একাত্তরের ‘ইতিহাসকরণ’ কাকে বলে?

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: সোম, ০২/১১/২০১৫ - ৬:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্প্রতি Historicizing 1971 Genocide: State versus Person নামে একটা বই হাতে পেলাম। ২০০৯ সালে প্রকাশিত বইটির লেখক Imtiaz Ahmed, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেখানকার Centre for Genocide Studies এর ডিরেক্টর।

বইটির শিরোনাম, ‘একাত্তরের ইতিহাসকরণ’ অবশ্যই ইন্টারেস্টিং এবং প্রমিসিং, সুষ্ঠুভাবে একাত্তরের ঘটনাবলীর ইতিহাস লেখার যে কোনো প্রয়াসই প্রশংসনীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সে কাজ করতেই পারেন। বিশেষত লেখক নিজেই বলছেন যে তিনি একাত্তরের জিনোসাইড বিষয়ে প্রায়ই একাডেমিক বক্তৃতা দেন, যাতে নাকি এমনকি পাকিস্তানি গবেষকরাও আগ্রহী। তবে বইটির উপ-শিরোনাম অদ্ভুত লাগল, একাত্তরের ইতিহাস রচনার প্রয়াসকে ‘রাষ্ট্র বনাম ব্যক্তির দ্বন্দ্ব’ হিসাবে দেখানোর প্রয়োজন আছে কি?

বইটা পড়তে গিয়ে যা বুঝলাম, এটি পোস্টমর্ডানিস্ট তত্ত্বের জার্গনে ভরপুর। সাধারণ পাঠকের জন্য একাত্তরের ইতিহাস লিখতে গেলে বইটিকে এভাবে ভারাক্রান্ত করে তোলা পাঠককে প্রকান্তাররে দূরে রাখার শামিল বলেই আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে মনে হয়। বইটিতে পাতায় পাতায় ফুকো, হেগেল, হেজেমনি, ডিসকোর্স, কাউন্টার-ডিসকোর্স, ন্যারেটিভ, সাবঅলটার্ন, কলোনিয়ালিজম, সেমি-কলোনিয়ালিজম, ডায়ালেক্টিক, সাইকোনিউরোসিস এইসব অকারণ কঠিন শব্দজালে পাঠকের না জড়িয়ে নিস্তার নেই। বইয়ের একটা প্রশ্নোত্তরে এর সুন্দর নমুনা মিলবে:

A pertinent question therefore would be, why were they all so brutally killed?

The matter, indeed, is not so much with the subaltern as it is with its dialectic, the hegemon. The state of subalternity, in fact, infuses in the minds of the hegemon the 'will to power,' which cannot help but reproduce a precise form of psychoneurosis. Brutality is part of this neurosis. Once the hegemon, faced with an imminent threat to its pre-eminent position, decides to 'teach a lesson' to the subalterns there is no end to brutality, blurring in the process the various subaltern layers found in the colonized or semi-colonized state.

সংক্ষেপে বলা চলে, বইটি পোস্টমর্ডানিস্ট ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে statist discourse এবং personagraphy এর মধ্যে তফাত দেখাতে চেয়েছে। প্রথমটির অর্থ রাষ্ট্রের নির্ধারিত আলোচনা বা দৃষ্টিভঙ্গি, আর দ্বিতীয়টির অর্থ কোনো ব্যক্তির নিজস্ব অবস্থান থেকে তার অভিজ্ঞতা। লেখকের মতে এই দুইটি অবস্থান থেকে খুবই ভিন্ন দুরকম ইতিহাস রচিত হয় সাধারণত। পশ্চিমা ধারায় রাষ্ট্রেরই প্রাধান্য, তারাই ইতিহাস লেখে, জিনোসাইডের বিচার করে, কিন্তু সবই নিজস্ব অবস্থান থেকে, জিনোসাইডের ফলে প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে। লেখক এই দুটোর মধ্যে সন্ধি ঘটাতে চান, গণহত্যাকারীদের শাস্তি পাওয়াতে চান, কিন্তু মূলত উপেক্ষিত ‘ব্যক্তি’-দের কথাবার্তা নজরে নিয়ে আসাই তাঁর উদ্দেশ্য।

তিনি বইটা শুরু করেন ইতিহাস কাকে বলে, ইতিহাস কীভাবে গঠন করা হয়, পশ্চিমা ধারায় রাষ্ট্রের প্রাধান্য, ব্যক্তিকে উপেক্ষা করা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে হেগেল কী বলেছেন, ইত্যাদি আলোচনা করে। একাত্তরের ইতিহাসের উপর মাত্র চুয়াল্লিশ পাতা/চার অধ্যায়ের একটা বইতে পুরো একটা অধ্যায়ই এই তাত্ত্বিক কচকচানিতে ব্যয় করা আমার অপ্রয়োজনীয়ই মনে হল।

দ্বিতীয় অধ্যায়টা statist discourse বিষয়ে, একাত্তরের সময় থেকে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে এই বিষয়ে ইতিহাস রচনায় উপেক্ষা করেছে তা নিয়ে। বস্তুত, এই বিষয়ে সরকারের ডিসকোর্স যে ঠিক কী, তার কোনো স্পষ্ট ধারণাই লেখক দেন না, যদিও বার বার তার নিন্দা করে চলেন। এবং সরকার যে একাত্তরের ইতিহাস ঠিক মত রচনা করতে পারে নি, বরং পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় সহযোগীদের (রাজাকার নামটা উনি মুখে আনেন না) ক্ষমা করে দিয়েছে, এর দায় উনি মোটামুটি মুজিবকেই দেন। যেমন তিরিশ লাখ নিহতের বিষয়ে সরকার এবং মুজিবের বক্তব্য ওনার মতে ‘statistical nightmare’ (বিশদ নিচে)। বিশেষ করে তিরিশ লাখ নিয়ে ওনার খুবই কষ্ট, “The discourse on the numbers was the most painful one; for it went on to quantify death with little or no attention to the person concerted.” অবশ্য মিষ্টি করে এটাও বলেন যে যুদ্ধবন্দী হস্তান্তরটাও করতে হত, তাই জনতা প্রতিবাদ করেনি, ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় মুজিবের অবদান নিয়েও ওনার কোনো বক্তব্য নেই। ৭ই মার্চের ভাষণের উল্লেখ করে সেটার ‘রাজনৈতিক চাতুর্য্যের’ প্রশংসা তিনি করেছেন বটে, কিন্তু সেটা নিজের ‘জিয়ে পাকিস্তান’ তত্ত্বকে সুগারকোট করতে (বিস্তারিত নিচে)।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে যে কখনও একাত্তর বিষয়ে স্থির রাষ্ট্রীয় অবস্থান ছিলই না, মুজিবের হত্যা-পরবর্তী সরকারের আমলে যে বিচার করার পরিস্থিতি ছিলই না বরং জিয়া সরকারে ও পরবর্তী সেনা শাসনামলে রাজাকারদের ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেওয়া, বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকারদের মন্ত্রীত্ব দেওয়া, এগুলোও দিব্যি অনুচ্চারিত রেখে যান। অন্যান্য সরকারগুলির বিষয়ে ওনার বলা বাক্য মাত্র এই কটি:

This resulted in the continuation of imprisonment of some 11,000 collaborators, who too were released, following an appeal, when the government of Justice Abu Sayeed Sayem and General Ziaur Rahman scrapped the Collaborators Act on 31 December, 1975."

Towards the end of Ershad's military regime and more effectively following the return of democracy in 1991 the issue of genocide once again attained a centre place in public discourse.

This is precisely what had happened to Ekatturer Ghatak Dalal Nirmul Committee (The Committee for the Annihilation of the Collaborators of 1971). Formed in January 1992 under the leadership of Jahanara Imam, the civil body could not resist the temptation of being partisan, indeed, to the point of inviting kudos from the then main opposition party, the Awami League, while facing the wrath of the then party in power, the BNP. But then somewhat unfortunately, with the Awami League entering into a tactical alliance with the Jamaat-e-Islami and the former wining the 1996 elections, the work of Nirmul Committee almost came to a close while the issue of genocide began to be used for partisan interest, this time to consolidate the power of the Awami League vis-a-vis a formidable alliance of BNP and the Jamaat-e-Islami. The statist discourse settled for a regime consideration, and nothing changed during the Awami League in power (1996-2001) and understandably not even with the BNP-Jamaat in power (2001-2006).

Things however began to change a little with the arrival of the military-backed second Caretaker Government in January, 2007.

তার পরে ব্যক্তি-নির্ভর ডিসকোর্স অধ্যায়টা ওনার হাতে হয়ে যায় মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্ভর ডিসকোর্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনে ও একাত্তরে তাদের প্রধান অবস্থান, ইত্যাদি আত্মগরিমা প্রচারই সেই অধ্যায়ের কেন্দ্রে। কথাগুলো মিথ্যে নয় অবশ্যই, তবে এক্ষেত্রে সেটা DUist discourse কেন বলা যাবে না না তা আবারো ক্ষুদ্র আমি বুঝতে অক্ষম।

এই অধ্যায়ে লেখক আগ্রহী সাবঅলটার্ন অর্থাৎ প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে, ইউনিভার্সিটির সাধারণ মালি ঝাড়ুদার ইত্যাদি কর্মচারী, যারা ইন্টেলেকচুয়াল অর্থাৎ শিক্ষক ছাত্র এদের মত আন্দোলনের মস্তিষ্ক না হওয়া সত্ত্বেও অকারণে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলি খেয়েছিল, তাদের নিয়ে। তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে, তাদের অভিজ্ঞতা শিক্ষক-ছাত্রদের অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে, তাদের ইনোসেন্স-এর কথা বলে, আক্রান্ত মানুষদের পরোপকারে উৎসাহের কথা বলেছেন। তারপর বলেছেন এদের যারা অত্যাচার করেছে সেই অপরাধী গণহত্যাকারীদের শাস্তি দিতে হবে। ভাল কথা, কিন্তু খুবই স্বাভাবিক কথা। যুদ্ধে আহত-নিহত মানুষদের মধ্যে অল্পই ছিল ইন্টেলেকচুয়াল শ্রেণীর, যারা মারা গেছে তারা মূলত সাধারণ মানুষ, গ্রামবাসীই, এটা সবাই-ই জানে। সংবাদপত্র-প্রবন্ধে নানা সময় তাদের নানা কথা এসেছে। এই কথাগুলোকে ‘রাষ্ট্র বনাম ব্যক্তি’ হিসাবেই উপস্থাপিত করার প্রয়োজন আছে কি?

শেষ অধ্যায়, Epilogue-এ লেখক ওই দুই ‘বনাম’-এর মধ্যে সন্ধি করতে চেয়েছেন। আগের অধ্যায়টা যেমন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে সেলস পিচ, এই অধ্যায়টা তেমন লেখকের প্রস্তাবিত জিনোসাইড সেন্টারের সেলস পিচ। এবং বলাই বাহুল্য যে তিনি সফল, কারণ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সেই সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তিনি সেটার ডিরেক্টর, যে সেন্টারের ‘Background & Rationale’ পৃষ্ঠাটি মোটামুটি তাঁর বইয়েরই ওই অধ্যায়ের কপি। তিনি ডাকছেন, আসুন, এমন একটি সেন্টার গঠন করে আমরা ‘নলেজ ক্রিয়েশন’ করি, যেখানে জিনোসাইড বিষয়ে রিসার্চ, টিচিং, জিনোসাইড ট্যুর ও জিনোসাইড মিউজিয়াম হবে। আর কে না জানে এমন কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্থান হবে, যার কারণ তিনি আগেই ব্যাখ্যা করেছেন।

সেখানে তিনি বলছেন, এই সন্ধি চারটি স্তরে করা সম্ভব: ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দেশ, আন্তর্জাতিক। মজার ব্যাপার, তিনি শেষ দুটি, বিশেষত শেষটির উপরেই জোর দিয়েছেন। বলেছেন ব্যক্তি বিশেষে মামলা করলে যেমন বিশদ সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগে তা এতদিন পর জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব, তার চেয়ে রাষ্ট্র মামলা করলে প্রভাবিত সব ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে পারবে। এই অতি অবভিয়াস কথাগুলো বলার জন্য প্রথমে ‘দেশ বনাম ব্যক্তি’ দ্বন্দ্ব দেখিয়ে, যেখানে দেশের কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য বা অবস্থানই ছিল না সবসময়, তার পরে 'ব্যক্তির উপর আলোকপাত করা অত্যন্ত প্রয়োজন' বলে হাঁকডাক করে, ‘দেশ-ব্যক্তি সমন্বয়ের পরামর্শ’ নামে কতগুলো গালভরা কথা বলে, শেষে দেশের পরিচালিত মামলার পরামর্শ দেওয়া, নিছকই ঘুরিয়ে নাক দেখানো। এখন বুঝতে পারছি কেন বইটি মাত্র ৪৪ পাতার: একটা বিজ্ঞাপনী প্যামফ্লেট আর কত মোটা হয়?

যা হোক, কেউ সফল বিজ্ঞাপনী প্যামফ্লেট লিখে নিজের দুটো আখের গুছিয়ে নিলে, এমনকি মুজিবকে কৃতিত্ব না দিলেও (তাঁর অবদান মানুষের প্রশংসা-নিন্দার পরোয়া করে না) তেমন কিছু হয়ত বলার থাকত না। কিন্তু বইটা পড়তে গিয়ে যখন দেখি সেটা পাতায় পাতায় ভুলে ভরা, এমন তথ্যগত ভুল যা একজন ছাত্র করলেই হয়ত তার থিসিস বরখাস্ত হয়ে যেত কিন্তু একজন শিক্ষক নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছেন, এবং শুধু তাইই নয়, সবচেয়ে বড় অপরাধ এই যে স্বেচ্ছায় তথ্যের উপর কাঁচি চালিয়ে সত্যের অপলাপ করে যাচ্ছেন, তখন প্রশ্ন করতেই হয়, এমন ব্যক্তিরাই কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় জিনোসাইড গবেষণা কেন্দ্রের মাথায় বসার যোগ্য?

(উত্তরটা অবশ্য হ্যাঁ-ও হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের বাংলা ব্লগ বিষয়ে গবেষণার যেমন নমুনা আগে দেখেছি, তাতে মনে হয় এমন ‘গবেষক’দের সংখ্যা সেখানে বিরল নয়।)

******************

তথ্যভ্রান্তির সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবার শুরু করছি, পাঠক কতটা বিশদে পড়বেন তাঁর ইচ্ছা।

১) বইয়ের শুরুতেই, Introduction অধ্যায়ের ৫ পৃষ্ঠায় আলোচনা দেখতে পাই যে ভারতের পাশ্চাত্যধর্মী ইতিহাস প্রথম লিখতে শুরু করেন জেমস স্টুয়ার্ট মিল। “James Stuart Mill (1773-1836), a contemporary of Hegel, began to...”
মজার ব্যাপার হল, এই নামটি একটি হাঁসজারু। দুজন বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব – জেমস মিল ও তাঁর ছেলে জন স্টুয়ার্ট মিলের নামের সন্ধি। বাস্তবে ওই নামে কেউ ছিলেন না। জন্মসালটি জেমস মিলের, যে বিষয়ে আলোচনা সেই বিষয়ে ‘The History of British India’ নামে একটা বিখ্যাত বইও ওনার লেখা। আবার নামের পাশে যে ছবিটি, সেটি জন স্টুয়ার্ট মিলের, তলায় ক্যাপশন হিসেবে “James Stuart Mill” লেখা থাকলেও। আরো মজার ব্যাপার, ছবিটি যে ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া বলে সেখানে সূত্র উল্লেখ করা, সেই সাইটে স্পষ্ট লেখা যে ছবিটি জন স্টুয়ার্ট মিলের, জেমস স্টুয়ার্ট মিল বলে কোনো ব্যক্তির উল্লেখই সেখানে নেই!

২) দ্বিতীয় অধ্যায় “The statist discourse” এ লেখক বলছেন, ভারতীয় বাহিনী ঢাকার সীমানায় পৌঁছে যাবার পর জেনারেল স্যাম মানেকশ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতীয় রেডিওয় পাকিস্তানের প্রতি একটি ‘ultimatum call’ দেন, যাতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের ডাক দেন। এই ‘ultimatum call’ এর যে অংশটি লেখক উদ্ধৃত করেছেন, তা এই:

I would guarantee safety of all your military and Para-military forces who surrender to me in Bangladesh....
I expect you to issue orders to the forces under your command in Bangladesh to cease fighting immediately and surrender to my advancing forces wherever they are located....

এখানেও লেখক তারিখ ভুল করেছেন। মেজর জেনারেল সুখবন্ত সিংয়ের বইতে, হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্টে, এবং ১৬ তারিখের নিউ এজ সংবাদপত্রে সব জায়গাতেই বলা হয়েছে এই ঘোষণা ১৫ই ডিসেম্বর, অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের ঠিক আগের দিন। এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় এ ক্ষেত্রে যেটা, এবং যেটা লেখক অনুল্লেখিত রেখে গেছেন, তা এই যে এই ঘোষণা সে অর্থে ‘ultimatum call’ নয়, বরং পাকিস্তানের তরফে যুদ্ধবিরতির ইচ্ছা প্রকাশের পরেই তাদের উদ্দেশ্যে পরবর্তী ধাপগুলির নির্দেশাবলী দিয়ে প্রচারিত।

Maj Gen Sukhwant Singh এর India’s Wars Since Independence বইতে Part 1: The Liberation of Bangladesh এর 11: The March to Dacca অধ্যায়ে ২২২-২২৩ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়:

On 15 December, Malik and Farman Ali informed the UN Secretariat that the authorities in East Pakistan were prepared to end hostilities but desired a ceasefire of a few hours to discuss its terms. ... Late that same evening, AIR repeatedly broadcast a message from Manekshaw to Niazi at short intervals. Quoting Niazi's signal, the message read: "Since you have indicated your desire to stop fighting, I expect you to issue orders to all forces under your command in Bangladesh to ceasefire immediately and surrender to my advancing forces, wherever they are located."

নিউ এজ পত্রিকার ১৬ তারিখের সংবাদটাও নিচে দেওয়া হল (প্রয়োজনে বড় করে দেখুন):

মূল বাক্যটা যেখানে ছিল এরকম, “"Since you have indicated your desire to stop fighting, I expect you to issue orders to all forces under your command in Bangladesh to ceasefire immediately and surrender to my advancing forces...”, লেখক সুন্দরভাবে সার্জারি করে “I expect you to issue orders...” অংশটাকে নিয়েছেন অথচ তার আগের “Since you have indicated your desire to stop fighting” অংশটা বাদ দিয়ে গিয়েছেন।

৩) এবার আরো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সার্জারির নমুনা দেখুন। উপরের আলোচিত অংশের ঠিক পরেই লেখকের দাবি, “with the Indian control of the final phase of the liberation war, the nationalist struggle of Bangladesh was transformed into an exclusively Indo-Pakistan affair.” অর্থাৎ অনেকের মতই তাঁরও দাবী, শেষদিকের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আসলে ছিল কেবলই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। এর সপক্ষে তাঁর যুক্তি: “The surrender document, signed on 16 December, 1971, is a further proof of this:” যার পর তিনি ওই আত্মসমর্পণের দলিল থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন:

The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all Pakistan Forces in BANGLADESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA....
This surrender includes all PAKISTAN...armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA as soon as this instrument has been signed....
Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA gives a solemn assurance that personnel who surrender shall be treated with dignity and respect that soldiers are entitled to...and guarantees the safety and well-being of all PAKISTAN military and para-military forces who surrender. Protection will be provided to foreign nationals, ethnic minorities and personnel of WEST PAKISTAN origin by the forces under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.

নিচে বইটির আলোচিত অংশের ছবি দেওয়া হল:

অথচ Instrument of Surrender এর দিকে তাকালে দেখতে পাই,
The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces in the Eastern Theater.
অর্থাৎ, “Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA” এর ঠিক পরেই যেখানে বলা হয়েছে তিনি “General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces”, সেই অংশটাই লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে গেছেন যাতে চেরি-পিকিং করে নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সুবিধা হয়।

দলিলের নিচে যেখানে দুই পক্ষের সই আছে, সেখানেও তাঁর নামের নিচে ভারত বাংলাদেশ দুটি নামেরই স্পষ্ট উল্লেখ আছে:

(JAGJIT SINGH AURORA)
Lieutenant-General
General Officer Commanding in Chief
India and BANGLA DESH Forces in the
Eastern Theatre
16 December 1971

মনে হল, এমন কি হতে পারে, লেখক যে বই থেকে এই অংশটি নিয়েছেন, তাতেই এই সংক্ষিপ্তকরণ ছিল? উদ্ধৃত সূত্রটি হল Prabhat Srivastava, The Discovery of Bangladesh (New Delhi: Sanjay Publications, 1972), p.160. সেখানে দেখি পুরো দলিলটির ছবিই তুলে দেওয়া, অতএব সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই যে সার্জারিটি লেখকের নিজেরই হস্তশিল্প।
দলিলটির ছবি নিচে দেওয়া হল:

৪) ওই ও বিষয়ক ভুলগুলির পরেই লেখক জিনোসাইড বিষয়ে কিছু আলোচনা নিয়ে আসেন:

Both the ultimatum call and the surrender document make no mention of genocide or mass killings committed by the Pakistan military and para-military forces. ... The statist discourse otherwise began by somewhat putting a lid on the issue of genocide, albeit on account of bringing a quick end to the war and the surrender of the Pakistan military. The fear was that any reference to genocide would have hardened the Pakistani resolve to continue the war and thereby increase the number of casualties of Indians, Pakistanis and Bengalis alike. This tendency of downplaying the issue of genocide for some strategic reasons continued even after the surrender of the Pakistan military.
Both the government and the public settled for a statist discourse, which gradually saw the issue of genocide being shifted towards 'hall-hearted trials,' numbers' and 'collaborators.'

প্রথমত, আত্মসমর্পণের দলিলে বা আহ্বানে শুধু প্রয়োজনীয় কথাটুকুই যেমন আত্মসমর্পণের শর্তাদি এবং ব্যবস্থাপনা নিয়েই উল্লেখ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পাঠক চাইলে দুটোই পুরো পড়ে নিয়ে দেখতে পারেন, সেগুলি কেমন সংক্ষিপ্ত ও টু-দি-পয়েন্ট। কেমন গণহত্যা হয়েছে, তা কতটা নিন্দনীয়, এর পরিণতিতে শাস্তিপ্রদান হবে কি হবে না, কেমন শাস্তি বিধেয়, এসব নিয়ে আলোচনা সেখানে অনাবশ্যকই। এটাকেই লেখক ‘statist discourse’ বলে দাগিয়ে দিয়ে জিনোসাইড ঢাকা দিয়ে দেওয়ার প্রয়াস বলে কেন দেখছেন, তা দুর্বোধ্য। আবার, বারবার উল্লেখ করা এই ‘statist discourse’ মানে দেশের চাপিয়ে দিতে চাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিটাই বা কী, সেটাও কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই মোটেই।

দ্বিতীয়ত, ওনার উপরোক্ত দাবী যে, এই দলিলে বা আহ্বানে জিনোসাইডের প্রসঙ্গ আসলেই পাকিস্তান আত্মসমর্পণ থেকে পিছিয়ে যেত; কিন্তু এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থিত করেন নি। তবে কি ধরে নেওয়া যায় যে এটিও তাঁর উর্বর মস্তিষ্কেরই কল্পনা?

৫) গণহত্যার বিচার বিষয়ে মুজিব তেমন কোনো পদক্ষেপ নেন নি, এটা ওই অধ্যায়ে লেখক বারবার প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এক অংশে (পৃঃ ১৫) ওনার বক্তব্য:

The statist discourse, however, was more prominent when it came to the trial of the Pakistan military. Although the government, including Mujib himself, declared that some three million Bengalis were killed at the hands of the Pakistan military, but when it came to putting the Pakistan military officers to trial the number was reduced from 400 to 195 and then to 118. Apart from the fact that the death figure of three million in nine months became a statistical nightmare and the officers in charge had no foreknowledge or even the means to substantiate all the killings, the government also dilly-dallied in starting the trial of the 118 that it had actually identified.

লেখক বলছেন মুজিব এবং তাঁর সরকার বলেছিলেন তিন মিলিয়ন লোক মারা গেছে। কিন্তু এটা নাকি ছিল ‘পরিসংখ্যানগত দুঃস্বপ্ন’ এবং সরকারি অফিসাররা এই সংখ্যাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হিমসিম খাচ্ছিলেন কারণ এর সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণই যোগাড় করতে পারছিলেন না তারা। খুব স্পষ্টভাবে না বললেও ওনার মত হচ্ছে কয়েক লাখ মারা গেছিল (পৃঃ xii): “The death figures in a period of only nine months and incidentally accepted by both sides of the conflicting parties run in hundreds and thousands.”
এই বক্তব্যটারও কোনো ভিত্তি দেখতে পাই না। ‘both sides of the conflicting parties’ মানে ‘উভয় পক্ষ’ কবে এমন কোনো সংখ্যায় ‘incidentally’ সহমতে এল? বাংলাদেশ সরকারের বলা সংখ্যা তিরিশ লাখ, এ ছাড়া অন্য কোনো সরকারি বক্তব্য আছে কি? পাকিস্তানের কোনো সরকারি বক্তব্য আছে বলে জানা নেই, তাদের সরকারি তদন্ত কমিশন মানে হামিদুর রহমান কমিশনের বক্তব্য ছাব্বিশ হাজার, পাকিস্তানপন্থী লেখকদের যেমন শর্মিলা বসুরও এস্টিমেট হাজারের এককেই – ৫০-১০০ হাজার। নিরপেক্ষ গবেষকদের মধ্যে যাঁর গবেষণা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সেই আর জে রামেলের হিসাব ১৫ লাখ। এগুলো নিয়ে লিখেছিলাম এখানে। লেখক নিজেও পৃঃ ১৫য় বিভিন্ন প্রকাশিত এস্টিমেটের উল্লেখ করেছেন, সেখানেও দু পক্ষের মধ্যে এমন কোনো সহমতের উল্লেখ বা প্রমাণ দেখা যায় না।

তা এটা যে সরকারি অফিসারদের জন্য এতই কষ্টকর একটা ‘দুঃস্বপ্ন’ ছিল, সেটা উল্লেখ করলে কোনো রেফারেন্স দেওয়ার দরকার হয় না কি, লেখক মহাশয়?

৬) ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি সম্পর্কে লেখক বলছেন,

This is precisely what had happened to Ekatturer Ghatak Dalal Nirmul Committee (The Committee for the Annihilation of the Collaborators of 1971). Formed in January 1992 under the leadership of Jahanara Imam, the civil body could not resist the temptation of being partisan, indeed, to the point of inviting kudos from the then main opposition party, the Awami League, while facing the wrath of the then party in power, the BNP.

জাহানারা ইমামের পরিচালনায় সেই সময় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি পার্টিজানভাবে আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়ে সেই মতই কাজ করত, এমন একটা দাবীর পক্ষেও কোনো তথ্য-প্রমাণ দেন না লেখক, বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে শাহরিয়র কবীরের Pictorial History of Nirmul Committee’s Movement বইতে দেখি:

Most national dailies gave wide coverage to the formation of Tribunal `Nirmul Committee' under the leadership of Shaheed Janani Jahanara imam. … Although Golam Azam's mock trial in the People's Tribunal drew massive public support, Nirmul Committee sought cooperation from all pro-liberation socio-cultural and political organisations to make its programme a success. Because it was obvious that mass participation of people from all walks of life could not be possible without direct involvement and support from the political parties. Some 13 political parties including Awami League, Communist Party, Workers Party, JSD, BSD, NAP and Gonotantrik Party extended support to the mock trial of Golam Azam.

The demand for trial of war criminal Golam Azam became so strong at that time that the opposition parties in parliament took a firm stance on the issue. Khaleda Zia's government faced strong resistance both in and outside the parliament after implicating the 24 eminent citizens with treason cases. On 16th April, 1992 the then opposition leader Sheikh Hasina delivered a landmark speech in the house arguing for the logical grounds of Golam Azam's trial and withdrawal of the false case against 24 eminent citizens.

Political parties at first wanted to keep our movement within the bracket of Golam Azam's trial. Many leaders did not like the formation of 'National People's Enquiry Commission' for identifying and trying more war criminals and expansion of the movement. The main reason behind it was power. A political party launches a particular movement or join any other movement launched by other parties taking into account the power factor. On the other hand, the 101 citizens who formed Nirmul Committee were not directly involved in political parties.

When Jahanara Imam was alive, the pivotal force of the movement was a joint platform of 72 pro-liberation organisations, including political, socio-cultural and professional bodies, students, women and youths organisations and freedom fighters' forums. That was the `Jatiya Samannoy Committee'.

যা থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে নির্মূল কমিটি বিশেষভাবে আওয়ামী লীগের অনুগত পার্টিজান হবার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। বরং একাত্তরের চেতনা থেকেই হোক বা জনমত অনুধাবন করে, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দলের নেতারাই এই আন্দোলনের কাছে আসতে চেয়েছিলেন।

৭) এটি সম্ভবত সবচেয়ে দৃশ্যমান এবং হাস্যকর ভুল (পৃঃ ২৪)। আমি একজন ভিনদেশী মানুষ, ঢাকা গেছি মাত্র একবার, তাও লালবাগ কেল্লার ছবি দেখামাত্র চিনে ফেললাম। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক হয়েও লেখক তাকে চালিয়ে দিচ্ছেন “University of Dhaka, old campus” বলে?

সংশয় নিরসনের জন্য Mughal Monuments Of Bangladesh নামে Nazly Chowdhury ও Babu Ahmed এর একটি বই দেখা গেল, যাতে এই স্থাপত্যটিকে যথারীতি লালবাগ কেল্লার হামাম ঘর হিসেবেই দেখানো হয়েছে:

লালবাগ কেল্লা কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে সে বইতে বা অন্যত্র পাই না, যদি সত্যিই হয়েই থাকে তবে তা প্রমাণ করতে লেখকের রেফারেন্স দেওয়া আবশ্যিক ছিল।

৮) The discourse of the person অধ্যায়ে ১৯৭২ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব, সেখানে হওয়া গণহত্যা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করার সময় ২৫ পৃষ্ঠায় তিনি “Students raised the first flag of Bangladesh at the University of Dhaka (the centre of all movements) on 2 March, 1971” বলে একটা ছবি দিয়েছেন।

এই ছবিটাও যে ভুল, সেটা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আফতাব আহমেদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙ্গালী’ বইটাকে উদ্ধৃত করে ২রা মার্চ ১৯৭১ এর ছবি বলে ছাপলেও এটা আসলে ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২-র ছাত্র আন্দোলনের ছবি, তা মূল বইতেই স্পষ্টভাবে লেখা:

৯) ছবির ক্যাপশন দেওয়া নিয়ে এত বার ভুল হওয়ার পরে তিনি একেবারে আজকালকার ছাত্রদের মতই একটি কাজ করেছেন। ছাত্ররা যখন হোমওয়ার্ক লিখতে গিয়ে ইন্টারনেট থেকে ইচ্ছামত টুকে দিয়ে সাইটেশন দেওয়ার পরিশ্রম করে না, ‘সূত্র: ইন্টারনেট’ বলে দায় সেরে দেয়, তেমনই ১৪ পৃষ্ঠায় কাম্বোডিয়ার জিনোসাইড নিয়ে ছবি দেওয়ার সময় দায় সেরেছেন লেখক:

১০) জিনোসাইড কী, সেই বিষয়ে Preface-এ লেখক বলেছেন,

Internationally there is now a legal definition of the crime of genocide. According to Article II of the 1948 Convention on the Prevention and Punishment of Genocide, the meaning of 'genocide' includes 'acts committed with intent to destroy, in whole or in part, a national, ethnical, racial or religious group,' ...
Moreover, including just four sets of groups (national, ethnical, racial and religious) remains problematic as it excludes, as one critic mentions, "totemistic groups, clans, phratries, lineages, castes, classes, tribes, and categories based on sexual orientation, mental or physical disability, urban or rural origin, and, of course, economic and political groups."' If a policy of annihilation is committed against members of such groups would it remain outside the legal purview of the Convention? There is no easy answer to this.

অর্থাৎ তিনি জিনোসাইডের আওতাকে বিস্তৃত করতে চেয়েছেন। এরপর চতুর্থ অধ্যায়, Epilogue-এ তিনি বাংলাদেশের জিনোসাইড নিয়ে আলোচনা করার সময় বলেছেন,

… Bangladesh genocide is the only genocide in history that was perpetrated against a population for demanding democracy! In fact, the genocide could not have been for 'religion' (as in the case of the Armenian genocide) because the people of both the wings of Pakistan were predominantly Muslims. Again, it could not have been for 'race' or 'ethnicity' (as in the case of the Jewish or Rwandan genocides) because inter-cultural interactions, including inter-marriages, were common between East and West Pakistanis. It could not have been for 'language' as well (as in the case of the Aboriginal genocide in Australia or the Chinese genocide in Indonesia) because Bangla was already one of the national languages of the state of Pakistan. And certainly it could not have been for class or ideological reasons (as in the case of the Kampuchean genocide) because the perpetrators of Bangladesh genocide did not single out the economically rich or inversely the economically poor. Bengalees were murdered irrespective of their class affiliations.

অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশের গণহত্যা 1948 Convention-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী জিনোসাইডের কোনো ক্যাটেগোরিতেই ফেলা যায় না। উনি অবশ্য শর্মিলা বোসের মত বাংলাদেশের গণহত্যাকে জিনোসাইড হিসাবে অস্বীকার করার জন্য এ কথা বলেন নি, তবুও ওঁর যুক্তিতে কিছু স্পষ্ট দুর্বলতা দেখা যায়।

যেমন, আমাদের চোখে বাংলাদেশের গণহত্যাকে মূলত বাঙালীদের দমন করার জন্য হত্যালীলা অর্থাৎ বাঙালি জাতি বা ethnicity-কে লক্ষ করে করা গণহত্যা। কিন্তু লেখক তার বিরুদ্ধতা করছেন একটা ফালতু যুক্তি দিয়ে: “because inter-cultural interactions, including inter-marriages, were common between East and West Pakistanis.” পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে বিবাহ কি এতই প্রচলিত ছিল যে তার ফলে জাতিগত সব ফারাকই মুছে গিয়েছিল? কত ছিল এমন বিবাহের হার? লেখকের কাছে কোনো তথ্য আছে কী? নাকি এটাও সম্পূর্ণ অনুমান থেকে লেখা?

লেখকের এই যুক্তি মানতে গেলে নাৎসি-দের হলোকাস্টকেও জিনোসাইড মানা চলে না। প্রথমত, তা কোনো একটা এথনিসিটিকে লক্ষ্য করে করা হয়নি, ইহুদী, পোলিশ, জিপসি অনেককেই একসাথে মারা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ওনার ‘আন্তঃ-জাতি বিবাহ’ পয়েন্টটাকে কেন্দ্র করে জানাই, জার্মানিতে সে সময়ে আর্য ও অনার্য্যদের (ইহুদি, জিপসি, এমন কি আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ) বিয়ের হার ছিল ভালই। ১৯৩৯ সালে এমন কুড়ি হাজার বিয়ের খোঁজ পাওয়া যায়। বস্তুত হার এতই বেশি ছিল যে নাৎসি সরকার আইন করে এমন বিবাহকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় আর্য রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার দায়ে।

আর পাকিস্তানিরা যে বাংলাদেশীদের একটা ‘বাঙালি জাতি’ হিসেবেই দেখত তা নিয়ে আলোচনা পাওয়া যায় Traitors: Suspicion, Intimacy, and the Ethics of State-Building বইতে Nayanika Mookherjee-র প্রবন্ধে:

West Pakistani authorities considered the Bengali Muslims of East Pakistan, with their focus on literature, music, and dance, as too “Bengali” (perceived as Indianized/Hinduized) and their practice of Islam as “inferior and impure” (Roy 1983, 1996; Ahmed 1998).

Adam Jones তাঁর Genocide: A Comprehensive Introduction বইতে বলছেন,

Pakistani Lieutenant-General A.A.K. Niazi referred to the Ganges river plain – home to the majority of Bengalis and the largest city, Dhaka – as a “low-lying land of low, lying people.” According to R.J. Rummel, “Bengalis were often compared with monkeys and chickens… The [minority] Hindus among the Bengalis were as Jews to the Nazis: scum and vermin that [had] best be exterminated.

আবার কনভেনশনের প্রচলিত সংজ্ঞাতেই যে বাংলাদেশের গণহত্যাকে জিনোসাইড বলা চলে, সে বিষয়ে ১৯৭২ সালের রিপোর্টেই International Commission of Jurists (ICJ) এর মত এক আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ, প্রতিষ্ঠিত আইনবিদদের সংগঠন মত প্রকাশ করেছিল:

We propose to consider it under certain conventions to which Pakistan was a party, namely the Geneva Conventions of 1949 and the Genocide Convention, 1948, and under international customary law including the applicability of the concept of crimes against humanity.
...
It is not, for example, enough to show that a large number of persons belonging to a particular group were killed or intended to be killed. It must be shown that they were to be killed ‘as such ’, i.e. simply because they belonged to that group.

In our view there is a strong prima facie case that the crime of genocide was committed against the group comprising the Hindu population of East Bengal.

After the initial holocaust of the army crack-down in Dacca, the Pakistani authorities appear to have been pursuing in particular members of three identifiable groups, namely members of the Awami League, students and Hindus. ... This does not mean, of course, that particular acts may not have constituted genocide against part of the Bengali people. In any case where large numbers were massacred and it can be shown that on the particular occasion the intent was to kill Bengalis indiscriminately as such, then a crime of genocide would be established. There would seem to be a prima facie case to show that this was the intention on some occasions, as for example during the indiscriminate killing of civilians in the poorer quarters of Dacca during the ‘crack-down’.

তাই লেখক যে “In fact, the genocide could not have been for 'religion' (as in the case of the Armenian genocide) because the people of both the wings of Pakistan were predominantly Muslims.” বলছেন, সেটাও অন্তত ICJ এর মতকে উপেক্ষা করেই, যেখানে তারা হিন্দুদের নির্বিচারে হত্যাকে জিনোসাইড বলে অভিহিত করেছে। বলাই বাহুল্য, লেখক অবশ্যই এদের সবার থেকে আন্তর্জাতিক আইন বেশি বোঝেন।

১১) এর পরেই (পৃঃ ৪০) লেখক বলেছেন, যে ২৫শে মার্চে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে হামলার প্ররোচনা হিসাবে শেখ মুজিবকে দায়ী করতে পারবে না পাকিস্তান, কারণ তুখোড় রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সাথে মুজিব তাঁর ৭ই মার্চের গণ-উদ্দীপক ভাষণ শেষ করেছিলেন “Joy Bangla! Joy Pakistan!” বলে।

Nor could Pakistan blame Sheikh Mujibur Rahman for his historic 7 March speech, which is nothing less than a master stroke of a political genius for he declared that “The struggle this time is for emancipation! The struggle this time is for independence!” but at the same time ended his speech with the words: “Joy Bangla! Joy Pakistan!”

মুজিব বাস্তবিকই ৭ই মার্চের ভাষণের শেষে ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন কি না, তাই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে এবং ওই দাবীর সপক্ষের লোকজন এখনও পর্যন্ত “আমি নিজে চোখে দেখেছি অতএব ভূত আছে” ধরনের কথা ছাড়া কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারে নি। (৭ই মার্চ বিষয়ে নানা জনের নানা কথা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিন্ন করে পোস্ট দিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম, বিস্তারিত পড়ুন এখানে।) সে জন্যই লেখক ফুটনোটে স্পষ্ট বলেছেন, ৭ই মার্চ রেসকোর্সে তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং “জয় পাকিস্তান” তিনি নিজের কানে শুনেছেন। এ-ও বলেন যে যাঁরা দাবী করছেন মুজিব ওই কথা বলেন নি তাঁরা ভালো করে শুনতে পান নি।

The author was present at the Race Course, now Suhrwardy Uddyan, on 7 March, 1971 and therefore heard the entire speech in person. It may be mentioned that some, including those present at the Race Course, dispute' Mujib ending the speech with the words 'Joy Pakistan!' This I believe could be for reasons of audibility. Those who were near the platform or bit far from the microphones probably missed the very last words as people in tens of thousands began clamouring noisily when they realized that Mujib was ending his speech, particularly when he uttered 'Joy Bangla!'

এমন ‘নিজে কানে শোনা’র কথাও আগে অনেকে দাবী করে পরে জনতার চাপে বই বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। এই কথা জেনেই লেখক আরো দুজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির রেফারেন্স টেনেছেন যাঁরা তাঁরই মত নিজে কানে শুনেছিলেন। মজার ব্যাপার, উল্লেখিত দুজনের লেখাতেই পাওয়া যায় ‘জিয়ে পাকিস্তান’, ‘জয় পাকিস্তান’ না। সবাই স্বকর্ণে শুনে থাকলে এটা কি কন্ট্রাডিকশন হয়ে গেল না?

Similar views were also put forward by Poet Shamsur Rahman and Justice Habibur Rahman (see, Sharnsur Rahman, Kaler Dhuloy Lekha, Dhaka: Annyaprakash, 2004, p.260; Habibur Rahman, Bangladesher Shon O Tarikh; First Edition, Mowla Brothers, Dhaka, February, 1997).

প্রথমেই বলে নিই আরো একটি সুস্পষ্ট ভুলের কথা: হাবিবুর রহমানের বইটির নাম ‘বাংলাদেশের তারিখ’, ‘বাংলাদেশের সন ও তারিখ’ নয়।

দ্বিতীয়ত, উনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিয়েছেন বইটির প্রথম সংস্করণের কথা, যেখানে অন্যান্য বইগুলোর সংস্করণ উল্লেখ করার প্রয়োজন ওনার পড়েনি। কেন? উনি তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে এই বইটির পরবর্তী সংস্করণ বেরিয়েছিল। জানারই কথা, কারণ আলোচ্য বইটি ২০০৯ এর, যেখানে হাবিবুর রহমানের বইটির প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে যথাক্রমে ১৯৯৮, ২০০১ এবং ২০০৮ এ। এবং এ-ও জানেন যে প্রতিবাদের মুখে হাবিবুর রহমান বইটির ভুলত্রুটি স্বীকার করে দ্বিতীয় সংস্করণেই ‘জিয়ে পাকিস্তান’-এর উল্লেখ বাদ দিয়েছিলেন।
প্রথম সংস্করণ (১৯৯৮) এর ৭ই মার্চ বিষয়ক অংশ:

দ্বিতীয় সংস্করণ (২০০১) এর ভূমিকা:

সংশোধনের পর দ্বিতীয় (২০০১) ও তৃতীয় (২০০৮) সংস্করণে ৭ই মার্চ বিষয়ক অংশটা বদলে গিয়ে দাঁড়ায়:

তার মানে দাঁড়ালো যে, হাবিবুর রহমান নিজের ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বিষয়ক বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও লেখক নিজের দাবি বজায় রাখার জন্য ওনার পুরোনো অসংশোধিত সংস্করণটাই রেফারেন্স হিসেবে টানবেন। এটা সজ্ঞান মিথ্যাচার না হলে আর কী?

শামসুর রাহমানের ২০০৪ সালের ‘কালের ধূলোয় লেখা’ বইটি নিয়েও একই ঘটনা। ২৬০ পাতায় তিনি লিখেছিলেন ‘জিয়ে পাকিস্তান’ কথাটি সরাসরি রেডিওয় শোনার ব্যাপারে, মাঠে না গেলেও:

কিন্তু তখনই আলী যাকের, রিপোর্টার মনজুর আহমদ ইত্যাদি এই কথার ভুল ধরিয়ে দিলে শামসুর রাহমান তা স্বীকার করে নেন (সেটির তারিখ আমি খুঁজে না পেলেও, নিশ্চয়ই ২০০৬ সালে কবির মৃত্যুর আগেই, মানে ২০০৯ সালে এই বই প্রকাশের অনেক আগেই)। বস্তুত, ৭ই মার্চ রেডিওয় সরাসরি ওই ভাষণ প্রচারিতই হয় নি, পাকিস্তানি শাসকের নিষেধাজ্ঞায়, তাই শামসুর রাহমানের সরাসরি তা শোনার প্রশ্নও ছিল না। তাঁর ভুল স্বীকার:

অতএব লেখক এ ক্ষেত্রেও পরবর্তী ভুল সংশোধনকে উপেক্ষা করে সজ্ঞান মিথ্যাচারে রত। ধূর্ততার পরিমাণটা আর বুঝতে বাকি থাকে না।

******************

এই বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন এম. এম. আর. জালাল, পোস্ট লিখতে গিয়ে বহু সূত্র, সাহায্য, অসঙ্গতির ইঙ্গিত তাঁর কাছেই পেয়েছি।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চলুক

ইমতিয়াজ সাহেবের হাতে গণহত্যা বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র শেয়ালের হাতে মুরগি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মতোই শোনাচ্ছে এখন।

কৌস্তুভ এর ছবি

সেটাই মনে হচ্ছে যে। এনাদের এইসব কেন্দ্র তৈরির ক্ষমতা এবং অর্থ সরকারে কী বিবেচনায় দেয়?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একটা ইংরেজী বই লিখে ফেলছে, যার প্রথম চ্যাপ্টার মাথার উপর দিয়ে যায়। তাতেই ইমপ্রেসড মনে হয়।

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

পরিশ্রমী এবং প্রয়োজনীয় লেখা হে। চালিয়ে যাও-

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

কল্যাণ এর ছবি

এদের সব ডিগ্রী টিগ্রী কেড়ে নিয়ে ঘাড় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া উচিত।

ভাল লিখেছেন, অনেক পরিশ্রম করেছেন, ধন্যবাদ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। ছাত্র হলে হয়ত সেটাই করা হত, কিন্তু উচ্চপদস্থ শিক্ষকদের স্পর্শ করে এমন সাধ্য বা সদিচ্ছা কার আছে?

হাসিব এর ছবি

বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান "মর্যাদাহানীর" বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইনিও কি আছেন?

কৌস্তুভ এর ছবি

তা তো জানি না। এই বই পড়ার আগে এনার বিষয়ে কিছুই জানতাম না।

তানিম এহসান এর ছবি

ইমতিয়াজ আহমেদ নামে একজন কিছুদিন আগেও মনে হয় ‘জেন্ডার এন্ড মাসকুইলিনিটি স্টাডিজ’ এ ছিলো, এই তিনি যদি সেই তিনি হন তাহলে আর কিছু বলার নাই। বিরাট ধান্ধাবাজ লোক, এই ধান্ধা কিসের জন্য সেইটা বোঝা যাবে মনে হয় আর কিছুদিন পরেই।

বহুদিন পর!

কৌস্তুভ এর ছবি

তা তো জানি না।

হ্যাঁ, বছরেরও বেশি হবে। সাম্প্রতিক ঘটনার পর একরকম ঠেলা লাগল।

শাকুর  মজিদ  এর ছবি

আলোচ্য ইমতিয়াজ 'জেন্ডার এন্ড মাস্কুইলিনিটির' ইমতিয়াজ নয়। তবে সেও এক মাল বটে!

pera এর ছবি

ইমতিয়াজ আহমেদের বয়্সে গিয়ে 'জেন্ডার এন্ড মাস্কুইলিনিটির' ইমতিয়াজ পুরা ঢাবি কে ছোট ছোট প্লটে বিক্রি করে দিবে, আমরা কেউ টেরও পাবো না।

সেলিম মাহমুদ  এর ছবি

তবু 'জেন্ডার' ইমতিয়াজ কখনও মানুষের জন্য ততখানি ক্ষতির কারণ হবে না, ধূর্ত 'রাবিন্দ্রক' ইমতিয়াজ (ইদানীং কথায় কথায় ফুকো, গ্রামসি, দেরিদার সাথে রবীন্দ্রনাথকেও কোট করে) যতখানি হবে। 'জেন্ডার' ইমতিয়াজ তো আর 'একাডেমিক' নয়, ষণ্ডা টাইপের লোক একটা। কিন্তু, ইমতিয়াজ আহমদ তো 'একাডেমিক', লোকে তো তাঁর লেখা সিরিয়াসলি নেয়, সেখানেই ভয়।

pera এর ছবি

ভাইরে আপনের কোন ধারণাই নাই যে জেন্ডার ইমতিয়াজ কথায় কথায় কিভাবে ফূকো, দেরিদা, ডিকন্সট্রাকশন, পোস্ট কলোনিয়ালিয়াজম, ন্যারেটিভ, কাউন্টার ইন্টিলিকচুয়ালিটি, সেক্সুয়ালিটি, ম্যানহুড, ওরিয়ান্টিলিজম, ইন্টার সেকশনালিটি ইত্যাদি কপচাইয়া নিজের একাডেমিক চেহারা প্রমাণের কি আপ্রাণ চেষ্টা করে। ঃ) যাইহোক, ক্লাশরুমের বাইরের কীর্তি কলাপ দিয়াই সে একদিন বিখ্যাত হবে আশা করি ঃ)। কারণ ক্লাসেতো তাকে খুব একটা দেখা যায় না মন খারাপ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শর্মিলা বোস যে এজেণ্ডা নিয়ে একাত্তর নিয়ে গবেষণাকর্ম করেছেন, ইমতিয়াজ সাহেবও একই লাইনে গবেষণা করেছেন, এজেণ্ডাও একই হতে পারে। মুশকিল হলো রেফারেন্স হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লেখা বইগুলো প্রথম কাতারে থাকে এবং এই ধরনের বইকে বাইবেল মনে করে পড়বে অনেক পাঠক, বিদেশীরাতো বটেই। তবে আশার কথা হলো বইটি ইংরেজিতে লেখা। এই বই খুব বেশী পাঠকের কাছে পৌঁছাবে না, গবেষকদের মধ্যে পরস্পরের পিঠ চুলকানিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কৌস্তুভ এর ছবি

একটা ধূর্ত চাল দেখেছি, প্রথমে কেউ একটা বিনা রেফারেন্সে মনগড়া কিছু ছাপিয়ে দেয়। তারপর সবাই প্রাণখুলে সেইটাকে সাইট করতে থাকে। ভাবটা এই যে যেহেতু সাইটেশন দিচ্ছি অতএবই আমার বক্তব্য ১০০% সত্যি ও প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যেটাকে সাইট করা হচ্ছে সেটাই যে ফাঁপা, তা কি আর পাঠক খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে? এনার বইটিও এমন সাইটেশনের সূত্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অফিসের ইন্টারনেট ফিল্টারে ফটো বাকেটের ছবি একটাও দেখতে পারলাম না। সময় পেলে imgur এ আরেক কপি হোস্ট করে দিও। বিষয়টা জরুরী নয়। মোবাইল থেকে দেখতে পাবো প্রয়োজনে।

কৌস্তুভ এর ছবি

imgur কি সবচেয়ে ভাল? তাহলে ওখানেই মাইগ্রেট করব।

দ্রোহী এর ছবি

হ্যাঁ। এমবেডেড ইমেজের জন্য imgur এর বিকল্প নাই।

দ্রোহী এর ছবি

এক পোস্টে পুরা একটা মাস্টার্স থিসিসের সমান পরিশ্রম নামিয়ে ফেলেছেন দেখি।

আমি বাংলাদেশের জ্ঞানীগুণী-নামীদামী মানুষদের আকাম-কুকাম দেখে এখন আর বিচলিত হই না কেন জানি। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে এখন জ্ঞানীগুণী-নামীদামী কাউকে দেখলেই আগেভাগেই টাউট-বাটপার ঠাউরে নিই।

শুনেছি মূলধারার পণ্ডিতলোকেরা নাকি বলে ব্লগে মানসম্পন্ন লেখা আসে না। লোকের পাছায় এই লেখাটা দিয়ে কষে বাড়ি মারা উচিত।

কৌস্তুভ এর ছবি

এত প্রশংসা করা ভাল না। খাইছে

এইটা তো মানসম্পন্ন লেখা না, মানহানিসম্পন্ন লেখা। ওনাদের মনমতন লাগবে কেন?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

শুনেছি মূলধারার পণ্ডিতলোকেরা নাকি বলে ব্লগে মানসম্পন্ন লেখা আসে না। লোকের পাছায় এই লেখাটা দিয়ে কষে বাড়ি মারা উচিত।

হো হো হো

কৌস্তুভ এর ছবি

দিলাম imgur এ। ফটোবাকেটের চেয়ে একটু ঝক্কি বেশি মনে হচ্ছে আপাতত।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ইনকা এর ছবি

দারুন লিখা কৌস্তুভ ভাই!

ইনার ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভবন নির্মান কম্পিটিশনে জমা দিতে পারেন নি বলে কেঁদে দিয়েছিলেন শুনেছিলাম। যাইহোক, বেশ লিখেছেন দেখি। ইনি সামনে আরো ইন্সটিটিউট করবেন। আরো গবেষনামূলক প্রবন্ধ বের হবে। একটার সাক্ষী হচ্ছি বা অল্পস্বল্প হয়ে আছি। আগেও একবার দেখা হয়েছিলো। ঘাগু লোক। আমেরিকা, ভারত, পাকিস্তান সবই এনার কানেকশনের মাঝে পড়ে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখুন না।

শেহাব এর ছবি
কৌস্তুভ এর ছবি

আমেনা মহসিন কে? চিনি না ওনাকে।

রেজওয়ান এর ছবি

উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপিকা ও গত বছর মারা যাওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের স্ত্রী। লেখাটির জন্যে ধন্যবাদ।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মহসিন সাহেবের, থুক্কু থুক্কু করিম সাহেবের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী।

শেগুফতা বখত  এর ছবি

এইটি খুব স্বল্প লোকেই জানে যে পরলোকগত পিয়াস করিম সাহেব প্রকৃতপক্ষে আমিনা মহসিনের তিন নম্বর স্বামী।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আবার থুক্কু! ইয়ে, মানে...

মন মাঝি এর ছবি

ইনিও আমার নীচের কমেন্টে উল্লেখিত ঢাবির অন্য দু'জন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষকের মত একই বিভাগের আরেকজন শিক্ষিকা। ইনিও ওঁদেরই মত টিভির নিয়মিত টকশোজীবী। ইনিও তাঁদেরই মতন এক্সাজেরেটেড সেলফ-ইম্পর্ট্যান্সে ভোগেন মনে হয়। থ্রী মাস্কেটিয়ার্সের মতই, IR-এর থ্রী টকশোস্কিয়ার্সের অন্যতমা আরকি। হাসি

এই কিছুদিন আগেই দেখলাম 'একাত্তর' চ্যানেলের একটা টকশোতে ইনি চট্টগ্রামে অবস্থিত ঐ চ্যানেলেরই করেস্পণ্ডেন্টকে ফোনে একটা প্রশ্ন করে নিজেই ঠিকমত বোঝাতে না পেরে এবং ফলতঃ তার কাছ থেকে মনোমত জবাব না পেয়ে সঞ্চালকের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত হয়ে হাত ছুড়ে এমন সুস্পষ্ট বিকট ও অপমানজনক একটা মুখভঙ্গি ও শব্দ করলেন - মনে হল যেন প্রশ্ন করছেন - এমন বেয়াদ্দপ্‌ গরু-ছাগল আপনাদের চ্যানেলে চাকরি করে কিভাবে???

তবে ইনার মূল সমস্যা আসলে অন্য জায়গায়। ইনি ঘোর বিএনপি-পন্থী ও আওয়ামী-বিরোধী, হয়তো জামাত-ঘেঁষাও - নিদেনপক্ষে রিলিজিয়াস ন্যাশনালিজমে জাতীয় কিছুতে বিশ্বাসী। কিন্তু ভাব দেখাতে চান উনি প্রায় নিরপেক্ষ (একসময় পুরোটাই তাই এই ভাব দেখাতেন, এখন ঘোমটা সামান্য উঠেছে), সেন্টার-রাইট প্রো-লিবারেল স্মার্ট আধুনিক কঞ্জার্ভেটিভ বকচ্ছপ জাতীয় কিছু। কিম্বা হয়তো তাও না - পুরোই সেন্টার! উদ্দেশ্য এই ভাবের ফাঁকে ফাঁকে নিজের আসল ওরিয়েন্টেশন অনুযায়ী চুপিসারে কিছু ট্রোজান-টুইস্ট গুঁজে দিয়ে বিপক্ষের ন্যারেটিভ সাবভার্ট করা। কিন্তু মুশকিল হলো আপনি আসলে যা না, তা হওয়ার ভাব যদি ধরতে চান সর্বক্ষণ, তাহলে আপনাকে অত্যন্ত উঁচুমানের রূপালি-রসনাধারী সুবক্তা ও অভিনেতা হতে হবে। অতীব দুঃখের বিষয়, ইনি এর কোনটাই না। ইন ফ্যাক্ট, ঠিকমত গুছিয়েই কথা বলতে পারেন না ইনি। ফলে দুইদিক (আসল-নকল চেহারা) ব্যালেন্স করে টিভিতে কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই হাস্যকরভাবে লেজেগোবরে করে ফেলেন। একটা বাক্য বলতে গিয়ে মাঝপথেই হঠাৎ তাঁর মনে হয় - কি জানি কি বলে ফেলতে যাচ্ছি, কেউ হয়তো আমার মনের আসল কথা বুঝে ফেলতে পারে, একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ! এই ভেবে উনি প্রথম বাক্য শেষ না করে ঐ মাঝপথ থেকেই ঐ অসমাপ্ত প্রথম বাক্যেরই ইন্টারপ্রিটেশন দেয়া শুরু করেন - না, না সামিয়া, আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, আমি আসলে মীন করছিলাম.... বলতে বলতে তাঁর হঠাৎ মনে হয় এই ইন্টারপ্রিটেশনটাও ঠিক যুৎমত হচ্ছে না, কে আবার এর থেকেও তাকে ডানপন্থী-বিম্পিজামাত-মৌলবাদী ইত্যাদি ভেবে বসে বা তাঁর আসল মনোভাব ফাঁস হয়ে যায়! ব্যস, তখন ইন্টারপ্রিটেশনের মাঝেই শুরু হয়ে যায় ইন্টারপ্রিটেশনের ইন্টারপ্রিটেশন!! এইভাবে দুয়েকটা বাক্য পরপরই ইন্টারপ্রিটেশন-রিইন্টারপ্রিটেশনের কন্টিনিউয়াস শাখা-প্রশাখা ছড়াতে থাকে আর সেই শাখা-প্রশাখা সমেৎ নিজের বক্তব্যের স্বসৃষ্ট জটাজাল ছাড়াতে গিয়ে সবকিছুতে তালগোল লেগে যায়, তোতলামি এসে যায় মাঝেমধ্যে। অনেক সময় একগাদা অসমাপ্ত ভাঙাচোরা বাক্যবিশিষ্ট অর্থহীণ বক্তব্যে পরিণত হয় পুরো বিষয়টা।

সবকিছু দেখে আমি শুধু এই ইম্প্রেশনটাই পাই যে - কি যেন একটা জিনিস ভদ্রমহিলা সবসময় প্রাণপনে লুকোতে চান, আর সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন সেটা না আবার নিজের ভুলে নিজের মুখেই ফাঁস হয়ে যায় সর্বসমক্ষে!

প্রথমে বেশ বিরক্ত হতাম, কিন্তু এখন ব্যাপক আমোদ পাই। দেঁতো হাসি

****************************************

কামরুল ইসলাম  এর ছবি

এই 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' টাইপ ধুরন্ধর আর চালবাজ অধ্যাপিকা আমেনা মহসিন কে আপনার মত এত স্পষ্টভাবে বুঝতে আর বর্ণনা করতে আমি আজ পর্যন্ত আর কাউকে কখনও দেখিনি। জাতিয় টেলিভিশনে এদের মত ধান্দাবাজ মানুষের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেশের আপামর মানুষের, বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন, তাঁদের মতগঠনের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। টিভি চ্যনেলগুলোর উচিত এদের মত জ্ঞনাপাপিদের টকশোতে না ডেকে প্রয়োজনে মফস্বলের কলেজ থেকে সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তিত্বদের আনা। এতে দেশ জাতি উভয়ই বেঁচে যায়।

Emran  এর ছবি

যতদূর মনে পড়ে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার জন্য আমেনা মহসীন "The Politics of Nationalism" বইতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুপক্ষকেই দায়ী করেছিলেন। মুখোশ খুলে পড়েছে দেখা যায়!

কৌস্তুভ এর ছবি

বুঝলাম! তাঁর কোনো বইটই নেই?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

আপ্নের কমেন্ট পড়েই আমার মাথামুথা ঘুরতেছে!!!

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ব্যাটা দেখি পাক্কা হারামি!!!
অসাধারণ এবং তথ্যবহুল এই লেখার জন্য আপনাকে উত্তম জাঝা!

কৌস্তুভ এর ছবি

কমেন্ট লাফিয়েছে মনে হয়? যাহোক ধন্যবাদ আপনাকে।

আয়নামতি এর ছবি

গুল্লি
এই চরম পরিশ্রমী লেখাটার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা!
যে লোক '৭১- এর গণহত্যাকে জিনোসাইড ভাবতে দ্বিধা করেন তিনিই কিনা Centre for Genocide Studies এর সভাপতি!
তার ঝোঁক অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ভালোই। এই পোস্ট ইমতিয়াজ আহমেদের পড়া জরুলী।

কৌস্তুভ এর ছবি

ওই যে হিমুদা যেমন বলেছেন, শেয়ালের হাতে মুরগি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।

এনার শুরুর হিস্টরি-বিষয়ক ডিসকোর্স থেকে শেষের কনফ্লিক্ট-রেজোলিউশন রেসিপি দুটোতেই আন্তর্জাতিক ভালোবাসা স্পষ্ট। দেশের কাজকর্মকে উনি বিচ্ছিরি statist discourse বলে উড়িয়ে দিতেই ভালোবাসেন। মনে কী আছে কে জানে।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

উনি হয়তো ভেবেছিলেন কঠিন কঠিন শব্দ লিখে পাঠকে এমন ভাবে ভড়কে দিবেন যাতে কেউ আর তার চাতুরি গুলো নিয়ে কথা তুলতে সাহস করতে না পারে।

কৌস্তুভ এর ছবি

সেটা একটা প্রচলিত স্ট্র্যাটেজি, 'বিচার-আমিও-চাই-কিন্তু-ফুকো-দেরিদা' গোত্রের বুদ্ধিজীবীরা ঠিক সেটাই করেন।

অনিকেত এর ছবি

১) ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে আর ছোট করলাম না কৌ--এমনিতেই ছোট-খাট মানুষ তুমি।
তবে এই সবিশেষ পরিশ্রম সাধ্য কাজটি করার জন্যে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। অসাধারণ কাজ!

২) আমাদের ব্লাড টেলিগ্রাম নিয়ে তোমার লেখাটার কদ্দুর কী হল? আপডেট আছে কি? আমি মাঝে মাঝেই পড়ছি এবং যতটুকু পড়েছি--আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছে!

কৌস্তুভ এর ছবি

তথ্যাদি এবং উৎসাহ দুটোর জন্যই মূল ধন্যবাদ জালাল ভাইয়ের প্রাপ্য। কিন্তু উনি মুরুব্বি মানুষ তাই ওনাকে ছোট করার তো প্রশ্নই আসে না। খাইছে

বইটার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ নয় তবে কৃতজ্ঞতা জানালাম আরেকবার। হাসি
ওটা স্কিম করে করে পড়েছিলাম, খুবই ইন্টারেস্টিং। তবে সেই সময় যে কাজগুলো করছিলাম তাতে সরাসরি ব্যবহার্য কিছু পাইনি তাই ওটা নিয়ে আর লেখা হয়নি। বিশাল বই কিনা, সময় করে পুরোটা পড়তে হবে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারণ শ্রমসাধ্য এবং ডিটেইলড অ্যানালাইসিস পড়ে মন থেকে শ্রদ্ধা জেগে উঠল। অবশ্য এই অংশটুকু পড়ে ইয়াইকস বলে একটু বুকে ব্যাথা পেয়ে গেলাম। হাসি

(উত্তরটা অবশ্য হ্যাঁ-ও হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের বাংলা ব্লগ বিষয়ে গবেষণার যেমন নমুনা আগে দেখেছি, তাতে মনে হয় এমন ‘গবেষক’দের সংখ্যা সেখানে বিরল নয়।)

আমারতো মনে হচ্ছে ৪৪ পাতার বই তৈরী করতেও প্রফেসর ইমতিয়াজ ছাত্রদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। নইলে এইরকম ব্লান্ট ভুল কিভাবে থাকে?

কৌস্তুভ এর ছবি

আমারো তাই মনে হয়। উপমহাদেশীয় প্রফেসরদের মধ্যে এই প্রবণতা যথেষ্টই। আর ভূমিকায় যেভাবে উনি ওনার অধীনে গবেষণা করা এক ছাত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন 'বিপুল ট্রেনিং' পাওয়ার পরে এই বইয়ের কাজে সহযোগিতা করার জন্য, তাতে সেটা খুবই সম্ভব।

কর্ণজয় এর ছবি

খুবই মনযোগ দিয়ে পড়লাম। পরিশ্রমী এবং প্রয়োজনীয় লেখা। আমাদের চারপাশে কী হচ্ছে, তা জানা থাকলেও এইরকম লেখা প্রামাণ্য হয়ে বাস্তবতাকে অভিজ্ঞতার মত তুলে ধরে। অভিবাদন।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা।

অতিথি লেখক এর ছবি

পরিশ্রমী পোস্ট। চলুক

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ।

নিটোল এর ছবি

অসাধারণ পোস্ট। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। চলুক

আপনার বিশাল লেখাগুলো মিস করি করি। আশা করি, ঘন ঘন না হলেও কিছুদিন পর পর আপনার সাক্ষাত মিলবে।

_________________
[খোমাখাতা]

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। আমিও ব্লগিং মিস করি, চেষ্টা করব নিয়মিত লেখার।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ইতিহাস বিকৃতির এক সুদূরপ্রসারী নীলনকশা। যদিও বেশ দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ, তবুও একদিন হয়ত অন্যান্য পণ্ডিত ব্যাক্তিগনও এই বইটি রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

খুবই সম্ভব।

সিনা এর ছবি

ব্লগার মানেই ”বেদ্দপ” - এ ধারণা পোক্ত হলো। খাইছে

লোকটার চেহারা-ছবি আর ভাব-সাব দেখে খারাপ লাগতো না। কেউকেটা টাইপের মনে হতো। টকশোতে বেশ আয়েশ করে কথা বলেন। কীকরম সন্দেহ হতো ”ধরি মাছ না ছুঁই পানি” টাইপের বক্তব্যে। কিন্তু ভদ্রলোক পুরাই “কানা” - এটা অন্ততঃ ভাবিনি।

অনেক ধন্যবাদ তাঁর বিশদ পরিচয় তুলে ধরবার জন্যে।

সিনা

কৌস্তুভ এর ছবি

কথা সত্য, মানীর মান ব্লগারে মারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ভদ্রলোক গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচারকারী ডেভিড বার্গম্যানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন (এই লেখার শেষে দেয়া তালিকার ৭ নম্বর ব্যক্তি)। আপনার অসাধারন বিশ্লেষণমূলক এই লেখা থেকে তার ভন্ডামির চূড়ান্ত রূপটা জানতে পারলাম।

আমি তোমাদের কেউ নই-> আতোকেন

কৌস্তুভ এর ছবি

জানতাম না। ধন্যবাদ।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক
প্রথমে এই ইমতিয়াজ আহমেদ কে বুঝিনি, পরে আপনার দেয়া লিঙ্ক ধরে গিয়ে ছবি দেখে বুঝলাম কে এই মফিজ। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে-পরে কিছু সময় ইনি টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত টকশোজীবী ছিলেন। আমার তখন ধারণা ছিল ইনি প্রগিতিশীল ঘরাণার লোক, তবে টকশোর কথাবার্তা থেকে তখনই বোঝা যেত তাঁর কষ্টেসৃষ্ট ছদ্মগুপ্ত উচ্চম্মন্যতাবোধ আর জটিল কচকচানির মাধ্যমে পাণ্ডিত্য ও আত্নজাহির করার হাস্যকর মানসিকতা। একাডেমিক জার্নাল, গবেষণাপত্র বা গ্রন্থ এক জিনিষ, আর নিউজ চ্যানেলের টকশো সম্পুর্ণ ভিন্ন জিনিষ। একথাটা সবাই বুঝে। নিউজ চ্যানেলের টকশো্র বিষয়বস্তু থাকে সাধারণ জনগনের দৈনন্দিন কনসার্নের সহজপাচ্য কোনকিছু, সাধারণত তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক কোন ঝালমুড়ি-মার্কা হট ইস্যু বা আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোন প্রসঙ্গ। আর সেটা প্রচারিতও হয় আমজনতার জন্য। এর দর্শকশ্রেনীর মধ্যে গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত, ছাত্র আর কেরানী ছাড়াও বাসার কাজের বুয়া থেকে শুরু করে মুদির দোকানদার বা চা-পান বিক্রেতাও অনেক সময় থাকে। তাই মোটামুটিভাবে এদের সবার বোধগম্য দৈনন্দিন ভাষাতেই এখানে কথা বলা হয়। এইরকম জায়গায় এসেও কেউ যদি ফুকো-দেরিদ্দা-কান্ট-হেগেলের প্রায় ভিনগ্রহীয় ভাষায় লেকচার ঝাড়তে শুরু করে আর ঝাড়া ১০ মিনিট ধরে সহজ একটা বিষয়কে পেঁচিয়ে এমন দুর্বোধ্য করে ফেলে যে আমদর্শক দূরে থাক, ঐ টকশোর হোস্ট বা তাঁর কো-প্যানেলিস্টরাও ভিরমি খেয়ে সামনের টেবিলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে - তাহলে সেই লোকের এমনকি মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন করাটা মনে হয় একেবারে অযৌক্তিক হবে না। টকশোতে অন্যদের প্রতি তাঁর প্রচ্ছন্ন নাক সিঁটকানোর প্রবণতাটাও মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করেছি। আপনার লেখাটা পড়ে প্রথমে চমকিত হলেও, পরে পরিচয় জেনে তাই খুব একটা অবাক হইনি।

আর হ্যাঁ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককুলের সবাই এরকম না হলেও, এই 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক' বিভাগে কেন জানি মনে হয় কিছু একটা সমস্যা আছে। এই বিভাগে ইনার চেয়েও ডেঞ্জারাস (ভিডিওটা দেইখেন) লোক আছেন। ইনিও টকশোজীবী এবং টকশোতে ঢুকে প্রায়ই অন-এয়ারেই তাঁর কো-প্যানেলিস্টদের প্রতি নাক-সিঁটকে আকারে-প্রকারে বুঝিয়ে দেন তারা কত অশিক্ষিত-হাবা-পাঁঠা-মূর্খ-আনকালচার্ড আর তিনি নিজে কত অতুলনীয় মহাপণ্ডিত, বিদ্যাদিগ্‌গজ বিদ্যার টাইটানিক। আম্রিকাতে নাকি ২০ বছর পড়িয়েছেন। একটা টকশোতে "জিওপলিটিক্স" নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রায় মুখ ভেংচে বলে বসলেন - এখন তো দেখি সেক্রেটারি, জেনারেল, সাম্বাদিক, আইনজীবী, সবাই 'জিওপলিটিক্স' নিয়ে ফট্‌ফট্‌ করা শুরু করেছে... কণ্ঠস্বর ও নয়নমনোহর মুখভঙ্গিতে স্পষ্ট ভাবখানা - এমন বিষয়ে তাঁর মত মহাপণ্ডিতকে ফেলে কেন যে টকশোওয়ালারা এইসব মূর্খ-রিটার্ডেড মশামাছি-ফকিরমিসকিন টাইপের লোকের পিছনে দৌঁড়ায়! আর এই লোকগুলাও তো কম ব্যায়াদ্দপ্‌ না, তাঁর মত দেশের একমেবাদ্বিতীয়ম মহাবিশেষজ্ঞ থাকতে তাদের ছোটমুখে এত বড়-বড় কথা বলার আস্পদ্দা দেখায়!!! মজার ব্যাপার হলো, ঐ সময় ঐ অনুষ্ঠানে সহ-আলোচক হিসেবে তার সাথেই উপস্থিত ছিলেন একজন বয়োজ্যোষ্ঠ সাবেক ফরেন সেক্রেটারি, একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও বর্তমানে 'নিরাপত্তা বিশ্লেষক' হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি, আর একজন সম্ভবত অত্যন্ত সিনিয়র সাংবাদিক বা আইনজীবী। এই ভদ্র(?)লোক প্রায়ই এমনটা করতেন বিভিন্ন টকশোতে। উপরে লিঙ্কিত ভিডিওটাতে যার সম্ভবত একটা অনফর্চুনেট পরিণতি দেখতে পাবেন। এরপরে অনেকদিন এঁকে আর টকশোতে আমার অন্তত চোখে পড়েনি। তবে এটাই শেষ কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। টিভিতে নিজের চেহারা দেখানো আর সর্বসমক্ষে নিজের বোম্বাস্টিক সেলফ-ইম্পর্ট্যান্সের দামামা পেটানোর মজাটাই আলাদা। ভীষণ এ্যাডিক্টিভ। অনেকটা ম্যাস্টার্বেশানের মত বোধহয়। তাই এসব লোক অনেক লাত্থি-গুতা খেয়েও আবার বেহায়ার মত ফিরে ফিরে আসে।

( উপরে একজনের কমেন্টে উল্লেখিত আমেনা মহসীনও ঢাবির এই একই বিভাগের শিক্ষক। বলাই বাহুল্য, ইনিও নিয়মিত টকশোজীবী! দেঁতো হাসি )

****************************************

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখার সমানুপাতিক দীর্ঘ মন্তব্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, এনাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জ্ঞানলাভ হল দেঁতো হাসি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এই হচ্ছে ঢা বি-তে না পড়ার সমস্যা। খাইছে
ইমতিয়াজ আহমেদ না চেনার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক। বিশিষ্ট প্রো-বিএনপি শিক্ষক। যখন বাজারে যে প্রজেক্ট পান উনি সেই লাইনে বিশেষজ্ঞ হয়ে যান। আমেনা মহসিন (প্রয়াত পিয়াস করিমের স্ত্রী) ও ইমতিয়াজ আহমেদ খুব ঘনিষ্ঠ। একই বিভাগের। দুজনেই ডান। একাত্তর নিয়ে তাদের সমস্যা আছে।

কৌস্ত্তভ ইমতিয়াজ আহমেদকে না চিনে এমন একটা রিভিউ লিখেছে মানে সে জানে না সে কত্তোবড় একজন বুদ্ধিব্যবসায়ীকে ছিলে দিয়েছে। কৌস্ত্তভের এই লেখার কপি আমি নিশ্চিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অনেক ছাত্রের হাতে হাতে ঘুরবে।

হাততালি

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

কৌস্তুভ এর ছবি

সত্যিই আমি ওনাকে চিনতাম না। আর ঢাবির ছাত্রদের জন্য সমব্যথী হতে হচ্ছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হ্যাঁ, সাদা দলের লোক। আবার জায়গা বুঝে কখনো কখনো এটাও জানান দেন যে তিনি আসাদুজ্জামান নূরের মামাতো ভাই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

পাণ্ডবদা পোস্ট পড়ে চলে যাচ্ছেন কিন্তু সম্পূরক কোনো মন্তব্য দিচ্ছেন না, এ দৃশ্য সহ্য করা খুবই কঠিন মন খারাপ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

৭১ জেনোসাইডেই যার বিশ্বাস নেই তিনি জেনোসাইড রিসার্চের মাথা? অ্যাঁ
পড়াশুনা ছাইড়া দিয়া ডঃ শমসেরের হেকমত টেকনোলজিতে যাই গিয়া চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কৌস্তুভ এর ছবি

চোখ টিপি

সুজন চৌধুরী এর ছবি
কৌস্তুভ এর ছবি

এই তো বাস্তব।

সাইদ এর ছবি

আপনার এই লেখাটা জায়গামত দেবার চেষ্টা করেছিলাম।
আমাকে দেরিদা-ফুকো-কাউন্টার-ইন্টুইটিভ-গ্র্যাণ্ড ন্যার‍্যাটিভ কী কী যেন বলল।
মাথা এখনো ঘুরাচ্ছে। এদের ভণ্ডামী ধরা খেলেও এদের মুরিদানের জন্য এরা সব সময় পার পেয়ে যায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

স্ক্রিনশট দিন না, আমাদেরও একটু জ্ঞানবৃদ্ধি হোক।

এক লহমা এর ছবি

হাততালি চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দময়ন্তী এর ছবি

বাঃ এরকম গোছানো বিস্তারিত রিভিউ পড়তে ভারী আরাম।
ভাল্লেগেছে।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

কৌস্তুভ এর ছবি

থ্যাঙ্কু দিদি।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ পরিশ্রমী আর আন্তরিক লেখা গুরু গুরু । এই বিখ্যাত বইটা (!) পড়া হয়নি, রিভিউ পড়ে সুপার লাইক দিলাম। ইমতিয়াজ আহমেদ বিশাল জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়-সাবঅল্টার্নিজম, পোস্টমডার্নিজমের কঠিন কঠিন কথার ফাঁক দিয়ে নিজের মনগড়া থিওরি, চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দিতে না পারলে কেমনে কী?

দেবদ্যুতি

কৌস্তুভ এর ছবি

ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে নিজের ভিত্তিহীন বক্তব্যগুলো পাঠককে গছিয়ে দিতে সুবিধা হবে।

বৃষ্টি স্নাত কবি  এর ছবি

খুবই ভালো লেখা হয়েছে। এত তথ্য বহু লেখা হয়তো ইমতিয়াজ সাহেব নিজেও লেখেন না।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ।

স্পর্শ এর ছবি

অনেকদিন পরে যাকে বলে 'গ্রান্ড এন্ট্রেন্স'!

কোনো বই পড়তে গিয়ে অহেতুক ফুকো-হেগেল-ডিস্কোর্সের ব্যবহার দেখলেই আমার ফিল্টারে সেটা আটকা পড়ে যায়। ধৈর্য্যধরে বইটা পড়ার ও এই চমৎকার রিভিউ এর জন্য ধন্যবাদ!

"which is nothing less than a master stroke of a political genius"

এটার অনুবাদ হিসাবে 'ধুর্ত রাজনৈতিক বিচক্ষণতা' কথাটা কেমন যেন যাচ্ছে না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

ব্যস্ততার কারণে ব্লগে আসা হত না, তাই বড় টপিক পাওয়াতেই আসার মোটিভেশনটা হল বলতে পারেন।

তাহলে কীভাবে অনুবাদ করা উচিত হবে?

স্পর্শ এর ছবি

মাস্টার স্ট্রোক মানে হলো গিয়ে "ওস্তাদের মাইর"।
কথায় আছে না, 'ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে'? সেরকম আরকি।

তার মানে পুরোটা দাঁড়ালো-
"এ যেন তুখোড় রাজনীতিবিদের ওস্তাদের মাইর।" দেঁতো হাসি

এটা লিখেই বুঝতে পারছি নিল গাইম্যান কেন বলেছেন,
“Remember: when people tell you something's wrong or doesn't work, they are almost always right. When they tell you exactly what's wrong and how to fix it, they are almost always wrong.”


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

বদলে দিলাম, ধন্যবাদ।

উপরের কথাটা সাহিত্য বা আর্টের ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতটা নয়, তাই না?

স্পর্শ এর ছবি

হ্যাঁ গাইম্যান কথাটা বলেছে, গল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে।
বিজ্ঞানের নিশ্চয়ই এটা খাটবে না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সেলিম মাহমুদ  এর ছবি

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক ছাত্র বন্ধুদের কাছে শুনেছি ইমতিয়াজ আহমদ সবসময়ই এরকম অসাধু দুর্বোধ্যতার আড়লে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর ক্লাসরুম এবং সেমিনার লেকচারগুলোও তাঁর লেখার মতই অর্থহীন, যা সবার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। এটি তাঁর পুরনো অভ্যেস এবং রসিয়ে সেটি উপভোগও করেন তিনি। মজার কথা হল বইগুলো ছাপাও হয় খুবই সীমিত সংখ্যায়, বাজারে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। উনি যে কাদের জন্য কি লেখেন তাঁর মাথামুণ্ডু বোঝা দায়। জেনেই বলছি, দৈনিক পত্রিকায় কদাচিত দু একটা এডিটেড বই ব্যতীত তাঁর বইগুলোর কোন রিভিউও বের হয় না কোন একাডেমিক জার্নালে। সম্ভবত ওঁর লেখার পাণ্ডিত্যের গভীরতা পরিমাপ করবার মত স্কলারের বড়ই অভাব বাংলাদেশে। আমারও সৌভাগ্য (!) হয়েছিল তাঁর কিছু লেখা ঘেঁটে দেখবার। দু'পাতা পড়বার পর আর এগুতে পারিনি। আপনার প্রতি অনুরোধ, সম্ভব হলে তাঁর এরকম আরও দু একটি লেখার রিভিউ করুন, দেখবেন তাঁর লেখায় দুর্বোধ্যতা এবং অসাধুতার কি অসাধারণ কনজিসটেন্সি!

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে শিক্ষকদের প্রমোশনের একটা ক্রাইটেরিয়া হল পাবলিকেশন থাকা। অনেক শিক্ষক শুধু প্রমোশনের জন্যই কিছু বই পাবলিশ করেন যেটা বাজারে বিক্রি হয়না বা পাওয়া ও যায় না। হয়তো ইমতিয়াজ আহমেদের বই গুলোও সেরকম কিছু হবে।

কৌস্তুভ এর ছবি

দুর্বোধ্যতা সে অর্থে অপরাধ নয়, কিন্তু অসাধুতা অপরাধ, বিশেষ করে একাত্তর নিয়ে হলে। আপনি যদি আরো কোনো লেখা দিতে পারেন উদাহরণ হিসেবে তাহলে পড়ার চেষ্টা করতে পারি।

শেহাব এর ছবি

একটি ফেসবুক থ্রেডে ইমতিয়াজ মাহমুদের সাথে একজন আপনার লেখা নিয়ে কথা বলেছেন। সেটির লিংক কি মূল লেখার সাথে যোগ করে দেয়া যাবে?

কৌস্তুভ এর ছবি

মূল লেখায় দেওয়ার দরকার নেই মনে হয়, এখানে কমেন্টে দিয়ে দিলাম।

https://www.facebook.com/ohingsha/posts/10153196991360233

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

শেহাব এর ছবি

দ্রোহী এর ছবি

খাইছে! জনতা দেখি প্যান্ট খুলে ছেড়ে দিছে লেখক মশাইয়ের!

স্পর্শ এর ছবি

ভাবলাম কোনো উত্তর পাব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ডিবেটে অংশই নেননি লেখক।

আর এই আর্টস লাইনে কি 'ডাবল ব্লাইণ্ড' রিভিউ সিস্টেম নাই? কোনো আর্টিকেলের পিয়ার রিভিউ এর ক্ষেত্রে?

তবে এটা স্পষ্ট যে বিতর্ক বলতে এই লেখক, হেগেল, ঠাকুর, ফুকো ইত্যাদি নেম ড্রপ করে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে অভ্যস্থ। এ জন্যই সামনা সামনি কথা বলায় এত আগ্রহ।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

Emran  এর ছবি

তবে এটা স্পষ্ট যে বিতর্ক বলতে এই লেখক, হেগেল, ঠাকুর, ফুকো ইত্যাদি নেম ড্রপ করে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে অভ্যস্থ।

এটা অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের একক সমস্যা না; আর্টসের লোকদের মধ্যে এই ব্যাপারটা (এবং গালভরা শব্দ ব্যবহার) ভালই দেখা যায়। আপনি Jean Bricmont এবং Alan Sokal-এর "Fashionable Nonsense" বইটা পড়ে দেখতে পারেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, উপরেও দেখলাম একজন বলেছেন। মোটেই আশ্চর্যজনক না। একাত্তর নিয়ে ইচ্ছামত উল্টোপাল্টা কথা বলার অধিকার ওরফে বার্গস্বাধীনতার চর্চা তো বার্গম্যানের মতই ইনিও করেন!

তানিয়া আমীন  এর ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ একজন একাডেমিক হিসেবে তাঁর কথায়, কাজে ও চিন্তায় যে কতটা অস্বচ্ছ এবং অসৎ তা তিনি নিজেই আবারও স্পষ্ট করেছেন উপরে কৌস্তভ এর দেয়া ফেসবুক লিঙ্কে। একাডেমিক জগতে নিজের কাজ নিয়ে একজন একাডেমিক সাধারনত যে প্রশ্নগুলোর সন্মুখিন হন, সেই প্রশ্নগুলোও ইমতিয়াজ আহমেদ সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে চান তাঁর চিরচারিত উচ্চমার্গীয় 'চালাকি' দিয়ে, শুধুই নিজের অসততা ঢাকতে। ফেসবুক লিঙ্কের কথোপকথনেও হেগেল আর রবীন্দ্রনাথ ঝাড়তে ভুল করেননি তিনি। এমনকি প্রশ্নকর্তা যে হেগেল এবং রবীন্দ্রনাথ (এমনকি ১৯৭১ ও! ) বুঝেনই না সেই অভিযোগও করেন তিনি অবলীলায়। কৌস্তুভ এর এই একাডেমিক রিভিউ এর বিশ্বাসযোগ্যতা বুঝতে এই নিবন্ধটি পড়বার পর সকলের অন্তত একটিবারের জন্য হলেও অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের 'বক্তব্য' পড়া উচিত উপরের লিঙ্কটিতে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কৌস্তুভ এরকম শ্রমসাধ্য এবং তথ্যবহুল একটি একাডেমিক ব্যবচ্ছেদের জন্য।

কৌস্তুভ এর ছবি

কান্ট, হেগেল, রবিঠাকুর, ১৯৭১ এ সবই ওনার মত 'সম্মানীয় ব্যক্তি'রা ছাড়া কেই বোঝে না। আর আমরা কান্ট হেগেল তো দূর ওনার লেখাই বুঝি না।

ঝরাপাতা এর ছবি

শ্রদ্ধা জানাই এরকম শ্রমসাধ্য একটি কাজের জন্য। আমাদের অবহেলায়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অভাবে বার বার এভাবেই ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়ে গেছে সুযোগ সন্ধানীরা। ব্লগের সবচেয়ে চমৎকার দিক হলো- সংবাদপত্রের ডেস্কে বা বিভাগীয় সম্পাদকের টেবিলে এরকম রেখাগুলো দিনের পর দিন আটকে না থেকে চটজলদি ছড়িয়ে দেয়া যায় সবার মধ্যে।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক বলেছেন।

দ্রোহী এর ছবি

আরে! আপনাকে বহু বছর পরে দেখলাম!

মিলু এর ছবি

দুর্দান্ত এই লেখার জন্য প্রণাম জানবেন!

সলিল চৌধুরী  এর ছবি

এটি বুঝতে কি খুব কষ্ট হয় যে আলোচ্য বইটি ইমতিয়াজ আহমেদ যা তা ভাবে লিখে খুব তড়িঘড়ি করে ছেপেছে ইউনিভার্সিটি জেনোসাইড সেন্টারের ফান্ড আর ডিরেক্টরের পদটি বাগাতেই? তাঁর আর সকল ধান্দার মতই (উপরে কমেন্টে একজন লিখেছে, "যখন বাজারে যে প্রজেন্ট পান উনি সে লাইনে বিশেষজ্ঞ হয়ে যান"- আজকে সন্ত্রাসবাদ তো কালকে শরণার্থী, পরশু গঙ্গার জল তো তাঁর পরদিন রবীন্দ্রনাথ, অথবা সুযোগমত ইসলাম কিম্বা সুফিবাদ) ইমতিয়াজ এই বইটি রচনা করেছে এক দীর্ঘমেয়াদি, গভীর তথা সুচতুর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, একাডেমিক অনুশীলনের নয় একেবারেই। বিশ্বাস না হলে বইটির প্রকাশকাল আর সেন্টারের প্রতিষ্ঠাকাল খোঁজ নিয়ে দেখুন না একবার।

কৌস্তুভ এর ছবি

সেটাই মনে হচ্ছে, তাই তো বললাম এই বইটা একটা সফল সেলস পিচ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।