নমস্কার বাংলাদেশ ।। আত্নপ্রবঞ্চনার অংশীদারিত্ব

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ১১/০৮/২০০৮ - ৬:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.
আমাদের তিনদিক ঘিরে আছেন এক মহাশক্তিশালী দেবতা । দেবতা মুলতঃ মৃত্যুর, তিনি ইচ্ছেমতো পানি বন্ধ করে, ইচ্ছে হলে পানিতে ভাসিয়ে অথবা ইচ্ছে হলে এমনি এমনি ও মেরে ফেলতে পারেন আমাদের । অবশ্য দেবতাকে ঢাল বানিয়ে কদাচিৎ আমরা বেঁচে ও যাই , আমরা বেঁচে যাই নিজেদের বিবেক ও বিবেচনাবোধের হাত থেকে ।
আমাদের প্রতিবেশীর উপাসনাগৃহ আক্রান্ত হলে আমরা নিজেদেরকে সান্ত্বনা দিতে পারি - আহা , ওরা বাবরী মসজিদ না ভাংগলে নিশ্চয়ই আমাদের পাড়ার মন্দিরটা কেউ ভাংগতোনা ।
আমার প্রবোধ খুঁজি, আমরা আমাদের হীনমন্যতা আড়াল করি অন্যদের নৃশংসতার তুলনায় নিজেদের বর্বরতাকে লঘুতর বিবেচনা করে ।
আমরা বেশ আড়াল খুঁজি,আমার বিবেক ও বিবেচনাবোধ বিব্রত হলে নিজেদের পিঠ চাপড়াই-যত যাই হোক আমাদের এখানে তো গুজরাটের মতো কিছু হয়নি, হিন্দুগুলো একটু ইয়ে আছেই । না হলে ভারতে কতো মুসলমান নির্যাতন হয়, কই একটা মুসলমান ও তো ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে আসেনা । আর এদিকে একটু কিছু হলেই ব্যাটার ঐদিকে পাড়ি জমায় । আসলেই ওদের ওইপাড়ের জন্য বেশী বেশী টান ।

আমরা গজ ফিতা দিয়ে মেপে দেখতে চাই কতোটা নির্যাতন হলে ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটা স্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে । ২০০১ এর অক্টোবরে ভোলার চরে সংখ্যালঘু গ্রামে দু সপ্তাহ জুড়ে যে নারকীয় বিজয় উল্লাস চললো নারীদের সম্ভ্রম ভোগ করে , একজন মায়ের আহাজারী শুনা গেলো যিনি তার কিশোরী মেয়ের ধর্ষকদের কাছে কড়জোরে প্রার্থনা করছেন -'বাবারা এক একজন করে এসো, আমার মেয়েটা খুব ছোট', ধর্ষনপর্ব শেষে সেই মা তার ক্ষতবিক্ষত সন্তানকে আঁকড়ে কেনো এই মানচিত্র ছেড়ে চলে গেলেন, তার কি একটু ও দেশপ্রেম নেই?- সেই প্রশ্ন আমরা তুলতেই পারি ।

হ্যাঁ, সেই প্রশ্ন তোলার অধিকার আমাদের আছেই যেহেতু আমরা প্রচার করতে ভালোবাসি আমরা বাংলাদেশীরা আসলে কিন্তু অসাম্প্রদায়িক । এ ক্ষেত্রে ও আমরা ভারতীয়দের সাম্প্রদায়িকতার হাজারো উদাহরন সামনে হাজির করে প্রমান করে ছাড়বোই-যতো যাই হোক শেষপর্যন্ত আমরা কিন্তু ওদের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক ।

আমরা এইভাবে ক্ষত ঢেকে রাখি,ঢেকে রাখতে রাখতে ক্ষত থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে থাকে । এই ক্ষত তৈরী করেছে যে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা আমরা তাকে প্রশ্ন করিনা বরং তার দায়গুলো আমরা বহন করতে থাকি, মিছে বাহানায় নিজেদের সাথে প্রবঞ্চনা করে যাই ।

[ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা.- The Second Proclamation (Fifteenth Amendment) Order, 1978 (Second Proclamation Order No. IV of 1978) এর 2nd Schedule বলে বিলুপ্ত৷]
১৯৭৮ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে যখন ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মুলনীতি হিসেবে আল্লাহর উপর পূর্ন বিশ্বাসকে প্রতিস্থাপন করা হলো- আমরা তখন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিনা । যে রাষ্ট্রের মুলনীতি আল্লাহর উপর পূর্ন বিশ্বাস সেই রাষ্ট্রে একজন অবিশ্বাসী কিংবা একজন ইশ্বর, গডের উপর বিশ্বাসীর মর্যাদা কতোটুকু? কিংবা আল্লাহর উপর পূর্নবিশ্বাস ব্যতিরেকে এই রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ারই আদৌ কোন সুযোগ আছে কিনা?

আমরা যারা সংখ্যায়গুরু তারা প্রবলভাবে ভুলে থাকতে চাইযে, এই রাষ্ট্র ' অর্পিত সম্পত্তি আইন' নামে এক দানবীয় আইন টিকিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে । এই সেই আইন যেখানে একজন জেলা প্রশাসকের ঘোষনাতেই একজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু তার ভূ-সম্পত্তির মালিকানা হারাতে পারেন ।

সংবিধান কাঁটাছিড়া হয়ে সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় বানী জুড়ে বসে তার শুরুতে, মুলনীতি গৃহীত হয় সংখ্যাগুরুদের প্রভূতে বিশ্বাস, রাষ্ট্র নিজে গ্রহন করে সংখ্যাগুরুর ধর্ম,রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখে সংখ্যালঘু ভূমি দখলের আইন----এইসব প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা অস্বীকার করিনা, এটা সেটা নিয়ে আন্দোলন হয়-এইসবের বিরুদ্ধে তেমন কোন উচ্চারন হয়না, ভোটার তালিকায় সযতনে সংখ্যালঘুদের বাদ দেয়া হয় বিপরীতে বিহারী আর রোহিংগাদের যুক্ত করে দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুত্বের অনুপাত আরো বাড়িয়ে দেয়া হয় ।

তবু আমরা বেশ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি । এইসব টুকটাক তো আছেই, তবু কিন্তু শেষপর্যন্ত আমরা বেশ অসাম্প্রদায়িক, অন্ততঃ ওদের চেয়ে- ঐ যে দেবতারা আমাদের ঘিরে আছেন তিনদিক দিয়ে ।

এইসব হীনমন্যতা, আত্নপ্রবঞ্চনা আর কাপুরুষতা নিয়ে আমাদের দিনপাত । আমরা ভালোই আছি, ভালোই থাকি ।


মন্তব্য

bdhindu এর ছবি

আপনার গভীর দৃষ্টিশক্তি রয়েছে একথা স্বীকার করছি। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের আরও আরও সমস্যা আছে। যা হয়ত আপনারা কোনদিনও বুঝবেন না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের আরও আরও সমস্যা আছে।

আলাদা করে 'আমাদের' বলে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন কেনো? আপনি হয়তো ধর্মের বিচারে সংখ্যালঘু, আমি নিজেও তো এই রাষ্ট্রে অন্য অনেক মানদন্ডে সংখ্যালঘুই ।

বাংলাদেশের মতো দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রকাঠামোতে যে কোন মানদন্ডের সংখ্যালঘু-- (ধর্মে, লিংগে,বিত্তে,সংস্কৃতিতে, জাতীয়তায়) মাত্রই আরো আরো আরো সমস্যায় ডুবে আছে ।
পরস্পরের এই সমস্যাগুলো উপলব্দি ভিন্ন সমাধান কি সম্ভব?
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

s-s এর ছবি

কিন্তু মোরশেদ, গল্প কি কোথাও ভিন্ন? আমাদের অথবা ওদের? minority dissent বলে সত্যিই কি আর আছে কিছু , পৃথিবীতে?নেই তো, দেখিনা তো !
=================
যারা অন্ধ আজ সবচেয়ে বেশি চোখে দ্যাখে তারা
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই প্রীতি নেই
করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমি জানিনা অন্য দেশে কি অবস্থা অথবা অন্য দেশে প্রকাশ্যে সামপ্রদায়িক সমাজকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল স্লোগান বা বক্তৃতা দেওয়া হয় কিনা, কিন্তু দেশে আমি নিজে এমন ঘটনা চাক্ষুশ (বানান ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী) করেছি। এমনকি আমার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মপরিচয় এর কারনে ব্যক্তিগতভাবে হুমকিও পেয়েছি। তো বোধহয় আমার কাছে এ লেখার বক্তব্য সে কারনেই বেশ অর্থবহ।

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যারা অন্ধ আজ সবচেয়ে বেশি চোখে দ্যাখে তারা
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই প্রীতি নেই
করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শেখ জলিল এর ছবি

সাম্প্রদায়িকতার চিত্র পৃথিবীর সব দেশেই এক ও অভিন্ন।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এইসব হীনমন্যতা, আত্নপ্রবঞ্চনা আর কাপুরুষতা নিয়ে আমাদের দিনপাত । আমরা ভালোই আছি, ভালোই থাকি ।
এই যে দীর্ঘশ্বাস, এর শেষ কোথায়? এই যে কষ্ট যারা অনুভব করে বেঁচে আছে তারাতো আসলে মৃত। প্রায়ই এই বেঁচে থাকার কোনো মানে খুঁজে পাইনা।
আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

সুমন সুপান্থ এর ছবি

কখনো কখনো কোনও কাজ প্রয়োজনের চেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে । এই পোস্টটার ও খুব প্রয়োজন ছিলো সচলায়তনে,এই মুহুর্তে । ধন্যবাদ মোরশেদ ।

একটু সংশোধনী :২০০১ য়ে ভোলার চরাঞ্চলে এমন নির্যাতন সব চেয়ে বেশী হয়েছে ঠিক , কিন্তু যে কিশোরীর কথা উল্লেখ করলি , সেটা সিরাজগঞ্জের কোনও গ্রামের বোধ হয় ।

---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেই তো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভেতরেই ...
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

না আমরা ভাল নাই এবং জনগণ-জাতির একাংশকে সার্বক্ষণিক কোণঠাসা করে রাখা আর লুন্ঠন-নির্যাতন বজায় রেখে বাকিদের ভাল থাকতে চাওয়াটাই বিরাট আত্মপ্রবঞ্চনা।

সংখ্যালঘু যদি নির্যাতিত হয়ে দেশ ছাড়ে, বা অন্য কোথাও সম্পদ স্থানান্তর করে তবে কার কি বলার থাকতে পারে। আমরা চাই না কেউ দেশ ছাড়ুক, কেউ সম্পত্তি স্থানান্তর করুক। কিন্তু যতক্ষণ না তাকে অন্য ধর্মের নাগরিকের সমান নিরাপত্তা ও মর্যাদা দেয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ তাকে বেঈমান বা ভারতপ্রেমী আখ্যা দেয়ার নৈতিক অধিকার সুবিধাভোগীদের থাকতে পারে না। আমরা যদি পারি, তার অবস্থান থেকে বাস্তবতাকে দেখতে, তাহলেই আমাদের সেই অধিকার জন্মাতে পারে।

যে অপরকে শোষণ-পেষণ করে, তার নিজের ঘরেও সে কিন্তু একই কারবারই চালায়। সেকারণে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা বাংলাদেশের নিজেরই সমস্যা। মানবিক বিপর্যয় তো বটেই, এর নিরসন ছাড়া জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ঐক্য সম্ভব হবে না। হিন্দু বা মুসলমান হিসেবে নয়, রাজনৈতিক নাগরিক হিসেবে যতক্ষণ না সমতা আসছে, ততক্ষণ রাষ্ট্র ভাগ করো শাসন করো চালাতেই থাকবে।

তাই ভারতের তুলনায় আমরা এগিয়ে না পিছিয়ে সে তুলনা করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিকার সম্ভব নয়। আমাদের দায় আমাদের কৃতকর্ম দিয়েই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, আমাদের স্বার্থেই। এ বিষয়ে একমত।

কিন্তু উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার আলোচনা না করলে, কোন দেশের কী ভূমিকা সেটা না স্পষ্ট হলে বিষয়টার রাজনৈতিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় মাত্রাটা ধরা যাবে না। ১৯৪৭ এর দেশভাগ সমাজের দ্বন্দ্বকে সমাজের বাইরে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে বলে ভাবিয়েছিল অনেককে। এভাবে সাম্প্রদায়িকত সমস্যাকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিণত করা হয়েছে। এর খতিয়ান না নেয়াও কিন্তু একধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা।

এ কারণেই দেখা যায়: আমাদের এক দল পাকিস্তানের কোটরে আস্তানা গেড়ে ভারতের প্রতি খবরদারের আঙুল তোলে। আরেকটার কাজ হয়, ভারতের কাঁধে ভর দিয়ে পাকিস্তানের প্রেত তাড়ানোর বায়বীয় লড়াইয়ের কোশেশ করা। এ দুটোই প্রতিক্রিয়াজাত। ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া। এ দুই দলকে ভারতের ও পাকিস্তানের দালাল বলে গালিও দেয়া হয়। কিন্তু কর্তারূপ বাংলাদেশের ক্রিয়া কই? বাংলাদেশের দালালরা কই। আমরা হিন্দু মুসলমান অন্য কারো নয়, আমাদের দেশেরই দালাল হতে চাই। সেকারণেই, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কেন ও কখন একটি দেশকে সাম্প্রদায়িক/মৌলবাদী বলে তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়, যে দেয়, যে কারণে দেয়, তার বিচার না করাটাও কিন্তু আত্মপ্রবঞ্চনা হয়।

তাই একদলের বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য বলার মধ্যে যেমন রাজনৈতিক অসাধুতা থাকে, তেমনি কথায় কথায় ভারতের সাপেক্ষে বাংলাদেশকে অধস্তন বা ইনফেরিয়র করে দেখার মধ্যেও সেই একই অসাধুতারই পরিচয় পাই। দুটোই সমান বিপজ্জনক।

ধন্যবাদ দরকারি এই পোস্টটির জন্য।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা পরিপূরক মন্তব্যের জন্য ।
স্বীকার্য যে , কোন কিছুই কোন কিছুকে ছেড়ে নয় । একজন রাশীদ খলিফার গুজরাট থেকে প্রান নিয়ে পালিয়ে আসা কিংবা বিরজা বালার টুকরো লাশের মধ্যে তো শেষপর্যন্ত সেই দীর্ঘ অপরাজনীতির ছায়া আছেই ।

সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানকে আমি ছাড় দেই কেননা এই দুই রাষ্ট্রই জন্ম নিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার গর্ভে, হিন্দু-মুসলমান এক সাথে থাকতে পারেনা এই বীজমন্ত্রই যে রাষ্ট্রদ্বয়ের জন্মসুত্র । কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র তো সৃষ্টি হয়েছিল তার বিপরীত সুত্রতায় । রাষ্ট্র তার নাগরিককে ধর্মীয় পরিচয়ে বিবেচনা করবে-এরকম হলে পাকিস্তান ভেংগে আলাদা রাষ্ট্রের দরকার কি ছিলো?

সেকারণেই, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কেন ও কখন একটি দেশকে সাম্প্রদায়িক/মৌলবাদী বলে তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়, যে দেয়, যে কারণে দেয়, তার বিচার না করাটাও কিন্তু আত্মপ্রবঞ্চনা হয়।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে কেউ সাম্প্রদায়িক/মৌলবাদী বলে তকমা লাগিয়ে দিলে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আপত্তি জানানোর কোন সুযোগ কি আপনার আমার আদৌ আছে? পোষ্টেই বলেছি, যে রাষ্ট্রের মুলনীতি ' আল্লাহর পূর্ন বিশ্বাস' এবং নাগরিক গন সেই মূলনীতি মেনে নেয়- সে রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক প্রমান করার চেষ্টার কি কিছু আছে?

-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এখানেই আমার বাড়তি কথাটা এই যে, পৃথিবীতে সেক্যুলার বলে কথিত ইংল্যান্ডে অফিসিয়ালি স্টেট চার্চের সঙ্গে যুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও রাজনীতি অতিমাত্রায় ধর্মসংস্লিষ্ট, জার্মানী কী তাও আমরা জানি। আমি এদের আমাদের সমালোচনার অধিকার মান্য করি না। দ্বিতীয়ত, তাদের এই বলাটা এখানকার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটা, আমাদের দরকষাকষির সামর্থ্যকে কমিয়ে আনার আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ।

আমার রাষ্ট্র বাইঞ্চোত, কিন্তু বাইঞ্চোতের বাপেরাও এসে আরো বাইনগিরি করলে কেমনে কী?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

বাংলাদেশের দালালরা কই?

আসুন আমরা সবাই
ভারত পাক মার্কিন বা অন্য কো্ন দেশের নয়
স্রেফ আমাদের দেশেরই দালাল হই ।

নুরুজ্জামান মানিক
************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

সাম্প্রদায়িকতার বীজ আমাদের রক্তের অনুতে_ পরমানুতে। এই বীজের অংকুরোদগম বৃক্ষগুলো বুভুক্ষুর মতন চেয়ে থাকে সমস্ত সংখ্যালঘুর দিকে। হোক সে ধর্মে, বর্ণে, অঞ্চলে, লিঙ্গে!
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কে বললো হয়না?
মানুষের মুসলমান হতে একবার খৎনা করলেই হয়, রাষ্ট্রের বারবার করতে হয়

-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ ভাই। এই পোস্টের দরকার ছিল - অন্তত সচলায়তনের সাম্প্রতিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, আমি জন্মগত পরিচয়ে একজন সংখ্যালঘু। সমাজের মোটামুটি সুশীল-সুবিধাপ্রাপ্ত অংশে বেড়ে উঠার কারণে সরাসরি শারীরিক নিগ্রহের শিকার হই নি - এ কথা সত্য - কিন্তু হাতের মার না খেলেও মুখের মার অনেক খেয়েছি। কিন্তু সবসময় চুপ থাকতাম - খুব কমই পরিচিতদের গণ্ডীতে এ নিয়ে মুখ খুলেছি - কারণ মানুষের সহানুভূতিকে চিরকালই অপছন্দ করেছি।

শুধু এটুকুই চাই, এই পৃথিবীতে আর কোন শিশু যেন সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম না নেয়, আর কেউ যেন না জানে কী অসহ্য দংশন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের জীবনে।


অলমিতি বিস্তারেণ

নিরিবিলি এর ছবি

এধরনের লিখা সচলে মাঝে মাঝেই আসা উচিত। আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে আমরা কতটা সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে আছি।

মুজিব মেহদী এর ছবি

রাষ্ট্রধর্মের ছাপ কপালে নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিই সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত, বারকয়ের সংশোধনের পর আমাদের সংবিধানও তাই। এসব আনুকূল্য সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষের অসম্প্রীতিমূলক আচরণকে আরো ইন্ধন জুগিয়েছে। ২০০১-এর নির্বাচনোত্তরকালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হয়রানি-নির্যাতন নিকট অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

কিন্তু অন্য দেশের সাম্প্রদায়িক আচরণ নিয়ে কথা বললেই তা নিজ দেশের ক্ষতকে ঢাকার প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হবে কেন? আমরাও অন্যায় করি বলেই কি অন্যের অন্যায় বৈধতা পায়? সাম্প্রদায়িক আচরণ যেকোনো ব্যক্তি বা দেশ যখন যেভাবেই করুক না কেন, জানা গেলে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। একজন আধুনিক মানুষের এভাবেই দীক্ষিত হওয়া দরকার বলে মনে করি।
................................................................
আমরা তা-ই করি, বন্দিরা যা করে
আমরা তা-ই করি, বেকারেরা যা করে :
আমরা ফলিয়ে যাই আশার আবাদ।
(মাহমুদ দারবীশ)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কিন্তু অন্য দেশের সাম্প্রদায়িক আচরণ নিয়ে কথা বললেই তা নিজ দেশের ক্ষতকে ঢাকার প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হবে কেন? আমরাও অন্যায় করি বলেই কি অন্যের অন্যায় বৈধতা পায়?

মুজিব ভাই,
ঠিক এই কথাটা উলটো করে বলতে চেয়েছি ।
অন্যরা অন্যায় করে বলেই কি আমাদের অন্যায় বৈধতা পায়? অথবা অন্যদের অন্যায়ের মাত্রাকে তীব্র প্রমান করতে পারলেই কি নিজেদের অন্যায়ের মাত্রা লঘু হয়ে যায়?

-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইজি থাকতে হবে.....



অজ্ঞাতবাস

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ইজি থাকতে হবে.....
(কপিরাইট @ সুমন চৌধুরী )

নুরুজ্জামান মানিক
************************************

বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তারেক এর ছবি

আমাদের কাঁধে কাঁধে এখনো তো অনেক কফিন-
হবে তো পৌঁছাতে জানি কাছাকাছি সোনালী সূর্যের

চলুক
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।