কোপার্নিকাসের দেশে -০৩

জীবনযুদ্ধ এর ছবি
লিখেছেন জীবনযুদ্ধ [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২২/০৫/২০১৫ - ৩:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


হাঙ্গেরির রাজকুমারী কিঙ্গার বিয়ের সবকিছুই ঠিক পোল্যান্ডের ক্রাকভের রাজকুমার বোলসলওয়ের সাথে, কিন্তু বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজকুমারী এক অদ্ভুত আবদার করে বসলেন তার পিতার কাছে। হিরে-জহরত, মনি-মাণিক্য কিছুই চাইনা তার। বরং বিয়েতে তার আকাঙ্ক্ষা এক মুঠো লবণ পিতৃ-প্রদত্ত উপহার হিসেবে পাওয়া। এতো কিছু থাকতে কেবল এক মুঠো লবণ? হ্যাঁ, সত্যিই তাই। কারণ রাজকুমারী জানে ভাবি শ্বশুরবাড়ির দেশ পোল্যান্ডে ওই বস্তুটির বড় অভাব। মেয়ের এই আবদারে রাজা তাকে উপহার দিয়ে বসলেন রাজার অধিকারে থাকা আস্ত এক লবণ খনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাজকুমারীর, একদিন সেই খনিতে সে হারিয়ে ফেললো বাগদত্তা হিসেবে রাজকুমারের কাছ থেকে পাওয়া এক হিরের অঙ্গুরি। বিয়ের পর স্বামীর সাথে সংসার করতে রাজকুমারী ক্রাকভে এলো বটে, কিন্তু তার মনে রয়ে গেলো সেই হারানো অঙ্গুরির কথা। একদিন বরকে রাজি করিয়ে রাজকর্মচারীসহ সে ছুটল সেই খনিতে, নির্দেশ দিল খনির পাথর খুঁড়ে যেতে যতক্ষণ না সেই হারান অঙ্গুরি মেলে। সেদিন সেই অঙ্গুরি তো পাওয়া গেলই, উপরন্তু খনির সেই অঞ্চলে মিলল কয়েক শত বছরের লবণের রসদ। হতে পারে এটি গালগল্প, আবার হতে পারে সত্যি কাহিনী, কিন্তু শত শত বছর ধরে ভিয়েলিচকা খনি নিয়ে এই কিংবদন্তিটি পোল্যান্ডের মানুষের মুখে মুখে। আর সেই বিখ্যাত লবণ খনিটি যদি না দেখেই ক্রাকভ থেকে বিদায় নেই, তবে এ শহরে পরিভ্রমণে আসা ষোল আনা না হলেও কয়েক আনা মিছে তো বটেই।

ক্রাকভে আছি আর মাত্র এক দিন, তাই ভাবলাম এ বেলা বেড়িয়ে পরি ভিয়েলিচকার পথে। এই খনিটি মূল শহর থেকে বিশ কি ত্রিশ মিনিটের পথ। হোস্টেলের ম্যানেজার মেয়েটির কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম ৮২০ নম্বর বাসে চেপে বসলে ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই পৌঁছে যাওয়া যায় লবণ খনিতে। সেই বাস-স্ট্যান্ডটিও আমার হোস্টেল থেকে বেশি দূরে নয়। যখন বাসে চাপলাম তখন আমি বাদে আর কেবলমাত্র কজন যাত্রী বাসে, কিন্তু কিছু দূর যেতে না যেতেই দেখলাম বাসে উপচে পড়ছে মানুষ। যারা উঠছে তারা মূলত তরুণ-তরুণী, তবে এরই মাঝে মলিন জামা পরা এক বৃদ্ধ উঠলেন। তখন আর বাসে তিল ধারণের স্থান নেই, তাই অগত্যা তাকে কাঁপা কাঁপা হাতে হাতল ধরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হল। ভেবেছিলাম হয়তোবা কেও উঠে গিয়ে তার স্থানটি বৃদ্ধের জন্যে ছেড়ে দেবে, কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম বৃদ্ধের দিকে কারও ভ্রুক্ষেপই নেই। কেওবা ব্যস্ত গান শুনতে, কেওবা বই পড়ায়, আবার কেওবা সহযাত্রীর সাথে কথোপকথনে। তবে কি এটিই এ দেশের চল নাকি? চুলোয় যাক ওদের চল, আমি যা করে এসেছি এযাবতকাল তাই করলাম এখানেও। কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে উঠে গিয়ে বৃদ্ধকে বললাম আমার ছেড়ে আসা স্থানে গিয়ে বসতে। কিছুটা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বৃদ্ধ কয়েকবার মৃদু স্বরে বললেন, “জিঙ্কুয়ে, জিঙ্কুয়ে”।

খনিতে ঢোকার টিকেট কাটতে নগদে প্রায় পঁয়ত্রিশ ডলার গুনতে হল, পোল্যান্ডের অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থানগুলোতে যেতে যেখানে টিকেটের দাম পরে পাঁচ কি দশ ডলার, সেখানে এ স্থানের টিকেটের দামটি একটু বেশিই মনে হল। পরে অবশ্য ভেতরে যাবার পর বুঝেছি কেন এই উচ্চমূল্য। যা হোক, টিকেট কেটেই যে সুড়সুড় করে ঢুকে পরা যায় খনির ভেতর তা নয় কিন্তু, ভেতরে আসলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে এক সাথে থাকতে দেয়া হয়। তাই একটি দল বেড়িয়ে এলেই তবে আরেকটি নতুন দলকে ভেতরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়।

আমাদের দলটির অপেক্ষার পালাও একসময় শেষ হল। টিমটিমে আলোয় সরু এক সিঁড়ি বেয়ে আমাদের নামা শুরু হল সেই পাতাল-দেশ পানে। সেদিন ঠিক কতটা নিচে নেমেছিলাম তা ঠিক মনে নেই, তবে অন্তত কয়েকশ ফুট তো হবেই। সেই পাতালে পৌছার পর গাইড প্রথম কথাটি যা বলল তা হল, “এই যে দেখছ এই পাতালপুরী এর দেয়াল, মেঝে, ছাদ –সবই কিন্তু লবণের। যদি বিশ্বাস না হয় তবে দেয়ালের গা একটু চেখেও দেখতে পারো”। কিন্তু এ কি সত্যিই লবণ? জন্মাবধি যে দুধ-সাদা লবণ দেখে এসেছি, এ লবণ তো তেমন নয়। তেমনটি হলে হয়তো এই পাতালপুরীটি হতো ধবধবে সাদা কোনও শ্বেত-পুরী, কিন্তু সেই টিমটিমে আলোয় চোখ কিছুটা ধাতস্থ হবার পর বুঝতে পেলাম এখানকার এই লবণের রঙ যেন কিছুটা কালচে সবুজ। আমাদের সাথের অতি-উৎসাহী কয়েকজন ততোক্ষণে লেগে গেলো দেয়ালের গা চেখে সত্যিই তা লবণের কিনা পরীক্ষা করতে। পরীক্ষা শেষে তার মতামত জানিয়ে বলল, একশ ভাগ খাঁটি লবণ।

পাতালপুরী যেহেতু তাই হয়তোবা গুমোট হবার কথা, অনেকেই তেমন করে ভাবতে পারে। কিন্তু না, এই পাতালপুরীতে ক্ষণে ক্ষণে কোথা থেকে যেন এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়ে শীতল এক পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল। প্রায় হাজার বছর আগেও যে প্রকৌশল বিদ্যা খাটিয়ে এই খনি খনন করা হয়েছিলো, তা সত্যিই বিস্মিত করার মতো।

আধ-ভৌতিক এক সুড়ঙ্গ পথের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের দলটি। আর সে পথের দু’পাশের নিরেট দেয়ালকে ছাদের সাথে ঠেকা দিয়ে রেখেছে অসংখ্য গাছের গুড়ি। ভূগর্ভের এই তাপানোকুল পরিবেশে রোদ, বাদলা, তুষার-ঝড় কোনটিই সইতে হয়না এই গুড়িগুলোকে। তাই হিরিম্বা দৈত্যের মতো কাঁধে বিশাল এই ছাদ আর দেয়ালের বোঝা সে দিব্যি বয়ে বেড়াচ্ছে শত শত বছর ধরে। এই পথ চলার মাঝেই চোখে পড়লো কেবল লবণের খণ্ড দিয়ে বানানো অসম্ভব সুন্দর কিছু ভাস্কর্য। একটি স্থানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই হাঙ্গেরিয়ান রাজকুমারীকে রাজার লবণ দানের দৃশ্যটিকে। আরেকটি বেশ বিশাল এক ঘরে এসে দেখা পেলাম কোপার্নিকাস মশাইয়ের, এক হাতে বিশাল এক গোলক ধরে যিনি হয়তো বলতে চাচ্ছেন এই আমার বিশ্ব। এই সুড়ঙ্গ পথের ছাদ সব খানেই মসৃণ নয়, মাঝে মাঝে চোখে পরে অসংখ্য ব্যাঙের ছাতার মতো ফেনায়িত লবণ ঢেকে রেখেছে মাথার ওপরকার আচ্ছাদনটিকে।

একটি ঘরে এক খনি শ্রমিককে একটি কালো ঘোড়ায় লাগাম পরাতে দেখে বেশ খানিকটা চমকে গেলাম, এই পাতালপুরীতে ঘোড়ার প্রয়োজন কেন? আসলে যেই সময়ে এই খনি থেকে লবণ আহরিত হতো তখনও যন্ত্র সভ্যতার প্রারম্ভ সূচিত হয়নি, তাই ভূসমতলের এই কয়েকশ ফুট নিচে ঘোড়া নামিয়ে এনে তাদের দিয়েই বহন করানো হতো লবণ-বাহী ভারী শকট বা পিপে। শুধু মাল টানাই নয়, ঘানি টানার মতো কিছু কাষ্ঠ নির্মিত ঘূর্ণন-যন্ত্রও পরিচালিত করা হতো এই ঘোড়াগুলো দিয়ে। পরবর্তী ঘরটিতে কিছু প্রতিমূর্তি স্থাপন করে বোঝান হয়েছে কি ভাবে কাজ করতো পুরো ব্যাপারটি।

এবার চারিধারের লবণের দেয়ালের আস্তর কেটে তৈরি করা এক কাঠের সিঁড়ি বেয়ে আরও নিচে নেমে যাবার পালা। এই সিঁড়ি বেয়ে আরও কয়েকশ ফুট নিচে যখন নামছি তখন ভাবছি, এই যে চারপাশের দেয়াল তার পুরোটাই তো লবণ বৈ আর তো কিছু নয়। হাজার হাজার টনের এই স্রেফ লবণের দেয়াল আবার ভেঙে পরবে নাতো এখুনি মাথার ওপর?

সেই নিচে নামার পর আমরা এসে দাঁড়ালাম বিশাল এক হল ঘরের মাঝে। প্রথম দর্শনে মনে হল যেন দাঁড়িয়ে আছি হলিউডের সিনেমায় দেখা গুপ্তধনে ঠাসা কোনও গুহা-মন্দিরে।

সেকালে যে খনি শ্রমিকেরা এই খনিতে কাজ করতো, তাদেরকে মোটামুটিভাবে পরিবারের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে তবেই এর গুহামুখে ঢুকতে হতো। একবার ঢোকার পর কেটে যেত দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। এ যেন কুলহারা এক নাবিকের অন্তহীন সমুদ্রযাত্রার মতো। বাইরের পৃথিবীটাতে হয়তো ঘটে চলতো অনেক পালাবদল, গাছের পাতার রঙ পাল্টে গিয়ে নব ঋতু জানিয়ে দিত তাদের আগমনী সঙ্গীত। কিন্তু অন্ধকারের এই বাসিন্দাদের সেটি জানার উপায় থাকত না। হতাশাময় সেই রাজ্যে তাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপায় তখন হয়ে দাঁড়াত ধর্মের শরণ এবং ভগবদ্দত্ত পরিত্রাণের প্রত্যাশা। আর সেই প্রেরণা আর প্রত্যাশা থেকে এই পাতালের রাজ্য কুঁদে কুঁদে তারা বানিয়ে ফেলে আস্ত এক গির্জা। “গির্জা” শব্দটির চেয়ে মনে হয় “চ্যাপেল” শব্দটি ব্যাবহার করাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হবে। “গির্জা”কে যদি তুলনা করা যায় মন্দিরের সাথে, তবে চ্যাপেল কে হয়তো তুলনা করা যায় গৃহ-মন্দিরের সাথে। যে বিশাল হলঘরটিতে এসে দাঁড়িয়েছিলাম সেটিই ছিল খনি শ্রমিকদের তৈরি করা সেই গৃহ-মন্দির তথা চ্যাপেল। শত বছর আগে হয়তো সারি সারি মশাল এই চ্যাপেলের অন্ধকার দূর করতো, কিন্তু এখন তাদের অভাব দূর করছে প্রকাণ্ড কয়েক ঝাড়বাতি। পাথর সদৃশ লবণ-ছাদে তারা কিন্তু দিব্যি ঝুলে আছে। চ্যাপেলের মেঝেটি সিরামিক টাইলসের মতো খাঁজ কাটা। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে হয়তোবা পাথর খোদাই করে বসানো হয়েছে এই মেঝেতে। খানিকটা উপুড় হয়ে পরখ করে বুঝলাম- নাহ এও সেই লবণই। চ্যাপেলের দু’পাশের লবণ-দেয়াল খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যীশুর জন্ম এবং পরবর্তী জীবনের পৌরাণিক নানা কাহিনী। একেবারে মাঝ বরাবর মূল বেদির ঠিক পেছনেই যীশু-মাতা মেরীর মূর্তি, ডান হাতে যার একখানা জ্বলজ্বলে লবণ খণ্ড, আর বা হাতটি বুকের কাছে ভাঁজ করা। ওদিকে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চ্যাপেলের অন্য এক কোণে।

লিওনার্দো ভিঞ্চির আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে “দ্যা লাস্ট সাপার” আমার অন্যতম প্রিয় একটি ছবি। অনেকে বলেন এই ছবিতে নাকি ভিঞ্চি “তিন” সংখ্যাটিকে বিভিন্ন ভাবে টেনে এনেছেন। যেমন ছবিটিতে যীশুর দু পাশের চারটি দলের প্রতি দলেই শিস্য সংখ্যা তিন, আবার পেছনের জানালার সংখ্যাও তিন। একবার কৌতূহলী হয়ে এই ছবিতে টেবিলে রাখা গেলাসগুলো গুনে দেখেছিলাম। গুনে পাওয়া সংখ্যাটি ছিল পনের, যা কিনা তিনের গুণিতক। এই চ্যাপেলের দেয়ালে খোদাই করা সেই লাস্ট সাপারের দৃশ্যটি দেখে এগিয়ে গেলাম সামনে, মনে মনে ভাবছি লিওনার্দোর আঁকা সেই চিত্র আর এই লবণ দেয়ালে খোদাই করা ভাস্কর্যের মাঝে কোথায়ই বা মিল আর কোথায়ই বা অমিল। বেশি বেগ পেতে হলনা আমাকে, পেয়ে গেলাম একটা দৃশ্যমান পার্থক্য। এই দেয়ালের লাস্ট সাপারের দৃশ্যটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মাত্র আটটি গেলাস।

সেই চ্যাপেলে আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে এবার একটি পাতাল হ্রদ দেখবার পালা। আগেই বলেছি প্রায় হাজার বছর আগে তৈরি এই খনিতে প্রকৌশল বিদ্যার যে প্রয়োগ দেখেছি তা রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দেবার মতো। মাটির অতটা নিচে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করে তাতে জলের উচ্চতা সহনীয় পর্যায়ে রাখা এলেবেলে ব্যাপার নয় মোটেও। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেখলাম সেটাই সম্ভব করেছিল সেকালের প্রকৌশলীরা।

ফেরার পথে অতটা সিঁড়ি বাইতে হলে হয়তো বাইরে বেড়িয়ে বিন্দুমাত্র চলৎশক্তি থাকত না। সে কষ্ট লাঘব করে দিল একালের বিদ্যুৎ চালিত একখানা লিফট। তাতে চড়ে সাই সাই করে মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এলাম আলো আর বাতাসের চিরচেনা ধরাধামে।

প্রবাসে মাঝে মাঝেই কিছু কিছু স্বদেশীর দেখা পাই যারা বহুকাল পরদেশে থেকে, সে দেশের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেও সে দেশ, দেশের মানুষ কিংবা সংস্কৃতি সম্পর্কে বিতৃষ্ণা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করেন। আমার হোস্টেলের নিচ তলার সেই বাংলাদেশী রেস্তোরাঁর মালিকও সেই দলেরই একজন। ভদ্রলোক পোল্যান্ডে আছেন প্রায় বারো বছর। ইতোমধ্যে পোল্যান্ডের পাসপোর্ট বগলদাবা করে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন সে দেশে। ভিয়েলিচকা থেকে ফেরার পর ভাবলাম হোস্টেলে যাবার আগে সেই বাংলাদেশীর রেস্তোরাঁতেই পেট-পূজাটা সেরে নেই। তো খাবার শেষে বিল দেবার সময় টের পেলাম পকেটে ঝন ঝন করছে বেশ কিছু পোলিশ যোলটির ধাতব মুদ্রা। আচ্ছা এ দেশে কি তবে এক, দু, পাঁচ টাকার কোনও কাগুজে নোট নেই? সে কথা সেই রেস্তোরাঁ মালিককে জিজ্ঞেস করাতে মুখ বাঁকিয়ে সে বলল, তার ধারণা এটি একটি ভিখিরির দেশ, তাই ছোট মুদ্রার কাগুজে নোটের চল ওদেশে নেই। আমার সাথে কথা শেষ না হতেই দু’ বুড়বুড়ি এসে ঢুকল সেখানে, তারা পথ হারিয়েছে। রেস্তোরাঁ মালিক কিন্তু বেশ হাসি মুখেই তাদের পথ বাতলে দিলেন। অতঃপর তারা বিদেয় হতেই আমাকে হাসিহাসি মুখ করে বললেন, “দিলাম সাদা চামড়াগুলোকে ভুল পথ দেখিয়ে”। ভদ্রলোকের এহেন বিটকেল কথাবার্তায় চরম বিরক্ত না হয়ে পারলামনা।

আমার হোস্টেলের সামনের ভিলপোল স্ট্রীট ধরে পশ্চিম মুখে কিছুটা এগিয়ে গেলে এই সড়কটির নামই পাল্টে হয়ে যায় সিয়ানা স্ট্রীট। এই সিয়ানা স্ট্রীট তো বটেই, এর আশেপাশের সমান্তরালে থাকা আরও কয়েক সড়কের জনস্রোত যেন একটি দিকেই ধাবমান। আমিও আর ইতস্তত না করে সেই জনস্রোতের ভিড়েই মিশে গেলাম। পায়ে হাঁটা পথটুকু অতিক্রম করার পর এক উৎসব-মুখর বিশাল যে চত্বরে এসে পৌঁছুলাম সেই “মার্কেট স্কয়ার” মধ্যযুগ থেকেই ক্রাকভের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। তবে এককালে এখানে ক্রাকভের সাধারণ বাসিন্দারা সদাই-পাতি করলেও কালের বিবর্তনে এই চত্বরটি এখন চলে গেছে পর্যটকদের কাছে রকমারি স্মারক বিক্রির দোকানিদের কব্জায়। শ্বেত হরিণের চামড়া থেকে শুরু করে মাত্রিওস্কা পুতুল, এমন হরেক পণ্যের মেলা বসিয়ে বিক্রেতারা পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণে সদাব্যাস্ত সেসব দোকানে। পোল্যান্ডের সিরামিক পণ্য নাকি তুলনাহীন, এই বলে এক দোকানি আমকেও গছিয়ে দিল সিরামিকের এক বিড়ালছানা। এই মার্কেট স্কয়ারের আশেপাশের গথিক স্থাপত্য কলায় নির্মিত ভবনগুলোর কোনটিতে আজ স্থান নিয়েছে ব্যাঙ্ক বীমা প্রতিষ্ঠান, আবার কোনটিতে চটকদার রেস্তোরাঁ। তেমন একটি রেস্তোরাঁর বাইরের বেঞ্চে বসে এ বেলা এক কাপ কফি খেয়ে নেবো কি? সে কথা ভেবে পা চালিয়ে বেখেয়ালে উড়িয়ে দিলাম মার্কেট স্কয়ারের বিশাল আঙিনায় বেশ আরামসে বসে রোদ পোহানো ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের দু’ চারটিকে। রেস্তোরাঁয় কিন্তু ঢোকা হলনা, তার আগেই চোখ আটকে গেলো চত্বরের ডান ধারে আকাশ-মুখী দুটো মিনার নিয়ে সটান দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট মেরীর চার্চের দেয়াল ঘড়িতে।

পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে রেনেসাঁর সময় চার্চ ভিত্তিক শিল্পকলায় নতুন এক আঙ্গিকের প্রচলন হয়। এই সময়ে শিল্পীরা প্রস্তর নির্মিত ভাস্কর্যের পরিবর্তে কাঠের পটে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন সাধু-সন্তদের নানা অবয়ব। কাঠের সেই পটগুলোই হয়ে দাঁড়ায় তাদের রং তুলির ক্যানভাস। এভাবে একেকটি পট বা প্যানেলে একেকটি অবয়ব ফুটিয়ে তোলার পর সেগুলো একের সাথে আরেকটি জুড়ে দিয়ে সৃষ্টি করা হতো কোনও মহিমাময় ঘটনার। চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে নির্মিত বেশ কয়েকটি প্রখ্যাত গির্জায় তাই মূল বেদীর পেছনে যীশু বা মেরীর মর্মর মূর্তির বদলে শোভা পায় এমন কিছু প্যানেল, যাদের আরেকটি নাম “আলটার পিস”। ক্রাকভের মূল মার্কেট স্কয়ারে অবস্থিত সেন্ট মেরীর গির্জা ইউরোপের সেই গুটিকয়েক গির্জার অন্যতম, যেখানে দেখা মেলে প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো ওক লিন্ডেন আর লার্চ কাঠের ফ্রেমের উপর নির্মিত অনিন্দ্য সুন্দর আলটার পিসের, ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ হয়ে যারা যুগের পর যুগ দীপ্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। মূল বেদীর ঠিক পেছনে স্থাপিত এই আলটার পিসটি অনেকটা যেন এক জানালার মত। সে জানালার খোলা অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মেরীর স্বর্গে আরোহণের দৃশ্য। সে দৃশে মেরী শুধু একা নন। তাকে স্বর্গের পথে এগিয়ে দেবার জন্যে উপস্থিত আরও বারোজন দেবদূত। এই দৃশ্যটি কিন্তু চাপা পরে যায় যখন ওই জানালারূপী কপাটদ্বয় বন্ধ থাকে। এই দুটি কপাটের একেকটিতে প্রতি পৃষ্ঠে তিনটি করে প্যানেল বসানো, অর্থাৎ দুটি কপাটের দু’ পাশ মিলিয়ে যীশুর জীবনের মোট ছটি ঘটনা উপস্থাপিত। দিনের একটি বিশেষ সময়েই কেবল ওই কপাটদ্বয় খোলা হয়, দেখা মেলে মূল প্যানেলসহ দু’ পাশের প্যানেলগুলোর ছ’টি দৃশ্যের। সেদিন আমি যখন উপস্থিত ছিলাম তখন কপাটদ্বয় খোলাই ছিল, তাই রেনেসাঁ যুগের এই অপূর্ব শিল্পকর্মটির স্বাদ বেশ নয়ন ভরেই উপভোগ করলাম। তবে ভাগ্যবান নিশ্চয়ই তারা যারা এই কপাট খোলা বা বন্ধের সময়টাতে উপস্থিত থাকে। কারণ কেবল তারাই দেখতে পায় এই কপাটদ্বয়ের দু’পাশের পুরো বারটি প্যানেলের দৃশ্য। সে যাকগে, মনে মনে ভাবলাম আমিই বা কম ভাগ্যবান কিসে? এমনও তো হতে পারতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা এই অমূল্য সম্পদগুলো লুট করে জার্মানিতে নিয়ে যাবার পর আর কখনও এদের হদিসই পাওয়া গেলনা। কিন্তু তেমনটি হয়নি বলেই তো আজ শিল্পকর্মের ইতিহাসের এই অসাধারণ নিদর্শনটিকে স্বস্থানে আবিষ্কার করতে পেরেছি।

সেন্ট মেরীর গির্জা থেকে বেরিয়ে আবারও মার্কেট স্কয়ায়ে পা রাখতেই মনে হল যেন আটকে গেছি কোনও বিয়ে-বাড়ি অভিমুখী বরযাত্রীর শোভাযাত্রায়। একের পর এক সুসজ্জিত ঘোড়ায় টানা টমটম গাড়ি দাঁড়িয়ে, বাহারি পোশাক পরে তাদের কোচোয়ানরাও দাঁড়িয়ে সওয়ারির অপেক্ষায়। ক্রাকভের এই অঞ্চলে আসলে মোটর গাড়ির উপদ্রব চোখে পরেছে কমই, ওই টমটম গাড়িগুলোই পর্যটকদের নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় পুরনো শহরের এই প্রান্তটি।

ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁ পরবর্তী ইটালিতে একদল স্থপতি বলা শুরু করলেন তারা এমন এক নকশা আঁকা শুরু করবেন যেখানে প্রাধান্য থাকবে প্রাকৃতিক আলোর, স্থাপনার ভেতরের অঙ্গসজ্জাকে তারা করে তুলবেন আরও জমকালো। সেকালে ইটালির সেই নামকরা স্থপতিরা ডাক পেতেন আশেপাশের দেশের চার্চ কিংবা রাজপ্রাসাদের নকশা প্রণয়নেও। আর এভাবেই তাদের হাত ধরে সেই নতুন ধারাটি, বারোক যার নাম, ছড়িয়ে যায় ইটালির বাইরে। মার্কেট স্কয়ায়ের হৈ চৈ থেকে বেড়িয়ে গ্রদস্কা স্ট্রীটে চলার পথে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিলেন দশ জন দেবদূত। লাইম পাথরে নির্মিত সেই দেবদূতরা পোল্যান্ডের প্রথম বারক স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত সেই চার্চের সামনের নাতিদীর্ঘ থামের উপর অবিচল দাঁড়িয়ে আছেন গত চারশো বছর ধরে। সাধারণত চার্চগুলোর নাম একজন সাধুর নামে হলেও, এই বিশেষ চার্চটি দু’জন সাধুর নামে নামাঙ্কিত- “সাধু পিটার এবং সাধু পলের চার্চ”। চার্চটির দ্বার অবারিত নয়, কিছু বিশেষ দিনের বিশেষ সময়েই কেবল খোলা হয় সেই দ্বার। তাই ভেতরের অঙ্গসজ্জা অবলোকন থেকে এ যাত্রা বঞ্চিত হলাম।

সেই গ্রদস্কা স্ট্রীটের শেষ মাথাটি গিয়ে মিশেছে ভিস্তুলা নদীর পাড়ের ভাভেল পাহাড়ে। এই পাহাড়টিকে কেন্দ্র করেই এককালে উড়েছিল ক্রাকভ শহরের বিজয় কেতন। বলা চলে ক্রাকভের জৌলুশ আর শৌর্য-বীর্যের প্রতীক যেন এই পাহাড়টি। এই পাহাড়চুড়োয় ত্রয়োদশ শতকে সম্রাট কাযিমির কর্তৃক গথিক স্থাপত্যে নির্মিত এক সুবিশাল ক্যাসেলের পাদপ্রান্তে গিয়ে যখন পৌঁছুলাম তখন বেলা প্রায় পরে এসেছে। আগে থেকেই জানতাম এই ক্যাসেলের ভেতরের এক জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় রেনেসাঁ সময়ের দুর্লভ কিছু তৈলচিত্র। জোড় কদমে পা চালিয়ে জাদুঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেখালাম যা ভেবেছিলাম তাই, ততোক্ষণে জাদুঘরের মূল দরজায় বিশাল একখানা তালা ঝুলছে। কিছুটা ব্যর্থ মনোরথ হলেও সেই হতাশা দীর্ঘায়িত হলনা, অচিরেই প্রশান্তি খুঁজে পেলাম সেই ভাভেল পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় দেখা ভিস্তুলা নদী আর তাকে আঁকড়ে থাকা ক্রাকভ শহরের এক দৃশ্যপটের মাঝে।

পরদিনের সকালটি ছিল এক ঝিরঝিরে বৃষ্টির দিন, সে সকালেই আমার ওয়ারশ ফিরে যাবার কথা। ট্রেনের ঝাঁপসা কাঁচের পেছনে আরামদায়ক কূপে আসন খুঁজে পাবার পর ভাবছিলাম ইতিহাস, স্থাপত্য, শিল্পকলা সবকিছু মিলিয়ে এই ক্রাকভ এমন এক শহর যে শহরে এলে মনে হয় এই শহরটির প্রাণ বলে কিছু একটা আছে। আর এমন একটি প্রাণময় শহরে যারা আমার মতো অল্প কটি দিন পুঁজি করে আসেন বিদায় বেলায় তারা নিশ্চয়ই আমারই মতো দীর্ঘশ্বাস গোপন করেন। আমার এমন সব ভাবনার মাঝেই দুলে উঠলো ট্রেনের চাকা।


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

খুবই চমৎকার চলুক

..................................................................
#Banshibir.

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যপীরদা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আকাশে তো মনে হচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গিয়ে নীল চাষ করছে! এতো নীল কেন?
বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের একটা ছবি দিতে পারতেন।
আর তুলনামূলকভাবে কঠিন শব্দের ব্যবহার বেশি। একটু সহজ সরল শব্দ দিয়ে লিখলে পড়তে আরেকটু আরাম হতো।
ভ্রমণ আর লেখা চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই, কয়েকটা ছবিতে আসলে নীলের স্যাচুরেসনটা একটু বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, হয়তোবা সেটা না দিলেই ভালো হতো
সেই রেস্তোরাতে গিয়ে মনটা এত তেতো হয়ে গিয়েছিল যে ছবি তোলার আর কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। শব্দ চয়নের ব্যাপারে আপনার মন্তব্যটি পরবর্তিতে মাথায় রাখব। ভালো থাকবেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভ্রমণকাহিনী কয়েক প্রকারের হয়ঃ

১। এটা পড়ে বোঝা যায় না এটা কি কোন ব্যক্তিবিশেষের ভ্রমণের কথা নাকি উইকিপিডিয়া/এনকার্টা থেকে কোন লেখার অংশ তুলে দেয়া।
২। এটা পড়ে বোঝা যায় না ঐ জায়গাটা, তার পরিবেশ, তার মানুষজন, সেখানকার কালচার-নর্ম আসলে কেমন। পড়লে কেবল মনে হয় লেখক আর তার পেয়ারের লোকজন কী করলেন, কী খেলেন এসবের বয়ান। 'আর আমি আমি আমি আমি'র নিচে চাপা পড়ে ভ্রমণ, লেখা, ছবি সবকিছু দমবন্ধ হয়ে মারা পড়ে।
৩। এটাতে কথা কম, কাজ বেশি। মানে লেখা বিশেষ নাই, ছবি দিয়ে ঠাসা। কেউ কেউ ছবির ক্যাপশন দেন বটে তবে তাতে বোঝার উপায় থাকে না জায়গাটা কাম্‌চাটকা নাকি মাদাগাস্কার। অতি উদার কেউ কেউ ছবির উপরে/নিচে উইকিপিডিয়া/এনকার্টা থেকে দুটো লাইন কপি করে দেয়।

আপনার ভ্রমণকাহিনী উপরের এই তিনটা গুণ থেকে মুক্ত। এই জন্য পড়ে আরাম পাওয়া যায়। পাঠক হিসেবে আমার অনুরোধ থাকবে নির্বাক স্থাপত্যের সাথে সাথে সবাক জনগোষ্ঠীকে সমান গুরুত্ব দিন। রাস্তার পাশের মানুষটির কথা বলুন, বাসে-ট্রেনে সহযাত্রীটির কথা বলুন, খাবার দোকানে দেখা হওয়া লোকটার কথা বলুন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া অজানা সুহৃদটির কথা বলুন।

আরেকটু নিয়মিত হোন। সাথে অন্যদের লেখায়ও আলোচনা করুন। আপনি যদি অন্যদের লেখায় মন্তব্য না করেন তাহলে তারা আপনার লেখায় মন্তব্য করতে উৎসাহিত হবেন কেন!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

পান্ডবদা আপনার সাজেসনগুলোকে আমি সব সময়েই গুরুত্বের সাথে নেই, এবারেও নিলাম।

আপনার শেষ প্যারার কথাগুলোও যৌক্তিক। চেষ্টা করবো এখন থেকে আরো নিয়মিত হতে, ধন্যবাদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার ব্লগে দেখলাম শুধু কোপার্নিকাসের দেশের তিনটা পর্ব আছে। আপনার এর আগের কোন লেখা নেই। পুরনো লেখা আপনার ব্লগে নিয়ে আসার জন্য মডারেটরদের শরণাপন্ন হোন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ঠিক ধরেছেন পান্ডবদা , আমি আসলে ওই ব্যাপারে মডারেটরদের অনেক আগেই চিঠি লিখেছিলাম, কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। দেখি আবার জানাব তাদের।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমার লবন সংক্রান্ত জ্ঞান এতদিন পর্যন্ত সমুদ্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটা খনিতেও হতে পারে সেটা ভাবিনি। তবে লবন খনির বিবরণ পড়তে পড়তে সেই খনিশ্রমিকদের কথা ভেবে একটু মন খারাপ হলো। দুনিয়ার সব খনিতেই শ্রমিকদের খুব অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে হয়। সবগুলো খনিতেই অবিচারের ঘটনা ঘটে অজস্র। সেই মধ্যযুগে নিশ্চয়ই আরো করুণ অবস্থা ছিল।

আপনার সেই হোটেল ম্যানেজারের নাম ঠিকানা পেলে ওদিকে কখনো যাবার সুযোগ হলে এক বেলা ভরপেট খেয়ে দুটো গালি রেখে আসতে পারতাম।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এইটা কী কইলেন বস্‌! আপনি 'দইজ্জা পাড়ের মানুষ', লবনের উৎস বলতে সমুদ্রকে বুঝবেন সেটা স্বাভাবিক, কিন্তু সৈন্ধব লবন না খেয়ে থাকলেও চোখে তো দেখেছেন, নাম তো শুনেছেন। সেটা তো খনি থেকে তোলা।

লেখাটাতে খনির অংশটুকু পড়ার সময় বার বার ঐ আমলের শ্রমিকদের ভয়ানক দুর্দশার কথা মনে হচ্ছিল। আমি ইচ্ছে করে চেপে গিয়েছিলাম, আপনি আলোচনায় এনে ভালোই করেছেন। লবন খনির বড় সমস্যা হচ্ছে ধ্বস। খনির তলদেশে হ্রদ থাকার মানে সেখানে বিপুল পরিমাণ পানির আধার ও শিরা আছে যা প্রায়ই ধ্বস ঘটিয়েছিল। কারণ, লবন সহজে পানিতে দ্রবীভূত হয়। তাছাড়া লবন খনির শ্রমিকদের ত্বক, শ্বাসযন্ত্র, মুখগহ্বর ও কণ্ঠের ক্ষতে ভুগতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ঠিক বলেছেন পান্ডবদা। এই বর্তমান সময়েই যেখানে খনি ধ্বসে শত শত শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে, সেখানে এখানে সেই শত বছর আগে যে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে কে জানে।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

সত্যি বলতে কি, আমার নিজের ধারণাটাও তেমনিই ছিল. এতকাল ভাবতাম কেবল সমুদ্র থেকেই লবণ আহরিত হয়, কিন্তু না খনি থেকেও লবণ উৎপাদিত হয় আসলে।

ক জনের ঠিকানা দেব বলুন? টার্কিস এয়ারলাইন্স এ ঢাকা থেকে ইস্তানবুল যাচ্ছি। পাশের সহযাত্রী যাচ্ছে ঢাকা থেকে ইস্তানবুল হয়ে ফিনল্যাণ্ড। তা ফিনল্যাণ্ড দেশটা বা সে দেশের মানুষরা কেমন জিজ্ঞেস করাতে সে বললো, "পুরাই ফাউল একটা জাতি। উইকেন্ড এ খালি মদ খায় আর বার এ মেয়ে মানুষ নিয়া ফুর্তি করে". এই হলো তার ফিনিশদের সম্পর্কে মন্তব্য। এই ফাউলদের দেশেই কিন্তু সে গিয়ে গত সাত বছর ধরে পরে আছে.

মরুদ্যান এর ছবি

এরকম মানুষ হাজার হাজার। বছরের পর বছর থাকবে, পাস্পোর্ট নিবে, ভাতা খাবে, কিন্তু দিন শেষে মুখ বাঁকাবে। খচ্চর লোকজন!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মেহেরুন  এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।