মানুষের মন

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৯/২০০৯ - ৬:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুওর যেমন কাদা ঘাঁটতে পছন্দ করে, ওতে শুয়ে গড়াগড়ি খেতে ভালোবাসে, ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে ঝাড়ে-জঙ্গলে মানুষের গু খুঁজে খুঁজে খেতে পছন্দ করে, তেমনি আমাদের সমাজের কিছু মানুষও শুওরেরই মত। তারাও এর ওর সংসারের রসালো কথা আর ঘটনা খুঁজে বেড়ায়। তারপর তা নিয়ে সমগোত্রের মানুষের সঙ্গে ঘোঁট পাকায়, পরচর্চায় মেতে ওঠে মহানন্দে। সেই নোংরা বিষয়ের উপর হাত-পা ছুঁড়ে গড়াগড়ি করে কিছুদিন। কথায় বলে, যে যেমন তার সম্পর্কও তেমন মানুষের সঙ্গেই গাঢ় হয়। তারা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষের সম্পর্কে কোনো সতর্ক বাণীকে ভাবে দুজনের সুসম্পর্কে আড়কাঠি। কোনো কিছু নিয়ে ওদের মাঝে মনোমালিন্য ঝগড়া-ঝাটি, দুর্নাম রটানো থেকে আরম্ভ করে যাবতীয় গোপনীয়তা ফাঁস করে দিয়ে পরস্পর গুয়ে মাখামাখি করেও কিছুদিন পর ফের গলায় গলায় ভাব করে নেয়। কাদের খোনকারকে মধু, জইল্যা আর নজুমুদ্দির সঙ্গে অত গলায় গলায় ভাব করতে মানা করেছিলো গফুর। তা শুনে কাদের ঠোঁট উল্টে বলেছিলো, তোর না পছন্দ বইলে কি আমাকও তা করতি হবে? পরিণতিতে কাদের খোনকারের সঙ্গে গফুরের সম্পর্কটা দিন দিন পানসে হয়ে উঠেছে। কেউ কারো শত্র“ হয়ে না উঠলেও দূরত্ব বেড়েছে অনেক। তবে কেউ দূরে সরে গেলে গফুর মিয়া তাকে কাছে ভেড়ানোর কোনো চেষ্টাই করে না। বরং নিজকে আরো নির্ঝঞ্ঝাট ভেবে স্বস্তি বোধ করে কিছুটা। কারণ যে যত বেশি সম্পর্কে সম্পর্কিত তার পিছুটানও তত বেশি।

এই তো মাস খানেকও হবে না যে, কানা জইল্যা আর মধু ব্যাপারী কোনো একটি বিষয় নিয়ে পরস্পর পরস্পরকে চোর, চোট্টা-বদমাশ-লোচ্চা থেকে আরম্ভ করে যা তা বলা থেকে একজন আরেকজনের ছায়াও মাড়াবে না পণ করলেও কিছুদিন পরই আবার একত্রে বসছে কাদের খোনকারের দোকানের টুলে। একই সঙ্গে যাচ্ছে শহরের কোনো এক নিষিদ্ধ গলিতে। সে গল্প আবার তাদের মুখ থেকেই এক আধটু করে ছড়াতে থাকে গ্রামের আনাচে কানাচেও। এরা হচ্ছে বিচিত্র চরিত্রের কতিপয় মানুষ। যাদের কর্মকান্ডে কোনো স্থিরতা বা দৃঢ়তা নেই। চারিত্রিক তারল্যের কারণে মানুষ তাদের কাছে মনের কথা খুলে বলতে চায় না। এমন কি সু-সম্পর্ক বজায় রাখতেও স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করে না। তবুও এরা সমাজে আছে। এমন কি লাজ-মানের তোয়াক্কা না করেই নির্লজ্জের মত মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকছে দীর্ঘকাল।

গফুর মিয়া কাদের খোনকারের চায়ের দোকানের টুলে বসা লোকগুলোকে দেখে তাই ভাবছিলো আর বিচিত্র আকৃতির মুখগুলোর দিকে তাকাচ্ছিলো। অবশ্য তাকাচ্ছিলোও ঠিক বলা যাবে না, আড়চোখে সেদিকে খানিকটা তাকিয়ে মনে মনে একদলা থুতু অথবা ঘৃণা ছুঁড়ে দিচ্ছিলো। আমাদের সমাজে খারাপ আর চরিত্রহীন লোকেরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের আশ-পাশের লোকজনদের শুষে শুষে কিংবা কোনো ভাবে প্রভাবিত করে অর্থ-সম্পদের দিক দিয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠে। অন্য দিকে বেশিরভাগ ভালো মানুষই এক অর্থে দুর্বল আর নির্জীব। অর্থ-সম্পদের দিক দিয়ে তো বটেই এমন কি মনো-দৈহিক বলের দিক দিয়েও সে বহুলাংশে দুর্বল। সে অর্থে নষ্ট-বীজেরাই সমাজের অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা লুটে-পুটে নেয়। শুধু কি তাই, একদল লোক আছে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট কারো কাছ থেকে টাকা খেয়ে জোরে-সোরে তার গুণকীর্তন করা। যদিও সেই লোকটির কোনো ভালো গুণ না-ও থেকে থাকে তবুও তাতে তেমন সমস্যা হয় না। চেরাগ আলি এমনই একজন। যার কাজ হলো টাকা পেলে চোরকেও দরবেশ বলে প্রচার আরম্ভ করে দেবে। এর আগে রাজাকার আবদি মিয়াকে মহান মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রচার করা আরম্ভ করেছিলো। অথচ স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন লোকটি আত্মগোপন করেছিলো বলে, কেউ কেউ তাকে এখনও ত্যাল্যাচোরা বলে ডাকে।

গফুর মিয়া তেমন একটা খারাপ লোক না হলেও তাকে মন্দ বলা যাবে না হয়তো। আমাদের সমাজে মানুষের ভালোমন্দের বিচার হয় তার কর্মকান্ডের মানদন্ডের ওপর। সমাজের হর্তা-কর্তা সেজে আপাতত যারা বসে আছে তাদের প্রত্যেকেরই কৈশোর কিংবা যৌবনে কিছু না কিছু অপকর্মের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ কথা সবাই জানলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মুখ ফুটে বলতে চায় না। হয়তো পারে না বলেই বলে না। যেমন নজুমুদ্দি আর মধু ব্যাপারী গলায় গলায় ভাব না থাকলেও তাদের সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই বলা যায়। কিন্তু ভালোবাসা নিচের দিকেই গড়ায় কথাটা যদি সত্যিই হয় তাহলে বলতে হয় মধু ব্যাপারীর ফুপু আনি আর নজুমুদ্দির বাবা খালেক ব্যাপারীর ভালোবাসা গড়িয়ে এসেছে তাদের হৃদয়েও। বহুকাল আগে ঘটনাটি ঘটলেও এখনো বয়স্কদের মুখে গল্প হয়ে ফিরছে। যদিও তা প্রকাশ্যে উচ্চকন্ঠে কেউ বলে না। কিন্তু আড়ালে আবডালে এ নিয়ে কথা কমও হয় না। কিন্তু তখনকার সমাজ খালেক আর আনির ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের প্রেমের ফসল আনির গর্ভে এলেও তাকে বৈধতা দেবার মানসিকতা হয়তো তখন কারো ছিলো না। যে কারণে গ্রাম্য শালিসে দু’জনকেই জুতোপেটা করা হয়েছিলো। তবুও নজুমুদ্দির উচু মাথা হেঁট হয়নি কখনো। কারণ সেও বর্তমান গ্রাম্য শালিসে একটি জোরালো ভূমিকা ধরে রাখতে পারছে। তার ইতিহাসও বেশ একটা আলোকিত নয়। কিন্তু এতে করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় বলে মনে হয় না।
(চলবে,,,)


মন্তব্য

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পড়লাম...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

এনকিদু এর ছবি

চলুক । আবার নেট পেয়েছেন মনে হচ্ছে ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম আবার। ভালো লাগছে। চলুক!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেকদিন পর আপনাকে দেখে আসলেই খুব ভাল লাগল।

চলুক।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেকদনি পর আপনাকে দেখে ভাল্লাগলো
আমিও অনেকদিন পর আপনার মতো
আসি আসি বলেও আসা হয়নি
ধারে কাছে ঘোরাঘুরি করে ফিরে গেছি বার বার
কী জানি কী করে হঠাৎ
ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ার মতো আবার লগইন করলাম
আর দেখি এসে অনেকেই বোধিবৃক্ষের মতো জ্বলজ্বলে এখনো
আপনার জন্যেও আমার শেকড় সন্ধান চলছিলো এ্যাতোদিন
তার্পর বলুন কেমন আছেন?

পুতুল এর ছবি

খুব ভাল লাগল শুরুটা, আশা করি অচিরেই পরের পর্ব পাব।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পোস্ট দিলাম পরের আরেকাংশ।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।