হাত দিয়ে কিছু খুচরা বের করে এগিয়ে দিলাম, লোকটা কিছুটা যেন অবিশ্বাস করছিলো নিজের ভাগ্যকে। কাঁপা কাঁপা হাতে টাকাগুলো নিতে নিতে ঠাণ্ডা খনখনে গলায়, “আল্লাহ আপনার ভালা করবো আপা।“ বলতে বলতে আবার কুয়াশার মধ্যেই হারিয়ে গেলো। পুরো ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার। অবশ্য এই আবহাওয়ায় সবই ভৌতিক লাগছে।

অনেক দিন ধরেই একটা দাতব্য সংস্থার ব্যাপারে ভাবছিলাম। সবসময় এটা সেটা ওটা নানান অজুহাতে ব্যাপারটা পিছিয়েছি। এবার ঋ-র সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আসলেই আলোচনায় বসবো। আমার এজেন্সির কাজ এখন অনেক গুছানো অবস্থায় এসেছে, ঋদ্ধির সিকিউরিটি কোম্পানিটাও বেশ ভালো কাজ দেখাচ্ছে। এখন কিছু টাকা আলগা সরিয়ে কাজটা শুরু করাই যায়। ঋ অবশ্য খুব খিঁচ খিঁচ করবে, টাকা পয়সা নিয়ে ও খুব খুঁতখুঁতে। এ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই খুব বিষণ্ণ একটা হাসি দেয়। ঐ হাসির পিছনে অনেক লুকনো ইতিহাস আছে, তার কিছু আমি জানি। কিছু জানা নেই। ঠাণ্ডা এড়ানোর জন্য হাতটা জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়েও কাজ হচ্ছে না। কেমন যেন হাড়ের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, উফ। কুয়াশাটাও যেন আরেকটু বেশি করে জেঁকে বসেছে, চোখে ধাঁধা লাগায়। হঠাৎ মনে হল রাস্তায় ঐ পাশ থেকে কে বুঝি হেটে আসছে। ভালো করে তাকাতেই দেখি, কিচ্ছুই না।

রাতের অন্ধকার চিরে আরও একবার ট্রেনের হর্নের আওয়াজ চারপাশে শব্দের রেশ ছেড়ে গেলো। তূর্ণা ছেড়েছে মনে হয়। আমি দাঁড়ালাম, পৌঁছে গেছি বাসার সামনে। বক্কর ভাই আবার কোথায় গেলেন? উফ, এই লোকটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। কাজে ফাঁকি কে না দেয়। আমিই তো সময়ে সময়ে কাজ ফেলে কেটে পড়ি। কিন্তু বক্কর ভাই জিনিসটাকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। আবার সে নিয়ে প্রশ্ন করলে এমন সব মনগড়া গল্প ফেঁদে বসেন যে হাত জোর করে মাফ চাওয়াটাই শুধু বাকি থাকে। আজকে তো আবার থার্টি-ফাস্ট! অজুহাতের অভাব হবে না। আমি অবশ্য নিশ্চিত, কোথাও থেকে গাঁজার জোগাড় করতেই তিনি আপাত: লাপাত্তা হয়েছেন। ফোঁস করে বিরক্তির শ্বাস ছেড়ে ব্যাগের ভেতর হাতড়াতে শুরু করলাম। চাবিটা যে কোথায় রেখেছি না। খুঁজতে খুঁজতে আরেকবার ডাক দিলাম বক্কর ভাইকে। কোন নামগন্ধও নেই। ধ্যাত। এমনটা জানলে আগেই চাবিটা হাতে নিয়ে রাখতাম। আচ্ছা, আবার কার্ডিগানের পকেটে নেই তো? পেয়ে গেছি!

তালা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার কলাপসিবল গেটটা আটকে দিলাম। প্রথম দিকে ভুলেই যেতাম। আমার সবকিছুই প্রথম দিকে এলোমেলো থাকে, সময়ে ঠিক সামলে নেই। আর যথেষ্ট সময় পেলে - সেটা ঋ ভালো বলতে পারবে। ছাদ থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে। আমি মনে মনে হাসলাম। ছাদে অনুষ্ঠান করার নিষেধাজ্ঞা দিলেই কি আর কাউকে আটকে রাখা যাবে। আজ দুপুরেই এই একগাদা আতশবাজি, পটকা, বিকেলে সাউন্ড সিস্টেম; সবই জোগাড় করতে দেখেছি নিজ চোখেই - বাড়িওয়ালা চাচার ছেলের ঘরের নাতি রাশেদ আবার এসবে খুব পাকা। কোরবানি ঈদে ঢাকায় থাকবে না আর সেকারণে পার্টি হবে না; সে নিয়ে কি যে মন খারাপ ছিল বেচারার। এবার শখ মিটিয়ে নিচ্ছে। দ্রুত দুটো করে সিঁড়ি টপকে টপকে সোজা দোতালায় চলে এলাম। ডেডলকে চাবিটা ঝুলিয়েই ভেতরে চলে এলাম। কতক্ষণ আর লাগবে ফোনটা নিয়ে বেরোতে। আল্লাহ মালুম, এই এক ঘণ্টায় কয়শো ফোন যে এসেছে। দেখা যাবে ঋ-এরই কোন ফোন নেই। বা থাকলেও একটা-দুটা। আমি ফোন না ধরলেও হেলদোল থাকে না ওর। মাঝে মাঝে এ নিয়ে যা লাগে না। ওর সোজা সাপটা জবাব, “আমাকে যখন সামলাতে পেরেছ, অত সহজে কিছু হবে না তোমার। ওসব ফালতু জিনিস নিয়ে আমি ভাবিই না।“ আমি গাল ফুলিয়ে থাকলেও ওর এই কথাগুলো কিন্তু বেশ বিশ্বাস জাগায় আমার নিজের ওপর।

হঠাৎ চমকে উঠলাম। করিডোরের ডান দিকে রিডিং রুমের দরজার নীচ দিয়ে আলো চোখে এলো মনে হয়। বুকটা ধক করে উঠলো। পরক্ষনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কি যে হচ্ছে আজ। সবকিছুতেই ভয় পাচ্ছি। ভূত এফ এম এবলার মতন কাহিনী হয়ে যাচ্ছে! নিশ্চয়ই বাইরে থেকে আলোটা এসেছে। আশেপাশে কোন ছাদ থেকে টর্চ মারছে বুঝি। আজকালকার ছেলেছোকরাগুলো যা না। তাও একবার দরজাটা খুলে চট করে লাইট জ্বালিয়ে চোখ বুলালাম। নাহ, যা ভেবেছি। কেউ নেই। আমার এজেন্সির কিছুটা নাম ছড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনই একেবারে বাঘের ঘরে ঘোগ ঢুকে পড়বে এতটা জটিল সমস্যায় বোধহয় পরি নি। অবশ্য এখন যে কয়টা কেস হাতে আছে, সবগুলোই যাকে বলা যায় - মালিবাগ মোড়ের রাজ্জাক মামার জিলাপির মতন। প্যাচ আছে, আর সেই প্যাচ সোজাও নয় - সোজা হলে আর আমার কাছে আসত নাকি? সেই সাথে প্যাচ শেষে ঐ জিলাপির মতনই টইটুম্বুর রসালো মজা। এও এক নেশা।

এসব কথা ভাবতে ভাবতেই অফিস রুমের দরজাটা খুললাম। অন্ধকারের মধ্যে কিছু একটা, কেউ একজন, ছায়া অবয়ব। আমার সহজাত প্রতিক্রিয়াটাই বুঝি আমাকে বাঁচিয়ে দিলো। খানিকটা নড়ে উঠলাম আর দুপ করে একটা শব্দ হল। একটা প্রচণ্ড ধাক্কা আমাকে হাত-খানেক দূরে ছিটকে ফেলে দিলো। মাথায় কিছু দিয়ে বাড়ি মেরেছে নাকি, না অতটা কাছে আসে নি... চোখ বুজে আসতে আসতে বিদ্যুতঝলকের মতন খেলে গেল- আমাকে গুলি করেছে। মাথার ডান পাশ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে এর মাঝেও আমি চোখ খুলে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করতে থাকলাম। চোখের পাতাগুলো এত ভারী ঠেকছে কেন? কেউ একজন এগিয়ে আসছে। দেখা যাচ্ছে না। কোন আলো নেই। আমারই দোষ, করিডোরের আলোটা জ্বালাইনি। ভেবেছিলাম এ বাসা তো আমার হাতের তালুর মতই চেনা। রুমের বাতিটা জ্বালালেই হবে। পায়ের শব্দটা আমার কোমড়ের কাছে এসে দাঁড়ালো, আমি শ্বাস আটকে ফেললাম। আরেকটা শব্দের অপেক্ষা। সেইসাথে সব শেষ হয়ে যাবে। এতকিছুর পর, শেষমেশ নিজের অফিসে অজ্ঞাতপরিচয় কারো গুলিতে মারা যাবো আমি , আর ঋদ্ধি - ওর সাথে; আরেকটাবার... এত কিছুর ধাক্কা আর নিতে পারছিলাম না আমি, জ্ঞান হারানোর আগে শুধু বুঝলাম আমার সামনে উবু হয়ে বসছে আততায়ী।

লেখিকার জবানবন্দীঃ পড়তে পড়তেই একসময় মনে হতে থাকলো, এবার নিজের একটু লেখারও প্রয়োজন। সেটারই চেষ্টা করছি। এখনো মৌলিক কিছু লেখার মতন জোড় আসে নি, আর একেবারে লাইন টু লাইন অনুবাদ কেন যেন আমার পোষায় না। স্বাধীনতাটা একদম নেই বলেই বোধহয়। তাই একটি বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে থ্রিলার লেখার চেষ্টা করছি, একেবারে বাংলাদেশের পটভূমিকায়; একদম ঢাকা শহরেই। শেষ পর্যন্ত কি যে দাঁড়াবে কে জানে? ধন্যবাদ।

অন্তরা রহমান


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখতে শুরু করার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন অন্তরা রহমান। আপনার লেখার ডিটেইল গুলো আমার ভালো লেগেছে। এই পটভূমিতে নিজের গল্পটাই বলতে পারেন আপনি। বিদেশি গল্পের ছায়া মাড়ানোর কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। লেখাটা চালিয়ে যান দয়া করে, প্রতিদিন অল্প অল্প করে লিখলেও মাস শেষে অনেকটা এগিয়ে যাবেন। লেখায় কাঠামোগত কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে আমার। তাই বলে ভাববেন না আতলামি করার চেষ্টা করছি। আপনার কল্পনাশক্তি দারুণ, এবং সেই কল্পনাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার ইচ্ছে যখন আছে তখন লিখতে লিখতেই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠবেন আশা রাখি।

----মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে ছায়াটাই শুধু ধার করেছি, কায়াটা নিজেই বসাবো। এখন পর্যন্ত যতটুকু এগিয়েছি দেশের ভাইব-টা আসছে কাহিনী থেকে। বাকিটা দেখা যাক। আর ভালো কথা, কাঠামোগত দূর্বলতাটা কোথায় বললেন না যে? তা না হলে জানবো কি করে???

অন্তরা রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

তেমন কিছু নয় ভাই। বিষয়টা ট্রানজিশনের। একটা দৃশ্যপট থেকে আরেকটায় যাওয়াটা ক্ষেত্রবিশেষে মসৃণ লাগেনি। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো মাঝখানে আরও একটি দুটি বাক্য থাকলে বেশ হয়। কিংবা ধরুন কোন একটি প্যারাগ্রাফকে একটু অন্যভাবে ভেঙে নেয়া, এই আর কি।

---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

টু দ্য পয়েন্ট যাকে বলে। আসলেই। প্যারাগুলো আমাকে অনেক খানি "প্যারা" দিয়েছে যাকে বলে। কি আর করা। আমি আসলে ভেবেছি একেবারে বইয়ের সময় দেখে নেব ফাইনালি যে কি করা যায়। এই আর কি। ধন্যবাদ ভাই। আর ইয়ে, 'ভাই' না, 'আপু' হবে।

অন্তরা রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশের প্রচলিত শব্দের ভাণ্ডারে প্যারা নামে একটি শব্দ যোগ হয়েছে জানি। এই প্রথম শব্দটির প্রয়োগ সরাসরি প্রত্যক্ষ করলাম। আপনাকে মনে থাকবে। আশা করছি পরবর্তী কিস্তিটি দ্রুত প্রকাশিত হবে।

----মোখলেস হোসেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়লাম। পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা, কিস্তি ডুবে না যায় দেখবেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

বরাবরই কিস্তি ডুবে যায়। এক গিগা অসমাপ্ত লেখার আস্তরন আছে ল্যাপটপের গুহায়। এবার কিস্তি-মাত করতে চাই। পড়তে থাকুন। ধন্যবাদ।

অন্তরা রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

থামলেন কেন??? দারুণ দৃশ্যায়ন করছিলেন, মনে হচ্ছিল চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি!

আপনার এই গল্প কিন্তু কিছুটা নোয়ার ঘরানার দিকে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়! চিন্তিত তাই হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, চেষ্টা করুন এই গল্পটাকে (এবং আপনার ভবিষ্যৎ থ্রিলারগুলিকেও) কড়া-সেদ্ধ নোয়ার বানাতে, স্যাকারিন না!হাসি

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

কড়া সেদ্ধ!!! পরে বুঝল।ম যাকে খাস্তা ইংরেজীতে "হার্ড-বয়েলড" বলে তাই বুঝাতে চাইছেন। আসলে কি জানেন তো, নয়্যার ধারাটায় কিন্তু যে ওঝা সেই ভূত ব্যাপারটা খুব চলে। আমার বেলাতে আবার সেটা কিন্তু একদমই নেই। ধন্যবাদ। পরের পর্ব পড়ুন। সাথে থাকুন। আর মতামত দিতে থাকুন যে লাইনে আছি তো!

অন্তরা রহমান

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনার লেখা প্রথম পড়লাম আজ। যে কোন গল্পে প্রথম লাইন এবং প্রথম প্যারাটা খুব জরুরী। এটা তরতর করে পার হয়ে গেলে বাকীটাও আগায়। আমার ধারণা লেখকেরও সেটা হয়। গল্পটি না থেমে এক টানে পড়তে পেরেছি। আপনার দৃশ্যবর্ণন সুন্দর। ছবিটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে শেষ প্যারাটির দরকার ছিল কী? হাত খুলে লিখতে থাকুন।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

শেষ প্যারাটা নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার থাকা আর কি। গত কয়েক বছরে বাজারে যেভাবে "মৌলিক" থ্রিলার এসেছে তাতে ভড়কেই গিয়েছিলাম। সমস্যা হলো আমি প্রচুর বই পড়ি। দেশীও - বিদেশীও। কাজেই মৌলিক কতখানি সেটা আমার বুঝা হয়ে গিয়েছে পড়ার পর। আমি সেই কথাটা আর আমার বইয়ের সাথে লাগাবো না। "মাসুদ রানা"-ও তো ছায়া অবলম্বনে। কিন্তু স্বাদ নিতে কখনো সমস্যা হয় নি। সেটাই লক্ষ্য রাখছি এখন শুধু।

আসলেই। আমি প্রথম লাইনটা আর শেষ লাইনটা নিয়ে খুব ভাবি। ঐ দুটা মনমতন না হলে মাথটা গরম হয়ে যায়। দৃশ্যবর্ণন নিয়ে আবার একটু চিন্তায় আছি। একটা থ্রিলারে এত কথা লিখলে পাঠক আবার বিরক্ত হয়ে যায় নাকি সেটাও দেখতে হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মতামতের জন্য। ভালো থাকবেন।

অন্তরা রহমান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।