ঝুম্পার সাথে দেখা-

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: বুধ, ১৩/০৮/২০০৮ - ৮:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগে থেকে কোন রকম প্ল্যানিং ছিলো না, অন্য কি একটা বই খুঁজতে গিয়ে এখানকার লোকাল লাইব্রেরীর কোন একটা শেলফে একদম হঠাৎই চোখে পড়লো বইটা। ইনটারপ্রেটার অব মেলাডিজ। বইটার নাম শুনেছি আগে, কিন্তু আমার তখন অন্য লেখকের বই শেষ করার চিন্তা মাথায়, তাই নিবো না ঠিক করে দরকারী বইটা সাথে নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে পার্কিং-এ পৌঁছে যাই, তারপর হঠাৎ কি মনে করে আবার ওখান থেকে ফিরে এসে বইটা ইস্যু করে ফেলি।

ঝুম্পার সাথে শেষ মেষ আমার দেখা হলো এইরকম আচমকাই, নেহায়েত অনিচ্ছায়, অনেকটা দুইটা কিনলে একটা ফাউয়ের স্টাইলে দোকান থেকে তুলে নেয়ার মত।

তো, এই পরিচয়টা নিবিঢ় হতে খুব বেশি সময় লাগলো না। একটু অবশ্য লাগলো। আমি শুরুতেই বইটা পড়লাম না। অন্য যে বইটা পড়ছিলাম, ওটা বেশ দীর্ঘ একটা উপন্যাস। পড়তে পড়তে ক্লান্তি চলে এলে আমি মাঝে মাঝেই অন্য লেখায় ডুব দেই। এরকম অনেকবার হয়েছে যে একসাথে আমি দুই বা তিনটে বইও পড়া শুরু করেছি, এবং প্রায় একই সাথে সবগুলো পড়া শেষ করেছি। আমার তাতে কোন সমস্যা হয় না। অনেক উল্টা পাল্টাও করি। মাঝে একবার ইলিয়াসের নেশায় পেয়েছিলো, তো পড়তে পড়তে মাথা মাঝে মাঝে ভোঁ ভোঁ করতো, তখন হাল্কা কি পড়া যায় ভাবতে ভাবতে টেনে নিয়েছিলাম সিডনি শেলডন। কাজ হয়েছে এই যে ইলিয়াস মাথায় জমে গেছে, সিডনির বইটা শেষ করেছি অবশেষে, তবে ভদ্রলোকের সাথে আর কখনো আমার সাক্ষাৎ হবে কি না সেরকম একটা সন্দেহ আমার রয়েই গেছে।

তো, ঝুম্পার ব্যপারটা এরকমও হতে পারতো। খানিকটা রিস্ক তো ছিলোই। যে বিশাল বইটা পড়ছিলাম, পড়তে গিয়ে থামতে হচ্ছিলো প্রচুর। এরকম আগেও থেমেছি বহুবার হুমায়ুন আজাদ পড়ার সময়। বেশ যন্ত্রণা পেতে হতো আজাদ পড়তে গেলে। আমি চিরকালই দেখেছি আজাদ পাঠে কোন আরাম নেই, তবে আনন্দ আছে, আবার সেই আনন্দটা যন্ত্রণাদায়ক আনন্দ, খানিকটা পারভার্টেড আনন্দও বলা যায়।

কথা সেটা না, বলছিলাম ঝুম্পার কথা। তো, পড়ার ক্লান্তি কাটাতে ঝুম্পা লাহিড়িকে টেনে নিলাম, নিয়ে বুঝলাম ভুল করিনি।

ইন্টারপ্রেটার অব মেলাডিজ সব মিলিয়ে নয়টি গল্পের একটা সংকলন। বিভিন্ন সময়ে নিউ ইয়র্ক ও তার বাইরের নানা পত্রিকায় গল্পগুলো ছাপা। ঝুম্পার বাংগালি ব্যাকগ্রাউন্ড শুনেও বোধকরি আমি আরেকটু আগ্রহী হয়েছি।

বইয়ের প্রথম গল্পের নাম "এ টেম্পোরারি ম্যাটার"। একটা ছোট নোটিশ দিয়ে গল্পের শুরু, নোটিশের বক্তব্য অনেকটা এরকম- অত্র এলাকায় আগামী পাঁচদিন সন্ধ্যার পরে ঘন্টা দুয়েকের জন্যে বিদ্যুত থাকবে না। ব্যাপারটা সাময়িক, পাঁচদিন পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

এখানে, মেলবোর্নে, মাঝে মাঝেই এরকম সব নোটিশ পাওয়া যায় পোস্ট বাক্স হাতালেই, রাস্তার কাজ হবে বা পানির কাজ বা হাবিজাবি আর কিছু, সিটি কাউন্সিল থেকে জানায় আমার সমস্যার জন্যে তারা অনেক দুঃখিত, বা এরকমই সব।

তো, এইরকম একটা নোটিশ নিয়ে গল্পটা কতদুর এগোয়, এটা দেখতে গিয়ে আমি বেশ চমকে গেলাম। ঝুম্পা অনেকটা সুড়ঙ্গের মত করে একটা বাড়িতে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো, যেন ঠিক সামনে থেকে ডেকে ডেকে, যেন হারিকেন হাতে করে পথ দেখিয়ে।
এক জোড়া ভারতীয় দম্পতির পাঁচদিনের জীবন নিয়ে সেই কাহিনি, যেখানে তারা অতীত নিয়ে ব্যাথাতুর হয়, ভবিষ্যতের ভাবনায় চমকে ওঠে পরস্পরকে ভালবাসে বা ঘৃণা করে।

এই গল্পটা পড়ার পরে আমি এইবার বইটা নেড়ে চেড়ে দেখলাম। বইয়ের ফ্ল্যাপে অনেক সমালোচকদের ভাল ভাল কথা লেখা আছে, বইয়ের প্রচ্ছদে কালো হরফে লেখা আছে বেস্ট সেলার। এইসব কথাগুলোকে অবশ্য আমি খুব একটা বিশ্বাস করি না, প্রায় সব বইয়েই ভাল ভাল কথা লেখা থাকে, সব বইই কেমন করে জানি বেস্ট সেলার হয়ে যায়।

দ্বিতীয় গল্পটা আরও একটা চমক আমার জন্যে। গল্পের নাম- হোয়েন মি.পীরজাদা কেইম টু ডাইন। চমকাবার কারণ- এই গল্পের পটভূমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ, তবে ঢাকা নয়। নিউইয়র্কে পড়াতে বা পড়তে যাওয়া কোন এক বাংলাদেশির গল্প এটা, যার নাম পীরজাদা। যুদ্ধের পুরোটা সময় এই ভদ্রলোক পরবাসে বসে কি এক অস্থিরতায় দিন কাটিয়েছেন, তারই গল্প এটা। আমার খুবই ভাল লাগল গল্পটা। সরাসরি যুদ্ধের তেমন কোন বর্ণনা নেই, তবু এটা একরকম আমাদের যুদ্ধেরই গল্প।

বাকি গল্পগুলোর প্রতিটিই বেশ চমৎকার। এ রিয়েল দারওয়ান- যেমন। এই গল্পটার ভঙ্গি অনেকটা রূপকথার গল্পের মতন। একদম শুরুটুকু পড়েই শেষটুকু জেনে গিয়েছিলাম যে কী হবে, তবু ঝুম্পার কাছ থেকে শোনার লোভেই পুরোটা পড়ে গেছি। অথবা "সেক্সি"- ছোট্ট এক বাচ্চার চোখে নিজেকে দেখার চেষ্টা। "মিসেস সেন'স", প্রবাসে থাকেন ভদ্রমহিলা, কিন্তু কিছুতেই গাড়ি চালানোটাকে বাগে আনতে পারছেন না, এই অদ্ভুত মনোদৈহিক টানাপোড়েন। বাকি গল্পগুলোও বেশ।

আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে- যে গল্পটার নামে বইটার নাম- সেই ইন্টারপ্রেটার অব মেলাডিজ গল্পটাই।
ভারতে বেড়াতে যায় এক দম্পতি, তাদের ট্যুর গাইডের পার্ট-টাইম জব হচ্ছে স্থানীয় এক ডাক্তারের সহকারী হিসেবে কাজ করা। ডাক্তার লোকাল ভাষা বুঝে না, রোগীরা তাই এসে তার কাছে রোগের বর্ণনা দেয়, আর ট্যুর-গাইড সেটাকে ইন্টারপ্রেট করে বলে ডাক্তারকে। এই অদ্ভুত দোভাষীর চাকরির কথা আমি কখনো শুনিনি। এটা জানাটা একটা আবিষ্কারই বটে। তারপরে গল্পের বুনোটে আরও বেশি জমে গেছি।

সব পড়ে টড়ে ভীষণই ভাল লাগলো। খুব ঝুট ঝামেলা নেই বর্ণনায়। চরিত্রের ভিড় ভাট্টা নেই। এমন করে গল্প বলে ঝুম্পা যেন আমাদের ঠিক পাশের বাড়ির মানুষদের গল্পই বলছে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নামতে যাদের সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় আমাদের। এবং গল্প বলায় কোন জমাটি মেজাজ নেই। আসরে বলার মত করে গল্প বলা নয় সেটা। বরং- ব্যস্ততায় ছুটে যাবার ফাঁকে পরিচিতের সাথে যখন দেখা হয়, তখন দম ফেলার ফাঁকে হাত ধরে চট করে কুশল জিজ্ঞেস করার মত করে গল্প বলে যাওয়া- এমনই নির্লোভ নিপাট বর্ণনা।

সম্ভবত এই প্রথম বইয়ের মলাটে লেখা কোন একজন সমালোচকের একটা কথা আমার পছন্দ হলো। তিনি বলেছেন, ঝুম্পার গল্পগুলো এমনই যে পড়া শেষ করে ঠিক পাশের লোকটাকেই ধরে হাতে বইটা ধরিয়ে দিয়ে বলতে ইচ্ছে হবে, পড়ো এটা!

কথাটা ভীষণই সত্য। ঘরের লোককে ইতিমধ্যেই জোর করে পড়িয়েছি। এবার আশপাশে তাকিয়ে দেখি সবচে কাছে আছে সচলায়তন। এবার তাহলে আপনাদের পালা।
পড়ে ফেলুন দেখি বইটা।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

মিসেস সেন এর গল্পটাই কেবল পড়েছিলাম। ভালো লেগেছিলো। বর্ণনার ভঙ্গিটা চমৎকার। মিসেস সেন একটা কিছু মাপছেন, সেই পাল্লার কাঁটা ওজন নির্দেশ করছে, ঝুম্পা বলছেন, দ্য নিডল শিভারড টু ইটস ভার্ডিক্ট। এরকম অসংখ্য ছোট ছোট মণিমুক্তো দিয়ে বোনা শৈলীভরা লেখা।

ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা ইংরেজিতে লিখছেন, তাঁদের মধ্যে খুশওয়ান্ত সিং আর রোহিন্তন মিস্ত্রি পড়েছি টেনে, ঝুম্পা লাহিড়িকে ভালো লাগা সত্ত্বেও কেন যেন পড়া হয়নি আর। এখন হাতের কাছে বই নাই, তাই সিনেমা খাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কনফুসিয়াস এর ছবি

সিনেমা খাইয়েন না বস, সিনেমায় বইয়ের টেস্ট পাওয়া যায় না। যেসব সিনেমা উপন্যাস থেকে বানায়, দেখার সময় আমি উপন্যাস আর সিনেমা দুটা আলাদা হিসেবে দেখি। তা নইলে ঝামেলা।
ঝুম্পার লেখা আসলেই একেবারে সাধারণ। আলগা কোন কারুকাজ নাই, কিন্তু, মাঝে মাঝে দুয়েকটা মণিমুক্তা চলে আসে, যেমনটা আপনে বললেন।
নেমসেক নিয়ে অনেক ভাল মন্দ শুনছি, এখনো পড়া হয় নাই, তবে আপনি একটু খোঁজ নিয়া এই বইটা পেলে পড়ে ফেলেন। বেশ ভাল লাগবে।
ইস্নিপ্সে গল্পের নাম ধরে সার্চ দিলে কিছু গল্প পেয়ে যাবার কথা। হাসি
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

যেসব সিনেমা খাই, সেগুলি ঠিক বইকেন্দ্রিক সিনেমা না। ধুমধাড়াক্কা সিনেমা দেখি আর কি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বইটা কিনেছিলাম বেশ আগে, পড়বো-পড়বো করেও হয়নি, পড়ে ছিলো শেলফে। পড়লাম গত সপ্তাহে, অনুমান করি আপনার সঙ্গেই।

ঝুম্পার গল্পগুলি সম্পর্কে আপনার মন্তব্যগুলির সঙ্গে আমার কিছুমাত্র দ্বিমত নেই। আমার কথাগুলি আপনি বলে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে একটা পোস্ট দেবো ভেবেছিলাম, সময়ের অভাবে হয়ে উঠছিলো না, সে কাজটাও আপনিই করে দিলেন। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কনফুসিয়াস এর ছবি

জুবায়ের ভাই,
চান্স পেলেই আমারে ফাঁকিবাজ বলে খোঁচা দেন, এইবার? এইবারতো আপনিই ফাঁকিবাজি করছেন!
এভাবে হবে না, আপনারও একটা পোস্ট চাই, পড়ে কেমন লাগলো জানান।
আমি আসলে এখানে তেমন কিছুই বলি নাই। আরও অনেক কিছু বলার ছিলো। যেমন- গল্পের বিষয় নির্বাচন। ঝুম্পার বয়ানে তেমন আলাদা কাজ নাই, ওর প্রায় সব গল্পই উৎরে গেছে বিষয়ের উপর দিয়া। তবে, সম্ভবত, প্রবাসীরা বেশি রিলেট করতে পারবে গল্পগুলার সাথে, তাই না?
আপনার আলোচনা চাই। এক দফা এক দাবী।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কনফু ভাই, দারুন লিখেছেন। আপনার লেখা পড়ে বইটা পড়ার আগ্রহ আরো গাঢ় হলো। নামটা শুনেছিলাম আগেই কিন্তু বইটা না পাওয়ায় পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে এবার এই আগ্রহটা টাটকা থাকতেই পড়ে ফেলব ভাবছি হাসি

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অনুবাদের আশায় আছি। এইসব বইতো ধারে পাওয়া যায় না। তাই কেউ কেউ পইড়া কিছু জানাইলেও খানিকটা ঘ্যারাণ পাওয়া যায়। দেঁতো হাসি
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

দৃশা এর ছবি

কিছুদিন আগে ঝুম্পার নেইমসেক পড়লাম...আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এই বইটাও পড়ে ফেলা উচিৎ। ধন্যবাদ আপনার এই বই পড়ার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার জন্য।

দৃশা

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

উপরের প্রত্যেকটা কথা সত্যি
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

ফারুক হাসান এর ছবি

বইটা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে!

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনি তো ভাই বাংলায় এতো সুন্দর করে বুঝালেন। কিন্তু সমস্যা তো ঝুম্পা যে বাংলা জানে না ? আমার আবার এই একটাই সমস্যা, কেউ বাংলা না জানলে তার সাথে আমার আড়ি ভাঙে না !

এটা তো ঝুম্পাও জানে না ! অন্য কেউ যদি আড়ি ভাঙিয়ে দেয়, সে অপেক্ষায় আছি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মূর্তালা রামাত এর ছবি

আমার কিন্তু এতোটা ভালো লাগে নাই। তবে গল্পের বিষয়বস্তুগুলো চমৎকার। তোর লেখাও।

মূর্তালা রামাত

রাফি এর ছবি

ঝুম্পা লাহিড়ীর কোন বই পড়া হয়নি এখনো; এই বইটা দিয়েই শুরু করব।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

পড়তে হবে তাইলে বইটা, আপনার রিভিউ দারুন লাগল
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

কনফুসিয়াস এর ছবি

@ অতন্দ্র প্রহরী,
পড়ে ফেলেন ভাই। তারপরে এখানে একবার আওয়াজ দিয়ে যাবেন।

@ জুলিয়ান এবং রণদীপম,
অনুবাদে পেলে ভাল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- এই বইটা পড়ার জন্যে অনুবাদের খুব একটা দরকার নেই। একেবারে সোজা সরল ইংরেজী। একটু খুঁজে নিয়ে পড়ে ফেলেন। লেখকের নিজের ভাষায় পড়ার মজাই আলাদা, তাই না?

@ ফারুক, দৃশা, মুমু, রাফি,
অবশ্যই। শুভস্য শীঘ্রম।

@ মুর্তালা,
ভাল লাগছে বললে কারণ না বললেও চললে। কিন্তু যদি বলিস ভাল লাগে নাই, তাইলে কারণ দেখাইতে হয়।
এইবার তুই এক এক করে বল কেন ভাল লাগে নাই।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

গৌতম এর ছবি

অনুবাদ পড়ায় মজা কম- জোশ অনুবাদ হৈলে অবশ্য অন্য কথা।
অরুন্ধতী রায়ের বইগুলোর অনুবাদ পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, পড়ার জন্য ওই রকম কষ্ট আর এই জীবনে করি নাই।
তবে আশ্বাস দিচ্ছেন যখন ঝুম্পার বইগুলো পড়ার চেষ্টা চালাবো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৌরভ এর ছবি

হুমম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শেখ জলিল(লগ অফ) এর ছবি

সুন্দর রিভিউ।
লেখাটা পড়ে ঝুম্পা লাহিড়ী পড়ার আগ্রহ বাড়লো।

তানবীরা এর ছবি

পড়তে পড়তে ক্লান্তি চলে এলে আমি মাঝে মাঝেই অন্য লেখায় ডুব দেই। এরকম অনেকবার হয়েছে যে একসাথে আমি দুই বা তিনটে বইও পড়া শুরু করেছি, এবং প্রায় একই সাথে সবগুলো পড়া শেষ করেছি। আমার তাতে কোন সমস্যা হয় না। অনেক উল্টা পাল্টাও করি। মাঝে একবার ইলিয়াসের নেশায় পেয়েছিলো, তো পড়তে পড়তে মাথা মাঝে মাঝে ভোঁ ভোঁ করতো, তখন হাল্কা কি পড়া যায় ভাবতে ভাবতে টেনে নিয়েছিলাম সিডনি শেলডন।

আমি ভাবতাম আমিই বুঝি এরকম, এখন দেখি না আরো কেউ আছে। আসেন হাত মিলাই কনফু।
ঝুম্পার বই ইংলিশে পড়াই ভালো, মজা পাওয়া যাবে অথেনটিসিটির আর খুব সহজ ইংলিশেই লেখা। ইন্ডিয়ান লাইফ নিয়ে ওর চেয়ে ভালো বোধ হয় আর কেউ লিখে নাই। সিনেমা বাদ।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

কনফুসিয়াস এর ছবি

ইন্ডিয়ান লাইফ নিয়ে ওর চেয়ে ভালো বোধ হয় আর কেউ লিখে নাই।

হু, বিশেষ করে প্রবাস জীবনের গল্প।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

স্নিগ্ধা এর ছবি

ইন্টারপ্রিটার অফ ম্যালাডিস আমার খুব পছন্দের একটা বই। নেমসেক এটার মত ভাল লাগেনি। এখন হাতে আছে আনএকাস্টমড আর্থ হাসি

আমার দ্য থার্ড এন্ড ফাইনাল কন্টিনেন্ট আর এ রিয়েল দারওয়ান গল্পদুটো ভীষণ পছন্দ!

আর আমিও কনফুসিয়াসের সাথে একমত অনুবাদ না পড়ে ইংরেজিতেই পড়ার ব্যাপারে। ঝুম্পার লেখা খুব মিষ্টি, তাঁর ন্যারেশন অরুন্ধূতি বা অন্যান্য বেশীরভাগ ডায়াসপোরিক ভারতীয় লিখিয়েদের মতো না - খুব মসৃণ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

থার্ড এন্ড ফাইনাল কন্টিনেন্ট আমারো বেশ পছন্দের। তবে দারওয়ান একটু দুর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে। প্রেডিক্টেবল ছিল শেষটুকু, তবে পড়তে খারাপ লাগেনি। আর থিম হিসেবে রীতিমতন চমকে গেছি "সেক্সি" পড়ে! মাথায়ই আসেনি এরকম কিছু!

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

দময়ন্তী এর ছবি

ঝুম্পার এই প্রথম বইটা বেশ লেগেছিল৷ চমত্কার ৷ কিন্তু নেমসেক ভাল লাগে নি ৷ শেষেরদিকে প্রায় শেষ করতে হবে বলেই করা ৷ খুব একঘেয়ে লাগছিল শেষদিকটা ৷ একটা জিনিষ হল নতুন লেখকের প্রথম বইটা জনপ্রিয়, পুরস্কৃত ও বহু আলোচিত হলে পাবলিশাররা পেছনে পড়ে যায় , ফলে লেখক সম্ভবত: আর পর্যাপ্ত সময়টা দিতে পারেন না পরবর্তী বইগুলোর প্রতি ৷ "নেমসেক' পড়ে কিম্বা খালেদ হোসেইনির "কাইট রানার' এর পর "এ থাউজেন্ড স্প্লেনডিড সানস' পড়েও এইটা মনে হয়েছে ৷ "আন্অ্যাকাস্টমড আর্থ' এর ২-৩ টা গল্প মনে হয় নিউ ইয়োর্কারে পড়েছি ৷ ঝুম্পাকে আজকাল ভীষণ সীমাবদ্ধ মনে হয় ৷ শুধু ই প্রবাসীদের লিভিং রুম, স্টাডি আর বেডরুমের গন্ডীর বাইরে বেরোতে পারছেন না ৷ গল্পগুলো কিরকম যেন ওর মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে ৷ আমার ব্যক্তিগতভাবে সেটা একটু দমবন্ধকর লাগে ৷

এই জঁর এর লেখকদের মধ্যে আমিতাভ ঘোষ কারো ভাল লাগে না? আহা " শ্যাডো লাইনস' কিংবা "গ্লাস হাউস', বড্ড বড্ড ভাল ৷ অবশ্য "হাংরি টাইড' তেমন জুতের লাগে নি আমার ৷

কনফু কি এই বইটা "রাজপাট' এর ফাঁকে ফাঁকে পড়লি নাকি রে? রাজপাট কেমন লাগছে? আমি আপাতত গর্ডিমারে মজে আছি ৷ এ বুড়িকে আগে কেন পড়ি নি কে জানে!!

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

কনফুসিয়াস এর ছবি

না দমুদি, এটা পড়েছি, লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা- পড়তে পড়তে। রাজপাট এখনো ধরতে পারিনি, তিথি অলরেডি ওটার দখল নিয়েছে, আমার সিরিয়ালে এখন আছে আগুনপাখি।
*
বেডরুম-স্টাডিরুমের গন্ডীর কথা যেটা বললে, ঠিক কথা। টেম্পোরারি ম্যাটার, বা দিস ব্লেসড হাউজ, এমনকি মিসেন সেনস ও এরকমই অনেকটা। আশপাশেই ঘুরপাক খায়। তবে আমার ভাল লাগার কারণ হতে পারে, এরকম টুকিটাকি ধরণের গল্প আগে বেশি পড়িনি। গল্প মানেই বিশাল কাহিনি, অনেক লোকজন, তাদের জীবনের সরল বা গরল আচার, এইসবের বাইরে একদমই ছোটখাটো বিষয় এগুলো। মনের ছোট্ট কোন অনুভুতি নিয়ে হয়তো, যেটা এমনিতে হয়তো চোখেই পড়ে না- এরকম ব্যাপার গুলোকে বিষয় বানানোর তেমন চল নেই বলেই হয়তো বেশি ভাল লেগেছে।
আনএকাস্টমড আর্থ নিয়ে এসেছি, শুরু করবো শিঘ্রী।

অমিতাভ ঘোষ পড়িনি। এখানে আমার বাড়ির পাশের লাইব্রেরীই ভরসা, খুঁজে দেখবো পাই কি না। আর গর্ডিমারের দুয়েকটা লিংক টিংক দিও পারলে।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কনফু ভাই, ইস্নিপ্সে হোয়েন মিঃ পীরযাদা কেইম টু ডাইন পেয়েছি শুধু। অসাধারণ একটা গল্প। ভীষণ সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখা ছুঁয়ে যাবার মত একটা গল্প। শেষ প্যারাটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। বাকিগুলো অনেক খুঁজলাম, পাচ্ছি না। যদি আপনার কাছে থাকে বা পান কখনো, একটু মেইল করে দিয়েন প্লীজ হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

অমিতাভ ঘোষের লেখার স্টাইলের আমি দারুণ অনুরাগী - যদিও ক্যালকাটা ক্রোমোজম পড়ে হতাশ হয়েছিলাম। শ্যাডোও লাইন্স তো অপূর্ব! ভিক্রম শেঠের নতুনটা কেউ কি পড়েছেন? স্যুটেবল্‌ বয় পড়ার পর থেকেই তার লেখা ভয়ঙ্কর পছন্দ!

রাজপাট তার মানে বই আকারে বেরিয়ে গেছে? বাহ্‌, আনাতে হবে তো!

আর একটা প্রশ্ন - তপন রায়চৌধুরীর বাঙ্গালনামার আগে একটা বইই পড়েছিলাম - "... ভীমরতিপ্রাপ্ত... "। এটা ছাড়া আর কোন বই কি তাঁর আছে? কেউ কি জানাবেন অনুগ্রহ করে?

দময়ন্তী এর ছবি

হ্যাঁ স্নিগ্ধা, রাজপাট বই হয়ে বেরিয়ে গেছে বেশ ক'মাস হল ৷ ক্যালকাটা ক্রোমোজোম আমি পড়িনি ৷ মন খারাপ
"সী অব পপিজ' এখনও হাতে পাইনি ৷ তবে শুনেছি দুর্দান্ত হয়েছে ৷ "হাংরি টাইড' তত ভাল না লাগলেও মরিচঝাঁপি সম্পর্কে ভাল রেফারেন্স পেয়েছিলাম যেটা বেশ ভাল ৷

বিক্রম শেঠ একটাও পড়িনি ৷ ওঁর নতুন বই সম্পর্কে এক বন্ধু বলেছিল ভাল লেগেছে ৷

তপন রায়চৌধুরীর "রোমন্থন ---------' আর "বাঙালনামা' ছাড়া আর কোন নাম এই মুহূর্ত্তে মনে আসছে না ৷ একটু খোঁজ করে জানাচ্ছি ৷

"অক্ষয় মালবেরী' ৩ খন্ড --- মণীন্দ্র গুপ্ত ; প্রকাশক - অবভাস ৷ এইটা পড়েছেন? আমার ভারী ভাল লেগেছিল ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

স্নিগ্ধা এর ছবি

না, 'অক্ষয় মালবেরী' পড়িনি যে শুধু তাই না, মণীন্দ্র গুপ্তের কিছুই পড়িনি আগে। দেখি দেশে পাওয়া যায় কি না।

ধন্যবাদ খবরটার জন্য হাসি

আচ্ছা, প্রচেত গুপ্ত সম্পর্কে কিছু কি জানেন? তার লেখায় আমি আরেক লেখকের ছায়া এত প্রবলভাবে অনুভব করি, যে আমার জানার খুব ইচ্ছা - কে এই ব্যক্তি!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

"ইয়োরোপ পুনর্দর্শন" নামে তপন রায়চৌধুরীর আরেকটি বই আছে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ, মুজুদা! তুমি পড়েছো বইটা? পড়ে থাকলে, কেমন লেগেছে?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

না, হাতে পাইনি কখনো। একজনকে বলে রেখেছি আনিয়ে দেওয়ার জন্যে, তিন বছর ধরে অপেক্ষা করছি। তবে শুনেছি, এই বইটিও যথারীতি তপন রায়চৌধুরীয়।

প্রচেত গুপ্ত সম্পর্কে তোমার আগ্রহ দেখে মজা লাগলো। এই লেখকের প্রথম গল্প পড়ি কয়েকবছর আগে শারদীয় আনন্দবাজারে। গল্পের নাম "রূপকথা"। এতো ভালো লাগলো যে অনেককে ডেকে ডেকে পড়ালাম। কিন্তু প্রচেত গুপ্তর সাম্প্রতিক লেখায় কেন যেন আমি হুমায়ূন আহমেদের ছায়া দেখছি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

আরে মুজুদা আমিও তো সেই একই ছায়া দেখছি!! সেজন্যই আমার জানার ইচ্ছা হলো - কে তিনি, কেন তিনি?!

তুমি কি 'বাঙ্গালনামা' পড়েছো?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

'বাঙালনামা' পড়েছি দেশ-এ ধারাবাহিক প্রকাশের সময়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তিথীডোর এর ছবি

এই বইটার জঘন্য একটা অনুবাদ পড়েছিলাম। এবং বোকামি করেছি বুঝে মেজাজ খারাপ করেছিলাম।
মূলটা পড়ার জন্য তোলা আছে।
রিভিউ পড়ে জলদি হাতে নেয়ার আগ্রহ বাড়ল। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।