লাস ভেগাস ও ইয়োসেমিটি ন্যাশনাল পার্ক (পর্ব ১-৩)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৯/২০০৭ - ৪:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ১

ছবি ১। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া লাস ভেগাসের ছবি

মাস্টাসের্র প্রথম সেমিস্টারটা যখন শেষ করলাম তখন ভীষন স্ট্রেসড আর টায়ার্ড। তাই সহপাঠি শিখ বন্ধু গাগান যখন প্রস্তাব করল লাস ভেগাস আর ইয়োসেমিটি ভ্রমনের তখন লুফে নিলাম প্রস্তাবটা।

লাস ভেগাস নিয়ে কি রকম ধারনা ছিল আমার সেটা আগে বলে নিই। বিভিন্ন লেখায় পড়ে, ছবিতে দেখে আমার ধারনা ছিল লাস ভেগাস - সিন সিটি, চরম পাপের জায়গা। ওখানে যারা যায় মদ খাওয়া, মেয়ে মানুষ এই নিয়ে কারবার তাদের। ভীষন বিচ্ছিরি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা। তবু মনে মধ্যে যে বাঙালীর চোরা সহজাত আগ্রহটা ছিলনা তা নয়।

এই সুত্রে একটা ঘটনা বলে নেই। এইখানকার এক সিনিয়র আছেন। তার সাথে বেশ ঘোরা ফেরা করতাম। ভিসা হয়ে গেলেও তখনও আমার স্ত্রী আসেনি এখানে। এক উইকএন্ডে ইন্টেলের মাঠে ক্রিকেট খেলতে গেলাম ভাইয়াটার সাথে। পরে রাত ২ টা পর্যন্ত আরেকজনের বাসায় ব্যাডমিন্টন খেলে ফেরার পথে আমাকে ভাইয়াটা বলছেন চল যাবা নাকি লাস ভেগাস? আমার তৎক্ষনাত প্রতিক্রিয়া ছিল, 'কি বলেন ভাইয়া, আমি তো ম্যারেড। আমি লাস ভেগাস গিয়ে কি করব?' শুনে সেই ভাইয়া তো হাসবে না কাঁদবে বুঝছেন না। বললেন 'ম্যান, লাস ভেগাসে কি মানুষ খালি ঐসব করতে যায়?' (যাহ)

মূল ঘটনায় ফিরে আসা যাক। আমাদের প্ল্যানটা ছিল একরকম, প্রথমে ড্রাইভ করে সোজা লাস ভেগাস। সেখানে রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে রওনা দেব ইয়োসেমিটি ন্যাশনাল পাকের্র উদ্দেশ্যে। সেদিন রাতে পাকের্ রাত কাটিয়ে দ্বিতীয় দিন সকালে হাইকিং। দ্বিতীয়দিন রাতে ওখানে একটা স্পটে ক্যাম্পিং করে তৃতীয়দিন সকালে বাড়ি ফেরত। বিরাট প্ল্যান। ঠিক করলাম ঢাকায় জানানো যাবেনা, যেতে দেবেনা তাহলে। সুতরাং চুপচাপ করে নিতে লাগলাম প্রস্তুতি। আমি তো মহা উৎসাহে এ উপলক্ষ্যে একটা ক্যামেরা কিনে ফেললাম। কিন্তু ক্যামেরা আর হাতে আসে না।

যেদিন যাব সেদিন বিকেলে আমার প্রফেসর বঁাধাল এক ফ্যাকড়া। কোন এক মিটিং এ যাবে, আমাকে আর ল্যাবের আরেকজনকে বলল তোমরা থাক আমি তোমাদের সাথে কথা বলব রিসাচের্র ব্যাপারে। এদিকে আমাদের রওনা দেবার কথা বিকাল ৪ টায়। সময় গড়িয়ে ৫ টা - ৬ টা হয়ে যাচ্ছে প্রফেসরের কোন খবর নেই। এইদিকে বন্ধুরা তাগাদা দিচ্ছে। এর মাঝে খবর পেলাম আমার ক্যামেরা চলে এসেছে। শেষে বিরক্ত হয়ে ৭ টার সময় প্রফেসরকে না বলে রওনা দিলাম।

তাড়াহুড়া করে রওনা দিলে যা হয়, আমার দায়িত¡ ছিল রোড ডিরেকশন গুলো নেয়া। আমি সেগুলো বাড়িতে ফেলে চলে এসেছি। ভাগ্যিস কিছুদুর যাবার পর সেটা মনে পড়ল, আবার ফিরে এসে সেগুলো নিলাম। এত বিরাট জানির্ ম্যাপ, রোড ডিরেকশন এগুলো না নিলে পথে বেরুনোই অসম্ভব।

এই ফাঁকে একটা তথ্য দিয়ে রাখি। আমাদের প্ল্যানটা ছিল সামারের লং উইকএন্ডে। এই সময়টা আসলে অনেকেই লং ট্রিপ প্ল্যান করে। আর খুব একসিডেন্টও হয়। আমাদের সাথেই সেদিন রওনা দিল আরেকটা বড় গ্রুপ, ইন্ডিয়ানদের। ওরা দুই মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছিল। আমাদের সাথেই মাইক্রো ভাড়া করল তারা। ওরাও যাবে লাস ভেগাস হয়ে অন্য কোথাও।

যাই হোক, যাবার পথে আবার এক ফ্যঁাকড়া। মাঝখানে রাস্তা বন্ধ। সুতরাং রোড ডিরেকশন ভেঙ্গে বেরিয়ে আবার কোনভাবে মূল রাস্তার সাথে মার্জ করতে হবে। সে মূল রাস্তা আর খুঁজেই পাইনা আমরা। প্রায় ঘন্টাখানেক চকির্র মত পাক খেয়ে খেয়ে অবশেষে উঠলাম মুল রাস্তায়।

অ্যারিজোনা থেকে লাস ভেগাস, মানে নেভাডা স্টেটে যাবার পথে পড়ে হোভার ড্যাম নামে একটা ড্যাম। একটা ড্যাম দেখতে এত সুন্দর হতে পারে আগে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমার ক্যামেরায় তোলা ছবি গুলো নেই। কি ভাবে হারালো সেটা পরে বলব। একটাই ছবি আছে জায়গাটার, আরেকজনের ক্যামেরায় তোলা তাও ভাল দেখা যাচ্ছেনা জায়গাটা (ছবি - ২)।


ছবি ২। হোভার ড্যামের সামনে আমরা

ওখানটায় আধা ঘন্টার মত কাটিয়ে আবার রওনা দিলাম লাস ভেগাসে দিকে। তখন বাজে প্রায় রাত ১২টা। পাপের শহর লাস ভেগাস কি খোলা থাকবে যখন আমরা পৌছাব? নাকি সবাই থাকবে ঘুমে বিভোর? এত কষ্ট করে যাওয়াটা কি বিফলেই যাবে?


ছবি ৩। হোভার ড্যামের এরিয়াল ভিউ

পর্ব ২

ছবি ‌৪। রাস্তায় তোলা কোন একটি শো এর বিজ্ঞাপন

তখন রাত ১টা-২টার মত বাজে। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল যে আমরা বোধহয় গিয়ে সবকিছু বন্ধ পাব লাস ভেগাসে। নীলেশকে কথাটা জানাতেই বলল 'ম্যান, চাঁদ থেকে একটা শহরকেই দেখা যায় সেটা হলো লাস ভেগাস।' বুঝলাম বাড়িয়ে বলছে, তবু কিছু বললাম না।

তিনজন ড্রাইভার ছিল আমাদের সাথে। আমি তখনও ইউএসএর ড্রাইভিং লাইসেনস পাইনি। ওরা তিনজন পালা করে গাড়ী চালাচ্ছিল। যারা গাড়ি চালাচ্ছিল না তাদের মধ্যে থেকে একজন করে ড্রাইভারের সাথে কথা বলছিল ডিরেকশন দিচ্ছিল, যাতে সে ঘুমিয়ে না পড়ে বা বোর না হয়ে যায়।


ছবি ৫। আমি আর গাগান, বালাজিও ক্যাসিনোতে

রাত দুইটা নাগাদ আমরা লাস ভেগাসের কাছাকাছি এসে পড়ি। আলো ঝলমল রঙীন শহরটাকে দেখে বুঝলাম আমার সন্দেহ নিতান্তই অমূলক ছিল। দুর পাহাড়ের উপর থেকে ভীষন সুন্দর লাগছিল শহরটাকে। আমি ক্যামেরা বন্দী করেছিলাম দৃশ্যগুলো, কিন্তু ফ্ল্যাশ কার্ডটা হারিয়ে ফেলি এই যাত্রার পরের দিকে।

রাত তিনটা নাগাদ আমরা লাস ভেগাস শহরে পৌছে যাই। দেখে মনে হচ্ছিল সবে সন্ধ্যা হয়েছে। ছোটখাট কাপড় পড়া মেয়ে, দামী দামী পোশাকে ছেলেরা আর আলো ঝলমল চোখ ধাধানো বিলিডং গুলো দেখতে দেখতে আমরা গাড়ী পার্ক শেষে ডিনার খেয়ে নিলাম এক রেস্টুরেন্ট থেকে।

রাস্তায় বিভিন্ন দালালের অশ্লীল আহবান জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া কার্ড গুলোকে পাশ কাটিয়ে আমরা ঘুরতে লাগলাম শহরের আনাচ কানাচ। টের পেলাম সব কিছু খোলা হলেও বিভিন্ন ক্যাসিনো এবং হোটেলের আকর্ষনীয় শো গুলো কিন্তু ইতিমধ্যে শেষ। সুতরাং ঘুরে ঘুরে দেখা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই।

লাস ভেগাসের আসল আকর্ষন হলো ক্যাসিনো গুলো। হরেক রকম জুয়া খেলার উপকরন ছড়ানো ছিটানো। সেই সঙ্গে সেখানে প্রায় প্রতি রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন গান বাজনা, নাচ, সাকার্স ইত্যাদি হয়ে থাকে। সেই সাথে আছে মদ, নারী ইত্যাদি। আর আছে বিরাট বিরাট ৫ তারা, ৭ তারা হোটেল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লিকুইড ক্যাশের খেলা চলে এইখানে। সত্যিকারের মজা পেতে হলে নেশা থাকতে হবে এইসব বিষয়ে।


ছবি ৬। আমি কোন একটি হোটেলের-কাম-ক্যাসিনোর অভ্যন্তরে

খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার লক্ষ্য করলাম, মনে করুন আপনি ১০০ মিলিয়ন ডলার জিতে ফেললেন, সেটা আপনি সেইফলি, কোন ঝঞ্ঝাট ছাড়াই বাড়িতে নিতে পারবেন। সিকিউরিটির কোন অভাব নেই। অবশ্য ভিতরের কথা আর কতটুকুই বা জানি।

আমরা এই ক্যাসিনো, সেই হোটেল ঘুরে বেড়াতে লাগলাম আর মাতাল লোকদের পাগলামী দেখতে লাগলাম। দেখি এক মাতাল তার মাতাল র্গালফ্রেন্ডকে কিস করতে গিয়ে দুজনে মিলে ধরাম করে পড়ে গেল। মেয়েটার গেল দম বন্ধ হয়ে, তারপরেও হাসছে। পুলিশ এসে আবার দাঁড় করিয়ে দিল তাদের। কিছু ক্যাসিনোতে কিছু স্লট মেশিনে জুয়াও খেললাম। একবার ২ ডলারের মতো জিতেছি, কিন্তু খেলার নেশায় পেয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত হারতে হলো। সবচে বেশী জিতল গাগান, ২৫ সেন্টের মেশিনে খেলে পেয়েছে ৩১.২৫ ডলার। (ছবি - ৭)


ছবি ৭। গাগান আর শিভা ৩১.২৫ ডলার যেতার কুপন হাতে

এক হোটেলের এক বলরুমে পার্টি হচ্ছিল আমরা ঢুকতে চাইলাম বলল সরি স্যার ইউ আর নট ইন প্রপার ড্রেস। কি আর করব ব্যাথিত হৃদয়ে চলে এলাম।


ছবি ৮। আমরা মাদাম তুসোর জাদুঘরের সামনে, বন্ধ দেখে হতাশ

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে সকাল সাতটা বেজে গেল। আর এক ঘন্টা লেগে গেল গাড়ী কোথায় রেখেছিলাম সেটা খুঁজে বের করতে। ভীষন টায়ার্ড লাগছিল, হাত পা মনে হয় ভেঙ্গে আসছিল। আটটা নাগাদ আমরা রওনা দিলাম ইয়েসোমিটির উদ্দেশ্যে। ঘন্টা আটেকের রাস্তা। আমাদের কারওরই কিন্তু গত রাতে ঘুম হয়নি। ঝিমাতে লাগলাম আমরা। তখনও খেয়াল করিনি যে যারা গাড়ি চালাবে তারাতো গতরাতে গাড়ি চালিয়েছেই আবার এক ফোটাও ঘুমায়নি। সামনে যে বিপদ পড়ে আছে তার ব্যাপারে তো কিছু জানতামই না। জানলে তো উলটো রওনা দিতাম ঘরের দিকে।


ছবি ৯। 'এই বুট পলিশ'...


ছবি ১০। হোটেল বালাজিও, সকাল ৭ টায়

পর্ব ৩

ছবি ১১। ফারনেস ক্রিক র্যাঞ্চ যেখান টায় সকালের খাবার খেয়েছিলাম

ইয়োসিমিটি ন্যাশনাল পার্ক নেভাডাতেই অবস্থিত। লাস ভেগাস শহরটা থেকে বেরিয়ে আমরা রওনা দিলাম ইয়োসিমিটি ন্যাশনাল পাকের্র উদ্দেশ্যে।

ভীষন লম্বা পথ। পথের মাঝখানে পড়ল ডেথ ভ্যালী নামে একটা জায়গা। চারপাশের পাহাড় ঘিরে একটা চুল্লীর মতন একটা জায়গা তৈরী করেছে। রোদের তাপ এখানে চারিদিকে প্রতিফলিত হয়ে আগুন গরম করে ফেলে যায়গাটাকে। এখানকার একমাত্র র্যাঞ্চে নেমে আমরা সকালের খাবারটা করে নিলাম। বিভিন্ন ফলমূল দিয়ে ব্রেকফাস্টটা ভালই হল।


ছবি ১২। সেখানটাতে একটা পুরোনো স্মৃতি কাঠের ট্রেনের বগির সামনে

তারপর আবার যাত্রা। দুপাশের পাহাড় আর ধুলি ধুসরিত মরুভুমির মধ্যে দিয়ে যেতে ভালই লাগছিল।


ছবি ১৩। রাস্তায় পৃথিবীর সবচে নীচু জায়গাটার দিকে


ছবি ১৪। স্যান্ড ডিউনে অভয়

কিছুদুর যাবার পর একটা বড় মরুভূমি - স্যান্ড ডিউন চোখে পড়ল। আমরা নেমে বেশ কিছু দুর আগিয়ে গেলাম। মরুভুমি যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে কিছুটা হলেও তার স্বাদ পেলাম। বালি গুলো যখন ভীতরে ঢুকছিল তখন মনে হচ্ছিল আগুন ঢুকছে। বিভিন্ন যায়গায় সাপের গর্ত দেখতে পাচ্ছিলাম। গাগান ইতিমধ্যে অসুস্থ বোধ করছিল। তাই তাকে আর ডাকা হয়নি। আমি সহ বেশীরভাগ মরুভুমি থেকে আগে ভাগেই ফিরে এলাম - ভীষন কষ্ট বোধ হচ্ছিল। নীলেশ আর অমিত আরো বেশ অনেকখানি গিয়ে যখন ফিরল তখন তারা প্রায় মৃতপ্রায়।


ছবি ১৫। স্যান্ড ডিউনে আমরা


ছবি ১৬। স্যান্ড ডিউন


ছবি ১৭। আবার রাস্তা


ছবি ১৮। কিছু আউট ল

তারপর আবার যাত্রা। যাত্রার মাঝখানেই রাস্তাতে একটা যায়গা পড়ল - এখন নাম মনে পড়ছে না - যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা। সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক হাজার ফিট নীচে যায়গাটা। ফলশ্রুতিতে সবার কান বন্ধ হয়ে গেল।

এর মাঝে আমার স্ত্রীর ফোন এল অমিতের মোবাইলে। ওদের কে তো বলে যাইনি। আমার রুমমেট উজ্জ্বল ভাইকে খালি অমিতের মোবাইল নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম। বলেছিলাম একান্ত প্রয়োজন না পড়লে বাসায় না জানাতে। কিন্তু আমার স্ত্রী আন্দাজ করেছিল কোন একটা ঘাপলা আছে, উজ্জ্বল ভাইকে চেপে ধরে ফোন নাম্বার বের করেছে। আমার স্ত্রী ভীষন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আমাকে ফোন করেছে। তাদের ধারনা কোথায় না কোথায় আমি যাচ্ছি, ভীষন বিপদ হতে পারে আমাদের, ইত্যাদি। কোনমতে তাকে আশ্বস্ত করে ফোন রেখে দিলাম।

মূল পথে যে রাস্তাটা দিয়ে যাবার কথা সে জায়গায় মোড় ঘুরতেই দেখি বড় করে সাইন দেয়া: warning: snow removed occasionally। তো আমরা পার্শ্ববতীর্ একটা দোকানে থেমে কি অবস্থা জানতে গেলাম। দোকানদার জানাল আসলেই এই রাস্তায় গেলে বরফে পথ বন্ধ পাবেন। সুতরাং ঘুরে অন্য একটি রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। আর সেটাতে যেতে প্রায় ঘন্টা চারেক বেশী সময় লাগবে। কি আর করা, তখন বাজে বিকেল চারটার মত। আর চার ঘন্টা মানে রাত আটটা নাগাদ পৌছে যাব ওখানে এটা ভেবে আবার যাত্রা শুরু করলাম আমরা।

কিছুদুর গিয়ে চোখে পড়ল ভীষন সুন্দর একটা লেক। ম্যাপে দেখলাম এর নাম হচ্ছে মনো লেক। সবার চেঁচামেচিতে গাড়ী থামিয়ে নামলাম মনো লেকে। কিন্তু কাছে যেতেই দেখি সাইনবোডের্ লেখা এক বিশেষ প্রজাতির মাছির প্রজনন ক্ষেত্র এই লেক। মাছি গুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় - সুতরাং কেউ যেন মাছির ডিম বা লার্ভা ধ্বংস না করে সে ব্যাপারে সর্তক করে দেয়া হয়েছে।


ছবি ১৯। মনো লেক


ছবি ২০। মনো লেকে শিভা


ছবি ২১। মনো লেকে অভয়


ছবি ২২। মনো লেকে আমি


ছবি ২৩। মনো লেকে মানসী পাখিদের চিপস ছুঁড়ে দিচ্ছে


ছবি ২৪। মনো লেকে পাখিদের আক্রমন

এই মাছির ডিমগুলোর জন্য পুরো লেকের পাড় জুড়ে থকথকে কাদা আর ভীষন দুর্গন্ধ হয়ে আছে। মনো লেকের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে কোন এক চুনা পাথরের পাহাড়, তাই লেকের পানিতে মিশে আসে চুনা। সেই চুনা গুলো জমাট বেঁধে সাদা সাদা চুনা পাথরের ক্রিষ্টাল ডিপি তৈরী করে। দূর থেকে দেখে অসাধারন মনে হয়। কিন্তু কাছে এসে বোঝা গেল ধারালো, ভীষন পিচ্ছিল সেগুলো।

সবাই ধুমসে ছবি তুলতে লাগল সেখানে। আশেপাশে কিছু পাখি উড়ছিল। মানসী নামের মেয়েটি পাখিগুলোকে হাতের চিপস খাওয়াতে খাওয়াতে আশেপাশে পাখির মেলা বসে গেল। সেগুলো রিতীমত আক্রমন করে বসত আরেকটু হলে। আমরা সবাই গিয়ে পাখিগুলোকে তাড়িয়ে মানসীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলাম।

পানি যারা পা ভিজিয়েছিলাম তাদের পায়ে চুনের সাদা আস্তর পড়তে শুরু করেছে দেখলাম। তাই খালি পায়েই গাড়িতে চড়ে বসলাম আমরা। আবার শুরু হল যাত্রা।

জুলাই ৩০, ২০০৬

চলবে...


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার খুব পছন্দের একটা ভ্রমনের বোরিং এবং অসম্পূর্ণ একটা বর্ণনা। অনেকক্ষণ কেউ পোস্ট করছেন না দেখে একটা গুঁতো দিলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

আমি শুধু ছবি আর ক্যাপশন দেখে বিপ্লব দিলাম। রয়েসয়ে পড়বো। দুয়েকটা ছবি দেখে মনটা বড় উদাস উদাস লাগছে ... হায় ...!


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিফরান খালেদ এর ছবি

বেশ তো!!

অয়ন এর ছবি

কোথায় যেন পড়েছিলাম লাসভেগাস পুরাটাই মানুষের তৈরী শহর। প্রকৃতি কিছুই দেয়নি বিরূপতা ছাড়া। অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

শুধু টাকার খেলা সেখানে। লাখো মানুষ সর্বশ্রান্ত হয় সেখানে, গুটিকয় মানুষের পকেট ভরিয়ে দিয়ে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

যদি জন্মটা দরিদ্র বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারে না হতো। যদি নিজের ইচ্ছামত পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ থাকতো, অথবা যদি আবার জীবনটা শুরু করা যেতো, তবে ফটোগ্রাফি আর পপুলার রাইটিং শিখে ট্রাভেল রাইটার হতাম।

দেশে দেশে ঘুরতাম। ছবি তুলতাম আর সেইসব ভ্রমণের কথা লিখতাম।
এই পোস্টের ছবি দেখে এইসব দু:খ নতুন করে খোঁচাতে লাগলো।
আহা........
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওহো ... হাসি
এখন বাঁধা দিচ্ছে কে? ৮০ বছর বাঁচবেন আশা করি। জীবনের অর্ধকটাই এখনও বাকি। একটা ক্যমেরা কিনে শুরু করে দেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পুরোটা পড়লাম। ভাল লাগলো। বিশেষ করে ছবিগুলোর জন্য। চলুক। ঘুরে আসতে হবে এক সময়। আমার এক বন্ধু কিছুদিন আগে ডেথ ভ্যালি ঘুরে এসেছে। সেই জায়গায় সামারে গেলেন... ওয়াও!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম। আপনার এই বর্ণনা যেন চলতে থাকে। ভাল লেগেছে। আমার সবচে প্রিয় জিনিস হল ভ্রমণ কাহিনী পড়া। নিজে খুব বেশী ভ্রমণ-প্রিয় নই অবশ্য। এটা এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। যা হোক, লেখার মাঝে একটা বিপদের গন্ধ ছিল, সেটা এই পর্বে খুঁজে পেলাম না। আশা করি পরের পর্বে দেবেন।

...............................
আমার লেখাগুলো আসে স্বপ্নের মাঝে; স্বপ্ন শেষে সেগুলো হারিয়ে যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।