কচুরিপানা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ১৫/০১/২০১১ - ১২:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে খবরে পড়লাম [১], কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার মারাত্মক উৎপাতে মোট চারটি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

  • কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে টারবাইনে পানি প্রবেশের পথে একটা ধাতব স্ক্রিন থাকে, যেটা পানিতে ভাসমান যে কোনো বর্জ্যকে আটকে দেয়। কচুরিপানা সম্ভবত এই স্ক্রিনটিকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রেখেছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পচে যাওয়া কচুরিপানার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কুলিং সিস্টেমও বিপন্ন। দ্রষ্টব্য যে কুলিং সিস্টেম কাজ না করলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো সম্ভব নয়।
  • দ্বিতীয় সমস্যাটি নৌপরিবহনে। কচুরিপানার কারণে কর্ণফুলি কাগজকলে বাঁশ চালান দেয়া যাচ্ছে না। কাগজকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, এর মধ্যেই বাঁশের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাঁশের চালান এতটাই বিপন্ন যে ২৮ হাজার মেট্রিক টন কাগজ কম উৎপাদন হবে।
  • তৃতীয় সমস্যাটি সংমিশ্রিত। কচুরিপানা বেশ দক্ষতার সাথে জলাশয়ের উপরিভাগ ঢেকে ফেলে, ফলে সূর্যের আলো আর মাইক্রোফ্লোরার বিকাশ ঘটাতে পারে না, ফলে জলাশয়ের খাদ্যচক্র বিপন্ন হয়। কাপ্তাই হ্রদে কোটি কোটি টাকার মাছের পোনা পুষ্টির অভাবে বাড়তে পারছে না। যা-ও বা পারছে, সেসব মাছ ধরে মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ল্যাণ্ডিং স্টেশন পর্যন্ত আসতে পারছে না পরিবহনজনিত জটিলতার কারণে।
  • চতুর্থ সমস্যাটিও নৌপরিবহনে। কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানা ছেয়ে আছে বলে কাপ্তাই হ্রদে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে এলাকাবাসীর। সময় আর অর্থের অপচয়ের ব্যাপারটা সহজবোধ্য

সমস্যা নিরসনের লক্ষে কর্তৃপক্ষ একটি যান্ত্রিক সমাধান চাইছেন। বিএফডিসি'র ব্যবস্থাপক কমাণ্ডার জাহিরুল আলম জানিয়েছেন, এ সমস্যার "স্থায়ী সমাধানের জন্য" বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে হার্ভেস্টার মেশিন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে তিনি জানান। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানিয়েছেন, সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিগগিরই হার্ভেস্টার মেশিন কেনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কচুরিপানার এই দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়, কিংবা স্থানীয় কিছুও নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে কচুরিপানা জলীয় বাস্তুসংস্থান, কৃষি ও নৌপরিবহনের জন্যে মোটামুটি আতঙ্কোদ্দীপক নাম। মোটামুটি দুই সপ্তাহে পরিমাণে দ্বিগুণ হতে পারে সাধারণ কচুরিপানা [Eichhornia crassipes]। কোন হতভাগা একে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বাংলার পুকুরে এনে ছেড়েছিলো, তাকে ধরে চেয়ারে বেঁধে জোরজার করে ইভা রহমানের গান শোনানো উচিত তিন বেলা।

কাপ্তাই হ্রদে যে সমস্যাটা এখনও শুরু হয়নি, বা শুরু হলেও নজরে আসেনি কারো, সেটা হচ্ছে মশা। কচুরিপানা মশার আদর্শ বিস্তারভূমি [স্পনিং গ্রাউণ্ড]। কেবল মশা নয়, আরো নানারকম জীবাণুবাহক পোকামাকড়ের উপযুক্ত আবাস হচ্ছে কচুরিপানার ভাসমান আর্মাডা। আর এ ব্যাপারটি মোটামুটি পরীক্ষিত যে যান্ত্রিকভাবে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণ একটি অত্যন্ত দুরূহ ও ব্যয়সাধ্য পদ্ধতি। এ কারণেই মোটামুটি চল্লিশ বছর ধরে কচুরিপানাকে জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোকাবেলার চেষ্টা চলছে।

আরেকটি সমস্যা খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু আমলে আনার মতোই। সেটি হচ্ছে, খোলা জলাশয়ের উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ বাষ্পীভূত হয় কচুরিপানার শ্বসনের কারণে [ইভাপোট্রান্সপিরেশন]। ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার কারণে নীল নদের প্রবাহ প্রায় এক দশমাংশ কমে গিয়েছিলো। কাজেই কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে এই কচুরিপানার কারণে খানিকটা হলেও হেড লস বাড়বে।

১৯৮৯ সালে ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার একটি লাওয়ারিশ গোছা শনাক্ত করার সাত বছরের মাথায় এটি হ্রদের উগাণ্ডীয় অংশের ৮০% গ্রাস করে ফেলে। কচুরিপানার বিস্তারে বাধা দেয়ার মতো কিছুই ছিলো না ভিক্টোরিয়া হ্রদে। ফলাফল কমবেশি কাপ্তাইয়ের মতোই, তার সাথে যোগ করা যেতে পারে পচে গিয়ে পানীয় জলসংস্থান নষ্ট করা আর শিস্টোসোমিয়াসিস রোগ ছড়ানো কৃমির হোস্ট এক ধরনের শামুকের বংশবিস্তার। জেমস ওগোয়াং নামে এক ভদ্রলোক কচুরিপানার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন [২]।

ওগোয়াঙের আক্রমণ ছিলো জৈবপ্রযুক্তি। খুব জটিল কিছু নয়, ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার কোনো স্থানীয় শত্রু ছিলো না বলে তিনি এমন একটি শত্রু প্রজাতি খুঁজে আনেন কচুরিপানার মাতৃভূমি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। প্রজাতিটি এক ধরনের গুবরে পোকা। ওগোয়াং খুব সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করেন, এই পোকা কি কেবল কচুরিপানার ওপরই হামলা করে, নাকি ডানেবামে অন্য কোনো কিছুতেও দাঁত বসায়। একেবারেই কচুরিপানার জানি দুশমন প্রমাণিত হবার পর তিনি এই গুবরে পোকাকে ভিক্টোরিয়া হ্রদে চরে খাবার জন্যে ছেড়ে দেন। ফলাফল সন্তোষজনক, ২০০১ সালের মধ্যে ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার উৎপাত কমে আসে।

একই ধরনের সমস্যা ফ্লোরিডাতেও হয়েছিলো। সেখানে ১৮৮৪ সালে প্রথম কচুরিপানা আসে। তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল। ১৯৭২ সালে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সেখানে Neochetina eichhorniae প্রজাতির গুবরে পোকা ছাড়া হয়। এগুলোর জীবনকাল ছিলো ৯০-১২০ দিন। দু'বছর পর সেখানে আরো স্বল্প জীবনকালের Neochetina bruchi ছাড়া হয়। পরবর্তীতে মাত্র ৩০ দিনের জীবনচক্রের ম্যারাডোনামার্কা সংস্করণ, আর্জেন্টিনার দুর্ধর্ষ পানাখেকো Sameodes albiguttalis উন্মুক্ত করা হয় কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণের জন্যে। এই প্রজাতিটি এখন আরো কয়েকটি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এদের সাফল্য যে খুব আহামরি, এমনটি নয়, কারণ কচুরিপানার বীজ প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়, আর তিরিশ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। পানিতে যথেষ্ট পুষ্টি থাকলে [যেমনটা কমবেশি আমাদের জলাশয়ে রয়েছে] কচুরিপানার বিস্তার ঠেকানো খুব মুশকিল।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিভাগের গবেষণা শাখা থেকে আরেকটি কচুরিপানাখোর পতঙ্গ ছাড়া হয় [৩], এ-ও ম্যারাডোনার জাতভাই, আর্জেন্টিনীয় Megamelus scutellaris, একেবারে খাস কচুরিপানার দুশমন, অন্য কিছু দাঁতে কুটেও দেখে না।

কেনিয়াতে কিছু ছত্রাক-প্যাথোজেন পাওয়া গেছে, যা দিয়ে কচুরিপানাকে গলা টিপে মারা সম্ভব, কিন্তু এ ধরনের পরজীবী কতটুকু প্রজাতিনিষ্ঠ, সেটি খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের জন্যেও নতুন হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আমাদের দেশে হারভেস্টার কিনে কিনে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণ করতে দিলে কর্মসংস্থান হবে নিশ্চয়ই, কিন্তু গোটা প্রকল্পটাও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে, যদি কচুরিপানাকে প্রাকৃতিক কোনো খাদকের শিকারে পরিণত করা না যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক একর জলাশয়ে কচুরিপানার ওজন ২০০ টন পর্যন্ত হতে পারে [৪]। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও পতঙ্গবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে যদি নেন, তাহলে কিছু কার্যকর গবেষণা যেমন হবে, ব্যয় সংকোচনও সম্ভব হবে।

কচুরিপানাকে গণশত্রু ভাবার কারণ যেমন আছে, তেমনি এর সম্ভাবনাকেও যাচাই করে দেখা জরুরি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতনু কুমার দাশ যেমন কেমিক্যাল পাল্পিঙের মাধ্যমে কচুরিপানা থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি করার প্রক্রিয়া আবিষ্কারের দাবি করছেন [৫]। কর্ণফুলি পেপার মিলে এই হতভাগাদের মিজান-পিষে-ফ্যালো করে যদি কাগজ তৈরি করা যায়, মন্দ কী?

কচুরিপানা থেকে আরো অনেক তন্তু-সামগ্রী প্রস্তুত করা সম্ভব, যেমন সম্ভব একে পচিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা কিংবা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা। তবে কচুরিপানা থেকে প্রস্তুতকৃত পশুখাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও বেশি, যেহেতু কচুরিপানা পানি থেকে প্রচুর ভারি মৌল [বেশিরভাগই জীবদেহের জন্যে বিষাক্ত] শোষণ করতে পারে [৬]।

কচুরিপানার এই শেষ গুণটির কারণেই কিন্তু একে আরেকটি অতি চমৎকার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যা বিভাগে ড. মোজাম্মেল হকের নির্দেশনায় এক গবেষকদল চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম-যৌগকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন তিনটি ব্যাকটিরিয়া শনাক্ত করেছেন [৭]। কচুরিপানার মূলের অংশটুকু প্রচুর অণুজীবের আদর্শ সূতিকাগার, কাজেই আমাদের ট্যানারির বর্জ্য শোধনের কাজে এই অণুজীবগুলোর বাহক হিসেবে দূষণসহ কচুরিপানা ব্যবহার করা যেতে পারে। একই সাথে প্রবল দূষিত বুড়িগঙ্গা, যেখানে আর কোনো ফ্লোরা বা ফনাই টিকতে পারছে না, সেখানে কচুরিপানা ছেড়ে পলিউট্যান্টগুলোকে ফিল্টার করার একটি প্রকল্প আরো গবেষণার দাবি করে বলে মনে করি।

আমি তো মিস্ত্রি মানুষ, সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা এই ধরনের আইডিয়াগুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখলে আমরা এক ঢিলে কয়েক পাখি মারতে পারবো না কেন?


[১] কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র হুমকির মুখে

[২] Lake Victoria's Water Hyacinth Problem, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

[৩] উইকিপিডিয়ায় কচুরিপানা

[৪] Biological Control of Water Hyacinth with Arthropods: a Review to 2000, M. H. Julien

[৫] কচুরিপানা, কলাগাছ ধঞ্চে থেকে কাগজ!

[৬] Principle and Process of Biofiltration of Cd, Cr, Co, Ni & Pb from Tropical Opencast Coalmine Effluent

[৭] দূষণ ঠেকাবে তিন অণুযোদ্ধা


মন্তব্য

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার তথ্যবহুল আলোচনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তাসনীম এর ছবি

তথ্যবহুল পোস্ট। খাদ্য আর খাদক সম্পর্ক থাকলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়, এই বিশ্বাস আমার সব সময়েই ছিল। তবে কচুরিপানা সম্ভাবনাময় দিকটা কখনো ভাবি নি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

অনেক না জানা বিষয় জানলাম, ধন্যবাদ হিমু। কিন্তু কথা হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? আমাদের নীতিনির্ধারকরা তো জেগে ঘুমায়। কে জাগাবে?

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

হিমু এর ছবি

গবেষকদের আরো সক্রিয় হতে হবে আর কি। কেউ তাদের যেচে পড়ে তো গবেষণার ফাণ্ড পকেটে গুঁজে দিতে আসবে না। কাজেই তারা যদি নিজেরাই প্রকল্প প্রস্তাব লিখে জায়গামতো টোকা না দেন, নীতিনির্ধারকরা ঘুমাবে আর মাঝেমধ্যে জেগে উঠে পয়সা মারবে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমি ২০০৩ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম ক্লাইমেট চেঞ্জ পাইলট প্রজেক্টে কাজ করেছি। ওটার নাম ছিলো রিডিউসিং ভালনারেবিলিটি টু ক্লাইমেট চেঞ্জ বা সংক্ষেপে আরভিসিসি। আমাদের একটা অলটারনেটিভ লাইভলিহুড এ্যাডাপটেশন ছিলো জলাবদ্ধ এলাকায় কচুরিপানার ব্যবহার। বাংলাদেশের সয়েললেস এগ্রিকালচারের অন্যতম পুরোধা গবেষক রেজাউল হক খোকন ভাইয়ের প্রযুক্তিতে এবং প্রশিক্ষণে আমাদের ধাপের উপর সব্জীচাষ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিলো। এখানে কচুরিপানার বিশাল স্তুপকে পিটিয়ে ঘনীভূত করে ধাপ বানিয়ে তার উপরে প্রায় সব ধরণের সব্জীচাষ করা হতো একেবারেই মাটির ব্যবহার ছাড়া। আমরা এক বলতাম ভাসমান উদ্যান। এই ধাপে সব্জীর ফলন অস্বাভাবিকরকম দ্রুত হতো এবং সব্জীগুলোও পুষ্ট হতো। ক্ষয়িষ্ণু্ পুরোনো ধাপগুলোকে শুকিয়ে তা আবার গরু-ছাগলকে খাওয়ানো হতো। গোপালগঞ্জ এবং সাতক্ষীরায় এই প্রযুক্তি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এখনও ওই এলাকাগুলোর জলাবদ্ধ মানুষ এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। গুগলে Reducing Vulnerability to Climate Change Floating Garden দিয়ে সার্চ করলে ভাসমান উদ্যানের অনেক ছবি পাবেন। আমি গুগল থেকে সংগৃহীত কয়েকটা ছবি নিচে দিলাম-

southern-bangladesh

floatinggardenL

floating-garden-12690-300

floatinggarden-11208-300

ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে একটা কনটেমপোরারি ফেনোমেনা। এটাকে কাজে লাগিয়ে কচুরিপানারও সদগতি করার জন্যে তহবিল পাওয়া যায় এবং আমরা তা করেও দেখিয়েছি। এখনও অনেকেই তা করছেন। নীতিনির্ধারকরা কপে যাবেন আর আসবেন কিন্তু মাঠ পর্যায়ের এই লারনিংগুলোকে দেখেও দেখবেন না। চিন্তিত

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা 'মাটি ও মানুষে' দেখসিলাম একবার।

মাহবুব রানা এর ছবি

রাতঃ ভাই, একটা বিষয় কি নিশ্চত করতে পারেন? এই প্রযুক্তি কি আমাদের নিজস্ব, নাকি বার্মা থেকে নেয়া?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

রানা ভাই, এটা অত্যন্ত প্রাচীন একটা প্রযুক্তি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটা দেখা যায় বহুযুগ ধরে। নির্দিষ্ট করে সম্ভবতঃ বলা দুরুহ যে এটা কাদের উদ্ভাবন। খোকন ভাইয়েরা এই বিষয়টা গবেষনায় আনার আগেও ভাসমান উদ্যান করা হতো। তবে খোকন ভাইদের গবেষনা ছিলো এটা সাথে পরিবেশের সম্পৃক্ততা প্লাস আর্থিক আসপেক্ট নিয়ে। খোকন ভাইয়ের কাছ থেকে যেটা শোনা যে বিদেশের বা বাংলাদেশের তাদের গবেষনার আগের সময়ের অধিকাংশ ভাসমান উদ্যানগুলো কচুরিপানা এবং আগাছা-লতা-গুল্মের পাশাপাশি উপরের স্তরে অল্প পরিমানে মাটির ব্যবহার করা হতো। খোকন ভাইদের রিসার্চের আউটকাম হচ্ছে সম্পূর্ণ মাটিবর্জিত চাষপদ্ধতি এবং পরিবেশবান্ধব কৃষিকাজ। একইসাথে তারা ভাসমান উদ্যানের একটা স্টান্ডার্ড তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। নিচে দুটো সংক্ষিপ্ত আর্টিকলের লিংক দিলাম-

১. Bangladesh: Spreading the floating farms’ tradition
২. Soil-less agriculture gains ground

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আরে! জোশ জিনিস জানলাম। ধন্যবাদ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! চমৎকার আলোচনার জন্য হিমুকে জাঝা।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন!!
তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
-------------------------------------------
তৌফিক

অতিথি 1 এর ছবি

সাইন্টিফিক নামগুলো ইটালিক করলে ভালো হবে। লেখা অনেক তথ্যবহুল। ধন্যবাদ হিমু।

অতিথি লেখক এর ছবি

কচুরিপানার কারনে জলাশয়ে দ্রবীভুত অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয় বলে শুনেছি। এটা কি ৩ নং এর সাথে সম্পর্কিত?
রাসায়নিক উপায়েও কি এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব? হলে সেটার ক্ষতিকর প্রভাব গুলিও আলোচনায় আসতে পারে।
তথ্যমূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

-নুসায়ের

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
অণুজীব = অনুজীব

হিমু এর ছবি

অনুজীব বানানটা ভুল।

নিভৃত_সহচর এর ছবি

অনেকদিন আগে খবরের কাগজে একটি কচুরিপানার উপকারিতে নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম তাতে বলা হয়েছিল কছি কচুরিপানার আঁশের সাথে ফিটকিরি মেশালে নাকি জ্বালানী তৈরী করা সম্ভব (যদিও এখন পর্যন্ত কোন বাস্তব প্রয়োগ দেখি নাই) , আর আরেকটা ছিল কচুরিপানার আঁশ থেকে কাগজ তৈরী করা যায় (আমার এক সহপাঠী এক বিজ্ঞান মেলায় এই নিয়ে প্রজেক্টও করেছিল)।তবে রাতঃস্মরণীয় যে উদ্যোগটার কথা বলেছেন সেটাও খুব ভালো লাগলো।

আমি হিমুর সাথে সহমত, একটু চেষ্টা করলেই মনে হয় কচুরিপানার আরো প্রয়োগ বের করা সম্ভব।

ফাহিম হাসান এর ছবি

কাজের পোস্ট। কচুরিপানা বিষয়ক অনেক প্রকল্প স্কুল কলেজের বিজ্ঞানমেলায় দেখা যায়। ব্যবহারিক/প্রায়োগিক এই দিকগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা এক জায়গায় করতে পারলে ভাল।

তবে একটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। যদি বাণিজ্যিকভাবে কচুরিপানা থেকে কাগজ উৎপাদন করতে হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে যে উৎপাদন খরচ যাতে প্রচলিত পদ্ধতির উৎপাদন খরচের থেকে কম হয়। সেটা সম্ভবপর না হলে তাহলে সরকারী ভাবে উৎপাদন করতে হবে।

কিন্তু মুশকিল হল যদি এমন হয় -

কচুরীপানা থেকে কাগজ উৎপাদনের খরচ > ( প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদনের খরচ + কচুরীপানাজনিত সমস্যার অনুমিত আর্থিক মূল্যমান)

তাহলে কিন্তু নীতিনির্ধারকরাও নিরুপায়।

কাজেই এ ধরনের প্রকল্পগুলোর ব্যবহারিক এফিশিয়েন্সি (বাংলা?) যাচাই করা জরুরী।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সাধারনভাবে দেখলে এতে চালেঞ্জ আছে। কচুরিপানা পরিবহন সহজ ব্যাপার না। যেহেতু ফাপা জিনিস, তাই অনেক যায়গা লাগে। এতে পরিবহন খরচ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। উৎপাদন খরচের সাথে পরিবহন যোগ করলে এটা ব্যায়বহুল হতে পারে। পেপার মিলের বাশ বা কাঠ যেভাবে সহজে ভাসিয়ে আনা হয়, কচুরিপানায় তা সম্ভব না। তাছাড়া ফাপা হওয়ার কারনে যে বিশাল ভলিউমের কাচামাল প্রয়োজন, তা সংগ্রহ দুরুহ। তবে যদি এই ধরনের উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে খুদ্রশিল্পের মাধ্যমে করা যায়, তবে সম্ভাবনা অসীম।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

হিমু এর ছবি

ব্যাপারটাকে আসলে উল্টোদিক থেকে দেখা যায়। কচুরিপানা তো শেষমেশ সরিয়েই ফেলতে হবে পানি থেকে, সেটার খরচ মেইনটেন্যান্স খাতে রাখা হবে। এটাকে তারপর কীভাবে সর্বোচ্চ ভ্যালু অ্যাডিশন করা যায়, সেটা নিয়েই প্রশ্ন। ফাইবার বোর্ড বা কাগজ বা দড়ি বানাতে পারলে সেটা সম্ভব। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা হয়তো একটা ভালো সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন।

দ্রোহী এর ছবি

খোঁজখবর নিলে দেখবেন হারভেস্টার কেনার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে কচুরিপানা ছাড়া হয়েছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুম। আমাদের দেশে সবই সম্ভব।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই তথ্যবহুল লেখা। পড়ে ভালো লাগলো।
শাস্তি দেয়ার নতুন পদ্ধতি টা তো মারাত্তক-

কোন হতভাগা একে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বাংলার পুকুরে এনে ছেড়েছিলো, তাকে ধরে চেয়ারে বেঁধে জোরজার করে ইভা রহমানের গান শোনানো উচিত তিন বেলা।

আমিও ইভা রহমানের গান শুনি- তবে টিভির সাউন্ড মিউট করে চোখ টিপি

--
কালো ও সাদা

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

তথ্যবহুল ও কাজের একটা পোস্ট।

চলুক চলুক চলুক

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মাহবুব রানা এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার কাছ থেকে এ পোষ্ট আসায়।
পত্রিকায় এ খবর পড়ার পর প্রথমেই আমার মনে হয়েছিলো হারভেস্টার না কিনে কচুরিপানাকে অন্য কোনোভাবে কি ব্যবহার করা যায় না?
আমাদের দেশে প্রয়োগযোগ্য কচুরিপানার কয়েকটি ব্যবহার:
-উগান্ডায় কচুরিপানা থেকে কাগজ, ম্যাট বানানো হয়
-কচুরিপানা শুকিয়ে রান্নার কাজেও লাগানো যায়
-ফিজিতে শুকনো কুচুরিপানা ঝুড়ি বোনার কাজে লাগানো হয়
-এছাড়া শুকনো কচুরিপানাকে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদাহরনও আছে। আমি ছোটবেলায় পুকুর থেকে কচুরীপানা তুলে কেটে কেটে খড়ের সাথে মিশিয়ে গরুকে খেতে দেখেছি।
-কম্পোস্ট বানানো যেতে পারে।

কচুরিপানার যে ব্যবহারগুলোর কথা পোষ্টে আর মন্তব্যে এসেছে, সেগুলোর একটাও যদি ব্যবসায়িকভাবে লাভবান করা যায়, মন্দ কি? অন্তত একটা ফিসিবিলিটি স্টাডিতো করা যায়।
অন্যদিকে হারভেস্টার কিনে সমস্যার সমাধান হবে? আমার তো মনে হয় নতুন নতুন সমস্যা যোগ হবে। কচুরিপানা হারভেস্ট করে ওগুলো ফেললা হবে কোথায়? ফেলতেও তো লোকবল লাগবে। তাছাড়া যন্ত্র চালানোর জন্য একজন লোক নিয়োগ দিতে হবে। এরকম একটা মেশিন যে কোনো কারনে একবার নষ্ট হলে ধরে নেয়া যায় দীর্ঘদিন এটা অকেজো থাকবে ঠিক করার আগ পর্যন্ত। দুদিন পরপর নষ্ট হতে থাকলে বাজেটের অভাবে মেশিনটা পুরোপুরিই অকার্যকর হয়ে যাবে একটা সময় পর। শেষ পর্যন্ত যে লাউ সেই কদু।

কৌস্তুভ এর ছবি

যেমন শুনেছিলাম বলে মনে পড়ছে, এক মেম নাকি তাঁর কচুরীপানার ফুল ভালো লাগে বলে নিয়ে এসে লাগিয়েছিলেন।

পোস্টে (চলুক)। কচুরীপানা থেকে কাগজ তৈরীর কথা আমিও কিছু শুনেছি। আর আমার এক বন্ধুর ফার্ম আছে সুন্দরবনের দিকে, সেখানে তারা সরকারের সহায়তায় জৈব বর্জ্য, কচুরীপানা ইত্যাদি পচিয়ে বায়োগ্যাস এবং সার তৈরী করে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যা বিভাগে ড. মোজাম্মেল হকের নির্দেশনায় এক গবেষকদল চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম-যৌগকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন তিনটি ব্যাকটিরিয়া শনাক্ত করেছেন

আপনার ফেসবুকে লিঙ্ক দেখে আমি সেসময়েই ওই পেপারদুটো পড়ে একটা লেখা লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নেটে আমি পত্রিকা খুঁজে পেলেও পেপার দুটো খুঁজে পাইনি বলে লেখা হয়নি।

মাতিয়া চৌধুরী'র কাছে এই লেখাটা পাঠাতে পারলে ভালো হত। আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উনি ছাড়া আর কেউ যুক্তি বুঝতে পারেন বলে জানিনা।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আরিফিন সন্ধি এর ছবি

কচুরিপানা থেকে ক্রোমিয়াম দূষণ বন্ধ করাটা খুব একটা ফলপ্রসু হবে না। কারণ কচুরিপানা খুব কম মাত্রা এই ধাতুকে শোষণ করে আর শোষণ করার পর সেটিকে কিভাবে Recycle করবেন? আমার নিজের গবেষণার বিষয় পরিবেশ দূষণ, তাই বিষয়টা জানানো মনে করলাম।

হিমু এর ছবি

সন্ধি ভাই, অ্যাবস্ট্রাক্টটা পড়লাম। যা বুঝলাম, হাই কনসেন্ট্রেশন ক্রোমিয়াম সলিউশনে কচুরিপানা নিজেই কিছু মাত্রায় বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়, জিঙ্কের ক্ষেত্রে যেটা হয়নি [লিটার প্রতি ২০ মিলি্গ্রাম পর্যন্ত]। অ্যাবস্ট্রাক্টের শেষ বাক্যটা হচ্ছে "Overall this methodology is safe for the removal of Zn and Cr and can be utilized at large scale after few further investigation" । আপনার পয়েন্টটা তাই ধরতে পারিনি।

আমাদের দেশে যেসব জায়গায় ক্রোমিয়ামের দূষণ ঘটে [ট্যানারি আর ডাইং ফ্যাক্টরিগুলোতে], সেখানে ক্রোমিয়াম কনসেন্ট্রেশন কেমন, আমার ধারণা নেই। তবে যেহেতু বৃষ্টির পানির সাথে এই ক্রোমিয়াম নানা জায়গায় ছড়িয়ে যায়, কিছু আক্রান্ত এলাকায় কচুরিপানার সাধ্যের মধ্যেই কনসেন্ট্রেশন থাকার কথা। কচুরিপানা দিয়ে বায়োফিলট্রেশন নিশ্চয়ই অন্য যে কোনো পদ্ধতি থেকে সস্তা হবে, তাই না?

ক্রোমিয়াম রিসাইকেল করার ব্যাপারটা সম্পর্কে আমার জ্ঞানের পারদ হিমাঙ্কের কাছাকাছি। কোনো আইডিয়া থাকলে শেয়ার করুন। আর সমস্যাটা সম্ভবত জলাশয় থেকে ক্রোমিয়াম সরিয়ে ফেলার, কচুরিপানা থেকে সেই ক্রোমিয়াম বার করে সেটাকে আবার কাজে লাগানোর নয়।

আরিফিন সন্ধি এর ছবি

হিমু ভাই,
কচুরি পানা দিয়ে ক্রোমিয়ামের দূষণ রোধ করা কিছুটা হলেও সম্ভব, স্কিন্তু সেটা হবে কফির মগ দিয়ে সাগরের পানি খালি করে ফেলার মত চিন্তা ভাবনা।কারণ, ক্রোমিয়াম hyperaccumulator গাছের তালিকাতে কিন্তু কচুরি পানা নেই, এর ব্যবহার মূলত ক্রোমিয়াম bioindicator হিসাবে

সমস্যাটা সম্ভবত জলাশয় থেকে ক্রোমিয়াম সরিয়ে ফেলার, কচুরিপানা থেকে সেই ক্রোমিয়াম বার করে সেটাকে আবার কাজে লাগানোর নয়।
রিসাইকেল এর বিষয় হলো, ক্রোমিয়ামযুক্ত কচুরি পানা আপনি কোথায় ফেলবেন? যেখানে ফেলবেন সেখানে পরিবেশ নতুন করে দূষণ হবে।

আমার কাজের জায়গা আসেনিক কিভাবে দূর করা যায়, গাছ দিয়ে। আমি যে গাছ ব্যবহার করি সেটা জৈব জালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আমাদের ল্যাবে কচুরি পানা নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে এর আগে কিন্তু খুব একটা আশা দেখাতে পারেনি।
যাই হোক আশা রাখছি থিসিস এর পর একটা বড় করে Phytoremediation এর উপর লেখা লিখবো।তখন গাছ দিয়ে কিভাবে পরিবেশ দূষণ ঠেকানো যায়, তা বলা যাবে
কটা দিন সবুর করেন ভাই...... ইয়ে, মানে...

হিমু এর ছবি

এবার বুঝতে পেরেছি।

থিসিসের ফাঁকে ফাঁকেই লেখেন কিছু।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আশা রাখছি থিসিস এর পর একটা বড় করে Phytoremediation এর উপর লেখা লিখবো।তখন গাছ দিয়ে কিভাবে পরিবেশ দূষণ ঠেকানো যায়, তা বলা যাবে

প্রিয় বিষয়। অপেক্ষায় থাকলাম।

আরিফিন সন্ধি এর ছবি

কথা যেহেতু দিয়েছি, অবশ্যই লিখবো হাসি

শামীম এর ছবি

মুশকিল হলো ফাইটোরিমেডিয়েশনের গাছ যখন মারা যায় তখন এটা আবার চাপা পড়ে পচনকালে রিডিউসিং কন্ডিশনে চলে যায়, ফলে ধাতব অংশটা আবার মোবাইল হয়ে লিচেটের সাথে বের হয়ে আসে।

ওয়েস্ট মাইনিং বলে একটা বিষয় বেশ কিছুদিন যাবৎ জানি। এটাতে মূলত ইনসিনারেটরের ছাই থেকে লিচিং করিয়ে মূল্যবান ধাতূ আলাদা করে রিসাইকেল করা হয়। আমি আর্সেনিকের স্লাজ থেকে মুরগীর খামরের ওয়েস্ট থেকে লিচিং-এ বের হওয়া ফসফরাস দিয়ে আর্সেনিক মাইনিং-এর একটা গবেষনা প্রস্তাব লিখেছিলাম, যা তখন ফান্ড পায়নি।

কচুরিপানার কিছু প্রকারভেদ আর্সেনিকের ফাইটোরিমেডিয়েশনে ব্যবহার করার সম্ভাবনাময় গবেষনার প্রেজেন্টেশন দেখেছিলাম। একইভাবে ক্রোমিয়াম রিসেপ্টর কোন গাছ পেলে সেটা ব্যবহার করে, সেটার মৃতদেহ থেকে লিচিং করানোর প্রজেক্ট অসম্ভব না বলেই মনে হয়। সেই লিচেট থেকে ওয়েস্ট মাইনিং করা যেতে পারে।
=====================================
আমার মনে হয়, কাপ্তাইয়ের পানিতে এমন কোন ধাতব দূষন নাই যে কচুরিপানা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বায়োগ্যাস + সয়েল কন্ডিশনার বানানো প্রজেক্টও সম্ভনাময় মনে হয়। বান্দরবনেই একজন বায়োগ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রয় করছে বলে খবর দেখেছিলাম। এনার কাঁচামাল সমস্যা -- এতগুলো কচুরিপানা পেলে খুশিতে ডিগবাজি দেয়ার কথা।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আরিফিন সন্ধি এর ছবি

মুশকিল হলো ফাইটোরিমেডিয়েশনের গাছ যখন মারা যায় তখন এটা আবার চাপা পড়ে পচনকালে রিডিউসিং কন্ডিশনে চলে যায়, ফলে ধাতব অংশটা আবার মোবাইল হয়ে লিচেটের সাথে বের হয়ে আসে।

ফাইটোরিমেডিয়েশনের এর প্রধানতম উপযোগিতা হলো, ধাতুযুক্ত গাছগুলোকে দূষিত এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ তাহলে বলা চলে removal হয়েছে।কাজেই গাছগুলোকে যদি আমরা সেই জায়গাতে রেখে দেই, তাহলে সেটিকে ফাইটোরিমেডিয়েশন বলা যায়না। অ্যাঁ
আপনি কি mine tillage এর কথা বলতে চাইছেন? সেটি আরেক বিষয়। কারন গাছ থেকে মেটাল বের করে আবার ব্যবহার করার চেয়ে সেটিকে সঠিকভাবে deposition করাটা বেশি দরকার।
তবে হ্যা, Biofortification করতে চাইলে সেটা আরেক রাস্তা। হাসি

এন্টিমনি (Sb) খনি দিয়ে বের হওয়া আসেনিক নিয়ে কাজ করছি। পুরো বলতে পারছিনা। কারন সেটার Thesis লিখছি এখন চিন্তিত

আরিফিন সন্ধি
স্টকহোম, সুইডেন
email:

শামীম এর ছবি

খনির উপজাত নয়। waste incinerator এর বটম এ্যাশের মধ্যে অনেক ধাতব অংশ থাকে। সাধারণত ঐ ছাইকে অত্যধিক উচ্চতাপে গলিয়ে সেখান থেকে আংশিক পাতনের সাহায্যে বিভিন্ন ধাতু আলাদা করা হয়। ছাইয়ে যথেষ্ট পরিমান ধাতব ময়লা থাকলে এতে খনি থেকে ধাতু উত্তোলনের চেয়ে সমান বা কম খরচে ধাতু আহরণ সম্ভব। এটা এক প্রকার রিসাইক্লিং টেকনিক।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শামীম এর ছবি

চীনের কিছু জায়গায় আর্সেনিক দূষণ হয়েছিলো আর্সেনিক যুক্ত কয়লা পুড়িয়ে ঘর গরম + রান্না করাতে (বায়ু দূষণ)। আর্সেনিক ফাইটোরিমেডিয়েশনে ব্যবহৃত গাছ জৈব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে অমন সমস্যা হতে পারে কি না? -- ডিফেন্সে এই প্রশ্নও আসতে পারে। চিন্তিত

Unventilated Indoor Coal-Fired Stoves in Guizhou Province, China: Reduction of Arsenic Exposure through Behavior Changes Resulting from Mitigation and Health Education in Populations with Arsenicosis

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

শামীম ভাই,
আপনার কথা ঠিক। চিন্তিত কিন্তু biomass energy plant এর ছাই থেকে Arsenic Extraction করে সেটাকে ঊপযুক্তভাবে deposition করা অনেক সহজ হবে মাটিকে mechanical remediation এর চেয়ে। আমি কিন্তু জৈব জালানি বলতে Cropping Energy or Biomass Energy বোঝাচ্ছি। শুধু একটি demerit হলো , Phytoremediation এ অনেক সময় লাগবে, কিন্তু আমরা পরিবেশবান্ধব এবং অল্প খরচ। দেঁতো হাসি

আরিফিন সন্ধি

হিমু এর ছবি

এই বান্দরবানের ভদ্রলোকের সাথে যোগাযোগের কোনো রাস্তা আছে?

শামীম এর ছবি

যোগাযোগের জন্য খবরে এর বেশি তথ্য পেলাম না। পরিচিত কেউ ওখানে থাকলে তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

জেলা সদরের সূয়ালক এলাকায় ২ একর পাহাড়ী জমির উপর বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট করেছে খোকন দাস।

বায়োগ্যাস দিয়ে সে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যূৎ উৎপাদন করছে - বাপরে!

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি জলতরঙ্গ এর ছবি

"কোন হতভাগা একে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বাংলার পুকুরে এনে ছেড়েছিলো, তাকে ধরে চেয়ারে বেঁধে জোরজার করে ইভা রহমানের গান শোনানো উচিত তিন বেলা।" হো হো হো

আলমগীর এর ছবি

পাগলা পাঙ্গাস মাছ ছেড়ে দিলে কেমন হয়। এগুলা সব কিছু খেয়ে ফেলে। তা না হলে পিরহানা কিংবা আফ্রিকান মাগুর।

হিমু এর ছবি

এরা কি কাপ্তাইয়ের অন্যান্য মাছ ফেলে নিরামিষ কচুরিপানা খাবে? দেখা যাবে কাপ্তাই লেকে শুধু দুইটা জিনিস থাকবে, কচুরিপানা আর আফ্রিকান মাগুর।

আউল-বাউল-ফাউল এর ছবি

কোনোভাবে প্রক্রিয়াজাত করে কচুরিপানা দিয়ে মনুষ্যখাদ্য তৈরি করা গেলে আর চিন্তু নেই। মানুষ যা খেতে শুরু করে, সেটার অভাব না হয়েই যায় না।

দুর্দান্ত এর ছবি

কাপ্তাই হ্রদের ব্যাবস্থাপনা ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানের আয়ত্বে সেটা কি পরিস্কার?
কেন এই প্রশ্ন?
কারন এই কচুরিপানার আধিক্য ঠিক কার সমস্যা সেটা না বোঝা পর্যন্ত নিরীক্ষা চলতেই থাকবে, সমাধান নিয়ে কেউ এগুবে না।
কিন্তু কাপ্তাই হ্রদ, তুমি আসলে কার? রাঙ্গামাটি পৌরসভা, পর্যটন, পাউবো, বন ও পরিবেশ, পার্বত্যচট্টগ্রাম, চাকমা, সেনাবাহিনী কৃষি/মতস উন্নয়ন - এরা সবাই তোমাকে ভোগকরে ঠিকই, কিন্তু তোমার সার্বিক রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বটি কার?

---
কাপ্তাই হ্রদের পানির ওপর কিছু সীমিত এলাকায় কচুরিপানা ব্যাবহার করে কৃষিকাজের জন্য ভুমিহীনদের মধ্যে দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে যে কচুরিপানা এখন সমস্যা, সেটা হয়ে উঠবে একটি সম্ভাবনা। রতঃস্মরনীয় ভাই যে পদ্ধতিটির কথা বললেন, সেখানে কৃষিকাজের পরে পুরাতন কচুরিপানার ভেলাগুলোকে বায়োগ্যাস উতপাদনের কাজে লাগানো যেতে পারে। যে পরিমানে কচুরিপানার কথা জানলাম তাতে বায়োগ্যাসে পরিমান খুন কম হবেনা।
----
মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলতে বলছিনা। কিন্তু যেখানে দেশের ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতচাহিদার মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট আসে এই কেন্দ্র থেকে আসে, সেই কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য ঠিক কতটুকু সম্পদ? এর ফলে পরিবেশের যে স্থায়ী ক্ষতিসাধিত হয়েছে এবং একে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালিয়ে নিতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা পানিতে পড়ছে, তবুও এই কেন্দ্রটি বছরে ১০০-১৫০ দিন অকার্যকর থাকে।

যদি এই হ্রদ, বাঁধ আর বিদ্যুতকেন্দ্রটি না থাকে, তাহলে বাংলাদেশের কি কোন ক্ষতি হয়?

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। কচুরিপানা মোটেও কোন সমস্যা না, বরং আমাদের বহু সমস্যার সমাধান- যা আপনি এবং আরো অনেকে তাঁদের মন্তব্যে বলেছেন। কচুরিপানা দিয়ে কাগজ থেকে শুরু করে চেয়ার-টেবিল-সোফাসেট পর্যন্ত বানানো সম্ভব। জ্বালানী হিসেবে সরাসরি ব্যবহার করা যায়, আবার বায়োগ্যাস প্লান্টেও ব্যবহার করা যায়। এটা দিয়ে সবজি চাষ করা যায়। আমাদের দেশে যেখানে আমরা সীমিত কাঁচামাল দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা কিছু ইন্ডাস্ট্রি কোনমতে বাঁচিয়ে রেখেছি, সেখানে টাকা খরচ করে কচুরীপানা ধ্বংসের জন্য হারভেস্টার কেনাটা হাস্যকর সিদ্ধান্ত। কিছু না হইলেও, কচুরীপানা খেয়ে আমাদের গরুগুলা তো একটু মোটাতাজা হইতে পারবে! (এইটা অবশ্য ফাও মারলাম! কচুরীপানা গবাদি পশুর জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর, সেটা জানিনা।) যাই হোক, যত বেশি টাকার প্রজেক্ট, তত বড় অঙ্কের দুর্নীতি। সরকারী অফিসাররা কোটি কোটি টাকার যন্ত্র কেনা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করতে পারেনা। আফসোস!

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

হিমু এর ছবি

না রে ভাই, কচুরিপানা যথার্থ সমস্যা। কচুরিপানা দিয়ে আপনি খাটপালঙ্ক-জ্বালানি-কাগজ যা-ই বানাতে চান না কেন, আগে তো জিনিসটা এক জায়গায় জড়ো করতে হবে। সেটা খুব ঝামেলার কাজ।

কাপ্তাই হ্রদের তীরে কোথাও একটা সরকারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা গেলে সেখানে হ্রদের কচুরিপানা সরিয়ে এনে ফেলা যেতে পারে। কেউ যদি বেসরকারি উদ্যোগ নেয়, তাহলে কচুরিপানা তার কাছে কিছু মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করা যেতে পারে, এতে হয়তো হারভেস্টারের রানিং কস্ট উঠে আসবে। আরো ভালো হতো যদি স্থানীয় লোকজনকে কচুরিপানার বিনিময়ে কিছু টাকা দেয়া যেতো, কিন্তু সেটা সম্ভবত কস্ট এফেক্টিভ হবে না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।