প্রসংগ লেখালেখি || অভিজ্ঞতালব্দ নাকি অনুভূতির স্পর্শ?

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ০৬/০৬/২০০৭ - ৮:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
লেখকেরা ছবি আঁকছেন । আঁকিয়েরা রংতুলি দিয়ে,লেখকেরা শব্দ ও বাক্য দিয়ে । এই ছবি আঁকার কাজটা কেমন হওয়া যুক্তিযুক্ত? একটা ছবি আঁকতে গেলে সাবজেক্টের অভিজ্ঞতা কি দরকার আছে নাকি নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে তাকে নিজের মতো করে ভেবে নেয়াটা যথেষ্ট? একটা উদাহরন দেইঃ মানিকবাবু নাকি পদ্মানদীর মাঝি লেখার আগে জেলেপল্লীতে দিন কাটিয়েছিলেন । ভালো কথা । তার লেখায় কুবের আর কুবেরের মানুষদের যে জীবন পাঠক দেখে, সে জীবন আসলে ঠিক কতোটা কুবেরের? প্রশ্ন থেকে যায়! কায়েস আহমেদ ও জেলেপল্লীতে দিন কাটিয়েছিলেন । অবশ্য জেলেদের নিয়ে তার কোনো লেখা আমি পড়িনি । আত্নহত্যা না করলে হয়তো লিখতেন । ক্লাসিক বাদ দেই । আনিসুল হকের একটা উপন্যাস(আসলে বড় গল্প) পড়েছিলাম । নাম মনে পড়ছেনা । নিরন্নের কাল?( না সম্ভবতঃ, এই নামে ইহ মিলনের একটা দুর্দান্ত ছোটগল্প আছে অনেক বছর আগের)। যাহোক, উত্তর বঙ্গের মঙ্গাপীড়িত এলাকার গল্প । এক লোক তার সদ্য বিয়ে করা বৌকে ছেড়ে কার্তিক মাসের কোন একদিন বেরিয়ে পড়েছে কাজের সন্ধানে । গ্রাম ছেড়ে কুড়িগ্রাম শহর, সেই শহর ছেড়ে নাইটকোচের ছাদে চড়ে আসছে আরো বড় শহরে । রাতের রুপালি চাঁদের আলোয় সে বিবাগী হয়, মনে পড়ে রেখে আসা বৌ এর কথা । বিরহ ও বিষাদ তাকে গ্রাস করে । পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,একটা পুরোদিন যার পেটে কোন খাদ্য পড়েনি,যার কোন আগামীকাল নেই--রুপালী চাঁদ কি আসলেই তাকে বিবাগী করতে পারে? নাকি মধ্যবিত্ত ও উচচমধ্যবিত্ত শ্রেনীভুক্ত লেখক নিজে চাঁদ ও জোছনাআক্রান্ত হ্ন বলে,সেটা অগোচরে চেপে যায় তার লেখার চরিত্রের উপর? লেখক কি আসলেই জানেন এই অবস্থায় এই শ্রেনীর একজনের ভাবনার রসায়ন? যুক্তি দেয়া যায়, লেখক তো আর ডকুমেন্টারী তৈরী করছেন না । রবীন্দ্রনাথ জমিদারনন্দন । তবু ঘুঁটেকুড়ানীর জীবন তিনি ধরতে পারছেন তার অনুভূতিতে, সেই অনুভূতির অনুবাদ আসছে তার সৃষ্টিতে । এখানেই তো বরং লেখকের এগিয়ে থাকা,তার কল্পনা , অনুভূতি ও বোঝে নেয়ায় । নয়তো লেখক আর ফটোগ্রাফারের মাঝে ব্যাবধান কি? তবু যেনো কোথাও একটা ফাঁকি থেকে যায়, থাকে নাকি?

মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি
টার্গেট পাঠক তো আপনি নন,টার্গেট পাঠক হলো কলেজ পড়ুয়া কিশোর কিশোরী।একটু চাদঁ,ফুল না দিলে বই চলবে কেমনে? এটা হলো ফ্যাকট।বই বেচেঁ ফ্ল্যাট কিনতে হলে বহুত ফ্যকড়া দিয়ে যেতে হয়।
হাসান মোরশেদ এর ছবি
বোঝলাম । আর কিছু বলার নাই? (হর্তাকর্তা মহাশয়ের অনেক দয়া, আমার পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শনের জন্য । কিন্তু সামহোয়ার যদি কপিরাইটের মামলা করে? ওখানের সবকিছু নাকি তাদের?)

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সচলায়তন এর ছবি
ছবি দেন, বদলে দিই -------------------------------------- ঈশ্বরের ক্ষমতা অসীম, তথাপি তিনি ক্লীব

_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ

হযবরল এর ছবি
ফটোগ্রাফার কিন্তু সেই মূহুর্তই ধারণ করেন যেটা নিজের কল্পনার রংয়ে কাম্য মনে হয়। সব মূহুর্ত তারা ধারণ করেননা। লেখক এ জায়গায় এগিয়ে।
সচলায়তন এর ছবি
সচলায়তনের কন্টেন্ট তো দেখি গর্ব করার মতো হয়ে যাচ্ছে! হা.মো. জিন্দাবাদ! -------------------------------------- ঈশ্বরের ক্ষমতা অসীম, তথাপি তিনি ক্লীব

_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ

হাসান মোরশেদ এর ছবি
বদলানোর দরকার নাই । ঠিকাছে এটাই ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
সব স্যারেরা গা ঝাড়া দিয়া লেখা শুরু করলে দেখবেন জিনিস কি দাড়ায় । সুমন চৌ রে বলেছি একটা ধারাবাহিক লেখার জন্য । শোমচৌ রে ধারাবাহিক ধরাতে হবে ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
(বুঝছি,ফালটুস কমেন্টবাজী করার দিন ফুরাইলো।) বিষয়টিকে আমি দেখছি যেভাবে সেটা হচ্ছে ,কাহিনী আর গল্পের মাঝে তফাত আছে।যা ঘটেছে,সেটিই কাহিনী কিন্তু গল্প অন্য জিনিষ।গল্পে লেখকের একটা বক্তব্য থাকে,সেই বক্তব্যের দিকে তিনি পাঠককে টেনে নিয়ে যান।সেই আবহটা সৃষ্টি করার জন্য তিনি না না কৌশল অবলম্বন করেন। (যা ঘটে তা সত্য নয়,কবির মানসভূমিই পবিত্র আর সেখানেই রামের জন্ম,এ কথা তো এই পোড়া জনপদে বহু আগেই বলা হয়েছে।) এখন ধরাযাক একজন নৃত্য পরিবেশন করবেন,তিনি কিন্তু এমনি এমনি নাচঁলেই হয়,তার শরীরের আলোড়নকে প্রতিষ্ঠিত করতে মঞ্চে আলো ফেলতে হয়,ঘুঙুর বাজাতেহয়,পোশাকে চমক আনতে হয়,এগুলো অনুষঙ্গ। লেখক যখন সৃষ্টি করছেন,তখন তিনিও অনুষঙ্গ ব্যবহার করছেন।আর সেটি ব্যবহার করছেণ বাস্তবতার আরেকটু বাইরে গিয়ে। দূ:সংবাদ দেবার আগে এক ধরনের আবেশ সৃষ্টি করতে হয় শ্রোতার মনে,যাতে সেটি সহনীয় হয়,তেমনি মূল কথায় যাবার আগে পাঠককে মোহগ্রস্থ করে ফেলতে হয় চরিত্রের সাথে,সেখানে একজন ক্ষুধার্ত ভূমিহীনের মনেও মধ্যরাতে প্রেম দিতে হয়,আর এই যে বাস্তবতার বাইরে বেরিয়ে এসে চরিত্র নির্মান,সেটি লেথকের মূল কথা বলার জন্যই দরকার।একে ফাকি বলতে চাই না।কঠোর সত্য লিখলে ভালো সংবাদ হয়,ফিকশন হয় না। এথন এই চরিত্র নির্মান আবর লেখকের ক্ষমতা অনুযায়ী,তার টার্গেট পাঠক অনুযায়ী,তার জ্ঞান আর রুচি অনুয়ায়ী হয়। আনিসুল হক যখন লিখেন তখন তিনি সেই নববিবাহিত তরুনের কাছে চাদঁকে স্ত্রীর মুখ হিসেবে প্রকাশ করেন,আর আমি লিখলে হয়তো নববিবাহিত তরুনের মাঝে চাদঁ দিয়ে কোন যৌনচিন্তা ঢুকিয়ে দিতাম।
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
আগ্রহী বিষয়। আরো জানতে চাই এ বিষয়ে। বিশ্লেষণ চলুক - - - _____ মোরশেদ ভাই, একটা প্রশ্ন: আপনার প্রোফাইলের ছবিতে কী লেখা আছে?
সৌরভ এর ছবি
অনুভূতি দিয়ে কতটুকুইবা পৌছোনো যায় - বাস্তবের কাছাকাছি ? ‍‍‍--------ooo0------ এই আমি যদি জেগে উঠি অন্য কোন সময়ে অথবা অন্য কোন পৃথিবীতে ,তবে কি পারতাম আমি অন্য একজন হয়ে উঠতে ?

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি
শিমুলঃ শুধু জানতে চাই বললে চলবে?জানা শেয়ার করো, জানাও আমাদেরকেও । টি-শার্ট এর ছবিটা পোষ্ট করবো ভাবছি । সৌরভঃ প্রশ্ন সেটাই । অনুভূতি দিয়ে যে ছবি আঁকা হয় সেটা শৈল্পিক হতে পারে কিন্তু কতোটা সত্য? আমি হাসান মোরশেদ কোনদিন নিজ বস্তিতে থাকিনি । বস্তির জীবন দেখেছি দূর থেকে । বস্তির জীবন নিয়ে যদি আমি গল্প লিখি আমার আবেগ দিয়ে, সেটা কতোটুকু আসল গল্প হতে পারে? -------------------------- আমি সত্য না হলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ভাস্কর এর ছবি
দেবেশ রায় এক সাক্ষাতকারে রবি ঠাকুরের লইয়া এই অভিযোগ করছিলেন...তিনি কইছিলেন রবিবাবুতো বানাইয়া বানাইয়া গল্প লিখছেন... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসান মোরশেদ এর ছবি
আমি সেই অভিযোগ করছিনা সরাসরি । বানিয়ে লেখাটা যদি আসল ছবি এঁকে ফেলে সমস্যা কি? সেটা তো আরো সাব্বাস । কিন্তু এরকম আসলে যায় কি? -------------------------- আমি সত্য না হলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ভাস্কর এর ছবি
অনেক রিয়েলিস্টিক গল্প করতে গেলে মনে হয় না যায়...তয় যদি পোস্টার টাইপ কিছু করনের ইচ্ছা হয় তাইলে ঐসব কিছু বিষয় থাকে না...মেসেজটাই আসল... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
আলোকচিত্র আর তৈলচিত্রের মাঝে ফারাক আছে।শুধু তাই না,আলোকচিত্রের মাঝেও সরাসরি ছবি তোলা আর লাইট,এপারচার,ফোকাসের কেরদানি করে ছবি তোলার মাঝে তফাৎ আছে বিস্তর। এখন দেখতে হবে শিল্প কি?শিল্প তো উৎকর্ষ সাধনেরই চেষ্টা,তাই না? সাহিত্যে মানুষের জীবনের মহত্তম সম্ভাবনার কথাই আলোচনা হওয়ার কথা,সেখানে মানুষের সুক্ষ সুক্ষ আবেগকে চিত্রিত করার একটা প্রয়াস নেন লেখক,সেই সুক্ষ আবেগকে ফোকাস করতে গিয়ে যদি একটু লাইট আর এপারচারের কেরামতি না দেখান,তাহলে শেষ পর্যন্ত কিন্তু মূল বিষয়টিই ছবিতে ধরবে না। তাই,চরিত্র চিত্রনে লেখকের স্বাধীনতাটা আপাত:দৃষ্ঠিতে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেলেও একটা পর্যায় পর্যন্ত সেটাকে সমর্থন করতে চাই।লেখার মূল উদ্দেশ্য সাধনে যদি প্রয়োজনীয় মনে হয়,তাহলে সেটা ঠিকই আছে।
হাসান মোরশেদ এর ছবি
সাহিত্যে মানুষের জীবনের মহত্তম সম্ভাবনার কথাই আলোচনা হওয়ার কথা কেনো? মানূষের যাপিতজীবন কিংবা স্বপ্নজীবনের সবটুকু কি কেবল মহত্বে পূর্ন? এখানেই প্রশ্ন আসে ম্যাসেজ দেবো? প্রেস্ক্রিপশন দেবো? নাকি নির্মোহ হয়ে শুধু ছবিটা এঁকে রাখবো? -------------------------- আমি সত্য না হলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
নির্মোহ হয়ে লেখক লিখতে চাইছেন কেন?কেন তিনি চাইছেন যে এই যাপিত জীবনের কথা অন্যরা জানুক?কারন তার অবচেতন মনে এই অবস্থা থেকে উত্তরনের একটা চেষ্টা আছে।কুবেরের প্রতি বা লালসালুর জমিলাদের প্রতি লেখক একধরনের মমত্ত বোধ করছেন বলেই কিন্তু তিনি লিখে রাখছেন সময়কে।আর এই যে কুবেরের দূ:খ বোধকে লালন করে কুবেরকে মানুষ বানানোর আকুতি,সেই জন্যই কিন্তু লেখককে একটি ছবি আকঁতে হচ্ছে,আলোকচিত্র নয়।আর এখানেই সাধারন মানুষের জন্য মহত্তম জীবন কামনা করছেন লেখক। শুধু যদি স্ট্রেট লিখে যাবার ব্যাপার থাকে,তাহলে তো তিনি সাংবাদিকতা করতেন,একেবার জেলে পট্টিতে গিয়ে ছবি সহ একজন কুবেরের জীবনের কথা বলতেন,সেটি হয়তো ফ্রন্টপেজে ছাপাও হতো,কিন্তু দিনের পর দিন টিকে থাকতো না। দিনের পর দিন টিকিয়ে রাখার জন্যই শিল্পের সৃষ্ঠি করছেন লেখক,আর সেকারনেই তাকে ছবিতে অনুষঙ্গ যোগ করে পূর্ণাঙ্গ কুবেরের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হচ্ছে।চরিত্র সেখানে হয়তো পুরো ঠিক না,বাস্তব কুবের হয়তো এভাবে ভাবে না,কিন্তু কুবেরের স্বার্থেই লেখক তাকে দিয়ে এভাবে ভাবিয়ে নেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।