ক্যামেরাবাজির চাপাবাজি

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: সোম, ২৭/০৪/২০০৯ - ৮:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছেলেবেলা থেকেই ক্যামেরাবাজির খুব শখ ছিল। ক্লাস এইটে পড়ার সময় বাবা একবার বিদেশ থেকে আসার সময় একটা ক্যামেরা নিয়ে আসে। জীবনে প্রথম হাতে নেয়া সেই ক্যামেরাটা ছিল একটা Yashica Electro35. সেই বয়সেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম বেশ কিছু চমকদার শট তুলে। বাবা তার ছেলের প্রতিভায় মুগ্ধ হলেও ক্যামেরাবাজির কারনে পড়াশোনা গোল্লায় যাবার অজুহাতে ক্যামেরাটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন নিউমার্কেটের চারতলার ইলেক্ট্রনিকস দোকানে। আমাকে বোঝালেন- এই ক্যামেরাটা ম্যানুয়াল, সামনে আধুনিক-অটোমেটিক ক্যামেরার যুগ আসছে, সেখান থেকে একটা কিনে দেবো। ছেলে ভোলানো কথা, জীবনেও দেবে না জানি। তা বুঝেও জি আচ্ছা করলাম নিরুপায় হয়ে।

কয়েক বছর পর একদিন সত্যি সত্যি আরেকটা ক্যামেরা কিনে দেয়া হলো আমাকে। আমি তো রীতিমত অবাক। কেউ কেউ তাহলে কথা রাখে? এবারের মডেল RICOH AF-5 । আধুনিক, অটোমেটিক, অটো ফোকাস। সবকিছু অটো। কিচ্ছু করার দরকার নাই। এক ক্লিকেই খেল খতম। তাকাও আর ক্লিক মারো। ফোকাস এডজাষ্টের কোন ফ্যাকড়া নাই। এরকমই তো চাচ্ছিলাম। এটা পেয়েই আমি খুশীতে বাগ বাগ। সহজ একটা ক্যামেরা। তবে একটা সমস্যা হলো ক্যামেরাটা অ্যালকালাইন ব্যাটারী দিয়ে চালাতে হয় যার দাম অনেক বেশী।

অনেক পরে বুঝেছি প্রথম Yashica ক্যামেরাটা কি জিনিস ছিল। কিন্তু কী উপায়। যতটুকু পারি আবজাব ফটো তুলে চালাতে থাকি RICOH দিয়ে। খারাপ না, তবে জুম নেই বলে একটু আফসোস লাগতো। সাদাকালোর প্রতি একটা অবসেশান ছিল, শুনেছিলাম বড় ফটোগ্রাফার হতে হলে সাদাকালো ছবি তুলতে হবে। ২০-৩০ টাকায় সাদাকালো ফিল্ম কিনে দেদারসে তুলতে লাগলাম। তারপর এলো ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ভয়াবহ হারিকেনের আঘাত। আমাদের বাড়ীর টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে আরো অনেক আসবাবের সাথে ক্যামেরা এবং ফিল্মগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিল নিমেষে। শত শত ছবি নষ্ট হয়ে গেল, ডজনে ডজনে ফিল্মের ফিতা। ক্যামেরা গেছে সেজন্য আফসোস নেই। কিন্তু ফিল্মগুলোর জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল। এরপর ছেড়েই দিলাম ক্যামেরাবাজি। বছর দশেক আগে অফিসের কাজে কোরিয়া গিয়ে স্যামসাং এর ক্যামেরা কিনেছিলাম একটা। সেটা শুধুই পারিবারিক ছবি তোলার জন্য। ফটোগ্রাফির স্বপ্নটা আর জাগতে দেই নি। ছবি তোলার সময় নেই, ক্যামেরা কিনে কী লাভ? পেশাগত ব্যস্ততায় সৌখিনতা ঢাকা পড়লো।

ক্যামেরা কেনার সৌখিনতা ঢাকা পড়লেও ইন্টারনেটে বসলে ঘুরে ঘুরে ক্যামেরাবাজ ও ক্যামেরাবাজীর আলোচনা পড়তে ভালো লাগতো। একদিন ব্লগবাজি করতে গিয়ে সচলে ক্যামেরাবাজির গন্ধ পেলাম। দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর সুযোগ পেয়ে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লাম। মাহবুব ভাইয়ের লেখাগুলো আবার শিখতে ডাকলো। মোতাহার ভাইয়ের ক্যামেরাবাজি ক্লাসে প্রথম ডাকেই বসে গেলাম।

শেখার তো কোন বয়স নেই। যখন ক্যামেরা ছিল তখন ক্যামেরাবাজি শেখার সুযোগ ছিল না, কেবল তাক করেছি আর ক্লিক মেরেছি। এখন ক্লিক মারার সুযোগ কম তত্ত্ব শেখার সুযোগ বেশী। তবু সুযোগ পেলেই ক্লিকাবো এই ধান্ধায় পরিচিত ক্যামেরার দোকানে গিয়ে বললাম, আমার বয়সে সহনীয় একটা ক্যামেরা দিতে যাতে অনেক দুরে দুরে তাক করা যায়। ছোটাছুটি কম করে বেশী ক্লিকানোর ফন্দী।

ইন্টারনেটে NIKON D60 সম্পর্কে পড়ে ধারনা করেছিলাম ওটাই কিনবো। DSLR ছাড়া ক্যামেরাবাজী পোষাবে না। কিন্তু পরিচিত দোকানী আমার পেশা-লাইন-ঘাট-অভিজ্ঞতার আদম সুরত সম্পর্কে ধারনা রাখে। সে বললো NIKON D60 আপনারে মানাবে না। আপনার দরকার 'সহজ-অটোমেটিক-আধুনিক-ডিজিটাল'। সেই পুরোনো কাহিনী যা আমার বাবা ২৮ বছর আগে শুনিয়েছিল। এখন শুধু বাড়তি যোগ হয়েছে 'ডিজিটাল'।

SONY H5Oটা আমার হাতে তুলে দেয়া হলো। বোঝানো হলো এর গুনগান। কেনাকাটার ক্ষেত্রে আমাকে কনভিন্স করা খুব সহজ। সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারলে যে কোন চাপাবাজি দিয়ে আমাকে সহজেই কুপোকাত করা যায়। দোকানীর সাথে তর্ক করার সাহস পেলাম না। বাবার 'অটোমেটিক' বানী যেমন মেনে নিয়েছিলাম, সেরকম দোকানীর 'ডিজিটাল' বানী মেনে নিয়ে SONY H5O নিয়ে বাসায় চলে এলাম।

বউকে গম্ভীর সুরে বললাম, "মেয়ে বড় হচ্ছে, আগামী বছর স্কুলে দিতে হবে। ফটোগ্রাফার বানাবো ওকে, তাই এখন থেকে ক্যামেরা সম্পর্কে আইডিয়া.................।" কথা শেষ করার আগেই বউ উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। আশ্চর্য মহিলা, আমি কি চাপা মারছি নাকি!

সচলের ক্লাসরুমে এসে ভাবছি কাজটা কি ঠিক করলাম?


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা .. আপনাকে এত সহজে 'অটোমেটিক্যালি' বাগে আনা যায় হাসি তা ছবি কৈ?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ছবি তোলার সময় কই? আগে ক্যামেরাকে বশ করি! তত্ত্বপাঠ চলছে।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রণদীপম বসু এর ছবি

ক্যামেরায় ক্লিক কইরা দেখছেন তো, ছবি উঠে নি ? মনে হয় না ! নাকি আমিই কানা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ছবি উঠে রন'দা। কালরাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে তত্ত্বপাঠ করতে করতে নানান এক্সপোজার রেটে ছবি তুলছি। কিন্তু ছবির সাবজেক্ট বিদঘুটতম বলে এখানে দেয়া গেল না। সাবজেক্ট ছিল আমার ডানপায়ের বুড়ো আঙুল।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

হা হা আপনারও ইয়াশিকা ছিল তাইলে। আমার এখনো পেট পুড়ে সেই মডেলটার জন্য। লেন্সের উপর দিকের ক্ষুদে একটা মাথা বেরুনো থাকতো এডজাষ্ট করার জন্য। বাবার নিষেধ ছিল ওটা না নাড়ানোর জন্য।

তৌহিদভাইয়ের ছবিগুলো দেখলাম, আসলেই অসাধারন ছবি তুলেছেন। ক্যামেরার মডেলের চেয়েও ক্যামেরার পেছনের মানুষটার কারিশমাই শক্তি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মূলত পাঠক এর ছবি

বাঃ, এবার ঝটপট ছবি তুলে পোস্টাতে থাকুন। সময় নেই এটা একটা অজুহাত হলো?

উজানগাঁ এর ছবি

ঝটপট ছবি তোলা শুরু করেন আর আমাদের চমকে দিন ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।