প্রপঞ্চময় পঞ্চক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৪/০১/২০১১ - ৯:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধৈবত

নিম্নোক্ত গল্পের সমস্ত চরিত্র এবং ঘটনাই বাস্তব। কাল্পনিকতার সাথে এর সংলগ্নতা কল্পনা করা নিতান্তই অনভিপ্রেত অতিকল্পনা মাত্র


“তোদের গ্রামটা তো খুব সুন্দর।”, অনেকটা আপ্লুত হয়েই আমাকে বলল কামাল।

“সোন্দর্য, বেশি গিলিসনা, দেখেশুনে পা চালা। রাস্তায় বাচ্চা পোলাপান হেগে মুতে রাখে কিন্তু”

“এ্যাঁ, বলিস কী?”, এক দৌড়ে কামাল সটকে পড়ল, মেঠো পথ ছেড়ে পাশের ঘাসের জমিনে। তারপর গোড়ালি ঘুরিয়ে, জুতোর সোল চেক করতে লাগল। মুখে কেমন একটা বিরক্তি আর ঘেন্নার ভাব দেখলাম। বুঝতে বাকি রইল না, তার নাইকি’র মহার্ঘ্য পাদুকাপৃষ্ঠকে, গ্রাম বাংলার অজ্ঞাতকুলশীল উদার বিষ্ঠা-বর্জ্যেরা ভালই আপ্যায়ন করেছে। পরক্ষনেই সে ঘাসের উপর জোরসে জুতোর তলাটা ডলতে শুরু করল।

কামাল আমার বন্ধু, শহীদুল্লাহ হলে সে আমার রুমমেট। ও প্রাণরসায়ন আর আমি পদার্থবিদ্যায়। আমরা দুজনে খুব ভাল বন্ধুই বটে। একই সাবানে দুজনে গা মাজি, একই লুঙ্গি শেয়ার করে পরি, একই মেয়ের সাথে সে ফোনে কথা বলে, আর আমি ডেটিং এ ফেস করি- আমাদের দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া বলতে গেলে দারুন। পার্থক্য শুধু, সে খুবই ভাল ছাত্র, আর আমি খাবি খেতে খেতে বছর পার করাদের দলে। কামালকে আমার সাথে আমাদের গ্রামে নিয়ে এসেছি, গ্রাম দেখাব বলে। শহরে বড় হয়েছে বলে গ্রাম তার তেমন একটা দেখা হয়নি। আমার কাছে বেশ কয়েকবার আবদারও করেছিল সে। তাই এবার সুযোগ পেয়ে তাকে নিয়ে এলাম। উপলক্ষ, জেঠাত ভাই মনিরের বিয়ে।

বিকেল গড়ানোর আগেই আমরা বাসায় পৌছে হাজির। বাড়ি ভর্তি মেহমান, কারণ আজ গায়ে হলুদ। খুব সুন্দর করে চারদিকটা সাজানো হয়ছে। দেখলাম বাড়ির সামনে বাঁশ গেঁড়ে মোগলাই ঢংয়ে বিশাল গেট বানানো হয়েছে। আলপনা আঁকা হচ্ছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আয়োজনে বেশ ধুমধাম।

----------

সারা বিকেল ধরে কামালের সাথে বাসার সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে আমার মুখে ফেনা উঠে গেছে। ভদ্রতাসুলভ সেলাম ঠুকতে ঠুকতে হয়তো ওর হাতের গিঁটেও মরচে ধরেছে। সন্ধ্যার দিকে দু বন্ধু মিলে বাসার সামনে রাখা চোকিতে বসে আয়েশ করে চা খেতে বসলাম। আমরা দুই বন্ধুই মোটামুটি নারী লোলুপ প্রকৃতির। বাড়ি ভর্তি দূর সম্পর্কের আত্মীয়া অনাত্মীয়া অনেক মেয়েকেই দেখা যাচ্ছে, যাদের সাথে চিন-পরিচয়ও তেমন একটা নেই। একটু আঁতেল কিসিমের বলে কামাল বসে বসে- ‘গ্রামীন পরিবেশে বংগললনার সৌন্দর্য এবং কামকলার স্বরুপ’ সংক্রান্ত তাত্ত্বিক পর্যালোচনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কিছু পরেই সে আমাকে বলে, “এই, গোলাপী পাড় দেয়া হলুদ শাড়ির মেয়েটা কেরে? তোর কাজিন টাজিন নাকি?”

আমি বললাম, “গ্রামে আসলে তেমন ঘোরাঘুরি করা হয়না, আত্মীয়স্বজনদেরই ভালো মত চিনি না। একে তো কস্মিন কালে দেখেছি বলে মনে হয় না।”

“হুম, তোদের এখানকার মেয়েগুলা তো দেখি রসে ভেজা রসকদম্ব। আচ্ছা দেখত, ঐ মেয়েটা এরকম করছে কেন?”

তাকিয়ে দেখি আসলেই একটা মেয়ে কেমন জানি হাত পা ছুড়াছুড়ি করে এক তামশা জুড়ে দিয়েছে। আমি বললাম, “আসলেই তো, দাঁড়া একটু কাছে ঘেঁষে অবজার্ভ করি, চল”

দুজন মিলে একটু কাছে গেলাম। মেয়ে মানুষের ভীড়। যুবতী-তরুনীরা বরকে সাজানোর জন্য তাকে নিয়ে টানা হিঁচড়া করছে। দেখে মনে হল পাতের উপর একটা আস্ত মুরগির রোস্টকে ছেঁড়া হচ্ছে। এমন সময় সেই অদ্ভুতুড়ে- পাগলাটে মেয়েটা বোমা ফাটানোর মত একটা বলে বসল।

“কি মনির মিয়া, আঁন্নে বিয়া কইত্যে যাননি? আঁন্নের বউ বলে, আস্তা সুন্দর উগগা মাগি”

তার কথা শুনে আমি ভিরমি খেয়ে উঠলাম। আঁড়চোখে কামালের দিকে তাকালাম, দেখলাম সে মুচকি হাসছে। বদমাশ মেয়েটা নতুন আসা মেহেমানদের কাছে পুরো পাড়ার কৃষ্টি কালচারের ইজ্জত মেরে দেবে দেখি। আমি কেমন জানি একটু অবাক হয়ে দেখলাম, এই কথার পরেও পাড়ার মুরুব্বস্থানীয়া মহিলাদের তেমন একটা প্রতিক্রিয়া নেই। শুধুমাত্র আম্বিয়া খালা বলে উঠলেন, “দূর বেডি, এডি কিতা কস। দূরো এয়ান তুন”

মেয়েটা আরো কর্কশভাবে প্রতিবাদ করে উঠল, “যেইডা কইসি, ঠিক কইসি। মাগি ন তো কিতা? খবর লন গোই, বিয়ার আগে হেতির আরো দুই বেডার লগে ফিরিত আসিলো। আরো কিতা কিতা কইচ্চে কইতাম নি?”

ভীড়ের মধ্যে একটা হালকা গুনজন। আমি, আগে ভাগেই কামালকে ওই জায়গা থেকে নিয়ে সরে গেলাম। নুরুদ্দিন কাকাকে দেখলাম ছাতা নিয়ে বসে আছে। তাকে কাছে ডেকে বললাম, “কাকা, এই মেয়েটা কে। মাথায় কি তার-টার নষ্ট আছে?”

“হুম, মাইয়ার ছিট খারাপ কিনা বইলতে ফারি না বাবা, তবে লুকে বলে হেতি নাকি জ্বীন টিন ফালে। হাঁসটা(পাঁচটা) জ্বীন আছে হেতির।”

আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, “ও, তাইলে বুজছি কেইসটা। ঠিকাসে কাকা, আসি।”

কামালের দিকে এবার মুখ ঘুরিয়ে বললাম, “আমাদের রুমের ঠিক নিচের রুমে যে থাকতো, সেই শফিকের কথা কি তোর মনে আছে?”

“কে?, ওইযে, দাবি করত যে আত্মা-টাত্মা আনতে পারে, ওই ফাঁপড়বাজটা নাকি?”

“হুম, একদিন ভাওতা প্ল্যানচ্যাট করার সময়, আমি, জয়নাল আর অরুন মিলে শুয়োরের বাচ্চারে একেবারে হাতে নাতে ধরেছিলাম। পরে ওকে সাইজ করার ভার ছাত্রসমিতির লীডার কাসেম ভাই’র কাছে ছেড়ে দেই। এখনতো কই সেই আত্মা, কই অশরীরি; ব্যাটায় তো তাবলীগেই চলে গেল।”

“হুম, আমিও জানি।”, সায় দিল কামাল-“আমার মনে হয় এই মেয়েও এইরকম কেস।”

আমি জোর দিয়ে বললাম, “নয়তো কী, এই গ্রামের রামভোদাই গুলোকে আরো ভোদাই বানাচ্ছে সে। যাওয়ার আগে এই হতচ্ছাড়িকে টাইট দিয়েই যেতে হবে।”

----------

আরো ঘন্টা দুই পরে আমি, কামাল আর পাড়ার পুরোনো বন্ধু তারেক মিলে আজিজুল্লা’র চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি। তারেক এই গ্রামের ছেলে হলেও পড়াশুনার জন্য থাকে জেলা সদরের দিকে। তার কথাবার্তার ধরনও এখানকার সাথে মেলে না। কামালের সাথে তারেকের বেশ জমে গিয়েছে দেখলাম। তারেক একটা সিগারেট ধরিয়ে দিব্যি টানছে। কামালের যদিও অভ্যাস নেই, সে কোনরকমে কটমটে বাংলা বিড়ির গন্ধ সয়ে নিচ্ছে।
হঠাত দেখলাম সেই মেয়েটা দোকানের সামনে এসে হাজির। আজিজুল্লাকে, ঠেসে চুন দিয়ে এক খিলি পান বানিয়ে দিতে বলল সে। আমি মেয়েটাকে ভাল করে চেয়ে দেখলাম। খেয়াল করলাম, তার বয়েস সতেরো আঠারোর বেশি হবে না। একটা শাড়িকে ভাল মত কয়েকপাক পেঁচিয়ে পরেছে সে। শরতচন্দ্রের ‘বিলাসী’ পড়ার সময় তার বসন-ভূষন কল্পনায় যেরকম ভাবে গড়ে নিতাম, অনেকটা সেরকম। দোকানের সামনে বাল্বের মিনমিনে আলোতে লক্ষ্য করলাম ওর গায়ের রংটা বেশ ফর্সা, এমন গাঁও গেরামের সর্বসাধারণ শ্রেণীতে এ ধরনের ফর্সা মেয়ে খুব একটা দেখা যায়না। আর চুলের রংটা লালচে আর রুক্ষ ধরণের। দীর্ঘদিনের তৈলমর্দনের অভাব আর অযত্নের কারনে হয়তো এরকম রুপ নিয়েছে। মেয়েটা বোধহয় ভয়াবহ পানখোর। পানের রস ঠোঁটজুড়ে লেপ্টে একটা অশ্লীল রকমের লালবর্ণ ধারন করেছে।

এইবার আমার মাথায় সেই সন্ধ্যে বেলার প্রসংগ এসে পড়ল। মেয়েটা আমাদের বাড়িতে একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরী করেছিল। আমি আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“এই ছেঁড়ি, তোর নাম কি?”

হন্তদন্ত হয়ে সে আমার দিকে ফিরল। মুখে একটা মশকরার ভাব। ভ্রু-কপাল কুঁচকে, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ফাজলামির আমেজ নিয়ে আমার দিকে তাকালো সে, যেন আমি তার বেয়াঈ গোছের কিছু। বিদ্রুপাত্মক ভাবে বলল,“আঁর, নাম দি আঁন্নের কিতা?”

“বেশি কথা বাড়াইস না ছেঁড়ি, নাম কি সেইটা বল”

এইবার আবার তার মুখে তাচ্ছিল্যের ভাব। “উহ, আঁর নাম জরিনা, এইবার কাম হইসে নি আঁন্নের?”

“তুই নাকি জ্বীন পালিস?”

মেয়েটার মুখে একটা লাজুক হাসি, “হুম, হাঁসগা(পাঁচটা)”

“ওদের নাম, কি কি?”

“হেতেরা হাঁস ভাই। রামকান্ত, হরিকান্ত, কিশনো কান্ত... ”

“ওই দাঁড়া, দাঁড়া। সব হিন্দু কেন?”

“ওমা আঁই কি কইত্যাম? হেতেগোর ধরি আগা কাডি, মোসলমানি করি দিতাম নি?”

তার জবাব শুনে আমি একটু আড়ষ্ট হয়ে পড়লাম।“ঠিকাছে, তা মোসলমানি করানোর দরকার নাই। জ্বীনের আগা কাটা বিরাট ঝামেলার কাম। তুই মেয়ে মানুষ পারবি না।...আচ্ছা জ্বীন গুলার কারণে নাকি তোর অনেক পাওয়ার। তুই নাকি আগে ভাগে অনেক কথা ঠিকঠাক বলে দিতে পারিস?”

মেয়েটা হাসিমুখে মাথা নাড়ল এবার

আমি একটু বিনয়ী ভাবে বললাম, “দেখি বলত, আমি কেমন।”

মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। মুখে এখনো একটা মশকরার ভাব। তারপর স্মিতমুখেই বলল, “আঁন্নে আস্তা লাফাংগা টাইফের”

দেখলাম পাশে কামাল, তারেক সবাই ফিচকে একটা হাসি দিয়ে উঠল।

“মানে, কি বলতে চাস তুই?”, আমি কটমট করে তাকালাম তার দিকে।

“কি আবার, আন্নে আস্তা লুইচ্চা অ্যারি(আরকি)। মাইয়া মাইনশেরে দেইখলে আঁন্নের শইলে কিলবিলানি উডি যায়।”

আমি এবার সেইরকম ভাবে ক্ষেপে গেলাম। “শুন, জ্বীন- টিন নাকি ফাইজলামি?? এইখানকার মানুষরে পট্টি দিয়া ভাব নিলেও আমার সাথে এইসব টালটি বালটি করে পারবি না। তোরে আমি এইখানে থাকতে ফের যদি পাড়ায় দেখি, তাইলে থাপ্পড় দিয়ে পাঁচটা জ্বীনরে একলগে ঘাঁড় থেইকা নামাইয়া দিমু।.....হুহ, উনি পাঁচ পান্ডবের দ্রৌপদী হয়েছেন।”

মেয়েটা একটু মুখ কাঁচুমাচু হবার ভান করল। তবে এখানেও সেই মশকরারই ভাব। তারপর জিহবা বের করে আমাকে ভেংচি কেটে, এক খিলি পান মুখে পুরে অনেকটা নাচতে নাচতে বিদায় হল।

“হুম, মেয়েটা তো তোর প্রেমে পড়ে গেলরে মনে হয়।”, কামালের কন্ঠে একটা ইতর সুর

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “কি বলতে চাস”

কামাল বলে, “নাহ। মেয়েটা তোর সম্পর্কে কিছু ভুল বলেনি। তবে পুরা সময় জুড়ে তোর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল মনে হল দেওয়ানা। দেখ, মেয়ের বাপ মায়ের খোঁজখবর নিয়ে ওরে বিয়ে করে ফেল। একসাথে পাঁচটা অশরীরি বডিগার্ড পাবি”- বলেই কামাল, সাথে তারেকও হাসিতে অস্থির।

“হুম, তোর ইচ্ছা হলে তুই বিয়ে করে ফেল। আর কষ্ট করে আঁতলামি করতে হবে না। জ্বীন গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে দিবে।”

এবার তারেক বলল, “এই মাইয়ারে এইভাবে ঝাড়ি দেয়া তোমার উচিত হয় নাই মিয়া”

“কেন?”

“না মানে জ্বীন ভূতের ব্যাপারতো। দুনিয়াদার মাইনষের এইসব থেকে আলগা থাকনই ভালা”
বুঝতে পারলাম এই বাতিকগ্রস্থ মেয়েটাকে তারা গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছে। আমিও মজা করতে ছাড়লাম না, “শুন মিয়া, এইসব জ্বীন ভূত থেইকা সেইফ থাকার একটা সিস্টাম আছে।”

“কি?”

“ইউরোপের প্যারানর্মালিস্টরা গবেষনা কইরা দেকসে, জ্বীন ভুত নাকি অ্যামোনিয়ার গন্ধ সইতে পারে না। যদি দেখ ইয়া বিশাল দাঁড়ি অলা জ্বীন রাইত বিরাইতে তোমার রাস্তা আটকাইয়া দাঁড়াইসে, তাইলে প্যান্ট খুইলা, অস্ত্র বাইর কইরা ডাইরেক ছিরছিরাইয়া মুইতা দিবা। তাইলেই দেখবা মাদার্চোদে ভাগসে”

দেখলাম তারেক দ্বিধাগ্রস্থ, আমাকে গ্রামের সবাই বিজ্ঞানমনস্ক আর যুক্তিবাদী জানে, আমিও আমার খ্যাতির সম্যক সুবিধাই পেলাম এ জায়গায়। “এঁ, কথা কি সইত্য?”, বলল তারেক

“কতটুক ঠিক জানিনা। একটা বিদেশি জারনালে পড়সিলাম। তুমি যদি সুযোগ পাও, তাইলে এই জরিনা বিবির সামনে যেমনে কইসি হেমনে ট্রাই মাইরা দেইখো।”

তারেক চুপসে গেল। মুখে একটা পানসে হাসি। পাশে তাকিয়ে কামালের ভাবগতিক দেখে মনে হল ঢাবি’র হনেওয়ালা এই গ্রাজুয়েটও ব্যাপারটা যতকিঞ্ছিত বিশ্বাস করেছে। এই ফাঁকে আমি একটা বিড়ি ধরালাম।

----------

পরদিন দুপুরের দিকে চারদিকটা ঘুরেটুরে দেখছি। কাল রাতের গায়েহলুদের রং মারামারি, হৈহুল্লোড়, বাদ্যবাজনা, সবকিছু মিলিয়ে চারপাশ অনেক নোংরা হয়ে আছে। সকাল থেকেই সর্বাত্মকভাবে ঝাঁটানো এবং পুনর্বার সাজানো চলছে পুরা উঠোন। সাথে আজ রাতের বিয়ের খাওয়াদাওয়া পাকানো। এই ফাঁকে সাদেক আর তারেক এসে আমাকে পেয়ে বসল।

“মিয়া গেরামে আইলা এতদিন পর। চল, রাইতে খানাদানার পর গতবার যেইটার কথা বইলা গেসিলা, সেইডা তোমারে খাওয়ামু”, বলল তারেক।

আমি একটু অপ্রস্তুত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, “গতবার কিসের কথা বলছি ঠিক মনে নাই।”

তারেক খানিকটা কাছে এসে নিচু গলায় বলল, “আরে কইলা না, যে তাড়ি খাইবা।”

“অ, হুম বলসিলাম মনে হয়।” কামাল আমার পাশেই। আমি ওর দিকে সামান্য তাকিয়ে আবার তারেককে বললাম। “কিন্তু এবার না। সাথে কামাল আছে। ওকে রেখে অন্য কোথাও আড্ডায় যাওয়া যাবে না, মাইন্ড করতে পারে।”

“আরে দরকার হইলে ওরেও নিয়া যাইবা। ওরেও একটু খাওয়াই দিমু।...কি কন ভাইজান”, কামালের দিকে তাকিয়ে বলল তারেক। “আপনে না গেলে আমরা খুব গোসসা করুম”

কামাল মুচকি হাসে, তারপর বলে, “ঠিকাছে, আমার সমস্যা নাই”

আমি কামালের দিকে সামান্য অবাক হয়ে তাকালাম। “যেই ছেলে জীবনে একটা সিগেরেটের পুচ্ছেও চুমা দেসনাই, তুই কিনা যাবি মদ-তাড়ির আড্ডায়।”

“সমস্যা নেই। দেখিনা, একদিন শুধু মাত্র”

আমার যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না। নিয়মিত সিগারেট, আর কালেভদ্রে বন্ধুদের আড্ডায় গাঁজা ধরালেও অ্যালকোহলিক কোন কিছু খাওয়ার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। হয়তো গতবার গ্রামের ছেলেদের সামনে ভাব নেওয়ার জন্যই বলেছিলাম, যদিও এখন ভালভাবে মনে নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কামালের সম্মতিক্রমে রাজি হয়ে যেতে হল।

রাতটা ছিল বিয়ের রাত। গ্রামের দেশে যে বিয়েতে ব্যান্ড পার্টি বাজানোর রেওয়াজ আছে জানতাম না, ছোট থাকতে যেসব বিয়ে খেয়েছি সেখানে তেমন ধুমধাম হয়নি, এটায় যতটা হচ্ছে। মনির ভাইয়ের নতুন শ্বশুর বাড়ি ঠিক দুগ্রাম পরে বলেই ওখানে তাড়াতাড়ি বরযাত্রীর সাথে পৌছে গেলাম। আমাদের খাওয়া দাওয়া তাড়াতাড়িই শেষ হল। এরপর নববধূ দর্শন পর্ব। ভাবি সুন্দরী, আসলেই। একজন সুন্দরীর দেবর হয়ে খুবই গর্বিত হলাম। তারপর, সেখান থেকেই আমি, কামাল, সাদেক সহ আরো কয়েকজন মিলে রওনা দিলাম কান্দিরঘাট বাজারের দিকে। পাঁচ দশ গ্রামের সব ছেলেপুলেদের আড্ডাখানা ওইটা। তবে কনের বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় একটা কানাঘুঁষা ঠিকই কানে এল। ভাবি যখন চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়ত, তখন নাকি কয়েকজনের সাথে তার প্রেম ছিল।

----------


(বাইচ্চারা কুফি-বাত্তি নিভাই ঘুমাই ফড়, বাকি গফ ফরে আরেকদিন কমু....)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়লাম। পুরোটা পড়েই না হয় মন্তব্য করি চোখ টিপি

---আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

উপ্রে লিখা "যুবা", অহন আবার "বাইচ্চা" কইয়া বুলাইতাছে !! ঘঠনা কী চিন্তিত
যাইহোক, গুমতো আইয়ে নাহ্‌ ভাইডি... কফ ঝারি বাকী গফ কন... হুন্তাম ছাই...

"চৈত্রী"

অতিথি লেখক এর ছবি

'বাইচ্চা' অলা লাইনের পর একটা এই দেঁতো হাসি ইমু দেওনের কথা আছিল, দিতাম ভুলি গেছি। দেঁতো হাসি
ধন্যবাদ 'চৈত্রী'

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

এইরকম মুখরোচক খাবার খাওয়ার মাঝখানে খাবার কেড়ে নেওয়া কি ঠিক??? মন খারাপ

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

খাবার কেড়ে নেওয়ার কি হল। আমি কালো হতে পারি, কিন্তু কাউয়া না মন খারাপ
অতীত দা কে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
ধৈবত

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চা খেতে গেলে কি আর চলে ?? দ্রুত ছাড়িস পরেরটা...

গল্পটার গতি আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চা'টা ভারি রসালো গুড় দিয়ে বানিয়েছেরে। এখন শুধু রস-রস মার্কা কথা আসে দেঁতো হাসি

ধৈবত

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বর্ণনা বেশ সাবলীল! চলুক!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, পান্থদা

ধৈবত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

চানপুইরা নাকি কুমিল্যার কাহিনি? চিন্তিত

ভালো লাগলো গল্পের ধরন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আঞ্চলিক ভাষাটা বৃহত্তর কুমিল্লা-নোয়াখালি, এমন কিছু একটা হবে আরকি দেঁতো হাসি । তবে ফনেটিক্যাল্লি- পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে এই ধরনের দক্ষীনবঙ্গীয় আঞ্চলিক ভাষা তুলে ধরতে গেলে একজন গড়পরতা বাংলাদেশীর অর্থোৎঘাটনে অসুবিধা হতে পারে, তাই একটু লঘু রাখার চেষ্টা করেছি।এ ব্যাপারে, উপদেশ থাকলে বলবেন। ধন্যবাদ

ধৈবত

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে, যত নষ্ট-দুষ্ট ছেলেপিলেরা!

গল্প বেশ হচ্ছে, চালিয়ে যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কৌস্তভদা
কৌস্তভদা কি ওপারবাংলার নাকি। একবার কোন এক চ্যানেলে এক ওপারবঙ্গীয় 'কামরাঙ্গিত' এক ফ্যাশন মডেল দেখেছিলুম নাম- কৌস্তভী। আপনি কী তার পুংলিঙ্গ দেঁতো হাসি ?

ধৈবত

কৌস্তুভ এর ছবি

কৌস্তভ বানানটা ভুল। ঠিকটা হল উ-সম্বলিত কৌস্তুভ। আর হ্যাঁ, তার স্ত্রীলিঙ্গই হবে কৌস্তুভী, তবে প্রপার নাউনের আর পুং-স্ত্রী কী হবে?

হ, কলকাতার বাবুমশায়, ভায়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌসতুভ (কৌস্তুভ) দেঁতো হাসি দা। চলুক

আর হ্যাঁ, তার স্ত্রীলিঙ্গই হবে কৌস্তুভী
, আমি যেই অর্থে আপনাকে এই প্রশ্ন করেছিলাম এটা যদি সেটার উত্তর হয় তাহলে তো দেঁতো হাসি । যাই হোক এখানে যেহেতু আমার দোস্তেরা আছে (অদ্রোহ, সুহান, আশফাক)ফলে প্রায়ই একটু ঠাট্টা মশকরার মুডে থাকি। তাই সব প্রশ্নকেই আক্ষরিক অর্থে নিয়ে ফেলবেন না যেন দেঁতো হাসি

ধৈবত

কৌস্তুভ এর ছবি

আমারও আপনার মত খানকয় স্মাইলি দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল উত্তরের সাথে, তাহলে আমাকে সিরিকাস বলে ভেম করতেন না। দেঁতো হাসি

অদ্রোহ এর ছবি

গল্প খাসা হয়েছে, তবে জরিনা বিবির চরিত্রটাকে আরেকটু ফেনিয়ে তুললে কাহিনিটা আরো জম্পেশ হয়ে উঠতে পারত মনে হয়। আর শেষটা বড্ড হুট করে হয়ে গেছে, অন্তত মাঝের দুর্দান্ত ব্যপ্তির কথা মাথায় রেখে তো বটেই।

বলি মশাই, সামনে যে সম্ভাব্যতা-বণ্টনতত্ত্ব বিষয়ক গ্যাঁড়াকল আছে, সে খবর রাখেন তো? দেঁতো হাসি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

সম্ভাব্যতা-বণ্টনতত্ত্ব? দেঁতো হাসি

অদ্রোহ এর ছবি

আজ্ঞে হ্যাঁ কৌস্তুভদা। তবে লোকেমুখে শুনলাম, এ নিয়ে আপনি নাকি বেশ এলেম রাখেন? দেঁতো হাসি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কৌস্তভদা, চট করে বিচিন্ত'ত হবার মতো এক্ষানা পোস্ট ঝেড়ে দিন। বিষয় হবে নালাইপোথিসিস আর এক্মুখীপরীক্ষা এইসব বালখিল্য তত্ত্ব।

আমি আর অদ্রোহ অন্ততঃ সে পোস্ট যাকে বলে অভিনিবেশ সহকারে পড়বো। পেছনে আগুণ লেগেছে কী না দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

এলেমটেলেম সব গুজব, নেহাত ওসব নিয়েই পড়তে হয়...

সুহান ভাই, আপনারা দুইজনে এদিকে চলে আসেন। চা-টা'এর সাথে ভাল করে নালহাইপো'র মুন্ডপাত করা যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্ভাব্যতা বন্টন তত্ব, ও তো উচ্চমাধ্যমিকেই ছিঁড়েকুড়ে খেয়ে এসেছি চোখ টিপি চোখ টিপি
আর হ্যাঁ "ফেনিয়ে তুললে", "হেনিয়ে তুললে", এসমস্ত দুর্বোধ্য ভাষায় সমালোচনা করবি না, ওসব ভাষা না হয় পোশটানোর জন্য রেখে দিস। একেবারে সহজ সরল ভাষায় প্রয়োজনে উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দিস পারলে দেঁতো হাসি

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

রোসো ব্যাটা, আমারে বাকি গফ ক ! বাত্তি নিভাই দিলুম, আন্ধারেই ক !
তোমার ভক্তের সংখ্যা আরো এক বাড়লো।
দারুণ ভাষা। আগের রচনাগুলো থেকে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি রিভার্সাল !

সাত্যকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধুর মিয়া, চলচিত্রকার আশফাকেন পল্টসবার্গ এর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিগুলোতে সবসময় আঁতেল টাইপ রোল কর, ১৮০ডিগ্রী অ্যাংগেলের মারপ্যাঁচ কষে এইখানেও গণিত জুড়ে দিলা। খেলুম না, খেলুম না দেঁতো হাসি
ধন্যবাদ

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

জয়, লগারিদম গণিতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা, কী বলো?

---আশফাক আহমেদ

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।