প্রবাসে দৈবের বশে ০৫৩

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/১১/২০০৮ - ৩:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

probashe

১.
অনেক কিছু লেখার জমে গেছে এ ক'দিনে, তবে সর্বশেষ ঘটনা নিয়েই বরং কথা বলি।

আমার তাজিক পড়শী বাহুদুর বিদায় নিয়েছে। লাথি মেরে দরজা ভেঙে কয়েকদিন খুব মনমরা ছিলো সে। কফি বানাচ্ছিলাম এক সকালে, আমাকে এসে তার সেই দুঃখের কাহিনী বিশদ বর্ণনা করলো। বাহুদুর জার্মান জানে না তেমন, ইংরেজি-জার্মান মিশেল একটা প্রোগ্রামে এসেছে সে, আমার সাথে বাতচিত ইংরেজিতেই হয়, এ ভাষাটা বেশ ভালোই বলে সে।

"আমার দোষ ছিলো না।" শুরুতেই সে রায় দিলো। "চিন্তা করো, আমি বাথরুম থেকে বের হয়েছি একটা জাইঙ্গা পরে, সারা গা ভিজা, টাওয়েলটা পর্যন্ত ঘরের মধ্যে, দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আর খোলে না। তখন আমি আর কী করতে পারি?"

আমি সমবেদনা জানালাম। বললাম, যে সে ঠিক কাজটাই করেছে।

"তুমিই বলো, আমি এই শীতের রাতে আর কোথায় যাবো? আমার সারা গা ভিজা। পরনে খালি একটা জাইঙ্গা।"

আমি আবারও সমবেদনা জানালাম। শীতের রাতে ভেজা গায়ে জাঙ্গিয়া পরে যে কোথাও বের হওয়া উচিত না, এ ব্যাপারে জোর নৈতিক সমর্থন দিলাম।

"দরজা না ভাঙলে আমার ঠান্ডা লাগতে পারতো।"

আমি জানালাম, দরজা একটা গেলে আরেকটা আসবে। জীবন একটাই। সেটাকে সামলেসুমলে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এরপর বাহুদুর উৎসাহ পেয়ে গেলো। সে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চললো। সে মোটেও এই ভোনহাইমে থাকতে চায় না। সে অয়রোপাহাউস নামের চমকদার ভোনহাইমে থাকার জন্যে ছয় মাসের ভাড়া আগাম শোধ করে তবে এসেছে। এই যে এখানে তাকে রাখা হয়েছে, সেটা এক প্রকারের অবিচার।

আমি জানতে চাইলাম, অয়রোপাহাউসে ঘর বরাদ্দ না করে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক কেন তাকে আমার প্রতিবেশী বানানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হলো?

বাহুদুর গনগনে মুখে বললো, "আর বইলো না, ঐ রুমে আগে যেই ব্যাটা থাকতো সে যাওয়ার আগে সব ভাইঙ্গা রাইখা গেসে!"

আমার কফি মাথায় উঠতো আরেকটু হলেই। বাহুদুর ক্ষেপে গেলো। "হাসো কেন?"

আমি আবার গম্ভীর হয়ে গেলাম। যে ছোকরা লাথি মেরে এই মজবুত পার্টিকেল বোর্ডের দরজা ফ্রেম থেকে খসিয়ে দিতে পারে, তাকে না চটানোই ভালো। বললাম, "তুমি ঐদিন গোসলে গেসো, খামাকা দরজায় তালা মারসিলা ক্যান?"

বাহুদুর থতমত খেয়ে গেলো। "আমি মারবুর্গে বড় একটা ভিগি (ভোনগেমাইনশাফটের সংক্ষিপ্ত রূপ, মানে কয়েকজন মিলে একত্রে এক অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস)-তে ছিলাম, বুঝছো, ঐখানে আমাদের বলে দিসিলো দরজায় তালা না মাইরা কোথাও না যাইতে। আমার অভ্যাস হয়ে গেসে।"

তবে বাহুদুরের কপাল ভালো, অয়রোপাহাউসের পূর্বতন শক্তিমানের কীর্তি কর্তৃপক্ষ মেরামত করেছে শিগগীরই। চাড্ডিগাঁটরি গুটিয়ে সে ভাগলো। কয়েকদিন পর ট্রামে তার সাথে দেখা, বিশালদেহী এক মধ্যএশীয় মেয়ের সাথে। বললাম, তোমার নতুন ভোনহাইমের তালাগুলি ঠিকাছে তো? সে দেখলাম আবার গম্ভীর হয়ে গেলো।

২.
কয়েকদিন তারপর একাই অ্যাপার্টমেন্টে বাস করছি। একা থাকলে যা হয়, কোন কিছু পরিষ্কার করার তাড়া থাকে না সহজে। আমি প্রকৃত অলস, ফলে বাসনকোসন ডাঁই হয়ে যায়, মেঝেতে হালকা ধূলো জমে।

একদিন সারারাত কী যেন বালছাল কাজে ব্যয় করে সকালে ঘুমাতে গিয়েছি, দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে রান্নাঘরের জানালা খুলে নিচে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে মাথায় বাজ পড়লো।

কাসেলে পাকিস্তানী কিছু ছাত্র আছে, যাদের নানা কারণে এড়িয়ে চলি, তাদেরই একজন এক নতুনমুখো ছোকরাকে নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

ইংরেজিতে অনুরোধ ভেসে এলো, আমরা ঘর দেখতে এসেছি। তোমার সময় হবে?

মনে মনে বললাম, ব্যাটা বেওকুফ, চাবি ছাড়া তুমি ঘর দেখবা কিভাবে? পরক্ষণেই মনে হলো, আরে, বাহুদুর তো দরজাই ভেঙে রেখে গেছে।

দরজা খুলে ঢুকতে দিলাম ব্যাটাদের। এদের মধ্যে একজনকে আগে দেখেছি ক্রিকেটের মাঠে, ভালো বোলিং করে, আর আরেকজন নবাগত, বোঝা যায়।

দরজার অবস্থা দেখে চিন্তিত হলেও ঘর দেখে খুশি দুইজনেই। ঐ ঘরটা বেশ বড়। সাথে কমন বারান্দাও আছে।

পুরনো পাকি ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো, আমি কোথাকার লোক। আমি লৌকিক ভদ্রতা করে হাত বাড়িয়ে দিলাম। "আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।"

বাংলাদেশ শুনে একটা উল্লসিত ভাব দেখা গেলো পুরনো পাকির মুখে। "উর্দু সমঝতে হো?"

সদ্য ঘুম থেকে না উঠলে আমি নিশ্চিতভাবেই কোন খারাপ কথা বলতাম, কিন্তু মেজাজ সামলে রেখে বললাম, না।

এবার প্রশ্ন, "হিন্দি?"

কেমন লাগে? আমি বাংলাদেশের লোক, হিন্দি কেন বুঝতে হবে আমাকে? আমি কর্কশ গলায় বললাম, তোমার যদি ইংরেজিতে সমস্যা থাকে, জার্মানে কথা বলতে পারি আমরা, সমস্যা নেই।

পুরনো পাকি চুপ করে গেলো এবার। নতুন পাকি ছোকরার সাথে পরিচিত হলাম। এই ঘরটি তার প্রাপ্য ছিলো, কিন্তু বাহুদুরের অয়রোপাহাউসপ্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছিলো বলে তাকে একেবারে অন্য শহরের এক ভোনহাইমে নিয়ে ফেলেছে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক।

রান্নাঘর টয়লেট দেখে দুইজনেই বিদায় নিলো। আমি রক্তলাল চোখ নিয়ে কড়া এক কাপ চা বানাতে বসলাম। এই ছিলো ললাটলিখন। পাকি মশলা খাই না, পাকি চাল খাওয়া বাদ দিলাম, পাকি দোকানের ছায়া মাড়াই না, আর এখন এক ছাদের নিচে এক পাকির সাথে বাস করতে হবে। কোথায় এক নির্বান্ধব চেক সুন্দরী এসে উঠবে পাশের ঘরে, আধো আধো জার্মানে এটা সেটা জানতে চাইবে, তাকে সব রগে রগে বুঝিয়ে দেবো ক্যাম্নেকী, তা না। স্পষ্টই এ সৃষ্টিকর্তার চুথিয়ামি। আমাকে প্যাঁচে ফেলে দেখছে শালা।

৩.
নতুন পাকি পড়শী সৈয়দ বাবাজি কয়েকদিন আগে এসে উঠেছে। বয়স বেশি নয় তার।

কয়েকদিন আগে সচলে হয়ে যাওয়া আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলাম, দেখি কী হয়। আগ বাড়িয়ে ভ্যাজাল পাকানো আমার স্বভাব না, কাজেই সদ্ব্যবহারের পথই বেছে নিলাম।

সৈয়দ সাহেবের ইংরেজি মোটামুটি, আর প্রথম দিন উর্দু হিন্দিকে রুল আউট করে দেবার পর তিনি উর্দুতে বাতচিতের চেষ্টা করেননি। মনে মনে একটা প্লাস পয়েন্ট দিলাম তাকে।

রাতের বেলা বসে কাজ করছি, এমন সময় দরজায় টোকা। সৈয়দ সাহেব কুণ্ঠিত মুখে জানতে চাইলেন, আমার কাছে অ্যালার্ম ঘড়ি হবে নাকি। আমার অ্যালার্ম নষ্ট, মোবাইলের অ্যালার্ম ব্যবহার করি। সৈয়দের মোবাইল নেয়া হয়নি এখনো, ভিসা প্রলম্বিত করার আগে মোবাইল নেয়ার উপায় নেই। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ঠিকাছে, আমি ভোরে তোমাকে তুলে দিবো। সৈয়দ ধন্যবাদ জানিয়ে কেটে পড়লো।

পরদিন সন্ধ্যায় তাকে রান্নাঘরের জিনিসপাতি বুঝিয়ে দিলাম। বেশির ভাগ জিনিস আমার কেনা, বাকিগুলি পুরনোদের রেখে যাওয়া জিনিস, নিয়মানুযায়ী ভোনহাইমের সম্পত্তি এখন। বললাম, "তুমি ব্যবহার করতে পারো যে কোন কিছু, তবে ব্যবহার করে ফেলে রেখো না। এখানে সাবান আছে, স্পঞ্জ আছে, ধুয়ে রেখে দিও।" টুকটাক আরো আলাপ হলো। সে এসেছে বালুচিস্তান থেকে, কোয়েটার ছেলে। ওকে দেখে মনে হয় না সে বালুচ, তাই জিজ্ঞেস করলাম, সে এথনিক বালুচ কি না। সৈয়দ সবেগে মাথা নাড়লো, "না! আমি পাখতুন!" তারপর একগাদা তথ্য দিলো পাখতুনদের সম্পর্কে। তারা কোথায় কোথায় থাকে, কোথায় সংখ্যায় কম, কোথায় বেশি। একই সাথে তার জিজ্ঞাসা, কিবলা কোন দিকে।

সৈয়দকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বললাম যে আমি কিবলা সম্পর্কে কেন নিশ্চিত না। আমি মুসলিম পরিবারে বড় হলেও যে ধর্মউদাসীন, এবং অজ্ঞেয়বাদিতার পথের পথিক, শুনে সে ঘাবড়ে গেলো। বললাম, আমরা এখন কা'বার উত্তর পশ্চিমে আছি, তুমি সকালে উঠে দেখে নিও সূর্য কোন দিকে ওঠে, ওদিকে ফিরে নামাজ পড়ে নিও।

আজকে সন্ধ্যায় কাজ করছি, আবার দরজায় টোকা। সৈয়দ লজ্জিত মুখে দাঁড়িয়ে। তার আব্দার আকাশচুম্বি। সে কখনো রান্না করেনি জীবনে, তাকে আমি একটু দেখিয়ে দিতে পারি কি না।

বিরাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠলাম। আলুর দম খাওয়ার শখ হয়েছে ছোকরার। আলুর দম আমি নিজেও কোনদিন রান্না করিনি, আবছা ধারণা আছে শুধু। নিজে রাঁধতে গিয়ে ইতোমধ্যে মশলার দফারফা করে ছেড়েছে ব্যাটা।

রান্না নিয়ে আর চুলা বন্ধ করা নিয়ে একটা গুরুগম্ভীর লেকচার দিয়ে আলুর দম রান্না দেখালাম সৈয়দকে। নিরামিষাশী কি না জিজ্ঞেস করতে সে মনমরা হয়ে গেলো। জানালো, বালুচিস্তান খুব ঠান্ডা জায়গা। ওখানে মাংসচর্বি না খেলে টেকা যায় না। আরি পাকিস্তানী নিরামিষাশী বলে নাকি কোন কিছু নাই দুনিয়ায়। বুঝলাম, তা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো। এত কিছু ফেলে সে কেন আলুর দম খেতে চায়, এ প্রশ্নের জবাবে সে জানালো, এই দেশে হালাল তরিকায় কেউ ছাগল কাটে না। মাত্র নাকি একটা দোকানে শুধু শুদ্ধ পদ্ধতিতে কাটা মুরগি পাওয়া যায়।

রাঁধতে রাঁধতে আরো টুকটাক আলাপ হলো। সৈয়দ জানালো, কোয়েটা সম্পর্কে আমি যা জানি, পাকিস্তানীরা তা-ও জানে না। সে একবার ইসলামাবাদে একটা কাজে গিয়ে জানিয়েছিলো, সে কোয়েটা থেকে এসেছে, উত্তরে নাকি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোয়েটা গিলগিটের কাছে কি না। ক্ষুব্ধ গলায় সে বললো, এটা একটা কথা, বলো? গিলগিট হচ্ছে চীনের কাছে।

আমি বললাম, বালুচিস্তান তো সবচেয়ে বড় প্রভিন্স, আর কোয়েটা তো বালুচিস্তানের রাজধানী। এত বড় শহর চেনে না কেন?

সৈয়দ তিক্ত গলায় বললো, চিনবে কিভাবে? কোন নজর দিলে তো? সরকার কিছু করে না কোয়েটার জন্য। করাচী এয়ারপোর্টে তাকে হেনস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ, সে কোয়েটার লোক হয়ে জার্মানি যাচ্ছে শুনে। করাচী গেলেই ওখানকার লোকে তাদের নিয়ে মস্করা করে।

আমি বললাম, কোয়েটাতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নাই কেন?

সৈয়দ এবার মুখ কালো করে ফেললো। আস্তে করে শুধু বললো, কিছু নাই। অনেক কিছুই নাই।

আমি খুব শক্ত গলায় বললাম, জানি। এই জিনিস আমরা চিনি। এ জন্যেই আমরা পাকিস্তানকে লাত্থি মেরে আলাদা হয়েছি।

সৈয়দ আমার চেহারা দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর আস্তে করে বললো, খুব অন্যায় হয়েছিলো তখন তোমাদের উপর, আমি জানি।

৪.
পাকি ঘৃণা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে সচলে। সেই আলোচনায় আমি ঘৃণার সপক্ষেই কথা বলেছি, ভবিষ্যতেও বলবো। কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি। এই অন্যায় স্বীকার করুক, আমরাও ঘৃণার পাত্রটুকু ঢেকে রাখবো।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ঠিকাছে দেঁতো হাসি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

দুর্দান্ত এর ছবি

সৈয়দ একা না।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

সচলে পাকি নিয়া যে তর্কাতর্কিটা হইলো, পুরাটা শুরু হইছিল টিকটিকির ল্যাজের [url=http://www.sachalayatan.com/tiktikir_laz/19283 ]একটা পোস্ট[/url] থেকে, সেখানে সে পাকি রেস্টুরেন্টে কেন খাইতে গেছিল সেইটা নিয়া আপত্তি জানানো থেকে ...

এবং কারো কারো কমেন্ট থেকে মনে হচ্ছিল "কোন" পরিস্থিতিতেই "কোন" পাকিস্তানীর সাথে "কোন" রকম ইন্টারএকশনে যাওয়া যাবে না ... একজন তো ফতোয়া দিয়ে দিছিলেন "যাদের কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরীর সুযোগ হয়েছে তাদের আগে থেকেই মনটা কোন কারণে আর্দ্র ছিলো বলে বিশ্বাস করি" ...

অথচ দেখেন, আজকে পরিস্থিতির কারণে এক পাকিস্তানীকে আপনি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন, এবং সেটা কোনভাবেই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না ... এই ছেলেটার প্রতি আপনি আর কোন ঘৃণাও অনুভব করেন না ...

এই পোস্টের মূল সুর মনে হয় এটাই ছিল ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

হিমু এর ছবি

আমার মনে হয় না, কেউ ঐ পোস্টে কারো ওপর মত চাপিয়ে দিয়ে বলেছেন, অমুক কাজ "করা যাবে না"। যে যার যার চর্চার কথা বলেছে। কারো চর্চা আমার মতো এক্সট্রিম, কারো চর্চা খুবই ফিলানথ্রপিক। আর মন দিয়ে পড়ে দেখো, টিকটিকির ল্যাজের পোস্টে তার পাকি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া বা খাওয়ানোতে কারো "আপত্তি" ছিলো কি না। সহজ প্রশ্ন ছিলো, আর কি বিকল্প ছিলো না? আজকে আমাকে বিকল্প দেয়া হলে আমি সৈয়দের সাথে বাস করতাম না, ওকে আলুর দম রান্না করা দেখানো দূরের কথা। আমি ওকে ইতোমধ্যে পরামর্শ দিয়েছি ইউনির কাছে কোন হলে শিফট করে যাবার।

আর কৃতজ্ঞতাবোধের প্রশ্নটা কেন উঠলো, বুঝি নাই। সৈয়দের প্রতি তো আমার কৃতজ্ঞ থাকার কোন কারণ নাই, উল্টা ওরই উচিত আমার নামে দরূদ পড়া।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

১) সেটা ঠিক ... সচলের কেউ আসলে চাপায়ে দেয় নাই ... তবে তীব্র ঘৃণা দেখে অস্বস্তি হচ্ছিল, কারণ আমাকে কিছু পাকির সাথেই কাজ করতে হয় এবং তাদেরকে আমি ঘৃণা করতে পারি নাই ...

অতিথি নামের আড়াল থেকে কেউ কেউ পার্সোনাল এটাক দিছে, সেটার গুরুত্ব না দিলেও চলে ...

২) টিকটিকির পোস্টে আপনার কমেন্ট ছিল "ভাই রে, উলভারহ্যাম্পটনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট নাই?" ... আর অন্য কারো কমেন্ট ছিল "আপনার পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে যাওয়া এবং তার কারণ ব্যাখ্যা দুটোই বাজে লেগেছে।"
দুইটাই কি সহজ প্রশ্ন হিসাবে দেখেন?

৩) সৈয়দের সাথে বাস করাটা আপনার হাতে না, কিন্তু চাইলেই বলতে পারতেন, দূরে গিয়া মর, আমি রান্না শিখাইতে পারব না ... কিন্তু সেটা তো আপনি করেন নাই, কারণ ছেলেটাকে আপনি ঘৃণা করেন না, কারণ সে উর্দু বলার চেষ্টা করে নাই বা আর কোন চুতিয়ামিও করে নাই ... ভুল বল্লাম?

৪) কৃতজ্ঞতাবোধের প্রশ্নটা আপনাকে বলি নাই ... ঐ কমেন্টটায় খুব মেজাজ খারাপ হইছিল তাই উল্লেখ করলাম ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

হিমু এর ছবি

১. পিয়ার প্রেশার নিও না। অন্যের তীব্র ঘৃণা প্রকাশ দেখে তোমার তো সংকুচিত হওয়ার কিছু নাই। তুমি নিজের বিবেচনায় চলো, যদি মনে হয় তুমি ঘৃণা করো না, বা যাদের সাথে তোমাকে চলতে ফিরতে হয়, তাদের সাথে চলতে ফিরতে সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে তা-ই সই। সমস্যা তো নাই।

২.

টিকটিকির পোস্টে আপনার কমেন্ট ছিল "ভাই রে, উলভারহ্যাম্পটনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট নাই?" ... আর অন্য কারো কমেন্ট ছিল "আপনার পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে যাওয়া এবং তার কারণ ব্যাখ্যা দুটোই বাজে লেগেছে।"
দুইটাই কি সহজ প্রশ্ন হিসাবে দেখেন?

দ্বিতীয় স্টেটমেন্ট তো আদৌ কোন প্রশ্ন না। সেটা যিনি রেখেছেন, তিনি দায় নিতে পারবেন। তার ভালো লাগা না লাগার কথা বলা যায়, এতে কারো কিছু যায় আসে কি না যায়, সেটাও উত্তরে বলা যায়।

আর প্রথমটা তো সহজ প্রশ্ন। উলভারহ্যাম্পটনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট আছে কি নাই, এই জিজ্ঞাসার মধ্য কঠিন কিছু যদি তুমি খুঁজে পাও, আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারো। আমি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ফেলে কেউ পাকি রেস্টুরেন্টে গেলে তাকে ধরে পিটাবো না, শুধু প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করবো, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট আছে কি না। আর আমার মনে হয় টিকটিকির ল্যাজ এর মধ্যে কোন জটিলতা খুঁজে পায় নাই, সে উত্তরে জানিয়েছে যে ইউনির ধারে কাছে নাই। তোমার কাছে কী জটিল, কেন জটিল মনে হলো, জানলে আমি হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারি।

৩. ঠিক। সৈয়দ পাকিসুলভ গ্যাঞ্জাম করলে আমিও বাঙালিসুলভ গ্যাঞ্জাম করতাম। তবে ঘৃণার অভাব থেকে ওকে রান্না দেখাই নাই। পোলা আইসা বলসে সে খায় নাই সারাদিন, এখন রান্না করতে গিয়ে দেখে হচ্ছে না। অভুক্ত মানুষের মুখের উপর দরজা বন্ধ করার মতো পাকি আচরণ করতে পারি নাই। ও যদি হুদাই রিকোয়েস্ট করতো, তাইলে বলতাম যে আমার কাজ আছে, তুমি আগে পিঁয়াজ ভাইজা তার উপর আলু বসাও, তারপর জিরা আর গুঁড়া মশলা ঢাইলা নাড়ো, তারপরে লবণ দাও, মাঝে মাঝে টেস্ট কইরা দেখো, মজা লাগা শুরু করলে নামাইয়া খাও গিয়া।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

২) সরি, তাড়াহুড়ায় টাইপ করতে গিয়া ভুলভাবে লিখছি ... আমি বলতে চাইছিলাম দুইটা কমেন্টের মুড আলাদা, প্রথমটা সহজ প্রশ্ন, কিন্তু দ্বিতীয়টা ঠিক সহজ প্রশ্ন মনে হয় নাই, আমাকে কেউ এভাবে বললে আমার খারাপ লাগতো ...

অস্পষ্টভাবে লেখার জন্য দুঃখিত হাসি
...............................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

 গৌরীশ রায় এর ছবি

" কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি। "

জয়তু হিমু

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বাহুডোররে ভুজিভাগি দিয়ে বদ্দার ঐখানে পাঠায়া দে। বদ্দার কঠিন কঠিন ভাষা শুইনা হালায় চাট্টিবাট্টি গোল কইরা পলাইবো দুইদিন পরেই। দেঁতো হাসি

অই, ভালো কথা, বদ্দা কইরে? প্রেম ট্রেম করে নাকি? দেখিনা সচলে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রানা মেহের এর ছবি

হিমু - দুঃখীত আপনার লেখায় এসে নিজের কথা বলতে হচ্ছে দেখে

"প্রিয় কিংকর্তব্যবিমুড়

টিকটিকির ল্যাজের লেখায় আমার মন্তব্য ছিল

"প্রিয় টিকটিকির ল্যাজ

আপনার ইন্টারেস্টিং লেখাটা ভালো লাগলো না
শুধুমাত্র পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে যাবার কাহিনী শুনে

পাকিস্তান এবং তার সাথে জড়িত সবকিছুকে আমি ঘৃনা করি
এবং বাঙালি করো খুব জরুরী দরকার ছাড়া
পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানের শরন নেয়া
খুবই অপছন্দ করি।

আপনার পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে যাওয়া এবং তার কারণ ব্যাখ্যা
দুটোই বাজে লেগেছে।

এটা একান্তই ব্যাক্তিগত অনুভুতি।
আপনাকে আঘাত করতে চাইনা।
তারপরও আঘাত করে থাকলে ক্ষমা করবেন"

তার উত্তরও দিয়েছিলেন আপনি।

"উদ্ধৃতি
এবং বাঙালি করো খুব জরুরী দরকার ছাড়া
পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানের শরন নেয়া
খুবই অপছন্দ করি।

প্রিয় রানা মেহের,

খুব জরুরীর সংজ্ঞাটা কে ঠিক করবে? আপনার কাছে যেটা জরুরী সেটা আমার কাছে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে ...

আমার প্রফেসর পাকিস্তানী ... সে ফান্ড দিয়েছে তাই আমি এসেছি ... মাহবুব মুর্শেদ ভাইয়ের প্রফেসরও পাকিস্তানী ছিলেন ... এখন কি আপনি আমাদের অপছন্দ করবেন?

আমার মনে হয় এগুলো যার যার ব্যক্তিগত ব্যপার, তার উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো ...

একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি ... পার্সোনালি নেবেন না ..."

আমি ভেবেছিলাম ব্যাপরটা মিটে গেছে। এখন দেখছি না।

না। আমার প্রশ্নটা হিমুর মতো সহজ সরল ছিলনা। আমার অনুভুতির প্রকাশ ছিল। এবং এখনো এই প্রসঙ্গে আমার অবস্থান একই আছে।
তবে এই মন্তব্যে কিন্তু এও পরিষ্কার করে দেয়া আছে এটা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া কোন দায় নয়।

আপনি এতো ভদ্রভাবে উত্তর না দিয়ে যদি বলতেন, দুরে গিয়া মর। তাতেও আমি কিছু মনে করতামনা। নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার রানা মেহেরের যেমন আছে, তেমনি আছে কিংকর্তব্যবিমুড়ের।

অনুভুতির শোভন প্রকাশ বলে একটা কথা আছে। আপনি সেই কথা রেখেছেন। আমি যদি না রেখে থাকি, আমার ভাষা যদি অশোভন হয়ে থাকে, আমি দুঃখীত। এই বিষয়ে বোধহয় এর থেকে বেশী শোভন ভাষা ব্যবহার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। দুঃখীত আবারো।

হিমুর লেখায় নিজের বকবক করতে খারাপ লাগছে। তারপরো আপনি যদি আরো ব্যাখ্যা চান, জানাবেন। আপনার খারাপ লাগা এখনো আছে জেনে আমারি খারাপ লাগছে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

প্রিয় রানা মেহের,

ব্যাপারটা আসলেই মিটে গেছে, এবং আপনার প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোন অভিযোগ-অনুযোগ-রাগ কিছুই নাই ... এবং আমি খুবই দুঃখিত আপনার কমেন্টটা উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করায় ... এই প্রসঙ্গে এত বেশি কথা হয়ে গেছে যে ব্যপারটা তিক্ততার দিকে চলে যাচ্ছে ...

এই পোস্টে প্রসঙ্গটা আবার তুললাম কারণ হিমু ভাই পাকিস্তানীদের ঘৃণা প্রসঙ্গে মোটামুটি এক্সট্রিম, অথচ সেই তিনিই একটা পাকিস্তানী ছেলে যখন ভদ্রভাবে কথা বলে তখন তার সাথে অভদ্র হতে পারেন না, এবং সে যখন ক্ষুধায় ক্লান্ত থাকে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন না ... কিন্তু এই ইনসিডেন্টটাকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে কি আমি বলতে পারবো যে হিমু আসলে পাকিদের প্রতি সহানুভূতিশীল? ... আমি যেটুকু বুঝি, এখানে ব্যাপারটা ইন্ডিভিজুয়াল, সামষ্টিক না ... সৈয়দ আলির সাথে ভদ্রভাবে কথা বললে পাকিদের সেভেন্টিওয়ানের নৃশংসতা ভুলে যাওয়া হয় না, ঘৃণাও এক ফোঁটাও কমে না ...

আপনার অনুভূতির প্রকাশের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে ... তবে আমি নামাজ পড়ি না কেন সেটা নিয়ে কেউ যদি তার অসন্তুষ্টির কথা আমাকে জানায় সেটা যেমন আমার ভালো লাগবে না, তেমনি এটাও লাগেনি, এটুকুই [এনালজিটা পুরাপুরি এপ্রোপ্রিয়েট হইলো না মনে হয়, কিন্তু আর কিছু মাথায় আসতেছে না] ...

ব্যপারটা এতদূর টেনে আনলাম বলে আবারো দুঃখিত ... আর টানব না, কথা দিচ্ছি হাসি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটা বোধহয় তর্কাতীত বিষয়... আর তর্ক করার দর্কার নাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আর করুম না, শেষ হাসি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

কীর্তিনাশা এর ছবি

হিমু ভাই, লেখা ফাটাফাটি হইছে। চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি। এই অন্যায় স্বীকার করুক, আমরাও ঘৃণার পাত্রটুকু ঢেকে রাখবো।

পোস্টের এই শেষ কথাই হচ্ছে আসলে শেষ কথা ।

খেকশিয়াল এর ছবি

সহমত

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঘটনা যদি উলটাও হতো, অর্থাৎ অভুক্ত হিমুকে সৈয়দ আলী রান্না শেখাচ্ছে, সেটাও সম্ভব ছিলো। কিন্তু আজ সৈয়দ আলী হিমুর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করলে তাতে কি ৩০ লাখ মানুষের রক্তের ঋণ শোধ হয়ে যায়? যারা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে হত্যা করেছে, তারা আজ মিঠা ব্যবহার করলেই কি আমরা সব ভুলে গলাগলি করতে পারি? ৩০ লাখ মানুষের রক্তের অনুভূতি নিজের মধ্যে থাকলে পাকিদের সাথে ব্যবহারের সময় সবকিছু যদি কারো স্বাভাবিক মনে হয়, তাইলে সে মহামানব।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

খেকশিয়াল এর ছবি

হাহা না বলাইদা, গলাগলি করতে পারি না, তবে নতুন প্রজন্ম যদি তাদের ভুল বুঝতে পারে আর সংশোধন করতে চায়, তারা যদি জাতিগতভাবে ক্ষমা চাইতে আসে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে তবে তাদের ক্ষমা করা যায় নাকি ভেবে দেখতে পারি, হয়ত অনেকে ক্ষমা করবে অনেকে করবে না, কিন্তু গলাগলি কখনো না, যাই হোক হাই হ্যালোতেই সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকবে মনে হয় ।

আর যারা আমাদের পূর্বপুরুষদের হত্যা করেছে তাদের তো অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে, তাদের সাথে ক্ষমা কথাটা কিভাবে আসে ??!!! কখনোই না !

কথা থচ্ছে এইসব যুদ্ধপরাধীগুলা মারা যাচ্ছে বুড়ো হয়ে, এদের শাস্তি হবার আগেই, সব যদি এভাবেই মারা যায় তবে আমি সব দোষ নতুন প্রজন্মকে দেব, যে ওরা সচেতন না, এবং এর পরে মাফ চাইলে লাভ নাই

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

খেকশিয়াল ভাই, থ্যাঙ্কু।

এখানে একটা জিনিস উল্লেখযোগ্য, তা হলো এই ক্ষমার কথাটা কিন্তু আমরাই বলছি, পাকিরা বলছে না। অনেকটা এরকম, আমাকে ** মেরেছো তো কি হয়েছে, এখন ক্ষমা চাও, তাইলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো কিনা ডিসিশান নিবো। কিন্তু, যে মেরেছে, সে কিন্তু আমার আপনার কাছে ক্ষমাই চাইছে না, সুযোগ পেলে আবারও মারবে। ক্ষমা জিনিসটা কখনো মহামানবীয়, কখনো অপরাধ।

আমরা নতুন প্রজন্ম, নতুন প্রজন্ম করে লাফাচ্ছি। পাকিদের কথা বাদ দিলাম, বাংলাদেশেই বাপ-মা জামাতি; কিন্তু ছেলে জামাতকে ঘৃণা করে এরকম কয়টা দৃষ্টান্ত আছে? হাতে গোণা। তাদের নতুন প্রজন্মও একই চেতনায় বড় হচ্ছে। একবার যে যুদ্ধে তারা হেরেছে, সুযোগ পেলেই তার বদলা নিবে এবং নিচ্ছেও।

আমরা ক্ষণিক মিষ্টি ব্যবহারে গলে যাই। যদি এখনকার ব্যবহারই সব হয়, তাইলে আমাদেরকে বিপুল ভোটে জামাতকে জিতিয়ে আনা উচিত। আওয়ামী লীগ উগ্র, বিএনপি পুকুর চোর আর জামাত সবসময় মিষ্টি মিষ্টি কথা কয়, তারা সৎলোকের দল - এইটা বুঝাতে ব্যস্ত। ইতিহাস চলে আসে রে ভাই, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার বর্তমানের প্রয়োজনেই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

খেকশিয়াল এর ছবি

সত্য বলাইদা, আপনার সব কথাই ঠিক। হাহা আমরা মনে হয় একটু বেশিই ভালামানুষ, ভুদাই টাইপ

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এজন্যই বিদ্যার্জনের জন্য বিশেষভাবে চীনদেশের কথা বলা হয়েছে। চোখ টিপি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি:
ক্ষমা জিনিসটা কখনো মহামানবীয়, কখনো অপরাধ।

অসাধারণ!

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

বলাইদা,

সৈয়দ আলি হিমুকে রান্না শেখাচ্ছে বা হিমু সৈয়দ আলিকে রান্না শেখাচ্ছে তার কোনটার জন্যই ৩০ লাখ মানুষের রক্তের ঋণ শোধ হয়ে যায় না বা ক্ষমা করার প্রশ্ন আসে না ...

সৈয়দ আলি একটা আলাদা ইন্ডিভিজুয়াল, এবং এই সৈয়দ আলির সাথে খারাপ ব্যবহার না করেও পাকিদের ঘৃণা করা যায় ... ব্যপারটা সবসময় সামষ্টিক না, কখনো কখনো ব্যক্তিক; কে কতটুকু ঘৃণা প্রকাশ করবে বা কিভাবে প্রকাশ করবে সেটা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে ... তার বাহ্যিক আচরণের উপর নির্ভর করে বাইরে থেকে রায় দেয়া যায় না ...

কি বলতে চাই বোঝাতে পারলাম কিনা জানি না ... কিন্তু এই শেষ, আর এই প্রসঙ্গ আনবো না ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

এনকিদু এর ছবি

অসাধারন লেখা । অসাধারন দৃষ্টান্ত ।

দুটাতেই জাঝা

চিয়ার্স হিমু ভাই ।

-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমি খুব শক্ত গলায় বললাম, জানি। এই জিনিস আমরা চিনি। এ জন্যেই আমরা পাকিস্তানকে লাত্থি মেরে আলাদা হয়েছি।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি:
কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি ।

দুর্দান্ত! সহমত।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা হিমু ভাই।

তবে একটা সত্যি কথাই বলি, পোস্টটা পড়ার এক পর্যায়ে আমার ধারণা ছিলো, আপনি পাকি ছেলেটাকে সম্পূর্ণ বয়কট করবেন, সে যতোই ভাব জমাতে আসুক না কেন। কেন সেটা করেননি বা করতে পারেননি তা পোস্ট আর কমেন্টেই উল্লেখ করসেন। তাই লম্বা-চওড়া একটা মন্তব্য লিখেও ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে দিলাম। কারণ বিষয়টা আসলেই তর্কাতীত। আর আপনাকে কিছুই বলার নাই এই বিষয়ে। কারণ এইটুকু বুঝসি, পরিস্থিতির কারণে যতোটুকুই সাহায্য আপনি করে থাকেন না কেন ওই ছেলেকে, তা পুরা পাকি জাতির প্রতি আপনার ঘৃণার দেয়ালে সামান্য আঁচড়ও কাটতে পারেনি, পারবেও না...

আর '৪' এ যা লিখলেন, সব কথার শেষ কথা আসলে সেটাই...

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আমার একটা কথা মনে হয়-এইসব পূর্বপুরুষ বিষয়ে। কে কোন্‌ দেশে, কোন বাপমায়ের ঘরে জন্মাবে সে তো সে নিজে ঠিক করতে পারে না। আজকের ছেলেমেয়ে পূর্বপুরুষের কাজের দায় বইবে কেন?
পবিত্র ক্রোধের অধিকার সকলের আছে, অতীতের অন্যায়-অত্যাচার এর বিচার চাওয়াই উচিত। কিন্তু কোথাও তো থামতে হবে!
কিন্তু যদি এমন হয়, আজকে যদি দলিতরা উচ্চবর্ণকে বলে, " তোর পূর্বপুরুষ আমার পূর্বপুরুষকে পায়ের তলায় চেপে রেখেছে, আজ তোকে আমি মারবো।"
আজকে যদি হিন্দুরা মুসলমানদের বলে, " তোর পূর্বপুরুষ আমার পূর্বপুরুষের প্রাণ নিয়েছে, দেশ নিয়েছে, বাড়ীঘর নিয়েছে, আজ তোকে আমি মারবো, তোর রক্ত খাবো।"
আজকে কৃষ্ণাঙ্গরা যদি শ্বেতাঙ্গদের বলে "তোর পূর্বপুরুষ আমার পূর্বপুরুষের
রক্ত খেয়েছে, অবিচার করেছে, তোকে ঘেন্না করি, আজ তোকে আমি মারবো।"
আজকে যদি ইহুদীরা জার্মানদের বলে, " তোর পূর্বপুরুষ আমার পূর্বপুরুষের সবকিছু কেড়ে নিয়ে মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে, আজ তোকে আমি মারবো, তোকে মেরে পুড়িয়ে দেবো।"
আজকে যদি পৃথিবীর সব দেশে ভিন্ন ভিন্ন (অতীতের শত্রু) গ্রুপের মধ্যে এইরকম শুরু হয়, তাহলে কি হয়?
পথে ঘাটে লড়াই চলবে, কেউ কি নিরাপদ? সে তো ভয়ানক কান্ড! ঘৃণার কি শেষ আছে?আগুনে কাঠ দেবার মতন, কেরোসিন ঢালার মতন, বেড়েই চলবে!

হিমু এর ছবি

পূর্বপুরুষের কুকর্ম নিয়ে যদি কেউ লজ্জিত না থাকে, যদি তাকে অস্বীকার করে, ক্ষেত্রবিশেষে এ নিয়ে গর্ব করে, এবং নিজেও আচরণে পূর্বপুরুষকে অনুসরণ করে, ঘৃণা কি তার প্রাপ্য নয়?

ইহুদিরা জার্মানদের এ কথা বলবে না, কারণ তারা বিচার করতে পেরেছে, এখনও করে চলেছে। আমরা পারিনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। ঐ যীশুর নীতিবাক্য তখন খাটবে যখন বিচার করতে পারবো। একজন আর্মেনিয়ানকে গিয়ে বোঝাতে পারবেন, যে তুর্কিদের ঘৃণা করো না? একজন কুর্দকে বোঝাতে পারবেন?

সবাই খালি ঘৃণা ভুলে ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু এই যে শুয়োরের বাচ্চারা এখন পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, ঘটনাটা পর্যন্ত অস্বীকার করে, সেটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। এইসব ফাঁপা ভালোবাসার গুষ্ঠি কিলাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সবাই খালি ঘৃণা ভুলে ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু এই যে শুয়োরের বাচ্চারা এখন পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, ঘটনাটা পর্যন্ত অস্বীকার করে, সেটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। এইসব ফাঁপা ভালোবাসার গুষ্ঠি কিলাই।

আমার মনের কথা বলে দিলেন।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তানবীরা এর ছবি

যাহা বলিব সত্য বলিব। পাকিদের রান্না বান্না বহুত উমদা। শুধু খানা খাদ্যের জন্য আমি ওদের সাথে ভাব থাকি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

হিমু এর ছবি

আপনি তো দেখছি খুবই ছোঁচা দেঁতো হাসি


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানবীরা এর ছবি

দেখো হিমু, ওরা খাওয়াইতে চায়, আমি খাইতে চায়, গিভ এন্ড টেক, ছোচা বইলা ব্যাপারটাকে ছোট কইরো না প্লীজ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি
হিমু এর ছবি

ভাগ্যিস বলিস নাই যে "ডাইনী তুমি হোঁৎকা পেটুক খাও একা পাও যেথায় যেটুক" ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

আপনার কপাল ভাল বাহুদুরের কাছে থাপ্পর খাইতে হয়নাই ট্রেনে।

হিন্দি বা উর্দু বলতে আসলে আমিও একইভাবে নাকচ করে দেই। আমি বুঝিনা কেন তোমার ভাষা আমাকে জানতে হবে ! তুমি তো আমার ভাষা অবশ্যই জানোনা।

--------------------------------------------------------

হিমু এর ছবি

আপনার কপাল ভাল বাহুদুরের কাছে থাপ্পর খাইতে হয়নাই ট্রেনে।

অতবড় বাহাদুর হতে বাহুদুরের অনেক সময় লাগবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।