'মুক্তি' না 'স্বাধীনতা'র যুদ্ধ?

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৩/২০০৯ - ৭:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশ ক'বছর আগে প্রথম আলো'তে ডঃ আনিসুজ্জামানের স্মৃতিকথা ধারাবাহিক প্রকাশ হতো । এখনো হয় কিনা জানিনা ।
'৭৬ কিংবা '৭৭ সালের একটা ঘটনা বর্ননা করেছিলেন আনিসুজ্জামান ।
জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি ও বটে । আনিসুজ্জামান সম্ভবতঃ তখন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । জেনারেল রাষ্ট্রপতি গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে । বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে শিক্ষকদের সাথে বৈঠক । আনিসুজ্জামান সহ ক'জন প্রগতিশীল শিক্ষক দাবী জানালেন 'মুক্তিযুদ্ধে' শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের স্মৃতিতে সৌধ নির্মানের ।
কালো চশমায় চোখ আড়াল করা জেনারেল রাষ্ট্রপতি তার কন্ঠে বিরক্তি ঝরিয়ে বলেছিলেন- আমরা তো 'স্বাধীনতা' যুদ্ধ বলি, আপনারা 'মুক্তিযুদ্ধ' বলছেন কেনো?

অবশ্য শেখমুজিব তার ৭ই মার্চের ভাষনে দুটোই উচ্চারন করেছিলেন-

যারা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন তাদের সাংগঠনিক পরিচয় কিন্তু ছিলো 'মুক্তিবাহিনী' ।

শেখ মুজিবের ভাষন থেকে ধরে নেয়া যেতে তিনি 'স্বাধীনতা' ও 'মুক্তি' এই দুটোকে আলাদা করেই ভেবেছেন।

কিন্তু ঐ ভাষনের মাত্র বছর ছয়েক পরে যখন অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়ে গেছে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, এই 'স্বাধীনতা' যারা ছিনিয়ে এনেছেন সেই 'মুক্তি'যোদ্ধারা যুদ্ধ জয়ের পর ও পরাভূত , যার নামে মুক্তির যুদ্ধ তিনি ও নিহত- তখন জেনারেল রাষ্ট্রপতি জানালেন- ঐটা কেবল স্বাধীনতার যুদ্ধই ছিলো, 'মুক্তি'র নয় ।

এই পোষ্টের পাঠকরা কে কি ভাবেন '৭১ এর যুদ্ধ নিয়ে- ঐটা কি কেবল 'স্বাধীনতা' যুদ্ধ নাকি 'মুক্তিযুদ্ধ' ও ছিলো?


যদি মুক্তিযুদ্ধ ও হয়ে থাকে স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে তার স্বাতন্ত্র্য কোথায়?


জেনারেল রাষ্ট্রপতির মতো যারা মুক্তিযুদ্ধকে কেবল স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবেই খন্ডিত করতে চান-তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো কিংবা আছে?


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, জামাত ও ডানপন্থীদের "স্বাধীনতা" শব্দটির প্রতি এবং "মুক্তি" শব্দটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি রকমের অবসেশন আছে। যেমন, জামাতী বনে যাওয়া সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান এর পুত্র মুরাদ খান দীর্ঘদিন যাবত উইকিতে এই ট্রোলিং করে যাচ্ছে, যেখানে যেখানে Liberation War দেখে, সেখানেই তা পালটে War of Independence করে দেয়ার চেষ্টা করে। হাজার প্রশ্নের পরেও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কেনো এই বাতিক। এখন আপনার পোস্ট দেখে মনে হচ্ছে, এটার কোনো অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

রাগিব এর ছবি

War of independence মোটেও ভুল নয়। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইংরেজিতে Bangladesh Liberation War নামেই বেশি পরিচিত, এমনকি বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়টির নামও Ministry of Libaration War Affairs ...কাজেই মূল নিবন্ধটির নাম সেভাবেই বহুদিন ধরে রয়েছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

একটা সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। Independence বা স্বাধীনতার জন্য অনেক দেশেই যুদ্ধ/সংগ্রাম হয়েছে। এর পেছনের কারণগুলো অনেক ক্ষেত্রেই স্রেফ রাজনৈতিক। Liberation বা মুক্তির জন্য যুদ্ধে রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ইত্যাদির প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীনতা যুদ্ধ নাম দিতে পারলে কোন এক সময় হয়তো পাকিস্তানী শোষনের অন্যান্য দিককে আড়াল করে ফেলা যাবে।

উদাহরণঃ ভারতবর্ষ বিভক্তির পেছনে সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় কারণের চেয়ে কায়েদে আজমের রাজনৈতিক অভিলাষ ভূমিকা রেখেছে বেশি। চুপচাপ 'মুক্তিযুদ্ধ'কে 'স্বাধীনতা যুদ্ধে' অবনমিত করতে পারলে কোন এক সময় একে "শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ" বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।

স্বাধীনতার তুলনায় মুক্তি অনেক ব্যাপক। এই ব্যাপকতা কমিয়ে আনলে কট্টরপন্থীদেরই লাভ। স্রেফ দু'মুঠো ভাতের জন্য বাংলাদেশ হয়নি। তবে যদি তা বিশ্বাস করানো যায়, তাহলে দলীয় শৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে জামায়াতই ক্ষমতায় আসবে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাহ, তা কখনই নয়। ব্যাক-ক্যালকুলেশন করছিলাম আমি।

১৯৭১-এ বাংলাদেশ মুক্তির জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমার বিবেচনায়, বাংলা/বাঙালি "মুক্তি"র জন্য প্রস্তুত ছিল শুধু ১৭৫৭ সালে। এরপর আর কোন প্রজন্মই "মুক্তি"র জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। ১৯৭১-এ আমরা স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সাথে মুক্তির একটা মিশেল চাইছিলাম।

সমাজে বিভিন্ন "কোড ওয়ার্ড" ব্যবহৃত হয়। এই শব্দগুলো মনকে আপনা থেকেই একেক দিকে প্রভাবিত করে ফেলে। মুক্তি আর স্বাধীনতার বেলায় তেমনই। আপনি-আমি একে "গৃহযুদ্ধ" ডাকলেও কট্টর ভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করে যাবো, কিন্তু আজ থেকে ৩০ বছর পর "মুক্তি"র বদলে "স্বাধীনতা" প্রচলিত হলে এর দ্যোতনা অন্য রকম হয়ে যাবে।

কোড ওয়ার্ডের উদাহরণঃ প্রো-লাইফ, প্রো-চয়েস, ডেথ ট্যাক্স, ইত্যাদি। এগুলো পাশ্চাত্যে অনেক বেশি চর্চিত ও বিশ্লিষ্ট হলেও আমাদের দিকে কম হয়। তবে আমজনতার উপর এর প্রভাব অনস্বীকার্য।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ঠিক। ওভাবে না বললেই ভাল হত। পরিচয় না জানা থাকলে আমিও ছাগু পুরস্কার পেয়ে যেতাম ঐ কথার জন্য। মুক্তির সাথে বিভেদটা আরো সুচিন্তিত শব্দচয়নে বোঝানো যেত। হয়তো বলা যেত যে মুক্তির তুলনায় স্বাধীনতার ধারণা অনেক বেশি জাগতিক।

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণার সময় আক্রান্ত ছিলো। ২৫শে মার্চ রাতের হামলার পর স্বাধীনতার ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে আসে। সেসময় গোটা দেশ যেহেতু আক্রান্ত ছিলো, তাকে Liberate করার জন্যে যুদ্ধ হয়েছে। Independence এর জন্য সবসময় যুদ্ধ করতে হয় না, উদাহরণ, পাক-ভারত দেশবিভাগ, Liberation এর জন্য করতে হয় কারণ শত্রু বিনা যুদ্ধে দখলকৃত ভূমি ছেড়ে চলে গেছে এমন নজির নেই। War of Independence বললে বাংলাদেশে শত্রু হিসেবে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ভূমিকা অর্ধস্বীকৃত/অস্বীকৃত থেকে যায়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

হিমু এর ছবি

হয়তো বলা যায়। কিন্তু এখানে কনটেক্সট ভিন্ন। তাবৎ Independenceকে Liberation করার কোন উদ্যোগ নেয়ার অর্থও নাই। Liberation War কে যে কারণে War of Independence করার দরকার নাই।

তবে এই নুয়্যান্সটুকুর গুরুত্ব সবাই দিবে, সেটাও আশা করা ভুল।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

"মুক্তি" ব্যাপারটা অনেকটা শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশনের সেই জেল ভেঙে বৃষ্টিতে বের হওয়ার মত, কিংবা উইলিয়াম ওয়ালেসের শেষ নিঃশ্বাসের সাথে সাথে তীব্র চিৎকারের মত। যুদ্ধ আমরা মুক্তির জন্যই করেছি, হয়তো পুরোটা পাইনি। মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছি বলেই চাষা-ভুষার দল হারিয়ে দিয়েছিল হানাদার বাহিনীকে।

"স্বাধীনতা"ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মুক্তির মত ব্যাপক নয়। স্বাধীনতা মানুষকে বেড়া ডিঙিয়ে পাশের বাড়ি যেতে দেয়, মুক্তি দেয় ঘাসের উপর শুয়ে নক্ষত্রের খেলা দেখতে।

মুক্তি মানে সমান অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবতা। এর পাশে রেখে তুলনা করলে স্বাধীনতার মধ্যে কিছুটা খাবলে-খাওয়া গন্ধ আছে। হয়তো সেজন্যই "মুক্তি"কে "স্বাধীনতা" করার হিড়িক।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মুক্তি মানে সমান অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবতা।

৩৮ বছরেও তাহলে মুক্তি মিলে নাই। অন্তত বাংলাদেশে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশটুকু সম্ভবত এরকম:


"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা"
এবং ভাষণ শুনলে মনে হয় স্বাধীনতার উপর 'জোর' বেশি ছিল। আমি যে অর্থে এটার ব্যাখ্যা করতে চাই তা হলো উনি দুটো শব্দকেই হয়তো সমার্থক ধরছেন।

কখনো এতটা গভীরভাবে চিন্তা করিনি। রাগিবের মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে কেউ কেউ অসাধু উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করছে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ধন্যবাদ । ঐ জায়গাটা তাহলে একটু ঠিক করে নিচ্ছি ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

আমার কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ = মুক্তিযুদ্ধ। আলাদা করে কখনই দেখা হয়নি।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি আলাদা কিছু মনে করিনা ... বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যদিও "মুক্তির সংগ্রাম" এর চেয়ে "স্বাধীনতার সংগ্রাম" ফ্রেজটা বেশী তাৎপর্যবহ ছিলো (এই অর্থে যে মুক্তির সংগ্রাম ঠিক পুরোপুরি ক্লিয়ার করেনা যে আমরা স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছি, "মুক্তির সংগ্রাম" ফ্রেজটা যেকোন কুশাসকের বিরুদ্ধেই শাসক হটানোর লক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়)

তবে যুদ্ধের ব্যাপারটা যখন আসে তখন মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা যুদ্ধ দুটোকেই আমার একই মনে হয় ... দুটোরই অভীষ্ট এক, পাকিদের থেকে স্বাধীন হয়ে আমরা বাংলাদেশ গঠন করবো

টার্মিনোলজী নিয়ে জিয়ার অতিরিক্ত ক্যাৎরামি আমার কাছে সবসময়ই বিরক্তিকর লেগেছে ... বাঙালী/বাংলাদেশী নিয়ে আজাইরা প্যাঁচ বাঁধানো, জয়/জিন্দাবাদ নিয়া ধর্মীয় সুড়সুড়ি, বেতার/রেডিও নিয়ে এলিটিপনা , এরকম আরো কত!

যদিও রাগিবের দেয়া উদাহরণটা অন্যরকম চিন্তার উদ্রেক করে (জানিনা জামাতীরা মুক্তিযুদ্ধ টার্মটা সচেতনভাবে এড়ায় কিনা),
তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের যখন তখন "মুক্তিযুদ্ধ" টার্মটা বিনাবাঁধায় ব্যবহার করতে দেখে, এবং সচেতনভাবে শুধু "স্বাধীনতা যুদ্ধ" ব্যবহার করছে এমনটি না দেখে, আমার মনে হচ্ছে যে, সেরকম কোন ইস্যু দাঁড় করানোর জন্য জিয়া এটা বলেননি ... বরং, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে ইন্টেলেকচুয়াল মাতবরি করার একটা চান্স পেয়েই ঝেড়ে দিয়েছেন ...
শুনতে খারাপ শোনালেও বলছি, সেনা-ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের এই টেন্ডেন্সীটা আমি ব্যক্তিজীবনেও অনেক দেখেছি ... যেকোন পয়েন্ট পেলেই হলো, তারা সবরকম গ্রাউন্ডে আশেপাশের অন্যদের সাপেক্ষে আপার হ্যান্ডে চলে যাবার জন্য ছোঁকছোঁক করে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

আতিক রাঢ়ী এর ছবি

স্ব-আধীন হোলেই মুক্তি আসেনা ভাইরে, পকেটে পয়সা না থাকলে চিনা বাদাম অন্যে চিবাবে আপনি দাখবেন।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

প্রঃ "জেনারেল রাষ্ট্রপতির মতো যারা মুক্তিযুদ্ধকে কেবল স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবেই খন্ডিত করতে চান-তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো কিংবা আছে?"

উঃ তাদের ১মাত্র উদ্দেশ্য পাবলিকের হাতে পাছাপোড়ান্তিস্ খাওয়া।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা [অতিথি] এর ছবি

বিনয়ের সাথে বলতে হচ্ছে, লেখাটার শেষে ৩টি প্রশ্নের প্রথম ২টি যথেষ্ঠ প্রাসঙ্গিক ও আলোচনার দাবী রাখে, তেমনি ৩য় প্রশ্নটি পুরো লেখাটাকেই খেলো করে দিয়েছে ।

৭ই মার্চের ভাষনের আলোকে যা বুঝি তা হলো, স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে ।

আর, জ্বিনের বাদশার সেনা-ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের টেন্ডেন্সীর সাথে সহমত ।

আরেকটা প্রশ্ন আসা উচিত, “মুক্তিযুদ্ধ” বা “স্বাধীনতাযুদ্ধ” বলা ঠিক হবে নাকি “স্বাধীনতার সংগ্রাম” কিংবা “মুক্তির সংগ্রাম”?

~

(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বিনয়ের সংগেই জানতে চাচ্ছি- কেনো তৃতীয় প্রশ্নটি পুরো লেখাটাকেই খেলো করে দিয়েছে?

একজন রাষ্ট্রপতি(হোক সে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী) যখন বলেন- তিনি বা তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেন , মুক্তিযুদ্ধ নয় তখন এই প্রশ্ন উত্থাপন কি খুব খেলো হয়ে যায় কেনো শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ, কেনো মুক্তিযুদ্ধ বলা যাবেনা? মুক্তিযুদ্ধই যদি না হবে তাহলে যোদ্ধাদের সাংগঠনিক নাম মুক্তিবাহিনী কেনো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

সমার্থক
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অনামিকা এর ছবি

ছোটবেলা থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ দুটো শব্দ চিন্তা না করেই সমানভাবে ব্যবহার করে এসেছি । জানতামনা এ নিয়ে অন্য চিন্তা থাকতে পারে !

স্বাধীনতা যুদ্ধ = ভালবাসা
মুক্তিযুদ্ধ = প্রেম
মুক্তিযোদ্ধা= প্রেমিক

মুক্তিযুদ্ধ (প্রেম) শব্দটি থাকতে হবে, নইলে মুক্তিযোদ্ধা (প্রেমিক) থাকবে কি করে? 'মুক্তিযুদ্ধ'-র ব্যবহার কমালে ধীরে ধীরে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভুলতে থাকবো ।

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি তো সমার্থকই মনে করি।
তবে দুটো সমার্থক শব্দের মধ্যে যখন জামাতিরা কোন বিভ্রাট তৈরি করার পায়তারা করতে থাকে তখনই এখানে ভণ্ডামির আলামত পেয়ে যাই। অরিজিনালী জিয়া তো তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিলেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জেনারেল রাষ্ট্রপতির মতো যারা মুক্তিযুদ্ধকে কেবল স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবেই খন্ডিত করতে চান-তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো কিংবা আছে?

এখান থেকেই উত্তরটা দেই...
মুক্তিযুদ্ধ কেবল স্বাধীনতার যুদ্ধ না। স্বাধীনতা, স্বাধীকার, ভৌগলিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সবরকম দাবীর মিলিত যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত রূপ হিসেবে প্রচার করতে চায় অনেকেই, সচেতনভাবেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যানন্দ এর ছবি

কেনো যুদ্ধ করেছিলাম - এ প্রশ্নের উত্তরে জহির রায়হানের একটি গল্প পড়েছিলাম ''সময়ের প্রয়োজনে"।
যাই হোক, স্বাধীনতা যুদ্ধকে যারা মুক্তিযুদ্ধ বলে ' পূর্ণত্ত্ব ' প্রদান করছেন এবং বাকীদের 'জেনারেল জিয়ার' মতো 'খন্ডিত' মতের বলছেন তাদের সাথে একমত নই ।আমি মনে করি, মানুষ মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিল,
কিন্তু পেয়েছে পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বাধীনতাও নয়, শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা । কে কোন উদ্দেশ্য থেকে কোন কথা বলছে তা নোটে নেয়া দরকার ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তাহলে অনুরোধ করছি জহির রায়হানেরই ১৯৭১ সালে লেখা একটা প্রবন্ধ পড়তে... "পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ"।

আমি মনে করি, মানুষ মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিল,
কিন্তু পেয়েছে পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বাধীনতাও নয়, শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা ।

এখানেই তো বলে দিয়েছেন বেশ সুন্দর করে... মানুষ মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিলো। যুদ্ধটা মুক্তি জন্যই ছিলো। হয়তো পূর্ণ সফল হয়নি। বা পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়নি, কিন্তু যুদ্ধটা মুক্তি জন্যই... সময়ের প্রয়োজনে যারা যুদ্ধ করেছিলো তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করে নাই, মুক্তিযুদ্ধ করছিলো... এই সত্যটা আনন্দের সঙ্গেই বলতে চাই।

আর ইতিহাস খুব ভালো করেই জানে, কারা এই যুদ্ধের ফল তুলে দিয়েছিলো পরাজিত পক্ষর হাতে... কারা এই বিজয় খণ্ডন করেছিলো... আর তাই তাদের এই খণ্ডনের প্রয়াস... আর তাই তারা মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীনতা যুদ্ধ বলতে চায়।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

১৯৭১ এর যে বিন্দুতে এসে বাঙালি জাতিকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়, সেই বিন্দুতে আসবার আগে তিনটি সংগ্রাম পাশাপাশি চলেছিল। একটি ৫০ দশকের গোড়াথেকে বামপন্থিদের একটি অংশের স্বাধীনতার জন্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা। দ্বিতীয়টি ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে ছাত্র-তরুণদের জাতীয়তাবাদী আকাঙ্খায় সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের চেষ্টা এবং তৃতীয়টি হলো শেখ মুজিবের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন। ৭০ এর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে অবিসংবাদী হিসেবে বেরিয়ে আসা নেতা শেখ মুজিব এই তিনটি ধারার সঙ্গেই কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। সেটাই তাঁর জাতীয় নেতা হিসেবে সাফল্য।

মার্চে এসে এই তিনটি এক ধারায় চলে আসে: স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই সংগ্রামের দুই দশক পুরনো। সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সামরিক তিন পথেই এর প্রস্তুতি চলে। একাত্তর সালে এই তিন লড়াই চূড়ান্ত রূপ নেয়। সুতরাং একাত্তরের যুদ্ধ কেবল সামরিক নয়, সর্বাত্মক।

মুক্তি শব্দটি যত ব্যাপকার্থে প্রয়োগ করা হয়, একাত্তরের সংগ্রাম তত ব্যাপকার্থে হয়নি। তখনকার প্রধান দ্বন্দ্ব পাকিস্তানী বৃহত পঁজির পাঞ্জাবি দাপটের বিরুদ্ধে বাঙালি ছোটো বিত্তবানদের নের্তৃত্বে জাতীয় দ্বন্দ্ব। ছয় দফার মধ্যে মুক্তির কথা ছিল না, ছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং এ অঞ্চলের মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কথা। আনুষ্ঠানিক রাজনীতির মধ্যে মুক্তি শব্দটিকে সীমিত অর্থে স্বায়ত্তশাসন/স্বাধীনতা পর্যন্তই ভাবা হলেও, জনতার মেঠো পদচারণায়, বামপন্থিদের উচ্চারণে, কৃষক সমাজের আজন্মলালিত (ইংরেজ-জমিদার-পাঞ্জাবি বেনিয়া বিরোধী) মুক্তির বাসনা ছিল। কিন্তু সেটাকে আনুষ্ঠানিক (ফর্মাল বা সাংবিধানিক) রাজনীতির মধ্যে প্রতিধ্বনিত যারা করতে পারতেন (ভাসানী সহ কমিউনিস্টরা) তারা পিছিয়ে পড়েছিলেন। ফলে বিশুদ্ধ অর্থে মুক্তির সংগ্রাম থাকলেও মুক্তির রাজনৈতিক আন্দোলন ও নের্তৃত্ব এখানে গঠিত হয়নি।

তবুও মুক্তিসংগ্রাম বারে বারে উচ্চারিত হয়, কারণ স্বাধীনতার সংগ্রামের মধ্যে শাঁস হিসেবে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাটি জাগ্রত ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা একাত্তরের মধ্যেই এবং বিজয়ের পরেও সমানভাবে পরিত্যক্ত হয়েছে। সাম্য, সমানাধিকার ও শোষণহীন রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন শেখ মুজিব ও তার দলকে কখনোই চালিত করেনি। সুতরাং যা দৃশ্যমান ছিল না তাকে আশার ছলনে ভুলে ডাকাডাকি করা কেন?

এজন্যই যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম অন্য অনেক দেশের মতো নিছক স্বাধীনতার অর্থে জনগণ বোঝেনি। যেমন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে কেউ সাম্য-মুক্তি-স্বাধীনতার জয় খুঁজতে যাননি। তারা কেবল চেয়েছিল স্বরাজ। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নের্তৃত্বে না হলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বরাবরই ফরাসি বিপ্লবের সেই রণধ্বনি, সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার ডাক তলায় তলায় উচ্চারিত ছিল।

তাই, ১৯৭১ এ আমরা স্বীধনতার সংগ্রামের অংশ হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধ লড়েছি, মুক্তির লড়াই ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরই অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছিনতাই হয়ে গেছে। আহমদ ছফা যাকে বলেন, বেহাত বিপ্লব। একাত্তর তাই আমাদের অসম্পূর্ণ মুক্তি সংগ্রামের স্বাধীনতা পর্বের নাম। এর বেশিও নয়, কমও নয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আহমদ ছফা যাকে বলেন, বেহাত বিপ্লব।

আহমদ ছফা বলেন নাই সম্ভবত। আহমদ ছফার প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করে পরবর্তীকালে এই নাম দেওয়া হইছে বলে জানি।

রাশিয়া চায়নি, আমেরিকা চায়নি, ভারত চায়নি, চিন চায়নি, পাকিস্তান চায়নি বাংলাদেশে বাঙ্গালিদের একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। তথাপি বাঙালি জনগণের দাবি অনুসারে এখানে একটি যুদ্ধ হয়েছে, হতে পারে সে যুদ্ধের ফলাফল অপরে আত্মসাৎ করেছে।

[ছফা ১৯৭৭:৮০]

সলিমুল্লাহ খান থেকে উদ্বৃতি দিতে গেলে বিষয়টা এইরকম দাঁড়ায়- "বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার আসল শত্রু জাতীয়তাবাদ নামক মতাদর্শ। এই জাতীয়তাবাদের ছায়াতলেই বিকশিত হয়েছে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি ও হানাহানি। এই প্রস্তাব মহাত্মা আহমদ ছফার অন্যতম আবিষ্কার। আন্তনিয়ো গ্রামসির ধুয়া ধরে এই প্রস্তাবের নাম আমরা রেখেছি 'প্যাসিভ রেভলু্শন' বা 'বেহাত বিপ্লব'।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যানন্দ এর ছবি

নজরুল ইসলাম বলেছেন >>>>>>>

শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত রূপ হিসেবে প্রচার করতে চায় অনেকেই, সচেতনভাবেই।

>>>>>>>>

একটি সশস্ত্র সংগ্রামের (অর্থাৎ যুদ্ধের) ফলাফল যখন খণ্ডিতভাবেই ধরা দেয় তখন বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের প্রতি যথাযোগ্য শ্রদ্ধা ও আবেগ প্রদর্শনপূর্বক তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধ বল্লে তাতে সমস্যা কোথায় ? এতে কি শহীদদের আত্মদানের প্রতি অসম্মান দেখানো হয় ?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যদি কেউ অসন্মান দেখাইতেই তা বলে সেটা অসন্মানই। আপনি যদি সন্মানই দেখাতে চান তাহলে এই ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোন যে কারণে শহীদ হয়েছেন, সেই কারণেই সন্মান জানান না কেন?

আমি ভাতের জন্য লড়াই করে মরলাম আর আপনি বললেন এই ব্যাটা বার্গার চাইতে আইছিলো তাই গুলি করছি... তাইলে কেম্নে কী?

আর আপনি তো উল্টো হাঁটছেন জনাব। যুদ্ধের ফলাফল দেখে যুদ্ধ নির্ধারণ করছেন। যুদ্ধের খণ্ডিত ফল দেখে বলছেন তাইলে এরা মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে নাই, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে স্বাধীনতা পাইছে।
আর যদি যুদ্ধে পরাজয় হইতো? তাইলে কী বলতেন? এরা হেরে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করছে?

আপনি খুব রসিক... দেঁতো হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

২৫ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্তও বা তারও কিছুদিন পর পর্যন্তও এই দোলাচল ছিলো, রাজনৈতিক হিসাবে হয়তো এটা মূলত স্বাধীনতার সংগ্রামই ছিলো (তখনও যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি)
কিন্তু যখন ফসলী মাঠ থেকে কৃষক উঠে গিয়ে রাইফেল ধরলো হাতে, ছাত্র, জনতা, কৃষক, মজুর নামলো যুদ্ধে, কিছু অবন্য পশু ছাড়া প্রত্যেক বাঙ্গালি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যুদ্ধে নামলো... তখন এটা আর স্বাধীনতা যুদ্ধ কেবল থাকলো না, এই মানুষগুলো ডান বাম না বুঝে স্রেফ মুক্তির জন্যই যুদ্ধ করলো। জীবন উৎসর্গ করলো।
এবং এই বিজয় কোনো রাজনৈতিক বিজয় না, প্রতিটি বাঙ্গালির বিজয়...
তাই আমি এটাকে স্রেফ মুক্তিযুদ্ধই বলতে চাই।
প্রত্যাশিত মুক্তি হয়তো আসেনি, কিংবা হয়তো মুক্তির নামে আমরা এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় বন্দি হয়ে গেছি... কিন্তু যুদ্ধটা মুক্তির জন্যই ছিলো। এটা বিশ্বাস করি।
স্বাধীনতা যুদ্ধ বললে তখনি আপত্তি হয়, যখন কেউ বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এই শব্দ ব্যবহার করে...

আমার স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ কোনোটাতেই আপত্তি নাই। কিন্তু যেহেতু একটা বিশেষ চিহ্নিত গোষ্ঠী একে বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করছে তখন আমি মুক্তিযুদ্ধ-তেই আস্থা রাখতে চাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রথমে পোস্টটির শিরোনাম দেখে আমি ভাবলাম হাসান মোরশেদ এসব বহুল আলোচিত বিষয় নিয়ে কেনো ফের কচলাকচলি করছেন। নতুন বিষয় নিয়ে লিখলেই তো পারতেন। কিন্তু নীচে অন্য অনেকের মন্তব্য দেখে বুঝলাম এসব বহুল আলোচিত বিষয়গুলোও সবার কানে এসে ঠিকঠাক মত পৌঁছায়নি। পরিষ্কারও হয়নি।

এই লেখার সাথে আমি একটা তথ্য যোগ করি, যা জানলে আপনারা বুঝতে পারবেন মুক্তির বদলে স্বাধীনতা শব্দটি ব্যবহার করা, যারা ব্যবহার করেন, তাদের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুর ঘোষণায় বা প্রিএ্যাম্বেলে 'মুক্তির সংগ্রাম' কথাটি একাধিকবার লেখা ছিল। জিয়াউর রহমানের আমলে 'মুক্তির সংগ্রাম' শব্দবন্ধগুলো বদলে 'স্বাধীনতার যুদ্ধ' করা হয়েছে।
পৃথিবীর যত দেশে যত সংবিধান পরিবর্তিত হয়েছে তাতে প্রিএ্যাম্বেল পরিবর্তনের নজির প্রায় নাই (কথাটা একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তৃতা থেকে জানি)। কিন্তু কেন সংগ্রাম ও মুক্তি শব্দগুলো বদলানোর দিকে এরকম শকুন দৃষ্টি নিয়ে একটি সরকার তাকিয়েছিল তা বিশ্লেষণের দায় আপনাদের মস্তিষ্কের ওপর ছেড়ে দিলাম।

এখানে মুক্তি ও সংগ্রাম দুটো শব্দের মাহা্ত্ম্য বুঝতে হবে।

(আপনাদের জন্য ক্লু দিতে পারি। জিয়াউর রহমান একটি দল করেছিলেন - যা একটি বিশেষ ধারার সৃষ্টি করেছিল -যার ছায়াতলে নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা বিরোধীরা - ইসলামিক গং এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী চীনা বামপন্থী গং। এই যে বিশাল ছায়া এর নাম হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল। জাতীয়তাবাদ শব্দটি খুব পুরনো নয়। আর শুধু এই আদর্শ নিয়েই আন্দোলন করলে পৃথিবীর পুঁজিবাদী দেশগুলোর সহজ সমর্থন পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এসব পুঁজিপন্থী দেশ পৃথিবীর নানা উন্নয়নশীল দেশের সংগ্রাম-আন্দোলনের চেষ্টার মধ্যে গিয়ে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা আবিষ্কার করে তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ও তাকে সমর্থন জানায়।
একইভাবে যুদ্ধ শব্দটা লাদেন থেকে শুরু করে বুশ পর্যন্ত সবাই পছন্দ করলেও সংগ্রাম শব্দটা নাস্তি। মুক্তির কথা বললে কেমন জানি শোষণ থেকে মুক্তি আর শ্রেণিসংগ্রামের কথা মনে পড়ে যায়। কেমন জানি কমিউনিস্ট গন্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কী কোনো সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল নাকি? হুমম...ভাবেন।
এইখানে আরেকটা কথা যুক্ত করি যে যখন এই মুক্তির সংগ্রাম কথাটা সংবিধানে বদলানো হয় তখন সংবিধানের মূলনীতিতে থাকা সমাজতন্ত্র শব্দটির খোলস রেখে মূল অর্থ পাল্টে দেয়া হয়।
কেন দেয়া হয় - তা আপনারা গবেষণা করে পুনরাবিষ্কার করেন।

শুধু একটাই অনুরোধ গবেষণাটিকে বদরুদ্দীন উমর বা ফরহাদ মজহারিয় কায়দায় ত্যানা পেঁচাইয়া বিষয়টিকে ফের ছাগলের প্লেটে নিয়া মুখের গ্রাস বানায়া দিয়েন না।)

-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কথা হচ্ছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অনেক মৌলিক উপাদানই মুক্তিযুদ্ধে ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের মার্কিনপন্থীরা একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে একটা সমঝোতায় আসবার অপেক্ষায় ছিল। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন সমাজতন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগের মার্কিনপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। পুরো নয়মাস বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় জড়িত ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমেদ খুব খোলাখুলিভাবে সোভিয়েতপন্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোগুলো বাদ দিলে গান্ধীর কংগ্রেস বাংলাদেশকে অন্তত ১৯৭১ সালে কিসিঞ্জারের থাবা থেকে বাঁচাতে পারতো না। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ নামে ১৯৭১ সালে সংঘটিত ঘটনা কতটা শ্রেণী সংগ্রাম, এই ইস্যুতে '৯০ পরবর্তীতে এঞ্জিও ফান্ডিং খাইয়া লেজ মোটা হওয়া প্রাক্তন মস্কোপন্থীরা বা একেবারে আদি অকৃত্রিম মার্কিনপন্থী (একাধারে সমস্ত ডান এবং মধ্যডান অংশ) আওয়ামী লীগাররা যা বলেন তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র বস্তুত: গোলামাজম-নিজামীদের থেকে অভিন্ন।

"জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম" কথাটিকে ৫ম সংশোধনীতে "জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ" করার ক্ষেত্রে মুক্তি সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা শব্দ দুটির কোন দ্বান্দ্বিক অবস্থান অনুপস্থিত। জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম কথাটির সাথে জড়িত বাংলাদেশের সরকারী নাম "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"। পিপলস রিপাবলিকের জন্ম হতে হয় মুক্তি সংগ্রাম থেকে। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে যেকোন কিছু হতে পারে। স্বাধীনতা কথাটি আসলে এখানে দুধভাত। মুক্তি সংগ্রাম কথাটির সাথে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের বিরোধটা জনগণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গেই ছিল। ব্যাপারটা এমন না যে ১৯৭২ এর সংবিধান মোতাবেক আওয়ামী লীগ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করে ফেলতো বা ফেলছিল....ব্যাপারটা অনেকবেশী করে সাংস্কৃতিক। একটা শব্দের সাথে জড়িত চেতনার গলাটিপে ধরা।

তবে ৫ম সংশোধনী যেহেতু হাঁটুবাহিনির বানানো, সুতরাং সেখানে বেশ কিছু টেকনিক্যাল ফাঁক থেকে গেছে। যেমন, এখনো আইনত শাসন বিভাগ/বিচার বিভাগের ধর্মনিরপেক্ষ খোলস বর্তমান, তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের সরকারী নাম।



অজ্ঞাতবাস

তানবীরা এর ছবি

আমার স্মৃতি থেকে হাতড়ালে দেখতে পাই ছোটবেলার বাংলা মিডিয়ামের বই গুলোতে বেশীর ভাগ সময় "মুক্তিযুদ্ধ" কথাটা লিখা থাকতো। তখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বলতো "মুক্তিযুদ্ধ" আর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে ছিল "গন্ডগোলের" সময়। তবে আমরা ছোটবেলায় দুটো শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করতাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

যে কয়টা পাকি পোলাপাইনের সাথে কথা বললাম, ওরা ৭১ এর যুদ্ধকে 'পার্টিশান' বলে জানে।

আমাদের দেশীয় দালালগুলা উদ্দেশ্য ছাড়া শব্দ প্রয়োগ করবে না। রাগিব ভাইয়ের মন্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বড় শত্রু হচ্ছে একে নিয়ে সৃষ্টি করা মিথ। মিথের ঝালরের নিচে বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অনেক গাঢ় দাগকে ফিকে করা হয়েছে, আবার অনেক ফিকে দাগকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে উজ্জ্বল করা হয়েছে। আর এ কাজটি একাত্তরের পরাজিত শক্তির মাঠে হাজির হওয়ার আগেই স্বাধনীতার সপক্ষের লোকেরাই বেশি করে করেছে।

একাত্তরের যুদ্ধকে মুক্তিসংগ্রামের সঙ্কল্প থেকে বাদ দিয়ে পড়লে, এর রাজনৈতিক সম্ভাবনাটিকে পাঠা খাসি করার মতো করে খাসি করা হয়। সেই কাজটা আওয়ামী-বিএনপি উভয় ধারার লোকেরাই কম বেশি করেছেন। তাদের বিপরীতে কোনোভাবেই একাত্তরের জাতীয় সংগ্রামকে মুক্তি সংগ্রাম হিসেবে দাবি করা থেকে বিরত হওয়া যাবে না। কেননা মুক্তির মানদণ্ডেই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের ও সেই যুদ্ধের নেতৃত্বের সবলতা-দূর্বলতা মাপতে পারবো।
প্রথমত, বাংলার জনগণের বড় অংশই স্বাধীনতাকে কেবল রাজনৈতিক অর্থে বোঝেনি। তারা স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক (বৈষম্যহীনতা) ও সাংস্কৃতিক (জাতীয় পরিচয়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা) মুক্তির শর্ত হিসেবেই গ্রহণ করেছিল। তাদের এই চাওয়ার পরিচয় মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ানে, তাদের লেখা চিঠিপত্রগুলোতে, সেইসময়ের রাজনৈতিক ইশতেহারগুলোতে পাওয়া যাবে। কেউ যদি ভাল করে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রগুলো দেখে, তাহলে এর প্রমাণ পাওয়া কঠিন নয়।

সেসময় কমিউনিস্ট পার্টি প্রভাবিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, সিরাজ শিকদারের ৫ হাজার সদস্যের বাহিনী, কিংবা আত্রাইয়ের অহিদুর রহমান, পাবনা টিপু বিশ্বাসদের গেরিলা গ্রুপগুলো এই লক্ষ্যেই কাজ করছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের বড় অংশও এই চেতনাই লালন করতো। তারই প্রমাণ মেলে একাত্তরের পরে (ভুল পথে হলেও) জাসদের ছায়াতলে তরুণদের ট্র্যাজিক বিপ্লবী প্রচেষ্টা এবং তাহেরের বিপ্লব। তারা শেখ মুজিবের প্রতি হতাশ হয়, কারণ তিনি একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামকে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার বেশি নিয়ে যেতে চাননি।

সুতরাং আমাদের বলতে হয় যে, একাত্তরে মুক্তি সংগ্রামের ভেতর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ চলেছিল। একটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালিদের সার্বজনীন স্বাধীনতার যুদ্ধ, তার ভেতরে অগ্রসর অংশের বিপ্লবী মুক্তি যুদ্ধ, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ, বাঙালিদের নিজেদের বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই সব কটি যুদ্ধের জটিলতাই ১৯৭১ ধারণ করে।

@ নজরুল> আমি সলিম খানের বরাতেই আহমদ ছফার 'বেহাত বিপ্লব' বলেছি। আপনি ঠিকই ধরেছেন এবং আমিও মনে করি, সলিমুল্লাহ খান যথার্থভাবেই ছফা'র একাত্তর বিষয়ক চিন্তার সারসংকলনকে 'বেহাত বিপ্লব' আখ্যা দিয়েছেন।

@ শোহেইল মতাহির চৌধুরী > গত দেড়শ বছরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বুঝতে বদরুদ্দীন উমরকে লাগবেই। ফরহাদ মজহারের অনেক চিন্তাই তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের মতো বিপজ্জনক নয়। মজহারের সমালোচনা নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল। তাই জানতে চাই, উমর কী প্রকারে

ত্যানা পেঁচাইয়া বিষয়টিকে ফের ছাগলের প্লেটে নিয়া মুখের গ্রাস বানায়া
দেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

হাসান

প্রশ্নটি তোলার জন্য ধন্যবাদ, ধন্যবাদ এ কারণে যে, এই প্রশ্নটি আমাদের মনে বা সামনে আজ আসতো না যদি না ইচ্ছাকৃত ভাবে "মুক্তির সংগ্রাম"-কে বদলে "স্বাধীনতা যুদ্ধ" করা হতো। যারা মুক্তি'কে বদলে শুধুমাত্র স্বাধীনতা করেছে, তাদের হাত দিয়েই বাঙালি হয়েছে বাংলাদেশী। আকাশ খোলা মাঠে দাঁড়িয়েও দ্যাখা যায়, জানালা কিংবা ঘুলঘুলি দিয়েও দ্যাখা যায়, দু'য়ের মধ্যে পার্থক্যটা যারা ধরতে পারবেন তারাই পারবেন মুক্তির সংগ্রাম আর স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে এক মহাসাগরের পার্থক্যটুকু।

আমাদের অস্তিত্ব আজ বিদীর্ণ এই প্রশ্নের সামনে; যারা এই প্রশ্নটির জন্মদাতা তারা এবং তাদের উদ্দেশ্য আমরা এতোদিনেও না বুঝে থাকলে, আর কবে বুঝবো কে জানে? এই প্রশ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কিন্তু সেই অর্থে স্বীকারই করে না যে, সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তারা এ কারণেই স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে যে, এতে কেবলমাত্র তারাই সশস্ত্র ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল, এবং সেরকম প্রচালণাই চালানো হয়; কি তাই না?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অনেক মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য হয়ে গেছে ।

এই প্রসংগে আমার মতামত ফারুক ওয়াসিফ, শোহেইল মোতাহির, মাসুদা ভাট্টি, সুমন চৌধুরীদের মতোই ।

বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধটা স্বাধীনতাযুদ্ধ তো ছিলোই বটে কিন্তু বৃহৎ লক্ষ্যে সেটা মুক্তির ও যুদ্ধ ছিলো। সমস্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক শোষন থেকে মুক্তি । রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন ছিলো বৃহত্তর মুক্তির একটা পর্যায় মাত্র ।

একটা প্রাসংগিক উদাহরন টানা যাতে পারে । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠের পরিচয় যেমন বাংলাদেশী, তেমনি বাঙ্গালী ও । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম যেদিন হয়নি সেদিন ও তারা বাঙ্গালী ছিলো, যেদিন হয়েছে সেদিন ও আছে । বাংলাদেশী বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশী চাকমা, বাংলাদেশী মনিপুরী-এই সব পরিচয়ের মধ্যে তো কোন যৌক্তিক সংঘর্ষ নেই আদতে ।

এখন বাংলাদেশী পরিচয়ের প্রয়োজনে যারা বাঙ্গালী পরিচয়কে মুছে দিতে চান তাদের উদ্দেশ্য যে খুব নিরীহ নয়- সেটা তো স্পষ্টই ।

ঠিক একই রকম ভাবে- বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ উভয় সংজ্ঞায়নের মধ্যে তো সংঘর্ষ নেই । কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধ বললে সেটা ভুল নয়, মুক্তিযুদ্ধ বললে ও ভুল নয় ।

কিন্তু যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধকে মুছে দিয়ে কেবল স্বাধীনতা যুদ্ধ অভিধাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে তার উদ্দেশ্যকে খুব সরল ভাবার সুযোগ কতোটুকু?

শোহেইল মোতাহির জানিয়েছেন কিভাবে সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধকে কেটে স্বাধীনতা যুদ্ধ করা হয়েছে ।

যারা এই কাজ করেছেন তাদের সপক্ষের কারো বক্তব্য জানার সুযোগ পেলে ভালো হতো । এই দুই শব্দের পার্থক্য এতো কি জরুরী যে একেবারের সংবিধান কাটাছেঁড়া করতে হয়?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাগিব এর ছবি

শোমচৌ ভাইয়ের তথ্য পড়ে মনে হলো, হামিদুল্লাহ খানের সাথে সংশ্লিষ্ট সেই মুরাদ খানের উইকি তৎপরতা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। গত প্রায় বছর দেড়েক দুয়েক ধরে সুযোগ পেলেই গোপনে গোপনে যাবতীয় "Liberation War" লেখাকে এই ব্যক্তি পালটে দিচ্ছিলো "War of Independence" এ। আমি কারণটা তখন বুঝতে পারিনি, এখন মনে হয় কিছুটা ধরতে পারি।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এরকম কিছু যোগসুত্র আছে যেগুলোকে আমরা ততোটা গুরুত্ব দেইনা কিন্তু এই সুত্রগুলোর মধ্যে অনেক কিছু গোপন আছে ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।