ছোটগল্প: সানগ্লাস [পর্ব ৩, ৪]

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: রবি, ২৫/১০/২০০৯ - ১১:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ,


দেখতে শুনতে যেমনই হোক, ঐশী মেয়েটা কিন্তু ভীষণ আধুনিকা। পড়াশোনা শেষ করে বাবা মার বাঁধা একরকম উপেক্ষা করেই মার্স্টাস করতে চলে এসেছে আমেরিকায়। এসেই অবশ্য ধাক্কা খেয়েছে একটা। অ্যারিজোনাকে ঠিক টিভিতে দেখা আমেরিকার মত মনে হয়নি। রুক্ষ ধূসর মরুভূমি একটা।

শহরটাকে পছন্দ না হলেও অন্তু ছেলেটাকে তার খুব মনে ধরেছে। কেমন সারাক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। চোখে চোখ পড়লে একটা হাসি দেয় বোকার মত। অবশ্য চোখে তো সারাক্ষণই সানগ্লাসটা পরে থাকে ছেলেটা, তবুও। বুকটা একেবারে ধ্বক করে ওঠে ঐশীর।

ধীরে ধীরে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছে দুজনে। বাজার সদাই করা লাগলে অন্তুর ছাড়া আর কারো কথা মাথায় আসেনা ঐশীর। তাছাড়া দুপুরের লাঞ্চটাও তাদের একসাথে করা চাই। এছাড়া মাঝে মধ্যে বিকেলে কিংবা উইকএন্ডে ঘুরতে যাওয়া তো আছেই।

অন্তু কিন্তু ইতিমধ্যে টের পেয়েছে মেয়েটা খুব খোলামেলা মনের। আর তাকেও যথেষ্ট পছন্দ করে। মেয়েটার মায়াবী মুখ দেখলে অন্তুর বুকেও উথাল পাথাল শুরু হয়ে যায়।

অন্তু এক শনিবার এনথেম নামের এক শহরে নিয়ে যাচ্ছিল ঐশীকে। একটা সস্তা আউটলেট মল আছে নাকি সেখানে। ঐশীকে নিয়ে বেরোনোর জন্য এই বাহানা দিয়েছে অন্তু। অন্তু ড্রাইভ করছে, পাশে ঐশী।

"তোমাকে না আজকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে", সানগ্লাস পরা চোখে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলল অন্তু।

"হি হি হি... রাস্তার দিকে তাকাও জনাব।" কিছুদিন হলো ওদের সর্ম্পকটা তুমিতে নেমে এসেছে।

"ঐশী তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? কিছু মনে কোরোনা কেমন?" অন্তু আজকে মনে হয় একটা দফা রফা করেই ফেলবে।

"না না মনে করব কেন? তবে কি জিজ্ঞেস করবা আমি মনে হয় জানি।"

অন্তু ওর দিকে তাকিয়ে হাসে। "তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?"

"হি হি হি... আছে..." রহস্য জনক দৃষ্টিতে অন্তুকে চোখ মটকে দেয় সে।

অন্তু একটু থমকে যায়।

"জিজ্ঞেস করলা না কে সেই বয়ফ্রেন্ড?" মুচকি হাসিটা ধরেই রেখেছে ঐশী।

"না মানে..., চাইলে বলতে পারো..."

"তুমি..., হি হি হি..."

একটু হকচকিয়ে স্টিংয়ারিংটা টলে ওঠে অন্তুর। গাড়িটা লেন বদলে পাশের লেনে চলে যেতে চায়। পিছনের গাড়ির হর্নে সম্বিত ফিরে পায় সে। মুচকি হেসে ঐশীর দিকে তাকায় সে। ঐশীর চোখে মুখে তখন লাজনম্র হাসির বান ডেকেছে।

ক্যাসেটে ওই মুর্হুতে বেজে ওঠে, "বালোবাসা ওইয়া গ্যাছে গো, এইবার চলো যাই বাড়ি..."


ওদের সর্ম্পকটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে সময় লাগল না। অন্তুর বাবা নেই। বড় বোন বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় সেটলড্। বিয়ের জন্য অনেক দিন ধরেই ওর মা জোর করছিলেন। সময়, ভিসা এই সমস্ত বিষয়ে নানা ঝামেলায় ঢাকায় যেতে পারছিলনা সে।

এদিকে ঐশীকে নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলেন ওর বাবা মা। এমনিতেই খোলামেলা ধরনের মেয়ে। দূর দেশে কোথায় কি হয়ে যায়, ঠিক আছে?

দুজনের পরিবারকে ব্যাপারটা জানাতে তেমন সমস্যা হল না। অন্তুর বাবা নেই বলে পরিবারের মতামত বলতে অন্তুই সব। ঐশীর মামা থাকেন লস এঞ্জেলসে। তিনি লোক মারফত খবর নিয়ে জানলেন অন্তুর বৃত্তান্ত। তারপর এল.এ তেই বিয়ে।

আমেরিকায় বিয়ের অনুষ্ঠান বলতে এক হুজুরের উপস্থিতিতে বিয়ের কলমা পড়া, আইনী বিষয়গুলো এক বিচারকের মাধ্যমে সমাধা করা আর তারপর খাওয়া দাওয়া।

বিয়ে উপলক্ষ্যে অন্তুকে একটা শেরওয়ানী পরতে দেয়া হয়েছে। আর জোর করে তার চশমা খুলিয়েছেন ঐশীর মামী। তখন থেকেই অস্বস্তিটা শুরু হয়েছে তার। সমস্ত পৃথিবী যেন রং হারিয়েছে! ধূসর হয়ে গেছে পৃথিবীটা। খুব অস্বস্তিতে ঘামতে শুরু করে অন্তু।

বাঙ্গালী বিয়ের নিয়ম মেনে ঐশীকে আগে থেকে দেখতে দেয়া হয়নি অন্তুকে। সাজ গোজ শেষে ঐশীকে নিয়ে আসা হয়েছে অন্তুর কাছে। বৌয়ের চেহারা জুড়ে মস্ত ঘোমটা। আয়না দর্শন হবে এখন।

এক ঘোমটার নীচে দুজনকে ঢুকিয়ে একটা আয়না দিয়ে প্রশ্ন করা হল অন্তুকে কি দেখছ বলো। সারাদিন ধরে অন্তু ঠিক করে রেখেছিল আয়না দেখে বলবে, "চেনা মুখ অচীন রূপে"। সেটাই মনে মনে আউড়াচ্ছিল সে। কিন্তু আয়নার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল সে! এটা কি দেখছে সে!! এও কি সম্ভব?

পঁচা মাংস মুখ থেকে খুলে আসছে আয়নায় এরকম অসম্ভব ভয়ঙ্কর এক ডাইনী বুড়ির চেহারা দেখে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠল অন্তু। সমস্ত অতিথিদের হতভম্ব করে দিয়ে বিয়ের আসর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল সে।

(চলবে)


মন্তব্য

প্রবাসিনী এর ছবি

এরপর কি হবে? তারাতারি লিখে ফেলেন না।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসবে আসবে। হাসি কালকেই দেখি আরো খানিকটা লিখে ফেলতে পারি কিনা।

ও হ্যাঁ, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

ভাল লাগল।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আরে ভাই, এইটা কী করলেন আপনি, ঞ্যাঁ?

রেশনুভা এর ছবি

মুর্শেদ ভাই, আপনি কেনু সানগ্লাস খুলাইলেন? কেনু, কেনু?

মূলত পাঠক এর ছবি

পরের পর্ব শিগগির চাই! আমাদের দাবি মান্তে হবে!

আলমগীর এর ছবি

ঘটনা কী ঘটল?

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

ওহ্ , এইভাবে এখানে শেষ!! একদম জায়গামতো ব্রেক....
শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব চাই।

--------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

সমস্ত অতিথীদের হতভম্ব করে দিয়ে বিয়ের আসর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল সে।

অতিথি বানান ভুল করার জন্য সমস্ত অতিথিদের পক্ষ থেকে তেব্র পেতিবাদ !

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হো হো হো
ধন্যবাদ ঠিক করে নিচ্ছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দময়ন্তী এর ছবি

বাপরে! কিরকম জায়গায় ছাড়লেন৷ পরেরটা জলদি জলদি দিন৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এইটা একটা মজার এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে আমার জন্য। আমি নিজেও জানিনা পরের পর্বে কি ঘটবে। একটা আউটলাইন আছে। কিন্তু লিখতে বসে অনেকে কিছুই বদলে যায়। মনে হচ্ছে একটা কার্ভ ফিট করতেছি কতগুলো পয়েন্টদিয়ে যেখানে প্রথমে ফিট করা কার্ভের অংশটা শুধরানোর উপায় নাই। প্রতি পর্বে কার্ভের ডিগ্রী অভ ফ্রিডম কমে যাচ্ছে। ফান!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নিবিড় এর ছবি

এই জায়গায় এনে অপেক্ষায় রাখলেন মন খারাপ পরের পর্ব কিন্তু তাড়াতাড়ি চাই হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়াল্লাহ...এইটা কি করলেন??!! মাত্র ঐশী মেয়েটারে ভাল লাগা শুরু হইসিল...হেহে!!

- শূন্য

ভ্রম এর ছবি

এইটা কি হলো! পরের পর্ব চাই!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

দিলেন তো শেষে আইস্যা প্যাঁচ টা মাইরা, অহন বাকিটুহু চারেন জলডি

স্বপ্নদ্রোহ

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখাটা পড়ার পর আমি একটু টেনশনে ছিলাম আপনি কোন পর্ব বাদ দিলেন কি না... মন্তব্য পড়ে বুঝলাম ঠিকই আছে। আপনি মনে হচ্ছে একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছেন- গল্পের কাহিনী নিয়ে খেলছেন। দেখি, এই মোড় নেয়ার খেলা কই থামে...
ক্লিফ হ্যাঙ্গারটা দুর্দান্ত হলো কিন্তু।

-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

অতিথি লেখক এর ছবি

দাবি রইলো ঝটপট নেক্সট কিস্তির (যথেষ্ট আদব ও তমিজের সাথে) *তিথীডোর

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অসাধারন, দুর্দান্ত!! এই পর্বটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল, ইন্টারেস্টিং দিকে মোড় নিয়েছে ঘটনা। তবে অনেকদিন হয়ে গেল মুর্শেদ ভাই, দিবেন না পরের পর্ব? নাকি সাইট আপডেটের পরে আসবে?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।