কার সীমা কে অতিক্রম করে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৯/২০০৭ - ৮:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..

দুদিন আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল ,বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ।
আগ্রহী পাঠক নিচের লিংক থেকে চিঠিটির বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন ।
প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠি

এমনেষ্টির চিঠিতে মুলতঃ জোর দেয়া হয়েছে ঘটনা পর যে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তার কার্যক্রমের উপর । আমরা জানি যে, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এ কমিটি গঠিত হয়েছে এবং কমিটি তার তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবে ১১ সেপ্টেম্বর ।

আমাদের সাধারন বিবেচনা বলে, যেক্ষেত্রে সিদ্বান্তে আসার জন্য তথ্যপ্রমান আবশ্যক সে ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন পড়ে আর আইন সম্মত কোন কমিটি যখন তদন্ত চালায়, সেই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তমুলক মন্তব্য করা সমীচিন নয় । বিশেষ করে রাষ্ট্রের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী,সংস্থার তো অবশ্যই নয় কারন আইনগত বাধ্যবাধকতা তাদের ক্ষেত্রে আরো বেশী প্রযোজ্য সাধারন নাগরিকের চেয়ে । অনেক ক্ষেত্রে বিচারাধীন কিংবা তদন্তাধীন বিষয়ে এক্তিয়ার বহির্ভুত কারো মন্তব্য করা আইন অবমাননা বলে ও গন্য হয় ।

এবার দেখা যাক নিচের লিংকে কি আছেঃ
সেনাবাহিনীর গোয়েবলসীয় অপপ্রচার

অনেক সচেতন পাঠক ইতিমধ্যেই এই লিংক দেখেছেন । বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুব সচিত্র প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন,অত্যন্ত আবেগময় ভংগীতে তারা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের জন্য কারা দায়ী তা ছবি ও তথ্য সহকারে দেশবাসীকে জানানোর প্রয়াস নিয়েছেন ।

প্রশংসনীয় উদ্যোগ । জাতীয় দুর্যোগ ও দুর্বিপাকেই তো সেনাবাহিনী ত্রাতা হয়ে পাশে দাঁড়াবে । কিন্তু প্রশ্ন ও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায়- যে ঘটনা বিচারবিভাগীয় তদন্তাধীন সে ঘটনার উপসংহার টানার অধিকার কে দিলো সেনাবাহিনীকে? সেনাবাহিনীই যদি ঘোষনা করে দেয় কে অপরাধী তাহলে কিসের বিচার?কিসের আদালত? কিসের তদন্ত?

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তো কাউকে মালিকানা প্রদান করেনা । চুড়ান্ত ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের যুগে গোটা রাষ্ট্র কাঠামোটাই তো ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নিত করতে । সেনাবাহিনী তো রাষ্ট্রের অনেক গুলো কাঠামোর একটা কাঠামো মাত্র ।

সেনাকর্মকর্তার আত্নীয়ার ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার অপরাধে যেখানে নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, এক সন্দেহবাতিক মেজর তার স্ত্রীর বন্ধুকে নির্ধিদ্বায় হত্যা করে-রাষ্ট্র চোখকান বন্ধ করে ঝিমোয়- সেই রাষ্ট্রকে আধুনিক রাষ্ট্র ভাবা কল্পনায় ও খুব কষ্টসাধ্য ।

রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রের কোনো কাঠামোই ইশ্বর প্রদত্ত নয় । মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেই এসব সংগঠন তৈরী করেছে ।
তাই শুধু সেনাবাহিনী নয় প্রতিটি নাগরিক,প্রতিটি সাধারন নাগরিকই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক । ইউনিফর্ম পড়া সৈনিককে লাথি মারলে যদি সার্বভৌমত্ব হুমকীর মুখে পড়ে তাহলে ইউনিফর্ম পড়ে নির্বিচারে মানুষকে পিটানো,রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন, তদন্তাধীন বিষয়ে আগ বাড়িয়ে বিদ্বেষমুলক প্রচারনা চালানো -এইসবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংস হবার উপক্রম হয় ।

যে রাষ্ট্রের নাগরিকেরই স্বাধীনতা নেই,সেই রাষ্ট্রের আবার কিসের স্বাধীনতা,কিসের সার্বভৌমত্ব?


মন্তব্য

ভাস্কর এর ছবি

হুমম...সিদ্ধান্তটা ভালো লাগলো...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

অতিথি(এহেছান লেনিন) এর ছবি

ইউনিফর্ম পড়া সৈনিককে লাথি মারলে যদি সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে তাহলে ইউনিফর্ম পড়ে নির্বিচারে মানুষকে পেটানো,রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন, তদন্তাধীন বিষয়ে আগ বাড়িয়ে বিদ্বেষমুলক প্রচারনা চালানো -এইসবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংস হবার উপক্রম নয়, ধ্বংস হয়। দেশের প্রতিটা দুর্যোগ মুহূর্তে এদেশের ছাত্রদের অংশগ্রহণ যেমন ইতিহাস বহন করে তেমনি গত ২১ আগস্টের ঘটনা একটি কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে দাগ হয়ে রইবে। আর সেটা সেনাবাহিনীর কলঙ্ক হিসেবেই সারাবিশ্ব মনে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ আপনার এই পোস্টটির জন্য।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

লেনিনঃ
আপনাকে ও ধন্যবাদ । কারফিউ রাতের ধাক্কা সামলে উঠেছেন আশা করি । এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের চিঠিটা বিস্তারিত পরলেই বোঝা যায়, সরকার যতোই চাপাবাজী করুক,আন্দোলনকে কলংকিত করুক-বিশ্বমিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আসল পরিস্থিতি ঠিকই বোঝতে পারে ।
আন্দোলনকারীরা ছাত্র ছিলো নাকি অছাত্র,গাড়ি ভাংচুর করেছে নাকি আগুন লাগিয়েছে তার চেয়ে জরুরী কনসার্ন হয়েছে পুলিশ ও আর্মির নির্যাতন । ছাত্র-অছাত্র যে কেউ অন্যায় করলে তাকে ধরে আদালতে সোপর্দ করা নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব এর বেশী কিছু নয় ।
এর বেশী কিছু করলে সেট দায়িত্ব না থেকে পাশবিকতা হয়ে পড়ে ।

বিশ্ববাসী তাই দেখেছে ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যে রাষ্ট্রের নাগরিকেরই স্বাধীনতা নেই,সেই রাষ্ট্রের আবার কিসের স্বাধীনতা,কিসের সার্বভৌমত্ব?

স্বাধীনতা শুধু সেনাবাহিনীর আর তাদের পাচাটা কুকুরদের।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি এর ছবি

ভাষ্যতে পুরোনো একটা ভাষ্যের মিল পাই আমি।
ছবির নিচের কথাগুলো ২৮শে অক্টোবরের পরের বলা কথা আর ছবির ক্যাপশনের মতো মনে হয়।

কেনো যেনো কিসের দুর্গন্ধ আসে নাকে।

আরশাদ রহমান এর ছবি

আশাকরি ভালো আছেন হাসান মোরশেদ। সেনাবাহিনীর কোন প্রয়োজন আমাদের দেশে নাই। সার্বভৌমত্ব রক্ষা নয় বরং বিভিন্ন সময় বিদেশীদের কাছে ওরাই ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন করেছে বিভিন্ন ভাবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।