সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার:: ধর্ম ও জিরাফের উদ্ভট কোলাজ-১

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ২৪/০৩/২০০৮ - ৬:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো ঝাঁঝালো আলোচনার মধ্যে একটি ছিল সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা বিষয়ক সরকারী প্রস্তাবনা ।
স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন নারী এবং পুরুষগন এই প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন । স্বাগত না জানানো কোন কারন নেই ।

অপরদিকে সংগঠিত ইসলামিক দলগুলো,আলেম,মোল্লা, ইমামগন এই প্রস্তাবনা্র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে প্রতিহত করার জেহাদী ডাক ও দিয়েছেন । জরুরী অবস্থার মধ্যে তারা হাজারে হাজারে/লাখে লাখে সমবেত হয়ে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন । তাদের প্রতিবাদ না জানানোর ও কোন কারন নেই ।

এই দুই বিপরীত পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষের অবস্থান আমার কাছে স্পষ্ট,সাবলীল ও আন্তরিক মনে হয়েছে । এরূপ মনে না হওয়ার ও কোন কারন নেই আসলে ।

প্রথম পক্ষীয়গন-বাংলাদেশের স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন নারীসকল ও পুরুষগন,অনুমান না করার কোন কারন নেই যে তাদের প্রায় সকলের ইসলাম ধর্মে প্রতীতি আছে । তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মের সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু 'আমি মুসলমান নই',-এরকম উচ্চারনের সাহস কিংবা ইচ্ছে কোনটাই তাদের নেই ।
অন্যসব ধর্মের মতো চরিত্রগত ভাবে ইসলাম ও বাইনারি নাম্বারের মতো । ০ কিংবা ১ । হ্যাঁ অথবা না । পূর্ন সমর্থন কিংবা পুর্ন অবিশ্বাস । যতোটুকু বুঝি-'মহিমায় আছি,গ্লানিতে নেই' এরকম আধাখেঁচড়া সুবিধাবাদী প্রেমিকের স্থান ধর্মে নেই । ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো সিরিয়াস কারন এই ধর্মটা সবচেয়ে আধুনিক(সময়ের বিচারে) এবং স্ট্রাকচারড । তার লিখিত সংবিধান কোরান শরীফ,যার প্রতিটি বাক্য বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়া মুসলমান হবার অন্যতম প্রধান শর্ত ।

এই সংবিধানে মুসলমানদের পারলৌকিক বিষয় আশয়ে র পাশাপাশি ইহলৌকিক জটিলতা বিষয়ে সমাধান দেয়া আছে-নিজেকে মুসলমান দাবী করা প্রতিটি নারীপুরুষ এই সমাধান মেনে নিতে বাধ্য যদি না তিনি নিজেকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত ঘোষনা করেন । সম্পদের বন্টন সম্পর্কে ও কোরানের নির্দেশ সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন । বলা হয়েছে কোরানের অনেক আয়াতই এবসার্ড,ধরে নিতে পারি ঐ আয়াতগুলো ফিলোসফিক । আইন-কানুন,বিধিবিধান বিষয়ক নীতিমালা তো আর এবসার্ড হতে পারেনা ।
যাই হোক, সম্পত্তি বন্টন বিষয়ক কোরানের বিধান কি রকম?

সুরা নিসা আয়াত ১১:
আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তোমাদের সন্তানসন্ততি সম্পর্কেঃ এক ছেলে পাবে দুই মেয়ের অংশের সমান;
যদি দুই মেয়ের বেশী থাকে তবে তারা পাবে যা সে রেখে গেছে তার দুই-তৃতীয়াংশ,আর যদি একে মেয়ে থাকে তবে সে পাবে অর্ধেক,আর তার যদি সন্তান থাকে তবে তার পিতামাতা প্রত্যেকে পাবে তার ছয়ভাগের একভাগ,কিন্তু যদি তার সন্তান না থাকে,শুধু পিতামাতা তার উত্তরাধিকার হয় তবে তার মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ; কিন্তু যদি তার ভাইয়েরা থাকে তবে তার মা পাবে ছয়ভাগের একভাগ,মৃত ব্যক্তির অসিয়তের দাবি বা ঋন পরিশোধের পরে ।
তোমাদের পিতামাতা ও তোমাদের সন্তানরা,তোমরা জানোনা এদের মধ্যে কে তোমাদের উপকারের দিক দিয়ে বেশী আপন । এ আল্লাহর বিধান । আল্লাহ সর্বজ্ঞ তত্বজ্ঞানী ।

সমবন্টনের প্রতিবাদকারী মুসলিমদের প্রতিবাদকে আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় ঠিক এই পয়েন্টে । আল্লাহর বেঁধে দেয়া বিধি-বিধান নিঃশর্তে মেনে নেয়ার অংগীকার করেই তো মুসলমা হওয়া । তো সেই বিধি-বিধান আমার নিজস্ব বিবেচনায় অন্যায্য মনে হলে ও তা লংঘনের কোন সুযোগ কি ধর্ম তার অনুসারীদের দিয়েছে?

যারা সমবন্টনের দাবী করেন কিংবা দাবীকে সমর্থন করেন তাদের কি এই সাহস কিংবা সুযোগ আছে আদৌ যে স্পষ্ট করে বলা- কোরানের এই বন্টন ব্যবস্থায় অন্যায্য,অন্যায্য বলেই আমরা মানিনা । এই বলার পর আবার সেই কোরানের ধর্মে নিজেকে স্থিত করাটা কতোটুকু নৈতিক?

এ ছাড়া ভেবে দেখা জরুরী-আজকের পৃথিবীতে ধর্মের বিধান না মানলে ও চলেকিন্তু রাষ্ট্রে বাস করতে হলে রাষ্ট্রের বিধান তো মানতেই হবে ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিধানই তো প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্য করে কোরানের বিধান মানতে । রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা বাদই দিলাম- রাষ্ট্রীয় মুল নীতির একটা যে -'আল্লাহর উপর পুর্ন আস্থা'
আল্লাহর উপর পুর্ন আস্থা রেখে তার বিধিবিধান বিনাপ্রশ্নে না মানলে তো আপনি রাষ্ট্রের মুলনীতিকে ই অস্বীকার করলেন । সে আপনি জনাব হাসান মোরশেদই হোন কিংবা শ্রী রাধামাধব ব্যানার্জীই হোন ।
এই পুন্যভূমে জন্মলাভের মাহেন্দ্রক্ষনেই তো আপনি নাকে খত দিয়েছেন আল্লাহর উপর পুর্ন আস্থা রাখবেন ।
তো?


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

প্যারাডক্স কারে কয়! হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হে হে হে ! দেঁতো হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সুমন চৌধুরী এর ছবি




ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

তানভীর এর ছবি

পোস্টের সাথে সহমত এবং দ্বিমত দুটোই। আমার মতে যদি সুষ্ঠুভাবে মেনে চলা হতো, তবে কোরানের বিধানখানাই ছিল সবচেয়ে যৌক্তিক। কিন্তু ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই’- আমাদের দেশে ইসলাম তো এইভাবেই মানা হয়। তাই আইন করে নারীকে যে সমান সম্পত্তি দেয়া হচ্ছে, এটার প্রয়োজন আছে বলেই আমি এটা সমর্থন করি এবং তাতে আমার মুসলিম পরিচয় এতটুকু ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করি না। তবে কেন আমি কোরানের বিধান যৌক্তিক মনে করি, তার ব্যাখা নীচে দিচ্ছি।

একজন পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে শুধুমাত্র পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকেই অংশ পায়। অন্যদিকে একজন নারী সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার কাছ থেকে, স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। সবগুলো অংশ যোগ করলে নারীর অংশের সম্পত্তি, পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া পুরুষের অংশের সম্পত্তির চেয়ে বেশীই হওয়ার কথা।

এছাড়া আমাদের সমাজে পুরুষকেই এখনো সংসারের ভার টানতে হয় (অর্থনৈতিক দিক থেকে), বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতার দেখাশোনা করতে হয়। বিয়ের পর মেয়েদের পিতা-মাতার সংসারের প্রতি কোন সামাজিক দায়িত্ব বা চাপও থাকে না। খুব কমই দেখা যায়, বিয়ের পর একটা মেয়ে পিতা-মাতার সংসারের হাল ধরে রেখেছে, কর্মক্ষম ভাই থাকার পরও। বৃদ্ধ হয়ে গেলে পিতা-মাতা সামাজিক কারণেই মেয়ের সংসারে থাকার চেয়ে ছেলের সংসারে থাকতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কাজেই বৃদ্ধ পিতা-মাতা শেষ বয়সে নিজের সুবিধার জন্যই ছেলেকে যদি নিজ সম্পত্তির বেশী অংশ দেন (কোরানের বিধান মতে) এবং কন্যার যেখানে সম্পত্তি পাওয়ার আরো উৎস থাকছে, তবে তা কিভাবে বৈষম্যমূলক হয় আমার বোধগম্য নয়।

তবে ক্ষেত্রবিশেষে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে। যেমন কোন মেয়ের যদি কোন কারণে বিয়ে না হয়, তবে তার তো স্বামী বা সন্তানের ভাগের প্রশ্নই আসে না। সেক্ষত্রে সে কি বৈষম্যের শিকার হবে? এর সমাধানও ইসলামসম্মতভাবেই করা যায়। একজন ব্যক্তি তার সম্পত্তির তিন ভাগের এক অংশ যে কাউকে কোন প্রশ্ন ছাড়াই দান করতে পারে। এক্ষেত্রে সে তার কন্যাকে সম্পত্তি বন্টনের আগেই ১/৩ অংশ দান করে দিতে পারে। বাকী সম্পত্তি বন্টনের পর কন্যার মোট অংশ যোগ করলে, তা পুত্রের মোট অংশের চাইতে বেশীই হবে।

দানের কথা যখন আসল, তখন একটু আধুনিক পশ্চিমা আইনের কথাও বলি। ইসলামমতে, পুত্র-কন্যাকে বঞ্চিত করে কোন ব্যক্তি তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান করতে পারে না। যদি একান্তই দান করতে চায় তবে সর্বোচচ ১/৩ অংশ দান করতে পারে। অপরদিকে, পশ্চিমা আইন অনুযায়ী আপনি উইল করে আপনার সমস্ত সম্পত্তি তৃতীয় কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিতে পারেন; পুত্র-কন্যার অধিকার রক্ষার কোন ব্যাপার নাই। কোরানের বিধানমতে পুত্র কেন বেশী পেল, কন্যা কেন কম পেল, এটা কি বৈষম্যমূলক- ইত্যাদি নিয়ে অনেককে সোচচার হতে দেখা যায়। অন্যদিকে পশ্চিমা আইনে যে পুত্র, কন্যা সবাইকে বঞ্চিত করে রাখার সিস্টেম চালু আছে- এটা বৈষম্যমূলক কি না এটা নিয়ে কাউকে কখনো উচচবাচ্য করতে শোনা যায় না। কোরানমতে পুত্র-কন্যা কত ভাগ পাবে সেটা তো পরের ব্যাপার- আগে না হয় পশ্চিমা আইনে পুত্র-কন্যা আদৌ সম্পত্তির নিশ্চিত অধিকার পাবে কি না সেটা নিয়েই কিছু শুনি আগে! চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

"অন্যদিকে একজন নারী সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার কাছ থেকে, স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। "

- একটা বড় অনুমান রয়ে গেছে এর মধ্যে সেটা খেয়াল করেছেন কি? মেয়েকে বিবাহিত ও সন্তানের জননী হতেই হবে। কুমারী মেয়ে মারা গেলে তার সম্পত্তির সূত্র থাকছে শুধু বাবা-মা।

এক্ষেত্রে সে তার কন্যাকে সম্পত্তি বন্টনের আগেই ১/৩ অংশ দান করে দিতে পারে।

-স্বেচ্ছায় ভাগ করতে চাইলে যেকোনো আইনেই তাকে বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রেই সমস্যাটা আসে। আর এতেও গণিত কষে দেখুন, এক ব্যক্তির ১ ছেলে আর ৫ মেয়ে হলে ঠিক কি হয়। আমার গুলিয়ে যাচ্ছে।

"অন্যদিকে পশ্চিমা আইনে যে পুত্র, কন্যা সবাইকে বঞ্চিত করে রাখার সিস্টেম চালু আছে- এটা বৈষম্যমূলক কি না এটা নিয়ে কাউকে কখনো উচচবাচ্য করতে শোনা যায় না। "
- এটা আমি কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক বলে মনে করি না। আমাদের দেশেও আপনাদের মতই ছেলে-মেয়েকে একটা অংশ বাবা-মা দিয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু এর ফলে ছেলে-মেয়ে কুলাঙ্গার হলেও বাপের সম্পত্তির ভাগিদার হয়। এই আইন পালটানোর দাবি অনেকদিনের। বরং পশ্চিমা আইনের কারণই যুক্তিযুক্ত, এতে সম্পত্তির মালিকানা মালিক ঠিক করে দিয়ে যায়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি সবথেকে ভাল সিস্টেম কার্ল মার্ক্সের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতেই আছে। ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি রাষ্ট্রের কাছে ফেরত যাবে। দুঃখের বিষয়, এই ব্যবস্থা কার্যকর করা কঠিন, মানুষের স্বাভাবিক অপত্যস্নেহের কারণে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তানভীর এর ছবি

আপনার সাথে আমি একমতই বলা যায়। আসলে বুঝাতে চেয়েছি কোরানের বিধানখানা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক নয়, যেটা এখন অনেক জায়গায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে এভাবেই প্রচারিত হচ্ছে। পশ্চিমা আইন নিয়ে আমারো কোন সমস্যা নাই; কিন্তু যারা কোরানের বিধানে নারী-পুরুষ সন্তানের সমানাধিকার নিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে, পশ্চিমা আইনে সন্তানের অধিকার নিয়ে তাদের কি অভিমত সেটাই শুধু জানার ইচ্ছা। ব্যক্তিগতভাবে আমিও মনে করি ব্যক্তির মৃত্যুর পরে রাষ্ট্র সব সম্পত্তি নিয়ে নিলে সম্পত্তি নিয়ে এত কোন্দল হত না।

বজলুর রহমান এর ছবি

ভোটার ফর্মে ধর্ম ছিল না কি ? খেয়াল করি নি তো ! বহু বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময়ে ফর্মে লিখেছিলাম ঃ লিবেরাল হিউম্যানিজম। পরে দেখি প্রোভস্ট সাহেব কেটে "ইসলাম" লিখে দিয়েছেন।

আইয়ুব খান সাহেবকে আমরা আম-জনতা যেমন গাল দি (স্বৈরাচারী, বাঙ্গালীকে "মচ্ছর" বলা আদমী হিসাবে), এ কথাটাও সত্যি যে একমাত্র এই লোকটাই (স্যান্ডহারস্টে যিনি ভারতীয় সেনাপতি মানেকশর চেয়ে ভালো ছাত্র ছিলেন) ইস্লামী শরীয়া আইন কিছু পরিবর্তন করে মুস্লিম ফ্যামিলী ল তৈরী করার সাহস দেখিয়েছিলেন, এবং সেজন্য এখনকার মৌলবী সাহেবরাও তাঁর ওপর মহাখাপ্পা। নতুন আইনে শুধু বহু বিবাহের আগে পুর্ব স্ত্রীর অনুমতির ব্যাপার ছিল না, সম্পত্তি ভাগের বিষয়েও কিঞ্চিৎ মানবিক পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যেমন এতিম ছেলেমেয়েরা দাদা-নানার সম্পত্তি থেকে আর বঞ্চিত হয় না, যদিও কোরান তাই বলে।

আমার ইসলামী শরীয়া আইনে অতি বিশ্বাসী বন্ধুদেরকে এক ঢিলেই সাধারনত কুপোকাত করি। আচ্ছা, কোরানে ছেলের অবর্তমানে এক মেয়ে থাকলে আধা পাবে এবং দুইএর অধিক থাকলে ২/৩।, কিন্তু দুজন থাকলে কি হবে বলা নেই কেন? বন্ধুরা অবাক হয়ে বলেঃ কেন এটা ত স্পষ্ট দুই থাকলেও ২/৩। আমি মাথা নাড়িঃ এই অমিশনটা আল্লাহ তা'আলার মত পার্ফেক্ট এন্টিটির কাছে আশা করি নি। তারা বিরক্ত হয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে না।

কার এখন সেই সাহস আছে স্বাধীনতা দেবার আইন করার - ইচ্ছে করলে শরীয়া আইনে দেব, নাহলে ছেলে মেয়ে দুজনকেই সমান। শুধু মেয়ে থাকলে তারাই পাবে (স্ত্রী ও জীবিত পিতামাতার সাথে) ১০০%, আমার ইছানুযায়ী অনুপাতে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

নারী সকলের কাছেই বিষয়। হুজুরদের ইসলামি হুজরামি আর এনজিওদের পশ্চিমা বাজারি এনজামি_কোনদিকে যে যাই।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

লোকে রাজা রামমোহন রায়ের সময়েও একই কথা বলত। ভেবে দেখুন রামমোহনের আমল থেকে আজ পর্যন্ত কোন দিকে গেছে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার স্বল্প চিন্তাশক্তি থেকে এটুকু বলতে পারি, ব্যবস্থা বা আইন টা এমন হওয়া উচিত না যাতে সব
পরিস্থিতিতে সব নারীই সমান সুযোগটা পায়?
-নিরিবিলি

দিগন্ত এর ছবি

একমত, সোজা লিখে দিলেই তো হয় যে পরিস্থিতিই হোক না তাতে নারী পুরুষ সমান সম্পত্তির ভাগ পাবে। এত অঙ্কও কষতে হয় না তাহলে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বুকের ভেতর সহস্র কাঁকর
ঝিনুক নিরবে সহো

s-s এর ছবি

নারী কে সম্পত্তির সমান ভাগ দেবে - এমন বেকুব কোন্ ধর্ম বাদী আছে? নারী পুরুষের সমান নয়, সেটিই কি স্বতঃসিদ্ধ নয় ধর্মে? যে কোন ধর্মেই? শুধু ধর্মে বলি কেন , যে কোনো সামাজিক বিভাজনেই।
ধর্মের ফাঁকতালে যতটুকু পাওয়া যায় মেয়েদের "যথালাভ" ভেবে নিলেই ভালো - এই ই ধর্ম ও সমাজ দুইয়েরই বয়ান।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আসলে এখানে কয়েকটা বেসিক পয়েন্ট এই ইস্যুর সমর্থনকারী/বিরোধিতাকারী সবার নজর এড়িয়ে গেছে

সুরা নিসা বা কোরানের অন্যান্য জায়াগায় উত্তরাধিকার আইনের যে নীতিমালা, সেটার পুরোটাই একজন মৃত ব্যক্তির জন্য, যার সম্পত্তি উইল করা নেই ...মৃত্যুর আগে উইল করলে যেকোনভাবেই সেটা করা যায় ,,,,আপনার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র সন্তানকে আপনি আপনার সব সম্পদও দিয়ে ফেলতে পারেন, সে পুত্র হোক বা কন্যা হোক ,,,, কাজেই কেউ যদি ভাবে এই রাস্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী আমি আমার সম্পদ ভাগ করবোনা (ভাবতেই পারেন, ধরুন আপনার কন্যা কোটিপতি, আপনি লাখপতি, আর আপনার পুত্র দিন আনে দিন খায় ,,, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি নিজের যাবতীয় সম্পদ রাস্ট্রের আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে আপনার পুত্রকে দিতে চাইবেন ,,, বা ভাইস ভার্সা ,,,,সে সুযোগটা কাজে লাগালে কোরানের আইনও অমান্য হয়না, রাস্ট্রেরও না, যদি উইল করে যান ....এখন কেউ যদি ভাবে যে নিজের মৃত্যুর সময় কাকে কতটুকু দেয়া ঠিক হবে সেটা সে বুঝতে পারছেনা, তাহলে সে উইল করতে পারবেনা, রাইট? ,,,,এখন খুব কোরান মানা মুসলিম হলে সে উইল করে দিয়ে যেতে পারে যে নিজের মৃত্যুর পর সম্পদ যাতে শরিয়া আইন মেনে ভাগ করে দেয়া হয় ,,,তাইলে রাস্ট্রীয় আইন তার সম্পদকে কোরান অনুযায়ী ভাগ করাতে কোন ঝামেলাই করতে পারবেনা

সূতরাং হুজুরদের লাফালাফিটা পুরোপুরি অর্থহীন ,,, রাস্ট্রের আইনে সম্পদের লিঙ্গভেদে সমবন্টনের আইনে কোন মুসলিমের কোরান মানায় কোন বাঁধা পড়বেনা ,,, নিজধর্ম মানার দায়ে একটু কষ্ট করে উইল করে গেলেই হলো

২. এখন কথা হলো তাহলে রাস্ট্রের আইনে কোরানের আইন সেভাবে রেখে দিতেই সমস্যা কি? সমস্যা যেটা সেটা আমরা সবাই বুঝি, অন্যধর্মের লোকেরা কেন কোরান অনুযায়ী ভাগ করতে বাধ্য হবে -- এই বেসিক প্রশ্নটাই কারণ ,,, কথা হলো, বলা যায় অন্য ধর্মের লোকও তো উইল করলেই মিটে গেল! ,,,ঠিক, কিন্তু ইসলাম ধর্মের দায়ে অন্য ধর্মের লোককেও কেন কষ্ট করে উইল করতে হবে?

কোনটা ফেয়ার, ভাবলেই বোঝা যায় সমবন্টনের আইনটাই রাস্ট্রের জন্য ফেয়ার ,,, আমি যতটুকু জানি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে পুত্রসন্তানরা শুধু সম্পদ পায় (জানিনা এটা ধর্মের আইন নাকি সমাজের প্রভাব) ,,, বাংলাদেশে তো আড়াইকোটি হিন্দুধর্মাবলম্বী ,,, কই তারা তো লাফালাফি করছেনা ,,,, হুজুরদের এত বাড়াবাড়ি কেন?

শেষকথা ঐ একই, রাষ্ট্রীয় মুল নীতির একটা - 'আল্লাহর উপর পুর্ন আস্থা' হলে হুজুরদের বাড় তো বাড়বেই ,,,, যে রাস্ট্রের মূলনীতি 'আল্লাহর উপর পুর্ন আস্থা', সেখানে হিন্দু/খ্রিস্টান/বৌদ্ধরা থাকবে কিভাবে? হাসি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জনৈক বাঙ্গাল এর ছবি

একটা হাস্যকর যুক্তির নমুনা দিলাম...

তাছাড়া তাওহীদি এছলাম কী বলে তাও বিস্তারিতে আমাদের জানা উচিত...

ইসলামে সম্পত্তির উত্তরাধিকার
এম. কে দেওয়ান, ইত্তেফাক:
জাহেলিয়াত যুগে অর্থাৎ প্রাগ ইসলামী যুগে পিতার মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রী এবং সন্তান-সন্তুতিদের কোন স্বকীয় মর্যাদা ও সম্পত্তির অধিকার নির্ধারিত ছিল না। জ্যেষ্ঠ পুত্র বা শক্তিধর পুত্রটি বাহু বলে সম্পত্তি ভোগ দখল করতো। বিধবা মাকেও বিয়ে করতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর, ইসলাম এই গ্লানিকর ও কদর্য প্রথার বিলোপ সাধন করে। ইসলামী বিধানে, মাতা ও সন্তান-সন্তুতিদের সম্মানজনক অবস্থা এবং তাদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। পিতার ইন্তেকালের পর তার ওয়ারিশদের মধ্যে পিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশ কে কি পরিমাণ পাবে, স্বামীর ইন্তেকালের পর স্ত্রীর ও অংশীদারদের অংশ কি হবে এবং স্ত্রীর মৃত্যুতে তার সম্পত্তির অংশ স্বামী এবং অন্য অংশীদার থাকলে, তারা কে কত অংশ পাবে, এসব বিষয়ে কোরআনের বিধান মতে পৃথক পৃথকভাবে উপস্থাপন করছি। প্রথমে আলোচনা করি পিতার মৃত্যুতে তাঁর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশগণ কে কি পরিমাণ অংশ পাবে।
এ সম্পর্কে কোরআনে বিধান রয়েছে যে, পিতার ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র সন্তান এবং কন্যা-সন্তান থাকলে, এক পুত্র সন্তান সম্পত্তির যে পরিমাণ অংশ পাবে, দুই কন্যা সন্তান একত্রে সেই পরিমাণ অংশ পাবে অর্থাৎ এক পুত্র সন্তান যা পাবে, এক কন্যা সন্তান তার অর্ধেক পাবে। যদি পুত্র সন্তান না থাকে, এবং দুই বা ততোধিক কন্যা সন্তান থাকে, তবে কন্যারা একত্রে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের ২ ভাগ পাবে। পুত্র সন্তান নেই এবং শুধু একটি কন্যা সন্তান আছে, সে ক্ষেত্রে ঐ কন্যা পাবে মোট সম্পত্তির আধা অংশ। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে এবং পিতা-মাতাও যদি জীবিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে পিতা-মাতার প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবেন। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, তার পিতা-মাতা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন বটে, তবে এই অবস্থায় মাতা পাবেন সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ। মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন থাকলে, মাতা পাবেন সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টনের পূর্বে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে সর্বাগ্রে লাশের দাফন-কাফনের ব্যয় নির্বাহ করে, তার জীবদ্দশায় কোন ঋণ অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে এবং তিনি মৃত্যুর পূর্বে সম্পত্তির কোন অংশ সৎ। জনহিতকর কাজের জন্য ওছিয়ত (দান) করে থাকলে তা পালন করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। আরো উল্লেখ যে, সম্পত্তি ওছিয়ত করা থাকলে, ওছিয়তকৃত সম্পত্তির পরিমাণ মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের অধিক করার বিধান নেই এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কারো নামে ওছিয়ত করা যাবে না, কারণ কোন হক্দার ওয়ারিশ বা সন্তানকে তার প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে অন্য ওয়ারিশ বা সন্তানকে তার পাওনার অধিক সম্পত্তি প্রদানের লক্ষ্যে ওছিয়ত করলে, ওছিয়তকারী গোনাহগার হবে। প্রত্যেক ওয়ারিশ যেন তার ন্যায্য অংশ পেয়ে যায়, তদুদ্দেশ্যেই বন্টন ব্যবস্থা আল্লাহ্র নিকট থেকে সমাগম হয়েছে। আল্লাহর বিধানকেই কার্যকর করতে হবে, কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামতের কোন স্থান নেই। ওয়ারিশদের অংশ আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত। উত্তরাধিকারকে তার ন্যায্য হিস্সা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই।
আল্লাহর দেয়া অনেক সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত অর্থ আমাদের নিকট বোধগম্য নয়। সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার বিষয়ক খবর ইদানিং পত্রিকার পাতায় প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। আল্লাহর আইনে পিতার মৃত্যুতে তার সম্পত্তি থেকে এক কন্যার অংশ হবে এক পুত্রের অংশের অর্ধেক অর্থাৎ পুত্র পাবে কন্যার অংশের দ্বিগুণ। কন্যা তার পিতার যে সম্পদ পেল, তার সঙ্গে পরবর্তীকালে যোগ হচ্ছে তার বিয়েতে স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত দেনমোহর, এবং তাতে তার সম্পত্তি বৃদ্ধি হল। অপরদিকে পুত্র ওয়ারিশরূপে সম্পত্তির যে অংশ পেল, তা থেকে নিজের বিবাহের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করায় তার প্রাপ্ত সম্পত্তির অংশ ব্যয় হল এবং তার সম্পত্তির পরিমাণ হ্রাস পেল। অধিকন্তু, পিতার অবর্তমানে মাতার ভরণ-পোষণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোনদের লাল-পালন, তাদের লেখাপড়া শিখানোর ব্যয় এবং তাদের বিয়ে দেয়ার দায়িত্ব ও খরচ ভাইকেই বহন করতে হয়। ভাইয়ের শুধু খরচের পালা। সুতরাং ভাইয়ের অংশ বাহ্যত বেশী দেখা গেলেও, বিভিন্ন খাতে তার খরচের পাল্লা অনেক ভারী এবং তার সম্পত্তির বড় অংশ খরচ হয়ে যায়। বোনের খরচ নেই, সে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। উল্লেখ্য, এ দেশে সাম্রাজ্যবাদী অমুসলিম ব্রিটিশ সরকার কোরআনের বিধান সম্বিলিত ‘মুসলিম আইন’ প্রণয়ন করেছিল এবং চালু রেখেছিল তাদের শাসনামলে। কোরআনের বিধানের সংশোধনের দাবীতে ইদানিং কিছু লোককে সোচ্চার দেখা যায়, তারা হয়তো কোরআনের বিধান সম্পর্কে অবগত নন, বা তারা কোরানের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, অথবা তাদের কেউ কেউ হয়তো ইসলাম বিরোধ ও ইসলাম আবির্ভূত হবার পর থেকে ১৪০০ বৎসরাধিককাল যাবৎ অদ্যতক। কোরআনের কোন একটি শব্দের বা বাক্যের সামান্যতম বিকৃতি ঘটেনি, অবতীর্ণ হবার সময় যেমন ছিল, প্রত্যেকটি ঠিক তদ্রƒপ আসল ও মূল অবস্থায় রয়েছে। কোরআনের বিধানের পরিবর্তন করার যে কোন সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।
ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর জন্য ওয়ারিশদের ভাগে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অংশ দেয়ার মত যথেষ্ট সম্পত্তি না রেখে সম্পত্তি ওছিয়ত করলে মৃত ব্যক্তির করা ওছিয়ত উত্তরাধিকারদের পক্ষে মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়, কারণ ওয়ারিশদের প্রাপ্য স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত ব্যবস্থা মান্য করা বাধ্যতামূলক। সুরা নিছার আয়াত নং ৮-এ বিবৃত রয়েছে যে তোমাদের সম্পত্তি বন্টনকালে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় (ওয়ারিশ নয়) এবং এতিম-মিস্কিনদের কেউ যদি এসে পড়ে, তাহলে সম্পত্তি থেকে তাদের কিছু খাইয়ে দিও এবং তাদের প্রতি সদাচরণ করিও। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে পিতা-মাতার মৃত্যুতে গ্রামাঞ্চলে আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী এবং এতিম-মিসকিনদের জন্য বিরাট ভোজের আয়োজন করার প্রথা দীর্ঘকাল যাবৎ এদেশে চালু ছিল। ইদানিংকালে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে লোক খাওয়ানোর এই ব্যবস্থা প্রায় লোপ পেয়ে গেছে। আজকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু নিকট প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে বাসায় মিলাদের আয়োজন করে এবং নিকটস্থ কোন এতিমখানার এতিম-মিসকিনদের খাইয়ে দিয়ে এই দায়িত্ব সম্পন্ন করা হয়। স্বামীর মৃত্যুতে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশগণ কে কি পরিমাণ অংশ পাবে সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করি। বিয়ের দেনমোহর পরিশোধ করা সম্পর্কে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে ইসলামের যে বিধান রয়েছে। সে সম্বন্ধে আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল নই। বিয়ের মোহর প্রদান প্রসঙ্গে কোরআনে সুরা নিছার ৪নং আয়াতে আল্লাহ্ নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, “তোমরা স্ত্রীদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।” অতএব আল্লাহর নির্দেশেই স্ত্রীকে মোহর প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে, এবং স্ত্রীকে বিয়ের সময়ই মোহর পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। স্বামী তার আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী মোহর প্রদান করবে। স্ত্রী মোহর হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক হয়েই স্বামীর সঙ্গে সংসার যাত্রা শুরু করবে। অবশ্য বিয়ের পর স্ত্রী ইচ্ছা করলে প্রাপ্ত মোহর থেকে স্বামীকে কিছু অংশ দিতে পারে বা অন্য কাউকে কিছু দান করতে পারে, এটা স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার এবং স্বাধীন ইচ্ছা।
রাসুল (সাঃ) তাঁর নিজের বিয়ের মোহর বিয়ের সময়ই পরিশোধ করেছেন। আলী (রাঃ) এর সঙ্গে ফাতেমা (রাঃ) এর বিয়েতে আলী (রাঃ) এর নিকট মোহর পরিশোধ করার জন্য অর্থ না থাকায় রাসুল (সাঃ) আলী কে (রাঃ) যুদ্ধের বর্ম বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা মোহর পরিশোধ করার পরামর্শ দেন এবং এই ব্যবস্থায় আলী (রাঃ) ও ফাতেমা (রাঃ) এর বিবাহকার্য সম্পন্ন করা হয়। কোন অনিবার্য কারণে স্বামী তার জীবদ্দশায় স্ত্রীর মোহর পরিশোধ না করে ইন্তেকাল করলে, স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে কবরস্থ করার প্রয়োজনীয় খরচাদি নির্বাহ করার পর স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর প্রাপ্য অপরিশোধিত মোহর স্ত্রীকে প্রদান করতে হবে কারণ স্ত্রীর প্রাপ্য মোহর স্বামীর নামে ঋণ হয়ে রয়েছে। স্ত্রী উত্তরাধিকার হিসেবে স্বামীর সম্পত্তি থেকে তার প্রাপ্য অংশও পাবে। স্বামীর কোন ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করে এবং কোন ওছিয়ত করা থাকলে তা পূরণ করার পর তির সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন কতে হবে। স্বামী-স্ত্রী নিঃসন্তান থাকা অবস্থায় স্বামীর মৃত্যু হ’লে, স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে। স্বামী সন্তান রেখে ইন্তেকাল করলে, স্ত্রী পাবে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ। স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত্যুকালে তার রেখে যাওয়া কোন সম্পত্তি থাকলে, উক্ত সম্পত্তি থেকে স্বামীর অংশ হবে আধা অংশ। স্ত্রী সন্তান রেখে ইন্তেকাল করলে, স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। এক্ষেত্রে দাফন-কাফনের খরচ, ঋণ পরিশোধ এবং ওছিয়ত পূরণ করার পরই সম্পত্তি বন্টন করতে হবে। আরো উল্লেখ্য যে, কোন পুরুষ ব্যক্তি মৃত্যু মুখে পতিত হলে এবং তার পিতা, স্ত্রী এবং কোন পুত্র সন্তান থাকলে এবং ১ বৈপিত্রেয় ভাই ও বোন থাকলে তারা প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। তবে এরূপ ওয়ারিশের সংখ্যা অধিক হলে, তারা একত্রে সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পাবে এবং তাদের প্রত্যেকের সমান অংশ হবে।
প্রকাশ থাকে যে, ইসলামে সন্তানকে ত্যাজ্য (ত্যাজ্যপুত্র) করার বিধান নেই। কোন সন্তানের আচরণে পিতা ক্ষুব্ধ এবং অতিষ্ঠ হয়ে কখনও সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র বলে ঘোষণা করে থাকেন বটে, তবে এরূপ সিদ্ধান্ত আইনানুগ নয় এবং ইসলামী বিধানের পরিপন্থী। যাহোক, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকারদের প্রাপ্য অংশ এবং অধিকার সম্বন্ধে কিছু ধারণা পাওয়ার লক্ষ্যে আজকের এই আলোচনা। মৃত ব্যক্তি কি পরিমাণ সম্পত্তি রেখে ইন্তেকাল করেছেন, মৃত্যুকালে কোন ঋণ রেখে বা সম্পত্তি ওছিয়ত করে গেছেন কিনা, ওয়ারিশ কতজন আছে এবং কে কে ওয়ারিশ ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্যসহ ফারায়েজ (সম্পত্তি বন্টন) সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীর (সিভিল উকিলের) নিকট থেকে ওয়ারিশদের প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিয়ে সম্পত্তি বন্টনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তিনি কোরআনের নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।