কবিতা আমার এক নিজস্ব নরক-৩: ঠিকুজি ও ভাঁগাড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ০২/০১/২০০৮ - ১০:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিকুজি

আমি যদি কোনো ধর্ম-ঈশ্বর এবং পরকালে বিশ্বাস করতে পারতাম অথবা আমার যদি অনেক ক্ষমতা অনেক সাহস থাকতো অথবা যদি আমি অনেক বেশি পয়সাওয়ালা আর হ্যন্ডসাম হতাম। তাহলে কবিতা লিখতাম না। আমি মানুষ খুন করে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে হালকা হয়ে যেতাম। অনেক কিছু ধ্বংস করে দিয়ে নিজের রাগ ঝেড়ে ফেলতাম। অনেক কিছু কিনে খায়েশ পুরা করে ফেলতাম কিংবা নিদেন পক্ষে চেহারার বাণিজ্য করেও আরাম পেতে পারতাম। কিন্তু আমার এসব নেই। আমি কাউকে থাপ্পড় দিলে সেই অনুভূতি কবিতাকেই বলি। থাপ্পড় খেলেও বলি কবিতার কাছে। যদি কোনোদিন আমাকে মানুষ খুন করতে হয় তাহলে আদালতে সাক্ষীর দরকার পড়বে না বিচারের জন্য। আমার কবিতাই আমার সাক্ষী দেবে। হোক পক্ষে কিংবা বিপক্ষে

ছাত্ররাজনীতি করার বয়সে একবার প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে একটা গুলির শব্দ শুনে ঝেড়ে দৌড় দিয়েছিলাম গ্রামের দিকে। কী হচ্ছে তা দেখতে সাথের এক বন্ধু এগিয়ে গিয়েছিল গুলির শব্দের উৎসের দিকে। সেই বন্ধুটি এখন অনেকগুলো দল বদলে মাঝারিগোছের এক উঠতি নেতা। আরো দশ বছর পরে সে এমপি হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয়তো হয়েও যাবে। মন্ত্রীও হতে পারে এক সময়। তার মতো গুলির শব্দের উৎস দেখার সাহস থাকলে কবিতা লিখতাম না আমি। আমি মন্ত্রী হতাম

ভাঁগাড়

যদি ওইসব ইয়ে থাকতো আমার অথবা ইয়ে হতো তাহলে কবিতা লেখার দরকার পড়তো না আমার। এসকল ইয়ে না থাকার কারণেই আমাকে কবিতা লিখতে হয়। এবং লেখালেখির শুরুতেই আমি নিজেকে শুনিয়েছিলাম কবিতা লেখার পক্ষে আমার যুক্তি:

‘কিছুই না হতে পারার দুঃখে ব্যর্থ মানুষগুলো একদিন কবি হয়ে যায়’

কথাটা অন্য কারো ক্ষেত্রে যুতসই না হলেও আমার জন্য একেবারে ফিট। বড়ো হয়ে করার জন্য ছোটবেলা আমি কয়েক কোটি কাজ বাকি রেখে দিয়েছিলাম। তার কোনোটাই করা হয়নি কিংবা করা যাবে না বলেই কবিতার কাছে আমি প্রতিদিন কনফেস করি। কেননা কবিতা ছাড়া আমার প্রার্থনা কিংবা গালাগালির অন্য কোনো জায়গা নেই। মানুষের ফরমেট আর সমাজবিজ্ঞানের ফর্দ অনুযায়ী বহু জায়গায় আমি এক ভুল মানুষ। কবিতা ছাড়া অন্য কোথাও এতো বেশি ভুলের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। জননীর কাছেও না। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু জননী তার সন্তানকে ত্যাগ- পরিত্যাগ এমনকি হত্যাও করেছেন। কিন্তু কবিতা কোনো কবিকেই প্রত্যাখ্যান করেনি কোনো কালে। হোক সে খুনি ফ্রাঙ্কো ভিলো- ডাকাত ওয়াল্টার র‌্যালে- দাস ব্যবসায়ী রেঁবো কিংবা জঘন্য সাম্প্রদায়িক শেক্সপিয়র। কবিতা তাদেরকে ধারণ করে রেখেছে নরকের মতোই। সবকিছু সহ


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

নাহ ! দাদা, আপনি নরকের এমন চমৎকার বর্ননা দিচ্ছেন, আমি ধীরে ধীরে নরকের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি ( অবশ্য এমন না যে, আমি স্বর্গের খুব প্রেমিক ছিলাম )।

আপনার এই সিরিজের প্রত্যেকটা লেখাই আমার খুব ভালো লাগলো।

আরো পড়ার প্রত্যশায়।
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিন
কারণ আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বুকিং দেয়া হচ্ছে

সবজান্তা এর ছবি

স্কয়ার ফীট কত ? রিহ্যাব মেলাতে আপনাদের স্টল ছিলো না ?
---------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

শেখ জলিল এর ছবি

কবিতা কোনো কবিকেই প্রত্যাখ্যান করেনি কোনো কালে।
.......ঠিক কথা।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অনিন্দিতা এর ছবি

প্রতিটি পর্ব ই দুর্দান্ত। তবে আপনার কবিতা লেখার পেছনের কারণ পড়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। এর পরে মন ভাল করার কিছু লিখেন তো!!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সুখের টেলিফোনে যে একবার পেয়ে যায় স্বাপ্নিক সংবাদ
কেউ আর তোলে না রিসিভার কবিতার ক্রেডল থেকে

বহু আগে লেখা আমার একটা কবিতার দুটো লাইন

মনে হয় না কবিতার সাথে সুখের সংমিশ্রণ করা সম্ভব

থার্ড আই এর ছবি

গুলির শব্দের উৎস দেখার সাহস থাকলে কবিতা লিখতাম না আমি। আমি মন্ত্রী হতাম

ভাগ্যিস আপনি গুল্লির শব্দের উৎস খুজঁতে যান নি!!
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

ঝ.পা. এর ছবি

সবগুলিই সুন্দর তবে খোঁড়ল সুপার্ব লেগেছে। আচ্ছা খোঁড়ল শব্দের অর্থ কি?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গত্ত
গাছের ভেতরে থাকে
আর গুঁইসাপ জাতীয় প্রাণী ঢুকে বসে থাকে

অনিন্দিতা এর ছবি

তাহলে কী কেবল সুখের অভাব হলেই মানুষ কবিতা লেখে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সুখের অভাব= অসুখ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভাগ্যিস ধর্ম-ঈশ্বর এবং পরকালে বিশ্বাস করেন না!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তাপস শর্মা এর ছবি

এই নরক কেন যে এত টানে। দুর্ধর্ষ সব ব্যাখ্যা পড়ে যাচ্ছি দাদা। চলুক

কবিতা ছাড়া আমার প্রার্থনা কিংবা গালাগালির অন্য কোনো জায়গা নেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।