রাষ্ট্রসংজ্ঞার অনুবাদ, অর্পিত ক্ষমতার চর্চা ও অন্যান্য বিষয়ক

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৭/২০১১ - ১:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক।

১৯৭১ সালের এপ্রিলের দশ তারিখে মুজিব নগর সরকারের হাতে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির যে সংবিধানের সূচনা ঘটে সেটি ১৯৭২ সালের নভেম্বর চার তারিখে পূর্ণাঙ্গ রূপে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় এবং ডিসেম্বর ষোল ১৯৭২ থেকে এটি কার্যকর হয়। এই সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে 'পিপলস রিপাবলিক' বলে পরিচিত করানো হয়। '৭৫ এ আগষ্ট পনেরোর হত্যাকান্ডের তৎপরবর্তী মুহুর্তে প্রথম পরিবর্তন আনা হয় এই রাষ্ট্র পরিচয়ে। 'পিপলস রিপাবলিক' টিকে বদলে দেয়া 'ইসলামিক রিপাবলিক' এ।

এই পরিবর্তন টেকেনি। মাঝখানের কয়েকদিন ছাড়া সাংবিধানিক ভাবে বাংলাদেশ 'পিপলস রিপাবলিক'- এমনকি সামরিক শাসনের যুগেও, এমনকি সংবিধানের যাবতীয় কাঁটাছেড়ার মধ্যেও।
উইকিপিডিয়া এখানে জানাচ্ছে, মুলতঃ সমাজতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার রাষ্ট্রগুলোই নিজেদের রাষ্ট্রপরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করেছে 'পিপলস রিপাবলিক' বলে। সমাজতান্ত্রিক কিংবা সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার নয় অথচ 'পিপলস রিপাবলিক' এমন ব্যতিক্রম তিনটি রাষ্ট্রের একটি বাংলাদেশ।
জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রের জন্ম সেটি 'পিপলস রিপাবলিক' হওয়াটা সমস্যা নয় কিন্তু সমস্যা হলো এর বঙ্গানুবাদে। বঙ্গানুবাদে বলা হয়েছে 'গনপ্রজাতন্ত্রী' বাংলাদেশ। পিপলস মানে গন, রিপাবলিক মানে প্রজাতন্ত্র?
প্রজা কোন একক ধারনা নয়। প্রজা তখনই সম্ভব যখন রাজার অস্তিত্ব বিদ্যমান। রাজা-প্রজা যেখানে বিদ্যমান সেখানে আবার রাষ্ট্র আবার জনগনের হয় কী করে?

'পিপলস রিপাবলিক' এর বাংলা কি 'গনপ্রজাতন্ত্র' নাকি 'জনগনতন্ত্র' কিংবা অন্য আর কিছু?


দুই।
'পতি' শব্দটি কর্তৃপরায়ন, সংসারেই হোক কিংবা রাষ্ট্রের। 'প্রেসিডেন্ট' শব্দের বাংলা কী? রাষ্ট্রপতি নাকি রাষ্ট্রপ্রধান?
বিদ্যমান সংসদীয় গনতান্ত্রিক কাঠামোতে রাষ্ট্রপ্রধান একটি অলংকারিক পদ। অলংকারিক হলেও সংবিধান সম্মত ভাবেই তার কিছু বিশেষক্ষমতা আছে। তবে এই ক্ষমতা তার অর্জিত কিংবা অধিকারভুক্ত নয়, বরং অর্পিত ক্ষমতা। জনগন সংসদকে নির্বাচন করে, সংসদ রাষ্ট্রপ্রধান। ক্ষমতা এ ক্ষেত্রে পিরামিড আকৃতিতে ভিত্তি থেকে চুড়ায় আরোহন করে।
অর্পিত ক্ষমতার ব্যবহার কিংবা চর্চার ক্ষেত্রে জবাবদিহীতা ও ব্যাখ্যার বিধান কি জরুরী নয়? যে জনগন পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করছে, সেই রাষ্ট্রপতি জনগনের দেয়া ক্ষমতার ব্যবহারে জনগনকে কেনো ব্যাখ্যা দেবেননা?
সংবিধান তাকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে দন্ডিত অপরাধীর শাস্তি মওকুফের, যদিও এই বিশেষ ক্ষমতা উক্ত সংবিধানেরই তৃতীয় অনুচ্ছেদের ধারা সাতাশের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ধরা নেয়া গেলো বিশেষ প্রয়োজনেই জনাব রাষ্ট্রপ্রধানকে এই বিশেষ ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে কিন্তু কোন বিশেষ প্রয়োজনে এই বিশেষ ক্ষমতার তিনি প্রয়োগ ঘটালেন তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলে কি আর 'পিপলস রিপাবলিক' টিকে থাকে? সেটি বড়জোর গন-প্রজাতন্ত্র হয়।

তিন।
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত অপরাধী রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে দণ্ড মওকুফের জন্য আবেদন করলে, রাষ্ট্রপ্রধান যদি তার বিশেষ ক্ষমতাবলে আবেদন মঞ্জুর করেন, সে ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটে?
অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড রদ হয়ে পরবর্তী সর্ব্বোচ্চ সাজা ভোগ করে নাকি মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসে? আসলে রাষ্ট্রপ্রধানের বিশেষ ক্ষমতার দৌড় কতোটুকু?

'মেম্বার অফ এ পিপলস রিপাবলিক' হিসেবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরী।


মন্তব্য

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

দণ্ড মওকুফ কি pardon? না কি sentence reduction?

সাইফ জুয়েল এর ছবি

হাসান মোরশেদ ভাই

যুক্তিসংগত প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।

আমার কয়েকটা মতামত হল।

১. রিপাবলিক শব্দের প্রকৃত বাংলা হতে পারে দেশ।

২. শুধু রাষ্ট্রপতিই নয় পুরুষতান্ত্রিক অন্য সব শব্দই সংবিধান থেকে বাদ দেয়া উচিৎ।

৩. সেবা মওকুফের ব্যাপারে সরকার অনুরোধ করলে প্রেসিডেন্টের আনুমোদন দেয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এই বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষন করবেন বলে আশা রাখি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

১. রিপাবলিক শব্দের প্রকৃত বাংলা হতে পারে দেশ।

বুঝলাম। কিন্তু মাঝখানে রাজা-প্রজা আসলো কেনো?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সংবিধান জানাচ্ছেন

"৪৯। কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দন্ড মকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।"

তারমানে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতার দৌড় পুরোটুকুই। চাইলে তিনি ফাঁসীর আসামীকেও মুক্ত করতে পারেন, চাইলে ফাঁসীর বদলে যাবজ্জীবন দিতে পারেন...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

বেরন একটন (Baron Acton) বিশপ মেনডেলের কাছে লেখা এক চিঠিতে লেখেন:
"Power tends to corrupt, and absolute power corrupts absolutely".
যখন এই ক্ষমতা অসীম হয় তখতো সমুহ বিপদ। উইলিয়াম পিট (William Pitt) নামে এক বৃটিশ রাজনীতিবিদ হাউস অব লর্ডসে বক্তৃতায় বলেছিলেন-
"Unlimited power is apt to corrupt the minds of those who possess it"
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা মনে হয় প্রায় সর্বাংশে সত্যি।

এম আব্দুল্লাহ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঠিকাছে। কিন্তু বিপ্লবের ক্ষেত্রে কি ঘটেছে? ফাঁসীর আসামীকে মুক্ত করা নাকি ফাঁসীর বদলে যাবজ্জীবন?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বিপ্লবের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা বুঝতে পারছি না। তবে নূরুল ইসলাম হত্যা মামলায় যদি খালাস পায়ও, তবুও অন্য দুটি হত্যা মামলায় প্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকার কথা। সেহেতু মুক্তি পাওয়ার কথা না...
অবশ্য ফাঁসীই যদি অকার্যকর করে দিতে পারে, যাবজ্জীবন কারাভোগ মওকুফ তো কোনো ব্যাপারই না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

যাবজ্জীবন আসলে নামেই যাবজ্জীবন। সারা জীবন বিপ্লবের জেলে থাকা লাগবে না। জেলে রাত এবং দিন মানে দুইদিন।
উপরন্তু, ভাল ব্যবহারের জন্য সাজা কমার সিস্টেম আছে।
এম আব্দুল্লাহ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

দেশে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষদিকের বর্ষগুলোতে পড়াকালীন আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে যেতাম। সে প্রতিযোগিতায় প্রায়ই আমাদের নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দলও আসতো। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম আমাদের নিজের প্রতিষ্ঠানের দলের বিতর্কে বিচারক না হতে। একান্ত বাধ্য হয়ে যখন সেটা আর এড়ানো যেতো না, দেখা যেত আমরা নিজেদের দলের প্রতি বেশি পক্ষপাতিত্ব দেখাবো না এরকম মানসিকতা দেখাতে গিয়ে নিজেদের দলটাকে তাদের প্রাপ্য নম্বরের চেয়েও কম দিয়েছি, হারিয়ে দিয়েছি। এটা করেছি যখন আমরা ঠিক আগের বা পরের বিতর্কেই দেখেছি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারকেরা নির্লজ্জের মত তাদের নিজেদের দলকে জিতিয়ে দিচ্ছেন, তাদের চরম হতাশাজনক উপস্থাপনা স্বত্বেও।

২২-২৩ বছর বয়সী অতি সাধারন যুবক হয়েও আমাদের আদর্শটা এমন ছিলো।

এটা বলার কারণ?

রাষ্ট্রপতির টেবিলে যখন তার নিজের রাজনৈতিক দলের একজন খুনিকে মাফ করে দেয়ার আবেদন যখন আসে, আর রাষ্ট্রপতির সেই খুনির বাসায় তার বাবার সাথে নৈশভোজের দাওয়াত খেয়ে আসার মত সখ্যতা থাকে (পত্রিকার খবরে প্রকাশ), তখন, সেই রাষ্ট্রপতি সেই বিচার নিজের হাতে না নিয়ে, নিজের ক্ষমতার প্রয়োগটাও না করে সে বিচারের ভার বিচার বিভাগ বা অন্য কোন যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়াটাই সঠিক রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ হয়। এটা করার জন্য ২২-২৩ বছরের একজন সাধারণ যুবকের মত সাধারণআদর্শ থাকলেই চলে, আইনের মারপ্যাচ বুঝতে হয় না। দলের রাজনৈতিক চাপে বা অন্য কোন কারণে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়ে থাকলে পরিণতিতে আত্মহত্যা বা নিদেনপক্ষে পদত্যাগও সামান্যতম আদর্শের উপস্থিতি প্রমাণ করতে পারে।

আপনার সাথে একমত, অপরাধীর পরিণতি কি হবে সেটা নির্ধারনের জন্য আইনী প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরী। কিন্তু এই রাষ্ট্রপতির অযোগ্যতা, নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব, দুর্বলতা, প্রধাণমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিনিধিদের এই বিষয়ে নির্লজ্জ নিরুত্তরতা, বা বেহায়া গলাবাজী, এগুলোর নিন্দা বা প্রতিবাদ করার জন্য আইনী মারপ্যাচ বোঝা জরুরী না।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

দারুণ মন্তব্য

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

২২-২৩ বছরের সাধারন যুবকের মধ্যে যে আদর্শবোধ থাকে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ৮২-৮৩ বছরের 'অসাধারন' বুড়োদের সেটা আর অবশিষ্ট থাকেনা।

নিন্দা বা প্রতিবাদ অনেক হয়, অনেক হতে হতে শেষপর্যন্ত আর কিছুই হয়না। রাষ্ট্র আর নাগরিকের মধ্যে যেহেতু 'সোশ্যাল ও লিগ্যাল কন্ট্রাক্ট' বিদ্যমান সেহেতু এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা আসলেই দরকার।
রাষ্ট্রপ্রধান খুনের আসামীকে ক্ষমা করে দিলেন এটার প্রতিবাদ করার চেয়ে আমার কাছে জরুরী মনে হয় রাষ্ট্রপ্রধানের এই ক্ষমতা থাকবে কেনো সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পুতুল এর ছবি

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এইসব প্রশ্ন একটু অবান্তর। কিন্তু নিরন্তর সংগ্রামের পথেই তো কেবল গনতন্ত্র সম্ভব। আপনার আমার বাক-বিতণ্ডার মাধ্যমে যদি আমরা এমন একটা ধারণায় উপনীত হতে পারি যে, আসলে আমাদের পবিত্র ৭২ সালের সংবিধান তার প্রণেতাদের দ্বারাই লংঘিত হয়েছে। তাহলে দেখব আমরা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে এই সব অঘটন সমর্থন করে গেছি।

প্রথম আলোচিত বা আলোড়ন স্মৃষ্টিকারী হত্যাকাণ্ড সিরাজ সিকদার হত্যা। তখনকার কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের পদে আসীন কোন ব্যক্তি সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ডের জন্য কারো কাছেই জবাবদিহি করতে হয় নি।

শেখ মুজিব হত্যার কয়েক দশক পরে ক্ষমতায় গিয়ে শেখ হাসিনা পিতৃ ও পরিবার বর্গের হত্যার বিচার করেন।

কর্ণেল তাহের হত্যার বিচারের কথা আজও কোন রাজনৈতিক দলের মুখে শোনা যায় নি।

আমজনতা হত্যার বিচার আর কে করবে?

এরশাদ হটাও আন্দোলনে অনেক শহীদের মাঝে নূর হোসেনের নামটা আমাদের মনে রয়ে গেছে। কৈ তার বিচারও তো হয় নি।

আরিফ নামে একটি ছেলেকে হত্যার দায়ে দণ্ডিত বসুন্ধরা এবং কালের কণ্ঠের মালিক ও তাঁর দুই পুত্র বহাল তবিয়তে আছেন। বলাই বাহুল্য; হত্যাকাণ্ডের পরে তাদের কালের কণ্ঠ প্রকাশিত হয়েছে। সে পত্রিকায় লেখক পাঠকের অভাব তো হয় নি।

এভাবেই একটি সমাজ ব্যবস্থায় কোন বিশেষ ক্ষমতা বা গুনের কারণে কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দিলে; ঐ সমাজে ঐ শ্রেনীর স্বাশকদের দ্বারা কেবল এই ব্যতিক্রমের ব্যবহার বারবার বাড়তে থাকে।

আওয়ামি লীগের পক্ষে খূন করেছে। মানে আওয়ামি লীগের জন্য প্রতিপক্ষের কাউকে হত্যা করে মৃতুদণ্ড দণ্ডিত মানুষটি একজন খাঁটি আওয়ামিলীগার। ঠিক বিপরীত উদাহরণ ও অনেক আছে। দলীয় রাজনীতির বর্তমান প্রক্ষেতে এর চেয়ে ভাল কিছু আশাকরা কঠীন। উৎপত্তিগত কারণ (মানে বিএনপির জনক সামরিক এক নায়ক, আর আ.লীগের উত্থান জনগনের স্বক্রিয় আংশ গ্রহনের মাধ্যমে) বাদ দিলে দল দু'টির বিশেষ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের ( আ'লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এই কথাটা এই কয়েকটা লাইনে যদি না টানি) দন্ধ তো নেই।

দু'টি দলই যেভাবে পারে গদি দখল করে লুটপাট করে। তার জন্য লোকবল লাগে। ণীতির কথা সেখানে খুবই গৌন। দলের দুর্দিনে দলের কর্মিরা দলের জন্য খুন-জখম করেছে এবং হয়েছে। দলের সুদিনে তারা দলের জন্য এত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এতটুকু অনুকম্পা চাইতে পারে না!

শেখ হাসিনা আন্দাজ করছেন ঠিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যাবস্থা জনগন মানবে না। বিচক্ষণ নেতৃ হিসাবে তিনি শ্যাম-কূল দুই রেখেছেন। কথা এই জন্য বললাম যে, ঠিক আদর্শ বা নীতি কারই নাই। যে দিকে গেলে সুবিধা সে দিকেই তাঁরা যাবেন। বলা যায় না যদি এমন দিন আসে যখন আবার ভোট ডাকাতির প্রয়োজন হবে তখন হত্যা করতে পারে এমন একজন কর্মী একাই একশ। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে একটা এসেট নষ্ট করতে কে চায়!

তবে দিনে দিনে পাব্লিক চালাক হয়ে যাচ্ছে। যে রাজনৈতিক দল পাব্লিককে যত বেশী বোকা ভাবে আসলে তাঁরা নিজেরাই তত বেশী বোকা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মূলো দেখিয়ে বেশী দিন ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না। গত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুভি দেখে খুসির চেয়ে আওয়ামী লীগ শিক্ষণীয় কিছু নিজের জন্য সঞ্চয়ে রাখলে ভাল করতো।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফাহিম হাসান এর ছবি
ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধানের কোন ক্ষমতা নেই, শুধূ বিশেষ কিছু ক্ষমতা ছাড়া। আর বিশেষ ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান কি করতে পারেন সেটা নজরুল ভাই বলেছেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সংসদে কোন বিল উত্থাপিত হলে ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান তাতে অনুমতি না দিলে সেটা আবার সংসদে উত্থাপিত হয় এবং পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান তাতে সম্মতি না দিলে সেটা পাস হয়েছে বলে ধরে নিয়ে কার্যকর করা হয়। কাজেই রাষ্ট্রপ্রধান যে কতটা ক্ষমতার অধীকারী সেটা বেশ স্পষ্ট!
কাজেই রাষ্ট্রপতি যে দন্ড মওকুফ বা হ্রাস করেন সেটা কতটা নিজের বিবেচনায় সেটা আলোচনার দবী রাখে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যার বিবেচনায়ই হোক, রাষ্ট্রপতির নামে হচ্ছে যখন এর দায়ভার তারই।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

আপনার কথা মানছি হাসান ভাই। দায়বদ্ধতা অবশ্যই আছে এবং জবাবদিহিতাও জরুরী।
কিন্তু পর্দার অন্তরালে যারা কলকাঠি নাড়ছে তাদের স্বরুপ যদি উন্মোচিত না হয় তবে দিনশেষে সাধারণ মানুষগুলোই শূধূ এর ফল ভোগ করবে।

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

মোর্শেদ ভাই, পুরো দায়ভার একা রাষ্ট্রপতির নয়। তবে, তিনি অবশ্যই দায়ী। তিনি সিগনেচার না করে অন্তত:পক্ষে একবার ফিরিয়ে দিতে পারতেন। তা কিন্তু তিনি করেন নি।
অপরদিকে, মিজানুর রহমান খান কিন্তু প্রথম আলো'তে দায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। তার মতে, "সরকার পরিচালনার রুলস অব বিজনেসে লেখা আছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪৯ অনুচ্ছেদ-সংক্রান্ত বিষয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। তবে এ ধরনের নথি শুরুতেই ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। প্রথমেই বলে নিই, এটা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নয়। মন্ত্রিসভার ক্ষমা নয়। ক্ষমাহীন এই ক্ষমার দায় প্রধানমন্ত্রীর। পত্রিকাগুলো যদি বড় বড় শিরোনাম করত কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা, সেটা বেশ হতো। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ বইয়ের ৩২২ পৃষ্ঠায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বরাতে লিখেছেন, ‘অন্যান্য ক্ষমতার মতো এই ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রয়োগ করতে হয়।’ সুতরাং এই ক্ষমা রাষ্ট্রপতির নয়।"
ধন্যবাদ এমন একটা গুরূত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে নিয়ে আসার জন্য।
এম আব্দুল্লাহ

তানিম এহসান এর ছবি

ভাবনায়তো ফেললেন, সবার মন্তব্যও পড়লাম কিন্তু “প্রশ্নগুলো” সহজ হলেও উত্তর অজানাই থেকে গেলো। ক্রমশ বিভ্রান্তি তৈরী হচ্ছে পুরাতন বিভ্রান্তির উপর ভর করে করে, আর আমরা আমজনতা আম খাবো বলে মধুমাস এর অপেক্ষা করেই যাচ্ছি।

প্লেটোর রিপাকলিক সহ আরো এমন কিছু দর্শন ধরে এরকম আরেকটা লেখা দিননা, আমরা আরো একটু ভাবি!

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

তানিম ভাই, আইনী ব্যাপারগুলো একটু জটিলই বটে। এ ব্যাপারে হুমো এরশাদের প্রাক্তন স্ত্রী বিদিশা বিডিনিউজে প্রকাশিত একট লেখায় তার অভিজ্ঞতা এভাবে ব্যক্ত করেছেন, "গত ৬ টি বছর এমন কোনো মাস নেই, যখন আমাকে আদালতে দৌড়াতে হয়নি, আইনজীবীদের সঙ্গে বসতে হয়নি। ৬ বছর অনেক লম্বা একটা সময়। অথচ আশ্চর্য, এত দীর্ঘ সময় এদের সঙ্গে চলাফেরা, কথাবার্তার পরও এখনও আমি আইনজীবীদের বুঝতে পারিনি। আদালত আর বিচারকদের বুঝতে পারিনি। বরং শুরুতে হয়তো কেবল অজ্ঞ ছিলাম, এখন সেই অজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিকট কিছু বিভ্রান্তি। আমার কাছে আইনজীবী এবং বিচারক– সমার্থক বলে মনে হয়। উচ্চ আদালতে আইনজীবীরাই পরে বিচারক হন। উভয়েই যা কিছু বলেন, যা কিছু করেন, আইনের আলোকেই করেন"।
তবে, আজকে প্রথম আলোয় মিজানুর রহমান খানের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে তাতে তিনি ক্ষমা-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন-৪৯ অনুচ্ছেদে বাংলায় ‘অধিকার’ লেখা হলেও ইংরেজিতে কথাটি প্রিরোগেটিভ বা বিশেষাধিকার। ব্রিটেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহু দেশের সংবিধানে এটা আছে এবং মূলত একই অর্থে ও ব্যাপ্তিতে। আমাদের জানামতে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের কোনো রায় নেই। ভারতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট বিপুলসংখ্যক মামলার বৈধতা পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তা ঘটেনি। আমাদের আদালত সম্ভবত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথম আলোতে প্রকাশিত বক্তব্যের সূত্র ধরেই সুয়োমোটো রুল জারি করতে পারেন। কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রিট করতে পারেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রীর সেই অধিকার তো অবশ্যই রয়েছে। সেনগুপ্তের ধন্যবাদ প্রাপ্য। কারণ, এই সিদ্ধান্ত যে চ্যালেঞ্জযোগ্য, সেই সত্য তিনি অকপটে উচ্চারণ করেছেন।

ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই জঘন্য কাজের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ইম্‌পিচ করার আইনি কোনো ফাঁকফোকর কি আছে?

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

শুভাশীষ দা; ইমপিচ হয়তো করা যাবে না, কিন্তু, এই স্বিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে । সুরঞ্চিত বাবুই এই পথ বাতলে দিয়েছেন। মিজানুর রহমান খানের প্রথম আলোয় (http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-07-25/news/172763) লেখায় ব্যাপারটি এসেছে। অন্যান্য দেশের আদালতের নজিরও আছে এ বিষয়ে ।
এম আব্দুল্লাহ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।