দা ম্যাজিক অফ রিয়ালিটি

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: সোম, ২৭/০৮/২০১২ - ৮:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডকিন্সখুড়োর বইখানা মূলত বাচ্চাদের বিজ্ঞান-পরিচিতির জন্য লেখা; তাই সম্প্রতি বেশ হইচইয়ের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হলেও পড়ার আকাঙ্খা তেমন একটা ছিল না। কিন্তু পোলাপান যখন বইটা আমার বাড়িতে কয়দিনের জন্য রেখেই গেছে, তখন হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেললে পাপ হবে।

কিশোরদের জন্য বিজ্ঞান-পরিচিতর বইগুলো লেখকেরা যথাসম্ভব আগ্রহোদ্দীপক করেই লেখার চেষ্টা করেন। ডকিন্স কিন্তু একটা অন্য পন্থা নিয়েছেন – চিরকাল আকর্ষণীয় যে কাহিনীগুলো, সেইসব উপকথা-রূপকথা-প্রবাদকাহিনী দিয়েই শুরু করেছেন তাঁর প্রতিটা অধ্যায়।

এই যেমন, সুকুমারের অনবদ্য লেখনীতে আমরা ছোটবেলায় যে নর্স উপকথাগুলো পড়েছিলাম, যাতে বলা ছিল রামধনু হচ্ছে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে যাবার জন্য দেবতাদের বানানো জাদুর সিঁড়ি, সেইরকম দেশবিদেশের নানা উপকথা তিনি জড়ো করেছেন রামধনুর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে। তারপর নতুন একটা পরিচ্ছেদে ব্যাখ্যা করেছেন, রামধনু বাস্তবে কী - প্রিজম কী, তা কেমন করে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়, নিউটন কেমন চমৎকার একটা পরীক্ষার সাহায্যে তা প্রমাণ করেছিলেন, এগুলো বুঝিয়ে নিয়ে তারপর (দারুণ ছবি সহযোগে) বলেছেন কেমনভাবে বৃষ্টির ছোট ছোট কণাগুলো আমাদের চোখে রামধনুর সুন্দর এই ‘ইলিউশন’ তৈরি করে। এবং সেখানেই শেষ না, প্রিজমের ব্যবহার করে স্পেকট্রোস্কোপের প্রাথমিক ধারণা, এবং তা থেকে দূর গ্যালাক্সির তারাগুলোয় কী মৌল আছে তাও কেমনভাবে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা, এই আধুনিক ধারণাগুলোও সহজভাবে বলে দেওয়া আছে।

যেহেতু অল্পবয়সীদের জন্য লেখা, ডিএনএ’র গঠন সম্পর্কে তেমন আলোচনায় না গেলেও চার অক্ষরের জেনেটিক কোড বুঝিয়ে তা থেকে সারা দুনিয়ার জীবজগতের একাত্মতা নিয়ে আলোচনা যেমন আছে, তেমনি খুড়োর সবচেয়ে কাছের বিষয় মানে বিবর্তন নিয়ে বেশ কিছুটা কথাবার্তা আছে, আবার ভূমিকম্পের উৎস হিসেবে প্লেট টেকটনিকসের ব্যাখ্যা, অথবা দিন-রাত ও গ্রীষ্ম-শীতের কারণ হিসেবে পৃথিবীর আহ্নিক-বার্ষিক গতির আলোচনা, বা পরমাণুর গঠন, এ সবই আলাদা আলাদা অধ্যায়ে আলোচনা করা আছে।

শুধু তাই-ই নয়, সচরাচর উপেক্ষিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলো যেমন ‘ভালো লোকেদের কপালে খারাপ জিনিস কেন ঘটে’, বা ‘মিরাকল কী বস্তু’ সেসব নিয়েও বেশ চিন্তাজাগানিয়া কথাবার্তা আছে শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য।

বুম্বা ডাকনামটা পশ্চিমবঙ্গে বেশ প্রচলিত, দা মাইটি পোচেঞ্জিত স্মর্তব্য। হঠাৎ করে কঙ্গোর আদিবাসীদের সৌরজগত-সৃষ্টিকারী দেবতার নাম বুম্বা দেখে বেশ আমোদিত হয়েছি। অথবা নেটিভ আমেরিকান ‘চুমাশ’ গোষ্ঠীর ‘হুতাশ’ নামধারী ধরিত্রীদেবীকে দেখে কচি-সংসদের হুতাশ হালদার মনে পড়ে ভারি মজা পেয়েছি। এইভাবে সারা দুনিয়ার রঙবেরঙের উপকথাগুলোকে শুরুতে জড়ো করে খুড়ো বলেছেন, দেখ, এই কাহিনীগুলো ইন্টারেস্টিং, এগুলো মজাদার, এগুলো চমকপ্রদ – কিন্তু বাস্তব আরো চমকপ্রদ, আরো মনমুগ্ধকর। ‘দেবতারা স্বর্গের সিঁড়ি হিসেবে তৈরি করেছেন’ এই কল্পকাহিনী-ব্যাখ্যাটুকু যতই মজাদার হোক, তা নিউটনের দুখানা প্রিজম নিয়ে সাদা আলো সাতরঙে ভেঙে আবার মিলিয়ে দিয়ে অকাট্য প্রমাণের মত উত্তেজনাকর হতে পারে না।

আর ডকিন্স যে যিশুর জলকে ওয়াইন বানানো ইত্যাদি গল্পগুলোকে একহাত নিতে ছাড়বেন না, তা বলাই বাহুল্য। মিরাকল নিয়ে অধ্যায়টায় তিনি যীশুকে স্পষ্টভাবে ‘ইহুদী প্রচারক’ বলে পরিচিত করে নানা খ্রীষ্টান কাহিনীগুলোকে ব্যবচ্ছেদ তো করেছেনই, ব্রহ্মা থেকে বোরাক কিছুই তাঁর মিথ-সম্ভার থেকে বাদ যায় নি। এই প্রসঙ্গেই তিনি লোকমুখে কীভাবে গল্পকথা হিসেবে মিরাকলের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে, তা বোঝাতে গিয়ে বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যানের জীবন থেকে একটা উদাহরণ দিয়েছেন। ফাইনম্যানের প্রথম স্ত্রী যখন রোগে ভুগে হাসপাতালে মারা যান, তখন আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, রোগীর পাশের টেবিলের ঘড়িটা ঠিক একই সময় বন্ধ হয়ে বসে যেন মৃত্যুসময়ের সাক্ষ্য দিচ্ছে! খুড়ো এখানে বলেছেন চমৎকার – “But Dr. Feynman was not a great scientist for nothing.” তিনি সহজেই এর পেছনে লৌকিক ব্যাখ্যাটা বের করে ফেললেন। পাঠক ১৯৪৫ সালের মানে আমাদের দাদুর আমলের দম-দেওয়া কলকব্জাওয়ালা ঘড়িগুলো স্মরণ করুন। ফাইনম্যান দেখলেন, ওই ঘরের ঘড়িটা ছিল একটু ঢিলে, ঝাঁকুনি-টাঁকুনি লাগলে বন্ধ হয়ে যেত। রোগী মারা যাওয়ার পর নার্স ঘড়িটা হাতে নিয়ে সময় দেখে রিপোর্টের কাগজে মৃত্যুর সময়টা লিখে রাখেন। অতএব সেই সময়েই যে ঘড়িটা থেমে যাবে, সে আর আশ্চর্য কী।

বইয়ের শুরুতেই তাঁর বক্তব্য, ম্যাজিক তিনরকম – একরকম হল ডেভিড কপারফিল্ড বা পি সি সরকারের জাদু, হাতের খেলা, যা আমরা উৎসাহ নিয়ে দেখতে যাই, এটা জেনেই যে সেগুলো আসলে একরকম ছল আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে ঠকানোর জন্য। দ্বিতীয়রকম জাদু হচ্ছে জাদুকাঠির ছোঁয়ায় ব্যাং রাজপুত্রের মানুষ হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ মিরাকল বা অলৌকিক ঘটনা। তৃতীয়রকম জাদু হচ্ছে বিশুদ্ধ বাস্তব, কিন্তু তা এতই মুগ্ধতাজাগানিয়া যে আমরা বলি ‘ইটস ম্যাজিকাল’। একটা নমুনা দেখুন সামনেই – রঙ-বদলানি স্কুইডের (তারা গিরগিটির চেয়ে বহুগুণে পারদর্শী) স্নায়ুর সঙ্গে একটা আইপডের তার জুড়ে দিয়ে বিদুৎতরঙ্গের তালে তালে তার শরীরে অসামান্য রঙের ছন্দোময় খেলা না দেখলে পস্তাবেন। ঠিক একটা জৈব মিডিয়া প্লেয়ারে ভিজুয়ালাইজেশন চলছে। ‘সত্যই সুন্দর’ অর্থটাকেই খুড়ো তাঁর শিরোনামের এবং বইয়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন, সে অর্থে তাঁর Unweaving the Rainbow বইটার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল আছে খানিক।

তবে বইটার ভাষারীতি বা বিজ্ঞান বোঝানোর দক্ষতা যেমনই হোক, তা বিচার করার মত পরিস্থিতি আমার কম, এ ধরনের কিশোরপাঠ্য বিজ্ঞান-পরিচিতির বই অনেক দিন পড়ি না। কিন্তু বইটার যে দিকটা স্রেফ অসামান্য, তা ডেভ ম্যাককীন’এর ইলাস্ট্রেশন।

ছোটবেলায় বাবা লম্বা সময় বাসে চাপিয়ে কলকাতার উত্তরপ্রান্ত থেকে হোই দক্ষিণে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে নিয়ে যেত ইংরিজি বই পড়াবার জন্য। অস্বীকার করব না, সে বয়সে আমার ঝোঁক টিনটিন-জাতীয় বইয়ের প্রতিই বেশি ছিল। কিন্তু যা দেখতে দারুণ ভাল লাগত, তা হল মোটা, চকচকে পাতায় ছাপা বহুরঙা ভারি সুন্দর সুন্দর সব ছবি। এই ধরনের ছাপা আর একমাত্র দেখা যেত সোভিয়েত দেশ থেকে প্রকাশিত ‘জাদুমাণিক আখানরাবো’ জাতীয় রাদুগা বা মির প্রকাশনীর বইগুলোতেই। আমাদের দেশের বিজ্ঞানের বইতে অধিকাংশই একরঙা, বড়জোর দুরঙা ছবি, অল্প কয়েকটা পাতায় হয়ত রঙিন ছবি থাকত। সেই তুলনায় এসব বইয়ের ছবিগুলো এত সুন্দর হত, যে ছবিগুলোর টানেই আটকে থাকতাম, তারপর সেগুলোর সম্বন্ধে দু-লাইন দেখতে গিয়েই হয়ত বুলফিঞ্চ নামের ঐ পাখিটা গাছের ডালে অমনিভাবেই বসে কেন, আর তাই তাদের বসতে হলে ঠিক কেমন ব্যবস্থা করে দেওয়া একটা ভালো ছেলের উচিত হবে, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এইসব অপ্রয়োজনীয় তথ্যও পড়ে ফেলা হয়ে যেত।
(এবং যা দেখছি, ভালো কাগজ এবং সম্পূর্ণ রঙিন ছাপা সত্বেও বইটার দাম এদেশের হিসেবে মোটেই বেশি না।)

ডেভ ম্যাককীন শুরুর উপকথাগুলোর চমৎকার চিত্ররূপ দিয়েছেন, লেখা ছাড়াই সেগুলোকে দারুণ গতিময় কমিকস হিসেবে পড়ে ফেলা যায়। এ ছাড়াও আঁকা ছবি, কম্পিউটার গ্রাফিক্স ও ফোটোগ্রাফির সংমিশ্রণে প্রতিটি পাতায় ভারি দুর্দান্ত ইলাস্ট্রেশন। বলতে গেলে, গড়ে প্রতিটা পাতায় অর্ধেকের বেশিই ছবি, বাকিটা লেখা। এবং তেমনই বিচিত্র নানা স্টাইল, নানা কালার স্কীমের ব্যবহার করেছেন সেগুলোয়। আমার মতে বইয়ের সেরা অংশ এই ইলাস্ট্রেশনগুলোই, বইটা হাতে নিয়ে উল্টোতে থাকলে এই ছবিগুলোর জন্যই একজন কিশোরের নজর আটকে যাবে, আগ্রহভরে সে কিছুটা পড়তে লেগে পড়বে। ফ্ল্যাপে পড়লাম, ইনি রে ব্র্যাডবেরি থেকে স্টিফেন কিং অনেক বিখ্যাত বইয়ের চিত্রশিল্পী, হ্যারি পটার সিনেমার ক্যারেকটার ডিজাইনারও। নিঃসন্দেহে এলেমদার লোক।

যাঁরা এই রিভিউটা পড়ছেন, বইটা পড়ার পক্ষে তাঁরা একটু বেশি বয়স্ক হলেও পড়তেই পারেন, এই ধাড়ি বয়সেও আমি ফাইনম্যানের ঘটনাটার মত টুকটাক কয়েকটা জিনিস জানতাম না বলে দেখলাম, আর ঘটনাগুলো জানা থাকলেও ছবিতে চোখ বোলাতে দেখতেই পারেন, অথবা দেশবিদেশের উপকথাগুলোও তো অন্তত আপনাকে বিনোদিত করবে। কিন্তু আপনার ভাই-বোন-ভাগ্নে-ভাগ্নী-ছেলে-মেয়েদের এই বইটা পড়তে দেওয়াটাই সবচেয়ে ভাল হবে। তবে আশা করব, এই বইটা পড়ার পর ব্রহ্মা বা বুম্বা কোন দেবতায় যদি তাদের বিশ্বাস একটু কমে যায় তাইলে আমার কানের খোঁজে হাত বাড়াবেন না।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চিরায়ত কৌস্তুভীয় ধরন! বেশ। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

বেশ হাসি খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার রিভিউ পড়েই বইটা পড়ার জন্য মনটা আইঢাই করছে। আমি জানি না ঢাকায় এই বই পাওয়া যাবে কিনা, চেষ্টা করে দেখি।

একটা জিনিস আমাকে অনেক পীড়া দেয় - ছোটদের উপযোগী বিজ্ঞানের বই বাংলায় সেরকম নেই বললেই চলে।

পশ্চিমবাংলায় কী অবস্থা তা আমি ভালো জানি না - পূজা সংখ্যা আনন্দমেলাতে যুধাজিৎ দাশগুপ্ত, পথিক গুহ, বেদদ্যুতি চক্রবর্তীর লেখা অথবা কিশোর ভারতীতে সংকর্ষণ রায়ের কিছু লেখা ছাড়া আর কিছু হাতে আসেনি। আমাদের এদিকে ড: আবদুল্লাহ আল মূতী কিছু বই লিখেছিলেন - "কীট পতঙ্গের বিচিত্র জগৎ", "টেলিভিশনের কথা" ইত্যাদি যেগুলো পড়ে কিশোর বয়সে খুব ভালো লেগেছিল। এছাড়া আব্দুল হক খন্দকার আর ড: মুহম্মদ ইব্রাহীমের বেশ কিছু লেখা পড়েছিলাম শিশু, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, বিজ্ঞান সাময়িকী ইত্যাদি পত্রিকায়। হাল আমলে ড: মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা "দেখা আলো না দেখা রূপ", "একটুখানি বিজ্ঞান", "আরো একটুখানি বিজ্ঞান" ইত্যাদি বই সহ কিছু বই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তবে এখনো বোধহয় বাংলা ভাষায় এই দিকটায় বেশ ভালো পরিমান ঘাটতি রয়ে গেছে।

এই বইটির মত কিছু বই যদি বাংলায় অনুবাদ করা যেতো!! (আপনার রিভিউ পড়েই এই অনুভূতি হচ্ছে, মূল বইটি পড়তে পারলে না জানি কেমন লাগবে!)

ধন্যবাদ কৌস্তভদা।

-অয়ন

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

ঢাকায় পাবেন নিউমার্কেটের বুকওয়েবে যদি শেষ না হয়ে যায়। ১৫০০টাকার আশেপাশে দাম।

---------------------
আমার ফ্লিকার

কৌস্তুভ এর ছবি

রায়হান আবীরের কাছে শুনলাম পাওয়া যায়, কিন্তু হাজারদেড়েক টাকা দাম। নেটে ইবুক খুঁজে দেখতে পারেন।

বাংলায় ভাল বিজ্ঞান বইয়ের নিয়মিত জোগান কম, এটা ঠিক কথাই। আপনি পথিক গুহের কথা উল্লেখ করলেন যখন, ওনার একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম, তার থেকে কিছু অংশ তুলে দিই:

জানতে চাইলাম, ভবিষ্যত বিজ্ঞান-লেখকদের সুযোগ কেমন? আমরা দেখে আসছি এত বছর ধরে আপনি নিয়মিত লিখে আসছেন, কিন্তু সাধারণভাবে বিজ্ঞান-সাংবাদিক তেমন দেখা যায় না, নিয়মিত অথবা প্রতিষ্ঠিত কেউই সেভাবে নন। বললেন, এ কথা সত্যি, বিজ্ঞান-সাংবাদিক হিসাবে লেখালিখির সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন; আমি লিখতে পেরেছি আমার লেখা আনন্দবাজার ছাপিয়েছে বলেই। সংবাদপত্র টি-টোয়েন্টির আলোচনা বা অভি-অ্যাশের প্রেমকাহিনীর মত গরম বিষয়ে যতটা উৎসাহী তার কণিকামাত্রও উৎসাহী নয় সাধারণ একটা বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা ছাপতে। কিন্তু মজার ব্যাপার, প্রকাশনার জগতে আবার পরিস্থিতিটা এর উলটো – আজকাল অনেক প্রকাশকই এগিয়ে আসছেন বিজ্ঞান-বিষয়ক বই ছাপতে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। কয়েকজন প্রকাশক নাকি ওনাকেও বই লিখতে অনুরোধ করেছেন।

জানলাম, এখন পর্যন্ত দুটি বই লিখেছেন তিনি – নবসাক্ষরদের জন্য একটি আর বাচ্চাদের উপযোগী আরেকটি। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিছু লেখার ইচ্ছা নেই; আগেই যা বলেছেন, তারা টি-টোয়েন্টিতেই আগ্রহী, ওনার লেখায় নয়। এবং বললেন, ভবিষ্যতেও রিচার্ড ডকিন্সের মত জনপ্রিয় ‘পপুলার সায়েন্স’ লেখক বাংলায় উঠে আসা সম্ভব না। পাঠকের অনীহা এবং মিডিয়ার অনাগ্রহ মিলিয়ে ভবিষ্যত বিজ্ঞান-লেখকের প্রতিষ্ঠা পাবার সম্ভাবনা খুবই কম।

একজন বাঙালি বিজ্ঞানীকে উদ্ধৃত করলেন, যে লিভ-টুগেদার করা ভাল কি খারাপ, সে বিষয়ে মন্তব্য করতেও একজন ম্যাজিশিয়ানকে ডাকা হয় পত্রিকায়, কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা বা আমাদের সাহিত্য নিয়ে মন্তব্য করতে কোনো বিজ্ঞানীকে কখনও ডাকা হয় না।

দিগন্ত এর ছবি

মতামত একেবারে সঠিক।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়ার লোভ হচ্ছে।
দারুণ লিখেছেন।
আমি বিজ্ঞান আর ইংরেজি, দুটোতেই কাঁচা... অতএব বয়স বেশি হলেও এইটিই আমার জন্য সঠিক মনে হয় হাসি

রাশান বইগুলোর পাশাপাশি চৈনিক কিছু বই হতো, সেগুলোও দারুণ রংচঙে ছিলো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

অবশ্যই, সেই জিনসেং ফলের গল্প!
(জিনসেং দেওয়া চা খেয়েছি অবশ্য, তেমন কিছু আহামরি লাগেনি হাসি )

নিধি আরেকটু বড় হলে ওকে পড়ে শোনাতে পারেন।

রামগরুড় এর ছবি

চৈনিক বইয়ের কথা মনে হলে খালি "সুং উখং" এর কথা মনে হয় -- কি অদ্ভুত চিত্রায়ন আর কাহিনী! মিস করি আজও।

সত্যপীর এর ছবি

বয়স্ক কৈলেন কি বুইঝা? রেগে টং

...তবে ইয়ে, পিডিয়েফ আসে নি? থাকলে খোমাখাতায় পোকান দেখি।

..................................................................
#Banshibir.

কৌস্তুভ এর ছবি

মাপ কইরা দ্যান ছ্যার।

বই এখেনে দেখেন।

কল্যাণ এর ছবি

আসে না কৌস্তভদা

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর এর ছবি

ঘ্যাচাং

..................................................................
#Banshibir.

কৌস্তুভ এর ছবি

আবার টেরাই করেন...

অতিথি লেখক এর ছবি

আর নাইকা ওঁয়া ওঁয়া

-- ঠুটা বাইগা

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

রিভিউ তে উত্তম জাঝা!
১৫০০টাকা দাম কিন্তু পিচ্চি একটা বই এইজন্যে কিনলাম না। এছাড়া ডকিন্সের ৩খান বই কিউতে আছে ওগুলা শেষ করে এইটা দেখি কারো থেকে বাগানো যায় কিনা!

---------------------
আমার ফ্লিকার

কৌস্তুভ এর ছবি

দুয়েকবার পড়ার জন্য আমি নিজে এই বই কিনব না। কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য হলে ঠিকাছে। লাইব্রেরি থেকে এনে বা ইবুক হিসেবে পড়ে ফেলি।

অবনীল এর ছবি

আমি বলব কালেকশানে রাখার মতো বই। ইলাস্ট্রেশনের জন্য এবং কিছু জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপনের রেফারেন্স হিসেবে দারুন। বিশেষ করে বিবর্তনের সাথে বইয়ের স্তম্ভের তুলনা করে কোন পেজে কোন পূর্বপুরুষ থাকবে তার ব্যাখ্যাটা চমকপ্রদ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, এটা খুড়ো অ্যানসেস্টরস টেল-এ যা করেছিলেন তার একটা শিশুবোধ্য সহজ ভার্শন। ডকিন্সের উপমার স্টাইলের কোনো একজন কলামনিস্ট ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন, এখন নামটা মনে পড়ছে না, ন্যাটালি অ্যাঞ্জিয়ার হয়ত।

তাসনীম এর ছবি

কোন বয়েসি বাচ্চাদের জন্য এটা উপযোগী?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

ফ্ল্যাপে তো বলছে চিলড্রেন, ইয়ং অ্যাডাল্ট, অ্যাডাল্ট সবার জন্যই... আপনি নেটে একটু ঘেঁটেঘুঁটে দেখেন।

তাসনীম এর ছবি

পাড়ার লাইব্রেরিতে আছে। ওখান থেকে নিয়ে পড়ব। বাচ্চারা বুঝলে কিনে দেব। অ্যামাজনে বেশ অল্পদামেই পাওয়া যাচ্ছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

হিমু এর ছবি

একটা অনুরোধ সবাইকে। আমরা অনেকেই বিভিন্ন বই ই-বুক আকারে পড়ি। কিন্তু এগুলোর প্রায় সবই কাঁচা বাংলায় বলতে গেলে চোরাই মাল। প্রকাশ্যে সচলায়তনে এগুলো শেয়ার করা ঠিক ভালো দেখায় না।

সজল এর ছবি

বইটা কিনে বসে আছি, দশ শতাংশও পড়া হয় নাই।
ফাইনম্যানের ঘটনাটা "সিওরলি ইউ আর জোকিং, মিঃ ফাইনম্যান" বইএ পড়েছিলাম।
ভালো রিভিউ।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

কৌস্তুভ এর ছবি

আমি তিন দিনে একটানা পড়ে ফেলেছি, এমনকি হাগনাসনে হাওয়া খেতে খেতেও... দেঁতো হাসি তাতে মুর্শেদভাইকে যা করে দেব বলেছিলাম সেটা ভুলেই গেছি!

সত্যপীর এর ছবি

হাগনাসন হো হো হো

..................................................................
#Banshibir.

পল্লব এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। দেশে পিচ্চি ভাইগ্নাদের পাঠানোর জন্য জিনিস খুঁজতেসিলাম। বইটা পেয়ে ভাল হইল। অ্যামাজনে অর্ডার দিয়ে দিসি দেঁতো হাসি

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

কৌস্তুভ এর ছবি

ইয়ে মানে আমারও (মনের) বয়স কিন্তু একেবারে নবীন... আমাকেও দুয়েক কপি (অন্য বই) পাঠাবেন? এই ধরেন অ্যানসেস্টরস টেইল...

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

অ্যানসেস্টরস টেইল বইখানা বিদেশ থেকে বয়ে আঞ্ছি শয়তানী হাসি

---------------------
আমার ফ্লিকার

পল্লব এর ছবি

টিউলিপ কিনলে খবর দিয়াম নে। নক্সভিল আইসা পড়তে পারবেন। দেঁতো হাসি

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

কৌস্তুভ এর ছবি

উঃ, নিষ্ঠুর!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

রিভিউ ভালো হইছে। বইটার শুরুতে পড়তে গিয়ে আমারও মনে হইছে একটু বাচ্চাদের জন্যে লেখা। কিন্তু তারপরেও অনেক জিনিস না জানা ছিল। মিথগুলাও বেশ মজার। তবে একটা কথা বারবার মনে হইছে পড়ার সময় দেশে গেলে কয়েক কপি কিনে নিয়ে যাইতে হবে। ছোট ভাইবোন আশে পাশে যারা আছে, সবার বইটা পড়া দরকার।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

ধইন্যবাদ ভায়া হাসি

অরফিয়াস এর ছবি

অল্প বয়স থেকেই কল্পকাহিনী/রুপকথা আর বাস্তবের পার্থক্য মানুষকে ধরিয়ে দিতে পারলে আর বড় হয়ে উটকো ঝামেলায় পড়েনা কেউ। খুড়ো কাজের কাজ করেছে। চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

বাইবেলে বলছে,

Train a child in the way he should go,
and when he is old he will not turn from it.

তারেক অণু এর ছবি

চলুক

তো দাদা, দাম যখন বেশী না বললেই, আমার জন্য এক কপি গিফট কিনেই রাখ না কেন বাপু !

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার জন্য না, তারেক পরমাণুর জন্য কিনতে পারি... চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ছোটদের বইয়ের ইলাস্ট্রেশনটা খুবই জরুরী জিনিস---স্রেফ ভালো ছবির জন্যই ছোটবেলায় কত বই পাকাপাকিভাবে মনে গেঁথে গেছে!

আর, পোলাপাইনের "মাথা খাওয়া"র থেকে ভালো কাজ মনে হয় কমই আছে, আপনার খুড়ো এই কাজে হাত দিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো।

--দিফিও

কৌস্তুভ এর ছবি

খাইছে

রামগরুড় এর ছবি

ডকিন্সের যে বইটা পড়ে আমার মাথা ঘুরাইছিল সেইটা হইল "দ্য সেলফিশ জিন" -- পড়লে আজো মাথা ঘুরায়। তবে আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে এইটাও কিনতে হবে। ধন্যবাদ। চলুক

কৌস্তুভ এর ছবি

সেলফিশ জিন ভারি ভালো বই দেঁতো হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বইটা যেহেতু আপনার পড়া শেষ হয়েছে, তাহলে মনের ভুলে ওর একটা কৌস্তুভীয় কপি কয়েক সিরিজে সচলায়তনে ফেলে দিন না। আমরা মনের ক্ষুধা মেটাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

বুক রিভিউ তো দিলামই, আর কী চান? চিন্তিত

দুর্দান্ত এর ছবি

কিন্নাল্‍ছি। দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

ভালা কর্ছেন দেঁতো হাসি

নীলম এর ছবি

দারুণ একটা হিসাব কষে নিলাম। বই কিনে কাজিনসহ চার ভাইবোন পড়ে ফেলে অন্য শহরে থাকা দুই কাজিনকে গিফট পাঠিয়ে দেব দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

হেঃ হেঃ, ভাগ করে নিলে জ্ঞান বৃদ্ধি পায় দেঁতো হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এসব পড়ে কী পরকালের নরকে পোড়া থেকে বাঁচবি রে কৌদা ??

... হাতেরগুলা শেষ করি দেখি ই-বুকে যোগাড় করতে পারি কি না। হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

ফাহিম হাসান এর ছবি

ডকিন্সের লেখার হাত অসাধারণ, আর তার বইগুলোর শিরোনামগুলোও বেশ ইন্টারেস্টিং হয়। আমি তার যুক্তি সাজানোর ক্ষমতা দেখে বিস্মিত - এই একটা লোক বেশ ধৈর্য নিয়ে সব জিনিস বেশ সহজ কথায় ব্যাখ্যা করে।

তোমার লেখায় চলুক আর যেই ভিডিওর লিংঙ্ক দিলে তা দেখে কস্কি মমিন!

কৌস্তুভ এর ছবি

ডেনেটের লেখার মধ্যেও একটা দাদু-দাদু ভাব আছে, এক কথা বারবার ঘুরিয়েফিরিয়ে বলে। আমার হিচেন্সের গদ্য সবচেয়ে ভাল লেগেছে। পেশাদার লেখক বলেই বোধহয়।

চিলতে রোদ এর ছবি

কৌস্তভদা, আমাদের বাংলা ভাষায় এর কাছাকাছি মানের বই বেরুতে আরো কত বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে আপনার ধারনা? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।