সি.এন.জি.র মূল্যবৃদ্ধি, সাবওয়ের পরিকল্পনা ... ধোঁয়া ওড়া মাথার চান্দি

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৪/২০০৮ - ৩:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সরকার সি.এন.জি.'র দাম বাড়িয়েছে আজ থেকে। কারো জানা না থাকলে আজকের কোন দৈনিকে চোখ বুলালেই বিস্তারিত জানবেন। আমার তো সরকারী বাহন নাই, তাই ভাড়া গাড়িতেই যাতায়ত করি ..

কী হবে:

আমার বাসা থেকে অফিস যেতে সবুজ সি.এন.জি.তে মিটারে সাধারণত ৬০-৭০ টাকা উঠতো। বেশি ভীড় থাকলে ৯০ টাকা পর্যন্তও উঠেছে। মিশুকওয়ালারা সবসময়ই ৮০-১০০ টাকা ভাড়া চাইতো ... মিটার -- আবার জিগায়। তাই সাশ্রয় এবং আরামের জন্য সবুজ সি.এন.জি কিংবা কালো/নীল ক্যাবে যাতায়ত করতাম।

এখন মনে হচ্ছে আবার মিশুকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তা' নাহলে বাস। একান্তই নিরূপায় হলে শয়তানের দ্বিচক্রযান। চোর-ছ্যাচ্চোড়ের স্বর্গভূমি ঢাকাতে চার চাকার জিনিষ কেনার এবং চালানোর যোগ্যতা এখনও হয় নাই।

সাবওয়ে .. হেঃ হেঃ

পৃথিবীতে আধুনিক কোন শহর ট্রেন/ট্রাম, সাবওয়ে বা স্কাইট্রেন ছাড়া আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো কেউ শখ করে বানায়নি। যানজট কমাতে এবং খরচের দিক দিয়ে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা বলেই প্রারম্ভিক বিশাল খরচ বহন করে এগুলো বানানো হয়। আমাদেরও যানজটক্লিষ্ট ঢাকা শহরেও mass public transport অর্থাৎ ট্রেন দরকার। আমাদের সরকার এদিকে এ্যাতদিন নজর দেয়নি মূলত দুটো কারণে।

  • শর্ষেতে ভুত আছে। সরকারি অনেক আমলা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাস/ট্রাক/সি.এন.জি/টেম্পু/লেগুনা ইত্যাদির ব্যাবসা রমরমা থাকবে না। কাজেই জনগন জাহান্নামে যাউক অসুবিধা নাই ... ব্যাবসা বলে কথা। নেতাদের ব্যাবসা রক্ষার খাতিরেই রাস্তাঘাট চকচকে করার জন্য যে ঢালাও বাজেট বরাদ্দ; রেলওয়ের পেছনে তাঁর ভগ্নাংশও নাই। (রেলওয়েতে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছে এই কথা ... অবশ্য সেটা আন্তনগর লাইনে মালগাড়ি চালানোর প্রসঙ্গে: প্রতিটি কার্গো ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসলে নেট লাভ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। তাই সেটা বন্ধ করে শুধুমাত্র লাভহীন যাত্রীসেবা দিচ্ছে ... ট্রাক ব্যাবসাতো আর লাটে উঠতে দেয়া যায় না .. হেঃ হেঃ)

  • মাথামোটা এবং নির্বোধ কিছু গর্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় শিকড় গেড়ে বসেছে। বিশেষজ্ঞরা হাজার মাথা কুটলেও সহজ সমাধান ওদের মাথায় ঢুকবে না। আর ঢুকলেও পরবর্তী কার্যক্রম চালানোর দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস নাই ... শুধু শুধু আবার মানুষের হাস্যষ্পদ হওয়ার চেয়ে যা আছে তাই ভাল।

ইদানিং পত্রিকায় দেখলাম সরকার বলেছে যে, ঢাকা শহরে যানজট কমানোর জন্য পরিকল্পনা আছে ট্রেনের তবে সেটা মাটির তলা দিয়ে হবে। খবরটা পড়ে আমার ক্ষুদ্র অনভিজ্ঞ মস্তিষ্কে খটাশ করে একটা পোকা কামড় দিল ... সরকারের কি উচ্চতাভীতি আছে যে স্কাইট্রেন না করে মাটির তলার সাবওয়ে পছন্দ?!

স্কাইট্রেন না হয়ে সাবওয়ে হলে কী হবে ...

  • যতদুর জানি টানেল-কাটার বলে যন্ত্র দেশের নির্মান শিল্পের ঠিকাদারদের কাছে অজানা বস্তু। সুতরাং আবার চলবে খুড়াখুড়ি। আগামী ১০ বছরের জন্য খানাখন্দকের কাঁদা-ধুলোয় চলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে জনগণকে।
  • বন্যাপ্রবণ এলাকায় মাঝে মাঝেই লঞ্চডুবির মত বানের পানিতে ডুবে ট্রেনযাত্রীদের প্রাণ যাবে .... এটা অসম্ভব কিছু না।
  • যেহেতু স্কাইট্রেনের চেয়ে সাবওয়েতে খরচ বেশি কাজেই কর্তাব্যক্তিদের পকেটে লাভের ভাগ বাড়বে।
  • বিদ্যূৎ সংকটের কারণে মাঝে মাঝেই কবরে থাকার অনুভুতি হবে। ভুয়া মোল্লাদের দাপট বাড়ার একটা সম্ভাবনা আছে।

স্কাইট্রেনকে কেন সাবওয়ের চেয়ে পছন্দনীয় মনে হয়:

  • আগেই বলেছি, স্কাইট্রেনের অবকাঠামোগত খরচ সাবওয়ের চেয়ে যথেষ্ট কম।
  • স্কাইট্রেনের কাঠামোতে কিছুটা বিদ্যূৎ কম খরচ হবে। কারণ দিনের বেলায় বাইরের আলো স্টেশনগুলোকে আলোকিত করে রাখবে অনেকাংশে।
  • স্কাইট্রেন করার জন্য অবকাঠামো প্রযুক্তি দেশের নির্মাণশিল্পের আয়ত্বে। যেখানে নদীর পানির মধ্যে ব্রীজ করে, সেখানে শুকনার উপরে উচু অবকাঠামো করা কি অদেখা টানেল-প্রযুক্তির চেয়ে অধিকতর কঠিন মনে হয়?

আসল কারণ সম্ভবত, অবাস্তব ও বেকুবি সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে প্যাঁচে ফেলা যেন, সেই জনদরদী দেশনেতা ও আমলা মালিকানাধীন পরিবহন বাণিজ্য বাঁধাগ্রস্থ না হয়।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আমি নাজমুল হুদার ম্যাগনেটিক ট্রেনের প্রস্তাবে ফিরে যাবার জন্যে কর্তাদের আহ্বান জানাই। ওতে খরচ আরো বেশি, পকেট আরো ভারি করা যাবে।

তবে তেজগাঁ বিমানবন্দরের রানওয়ের নিচ দিয়ে একটা টানেল করে দিয়ে ফার্মগেট-আগারগাঁও সড়কের সাথে এয়ারপোর্ট রোডের একটা সংযোগ করা হলে প্রচুর তেলগ্যাসের খরচ বাঁচতো লোকজনের।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শামীম এর ছবি

হুমম.. তেজগাঁর ঐটা ছাড়াও উত্তরা থেকে বর্তমান রানওয়ের শেষমাথা ঘেষে মীরপুর পর্যন্ত একটা সংযোগ সড়ক করলে এয়ারপোর্ট রোড তথা বিজয় স্মরণীর উপর চাপ অর্ধেকে নেমে আসবে। রানওয়ে বরাবর রাস্তাটা মাটির তলাতে হলে ভাল হয় কারণ রানওয়ে নাকি আরও দেড় কি.মি. বাড়াবে।

আমার কলিগ, বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত অবস্থায় ডেটা সংগ্রহ করেছিল যে এয়ারপোর্ট রোডে চলা ৭০% গাড়ীই বিজয় স্মরণীতে মোড় নেয়।

ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে উঁচু বেড়া দেয়া উড়াল-রাস্তাও করা যেতে পারে; ক্যান্টনমেন্টের প্রাইভেসীতে কোন বামহাত না দিয়েই যাত্রীদেরকে সরাসরি বনানী থেকে ক্যান্টনমেন্ট পার করে অন্যপাশে নামিয়ে দেবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

শহরের মদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট রাখারও কোন কারণ দেখি না, ক্যান্টনমেন্ট সরানোটা এখন ফরজ কাজ হয়ে গেছে, শহরের মাঝখানে এত বড় একটা এরিয়া আটকায়ে রাখার কোন যুক্তি নাই।

শামীম এর ছবি

ছোটবেলায় ভাবতাম, কোন আক্কেলে এয়ারপোর্টটা শহর থেকে এত দূরে বানিয়েছে! আর এখন দেখুন, ওটা শহরের মাঝে হয়ে গেছে।

ক্যান্টনমেন্টও তাই ছিল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ফিফথ এলিমেন্টের মতো উড়ন্ত ট্যাক্সি দিলে ভালো হয়।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

শামীম এর ছবি

যা বলেছেন।

উড়ন্ত ট্যাক্সি না দিলেও জেটপ্যাকের-ও ব্যবস্থা করা যেতে পারে চোখ টিপি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

বিপ্রতীপ এর ছবি

সবকিছুর দাম বাড়ছে সিএনরজি'র দাম না বাড়াটা কেমন হয়ে যেতো না ...ব্যাপার না...এখন ভাতের বদলে আলু খাবার পরামর্শ দেয়া হয়, পরে ট্যক্সিক্যাবের বদলে হাঁটার পরামর্শ দেয়া হবে চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

শামীম এর ছবি

কিলোমিটার প্রতি যে ভাড়া সেটাতো শুধু জ্বালানী খরচ নয়, এর সাথে আছে চালকের প্রতিদিনের লাভ/আয়ের অংশ আর মালিকের লভ্যাংশ (৭০০ টাকা/প্রতিদিন) - যেটাতে ডেপ্রিসিয়েশন বা গাড়ির মূল্যহ্রাসটা অন্তর্ভুক্ত আছে।

তাই জ্বালানী মূল্য দ্বিগুণ হলেই কি.মি. প্রতি ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার কোন কারণ দেখি না। ৬.৫০ টাকা/কি.মি. এর স্থলে বড়জোর ৮টাকা/কি.মি হতে পারে।

গতকাল (শুক্রবার) বের হইনি। সকালেই যাত্রাপথে আসল ঘটনা জানতে পারবো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।