দৈনিক রুটিন: যা ফলো করা হয়নি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০২/১১/২০০৭ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দৈনিক রুটিন (মাধ্যমিক)

ভোর ৫-০০ : নামাজ পড়া
৫-৩০ থেকে ৮-৩০ : অংক
৯-৩০ থেকে ১২-৩০ : জীব/পদার্থ/রসায়ন
২-০০ থেকে ৪-০০ : সামাজিক বিজ্ঞান
৭-০০ থেকে ১০-০০ : বাংলা/ইংরেজি

উপরোক্ত রুটিন ছিল আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন। এইভাবে তিনমাস পড়লে পাশ নিশ্চিত এবং ভাল রেজাল্ট সম্ভব এইরকম গ্যারান্টি ছিল। মাস্টার মশাই দিব্বি দিয়েছেন তোকে বাবা পাশ করতেই হবে। না হলে উনার মুখটা একেবারে চুন কালিতে ভরে যাবে। ছাত্র হিসেবে মাস্টার মশাইয়ের এই অবস্থা থেকে উওরনের জন্য আমার প্রানপন প্রয়াস চালাতে হবে, এই রকম কিছু আমার মা আমাকে বললেন।

কিন্তু আগত্যা কি হইল? আমার রুটিনটা কেমনে কেমনে জানি পরিবর্তন হইয়া গেল। নিচের রুটিন টা ছিল আমার যা পরীক্ষার আগের ২ মাস চালিয়েছি।

ভোর ৫-০০ : গভীর ঘুমে মগ্ন
৫-৩০ থেকে ৮-৩০ : তখনো আমি ঘুমে
৯-৩০ থেকে ১২-৩০ : খাবার খাওয়া এবং বন্ধুদের সাথে বাইরে যাওয়া

২-০০ থেকে ৪-০০ : বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা এবং শেষে বাড়ি ফেরা

৭-০০ থেকে ১০-০০ : সন্ধ্যাকালীন আড্ডা সাথে বিড়ি, চা এবং বাড়ী ফেরা।

১১-০০ থেকে ৩-০০ : রসময়গুপ্ত পড়া এবং এর কার্যকারীতা বের করা এবং ঘুম।

ওদিকে বাবা মা মাস্টার মশাই সবাই আতংকিত হইয়া আমাকে হারিকেন দিয়া বিভিন্ন আড্ডার স্থল থেকে ধরে আনা শুরু করলেন অতপর বোঝালেন। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। আমি তো এবার ঘরেই পড়ালেখার নাম করে ঘরে দ্বোর দিয়া বিড়ি ফুকি, রসময়গুপ্ত পুরাটা মুখস্ত প্রায় শেষ করে ফেলেছি। পরীক্ষার ঠিক ১ মাস বাকী রইল, মাস্টার মশাই কোথা থেকে যেন তিনটা জালি বেত নিয়ে আসলেন যা আমি টেরও পাই নাই। পড়ার নাম করে আমার ঘরে এসে দ্বোর দিয়ে আমাকে উলঙ্গ করে মুখে গামছা বেধেঁ ইচ্ছামত তিনটা জালি বেত আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একেবারে উলে দিলেন, বিশেষ করে পশ্চাতে মেরেছেন যেন কাউকে দেখাতে না পারি। সেদিন প্রচন্ড জ্বর আসলো, চার পাঁচটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো কিন্তু কাজ হলো না, শেষ মেষ ডাক্তার ডেকে ওষুধ খাইয়ে জ্বর কমানো হলো। জ্বর সারলো পরীক্ষার বাকী ২৬ দিন। কেমন জানি বোধ উদয় হলো আমাকে পড়তে হবে, পাশ করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ কোমরে দড়ি বেঁধে নেমে পড়লাম। সবাই আমার এই পরিবর্তনে খুশি হলেন, যথারীতি পরীক্ষা দিলাম ভাল ভাবে এবং পাশ করলাম আমি যা আসা করেছি তারও বেশি। সেদিন মাস্টার মশাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।

অনেকটা সময় পেরিয়েছে আমি মাধ্যমিক, উচ্ছ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে আসলাম। এর পর ইউনির্ভাসিটিতে গেলাম, ভালই চলছিল, সবার মধ্য ভাল পড়ালেখার একটা টান টান উওজনা। তখন আমার রুটিন ছিল এই রকম

সকাল ৯-০০ : ঘুম থেকে উঠা
১০-৩০ থেকে ১-০০ : প্রতিনিয়ত ক্লাস করা
২-০০ থেকে ৫-০০ : বাসায় ফেরা এবং খাওয়া দাওয়া
৫-০০ থেকে ৮-০০ : শুধুই আড্ডা
৯-০০ থেকে ১০-০০ : বাসায় ফেরা এবং খাওয়া দাওয়া করা

১১-০০ থেকে ৩-০০ : পড়াশোনায় খেয়াল করা

কিন্তু বিধি বাম প্রেমে একবারে ডুব মারলাম, সুন্দরী আমাকে একেবারে প্রস্তাব দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো, তার জবাব চাই, কি আর করা একবারে ডুব মেরে গেলাম। তখন আমার রুটিন টা ছিল এই রকম

সকাল ১১-০০ : ঘুম থেকে উঠা
১২-০০ থেকে ৫-০০ : প্রতিনিয়ত ডেটিং করা
৫-০০ থেকে ৭-০০ : প্রেমিকাকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফেরা
৮-০০ থেকে ১০-০০ : প্রেমিকার ছোট বোন কে পড়ানো
১০-০০ থেকে ১১-০০ : বাসায় ফেরা এবং খাওয়া দাওয়া করা

১১-০০ থেকে সারারাত : ফ্রি কথা বলা

এভাবে চলছিল জীবন, বাকীটা অন্যদিন বলবো পরে কি হয়েছিল।
এখন একা থাকি, কামলা খাটি, জীবনের কোন রুটিন নাই, যখন তখন বাসার বাইরে থাকি, বইয়ের পাতাটা আর উল্টাই না। কেমন জানি খাপ ছাড়া হয়ে গেছি। এখন শুধু জীবনের সাথে লড়াই এবং তাকে আঁকড়ে ধরে রাখার একান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।

আজ মনে হয় আমার মাস্টার মশাইয়ের কথা, ওনার শাসনের কথা, বাবা মার আদর করে বোঝানো ভঙ্গি, মনে পড়ে আমার ফেলে আসা রুটিনের কথা যাকে অনেকটা সময় ফলো করে এসেছি। আজ কোন রুটিন নেই। জীবনের বাহ্যিকতাকে রুটিন ভেবে কাটিয়ে দিচ্ছি। তাই আজ বলতে ইচ্ছে করে আমার দৈনিক রুটিন তুমি ফিরে এসো। আজ মানুষ হতে চাই আজ তোমাকে ফলো করতে চাই।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

amar name ontoj. sorry name ta likte vhule gesilam...

সৌরভ এর ছবি

ভালো কথা,
পড়া হলো।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কেউ তো পড়লো! ধন্যবাদ আপনাকে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'সময় গেলে সাধন হবেনা...'
অন্তজঃ অন্যধাঁচের লেখাটা ভালো লাগলো ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।