ভিনসেন্ট লাফোরেতের ছবিকাহিনী

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: রবি, ২৬/০২/২০১২ - ৫:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বস্টনে প্রুডেনশিয়াল বিল্ডিং নামের স্কাইস্ক্রেপার’টার নিচে প্রুডেনশিয়াল সেন্টার বলে একটা বড় মল আছে। কোথাও যাবার পথে হাতে খানিকটা সময় থাকলে সেখানে চীজকেক ফ্যাক্টরিতে, অথবা গোডাইভা চকলেটের দোকানে, নয়ত কোল্ড স্টোন আইসক্রিমের দোকানে, আর নাহলে বার্নস অ্যান্ড নোবল’এর বইয়ের বড় দোকানটাতে খানিক ঘুরেফিরে যাই। সেদিন বইয়ের দোকানটায় গিয়ে ফটোগ্রাফি সেকশনে কিছু বিনামূল্যে জ্ঞানসঞ্চয়ের চেষ্টায় ছিলাম। বস্টন গরীব গ্র্যাডস্টুডেন্টদের শহর, এসব দোকানে ছেলেপিলে বই নিয়ে মাটিতে ছেতরে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিলেও কর্মচারীরা কিছু বলেনা।

সেখানে ভারী চকচকে মলাটের একটা নতুন আসা বই দেখে এট্টু নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছা হল। কালো মলাটের উপর আলট্রা-ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ম্যানহাটানের ছবি, উপরে নাম, ‘ভিজুয়াল স্টোরিজ ~ বিহাইন্ড দা লেন্স অফ ভিনসেন্ট লাফোরেত’। তখনও লেখকের সম্বন্ধে কিছুই জানি না, কেবল বুঝলাম ইনি একজন প্রতিষ্ঠিত প্রো ফটোগ্রাফার, যেহেতু হেলিকপ্টার থেকে শট নেওয়ার মত ব্যবস্থা এবং রেস্ত তাঁর বেশ আছে।

শিরোনামেই যেমন বলা আছে, বইটা মূলত ছবি তুলতে গিয়ে তাঁর বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনার স্মৃতিকথন, যেগুলো পেছনের গল্প হিসাবে পাঠকের সাধারণত অজানাই থেকে যায়। একট করে পাতাজোড়া ছবি, আর উল্টোদিকের পাতায় ক্যামেরা/লেন্স ইত্যাদি তথ্য, কবে কোথায় তোলা সে কথা, তারপর ওই ছবি নিয়ে কিছু কথা – ছবিটা তুলতে গিয়ে কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা, এই ছবিটা তাঁর কাছে কেন উল্লেখযোগ্য, তুলবার চ্যালেঞ্জ কী ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি।

পরের দিকে কিছু অধ্যায় আছে যা নতুন ফোটোগ্রাফারদের কিছু পরামর্শ দেওয়ার জন্য। তাতেও একটা করে ছবি নিয়ে, সেটা তুলবার সময় কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল এবং সেটা অতিক্রম করতে কেমন লেন্স বা কেমন লাইটিং বেছে নিয়েছিলেন, এ রকম আলোচনা। মোটামুটি সব প্রতিষ্ঠিত ফটোগ্রাফারের মতনই, এনারও ক্যামেরা/লেন্স সম্পর্কে বেশ কট্টর মতামত আছে। এই যেমন ধরেন, এনার বক্তব্য, শুরুতে খবর্দার দামী লাইটিং যন্ত্রপাতি কিনে পাকামো করতে যেও না; আগে ঘরের পাতি লাইটবাল্বটার সামনে একটা লোককে খাড়া করিয়ে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে ছবিটবি তুলে লাইট সম্পর্কে ধারণা তৈরি কর। আমার কথায় বিশ্বেস না হয়, আমাগো পশুপর্ন ইন্ডাস্ট্রির মেগাস্টার ফটোগ্রাফার ফাহিম’কেই জিগায় দেখেন, লেন্স সম্পর্কে সে কেমনতর মৌলবাদী!
(এই পোস্টখানাও তাকেই উৎসর্গ করা হইল...)

যাঁরা নিউইয়র্ক গেছেন, তাঁরা বুঝবেন, এই শহরটার প্রতিটি বর্গইঞ্চির ছবি এতজন এতভাবে তুলে ফেলেছে, যে নতুন কিছু সৃষ্টি করা গুরুতর সমস্যা। ১৩১ নম্বর রাস্তার ৩৭৫ নম্বর বাড়িটার বাঁকা ল্যাম্পপোস্ট থেকে ভোরের আলোয় এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং অথবা সেন্ট্রাল পার্কে একখানা ঝরাপাতা, সবই ক্লিকিত হয়ে আছে। এমন সময় পাতা উল্টোলেই যদি দুম করে পাতাজোড়া উপরের ছবিটার মত একটা খুবসুরত ছবি (সানরাইজ/সানসেটের ছবির প্রতি আবার আমার একটু দুর্বলতা আছে, হেঁ হেঁ) বেরিয়ে আসে, দেখলে মনটা খুশি হয়ে যায়। এইটুক ছবিতে আসল ফটোর ১% মুগ্ধতাও হয়ত আসবে না, এটাই দেওয়ালজোড়া প্রিন্ট করে নিলে মজা বুঝবেন। তাই-ই নাকি নিউ ইয়র্ক টাইমসের এডিটরের ঘরে ঝোলানো ছিল।(ছবিটায় ক্লিক করলে ফুল-স্ক্রিন একটা ভার্শন পাবেন।)

পড়তে শুরু করলাম ছবির গল্পখানা। প্রথমেই যেটা খটকা লাগে, ম্যানহাটান এমন ঘুরঘুট্টি অন্ধকার কেন, কেবল রাস্তার কিছু গাড়ির আলো? মনে পড়ে গেল, আমরা যখন হাইস্কুলে নয়ত সদ্য কলেজে, তখন নিউইয়র্কে বেশ দুয়েকদিনব্যাপী লম্বা লোডশেডিং হয়েছিল, বিশাল আন্তর্জাতিক খবর হয়েছিল সেটা। নিশ্চয়ই অমন বড়সড় কিছু একটা ব্যাপার হবে, তাই-ই ছবিটা তোলা?

দেখলাম, সেটাই। সেদিন বিকেলবেলা ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেলে ট্রাফিক লাইটও নিভে গিয়ে রাস্তাঘাটে বিরাট হট্টগোল লেগে গিয়েছিল। লোকে দুহাজার ডলার দিয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া করেও বাড়ি পালাচ্ছিল। (আমেরিকায় হেলিকপ্টার তেমন একটা ব্যাপার না। গডজিলা/কিংকং/জোকার হরবখত দুটো-চারটে ভাঙে, দেখেননি? আমাদের বাড়ির পাশেই হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের হসপিটাল, সেখানে প্রতি কয় মিনিট অন্তরই একটা করে হেলিকপ্টার-অ্যাম্বুলেন্স এমার্জেন্সী রুগী নিয়ে এসে নামে।) এই ভিনসেন্টও রাস্তায় বেরিয়ে কিছু খুচখাচ ছবি তুললেন, তারপর ভালো করে তোলার জন্য কোথাও যেতে চাইলেন কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে যেতে পারলেন না। তখন নিউ ইয়র্ক টাইমসে তাঁর সম্পাদককে ফোন করে বললেন, হ্যাঁগা, একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করো না? এরিয়াল শট তুলি?
কিন্তু সম্পাদক বললেন, এত ক্যাচালের মধ্যে অত শখ করে না। আর আজকাল জিনিসপত্রের, ইসে, হেলিকপ্টারের যা দাম...
ইনিও নাছোড়বান্দা, বললেন, জীবনে কয়বার এমন ব্ল্যাকআউট দেখেছো তুমি? সেই পঁয়ষট্টির ম্যানহ্যাটান ব্ল্যাকআউট ফ্রন্টপেজ নিউজ হয়েছিল, তারপর এই। আমাকে একটা ব্যবস্থা করে দাও, কাল তুমিও অমন ফ্রন্টপেজ নিউজ করতে পারবে।
বারছয়েক ফোন করে চাপাচাপি করার পর সম্পাদক রাজী হলেন। তাও হেলিকপ্টার পাওয়ার সমস্যা, সবাই যে ডাকাডাকি করছে তা তো বললামই। তবুও, নিউ ইয়র্ক টাইমস বলে কথা, ব্যবস্থা একটা হল, আধ ঘন্টার জন্য। তার পরই নিচের ছবিটা পরদিন ফ্রন্টপেজ আলো করে বের হল...

ঐ এডিটরই তার পরে ভিনসেন্টকে ফোন করে চাইলেন আগের ছবিটার একটা প্রিন্ট। ইনিও মনে মনে বললেন, দাঁড়াও জাদু, এইবার তোমাকে দেখাচ্ছি। অনেক ঘুরিয়ে ছয় মাস ধরে ছয়খানা রিমাইন্ডার পাওয়ার পর শেষে ছবিখানা দিলেন। নিতে গিয়ে ছয়বার ফোনের কথা খেয়াল করে এডিটরও হেসে ফেললেন।

বইয়ের ছবিগুলো দেখলে যেমন বোঝা যায় এরিয়াল ফটো তোলা এনার বেশ প্রিয়, তেমনই টিল্ট-শিফ্ট ফটোও অনেক তোলেন। ইউ.এস.ওপেন ২০০৬ ফাইনালে শারাপোভা বনাম হেনিন’এর এই ছবিটা যেমন ক্যাননের ৪৫ মিমি টিল্ট-শিফ্ট লেন্সে তোলা। (এটাতেও ক্লিক করলে ফুল-স্ক্রিন একটা ভার্শন পাবেন।)

এই ছবিটার গল্পে তিনি বলছেন, কিশোরবয়সে এই স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেখতে যাওয়ার সময় তিনি মুগ্ধতাভরে দেখতেন, স্পেস টেলিস্কোপের মত গাবদা টিভিক্যামেরা নিয়ে এরিনার পাশ ঘিরে কত ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে। তার দশ বছর পর তিনি নিজেই তেমন একজন ফটোগ্রাফার হবার সুযোগ পেলেন। তবে পাতি ছবি না তুলে, নতুনরকম কিছু তোলার জন্য তিনি তাঁর প্রিয় টিল্ট-শিফটের উপরই নির্ভর করলেন।

এখন কথা হল, ভালো শট পাবেন কীভাবে? ভেবেচিন্তে দেখলেন, ছোটবেলায় দর্শক হিসাবে একদম উপরের সারি থেকে যেমন দেখতেন, তেমনই জায়গায় যাবেন। লম্বা টেলিফটো নিয়ে শারাপোভার উপর হামলা করলে হয়ত তার বেতসলতা সম তনুখানি তুলতে পারবেন, কিন্তু পারস্পেক্টিভ কিছুই আসবে না। এখান থেকে পুরো স্টেডিয়ামজোড়া একটা ভিউ আসে যা দর্শককে ভালো পারস্পেক্টিভ দেবে। আবার টিল্ট-শিফ্ট নেওয়ার ফলে কেবলমাত্র শারাপোভাই ফোকাসে থাকবেন, প্রতিপক্ষ ঝাপসা, স্টেডিয়ামজোড়া দর্শক আরো ঝাপসা, ছবিটা দেখতেও ভালো লাগবে; এমনি একটা ওয়াইড লেন্স নিলে সবকিছুই পরিষ্কার ফোকাসে আসত, বিজয়ীকে হাইলাইট করা যেত না।

ইনি খেয়াল করে দেখলেন, ভাগ্য ভালো, তিনি কোর্টের সেই পাশটাতেই বসেছেন যেখানে শারাপোভার মা-বাবা খেলা দেখতে এসেছেন। অতএব জেতার পর যদি শারাপোভা পরিবারের দিকে ফিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, মুখোমুখি ভালো একটা শট পাবেন। তারপর আর কি, সময়মত খ্যাচাক করে শাটারটা টিপে ফেললেন!

পরের কোনো একটা পোস্টে এখানকার এক ইত্তালীয় বালিকার গল্প শোনাব, তার সঙ্গে সম্প্রতিই পরিচয় হল। ভারত মহাসাগরের সুনামি যখন ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আঘাত করে, তার ঠিক আগের সপ্তাহেই ওই দিন আমরা ছিলাম মহাবলীপুরমের প্রাচীন মন্দির চত্বরে আর কলাপক্কমের আণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সুনামির ঠেলায় কলাপক্কমের রিঅ্যাক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ওই কেন্দ্রের বিজ্ঞানী-সহ বহু লোক মারা যায়। মহাবলীপুরমে পাড় ভেঙে বালির মধ্যে থেকে কিছু নতুন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বেরিয়ে আসে। শুনলাম, ঠিক ওই দিনে ওই বালিকা নাকি ছিল অন্ধ্র’র বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রতীরে। তা ভিনসেন্ট বলছেন, অন্যান্য দেশে এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে আমরা সহানুভূতি, সমবেদনা দেখাই, কিন্তু নিজেদের এই মহাশক্তিধর দেশেও যখন এমনটা ঘটে কেবল তখনই প্রকৃত ‘শক’টা অনুভব করতে পারি। হারিকেন ক্যাটরিনা নিয়ে উনি অনেকটা লিখেছেন, উপরের ছবিটাও বন্যাবিধ্বস্ত নিউ অর্লিয়ন্স শহরের।

২০০৫ সালের ইউ.এস.ওপেন কভার করতে যাওয়ার সময় এডিটরের ফোন পেলেন, যে একটা বড় হারিকেন আসছে, যাবে নাকি? হারিকেনের ছবি উনি আগে অনেকই তুলেছেন, শোঁ-শোঁ ঝড়, বৃষ্টি, গাছপালা উলটে পড়া ইত্যাদি, মজাদার-ই বলা চলে, তবে তার মধ্যে আর নতুন কী আছে? তবুও গেলেন একটা প্লেন ধরে, তারপর হেলিকপ্টারে করে পৌঁছলেন নিউ অর্লিয়ন্স বিমানবন্দরে। সদ্য বন্যাবিধ্বস্ত সেই শহরে তখন এয়ারপোর্টই একটা হাসপাতাল বলা চলে। লাগেজ কার্টে করে আহত মানুষদের নিয়ে আসা হচ্ছে, মাল আসার কনভেয়ার বেল্টের উপরেই সারি সারি অসুস্থ মানুষ শুয়ে রয়েছে। খালি মেঝেতেই অগণিত আহত, অসুস্থ, মৃত লোকে পড়ে আছে।

সামনে এয়ারপোর্টের পদস্থ একজন মহিলাকে অবশেষে পেয়ে সটান জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি সাংবাদিক, এখানে ছবি তুলতে পারি?’ ইনি লিখছেন, আমি ঘাড়ধাক্কা খাওয়া প্রায় অবশ্যম্ভাবীই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওই মহিলা কাঁদতে আরম্ভ করলেন। বললেন, ‘না এখানে ছবি তোলা যায় না। কিন্তু আমার চাকরি যায় যাক। আপনি ছবি তুলুন যত পারেন। আমি একনাগাড়ে ওয়াশিংটন ডিসি’তে ফোন করে যাচ্ছি, সাহায্য চাইতে, আর সরকারের কেউ বুঝতে পারছে না এখানের অবস্থা কত খারাপ। যান, কত ছবি পারেন তুলুন, কত ছবি পারেন ছাপান। যান!’

বইয়ের সব গল্প তো আর এভাবে বলে দেওয়া যায় না, অতএব এইবারে ক্ষান্ত দিই। এই লোক ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল থেকে আফগানিস্তানের যুদ্ধের ছবি তুলেছেন, সেখানে ছবি তোলার অপরাধে ত্রিশ জন একে-৪৭’ধারী পাশতুনের হাতে ঘেরাও হয়ে জীবনের দীর্ঘতম ২৫টা মিনিট কাটিয়েছেন, আবার আমেরিকান এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস লিঙ্কনের উপর থেকে ক্যামেরা হাতে দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাক্ষী থেকেছেন। তাই পনেরো বছর বয়সে তাঁর হাতে প্রথম ক্যামেরা তুলে দেওয়া তাঁর ফটোগ্রাফার বাবাকে বইয়ের শুরুতে স্মরণ করে বলেছেন, যে পেশায় আমি সকালে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টকে আর বিকেলে রাস্তার হোমলেস’কে ক্যামেরাবন্দী করতে পারি, শেখার অফুরন্ত সুযোগ এনে দেওয়া সেই পেশার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বাবাকে ধন্যবাদ।

ফিরে এসে ভিনসেন্ট লাফোরেত লোকটাকে একটু গুগল করলুম। দেখলাম, ইনি বেশ এলেমদার লোক – মাত্র আঠাশ বছর বয়সেই পুলিতজার সহ অগুন্তি খেতাব পেয়ে বসে আছেন, বয়স এখনও চল্লিশও হয়নি। সম্প্রতি ডকুমেন্টারি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন অনেকটা। HDSLR অর্থাৎ DSLR ক্যামেরা দিয়েই এইচডি ভিডিও তোলার এনার প্রয়াসকে এই ঘরানার প্রাথমিক ধাপ বলে ধরা হয়। ক্যানন তাদের নতুন HDSLR ক্যামেরা C300-র প্রোটোটাইপ রিভিউ করতে এনাকে ডাক দিয়েছিল। এঁর ব্লগ থেকে একটা ছোট্ট ভিডিও দেখলাম এই HDSLR যন্তর দিয়ে HDR মুভি বানানোর, দেখতে পারেন, বেশ ঝকঝকে, আর কেমন অশ্লীলরকম দামি সব যন্ত্রপাতি দিয়ে এনারা কাজ করেন তারও একটা ঝলক পাবেন।

যদি ওই ভিডিওটা নাও দেখেন, এই ভিডিওটার প্রথম এক মিনিট অবশ্যই শুনে দেখুন। ছবির আলোচনায় খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক – একখানা নতুন স্টিরিও মাইক্রোফোন কিনে ইনি আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়ে সেটার রিভিউ দিয়েছেন। তবে কানে হেডফোন লাগিয়ে একবার শুনে দেখুন, আপনিও নির্ঘাৎ আহ্লাদে আটখানাই হবেন। তবে আফসুস, এ যন্তরখানাও অশ্লীলরকমই দামি।

এনার ব্লগটা একদিন সারারাত জেগে পড়লাম অনেকগুলো পাতা, ভারি ইন্টারেস্টিং। ফটোশপে ভিডিওর স্পেশাল এফেক্টস শিক্ষা থেকে নভিস ফটোগ্রাফারদের জন্য লেন্স-পরিচিতি, সবই আছে। নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। গ্যালারিতে অনেকগুলো ছবি বড় মাপে দেখতে পাওয়া যায়। এনার বইটাও নেটে চোরাবাজারে পড়তে পাওয়া যায় বটে, তবে চকচকে পাতাজোড়া ছাপা ছবি হাতে নিয়ে দেখে যেমন আরাম, ইবুকে তেমন না।


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

দারুণ লেখা। নিজে ফটোগ্রাফার না হলেও আগ্রহ আছে এই বিষয়ে। ভদ্রলোকের ছবি তোলার হাত দুর্দান্ত!

অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলা যে ঠিক নয় সেটা এদের কাছ থেকে শিখলেও পারেন আমাদের ছবিওয়ালারা। বিশেষ করে অচেনা কারো অনুমতি না নিয়ে তার একার ছবি তুলে সেটা আপলোড করার যে প্রবণতা দেখি, সেটা মোটেই ভাল্লাগে না।

পশ্চিমা বইয়ের দোকান সবই কি এরকম নয়? ব্যবহৃত বইয়ের দোকান বাদে সব দোকানেই তো হরদম মাগনা বই পড়ছে মানুষ।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। উদাস ভাইয়ের পোস্টের ছবি অনুসারে বলি, আমার একটা সদ্য কেনা ডিএসএলআর আছে বটে কিন্তু আমিও ফটোগ্রাফার নই, কেবল উৎসাহ আছে। হাসি

হ্যাঁ, তা ঠিক। বস্টনের মত ইউনিভার্সিটি টাউনে একটু বেশি ছেলেছোকরারা যায় হয়ত।

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলা যে ঠিক নয় সেটা এদের কাছ থেকে শিখলেও পারেন আমাদের ছবিওয়ালারা। বিশেষ করে অচেনা কারো অনুমতি না নিয়ে তার একার ছবি তুলে সেটা আপলোড করার যে প্রবণতা দেখি, সেটা মোটেই ভাল্লাগে না।

চলুক সহমত।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হ্যাঁ হ্যাঁ করলেন যে বড়! ব্যাঙ দম্পতির ইয়ের ছবি তোলার সময় অনুমতি নিছিলেন কিনা আগে কন! চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটাই আম্মো বলতে যাচ্ছিলাম! দেঁতো হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

পুরাই সেরাম। ধন্যি এই ভিনসেন্ট লাফোরেত। ব্যাটার ফডুগ্রাফির এলেম দেখে চরম উদাস হয়ে গেলাম গো।

তবে বড় হয়ে আমি ভালু ফডুরে হবার আশা রাখি। আর তুমি এই ধরণের পোস্ট ছাড়তে থাকলে বড় হতে হতে ঠিক ঠিক কিছু কাণ্ড করবই করব। হুম।

কৌস্তুভ এর ছবি

তুমি তো এখনই জোশিলা ফটুরে হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

দেঁতো হাসি তার মানে বলতেছ আমি সত্যিই উদাস ভাই এর মতো বড় হয়ে গ্যাচি। ইয়ে হয়ে গ্যাচি? ইয়ে, মানে... উনি তো আবার ন্যাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়েচেন।

দ্রোহী এর ছবি

ভালো লাগলো।

আমার একটা ডিয়েসেলার আছে। সেটা দিয়ে আমি যে মানের ছবি তুলি লোকজন আদিম যুগের মোবাইলের ভিজিয়ে ক্যামেরা দিয়ে তার চাইতে ভাল ছবি তোলে। মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

আধুনিক আইফোনের শুকনো ক্যামেরা দিয়ে ফটো তোলার কম্পিটিশনে যেসব ছবি আসে তাই-ই দুর্দান্ত। কম্পোজিশন আর ভাগ্য ভালো হলে দামী ক্যামেরা ছাড়াও ভালো ছবি পাওয়া যায়। আর আমার কপাল, যেদিনগুলোয় ক্যামেরা নিয়ে বেরোই না সেদিনই রাস্তায় দারুণ সব জিনিস দেখতে পাই। এমনকি আমার চিরচেনা ক্লাসমেটই এমন একখানা সাজ দিয়ে উপস্থিত হল যে আফসোস হতে শুরু হল।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দারুণ লেখা।
পোস্টে পাঁচ তারা।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহিম হাসান এর ছবি

কৌস্তুভদা ঠিকই বলেছেন। লেন্সের ব্যাপারে আমি বেশ মৌলবাদী, একটু ওল্ড স্কুল ঘরানার। জুম লেন্স আমি আদতে পছন্দই করি না। কিট লেন্স আমার দুই চক্ষের বিষ। ভেবেন না যে আমি ভাব মারছি, নতুন এস এল আর ব্যবহারকারীদের জন্য কিট লেন্স ১৮-৫৫ মিমি একটা অভিশাপ। এটা কম্পোজিশানের হাত নষ্ট করে দেয়। ফটোগ্রাফারদের অলস করে ফেলে। বরং একটা ৫০ মিমি প্রাইম দিয়ে শুরু করলে হাত দ্রুত পাকে।

ছবির পিছনের গল্পগুলো শুনতে আমার সবসময় খুব ভাল লাগে, কখনো কখনো মূল ছবির চেয়েও বেশি। আমি নিজে ছবির সাথে খুব সহজে রিলেইট করতে পারি, আফসোস এই যে আমি একধরনের ঈর্ষা অনুভব করি। এই লোককে আমি চিনিই না, তবু তার সৌভাগ্য দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ছবি তোলা আমার প্যাশান, এ জন্য আমার আরো হাম্বল, আরো বুঝদার হওয়া উচিত, কিন্তু ভাল ছবি আমাকে যতটা প্রেরণা দেয়, তার চেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত করে। ভাল ছবি তুলতে না পারার অক্ষমতা আমাকে পোড়ায়, সেই যন্ত্রণাটা পড়াশোনাতেও প্রভাব ফেলে।

কৌস্তুভদা, অন্যের ছবি তো অনেক হয়েছে, এবার আপনার ৬০ ডি এর কেরামতি একটু দেখি! আর পোস্ট উৎসর্গ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

এই তো মুশকিল! ভালো ছবি তোলার শখ থাকলেও ভালো ছবি তোলার উচ্চাশা আমার নেই, তাই গুরু লোকেদের ছবি দেখে কেবল আনন্দ পাই, ঈর্ষা হয় না দেঁতো হাসি

আমার মনে হয় এইটা বিশদে আলোচনা করে তোমার একটা পোস্ট দেওয়া উচিত।

বাইদাওয়ে, সেদিন দেখলাম এক প্রৌঢ় ফটোগ্রাফার ট্রাইপডবিলাসীদের ধমক দিয়ে বলছেন, শুরুর দিনগুলোয় আইএসও ১০-এর ফিল্মে লোকজন ছবি তুলত হাতে ধরে, আর এখন ৬৪০০ আইএসও'র ক্যামেরা নিয়েও তোমাদের হাত এত ঠ্যার ঠ্যার করে কাঁপে যে ট্রাইপড লাগে! খাইছে

কোলাকুলি আসেন প্রিয় ফটুগফুর হাসি

যাযাবর এর ছবি

চলুক

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা! কী দারুণ, সব ছবি আর বর্ণন।

কৌস্তুভ এর ছবি

দারুণ ছবি তোলেন বলেই না অল্প বয়সেই এনার এত নামডাক! আর মনে হয় ভালো বর্ণনা করার গুণ থেকেই এনার সিনেমার গল্পের প্রতি আগ্রহটা হয়েছে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

চমৎকার বর্ণনা।
ছবির পেছনের গল্প বরাবরই টানে আমাকে।

...........................
Every Picture Tells a Story

কৌস্তুভ এর ছবি

দাদা, আপনার ছবির পেছনের বেড়ানোর গল্পগুলোও কিন্তু দুর্দান্ত! বই বেরোবে কবে? নাকি বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বেরোয়নি! তবে বেরোক! আসেন দাবী তুলি!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

আমি তো জানতেম দাবী অনেক দিন থেকেই আছে!

মুস্তাফিজ এর ছবি

হুম বই!!!

...........................
Every Picture Tells a Story

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, বই!

সজল এর ছবি

তার মানে এই কয়টা পেজ পড়ার পরে দোকান থেকে বের করে দিয়েছিল?
ভালো লাগলো, পুরো গল্পদাদু স্টাইল। দুঃখের কথা আর কী বলব, একটা DSLR এর অভাবে দুনিয়া আমার প্রতিভা টের পেলো না।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

কৌস্তুভ এর ছবি

হ, কইছে তোরে! রেগে টং

মনে হয় খালিদ আঙ্কেল যখন মনের দুঃখে বনে চলে যাবেন, মানে বাণপ্রস্থে যাবেন আরকি (আর ওঁর যা বয়স বলে দাবি করেন তাতে সেইটার বেশি দেরিও নেই), তখন ওনারটা হাতিয়ে নিলেই হবে চোখ টিপি

তিথীডোর এর ছবি

তার মানে এই কয়টা পেজ পড়ার পরে দোকান থেকে বের করে দিয়েছিল?

হো হো হো

নিকের ব্যাপারটা ফয়সালা হওয়ার আগ পর্যন্ত পোস্ট নিয়ে কিছু কমু না। শয়তানী হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কৌস্তুভ এর ছবি

শিশুরা ফটোগ্রাফির কিই বা বোঝে! তারা তো ফুলো ফুলো গাল নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাসতে পারলেই খুশি! খাইছে

সাম্য এর ছবি

দারুণ লাগল।

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

চরম উদাস এর ছবি

বাহ, ভালো লাগলো লেখা। হাততালি
এইলোক তো দেখি সত্যিকারের ফটফুর।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার শুরুর দিকের একটা পোস্টে পড়েছিলাম গাছের গুঁড়ির উপর আপনার নাকি ভাবীজানের ছবি তোলার কাহিনী, সেইটাও সেরম হইছিল দেঁতো হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

হাততালি

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এই ব্যাটার একটা আঙুল পাইলে রান্না কইরা খাইতাম!

পোস্ট মারাত্মক!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

খাইসে, একলব্য হয়ে গেলে কি আর ক্যামেরা চালাতে পারতো?

মুনীর এর ছবি

চমৎকার লেখা উত্তম জাঝা!

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রিসালাত বারী এর ছবি

ফোটো তুলতে পারি না। দেখেই শান্তি। চলুক

আর ইয়ে, মানে ঐ যে সারাপোভা না কার যেন ছবির কথা বললেন সেটা কুতায় চোখ টিপি

কৌস্তুভ এর ছবি

ওই ছবিটায় ক্লিক করেন, বড় করে দেখতে পাবেন। আর তাতেও না পোষালে গুগ্লান খাইছে

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

উচ্ছলা এর ছবি
কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

চলুক গতকালই পড়েছিলাম, কমেন্টানো হয় নি, দারুণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন, উনার কাজ সম্পর্কে আগে শুনেছিলাম।

কৌস্তুভ এর ছবি

হ, ইনিও আপনার মতনই কামান কান্ধে প্রচুর ঘোরাঘুরি করেন কি না দেঁতো হাসি

অমিত এর ছবি

চমৎকার লাগল। বইটা একটু নেড়েচেড়ে দেখতে হবে মনে হচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।