উন্নয়নের বাহারী ডগমা : : জোয়ারে ভাটাতে হয় নিঠুর জানাজানি

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ৩০/০৬/২০০৮ - ৬:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.

সহব্লগার রনদীপম বসু সম্প্রতি ডঃ ইউনুসের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন,যেখানে জরুরী কিছু মন্তব্য ও এসেছে ।

ঐ পোষ্ট দেখে মনে পড়লো, ডঃ ইউনুসের নোবেল পাওয়ার পর বাংলাব্লগ এ নিয়ে আলোড়িত ছিলো তুমুল । স্বভাবতইঃ ব্লগারগনের তীব্র উচ্ছ্বাস ছিলো । এর বিপরীতে আমরা ক'জন ছিলাম নিতান্তই সংখ্যালঘু ।

এই পোষ্ট সে সময়ের । সচলায়তন আর্কাইভ থেকে তুলে আনলাম ।

[ সাদিক মোহাম্মদ আলম, ধূসর গোধুলী ও মাশিদ -
-- আমার খুব ভালো লাগার তিন স হ ব্লগার এই পোষ্টে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেছেন আমার প্রতি ।
জানি এটা ও আমার প্রতি তাদের ভালো লাগা থেকেই । কৃতজ্ঞতা বন্ধুরা ।
ভাবনার ভিন্নতা এবং তার প্রকাশ আমি উপভোগ করি , কারন এ থেকেই উসকে উঠে নতুন ভাবনা ]


দারিদ্র বিমোচন ও উন্নয়ন প্রয়োজন পড়লো কেনো?

আদি প্রশ্ন হতে পারে কিছু মানুষ দরিদ্র কেনো? নিয়তি , সম্পদের অভাব? নাকি সম্পদের সুষম বন্টন ? তত্ব কপচানো আমার ভাল্লাগেনা তবে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় কিছু একাডেমিক পড়াশোনা থেকে জেনেছি সম্পদের অভাব নয়, সাধারন মানুষ দরিদ্র, সম্পদের উপর তার অধিকারহীনতার কারনে ।
অর্মত্য সেনের নোবেল বিজয়ী থিসিস টা ও তাই বলেছিলো । সেন দেখিয়েছিলেন বাংলা 76 এর মনন্তর বা বাংলাদেশের 1974 এর দুর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে নয় , হয়েছিলো রাজনৈতিক কারনে ।


বাংলাদেশে উন্নয়নের নানা ডকমা

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের প্রথম 3-4 বছর বিদেশী অর্থসাহায্য এসে ছিলো মুলত: ত্রান হিসেবে । তবে অর্থ প্রবাহটা ও ছিলো সংকুচিত কারন প্রধান দাতা গোষ্ঠির সাথে রাজনৈতিক বৈরীতা ।

'75 এর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সামরিক সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বীকৃতি প্রদান এবং আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতা খুলে দিলো বিদেশী অর্থসাহায্যের প্যান্ডোরার বাক্স । অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট চালু হওয়ার সেই শুরু । দাতাদের পরামর্শে শুরু হলো খালকাটা নামের এক হাস্যকর কর্মসুচী, প্রচার করা হলো এর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রন হবে , মাটি উর্বর হবে , ফসল উৎপাদন কয়েকগুন হবে , খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন ঘটবে । আসল কর্মসূচী ছিলো মুলত: সামরিকতন্ত্রকে জনপ্রিয় করানো । বিশ্বব্যাংক ও দাতাদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শে দেশীয় ধানের বদলে রোপন করা হলো হাইব্রিড ধান, প্রাকৃতিক সারের বদলে চাষীদের ধরিয়ে দেয়া হলো রাসায়নিক সার এবং অতি অবশ্যই হাইব্রিড বীজ ও বিদেশী সার কিনতে হলো দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে । প্রথম ক বছর চমৎকার ফলাফল ।
দীর্ঘমেয়াদে? পানিতে আর্সেনিক, দেশীয় বিজের বিলুপ্তি , মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট ।

পরবর্তী সামরিক শাসক ও একই কায়দায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের নামে দাতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি বিলিয়ন ঋন আনলেন । গুচ্ছগ্রাম, স্বনির্ভর যুবশক্তি ইত্যাদি বাহারী কর্মসুচী , রংপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পাকা সড়ক, জেলা শহর পর্যন্ত সোডিয়াম বাতি --- জন গন খুশি । অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বড়ছোট ঠিকাদারী ব্যবসা গুলো গেলো দলীয় ক্যাডারদের হাতে । এভাবে তৈরী করা হলো একটা মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেনী । 70-80'র দশকে দুই সামরিক শাসকের উন্নয়নের বাতায়নে গড়ে উঠা এই মধ্যস্বত্ব ভোগীরা আজ নিয়ন্ত্রন করছে বাংলাদেশের রাজনীতি অর্থনীতি ।


কোমর ভেংগে হাতে ক্রেচ ধরিয়ে দেবার বদান্যতা

মুক্তবাজার ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ স্বীকার হলো প্রান্তিক জন গোষ্ঠি । একজন কুমোর, একজন তাঁতী তার জীবিকা হারালো -- রাষ্ট্র কিন্তু তার বিকল্প জীবিকার কোনো দায়িত্ব নিলোনা । জেলে আর স্বাধীন ভাবে মাছ ধরতে পারছেনা -- কারন জলমহাল সব ইজারা দেয়া হয়ে গেছে । রাষ্ট্র কৃষি খাতে ভর্তুকী কমিয়ে দিলো --বীজের দাম, সারের দাম, বিদু্যতের দাম এতো বাড়ানো হলো যে কৃষক আর উৎপাদনে আগ্রহী নয় । শাসক এবং তাদের পেছনের বিশ্বমোড়লেরা ঠিক তাই চায় । দেশীয় উৎপাদন নানা অজুহাতে বন্ধ করতে পারলেই বাইরে থেকে পণ্য এনে বিক্রী করার ব্যবসাটা চালানো যায় ।
আদমজীতে লোকসান হতো যে কারনে সেই কারন গুলোর সমাধান না করে কয়েক হাজার পরিবারকে নি:স্বকরে দেয়া হলো । যমুনা ব্রীজ উদ্বোধনের সময় আশা ছড়ানো হলো এবার উত্তর বংগের কৃষকদের ভাগ্য ফিরবে, সরাসরি ঢাকা এনে পণ্য বিক্রী করবে । শাক-সব্জীর দাম ও কমবে । হায় ভাগ্য ও ফিরলোনা , দাম ও কমলোনা কারন মাঝখানের খাদকচক্র- ফড়িয়া দালাল, পুলিশ, চাঁদাবাজ এদের ক্ষিধে টা তো আর বন্ধ করা হয়নি ।

আজকের একরৈখিক বিশ্বে সরকারী-বিরোধী রাজনীতিক, ধর্ম-ব্যবসায়ী, উন্নয়ন বিক্রেতা কেউ কিন্তু কারো বিরোধী নয় । সবাই মিলেই একটা টিম । দ্বন্ধ যেটা হয় নিজেদের মধ্যে সেটা মুলত: মাংসে র ভাগ নিয়ে । শাসক রাজনীতিকরা যখন মানুষের কোমর ভেংগে দেয় দু:শাসন, দ্রব্যমূল্য আর দূর্নীতির মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা এসে তখন মলম বিক্রী করেন । যে মানুষের তার অধিকার কেড়ে নেয়ার কথা, সে মানুষের সামনে পণ্যের ডালা সাজিয়ে বসেন । উৎপাদক হবার প্রয়োজন নেই, ভোক্তা হও , খড়ের চালার বদলে টিনের ঘর বানাও , রিং বসালো টয়লেট ব্যব হার করো , মোবাইল ফোনে কথা বলো ---এ জন্য যা টাকা লাগে দেয়া যাবে । সুদ মাত্র 25% !

তোমার আর সংগঠিত হবার প্রয়োজন নেই, প্রশ্ন তোলার দরকার নেই কেনো জাল থাকলে ও আর জলা তোমার নয়? কেনো খাসজমি ভূমিহীনের কাছে হস্তান্তর না হয়ে গড়ে উঠছে হাউজিং এস্টেট? সেচের জন্য কৃষক কেনো বিদু্যৎ পাচ্ছেনা? কেনো বীজ নেই ? সার নেই ? সরকারী হাসপাতালে ওষুধ কিংবা ডাক্তার নেই ? ডাক্তারের ভিজিট কেনো 400 টাকা? জরূরী ওষুধগুলোই কেনো মার্কেট আউট?
এ সব প্রশ্ন না তোলে বরং কৃতজ্ঞ হও । কৃতজ্ঞ হও মহান বিশ্বমোড়ল যারাঋণের টাকা দিচ্ছেন এবং অতি অবশ্য ই কৃতজ্ঞ হও সেই মহা জ্ঞানী, দরিদ্র দরদীর প্রতি যিনি এই ধারনার জনক যে , গরীব ও ঋনী হতে পারে ।( তবু গরীব থাকতেই হবে !)


অশান্তির মুলে তবে দারিদ্র

একটি অর্থনৈতিক ধারনার জন্ম দিয়ে শান্তির জন্য সর্ব্বোচ্চ স্বীকৃতি পাওয়া অভিনব নি:সন্দেহে । আমার যদি বোঝতে ভূল না হয় নোবেল কমিটির ব্যখ্যাটা এরকম : যেহেতু এই তত্ব দারিদ্র বিমোচনে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং দারিদ্রই হচ্ছে বিশ্ব শান্তির পথে প্রধান অন্তরায় , সেহেতু এই তত্বের উদ্যোক্তা এবং তার সংগঠন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করছেন ।

দু দুটি বিশ্বযুদ্ধ , এতো এতো গনহত্যা দারিদ্রের কারনে হয়েছিলো? মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে, ডাবি্লও.টি.ও রুখতে কৃষকেরা আত্নাহুতি দিচ্ছে সবঐ দারিদ্রে কারনে?
বিশ্ব মোড়লের সর্বগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের জন্য নয় ?
পৃথিবীর সকল সম্পদ নিজেদের কুক্ষীগত করার লোভের জন্য নয় ? তৃতীয় বিশ্বের মানুষের সকল সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের কেবল ভোক্তা বানানোর হীন চক্রান্তের জন্য ও নয়?


হীন হয়ে থাকি তাই

নিজেকে ও ই দরিদ্র শ্রেনীর একজন জানি বলেই-- সমস্ত অশান্তির দায় দারিদ্রের উপর চাপিয়ে দেয়ার এই ডগমাটা মানতে পারিনা ।
তাই এই ডগমায় কাউকে পুরস্কৃত করা হলে , সেই আনন্দে আমি ভাসতে পারিনা ।
তবে যারা আনন্দিত হন , এসবে গর্বিত হন ,যারা স্বপ্ন দেখেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ।
স্বপ্ন দেখাটা খুব ভালো ব্যপার ।

হায়, দরিদ্রের হীনমন্যতা আমি কাটিয়ে উঠতে পারিনা !

--------------------------------------------------------


এই পোষ্টে করা নানা ব্লগারের মন্তব্য সমুহ

াসমান বলেছেন: বিশাল পোষ্ট। পর্ব করে দিলে পড়তে সুবিধে হয়।

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৫:০৪
comment by: অতিথি বলেছেন: খুবই চমৎকার বিশ্লেষণ। সবাই জানি, অনুভবও করি কখনো কখনো; কিন্তু করতে পারি না টাইপ ব্যাপারগুলো।

আসলে বিশ্ব মোড়লদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। অকর্মণ্য নেতৃত্বই দেশের এই সমস্যার জন্য দায়ী। পুরা পৃথিবীটাই একটা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। মোড়লরা চাইবেই বাণিজ্য করতে। সেটা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের ওপর, তারা যদি হয় জিয়া, খালেদা, হাসিনা, সাকা; কিংবা জয়নালহাজারীর মত বোকাচোদা, তাইলে যা হওয়ার, তাই আমরা দেখছি। নিজের পকেটের 2 পয়সার লোভে এরা দেশের দুই মিলিয়ন ছেড়ে দিতে এতটুকু ইতস্তত করে না, কখনো বুঝে, কখনো না বুঝে। একসময় জনগণকে চরম ভুদাই মনে হতো। এখন আর হয় না। দেশ শাসন করতে এখন লাগে জোট, জনগণের ভোট না। এমনকি কাগজে কলমে সব রাজনৈতিক দলগুলো 30% জনগণের সমর্থন পেলেও দিবি্ব 5 বছরের পর 5 বছর দেশকে রেপ করে যায়, জনগণের শুধু রক্তক্ষরণই বাড়ে।

দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা ব্যাপারগুলো এখন তাই আর উন্মাতাল করে দেয় না আনন্দে। ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তির সংবাদে 'সাবাশ বাংলাদেশ' বলে চিৎকার দিয়ে ওঠার পরেই মনে পড়ে যায়, ঢাকার আকাশে কালো ধোঁয়া আর গ্রামে গ্রামে টিউবওয়েলের গায়ে আর্সেনিক চিনহিতকরণের লালদাগ। মিইয়ে যাই। অহরহ জীবন। দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়ে আসে। কবে আমরা শিখবো নিজেদেরকে শ্রদ্ধা করতে? নিজেদের অধিকারকে শ্রদ্ধা করতে?

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৬:১২
comment by: অতিথি বলেছেন: যুক্তিযুক্তক লেখনী। কোনো কিছুর বিরোধিতা করলে এভাবেই বিশ্লেষণ আসে বিদগ্ধ জনের কাছ থেকে।
তবে আমার উষ্মা এদশের রাজনীতি, আমলাদের উপরই বেশি। তারা কেন পারে না সাম্রাজ্যবাদ, মুক্তবাজার, পুঁজিবাদের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে? প্রশ্ন জাগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত দেশ মালয়েশিয়া কীভাবে পারলো!?

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৭:১১
comment by: মাশা বলেছেন: হাসান মোরশেদের বিশ্লেষনণটা সংক্ষিপ্ত হলেও অসাধারণ। আমি ও ভাবি যে আপনি যত যাই নয়া পদ্ধতিসমুহ আবিস্কার করেন না কেন। রাজনৈতিক কারনে সব ভেস্তে যেতে পারে। সেটা বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের জন্য অধিক সত্য। সম্প্রতি যাযাদিতে দেখলাম একসময়ের স্বৈরাচারি শাসক এরশাদ কয় ড. ইউনুস নোবেল পাবার পেছনে নাকি তার অবদান আছে। বোঝেন।

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১:০৫
comment by: শুভ বলেছেন: হাসান মোরশেদ,
অসম্ভব তথ্যবহুল লেখা!

মাশা,
হায় খোদা, সত্যি এরশাদ এটা বলেছে নাকি!
বুলশিট!!

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১২:২০
comment by: অতিথি বলেছেন: ভাসমান:
আসলে অতোটা গুছিয়ে সময় করে লিখা হয়না । যখন যা ভাবনা গুলো একেবারে লিখে রাখা । ব্যস্ততা এবং আলসেমী ।

চোর: ধন্যবাদ

মাশা:
ঠিক তাই বলতে চেয়েছি । সোশ্যাল রিফর্মছাড়া টোটাল ডেভেলপমেন্ট কি করে হয়? এবং এটা হতে হবে অবশ্যই পলিটিকেল কমিটমেন্ট থেকে । এর জন্য যে কমিউনিজম এ যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই ।ইউ.কে র মতো ক্যপিটালিষ্ট রাষ্ট্র ও তার নাগরিকের অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয় এবং রাষ্ট্র ই তা করে ।

জলিল ভাই:
আপত্তি টা ঠিক ও ই জায়গাতেই । শুধু মালয়েশিয়াই নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপান স হ সকল দেশের উন্নয়নের ইতিহাস ভিন্ন গল্প বলে । টেকসই উন্নয়ন এসেছে রাস্ট্রীয় অপচয় রোধ করে, আভ্যন্তরীন সম্পদের সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত ব্যব হারের মাধ্যমে, প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এবং অতি অবশ্যই অনিয়ন্ত্রিত উপার্জনের রাশ টেনে ধরে ।
কম সুদে টাকা এনে বেশী সুদে প্রান্তিক মানুষকে গছিয়ে দিয়ে ঐ ব্যক্তি বা সংগঠন লাভবান হতে পারে, টেকসই উন্নয়আদৌ হয় কিনা সেটা দেখতে হবে ।

যদি হয়েই যায়, সত্যি দারিদ্্র বিমোচন ঘটে, আমি আমার নেতিবাচক মনোভাবের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবো হাসি

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১২:২৫
comment by: অতিথি বলেছেন: দাদাগো কী আর কমু!
১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ২:২৫

comment by: অতিথি বলেছেন: শুভ:
ধন্যবাদ কিন্তু মহাত্না হোমো কে আপনি গালি দিলেন ? তার মহান পথকলি ট্রাষ্ট ভূলে গেলেন? ভূলে গেলেন ফালানীর কষ্টে তার করুণ কান্না? ভূলে গেলেন তিনি ও জাতিসংঘের ইউনিসেফ পদকপ্রাপ্ত ?

কৃতজ্ঞ হতে শিখুন স্যার !

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৩:৪৪
comment by: হযবরল বলেছেন: সব প্রশংসা তার। আমরা নতুন লেবেল পেলাম। এবার এই নবীর মুখ দিয়েই আমাদের নীতি নাযেল হবে। এবার উনি দয়া করে মোবাইল ফেলে ভূমি, মৎস্য এবং আবাদ দিয়ে জনগণের ভাগ্যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখালেই হয়।

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:১১
comment by: অতিথি বলেছেন: গোধূ,
ভালো থাকিস রে ভাই ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১০:৩৬
comment by: অতিথি বলেছেন: প্রশ্নটা হইলো,

ড. ইউনুস ক্র্যাচ এগিয়ে দিচ্ছেন বোঝা যায়।
কিন্তু কোমরটা কি প্রফেসর ইউনুস ভাঙ্গছে?

35 বছরের উপরে স্বাধীন বাংলাদেশের গরীবগুলা আরো গরীব হওয়ার যে প্রক্রিয়া আমাদের নিদারুন বাস্তবতা, ড. ইউনুস অথবা বাকি এনজিওরা কি সেইটা তৈরী করছে নাকি তারা পোস্ট প্রসেস ফেনোমেনা?

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১২:১২

comment by: অতিথি বলেছেন: গরীরের আরও গরীব হওয়ার মানে টা কি মরমী ভাই?
দরিদ্্র রেখা টানে যারা তাদের রেখা টানাটানির খেলায় আসলে কখনও আমাগো গরীবরা হয় নিম্ম মধ্যবিত্ত কখনও হয় মধ্যবিত্ত, আবার রেখাটা যখন উলটা পাশে টান দেয় তখন, গরিব হইতে হইতে হইতে মানুষ সর্বহারা হয়, কোনটা গরীব কোনটা গরিব না এই হিসাবটা ইউনুচ মিয়া ক্যামতে করছে, গ্রামে যাগোর বসত বাড়ী তাগোর বসতবাড়ীর দাম 25000 টাকার বেশি হইলেই তারা দরিদ্্র রেখার ঐপারে চইলা যায়, এই রকম 10 পয়েন্ট হিসাবটা ধরলে দেখা যাইবো গ্রামীন ব্যাংকের লোন নেওয়া অনেক মানুষই আসলে এই ইউনুচ মিয়া নির্দিষ্ট গরির অবস্থার ঐপারে আছে, এখন ওরা লোন নিয়া কতদিন ঐ রেখারঐপাশে ঝুইলা থাকতে পারবো এইটা একটা প্রশ্ন হইতে পারে। আমার তো ধারনা গ্রামে এখনও লোকজনের ভাড়া বাসার প্রবনতা শুরু হয় নাই প্রবল ভাবে, ওগোর সবার নিজের ভিটা থাকে। হ্যারা ভাঙা থালা লইয়া ভিক্ষা করলেও হ্যাগো নিজের একটা বসত ভিটা থাকে।

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১২:১৮
comment by: অতিথি বলেছেন: ধনী -গরীবের মধ্যে বৈষম্য বেড়ে চলার আরেক নাম 'গরীবের আরো গরীব' হওয়া। বতর্মান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে প্রক্রিয়াটা ক্রমবর্ধমান।

গ্রামীন ব্যাংক তৈরী হয়েছিলো এর ভিতরেই তাদেরকে লোন দিতে যাদের সামান্যতম পুঁজিও নেই স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য।

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১২:৩৩
comment by: অতিথি বলেছেন: ধনী-গরীব ব্যাবধান বেড়ে চলার সাথে গরীবের আরও গরীব হওয়ার কোনো সম্পর্ক নাই মরমী ভাই। হিসাবটা ভোক্তার হিসাব, আপনে ভোক্তা হিসাবে দুর্বল হয়া গেলে আপনে গরীব হইলেন, এইখানে তুলনামুলক আলোচনা চলতাছে না, সালমান এফ রহমানের ভোক্তা ক্ষমতা বাড়ার সাথে মফিজ মিয়ার ভোক্তাক্ষমতার তুলনা চলতাছে না যে কইবেন মফিজ মিয়ার ভোক্তা হওয়ার ক্ষমতা নির্দিষ্ট থাকলো আর সালমান মিয়ার পারচেজিং পাওয়ার বাইরা গেলো কইয়া মফিজ মিয়া গরীব হইয়া গেলো। মফিজ মিয়া মার্কেট ইকোনমির সুবাদে তার কাজ কইরা গেলে, তার মাসিক চাল-ডাল-আমিষ চাহিদা ঠিকমতো পুরন করতে পারলে, তার এইসব জিনিষপত্র ভোগের সমস্যা না কমলে সে ঠিক আছে, সলমান এফ রহমান আরও 20 বস্তা চাল বেশী কিনতে পারে কইয়া সে সেই অনুপাতে তার চাহিদার বেশী জিনিষ গিল্যা ফেলবো এইটা কোনো সংজ্ঞায় নাই।
আপনে বরং সুফিজম দিয়া একটা গরীবের সংজ্ঞা দেন তাইলে ভালো হয়, ঐটা আপনের ফিলড ওফ এক্সপার্টিজ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১২:৩৭
comment by: অতিথি বলেছেন: প্রিয় সাদিক:
ধর্মতত্ব ও ধর্মের ইতিহাসে আপনার পড়াশুনো অনেক । আফ্রো-এশিয়ান এবং আমেরিকার দেশগুলোতে খ্রিষ্ট ধর্মের মহান বানী প্রচারের ইতিহাস অবশ্যই জানেন ।
মিশনারীরা দারিদ্্র পীড়িত ও ই এলাকা গুলোতে খাদ্য সাহায্য নিয়ে গিয়েছে, মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে , শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে । একেবারে মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যপার । কিন্তু এতো সিকু্যয়েলের পরের অংশ । তার ঠি ক আগে আগে ইউরোপিয়ান জলদসু্যরা ও ই সব দেশগুলো জোর করে দখল করেছে , হত্যা নিযর্াতনের মাধ্যমে মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছে , স্থানীয় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে দারিদ্্র ছড়িয়েছে ( মসলিন শিল্পীদের কড়ে আঙ্গুল কেটে দিয়ে সিল্কের বাজার তৈরী কিংবা ধানের বদলে নীল চাষে বাধ্য করে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনা) । ও ই জলদসু্য এবং মিশনারী দুজনেই কিন্তু রাজশক্তির রিক্রুট ছিলো এবং একই পরিকল্পনার অংশ ।

তবু বোধ হয় আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকাই উচিত । আহা একেবারে মেরে ফেলতে চাইলে ও তো পারতো তারা । তা না করে অন্তত: ক্রাচ টুকু তো এগিয়ে দিচ্ছে !
যদি ও জানি কোমর ভেঙ্গে মানুষকে বাঁচিয়েই রাখা হবে , না হলে চড়া সুদে উন্নয়ন নামের ক্রাচ বিক্রী করা হবে কার কাছে?

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৪:০১
comment by: অতিথি বলেছেন: সত্যি হযু!
সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই জন্য !
আমার ব্লগ টাইটেল ও বদলে গেলো তাই ।
আশা রাখি নিরাশায় , দেশটা ও বদলাক এবার তাঁর কল্যানে ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১:০৫
comment by: অতিথি বলেছেন: অথর্াৎ চৈতন্য থেকেও বস্তু ঠিকরে বেরিয়ে আসা সম্ভব ! @ হাসান মোরশেদ

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৮:৪১
comment by: অতিথি বলেছেন: রাসেল আপনার ব্যাখ্যায় ভুল আছে। তয় বিতর্কে আগ্রহী নই। আমি সুফিজমের 'স'-ও জানি না, এক্সপার্ট কোন ছার।

হাসান মোরশেদ,
ধর্মতত্ত্ব ও ধর্মের ইতিহাসে আমার পড়াশুনা অনেক কইলে বিষয় দুইটারে কটাক্ষ করা হয়। বাদ দ্যান।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

উৎপাদক হবার প্রয়োজন নেই, ভোক্তা হও , খড়ের চালার বদলে টিনের ঘর বানাও , রিং বসালো টয়লেট ব্যব হার করো , মোবাইল ফোনে কথা বলো ---এ জন্য যা টাকা লাগে দেয়া যাবে । সুদ মাত্র 25% !

এই সুদের হারের জায়গাটাতেই গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আমার আপত্তি। জনাব বদরুদ্দিন উমরের এ বিষয়ে একটা বই আছে; ডঃ ইউনুসের দারিদ্র্য বাণিজ্য। পুরোপুরি একমত না হলেও সে বইয়ের কথাগুলো একেবারে অগ্রাহ্য করার মত না।

তবে এ কথা মানতে হবে সুদের হার ৪০% হোক; দারিদ্র্য নিয়ে বানিজ্য করুক, তারপরেও গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু দরিদ্র মানুষদের একটু সুখের ছোয়াঁ দিয়েছে। সে অর্থে ডঃ ইউনুস দামী ব্যক্তিত্তে, তবে পূজনীয় নয়।

রাফি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তবে এ কথা মানতে হবে সুদের হার ৪০% হোক; দারিদ্র্য নিয়ে বানিজ্য করুক, তারপরেও গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু দরিদ্র মানুষদের একটু সুখের ছোয়াঁ দিয়েছে।

দরিদ্র মানুষের সুখের যদি দু একটা উদাহরন দিতেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হতো । ৬.৫ সুদে ব্যাংক ঋন নিয়ে টিউশন ফি মিটাতে গিয়েই আমার জেরবার অবস্থা হয়েছিল ।
৪০% সুদে ঋন নিয়ে ও কোন ম্যাজিকে মানুষ 'সুখের ছোঁয়া ' পায় জানতে আসলেই আগ্রহ হচ্ছে ।

-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

দরিদ্র মানুষের সুখের যদি দু একটা উদাহরন দিতেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হতো ।

সুখের ছোয়া বলতে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে
অনেক ভূমিহীন দেখেছি যারা শুধু মুলধনের অভাবে পরের জমিতে কামলা খাটত; পেটের জ্বালায় আশ্বিন কার্তিক মাসে আগাম কামলা বিক্রি করত। শুভংকরের ফাকির ৪০% সুদ এদের এবং এদের পরিবারের তিনবেলা খাবার নিশ্চয়তাটুকু অন্তত দিয়েছে; ঘরের বউদের অপরের বাড়িতে নিগৃহীত হওয়া থেকে বাচিয়েছে।
তবে আমি সামগ্রিকভাবে ডঃ ইউনুস এর কর্মকান্ডকে ঘৃনার চোখেই দেখি। মন্তব্যটা ছিল তার সমর্থকদের যুক্তির জায়গাটা দেখিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। আশা করি ভুল বুঝবেন না।

রাফি

তানভীর এর ছবি

অশান্তির মুলে তবে দারিদ্র
একটি অর্থনৈতিক ধারনার জন্ম দিয়ে শান্তির জন্য সর্ব্বোচ্চ স্বীকৃতি পাওয়া অভিনব নি:সন্দেহে । আমার যদি বোঝতে ভূল না হয় নোবেল কমিটির ব্যখ্যাটা এরকম : যেহেতু এই তত্ব দারিদ্র বিমোচনে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং দারিদ্রই হচ্ছে বিশ্ব শান্তির পথে প্রধান অন্তরায় , সেহেতু এই তত্বের উদ্যোক্তা এবং তার সংগঠন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করছেন ।

প্রিয় হাসান মোরশেদ, আপনার প্রোফাইলে গেলে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিউজ উইজেট দেখি, এছাড়া এমনেস্টি বিষয়ক আপনার বিভিন্ন পোস্ট দেখে ধারণা হয়েছে -আপনি এ সংগঠনের একজন কর্মী। আপনি নোবেল কমিটির দারিদ্র ও শান্তির তত্ত্ব অনুধাবনে অক্ষম। আশা করি, আপনার সংগঠন ইউনুসের নোবেল বিজয়ে যে অভিনন্দন বাণী দিয়েছে তা বুঝতে সক্ষম হবেন। এইখানে বিবৃতিটা আছে। তবু সেখান থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করি- Today's announcement by the Nobel Peace Prize Committee reinforces Amnesty International's message that poverty is a major threat to human dignity and an obstacle to promoting peace and justice, but that it is not inevitable and can be overcome through the creativity and courage of individuals and the power of group mobilization," said Irene Khan, Secretary General of Amnesty International.

আশা করি বোল্ড করা অংশগুলো দেখেছেন। নাকি আইরিন খান এটা বানিয়ে বলেছে? নাকি এটা আপনার সংগঠন এমনেস্টির মেসেজ নয়? এই মেসেজ যদি সত্যি হয়, তবে ক্রাচ হাতে ইউনুসের পেছনে এমনেস্টির কর্মী হিসেবে আপনিও তো দাঁড়িয়ে আছেন। (আর এই এমনেস্টি টাইপ সংগঠনগুলোতো আসলে গরীব দেশের প্রতি ধনী
দেশের একরকম ক্রাচই বটে)।
মাননীয় হাসান মোরশেদ, তবে বৃথা আর অন্যের সমালোচনা কেন?
ভাল থাকবেন।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় তানভীর,
আমি এমনেষ্টির কোন বেতনভোগী কর্মী/কর্মচারী নই । বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্টিভিষ্ট ছিলাম,এখনো আছি ,এজিএমে ভোটাধিকার আছে-ইচ্ছে হলে ভোট দেই ,না হলে নেই ।

এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল কিংবা আইরিন খানের কাছে তো আমার মাথা বিক্রী করে দেইনি যে, তাঁরা যা বলবেন তা আমারো শিরোধার্য অথবা এমনেষ্টি/আইরিন খানের সত্যায়নে বাস্তবতা বদলে যায় । এমন তো না যে, এমনেষ্টি/আইরিন খান সার্টিফায়েড করলে গ্রামীনের সুদের হার কমে আসে কিংবা ইউনুসের এই চড়া সুদের বাজার বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন উপহার দেয় ।

(আর এই এমনেস্টি টাইপ সংগঠনগুলোতো আসলে গরীব দেশের প্রতি ধনী
দেশের একরকম ক্রাচই বটে)।

একটু সুনির্দিষ্ট করে বলবেন কি এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রামীন ব্যাংকের মতো অর্থলগ্নীকারী সুদের ব্যাবসায়ী কিনা?
এই সংগঠনের সাথে চার বছরের সংশ্লিষ্টতায়-তুষারপাতে দাঁড়িয়ে দারফুরের জন্য ডোনেশন তোলা, গুয়ান্তানামো বন্ধের দাবীতে ক্যাম্পেইন করা, চলেশ রিচিলের মৃত্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে পুনঃতদন্তে বাধ্য করা এই ধরনের একটিভিটস ছাড়া আর কিছু তো দেখলাম না ।

আপনার মন্তব্যে মনে হচ্ছে আপনার কাছে বেশ ভালোই তথ্য আছে এমনেষ্টি কি করে গরীব দেশের রক্ত চুষে খাচ্ছে ।

তথ্যগুলো শেয়ার করলে আমার নিজের জন্য উপকার হয় । বছর বছর পকেটের যে পয়সা ডোনেট করি, এবার তাহলে তা সুদ সহ ফেরত পাবো ।

আপনি ও ভালো থাকুন
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তানভীর এর ছবি

ভাইসাব, এমনেস্টি কি আর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নাকি! এমনেস্টি তো দেশে দেশে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। যে ব্রিটিশ শত শত বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে মানবাধিকার লুন্ঠন করল, যে আমেরিকা তার চামচাদের নিয়ে এখন পৃথিবীর নানা জায়গায় মানবাধিকার লুন্ঠন করে যাচ্ছে- এই এমনেস্টি ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান করে এখন তারা মানবাধিকারের ধ্বজাধারী হতে চায়। কি তামাশা! এমনেস্টি নিয়ে সুন্দর সুন্দর বাতচিত এইখানে পাবেন যা এমনেস্টিরই এক কর্মী বর্ণনা করেছেন। শেষের দিক থেকে একটু কোট করি-

“they use contributions to make sure that Amnesty International USA toes the line on Israel, and Amnesty International USA pays about 20% of the London budget. So that has an impact over in London too.”

আর লাস্টের লাইনটা- “So that's the way it works and it's highly political, highly coercive, and eventually if you get out of line, they'll get rid of you.”

তবে কিছু কিছু ব্যাপার বাদ দিলে এমনেস্টির কাজ-কর্ম আমি এপ্রিশিয়েটই করি। আমি তাই একটিভিস্ট হিসেবে আপনার স্বেচ্ছাশ্রমকে সাধুবাদ জানাই। আমি শুধু বলতে চেয়েছি, এইসব এমনেস্টি, গ্রামীণ ব্যাংক সবই একসূত্রে গাঁথা –যা আইরিন খান তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেছেন। গরীবের চামড়া তুলে নিয়ে এখন তার পচনে মলম লাগানোর জন্যই এদের জন্ম (অথবা আপনার ভাষায় কোমড় ভাঙ্গার পর ক্রাচ ধরিয়ে দেয়া)। না হয়, পচে গন্ধ হলে বড়লোকের জন্য বিব্রতকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে।

আমি গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে তেমন কিছু জানি না, সেটা মানুষের উপকার করছে কি না করছে সে বিষয়েও আমার কিছু বলার নেই। তবে ব্যক্তি ইউনুসকে জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি তো, তাই সে কেমন লোক তা আর দশটা মানুষের চেয়ে বেশীই জানি। এখানে তো মনে হয়, ইউনুসের প্রতি কারো ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই, সবাই নিখাদ দেশপ্রেম থেকেই ইউনুসের সমালোচনা করছেন। কিন্তু আমি এবং আমার পরিবার পরোক্ষভাবে ইউনুস সাহেবের কারণে চরম ভুক্তভোগী- তাই আমার ইউনুসের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশও রয়েছে। (এসব নিতান্তই ব্যক্তিগত পারিবারিক ব্যাপার, তাই এটা নিয়ে লেখা ঠিক কি না আমি আজো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নি)। আজ তাই যখন চারদিকে ইউনুসের সমালোচনা হয়, তাকে লোকে ধিক্কার দেয় আমার কিন্তু তাতে খুশী হবার কথা, আমারো কিন্তু তাতে সানন্দে শামিল হবার কথা। কিন্তু আমি পারি না। আমার ক্ষুদ্র স্বার্থের চেয়ে আমার বিবেক বড় হয়ে এই মিথ্যাচারে বাধা দেয়, আমার ইচ্ছা না থাকলেও এসব জায়গায় আমাকে মন্তব্য করতে হয়। সবাই তো গ্রামীণের বাইরের দিকটাই দেখেছে, কিন্তু কেউ জানেন কি এই লোক গ্রামীণ থেকে কত বেতন পান, তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কত, দেশে-বিদেশে তার কয়টা বাড়ী, গাড়ী আছে, তিনি এবং তার স্ত্রী কিরকম লাইফ স্টাইলে চলেন। আপনি বা আর কেউ তথ্যগুলো জানলে দয়া করে জানাবেন।

আমি যত বদনামই করি এই মানুষটা অসৎ, গরিবের টাকায় ভোগ-বিলাস করেছে, দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তার ছিল না- এমন কথা তাকে যারা আসলেই চেনে, তার শত্রু ও বলতে পারবে না। দেশের জন্য কিছু করবেন- এই তাড়না থেকেই বিদেশ থেকে চলে এসে, তার আমেরিকান নাগরিক স্ত্রীকে ত্যাগ করে (এখানে আসার পর যদিও) দেশে পড়েছিলেন। নোবেল পুরস্কার, রাজনীতি এসব তো ত্রিশ বছর পরের কথা। স্বজনপ্রীতি থেকে কঠোরভাবে দূরে থাকার নীতি তার ছিল বলেই- তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা দুর্দিনে তার কাছ থেকে কখনো কোন সাহায্য পায় নি, যার ভুক্তভোগী আমরা নিজেই। বিশ্বাস কি হয়, যিনি নাকি আমেরিকার এত বড় বন্ধু, তার আপন ভাইয়ের ছেলেই পড়তে আসার জন্য কখনো আমেরিকার ভিসা পায় নি। আমার সেই বন্ধু এখনো দেশেই আছে তার চাচার প্রতি ক্ষোভ নিয়ে। ইউনুস তার চাচা- এ পরিচয়টা কোথাও তার ব্যবহার করা নিষেধ। আর উনি তো নিজে থেকেই কোন স্বজনের জন্য কিছু করবেন না।

তাই আমার যত ব্যক্তিগত ক্ষোভ, আক্রোশই থাকুক শুধু এটাই মাঝে মাঝে মনে হয়- এ মানুষটা দেশের হাল ধরার সুযোগ পেলে হয়তো দেশটা অন্যরকম হতো। এনওয়াই বাংলার এই আর্টিকেলে তার বাল্যকালের বন্ধু বেলাল বেগ তার রাজনীতিতে আসা নিয়ে কিছু কথা, কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন। বেলাল বেগও এক অদ্ভুত মানুষ। ওনাকে নিয়েও হয়তো কোনদিন লিখব। বেলাল বেগের সেই লেখাটা থেকেই একটু উদ্ধৃত করি-
কিন্তু তিনি রাজনীতি করেন নি। যে রাজনীতি মানুষের জীবন তসনস করে দিতে উদ্যত আজ তিনি তার মুখোমুখি। তার রক্তস্থিত চ্যালেঞ্জের শক্তি তিনি আবার অনুভব করেছেন। সে জন্যেই তিনি বলে ফেলেছেন, প্রয়োজনে তিনি রাজনৈতিক দল করবেন। ওটা ইউনুস কখনই করবেন না। তিনি বিশ্বের ৬০০ কোটি মানুষের নেতা। বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র এবং উদ্দেশ্যহীন দেশের ভাঙ্গা নৌকায় চড়ে ডুবে মরার মতো নির্বোধ তিনি নন’।
তার বাল্যবন্ধু কিন্তু তাকে আগেই পড়ে ফেলেছিলেন যে তিনি শেষ পর্যন্ত এই দেশের রাজনীতিতে আসবেন না। বেলাল বেগ, আমি, আমরা - যারা মুহাম্মদ ইউনুসকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমরা সবাই জানি- এমন একটা দুর্লভ ব্যক্তিত্বের মানুষ আমরা কেউ কখনো আর দেখি নি, এই বাংলাদেশ হয়তো কোন দিন দেখবেও না আর। ইউনুস সাহেবের কাছে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থভংগ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যর্থ চাওয়া-পাওয়াকে ছাড়িয়ে দেশের জন্য দীর্ঘশ্বাসটা তাই আমাদের মাঝে মাঝে বড় হয়ে ওঠে। এই ট্রেন মিস হয়ে গেছে, কখনো আর ধরা যাবে না!

দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য দুঃখিত ভাই।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমরা - যারা মুহাম্মদ ইউনুসকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমরা সবাই জানি- এমন একটা দুর্লভ ব্যক্তিত্বের মানুষ আমরা কেউ কখনো আর দেখি নি, এই বাংলাদেশ হয়তো কোন দিন দেখবেও না আর।

কি করবেন বলেন? দুঃখ করে লাভ নেই। পাবলিক তো আর ইউনুসকে এত কাছ থেকে দেখে তার দুর্লভ ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হওয়ার তেমন অবকাশ পায় না। নাদান পাবলিক দেখে তিনি সুশীল সমাজ নিয়ে পলিটিক্সে আসতে চান, পিচের অবস্থা খারাপ দেখে আবার পিছলান। তিনি যতোই উচ্চ-অভাবনীয়-অভূতপূর্ব ব্যক্তিত্বের অধিকারী হোন না কেন, পাবলিকের সোজা চোখে এগুলোকে ধান্দাবাজিই মনে হয়। পাবলিক বড়োই বোকা। তারা ব্যক্তিত্বের কদর বুঝে না। দেশের জন্য দীর্ঘশ্বাসটাকে অনুভব করে না। কী আর করা!

তবে ইউনুস সাহেব দুর্লভ ব্যক্তিত্বের মানুষ, আপনার এই কথাটা আমিও তাকে কাছ থেকে না দেখেও বুঝি। তার মত আরেকখান ব্যক্তিত্ব এই দেশে পয়দা হবে কিনা, তা নিয়ে আমারও ঘোরতর সংশয় আছে। সুমেরুতে বরফ গলছে, বাংলাদেশই নাকি গায়েব হয়ে যাবে কয়েক দশকের মধ্যে।

তবে যারা ডঃ ইউনুস ফ্যানক্লাবের একনিষ্ঠ সদস্য, তারা কেন একবারও ভাবে না, পাবলিক এরকম একজন নোবেল সম্মান বয়ে আনা লোককে সুদখোর আখ্যা দেয় কেন, এরকম একজন দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রদূতকে সন্দেহের চোখে দেখে কেন, দেশের জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে জান উজাড় করে দেয়া এরকম একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে পাবলিক ভন্ড মনে করে কেন। পাবলিক বোকা, বাঙালি পরশ্রীকাতর, বাঙালি মানীলোকের মান বুঝে না - এর বাইরে কোনো ব্যাখ্যা কি সত্যিই নেই?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তানভীর এর ছবি

সুদখোর তো আপনি, আমি- আমরা সবাই। আপনে কি বাংলাদশের ব্যাংকে টাকা রাইখা সুদ খান না? বা আপনের ফ্যামিলি খায় না? নাকি জামাতের ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাইখা আপনেরা মুনাফা খান! এইসব টার্মগুলিকে কারা কি উদ্দেশ্যে ইউনুস রাজনীতিতে আসতে চাওয়ার পর ব্যবহার করে পাব্লিকরে ভোদাই বানাইছে নিজেই চিন্তা করে দেখেন। আপনি নিজেও তো সুদখোর হইয়া (আশা করতেছি, জামাতের মুনাফাখোর মহাজনদের কাছে টাকা রাখেন নাই হাসি ) এই টার্ম ভালই খাইছেন!

আর তাকে ভন্ড যারা ভাবে তারাই শুধু দেশের একমাত্র পাব্লিক এই রকম ভাবাও বোধহয় ঠিক না। খোঁজ নিলে দেখবেন এরা বেশীরভাগই ওই দুই নেত্রী ফ্যান ক্লাব আর কম্যুনিজম ফ্যান ক্লাবেরই সদস্য। এদের লাফঝাপই এই ইস্যু নিয়া বেশী তাদের স্বার্থের কারণে। ফজলে হাসান আবেদও তো একই পেশার লোক। উনার নামে তো এতো হাউকাউ হয় না। হইতো যদি উনিও রাজনীতিতে আসতে চাইতেন।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তানভীর, তার সুদ খাওয়া নিয়া আমার কোনো আপত্তি নাই। সুদের হারও ৪০% এর যায়গায় ৪০০% হোক, কোনো সমস্যা নাই। এইটা তার বিজনেস। সমস্যা হলো, এটাকে জনসেবা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা।

আমি নিজেও তাকে ভন্ড মনে করি, যদিও আমি দুই নেত্রী ফ্যানক্লাবের সমর্থক না, কম্যুনিজমও বুঝি না। আমার কারণটা সিম্পল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা নতুন না। হাসিনা-খালেদার পার্টির দুর্ণীতিতে পাবলিকের জীবন অনেক আগে থেকেই ওষ্ঠাগত। ডঃ ইউনুস কখনোই এটা নিয়ে কোনো কাজ করা দূরে থাক, কিছু বলেছেন বলেও শুনিনি। নোবেল পাওয়ার পরেই তিনি রাজনীতিতে নামার প্রতিজ্ঞা করলেন। তার পদ্ধতিটা আমার কাছে প্রথম থেকেই ভন্ডামি মনে হয়েছে। ঝোঁপ বুঝে কোপ মারা ফর্মূলায় শর্টকাটে নোবেল পুরষ্কারকে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে কনভার্ট করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ বলে মনে হয়েছে। তবুও 'দেখা যাক কি হয়' ভেবে তাকে বেনিফিট অফ ডাউট দিতে চেয়েছি। এরপরে দেখা গেলো পরিস্থিতি খারাপ দেখেই তিনি পিছু হটলেন। জনসেবা জাতীয় উদ্দেশ্য থাকলে এটা তিনি কখনোই করতেন না। রাজনীতিতে আসা না আসা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। কিন্তু এই ঘটনার পরে তাকে দেশপ্রেমিক, জনসেবাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হাস্যকর হয়ে ওঠে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কথা তো সেটাই ।
ভাইসাহেব সুদ খাবেন,খান । কিন্তু সুদের ব্যাবসার মহাজন রে ত্রাতা বানাইয়া ফেললে তো সমস্যা ।

আর ইউনুস সাহেব তার আত্নীয় পরিজনের কাছ কতোটুকু সৎ,তার স্কুল জীবনের বন্ধু তারে ৬০০ কোটি মানুষের নেতা ভাবেন-এইসবে আসলে কিছুই আসে যায়না ।

তারে নিয়া বন্দনা গাইতে হলে, তথ্য প্রমান দেখাতে হবে কোন জাদু বলে সুদের ব্যবসা করে তিনি গরীবের ভাগ্য উন্নয়ন করছেন ।

তিনি যে পদ্ধতিতে সুদ দেন ( সিকিউরিটি ছাড়া)-এই পদ্ধতি আরো ১০০ বছর আগে কাবুলিওয়ালারা ও সুদ দিতো সুদূর আফগান থেকে এই বাংগাল মুল্লুকে আইসা ।

কাবুলিওয়ালা এবং ইউনুস দুইজনেই জানেন-ঋনের টাকা মারে ভদ্রলোকেরা, ফকিন্নীর পোলা মাইয়াগো ঐ সাহস ও নাই,হজম করার শক্তি ও নাই, পালাইয়া যাওয়ার জায়গা ও নাই ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

যেখানে মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ নেওয়াকে আত্মঘাতী মনে করেন, তিনি সেখানে সুদ ও অন্যান্য চাঁদা মিলিয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি সুদে গরিব মানুষদের ঋণের আওতায় এনে অর্থনীতির নিয়মকে ভুল প্রমাণ করেছেন। দুর্মুখ সমালোচকরা বলেন, শুভঙ্করের ফাঁকি ধরতে পারলে নাকি এই সুদ পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি বলে জানা যায়। তিনি গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দেশীয় টেলিযোগাযোগ বাণিজ্যের বড় অংশটিই বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির এখতিয়ারে নিতে পেরেছেন। গরিবের ব্যাংকার হয়ে বিশ্বের বৃহত সুদি কারবারি সংস্থাগুগুলোর পরিচালনা বোর্ডের মধ্যমণি হয়ে তাদের টাকা এনে বাংলাদেশে দারিদ্র্যমুক্তির অভিযান চালাচ্ছেন। তারপরও গ্রামীণের ৩০ বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার জন্য নিশ্চয়ই তিনি বা তার মতো ‘সামাজিক ব্যবসায়ী’ এনজিও নয় কেবল রাজনীতিবিদরাই দায়ী। গ্রামীণফোন যে চড়া রেটে ব্যবসা করে যথাযথ শুল্ক ব্যবস্থায় সরকারের প্রাপ্য না দিয়েই মুনাফার ডলার বিদেশে নিচ্ছে এর জন্যও আলবত তার দায় নাই, দায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী আর টেলিনরের। তিনি তো কেবল ১৩ শতাংশের অংশীদার!
তিনি যথাযথভাবে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রথম ধাপ হিসাবে ভূমি সংস্কারের দাবিকে ঋণ পাওয়ার অধিকারের দাবিতে পরিণত করেছেন। শান্তির ধ্বনি তুলে শাবরা-শাতিলা গণহত্যার জন্য দায়ি শিমন পেরেজের সঙ্গে একই কোম্পানির ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্য থেকেছেন। বাংলাদেশের গ্যাস-বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া, ভারতকে ট্রানজিট দেয়াসহ প্রভুদের যাবতীয় খায়েশ আমরা তাঁর মুখে দাবি আকারে উত্থাপিত হতে দেখি। এরশাদের পুরো সময় জুড়ে তিনি সরকারি সুবিধা নিয়ে, তার সঙ্গে মদদ রেখে গ্রামীণের সৌধ নির্মাণ করেন। এরশাদের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার বাড়াবাড়ি জানাজানি হলে এরশাদ পতনের পরে কিছুদিন বিদেশে থাকেন এবং গ্রামীণ অফিস বন্ধ রাখেন।
কৃষিতে সর্বনাশা ভূমিকা পালনকারী মনসান্তোকে তিনি এদেশে আনতে চেয়েছিলেন, পরে সিকান্দার আবু জাফর, বন্দনা শিবা সহ অনেক বিশ্বখ্যাত লোকের প্রতিবাদের মুখে পিছু হটেন। এখন এনেছেন শক্তি দই ও বেবি জিংক। পোলিও টিকার মতো এই বেবি জিংক- অচিরেই সরকারি কর্মসূচিতে ঢুকে যাবে এবং সকল শিশুর জন্য তা খাওয়া বাধ্যতামূলক হবে। আর তখন গ্রামীণই হবে এর একমাত্র সরবরাহকারি।
বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় উতপাদনশীল খাতের যা প্রবৃদ্ধি তার থেকে হাজার গুণ বেশি বেগে লাফিয়ে লাফিয়ে এগুচেছ অর্থকরী খাত। ব্যাংক, বীমা, শেয়ার বাজারঃ ‘টাকা টাকার জন্য’ - বিনিয়োজিত হচেছ অনেক উচ্চ হারে, মুনাফা সেখানেই বেশি, মাঝখানে ফাঁকা। কিন্তু উৎপাদনশীল খাত থেকে বেশিদূর লাফিয়ে গেলে যে বিপদ হয় তার চাপ ইতিমধ্যে মেক্সিকো, পূর্ব এশিয়া, ব্রাজিল হযে পুরো বিশ্বের বহুদেশ বুঝেছে। কিন্তু উপায় কী? মুনাফার হার সবচাইতে বেশি যেসব খাতে, সেগুলোর মধ্যে মারণাস্ত্র, মাদকদ্রব্য, বিনোদন সাম্রাজ্যের পাশাপাশি এই অর্থকরী বিনিয়োগ। কিন্তু অর্থকরী বিনিয়োগও একটা সীমাবদ্ধতায় আটকে যাচ্ছিলো। বাজারের সীমা, আদায়ের সংকট, ঋণখেলাফী, দুর্বৃত্তদের ‘সীমা অতিক্রমকারী’ কর্মকাণ্ডে দেউলিয়া হয়েছে একের পর এক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র।

গ্রামীণ ব্যাংক মডেল এরকম অবস্থায় এক আশার আলোঃ ঋণের ত্রে সম্প্রসারণের অসীম সম্ভাবনা, বিশাল বাজার তৈরি, ঋণ আদায়ের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি তার ‘মানবতাবাদী’ চরিত্র; এরকম এক মডেল বিশ্বের তাবত বিনিয়োগকারীদের জন্য তো বড় অবলম্বন হবেই। এই উপলব্ধি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিষ্কার বোঝা যায় মধ্য ৯০ দশকে। সেজন্যই ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংক ুদ্রঋণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয় ও একটি তহবিলও গঠন করে। ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম ক্ষুদ্রঋণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশ্বব্যাংক, ইউএসএইড, ইউএনডিপি এবং সিটিব্যাংক সকলেই বিশেষ কর্মসূচি ও বিনিয়োগ তহবিল গঠনের কথা ঘোষণা করে। এরপর থেকে মূল ব্যাংকিং ধারায় এটি সম্পৃক্ত করবার নানা আয়োজন চলতে থাকে। এর দশ বছর পর শুধু যে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল বহু বহু দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই নয়। মূলধারার ব্যাংকিংও ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি গ্রহণ করবার আয়োজন করছে।
অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্রমুক্তিতে আর খরচ করতে রাজি নয় দাতারা। তারা এখন চায় এমন ধরনের এনজিও, যেখানে কইয়েল তেলে কই ভাজা যাবে। সেবাও হবে আবার সেই সেবার টাকা আসবে গরিব মানুষের উপার্জনে ভাগ বসিয়ে। অর্থাত এনজিওদের রোজগার করে চলতে হবে। রে জন্য ক্ষুদ্রঋণের মতো মোক্ষম আর কী হতে পারে?
যাহোক, গ্রামীণের সাফল্য ও ক্ষুদ্রঋণের মঙ্গলময় ভূমিকার প্রতিটি দাবিই তথ্যপ্রমাণ দিয়েই খারিজ করা সম্ভব। একাধিক গবেষক তা করেছেনও। এটা কোনো বামপন্থি সংকীর্ণতা নয়, বাস্তবতাকে বাস্তবতা দিয়েই দেখা। বিশ্বব্যাংক ও কর্পোরেট বিশ্বের অ-লৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস না থাকলে, তা শাদা চোখেই দেখা যায়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

গৌতম এর ছবি

ক্ষুদ্রঋণের শুভঙ্করের ফাঁকিটা আসলে সহজ। যে টাকা ঋণ নিচ্ছে, ৩০% হারে তার সুদ দেওয়ার কথা ১৩০ টাকা- এক বছর পর। কিন্তু অবস্থার ফের তাকে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ঋণ সুদ করতে হচ্ছে। এক বছর অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহর অনেক আগেই, ৪৮ সপ্তাহের মধ্যে তাকে সমস্ত ঋণ সুদসদ ফেরত দিতে হয়। ফলে কাগজে-কলমে ৩০% থাকলেও তা ৫০%-এর উপরে যায়। কিছু অংক করে এটা বের করা যায়।

একটা সহজ উদাহরণ দিই। মনে করি, আমি মাহবুব লীলেনের কাছ থেকে ১০০০ টাকা ধার নিলাম ১০% সুদে। নিয়মানুযায়ী একবছর পর আমাকে ফেরত দিতে হবে ১১০০ টাকা। কিন্তু বিড়ি খাওয়ার জন্য লীলেন এক মাস পর থেকেই টাকা চাইতে লাগলেন আমার কাছ থেকে। এখন যদি আমি পুরো টাকাটা অর্থাৎ ১১০০ টাকা দিয়ে দিই, তাহলে আমাকে সুদ দিতে হচ্ছে আসলে ৯৬ শতাংশের মতো। যদিও একবছর পর আমাকে ওই ১১০০ টাকাই দিতে হতো।

শুভংকরের ফাঁকিটা এখানেই।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভালো কথা
আমার টাকাগুলো দিচ্ছেন না কেন?

গৌতম এর ছবি

মনে করি, আমি মাহবুব লীলেনের কাছ থেকে

লীলেন ভাই, বোল্ড করা অংশটা খেয়াল করবেন কি? ভাবলাম আপনার নাম নিলে অন্তত এক কাপ চা খাওয়াবেন। না, সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই আপনার। (রাগের ইমোটিকন)
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

গৌতম, আপনার অংকের হিসাবটা আমাকে কিঞ্চিৎ কৌতুহলী করে তুলেছে। আমি আসলে শুভঙ্করের ফাঁকিটার বিষয়ে আরেকটু অবগত হতে চাচ্ছি এজন্যেই যে আপনার হিসাবটার মধ্যেও মনে হচ্ছে কোথায় যেন একটা ফাঁকি রয়ে গেছে। প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমি কিন্তু অংকে মোটেও পারদর্শী নই। তবে বাস্তব তথ্য উপাত্তকে গুরুত্ব না দিয়ে পারি না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিন্তু সবক্ষেত্রে আপনার সাথে মিলছে না বলেই হিসাবটাকে আবার একটু রিভিউ করছি।
আমার বাড়ির পাশেই গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, আশা'র সমিতি এবং শাখা অফিসও রয়েছে। এবং বেশ কিছু ঋণী বা গ্রাহকও রয়েছেন।

প্রথমেই এনজিও হিসেবে ব্র্যাক ও আশা'র উদাহরণ টানছি। এরা ঋণ দেন তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ১৫% হারে। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকিটা হচ্ছে প্রদানকৃত মূলঋণের উপর চার্জকৃত সুদ বাবদ তারা শতে ১৫ টাকা হিসেবে ১০০০ টাকা ঋণের জন্য ১১৫০ টাকা নেন। সাপ্তাহিক পাক্ষিক যেভাবেই হোক নির্ধারিত নিয়মে কিস্তি পরিশোধ করলেও তাকে বছরের মধ্যে ওই ১১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিস্তিতে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ হয়ে যে মূলঋণ হ্রাস পাচ্ছে, সুদের হিসাবের ক্ষেত্রে তা কোনই প্রভাব ফেলছে না। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যদিও সুদটা ধার্য হয় এক বছরের জন্য, কিন্তু ঋণ নেয়ার এক সপ্তা পরেই যদি কেউ টাকা পরিশোধ করতে চায় তাকে পুরো ১১৫০ টাকাই দিতে হবে। অতএব এ ক্ষেত্রে সুদের হিসাবটা কী হচ্ছে ? এবং তা যে পরিশোধের সময়ের ভিন্নতার কারণে সুদের হারে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করছে তা কি কেউ তদারক করেন ? এ ক্ষেত্রে ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ বা আশা'র শফিকুল হক চৌধুরীকে নিয়ে কাউকে খুব একটা সমালোচনা করতে দেখি না। সম্ভবত তাঁরা রাজনীতিতে আগ্রহ দেখান নি বলেই। হাটে মাঠে ঘাটে অন্য যে সব স্থানীয় এনজিও কিলবিল করে গজিয়ে উঠেছে বা উঠছে তাদের পিলে চমকানো সুদের হিসাব আদৌ কোন গণিতের সূত্রে সমাধানযোগ্য কিনা তা কেউ হিসেব করেন না। কারণ ওগুলোর সাথে স্বার্থগতভাবে জড়িত রয়েছে আমাদেরই অনেক চেনাজানা বিপ্লবী, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী বা তাদের আত্মীয় পরিজন যারা আমাদের মফস্বল রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
এবার আসি গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাবে। গ্রামীণ ব্যাংককে আমি এনজিও বলছি না এজন্যেই যে, ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ বলে এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটা বিশেষায়িত ব্যাংক। এর পরিচালনা বোর্ডে সরকারের নিয়োগ করা কয়েকজন হাই অফিসিয়াল বা সুযোগ্য ব্যাক্তিত্বরা রয়েছেন। সে যাক্ ,এরা সুদ নেন তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ২০% বাৎসরিক হারে। উপরোক্ত সুদের হিসাব অনুযায়ী এক্ষেত্রে ১০০০ টাকার মূলঋণের জন্য সুদাসলে হবার কথা ১২০০ টাকা বৎসরে। কিন্তু তা না হয়ে একজন ঋণীকে দিতে হচ্ছে ১১০০ টাকা বা তার থেকে পাঁচ দশটাকা কম বা বেশি। তবে কি সুদ ১০% ? তা নয়। সুদের হার ২০% ঠিকই আছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক ব্যাংকিং নিয়মানুযায়ীই সাপ্তাহিক বা নির্ধারিত নিয়মে পরিশোধকৃত কিস্তিকে পরিশোধ সাপেক্ষে মূলঋণ থেকে বাদ দিয়ে পরিশোধযোগ্য ও সুদচার্জযোগ্য ঋণের ব্যালেন্স বানিয়ে নেয়। ফলে ঋণ নেয়ার প্রথম সপ্তাহের চার্জযোগ্য ঋণের ব্যালেন্স থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের চার্জযোগ্য ঋণের ব্যালেন্স কমে আসে। এভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে আদায়যোগ্য ব্যালেন্স কমতে থাকায় মোট চার্জকৃত সুদের পরিমাণ ঋণীর ঋণ ব্যবহারের সময়কালের উপরই নির্ভর করে। কেউ ছ'মাস পর পুরো ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে ওই সময়কালের জন্য ক্রমহ্রাসমান ব্যালেন্সের সাপেক্ষে হিসাব করা হয়। ফলে তা হয়তো সম্ভাব্য ৭০ বা ৭৫ বা এর কাছাকাছি পরিমাণে দাঁড়ায়। এটাই ব্যাংকিং নিয়ম, যা আমার জানামতে গ্রামীণ ব্যাংক করে থাকে। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হচ্ছে ঋণপরিশোধের সম্ভাব্য সময়কাল হিসাব করে গ্রামীণ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ঋণীর কাছে প্রাপ্য সম্ভাব্য সুদকে সাপ্তহিক ভিত্তিতে খণ্ডিতভাবে ঋণের কিস্তির সাথে আদায় করে থাকে। এ ক্ষেত্রে একজন ঋণী বছর শেষে সুদ বাবদ যে ১০০ টাকা প্রদান করার কথা তা টুকরো টুকরো করে সারা বছর সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণের কিস্তির সাথে পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে এই ১০০ টাকা বছর শেষে শোধ না করে শুরু থেকে সাপ্তাহিক ২ টাকা করে পরিশোধ করলে প্রকৃত সুদের হার আসলে কত পারসেন্ট বেড়ে যায় তা কি একটু হিসেব করে দেখাবেন ? বাড়ে তো অবশ্যই, তবে তা গোটা ঋণের ক্ষেত্রে সার্বিক সুদের হারে কত পারসেণ্ট বাড়ে ? ১% ? ২% ? প্রকৃত কত ?
আরেকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। সরকার পরিচালিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে আজ থেকে বছর দশ বা বারো আগে আমার এক আত্মীয় তৎকালীন নতুন চালু করা উপরোক্ত পদ্ধতিতে ৫০০০ টাকা ঋণ নিয়ে সপ্তায় সপ্তায় ২% হারে ১০০ টাকা করে নিয়মিত ৫০ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করেন। পরের সপ্তাহে তাকে সুদ বাবদ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬২৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে সরকার বা কৃষি ব্যাংক কত হারে সুদ হিসাব করেছিলেন ?
কারো কারো বক্তব্য অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকে সুদ ছাড়া অন্যান্য চাদার বিষয়টি এসেছে। আমার জানা মতে সদস্যরা সাপ্তাহিক ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসেবে সপ্তহে ৫ টাকা বা কেউ কেউ আরো বেশি করে সঞ্চয়ী হিসাবে জমা করে থাকেন, যা তিনি ইচ্ছা করলে যখন তখন উত্তোলনও করতে পারেন। এই সঞ্চয়ের উপর ব্যাংক ৮.৫০% হারে আমানতকারীকে সুদ প্রদান করে থাকে।
আমি যে তথ্যগুলো উল্লেখ করলাম, তা যে কেউ আপনার আশেপাশে কোন ঋণী সদস্য থাকলে পাশ বইটি হাতে নিয়ে পরখ করে দেখতে পারেন। অথবা কাছাকাছি কোন শাখা অফিস থাকলে ঢুঁ মেরে দেখে নিতে পারেন।
উপরে উল্লিখিত গাণিতিক হিসাবগুলো সমাধান করে এরপরে আসুন আমরা পরবর্তী প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনায় প্রবেশ করি। যা আমাদের আলোচনাকে বাস্তবসম্মতভাবেই সমৃদ্ধ করে তুলবে।
সময়ের প্রয়োজনেই তা আজ জরুরি হয়ে ওঠেছে। কেননা, কেন যেন আমার মনে হচ্ছে আমাদের আলোচনাগুলো প্রকৃত তথ্যের চেয়ে আবেগই প্রকাশ করছে বেশি। যে আবেগগুলোর জন্য হয়তো আমরা বস্তুনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, যা গুরুত্ব দিয়ে হয়তো খেয়াল করছি না কেউ।
আসুন না আমরা আমাদের কিছু ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে বিশ্লেষণ করি ।
ধন্যবাদ সবাইকে নিজেদের মতামত দিয়ে আলোচনাটা এগিয়ে নেয়ার জন্য। যদিও আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায় নি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

এইবার কিছুটা বিপাকে ফেললেন। অংকটা আমি জেনেছিলাম এক ব্যাংকারের কাছ থেকে। তিনি আমাকে হিসেবনিকেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। দেখি, আবার যেতে হবে তার কাছে!

তবে এটুকু তো সোজা, যে সুদ নেওয়ার কথা এক বছর পর, সেটি যদি দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে (যদিও সেখানে আসলের অংশ কিছুটা থাকে বলে দাবি করা হয়), নেওয়া শুরু হয়; তাহলে এমনিতেই সুদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কথা।

উপরন্তু, গ্রামীণ ব্যাংক তো মাঝখানে একবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিলো তাদের কত% সুদ প্রকারান্তরে কত%-এ গিয়ে দাড়ায়।

আরেকটি কথা, এখানে আশা, ব্র্যাক ইত্যাদির প্রসঙ্গও আনতে পারতাম। কিন্তু আলোচনাটা যেহেতু হচ্ছে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে, তাই নামগুলো সেখানেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। নাহলে সবাই এক কাতারের।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

মাইক্রো ক্রেডিট কালচার নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। বদ্দারা ছাড়াও আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে সমিতি।এদের পদ্ধতি,সুদের হার,আচার-ব্যবহার এইসব নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন।ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

হাসান মোরশেদকে ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গালির তালিকা থেকে মিরজাফরের নামটা আমি বহু আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছি
কারণ মিরজাফরি জিনিসটা এখন এত উন্নত ও বিজ্ঞান সম্মত হয়ে গেছে যে সেখানে পলাশির মির জাফর নিতান্তই খেলনা বন্দুক কিংবা নাবালক হয়ে পড়েছে

বাঙালি যদি গালি দেবার জন্য কোনো নাম এখন নির্বাচন করতে চায় তবে সবচে উপযুক্ত নাম হলো ড. ইউনুস
যে বাঙালির পাকস্থলির চামড়া খুলে বানায় ঢোল
আর পাঁজরের হাড় খুলে বানায় সেই ঢোলের কাঠি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কার লেখায় যেন পড়ছিলাম... গুয়া মারিয়া টিসু দান... এইটা ছাড়া আর কিছু লেখার নাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দুর্দান্ত এর ছবি

পোস্ট ও মন্তব্যগুলো ভাল লাগলো। কিছু প্রশ্ন থেকে গেলঃ

হাসান মোর্শেদ কে :
১. পানিতে আর্সেনিকের জন্য সারাসরি দাতাদের দোষ কি?
২. "মুক্তবাজার ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ স্বীকার হলো প্রান্তিক জন গোষ্ঠি । একজন কুমোর, একজন তাঁতী তার জীবিকা হারালো -- রাষ্ট্র কিন্তু তার বিকল্প জীবিকার কোনো দায়িত্ব নিলোনা "
" দেশীয় উৎপাদন নানা অজুহাতে বন্ধ করতে পারলেই বাইরে থেকে পণ্য এনে বিক্রী করার ব্যবসাটা চালানো যায় "

এই যুক্তিতে তো বাংলাদেশে আম জনতার জাপানী সানকি, আমেরিকার লুংগী আর বিলাতী কৈ মাছ আমদানি করে কেনার কথা।
৩. আদমজীর লোকসানের আসল কারন গুলো কি ছিল?
৪. . বাংলাদেশে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেনীর বিকল্প কি?
৫. রিং বসালো টয়লেট ব্যব হার কি তাহলে নাজায়েজ?
৬." তৃতীয় বিশ্বের মানুষের সকল সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের কেবল ভোক্তা বানানোর হীন চক্রান্তের জন্য ও নয়?" একটা জাতীয় পর্যায়ের উদাহরন দেখান, যেখানে একটি দেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের চক্রান্ত পরিষ্কার করে দেখা যায়।
==
ফারুক ওয়াসিফ কে প্রশ্ন :

১. " যেখানে মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ নেওয়াকে আত্মঘাতী মনে করেন, তিনি সেখানে সুদ ও অন্যান্য চাঁদা মিলিয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি সুদে গরিব মানুষদের ঋণের আওতায় এনে অর্থনীতির নিয়মকে ভুল প্রমাণ করেছেন। দুর্মুখ সমালোচকরা বলেন, শুভঙ্করের ফাঁকি ধরতে পারলে নাকি এই সুদ পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি বলে জানা যায়। " রনদীপন বসুকে ধন্যবাদ - ব্যাবহারিক উদাহরন দিয়ে ব্যাপারটি ব্যখ্যা করার জন্য। একটি দেনার সুদের হার নির্ভর করছে আদায়ের ঝুঁকি, মুল্যস্ফীতি, ধার দেয়ার ও দেনা আদায়ের খরচে ওপর - এ ছাড়াও ধার দেয়া টাকাটা যেখান থেকে আসে, তারাও একটা লভ্যাংশ চাইবেন। ঝুঁকির সাতে সামঞ্জস্য না রেখে ধার দিলে কি হয় - সুবিনয় তার লেখায় দেখিয়েছেন। লাখ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের বিনিময়ে যেখানে ১৫% সুদে ধার দেয়া যায়, এক-দুইশ টাকার দেনা যার কিনা কোন জামিন নেই, তার সুদ এক হতে হবে কেন? লাখ লাখ টাকার হাজার হাজার দেনার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ও ধার দেয়া ও দেনা আদায়ে খরচকে একটি গতানুগতিক বানিজ্যিক ব্যাঙ্ক যেভাবে দেখতে পারে, হাজার হাজার টাকার কোটি কোটি দেনার ক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্রঋনদাতার পক্ষে তার ওজনটা বেসামালভাবেই বেশী। এই লেখাটিতে ক্ষুদ্রঋনের কিছু বুনিয়াদি অঙ্ক দেখা যাবে।
২. " তিনি তো কেবল ১৩ শতাংশের অংশীদার!" ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? গ্রামীন টেলিকমের মালিকানায় আছে গ্রামীন ফোনের ৩৮%, ১৯৯৬ সালের শেয়ারহোল্ডার চুক্তি অনুযায়ী টেলেনর ২০০১ সালে গ্রামীনের কাছে আরো ১৩% বিক্রি করার কথা - কিন্তু টেলেনর তা আজো দেয়নি। ২০০৬ সালে নোবেল পুরষ্কার নিতে অস্লো তে এসে ইউনুস নরওয়ের মিডিয়াতে এই নিয়ে মাতামাতি করেছিলেন।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

১. পানিতে আর্সেনিকের জন্য সারাসরি দাতাদের দোষ কি?

মাটির গভীরের ঘুমন্ত বিষ কি করে মানুষের পানীয় জলের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল ইউনিসেফের মহানুভবতায় সেটা যদি জানা না থাকে তাহলে ইউনেস্কোর এই রিপোর্ট টা দেখুন

ইউনেস্কোর রিপোর্ট

২. "মুক্তবাজার ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ স্বীকার হলো প্রান্তিক জন গোষ্ঠি । একজন কুমোর, একজন তাঁতী তার জীবিকা হারালো -- রাষ্ট্র কিন্তু তার বিকল্প জীবিকার কোনো দায়িত্ব নিলোনা "
" দেশীয় উৎপাদন নানা অজুহাতে বন্ধ করতে পারলেই বাইরে থেকে পণ্য এনে বিক্রী করার ব্যবসাটা চালানো যায় "

এই যুক্তিতে তো বাংলাদেশে আম জনতার জাপানী সানকি, আমেরিকার লুংগী আর বিলাতী কৈ মাছ আমদানি করে কেনার কথা।

জ্বি,বাংলাদেশের ৪ কোটি মানুষ প্রতিদিন বকর বকর করে নরওয়ে,মালয়েশিয়ার কোম্পানীকে টাকা জোগায়- অনেকেই মালয়েশিয়া থেকে আমদানী করা পরোটা দিয়ে সকালের নাস্তা করে কয়দিন পর হয়তো ভারত থেকে আনা পানি দিয়ে তৃষ্ণা ও মেটাবে -কারন বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিক ।

৩. আদমজীর লোকসানের আসল কারন গুলো কি ছিল?

আপনার কি মনে হয়? বিশ্ববাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা যখন বাড়ে বাংলাদেশের আদমজী তখন কেনো বন্ধ হয়?


৪. . বাংলাদেশে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেনীর বিকল্প কি?

কৃষকের সরাসরি বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয়া অথবা মধ্যস্বত্বভোগীদের বাজার নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা হ্রাস করা ।

৫. রিং বসালো টয়লেট ব্যব হার কি তাহলে নাজায়েজ?

জ্বিনা এটা বরং বেশ স্বাস্থ্যকর তবে পেটভরানো ব্যবস্থা করার আগেই প্রদত্ত ঋনের টাকা দিয়ে আবার ঋন দাতার কাছ থেকেই স্বাস্থকর হাগামুতার জন্য রিং কিনতে বাধ্য করা- এই প্রক্রিয়া বেশ অস্বাস্থ্যকর ।

৬." তৃতীয় বিশ্বের মানুষের সকল সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের কেবল ভোক্তা বানানোর হীন চক্রান্তের জন্য ও নয়?" একটা জাতীয় পর্যায়ের উদাহরন দেখান, যেখানে একটি দেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের চক্রান্ত পরিষ্কার করে দেখা যায়।

ভাইরে, এইটা দেখা না গেলে তো দুনিয়ার ইতিহাসই বদলে যায় ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার লেখায় আবেগের কমতি দেখবো - এই আশায় প্রশ্নগুলো করিনি। ভেবেছিলাম হয়ত দোষারোপ আর হতাশার ফিরিস্তির পরে ইতিবাচকতা ও আশার কিছু আসবে। বোধকরি সেদিন আজকে নয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।