হারিকেন, ফুটবল, ও কিছু মানুষের কথা - ১

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১০/২০০৭ - ১২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
একবিংশ শতাব্দিতে আমেরিকার সামাজিক-রাজনৈতিক মানসে দাগ কেটে যাওয়া ঘটনাগুলোর একটি একদম সামনে থেকে দেখার ভাগ্য হয়েছিল আমার। ২০০৫ সালের অগাস্ট মাসে, লুইজিয়ানায়। হারিকেন ক্যাটরিনা দেখেছি আমি। অধিকাংশ লোকের চোখ কপালে তুলে দেবার জন্য এটুকু বক্তব্যই যথেষ্ট, কিন্তু আমার নিজের মনে একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। আমার জীবনের সবচেয়ে গভীর অভিজ্ঞতাগুলোর একটি ছিল হারিকেন ক্যাটরিনা-পরবর্তী সময়টায় আমেরিকার রূপ দেখা। আমার বিবেচনায়, তাৎপর্যের দিক থেকে ক্যাটরিনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেক উপরে, ডিপ্রেশনের সমমাপের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাছাকাছি, ভিয়েতনামের বেশ খানিকটা নিচে, গর্ভপাত বৈধ করার রো-ভি-ওয়েড রুলিঙ্গের একটু উপরে, নাইন-ইলেভেনের চেয়ে অবধারিতভাবেই পেছনে, ইরাক যুদ্ধের সামান্য একটু উপরে, এবং পামেলা অ্যান্ডারসনের নিরাভরন ঊর্ধ্বার্ধ ও ব্রিটনি স্পিয়ার্সের নির্নেংটি নিম্নার্ধের মাঝামাঝি। তালিকা দেখে অনেকের মনেই খটকা লাগতে পারে। আমার ক্রমের সাথে দ্বিমত পোষন করতে পারেন অনেকেই। আপাত দৃষ্টিতে এলোমেলো এই তালিকার পেছনের চিন্তাগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে মূল পর্বে যাচ্ছি।

মনের আধিক্য মানেই মতের আধিক্য, আর মতের আধিক্য মানেই মতের অমিল। বাল্মীকির মত নিজের মনে সত্য রচবার স্বাধীনতা সব মানুষেরই আছে। তবু স্বাধীন চিন্তাও অভিজ্ঞতার আলোকে প্রভাবিত হয়। একই অভিজ্ঞতার ভাগিদার মানুষেরা সাধারণত একই রকম চিন্তা করে। সব জাতিরই তাই কিছু সাধারণ আনন্দ বা সাধারণ ঘৃণা থাকে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বিশ্বের অপরাপর দেশগুলো একই ভূ-খণ্ডের একই আলো-হাওয়ায় একই ভাষায় কথা বলে গোত্র থেকে গোষ্ঠি, গোষ্ঠি থেকে জাতি, জাতি থেকে দেশ হয়েছে। রাজা হলে এক সাথে শাসন করেছে, প্রজা হলে এক সাথে সেবা করেছে। অনেক অস্বাভাবিকই তাই সামষ্টিক চর্চার ঘাড়ে চেপে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমেরিকায় তেমনটি হয়নি। আমেরিকা যত না দেশ, তার চেয়ে রাষ্ট্র বেশি। এখানে ভিন্ন ভিন্ন জাতির সম্মিলনের কারণে হরেক রকম চিন্তা, মূল্যবোধ, ও জীবনধারার প্রত্যক্ষ ও আগ্রাসী মিথষ্ক্রিয়া হয়েছে। সভ্যতার সীমা বজায় রাখার চেষ্টার মাঝেও বিন্দু বিন্দু করে জমে থাকা সমস্যাগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে সময়ে সময়ে। বিগত শতবর্ষের উল্লেখযোগ্য ঘটনার এই ছোট তালিকার প্রায় সবক’টিই এরকম একটি বিস্ফোরণ প্রত্যক্ষ করেছে। মিল বলতে এটুকুই। বিস্ফোরণের ধরণ বিবেচনা করলেই তফাৎগুলো চোখে পড়বে।

২.
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল একটি অপ্রয়োজনীয় অথচ অবধারিত সংঘাত। এতে আমেরিকার অংশগ্রহণ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এই যুদ্ধ মানুষকে শিখিয়েছিল পরের জমি মেরে খাবার ইচ্ছে যতই থাকুক না কেন, নোংরা রকম প্রকাশ্য খাবলা-খাবলি করার দিন শেষ। এক গরু একাধিক ক্রেতার কাছে বেচতে নেই, এটাও জানা হয়ে গিয়েছিল সবার। আমেরিকার এসব ঝামেলা ছিল না। ইউরোপের ছিল, তাই ইউরোপ শিখেছিল। আমেরিকার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল একটা পিকনিক-ওয়ার।

অর্থনীতিতে মহামন্দা অনেক ভুগিয়েছিল আমেরিকাকে। এর মূলে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপিয় দেশগুলোর কাছে গচ্ছিত অর্থ ফেরত না পাওয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধকলটা মানুষের চেয়ে প্রকৃতির উপর দিয়ে গিয়েছিল বেশি। বিচিত্র রকম বিষাক্ত গ্যাস আর পরিখার যুগল আক্রমণে আবাদি জমিগুলোর অবস্থা জেরবার হয়ে যাওয়ায় ইউরোপের কৃষিব্যাবস্থা ধসে পড়েছিল। ডিপ্রেশন থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছেন আমেরিকার নীতি-নির্ধারক ও অর্থনীতিকরা। সাধারণ মানুষের কাছে রুটি-রুজির কষ্টের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না সেই সময়টুকু। মহামন্দা এসেছিল বলেই আমেরিকা মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসারকের ভূমিকার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও অনেক ধরনের সমাজতান্ত্রিক দীক্ষা আত্মস্থ করেছিল। এই পরিবর্তনটুকুই আমেরিকাকে ক্রমে শক্তিশালী করেছে, অপর দিকে অকারণ গোঁয়ার্তুমি সোভিয়েত রাশিয়ার খোল খালি করেছে প্রতিদিন একটু একটু করে। সমাজতন্ত্রের শেষের সূচনা তাই পতনের ষাট বছর আগেই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল বহির্বিশ্বের সাথে আমেরিকার প্রথম পরিচয়। প্রচারযন্ত্র যা-বলে বলুক না কেন, আমেরিকার যুদ্ধ নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে ছিল না। আদর্শ তো নয়ই, নিরাপত্তাও খুব একটা বড় দুশ্চিন্তা ছিল না আমেরিকার জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ানো পরাশক্তিগুলোর উদ্দেশ্য ও কারণ অভিন্ন ছিল না কোন পর্যায়েই। ফ্রান্স ও ব্রিটেন মূল্য দিয়েছিল জার্মানিকে অপরিমেয় মাত্রায় অপমান ও শোষন করার। পোল্যান্ড স্রেফ জান বাঁচানোর জন্য লড়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন লড়েছিল আদর্শ আর আত্মরক্ষার এক সংকর কারণে। ইটালি চেয়েছিল আগেরবার বখরা না পাবার শোধ তুলতে। জার্মানির সাধারণ মানুষ অপমানের বদলা নিতে বদ্ধ উন্মাদ এক নেতার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। জাপানের অবস্থা আরো খারাপ ছিল। জার্মানরা তবু নিজেদের অন্য জাতির চেয়ে উন্নত মনে করতো, জাপানীরা ভাবতো তারা প্রত্যেকে ইশ্বরের দূত, তাদের রাজা ইশ্বরের মনুষ্যরূপ, ইত্যাদি। আমেরিকার এরকম কোন ঝুট-ঝামেলা ছিল না। বিশ্বশান্তি তার কাছে যত না কামনা, তার চেয়ে উপলক্ষ্য ছিল বেশি। তবে এই যুদ্ধ আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও নারীদের মুক্ত করে দিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে নারীমুক্তি পিছিয়ে যেত আরো অনেক বছর, ভারতবর্ষ পরাধীন থাকে আরো কয়েক দশক। দুই মহাসাগরের বেষ্টনির আড়ালে আমেরিকার কিন্তু তেমন কোন ক্ষতি হয় না।

আমেরিকার ইতিহাসে ভিয়েতনাম অনেক বড় একটি ঘটনা। আমেরিকা এর আগে কখনো পরাজিত হয়নি। দেশ, চিন্তা, আর স্বাধীনতা রক্ষায় সামান্য চাষা-ভুষারাও কী প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, এটা ছিল কল্পনাতীত। হাজারে মরলে লাখে ফিরে আসবো, লাখে মরলে কোটিতে, এরকম ধনুর্ভঙ্গ পণ আমেরিকা দেখেনি কখনো। অভ্যস্ত পথ আর পরিচিত আয়াস থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপার আমেরিকার ইতিহাসে আগেও একবার ঘটেছিল। দাসপ্রথার বিলুপ্তি ও গৃহযুদ্ধের সময়। দক্ষিণের আপত্তিটা আয়াসের কারণে ছিল বলেই রক্তক্ষয় হলেও আদর্শিক ঐকমত্য মেনে উত্তরণ করা গিয়েছিল সেই বিভেদ। ভিয়েতনাম থেকে সরে আসার প্রশ্নে তাই অনেক বেশি অহম জড়িত ছিল। পরাজয়ের তিক্ততাই এই যুদ্ধের একমাত্র শিক্ষা।

সুপ্রিম কোর্টের রো-ভার্সেস-ওয়েড রুলিং সত্তরের দশকে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ করেছিল। ইশ্বর বনাম অধিকার, প্রাণ বনাম ব্যক্তিস্বাধীনতা, ইত্যাদি অনেক আঙ্গিকে উঠে আসে সেই মামলার রায়। এই প্রথম মুখ্য ক্ষমতার অধিকারী ককেশিয় শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়েছে আমেরিকায়। এই বিবাদে প্রতিপক্ষ রক্ত-মাংসের হলেও উপলক্ষ্য ঐশ্বরিক। লাল-নীলের রাজনীতির দড়ি টানাটানিতে একেক আমলে একেক দিকে যায় এই রায়ের অনুবাদ। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে গত চার দশকে। সমকামিতা ও সহবাসের মত গুরুতর ধর্মধ্বংসী আচরনের দাপটে চাপা পড়ে গেছে গর্ভপাত।

রইল বাকি নাইন-ইলেভেন ও ইরাক যুদ্ধ। নাইন-ইলেভেন যেন ভিয়েতনামের দ্বিতীয় অধ্যায়। আগের বার আমেরিকার ধবল পুচ্ছ লোহিত হয়েছিল দেশের সীমানার বাইরে। এবার নিজের দেশে, রাজধানির আঙ্গিনায়। অহমের সাথে এবার যোগ হয়েছে ভয়। কী থেকে কী হয়ে যায়, কোন জুজু কোন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে, এই ভয়ে কম্পমান এ-দেশ। ভয় থেকে দিনে দিনে উৎসারিত হয়েছে অবিশ্বাস, অন্ধকারের কাছে আত্মা সঁপে দিয়ে সবাই স্বাধীনতার দামে নিরাপত্তা কিনছে। দীর্ঘ সোয়া দুইশ’ বছরের ইতিহাসে অনেক টানাপড়েনের মাঝেও আমেরিকার তার মূলনীতিগুলো ধরে রেখেছে। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থপতি-পিতারা যেভাবে সংবিধান রচে গেছেন, তা থেকে বিচ্যুত হয়নি এ-দেশ একবারের জন্যও। মৌলিক অধিকার, মানবতা, চিন্তা ও বক্তব্যের স্বাধীনতা, প্রত্যুত্তর বাদে অন্য কারণে সামরিক হামলা না চালানো, ইত্যাদি সব বদলে গেছে।

ইরাক সেই তুলনায় পানি-ভাত। স্রেফ একটা বিরক্তি। দেশের উপর, শাসনযন্ত্রের উপর, বিদ্যমান রাজনৈতিক চল গুলোর উপর। রক্ষণশীলতা আর ধার্মিকতার মূলা দেখিয়ে দুই বার নির্বাচিত এক অযোগ্য রাখাল বালক ও তার অতি-চালাক সাঙ্গপাঙ্গের তেলের সন্ধানে জান-মালের অপচয় ছাড়া কিছুই না এটা। কেউ বলে মিলিটারি বসে ছিল দেখে মোবিলাইজ করা হল, কেউ বলে সাদ্দাম গোপন কথা ফাঁস করে দেবে বলে মেরে ফেলা হল, কেউ বলে ইরাককে মুক্ত করা হল, কেউ বলে ইসরায়েলকে শক্ত মাটি দেওয়া হল, কেউ বলে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানো হল, কেউ বলে অযথা অপচয় করে দেশটার বারোটা বাজানো হল। সাধারণ মানুষের কাছে পুরোটাই একটা বিশাল তামাশা।

ক্যাটরিনা এ-সব বিবাদ-বিভেদের চেয়ে ভিন্ন। এই প্রথম আমেরিকা বিভক্ত হয়েছিল নিজের মধ্যে। এই প্রথম প্রতিপক্ষ অন্য কেউ নয়। এই প্রথম উপলক্ষ্যও অন্য কেউ নয়। এই প্রথম একজন আমেরিকান আরেকজন আমেরিকানের দিকে তাকিয়ে বলেছে, তোমার আছে বলেই আমার নেই, তুমি দাওনি বলেই আমি পাইনি, তুমি কেড়ে নিয়েছো বলেই আমি হারিয়েছি, তুমি তাকাওনি বলেই আমি অসহায়।

(চলবে)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একটানে পড়লাম। চলুক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হায় হায়, এমন জায়গায় এসে থেমে যেতে হয়? হাসি
তাড়াতাড়ি লিখুন ক্যাটারিনা নিয়ে আপনার সচক্ষে দেখা অভিজ্ঞতা ,,, মিস করতে চাচ্ছিনা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

চলিয়ে যান। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পড়ছি। দারুণ হচ্ছে!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

রাত বেশি হয়ে গিয়েছিল বলে থেমে যেতে হয়েছিল। চেষ্টা করবো যত দ্রুত পারি বাকিটা তুলে দিতে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ইশতি,
ইন্টারেস্টিং লাগলো। পোস্ট-ভিয়েতনাম আমেরিকাতে ক্যাট্রিনা একটা বিশাল ঘটনা সন্দেহ নাই। কিছু কমেন্ট জুড়ে দিলাম -

- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পুরোটাই ইউরোপে সংঘটিত। আমেরিকার ভূখন্ডে কিন্তু কোন যুদ্ধই হয়নি। পরিখা বা কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ারও হয়নি। মার্কিন সৈন্যরা ইঊরোপে অনেক গ্যাস খেয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার আবাদী জমিতে কিছু হয়নি।

- গ্রেট ডিপ্রেশানের অনেক কারন ছিল। অর্থনীতির পরিভাষা সব মনে নেই, তবে এই লিঙ্কে গ্রেট ডিপ্রেশানের নানাবিধ কারনের চমত্‌কার এনালাইসিস পাবেন। ইউরোপের সাথে লেনদেন বেশ গৌণ কারন ছিল।

- গ্রেট ডিপ্রেশান আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে ক্যাট্রিনার যে তুলনাটি দিয়েছেন, তার সাথে একটু দ্বিমত জানাচ্ছি। প্রথম দুটি একটু পুরাতন হয়ে গেছে তাই হয়তো তাদের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে গেছে এখন। কিন্তু মার্কিন জাতিচরিত্রে, তাদের ইতিহাসে, রাজনীতিতে, সমাজবিন্যাসে, আন্তর্জাতিক পদমর্যাদায়, সাহিত্য-সংস্কৃতি, এসব কিছুতে তাদের যে ছাপ তার পরিমাপ করা সহজ নয়। ১৮৬০-৬৫'র সিভিল ওয়ারের মতোই জাতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত ঘটনা এগুলো। এই দুটি বিষয়ে যত লেখালেখি হয়েছে, খালি সেগুলো সংগ্রহ করলে লাইব্রেরীর পর লাইব্রেরী ভরে ফেলা সম্ভব। ক্যাট্রিনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এদের সমমাপের হবে না বলেই মনে হয়। সময় পেলে ডিপ্রেশান নিয়ে লেখা জন স্টাইনবেক'এর উপন্যাস The Grapes of Wrath পড়ার অনুরোধ রইলো। আরেকটা পড়ে দেখতে পারেন - লিন্ডন জনসন-এর তিন খন্ডে জীবনী - Robert Caro'র লেখা। অনেক কিছুই পড়া বাকি আছে, কিন্তু বিংশ শতাব্দীর আমেরিকা নিয়ে এর থেকে ভাল বই বোধ করি খুব বেশি লেখা হয়নি।

P.S. পোস্ট-ভিয়েতনাম অংশটুকুও পড়লাম। 'এই প্রথম আমেরিকা বিভক্ত হয়েছিল নিজের মধ্যে।' - এই সূত্রে ১৮৬০-৬৫'র গৃহযুদ্ধের কথা আসে। তারও একশো বছর পরে সিভিল রাইট্‌স আন্দোলনের কথা আসে। তার উপর উনিশ শতকের শেষ ভাগ আর বিংশ শতকের শুরুতে আমেরিকার শ্রম আন্দোলনের কথাও স্মরণীয়। এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, কিন্তু সে সময় শ্রেণী সংগ্রাম মার্কিন জাতি-ভাবনায় একটা বিরাট অংশ জুড়েছিল। একদিকে পুঁজি, আরেক দিকে শ্রমিক। বলা বাহুল্য, শ্রমিকরা হেরে গিয়েছিল কিন্তু সেটা কত যুদ্ধ, কত স্ট্রাইক আর কত প্রাণ বিসর্জন দেয়ার পরেই'এই প্রথম একজন আমেরিকান আরেকজন আমেরিকানের দিকে তাকিয়ে বলেছে, তোমার আছে বলেই আমার নেই' - এমনটি আগেও ঘটেছিলো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মাথায় আছে আপনার কথাগুলো। পরের পর্বেই দেখবেন। এর বেশি লিখলে স্পয়লার হয়ে যায়!!

১ম বিশ্বযুদ্ধ/পরিখা নিয়ে ইউরোপের কথাই বলছিলাম। লেখাটা আরেকটু স্পষ্ট হতে পারতো। 'ইউরোপের' শব্দটা জুড়ে দিলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ।

অমিত এর ছবি

আমার মনে হয় আমেরিকার উপর সিভিল ওয়ার, ২য় বিশ্বযুদ্ধ আর ভিয়েতনাম যুদ্ধের যে প্রভাব, সেরকম কিছু ক্যাটরিনাতে হয় নি। যুদ্ধ কখনো বডিকাউন্টেই শেষ হয় না। দেশের অর্থনীতি, শিল্প , দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে এর প্রভাব দিয়েই বোঝা যায় এর ব্যাপকতা। সেইভাবে দেখতে গেলে উপরের তিনটা ঘটনা নিয়ে যে কাজ হয়েছে, যে জেনারেশনটা বেরিয়ে এসেছে, সামগ্রিক জীবনযাত্রায় যে পরিমাণ প্রভাব পরেছে, ক্যাটরিনাতে সে রকম কিছু হয়েছে কি ?
__________________________
suspended animation...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সম্পূর্ণ একমত। ঐ তিন সময়ের প্রজন্মগুলো সবকিছু থেকে আলাদা। ক্যাটরিনার প্রভাবটার ripple আরো কিছুদিন পর সব জায়গায় বোঝা যাবে। বিশেষ করে সমাজ ও অর্থনীতিতে। ক্যাটরিনা এক অর্থে স্রষ্টার আশির্বাদ -- এই হারিকেনের ধাক্কা আমেরিকার অর্থনীতিতে না লাগলে ইরাক যুদ্ধের যাবতীয় বেওয়াকুফি স্রেফ টাকার জোরে চাপা পড়ে যেত।

বিপ্রতীপ এর ছবি

রক্ষণশীলতা আর ধার্মিকতার রোধের মূলা দেখিয়ে দুই বার নির্বাচিত এক অযোগ্য রাখাল বালক ও তার অতি-চালাক সাঙ্গপাঙ্গের তেলের সন্ধানে জান-মালের অপচয় ছাড়া কিছুই না এটা ...................

বেশ ভালো লাগলো... পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দারুন! পরের পর্বের অপেক্ষায় - - -

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কিছু বিষয়ে দ্বিমত ছিলো, পড়ার সময়ই ভাবছিলাম। দেখলাম সুবিনয় মুস্তফী ও অমিত তার বেশিরভাগই উল্লেখ করেছেন। আপনিও পরের পর্বে এগুলোর ব্যাখ্যা দেবেন বলেছেন। সুতরাং অপেক্ষাই করি।

একটা জিনিস আলাদা করে উল্লেখ করা দরকার মনে হলো। আপনার উপস্থাপনার ভাষাভঙ্গিটি চমৎকার এবং মনোগ্রাহী। বিশ্লেষণের শক্তিটিও।

আমার লেখায় কাল আপনি যে মন্তব্য করেছিলেন (শেষাংশ) তা এখন ফিরিয়ে নিন। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

উহু, ঐ কথাটা শুধুই আপনার জন্য। এমনি এমনি বলা না ওটা। আসলেই ঐ পরিমান ভাল লেগেছে লেখাটা। প্রবাসের বইয়ে যোগ করে দিন। নইলে সুমন ভাইকে এক প্লেট কাচ্চি দেবো, অর্ধেক খাওয়া হলে প্লেট নিয়ে নেবো, এবং বলবো বাকিটা আপনার লেখা যোগ হওয়ার পর। চোখ টিপি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এসব উচ্চমার্গের কথাবার্তার মাঝে আমার নিম্নমার্গের মন্তব্য বড়ই বেমানান লাগবে। তাই আপাতত কিছু না বলে পরের পর্বের জন্য তুলে রাখলাম। (বলতে পারেন আপনার লেখার আমি একজন পাখা)।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ihop আজকে ৫০% ছাড়ে খাবার দিচ্ছে... হয়ে যাবে নাকি, পাখা? হাসি

পুরুজিত এর ছবি

লিস্ট থেকে পামেলা আর ব্রিটনিরে বাদ দিলা!!
ভালো হচ্ছে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

কই? পরের পর্ব কই? হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সিরাত এর ছবি

আরেকখান দারুণ সিরিজ।

আসলেই, পামেলা আর ব্রিটনি বাদ গেল কেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।