প্রকাশায়তন নিয়ে টুকটাক ভাবনা-

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০৮/২০০৯ - ১১:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
বিদেশী বইগুলো সরাসরি ইংরেজিতে পড়া শুরু করি মূলত দেশের বাইরে এসে। তবে খুব আনন্দ নিয়ে নয়, বাংলা বইয়ের যোগান ছিলো না পর্যাপ্ত, এদিকে বই না পড়লে মাথায় তালগোল লেগে যায়, তখুনি স্থানীয় গণপাঠাগারে গিয়ে বই আনা শুরু করি। সেবা প্র‌কাশ‌নীর অনুবাদের পর সেই প্রথম বিদেশী সাহিত্যের সাথে ভালমতন মোলাকাৎ হলো, লেখকের নাম ধরে ধরে বই শেষ করার পুরনো অভ্যাসটা আবার ভাল মতন জাগিয়ে তুললাম।

সাহিত্যের প্রসঙ্গ অবশ্য আজ তুলবো না। সম্প্রতি প্রকাশায়তনের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কিত ঘোষণার পর থেকে মাথায় একটা জিনিস ঘুরছে, তাই নিয়ে আলাপ জুড়বো বলেই আজ লিখতে বসা।
এখানে এসে পড়া বইগুলো হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখি, প্রায় অনেকগুলো উপন্যাস বা গল্পের বইয়ের লেখক ছাড়াও সম্পাদক ( এডিটর এর বাংলা এ ক্ষেত্রে কী হবে?) বলে একজন আছেন সেখানে।
পত্র-পত্রিকার বাইরে বইয়ের সম্পাদ্ক হিসেবে কাউকে দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই আসলে। বইয়ের সম্পাদক যিনি, সেটাও ক্ষেত্র বিশেষে, যেখানে আসলে তিনি সংকলক। হয়ত লোকান্তরিত কোন কবি বা সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে একটা সমগ্র বেরুবে, সেখানে লেখাগুলো একসাথে জড়ো করে একটা জবরদস্ত ভুমিকা লিখে দেয়া আমাদের সংকলকের দায়িত্ব।
আমি একটু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, বিদেশি বইগুলোয় ঠিক এরকমটা হচ্ছে না। এখানে একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস বা গল্প সংকলনের বই, লেখকের জীবিতাবস্থায়ই একজন সম্পাদকের নাম সহ প্রকাশিত হচ্ছে। আমার আগ্রহ জন্মালো, এই সম্পাদকের ভূমিকাটা আসলে কী?

২।
লেখালেখি সম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা টিক্ষা না থাকায় হুট করে বুঝে নিতে একটু সময় লাগলো। শেষমেষ লাইব্রেরি ঘেঁটে ধরে বেঁধে নিয়ে আসলাম বেশ কিছু ক্রিয়েটিভ রাইটিং সংক্রান্ত বই। পড়ে টড়ে টের পেলাম যে এসব দেশে সম্পাদকের বেশ কদর আছে। একজন লেখক একটা বই লিখে হুট করে ছাপিয়ে হয়ত ফেলতেই পারেন, কিন্তু এটা এখানকার, যাকে বলে সিস্টেমেটিক ওয়ে, সেটা না। সাধারণত যেটা হয়, লেখক সেটা প্রকাশকের দপ্তরে পাঠাবার আগে কিংবা পরে সেই পান্ডুলিপিটি একজন সম্পাদকের হাতে যাবে। সম্পাদক বাছাইয়ের কাজ লেখক বা প্রকাশক যে ইচ্ছা করতে পারেন। সম্পাদক তখন পান্ডুলিপিটি পড়ে তার মতামত জানাবেন লেখককে, এবং তারপরে লেখক ও সম্পাদকের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে লেখাটির চূড়ান্ত কপি।

এটা অবশ্য একেবারেই পুঁথিগত বিবরণ, আদতেই এরকম হয় কি না জানি না। তবে কয়েকদিন আগে সালমান রুশদির একটা লেখার অনুবাদ করছিলেন একজন সচল, সেখানেও দেখলাম সম্পাদকের উল্লেখ আছে। সম্ভবত মিডনাইট়স চিল্ডরেন বইটি প্রসঙ্গে সম্পাদকের ক্রিয়াকলাপের কথা বলেছিলেন তিনি।

৩।
আমি ভাবছিলাম, বাংলাদেশে এই ব্যাপারটার চর্চ্চা আছে কিনা। সম্ভবত, নেই।
সেটার কারণ অনেক হতে পারে। যেমন ধরা যাক লেখকদের স্বাধীনতাবোধ। অনেকেই নিজের লেখার উপরে এত বেশি আস্থা রাখেন যে আর কোন সম্পাদকের কলমের সামনে তাঁদের পান্ডুলিপিকে রাখতে রাজি হন না। বড় বড় লেখকদের কথা বাদই দিলাম, এই যে আমি একজন অলেখক, সেই আমিও ক্লাশ এইটে পড়বার সময় একটা দেয়ালপত্রিকার জন্যে জমা দেয়া গল্পে বাংলা ম্যাডামের কলম চলায় গল্প ফেরত নিয়ে এসেছিলাম। এখন মনে পড়লেও হাসি পায়, কারণ, এটা অনুচিৎ হয়েছিলো, এখন বুঝতে পারি।

আরেকটা কারণ হতে পারে, খরচ।
পান্ডুলিপি থেকে বই হিসেবে বের হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় লেগে যায়, অনেক খরচও পড়ে। এর মাঝখানে আবার একজন সম্পাদককে নিয়ে আসাটা সময় ও অর্থ দুইদিক হয়তো একটু ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।

তবে বাংলাদেশে এরকম কিছু আসলেই প্রয়োজন আছে কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
গতকালই একটা বইয়ের কথা লিখেছি এখানে। মেজর হামিদুল হোসেন তারেক বীর বিক্রমের লেখা একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। এই বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছিলো, যদি বই ছাপানোর আগে কাউকে দিয়ে পান্ডুলিপিটি একটু সম্পাদনা করা যেত, তাহলে বেশ হতো। সবমিলিয়ে এমনিতেই খুব চমৎকার একটি বই এটি, কিন্তু ভাষা বা শব্দ নিয়ে আরেকটু যত্ন করা গেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই বইটি দ্বিধাহীন ভাবে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হয়ে দাঁড়াতো।

৪।
সচলায়তন থেকে প্রকাশনা বিষয়ে একটা চমৎকার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, প্রকাশায়তন নাম দিয়ে। এ সংক্রান্ত সন্দেশের পোস্টটিতে সচলদের করা মন্তব্যগুলো পড়লেই বোঝা যায় ব্যাপারটি বেশ সাড়া ফেলেছে, অনেকের মনেই প্রকাশায়তন থেকে বই বের করার ইচ্ছে জন্মেছে।
প্রকাশায়তন বইয়ের জগতে শুরু থেকেই ব্যতিক্রমী অনেক উদাহরণ তৈরি করবে বলে আশা করছি, সেই সাথে ভাবছি, প্রকাশিতব্য সব বইগুলো সম্পাদক বা সম্পাদকমন্ডলীর সহায়তা বা পরামর্শ নিয়ে আরও নিখুঁত হিসেবে বের করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে কি? অবশ্যই সেটা হবে লেখকের সম্মতিক্রমে। এবং এখানে সম্পাদক কোনভাবেই কোন জোরজবরদস্তি খাটাবেন না, বরং পান্ডুলিপি পড়ে লেখক ও প্রকাশায়তনকে তার মতামত জানাবেন। অতপর সেই মতামতের আলোকে লেখক ও প্রকাশায়তন ঐকমত্যে পৌঁছালে পরে বই প্রকাশিত হবে।
মানসম্মত বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হলে কেমন হবে আসলে? আমার ব্যক্তিগত ধারণা ব্যাপারটি খুবই ভালো হবে, হয়ত এর সুফল প্রতিফলিত হলে আস্তে ধীরে এটাই আমাদের প্রকাশনা জগতের একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়াবে।


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত একটা মন্তব্য দিবো। তবে বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে হলেও সম্পাদনার এই ধারাটা প্রচলিত আছে, যেখানে অবশ্য সম্পাদনার চেয়ে রিভিউয়ার পর্যায়েই কাজটা বেশি হয়। বাংলাদেশে ইউপিএল বা এপিআই-তে এরকম রিভিউয়ার ও সম্পাদক আছেন। এমনকি বিষয়ভিত্তিক রিভিউয়ার ও সম্পাদকও আছেন। লেখকদের পাণ্ডুলিপি জমা হওয়ার পর সেগুলো তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। তাঁদের মন্তব্যের পর প্রকাশক ঠিক করেন সেটি ছাপা হবে কি হবে না।

প্রকাশক যদি ছাপার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে রিভিউয়ার/সম্পাদকের মন্তব্যসহ পুরো নোট লেখকের কাছে পাঠিয়ে দেন। লেখক সে অনুযায়ী ঠিকঠাক করে পুনরায় প্রকাশকের কাছে পাঠান। এ সময় অবশ্য লেখকের বইটি উদ্দিষ্ট পাঠক কারা, কারা কারা এই বইটি কিনতে পারেন, কোথায় কোথায় বইটি সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া যায় ইত্যাদি বিষয়েও প্রকাশকের পাঠানো একটা ফরম পূরণ করে পাঠাতে হয়।

মোট কথা, একটা আন্তর্জাতিক জার্নালে যেভাবে সম্পাদকের কাঁচির আওতায় এনে জার্নাল পেপারগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়, এখানে ক্ষীণ হলেও সেরকম একটি প্রসেস আছে। তবে অবশ্যই লেখক অতি নামিদামি হলে পুরো প্রসেসটাই যে উপেক্ষিত হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে অনেকক্ষেত্রে সম্পাদকের অযোগ্যতার কারণে ভালো বই ফেরত এসেছে, অন্য কোম্পানি সেটা লুফে নিয়ে ব্যবসায় মাত করেছে, এমন উদাহরণও আছে। সেক্ষেত্রে অনেক প্রকাশনীই এক বিষয়ের বই একাধিক সম্পাদকের কাছে পাঠানোর কথাও চিন্তা করছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

বাংলাদেশে যতগুলো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে, তার চার ভাগের একভাগের প্রয়োজন পূরণের মতো রিভিউয়ার/সম্পাদক নাই।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ফারুক হাসান এর ছবি

সম্পাদনা কাজটি আমার মতে যথেষ্ঠ কঠিন একটি কাজ ও পেশা। আবার পেশাদারি মনোভাব না থাকলে কত ভাল সম্পাদনা হবে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। বাংলাদেশে সেরকম পেশাদার সম্পাদক কি আছে? আমার ধারণা, যেমনটা টুটুল ভাই বললেন, থাকলেও হাতে গোনা।
দ্বিতীয়ত, সম্পাদককে যথেষ্ঠ পরিমাণে সৃজনশীল হতে হয়, অনেকটা লেখকদের মতই। সেক্ষেত্রে অনেক লেখকই কিন্তু সম্পাদনাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। এভাবে চিন্তা করলে সম্পাদকের সংখ্যা বাড়তে পারে বাংলাদেশে।

পুতুল এর ছবি

বিষয়টা খুব দরকারী ছিল প্রিয় কনফুসিয়াস।
আমার শেরালী উপন্যাস লিখে শেষ করেছি তখনই প্রকাশায়তনের পোস্টটা দেখলাম।
আশা জাগে যে আমার মত নির্বোধের একটা বই সম্পদনা হয়ে আসবে (যদি প্রকাশের জন্য মনোনীত হয়)।
আমার মনে হয় সচলায়তনে প্রকাশিত বইগুলো অন্তত এভাবেই হবে। আপনি খোকাবাবু সম্পাদনা করে দিয়েছিলেন। এই সুযোগে ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি।

আমার মনে হয় আমাদের দেশে বই-এর বাজার তত বিস্তৃত নয় বলে, খুব বেশী পেশাদারীত্ব এখনো গড়ে উঠেনি। শিক্ষার হার এবং মান বাড়লে, এদিকেও উন্নতি হবে।
আশা করতে দোষ কি।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হিমু এর ছবি

চলুক

মনে পড়ে গেলো জুবায়ের ভাইয়ের কথা। গত বছরের শুরুর দিকে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, আমার কিছু লেখা সম্পাদনার সময় তাঁর হবে কি না। জুবায়ের ভাই সম্মত হয়েছিলেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বইয়ের সম্পাদনার বিষয়টির সাথে আমার পরিচিতি আছে। মানে উন্নত দেশে যেভাবে সম্পাদকরা লেখকের সাথে কাজ করেন আর বাংলাদেশে যতটুকু কাজ হয় সে সম্পর্কে আমার মোটামুটি ধারণা আছে।
২০০১ সালে আমার প্রকাশিত 'আমলাতন্ত্রের ময়না তদন্ত' বইটিতে আমি নিজেই একজন সম্পাদককে কাজে লাগিয়েছিলাম। আমার বন্ধু সম্পাদক যদিও দৈনিক পত্রিকাতে সংবাদ সম্পাদনা করতো তাকে আমি তালিকা ধরিয়ে দিয়েছিলাম সম্পাদক হিসেবে তার কাজ কী?

একজন সৃজনশীল লেখক সৃষ্টির আনন্দে লিখে যান। সম্পাদক সেই সৃষ্টিকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে পাঠকের কাছে পরিবেশনের চেষ্টা করেন।

সম্পাদনার বিষয়টি সবচে ভালো বুঝা যাবে যদি চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কথা চিন্তা করা যায়। চলচ্চিত্রে সম্পাদক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিককার একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রিফিথের একটা ঐতিহাসিক উক্তি আছে যে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় দুটি জায়গায় - চিত্রনাট্য লেখাতে আর সম্পাদনার টেবিলে।

সম্পাদক কাজ করেন গল্পটাকে সুচারুভাবে বলবার জন্য যাতে দর্শকের বুঝতে কোনো ঝামেলা না হয়। দৃশ্য দেখে দর্শকের মনে যখন যে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে সম্পাদক তখন তার উত্তর হিসেবে জুড়ে দেন এক একেকটা দৃশ্য। ধরা যাক দর্শক হিসেবে আমরা নায়িকার কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাওয়া দেখে ভাবছি শালা নিষ্ঠুর নায়কটা আসে না কেন? মূল দৃশ্যে হয়তো নায়িকার কা্ন্না আরো দীর্ঘ ছিল। কিন্তু সম্পাদক ঠিক সময় ও জায়গায় নায়কের রিএ্যাকশনের ইনসার্ট দিয়ে দেন।
সম্পাদক অহেতুক শটগুলো ফেলে দেন। মূল গল্পের জন্য যে সিকোয়েন্স/দৃশ্য অপ্রয়োজনীয়, গতিকে নষ্ট করে সেগুলো ছেটে দেন।
কোন দৃশ্যের পর কোন দৃশ্য আসবে সেই পরম্পরা বদলে দেন।
একেক সিকোয়েন্সের ভাব বা আবেগ বুঝে গতি বাড়ান বা কমান।
এরকম অনেক কিছু।
প্রায়ই সম্পাদক ছবি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাড়তি কিছু দৃশ্য শ্যুট করতে বলেন। যাতে গল্পটা ঠিকমত দর্শকের কাছে পৌঁছায়।

চলচ্চিত্র থেকে উদাহরণ দিলাম। কিন্তু উপন্যাস বা ফিকশনের ক্ষেত্রেও সম্পাদনা একইভাবে কাজ করে। কী কী করা যায় তার কিছু উদাহরণ দিতে পারি। তার আগে সবচে বড় রিভিউ-এর কাজের সাথে আপনার যে পরিচিতি আছে তা মনে করিয়ে দেই।

সবচে কড়াকড়ি রিভিউ হয় গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রে। আলাদা আলাদা দুজন রিভিউয়ার যারা ঐ পান্ডুলিপির বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের তারা লেখকের নাম-ঠিকানা বিহীন পান্ডুলিপি পড়ে মতামত দেন। এ ধরনের রিভিউয়ের নাম হচ্ছে পিয়ার-রিভিউ।

পাশ্চাত্যে যখন একজন লেখক উপন্যাস/ফিকশন লিখতে কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হোন তখন শুরুতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের বেতনভুক্ত একজন সম্পাদককে ঐ উপন্যাসিকের সাথে সংযুক্ত করে দেন। (আচ্ছা তার আগে লেখক তার মূল গল্পটি ও এক/দুইটি খসড়া অনুচ্ছেদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে জমা দেন। যার ভিত্তিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়।)

বেশিরভাগ লেখক, নতুন হলে তো কথাই নেই, শুরুতেই সম্পাদকের সাথে আলোচনা করে নেন। মূল গল্পের পরিণতির ওপর নির্ভর করে তখন সম্পাদক লেখককে নানা পরামর্শ দেন। এর মাঝে রয়েছে পর্ব বিভাজন। গল্পটা কার জবানে যাবে। কোন চরিত্রগুলোর সম্পূর্ণ পরিণতি দেখাতে হবে। কোনগুলো সাইড লাইনে থাকবে। গল্পের শুরুর দৃশ্য পরিণতির সাথে মিলছে কিনা। হাসিনার কাহিনী দিয়ে শুরু করে খালেদার গল্পে এসে শেষ করলাম কিনা। ইত্যাদি।
অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্বে তারা একেক রকম ফর্ম্যাট মেনে পাঠকের কাছে বইগুলো উপস্থাপন করে। যেটা তাদের ধারণায় বাজার পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সম্পাদক হয়তো তার সহযোগীদের দিয়ে নানা গবেষণা তথ্যও জোগাড় করে দেন লেখককে। ধরা গেল গল্পে এক চরিত্র ঘোড়ায় চড়ে ঘুরাঘুরি করে। এখন লেখক হয়তো ঘোড়ার লালনপালন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কিন্তু দৃশ্যের বা কাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা, ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য এসব তখ্য দরকার। তখন অনেক সময় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজগুলো করে দেয়া হয়। তবে যদি বিষয়টা বইয়ের মূল কাহিনী হয় তখন গবেষণা লেখককে নিজেই করতে হয়।

চারবছরের কোর্স এক মন্তব্যে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই শেষ করি।
তবে খুব বিখ্যাত, বড় সাহিত্যিক এদের সাথে সম্পাদকরা কাজ করলেও তা করেন ঐ লেখকের মর্জি মত। যখন লেখক মনে করেন তার পরামর্শ দরকার তখন তারা সাহায্য নেন।

দুইটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি।
হিমু'র আউটকাস্ট গল্পে আমি মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলাম যে রিসাত চরিত্রটিকে যদি রহমতুল্লাহের মধ্যে গুঁজে দেয়া হতো তাহলে বাড়তি একটা চরিত্র আমদানীর প্রয়োজন হতো না। এই মন্তব্য ঐরকম সম্পাদকীয় চিন্তা মাথায় রেখেই বলা।

কিছুদিন আগে একটা পিডিএফ সংস্করণ পেয়ে হুমায়ুন আহমেদের 'আমার আছে জল' উপন্যাসটা পড়লাম। পড়ে বুঝলাম সম্পাদক কত বেশি প্রয়োজন। উপন্যাসটির শেষ দৃশ্য হচ্ছে কিশোরী মেয়েটি মরে জলে ভেসে আছে। এরকম একটি উপন্যাসের শুরুর দৃশ্য হচ্ছে বাড়ির সবাই মিলে বেড়াতে যাচ্ছে।
এখনকার পাশ্চাত্য গল্পে এরকম বৈসাদৃশ্য আপনি পাবেন না। তাছাড়া শেষ দৃশ্যে না আসা পর্যন্ত বুঝা যায় না এই উপন্যাসটির কাহিনী কোন চরিত্রকে ঘিরে। যে কিশোরী মেয়েটির মৃত্যু দিয়ে কাহিনী শেষ হয়েছে সেই চরিত্রটির সাথে পাঠকদের ঠিকমত পরিচয়ই হয়নি।
সম্পাদক থাকলে লেখকের সৃজনশীলতার ক্ষতি না করেই এই বিষয়গুলো ধরিয়ে দেয়া যায়। এতে লেখাটা পাঠকের মনকে জয় করতে পারে সহজে। আমি অবাক হইনি শুনে যে আমার আছে জল নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রকাশায়তনে আশা করবো রিভিউয়াররা লেখকদের সেরকম সৎ পরামর্শ দেবেন। তরুণ সচল লেখকরা পরিশ্রমী। তারা নিশ্চই খাটাখাটুনিতে আপত্তি করবেন না। আমার বিশ্বাস সচলায়তনে যেরকম গুণি লোকজন আছেন তাতে দক্ষ রিভিউয়ার বা সম্পাদকের অভাব হবে না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

চলুক

স্যার, আসছে গল্পে রহমতুল্লাহরে সচলের ব্লগার তো ব্লগার, দরকার হইলে মডু বানায় দিমু। এইবারের মতো মাফ কইরা দ্যান দেঁতো হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মঢিমুতুল্লাহ রহিম!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

গল্পতো আপনার দারুণ হয়েছে হিমু। শুধু মানহানির মামলা নিযে সবাই চিন্তিত ছিল।রহমতুল্লাহর নাম আরেকটু বাড়িয়ে তখন রহমতুল্লাহ য়াজাদ করবেন নাকি?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

কনফুসিয়াস এর ছবি

শোমচৌ এর মন্তব্যটার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ। চমৎকার একটা গাইডলাইন হয়ে গেছে এটা। আমার ইচ্ছে করছে এই মন্তব্যটাকেই পোস্টের সাথে পাল্টাপাল্টি করে ফেলি। হাসি
অনেক কিছু পরিষ্কার হলো। অবশ্য একটা জিনিস মাথায় ঘুরছে আবারও। নর্ম বা ফর্ম ভাঙেন যেসব লেখকেরা, তাদের সৃজনশীলতা কি বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে সম্পাদনার কারণে?
অথবা, সম্পাদকের কাজের সীমারেখা কোথায় টানা উচিৎ যতটুকু পর্যন্ত গেলে লেখকের সৃজনশীলতাও অক্ষুণ্ণ থাকবে?

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কি যেন বলেন কনফু।
আপনার লেখা খুবই গোছানো। এবং অনেকেই যথার্থ মন্তব্য করেছেন।
আমার মন্তব্যটা আবঝাব হয়ে গেছে। তবে আলাদা পোস্ট লিখলে হয়তো পশ্চিমে ফিকশনে সম্পাদকরা কীভাবে কাজ করেন তার বিস্তারিত একটা বর্ণনা দেয়া যেত।

গৌতমের প্রথম মন্তব্যটাই আগে পড়িনি। ফলে আমার মন্তব্যে একই কথা আবার চলে এসেছে। গৌতমের ভালো অভিজ্ঞতা আছে - সেখান থেকে আমরা বিস্তারিত কিছু শুনতে পারি।

সম্পাদকদের কারণে সৃজনশীল লেখকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন কিনা এরকম একটা প্রশ্ন ছিল আপনার। আসলে যারা সম্পাদক হন তারা বেশ পড়াশোনা করা লোক। কিন্তু লিখতে গেলে সেলফ সেন্সরের কারণে কলম চলে না তাদের। তারা সৃজনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করেন না - তবে বইটির গ্রহণযোগ্যতা, পাঠকপ্রিয়তা বা সমালোচকদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তারা সাহায্য করেন।

লাইব্রেরিতে উঁকি দিলেই সম্পাদকের কাজ সম্পর্কে বই পাবেন।
শুভেচ্ছা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- চলুক
সম্পাদকের মূল কাজটা বোধহয় 'বিন্যাশ ও সমাবেশ'-এর। আমি নিজে এমন একজনকে চিনি যিনি সৃজনশীল কোনো লেখা লিখতে পারেন না, কিন্তু সৃজনশীল কোনো কিছু সাজানোতে তিনি অসাধারণ!

শোমচৌদা যেভাবে সিনেমার উদাহরণ দিলেন, আমি দেই লাগেজ গোছানোর। লাগেজে মালপত্র আমরা সবাই ভরতে পারি। অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় লাগেজ ভরে গেছে কিন্তু অনেক মালপত্র তখনো ফ্লোরে ছড়ানো। অথচ, এই একই পরিমান মাল-কে কেউ কেউ খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লাগেজে ভরে ফেলতে পারেন। এটাই আসলে সম্পাদনা। সবসময় যে কেটে-ছেঁটে ফেলে দিয়েই সম্পাদনা করতে হবে তা-না। লেখকের লেখাকে অক্ষত রেখেই গল্পকে পূর্ণতা দেয়া সম্ভব।

খুব ক্ষুদ্র করে দেখলে, সচলায়তনেই একটা লেখা শেষ করার পর উপর থেকে আবার লাইন ধরে পড়ে আসতে থাকলে লেখক নিজেই সেখানে অনেক কিছু পাবেন যেগুলো আরেকটু গুছিয়ে লেখা সম্ভব। এভাবে একজন লেখক যদি বেশ কয়েকবার, একটু সময়ের ব্যবধানে নিজের লেখাটি নিজেই পড়েন তাহলে ছোটখাটো অসাঞ্জস্যগুলো নিজেই ঠিক করে ফেলতে পারেন।

এটাকে আরকটু বড় পরিসরে ভাবা যেতে পারে বন্ধুস্থানীয় কাউকে পাঠ করিয়ে, প্রকাশ করার আগে। অন্য অবস্থান থেকে, অন্য মানসিকতায় একটা লেখা পড়া হলে তার খুঁটিনাটি গুলো লেখক নিজেই ঠিক করে ফেলতে পারেন। আমাদের প্রকাশনা শিল্পে যেহেতু সম্পাদকের অপ্রতুলতা আছে, সেক্ষেত্রে নিজেই এই চেষ্টাটা করে দেখা যেতে পারে।

আর যেখানে প্রকাশায়তনের প্রশ্ন সেখানে আমি বলবো, একটা কাঁচা লেখা সরাসরি প্রকাশায়তনে না পাঠিয়ে নিজেই একটু ঘঁষেমেজে পরিপক্ক করে পাঠালে বোধহয় কোয়ালিটি'র ব্যপারে একটু এগিয়েই থাকবে প্রকাশায়তন। পাশাপাশি সম্পাদকমণ্ডলীর ক্লেশও খানিকটা কমবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

গৌতম এর ছবি

সম্পাদকের মূল কাজ (আমি যতদূর জানি) দুটি-
১. লেখায় কোনো অসঙ্গতি (ভুল, সিকোয়েন্স মেনটেইন ইত্যাদি) থাকলে ধরিয়ে দেওয়া;
২. ভাষাটাকে সাধারণ পাঠকের উপযোগী করে তোলা ও
৩. লেখার চরিত্র অনুযায়ী সাবজেক্টিকতা বা অবজেক্টিকতা বজায় রাখা।

দেশে দু'একজন এ ধরনের সম্পাদকের সাথে বেশ কিছু কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছে। সেগুলোর অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সম্পাদনা বলতে তাঁরা মূলত প্রুফ রিডিংটাকেই বুঝেন। এর বাইরে লেখাটা ছাপা হতে পারে কি পারে না- সে সম্পর্কে মতামত দেন।

প্রকাশায়তনের জন্য বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করা যেতে পারে- লেখা বা পাণ্ডুলিপি জমা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করছেন এমন কাউকে দিয়ে রিভিউ করানো, তারপর সেটিকে সম্পাদকের দপ্তরে জমা দেওয়া।

নর্ম বা ফর্ম ভাঙেন যেসব সৃজনশীল লেখকরা, সম্পাদকের সাথে যদি তাদের বিরোধ বাধে, সেক্ষেত্রে লেখককেই ব্যাখ্যা করতে হবে কোথায় কোথায় তিনি তার নিজস্বতা বজায় রাখতে চান, এবং কেন চান। ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারলে সম্পাদকের এতে আপত্তি করার কথা নয়। সেক্ষেত্রে লেখক-সম্পাদকের ইন্টারেকশনটা স্মুথ থাকতে হবে।

তবে সবকিছুর পরও মতামতের ক্ষেত্রে সম্পাদকের চেয়ে লেখক-ই যেন মুখ্য হন, সেটাও খেয়াল রাখা উচিত।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চলুক
......................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

মূলত পাঠক এর ছবি

সৌভাগ্যক্রমে সচলে লেখকেরা অধিকাংশই এখনো দুর্বিনীত নন এবং সম্পাদকের কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছা আছে এমন সচলও দুর্লভ নয়, কাজেই এই উদ্যোগটা শুরু হবে আশা করা যায়।

পুতুল এর ছবি

শোমচৌ এর কথাগুলো খুব কঠিন ভাবে অনুভব করেছি শেরালী লিখতে গিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ এবং বীরাঙ্গনা সহ বইটার প্রায় সব কথা নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই নেয়া। মুস্কিল হল জেলখানার বর্ণনা নিয়ে।
অনেক বিষয় যেমন; বেহুলার ভাসান অথবা হিন্দু ধর্ম মতে শ্রাদ্ধ এই সব বিষয় সচলে সাহায্য চেয়ে পোষ্ট দিয়েছি। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমি শ্রাদ্ধ বা বেহুলার ভাসান নিয়ে খুব বেশী কথা লিখিনি। তবুও এই ব্যপার গুলো না যেনে গল্পটা লেখা সম্ভব হচ্ছিল না।
একটা দূর্বলতা বইটাতে এখনো আছে। সেটা হল জেলের বর্ণনা। সব ব্যাপরে সাহায্য চাইলেও, কাউকে তো আর জিজ্ঞেস করতে পারিনা ভাই আপনি জেলে ছিলেন?
কাজেই এই দুর্বলতা নিয়েই বইটা শেষ করতে হল।
এক বড়ভাই বলেন রাজনৈতিক কারণে জেল খেটেছেন। উনাকে জিজ্ঞেস করি জেলের দৈনন্দিন জীবনটা কেমন? কখন ঘুম থেকে উঠতে হয়, নাস্তা কি, মানুষ গুলো দিনটা কিভাবে কাটায়। রাতে শোয়ার ব্যাবস্থা কি ইত্যাদি।
তিনি জেলের যাওয়ার কারণ এবং তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলে যান। কিন্তু আমি জানতে চাই সেখানকার জীবন যাপন কেমন। কাজেই এই দুর্বলতা থেকেই গেল।
যেহেতু নিজের পক্ষে দেশে গিয়ে জেলখানা দেখে আসা সম্ভব না।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফারুক হাসান এর ছবি

দেখা যাচ্ছে যে, সৃজনশীল লেখার সম্পাদনা এবং গবেষণাপ্রবন্ধের রিভিউ করার মধ্যে অনেকক্ষেত্রেই বেশ মিল আছে। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, আমরা সচলায়তনে সৃজনশীল লেখার ক্ষেত্রে পিয়ার রিভিউ ব্যবস্থা চালু করে দেখতে পারি। ব্যাপারটা হয়ত কারো কারো কাছে ঝক্কির মনে হতে পারে, কিন্তু একটু ভাবলেই দেখবেন আসলে তা নয়। সচলায়তনে আসিই পড়তে, কোনো লেখা প্রকাশ হলেই পড়ি, মতামত দেই, অনেকক্ষেত্রেই কীভাবে লিখলে আরো ভাল হতো তা মন্তব্য আকারে জানাই। সুতরাং আমাদের মধ্যে দুজন রিভিউয়ার এই কাজটা লেখা প্রকাশের আগেই যদি করে দেন, তাহলে ব্লগার/লেখকের জন্য খুবই ভাল হয়, লেখার মানও বাড়ে।

কবিতা নিয়ে মডুদের উপর যে প্রেশার আছে সেটাও হয়ত পিয়ার রিভিউয়ের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। সচল ব্লগাররা আমার মনে হয় সানন্দেই রাজী হবেন রিভিউতে অংশ নিতে। মডুরা এক্ষেত্রে জার্নাল এডিটরের ভূমিকা নিতে পারেন। কোনো অতিথি সচল তার লেখা জমা দিলে মডু দুজন বেনামি রিভিউয়ার বাছাই করে তাদেরকে লেখাটা পড়তে দিতে পারেন, যদি শুরুতেই রিভিউরা সম্মতি দিয়ে দেন তাহলে তো হলোই, না হলে এরপরের বাদবাকী আলাপসালাপ রিভিউয়ার-লেখকের মধ্যেই চলবে, লেখকের পরিমার্জন রিভিউয়ারদের পছন্দ হলে তারা লেখাটা প্রকাশের অনুমতি দেবেন।

****
আমি আমার পরবর্তী ব্লগগুলি পোষ্ট করার আগে রিভিউয়ের জন্য পাঠাতে আগ্রহী।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আমি একজন সম্পাদককে চিনি যিনি যথার্থ অর্থেই সম্পাদক (শুধু প্রুফ রিডার নন ) তিনি হলেন আমাদের সচল মাহবুব লীলেন ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

পুতুল এর ছবি

মানিক ভাই আপনার সাথে ভীষণ ভাবে একমত।
কিন্তু লোকটার উপর চাপ খুব বেশী পরে।
শেরালী বইটা মাহবুব লীলেনের পছন্দের (তৃণতুচ্ছউনকল্প) বিষয় নিয়ে লেখা হলেও সম্পাদনার জন্য তাঁকে অণুরোধ করতে পারিনি। কারণ একটাই, একটা মানুষের উপর কত অত্যাচার করবো! খোকাবাবু এখনো সম্পাদনার জন্য তার টেবিলে অপেক্ষা করছে।
আমাদের নতুন কিছু সম্পাদক তৈরী করা দরকার। আশা করি আগ্রহীরা এগিয়ে আসবেন। এখানে আমি কনফুসিয়াস-এর নাম প্রস্তাব করতে চাই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ঘটনা সত্য আর সে কারনে আমিও আমার 'স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা'র জন্য অনুরোধ করিনি (তখন তার হাতে ছিল সচলের দুইটা সংকলনসহ ১৮টি বই ) ।

আমাদের নতুন কিছু সম্পাদক তৈরী করা দরকার। সম্পাদক হিসেবে কনফুকে ভোট দিলাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বিগসির আলোচনাটা ভালো লেগেছে।
আমাদের দেশে সম্পাদক আরো অনেক অনেক বেশি জরুরী।
এর কারন হচ্ছে অন্যান্য দেশে প্রকাশকরা সিদ্ধান্ত নেয় বই প্রকাশ করবে কি না , আমাদের দেশে লেখক সিদ্ধান্ত নেয় যে বই করবে কি না।
লেখক যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে বই করবে তাহলে দরকার হলে নিজের টাকাতেও বই প্রকাশ করে। এটাকে আমি খারাপ বলছি না, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তখন অলেখকরাও মনে করে যে তাদেরও অধিকার আছে বই প্রকাশ করার। এতে মান আরো কমে যায়।

আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি আর কখনো কোন বই প্রকাশ করার চিন্তা করি সেক্ষেত্রে একজন সম্পাদককে অবশ্যই কাজে লাগাব। নিজের লেখা নিজের কাছে সবসময়ই ভালো লাগে, কিন্তু অন্যের চোখে এর ভুলত্রুটিগুলো ভালো বেরিয়ে আসে।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

আপনার লেখাটা অনেক ভালো লাগলো কনফুসিয়াস ভাই। অনেস্টলি। হাসি

নিজের দীনতা স্বীকার ক'রেই মূর্খের মতো একটা কথা বলি, অবশ্যই সবিনয় এই জিজ্ঞাসা-

আমার পড়াশোনা খুব কম, ভয়ঙ্কর রকম কম!
বিদেশী তো দূরের কথা, দেশের বইও তেমন একটা বেশি পড়িনি আমি।
সেজন্যই হয়তো ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সম্পাদনা ব্যাপারটা একটু কেমনই লাগলো, এইরকম সংগঠিত চল আর কলেবরের কথাসমেত শুনে।
লেখকদের ইন্ডিভিজুয়াল স্টাইলের স্বাদ কমে যায় না এতে, না কি? লেখক-নির্বিশেষে এক সম্পাদকের সম্পাদিত সবগুলোতেই সেই সম্পাদকের শক্ত ছাপ হয়ে থাকবে না? মানে সমান হয়ে সেগুলোর মান তো লেখকের মানানুগ থাকবে না, সেটা তো সম্পাদকের মান। ক্ষুদ্র জ্ঞানের প্রি-অকুপেশন হয়ে থাকতে পারে এটা! কী জানি!

কতো অজানা রে! মন খারাপ

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

তানবীরা এর ছবি

পাশ্চাত্যে এসে বুঝেছি ওরা কতো অর্গানাইজড সমস্ত কিছুতে। ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর উপড়ে এদের কোর্স হয়। কোর্স করে কেউ লেখক লেখিকা হয় সেটা এখানে না এলে জানতাম না।

পোস্ট এর অর্ধেক মাথার উপড় দিয়া গেলো। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি লেখার মান উন্নয়নের জন্য করা হচ্ছে। সুতরাং পূর্ন সহযোগিতা রইল।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আলাপে চোখ রাখছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।