"ব্যাড মানি" এবং "দিস ইজ হোয়ার আই লিভ ইউ"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: সোম, ১৪/০১/২০১৩ - ১১:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"ব্যাড মানি"
ব্যাড মানি কেভিন ফিলিপ্সের একটি আর্থ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। কেভিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ১৯৬৮ সালের নির্বাচনে সিনিয়র স্ট্যাটেজিস্ট ছিলেন। ওয়াশিংটনকে খুব কাছে থেকে দেখা এই বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গী আমার কাছে ভালো লাগলেও তার লেখার ধরণ তেমন ভালো লাগেনি। জটিল এবং দীর্ঘ বাক্যে সহজ কথাগুলো অনেক বেশী স্পেস নিয়ে বলেন তিনি। ফলে মূল পয়েন্ট ধরতে বেগ পেতে হয়।

আমেরিকার ২০০৮ আরে রেসেশন আমার জন্য একটা বিশেষ আগ্রহের বিষয়। এই অর্থনৈতিক ধ্বসের পুরো সময়টাতে আমেরিকায় বসে এর ভয়াবহতা দেখেছি। যদিও এর ফলে আমাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব পড়েনি। কিন্তু সেকেন্ডারী কিছু প্রভাব তো পড়েছেই। তাছাড়া ভবিষ্যতে আমেরিকায় এরকম কোনো অর্থনৈতিক ধ্বস আসবে কিনা, সেজন্য কিরকম প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে সে নিয়ে আমার মাথায় প্রশ্ন এসেছে।

রেসেশনের প্রক্ষিতে আমেরিকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিরকম পরিবর্তন এসেছে সেটা নিয়ে লেখা বই পিনচড্ পড়ে যতটা না ধাক্কা খেয়েছি তার চেয়ে বেশী ধাক্কা খেয়েছি ব্যাড মানি পড়ে। প্রথমে কেভিন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখান যে, গত তিন দশকে আমেরিকার অর্থনৈতিক খাত এগারো শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে একুশ শতাংশে এবং ম্যানুফ্যাকচারিং পঁচিশ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে তেরো শতাংশে। বিভিন্ন তথ্যের সাপেক্ষে তিনি প্রমান করেন এর ভয়াবহতা। তিনি বলেন যে, যে অর্থনীতিতে দ্রব্য প্রস্তুত করার বানিজ্যের চেয়ে বেশী টাকা আয় হয় অন্যের টাকার হাত বদল করে সে অর্থনীতির পতন বাধ্যতামূলক।

উপরন্তু হেজ ফান্ড এবং সিকিউরিটাইজেশনের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরেন। এসমস্ত অর্থনৈতিক যন্ত্রপাতি বিপদজনক বিনিয়োগের বিপদটাকে কম হিসেবে দেখায় বলে অনেক বিনিয়োগকারী এতে প্রলুব্ধ হয়। তারউপর এই অর্থনৈতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আমেরিকার বাইরে থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয়েছে এগুলো দিয়ে। কিন্তু যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে শুরু করেছে তখন ভেঙ্গে পড়েছে আমেরিকা সহ পৃথিবী বিভিন্ন দেশের স্টক মার্কেট।

দূর্বল জ্বালানী নীতি আর বুশের ইরাক আক্রমনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্বের কাছে আমেরিকার ইমেজ খারাপ হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার উপর মড়ার উপর খাড়ার ঘার মতো এসে পড়েছে। ২০১১ নাগাদ জ্বালানি উৎপাদন শীর্ষে পৌছে যাবে, আর এর ফলে ডলারে মূল্য আরো পড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও করেছেন কেভিন।

কেভিন পরিশেষে বলতে চেয়েছেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক পুঁজিবাদ একটা ভয়াবহ জুয়া খেলেছে। প্রথমতঃ অন্যান্য ব্যবসাকে টাকা হাত বদলের ব্যবসা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছে। দ্বিতীয়তঃ বিশাল আকারের ঋণ এবং সেটা চালান করবার উপায় বের করেছে। তিন, স্টক মার্কেট বুদবুদের পর পর আরো বড় বাড়ি এবং মর্টগেজের বুদবুদের জন্ম দিয়েছে। চতুর্থতঃ ১৯৮৭ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে ক্রেডিটের বাজারটাকে চারগুন করেছে। শেষমেষ, কফিনের পেরেক ঠুকেছে অসততা, অজ্ঞানতা এবং অযোগ্যতার সমন্বয়ে।

পড়ে আমার ভয়ই লেগেছে। একটি অবশ্য পাঠ্য বই এটি।

"দিস ইজ হোয়ার আই লিভ ইউ"
জোনাথান ট্রুপারের একটি উপন্যাস "দিস ইজ হোয়ার আই লিভ ইউ"। পড়তে পড়তে মনে হয় কোনো রোমান্টিক কমেডি ধরণের ইংরেজী ছবি দেখতে বসেছি কিংবা সেবা প্রকাশনীর রোমান্টিক অনুবাদ পড়ছি। এক ইহুদী পরিবারে বাবা মারা যাবার পর মৃত বাবার অনুরোধে সাতদিন ব্যাপী "শিভা" নামক এক শোক পালন করতে থাকে পরিবারটি। অনেক দিনের চেপে থাকা রাগ-ঝগড়া এগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে একে একে। সাতদিন শেষে মধুর মিলন।

লেখকের লেখনী বেশ ঝরঝরে। কয়েকটা বর্ণনা পড়ে আমি চমৎকৃত হয়েছি। যেমন, গল্পের নায়কের একবার দু হাটুর মাঝখানে লাথি খেয়ে কি অনুভূতি হয়েছিলো সেটার বর্ণনা মুগ্ধ করার মতো। আর সুক্ষ্ম কিছু হাস‌্যকর এলিমেন্ট আছে। সব মিলিয়ে বইটি সময় কাটানোর জন্য উপভোগ্য। বইটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিতব্য। তবে সিরিয়াস পাঠককে বইটি থেকে দূরে থাকবার অনুরোধ জানাবো।


মন্তব্য

অমি_বন্যা  এর ছবি

বই দুটি পডবো আশা রাখছি ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অর্থনৈতিক যন্ত্রপাতি

- বলতে কি 'Financial Instruments'-কে বুঝিয়েছেন? যদি তাই হয়, তাহলে বাংলা প্রতিশব্দটা জুতমতো হলো না। আমি অবশ্য ভেবেও জুতমতো কোন প্রতিশব্দ বের করতে পারলাম না।

জ্ঞানী লোকজন যা-ই বলুন আমি যে সোজা কথাটা বুঝি সেটা হচ্ছে, যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কোন পণ্য বা সেবা তৈরি না করেই ট্রানজেকশন করে সেটা 'ফাটকাবাজী'। নানা রকম ফেব্রিকেটেড তথ্য বা ব্যাখ্যা দিয়ে কৃত্রিমভাবে কোন কিছুর দাম উঠা-নামা করানো ফাটকাবাজীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটা শেষ বিচারে জিরো-সাম গেম।

পরামর্শক বললেন, "১০০ টাকা কারখানাতে বিনিয়োগ করেছেন তো, এখন ৫০ টাকার টি-বন্ড বা জমি কিনে রাখুন। ৬ বছর পর ৫০ টাকার টি-বন্ড ১০০ টাকা হয়ে যাবে, আর ৫০ টাকার জমি ১০০০ টাকাও হয়ে যেতে পারে"। পরামর্শক খুব একটা ভুল কথা বলেননি - আসলেই তাই হবার কথা। তবে আমি ভাবি, বন্ড বিক্রেতা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোন ব্যবসায় খাটাবেন যেখানে ৬ বছরে এমন লাভ হবে যাতে নিজের খরচ আর লাভ বাদ দিয়ে শেষে আমাকে ১০০ টাকা দিতে পারবেন? তাহলে আমি কেন সেই ব্যবসা করি না? অনেক খুঁজেও অমন ব্যবসার খোঁজ পেলাম না। আবার ৫০ টাকার জমি কিনে ফেলে রাখলে তো সেখান থেকে তো কোন আয়ই তৈরি হচ্ছে না। তাহলে তার দাম ১০০০ টাকা হয় কী করে? এই বাকি ৯৫০ টাকা কোন বেকুবের পকেট থেকে আসবে!

'কাগজ' বিক্রি আর 'আশা' বিক্রি সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে কিছু গতি আনতে পারে বটে; তবে শেষমেশ বেলুন ফুটুস্‌ হতে বাধ্য। আপনিই লিখেছেন,

তিনি বলেন যে, যে অর্থনীতিতে দ্রব্য প্রস্তুত করার বানিজ্যের চেয়ে বেশী টাকা আয় হয় অন্যের টাকার হাত বদল করে সে অর্থনীতির পতন বাধ্যতামূলক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

financial instruments এর বাংলা হিসেবে অর্থনৈতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে হয় চিন্তিত

***********

আপনিও সেই ব্যবসা করতে পারেন যেটা ব্যাংক এবং বিমা কোম্পানীগুলো করছে। জমি কিনুন। রাজনৈতিক/প্রশাসনিক যোগাযোগ থাকলে দশ বছরে বিশগুন লাভ পাওয়া কোন ঘটনাই না ঢাকায়। জমির বাজার শেয়ার বাজারের মতই। প্রথমে একজন দালাল আপনার কাছ থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে জমি কিনবে, তারপর বিভিন্ন কথা বলে সেটা একজন গ্রাহকের কাছে বাজার মূল্যের চেয়ে চড়া দামে বেচবে। গ্রাহকটি ব্যক্তিও হতে পারে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান। যেহেতু সেই প্রতিষ্ঠান বেশি দামে জমি কিনছে, দালালেরা (অথবা অন্য মালিকেরা) সেটা জানতে পেরে দাম বাড়াবে। প্রতিষ্ঠানকে যেহেতু জমি কিনতে হবেই (কেন জিজ্ঞেস করবেন না), সে সেটা বর্ধিত দামে কিনবে। তারপর দালালেরা আবারও দাম বাড়াবে। এইই চলছে। আমি অনেককে জমি বেশি দামে কিনতে দেখেছি এই যুক্তিতে যে এর থেকেও বেশি দামে অন্য কেউ কিনেছে, কাজেই আমি লাভে আছি।

***********

সাধারণ ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি টাকা নষ্ট হয় হাতবদলে। অনেকের জীবন চলে যাচ্ছে কোন প্রকার উৎপাদনের সাথে জড়িত না থেকে, আর বাজারে বাড়ছে দাম। একটা সময় আসবে যখন দরিদ্র প্রান্তিক ভোক্তা আর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবে না। এখনই পারছে না অবশ্য। কোনমতে থাকা আর খাওয়ার টাকা জোটে বিপুল সংখ্যক লোকের। অর্থনৈতিক পতনের খুব বেশি বাকি নেই বোধহয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

জমির দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে জমির যোগানের তুলনায় চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। তাই প্রতি বছরেই জমির দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

ফারাসাত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিক ধরেছেন। কিন্তু তাহলে আমেরিকায় বিশাল আকারে জমির দামে ধ্বস নামার কারণ কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ব্যাপারটা সম্বন্ধে বলতে পারবোনা মুর্শেদ ভাই। আসলে বাংলাদেশের কন্টেক্সটে মন্তব্যটা করে ফেলেছিলাম।

ফারাসাত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এটা খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। সিকিউরিটাইজেশন কিভাবে কাজ করে সেটা বোঝা দরকার। মর্টগেইজ সিকিউরিটি দিয়ে বোঝানো যাক।

ধরুন দবির, সবির আর কবির তিনজনে তিনটা বাড়ি কিনেছে সোনালী ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে লোন নিয়ে। এখন সোনালী ব্যাঙ্ক এই লোন তিনটা আরেকটা কোম্পানীর কাছে বিক্রী করে দিলো। ধরি এই কোম্পানীর নাম রূপালি সিকিউরিটিজ। রূপালি সিকিউরিটিজ করল কি এই তিনটে লোন দিয়ে একটা ভর্তা বানালো।

যদি কবির খুব বিপদজনক ঋণ গ্রহীতা হয়ে থাকে, কিন্তু দবির আর সবির তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ঋণ গ্রহীতা হয়ে থাকে তাহলে এই ভর্তার মোট বিপদ কমে যায়। অর্থাৎ সাধারণভাবে কবির বিপদজনক হওয়ায় লোন পেতে পারতো না। কিন্তু ভর্তার একটি অংশ হওয়ায় সে লোন নিতে পেরেছে। একটা পঁচা আলু বিক্রি করা শক্ত। কিন্তু তিনটি আলুর ভর্তায় একটা পঁচা আলু ঢুকিয়ে দিলে সেটা বিক্রি করা সহজ।

তো রূপালি সিকিউরিটিজ করল কি এই আলুর ভর্তা একটু একটু করে ধরি পাঁচজনের কাছে বিক্রী করলো। এর মাঝে আরো কিছু জটিলতা আছে, কিন্তু সহজভাবে এই ভর্তার বিপদ অনেক কম।

ধরি রহিম আর করিম দুজনে তাদের রিটায়ারমেন্টের জন্য টাকা জমাচ্ছিলো। তারা জানতে পারলো রূপালি সিকিউরিটিজ থেকে এক ভাগা ভর্তায় অর্থ লগ্নী করলে তাতে ভালো টাকা বাড়ানো সম্ভব হবে। তাই তারা গিয়ে তাদের রিটায়ারমেন্টের জন্য জমানো সমস্ত টাকা দিয়ে এক ভাগা করে ভর্তায় অর্থ লগ্নী করলো।

এটা ঋণদাতার জন্য খুব ভালো একটা ব্যাপার। কেননা এতে করে অনেক বেশী ঋণ দেয়া যাচ্ছে। এটা ঋণগ্রহীতার জন্য খুব ভালো কেননা যারা সাধারণ হিসেবে কোনো ঋণ পেতো না তারা এবারে খুব সহজেই ঋণ পাচ্ছে। এটা রহিম আর করিমের মতো অর্থ লগ্নীকারীদের জন্য ভালো, কেননা তারা খুব সহজে ভালো রির্টানের নিরাপদ জায়গায় অর্থ লগ্নী করতে পারছে। অর্থাৎ সবাই জন্যই এটা উইন উইন অবস্থা। আর একারনেই হু হু করে বাড়তে লাগলো সিকিউরিটাইজেশনের ব্যবহার।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কিভাবে এই ব্যবস্থা ধ্বসে পড়লো?

দিগন্ত এর ছবি

এখানে ভাল বোঝানো ছিল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কৌস্তুভ এর ছবি

কথা সত্যি। চীনের এই দ্রুত উত্থানের কারণ তাদের বিশাল উৎপাদন ব্যবস্থা। তার মধ্যে অবশ্য তাদের কলকারখানা বিস্তার ছাড়াও বিশাল খনিজ সম্পদেরও বড় প্রভাব আছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুমম। ২০৩০ নাগাদ চীনের জিডিপি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০৫০ নাগাদ ইন্ডিয়া প্রায় ধরে ফেলবে আমেরিকাকে। ততদিন চীনের জিডিপি পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয় দ্বিগুন হবে। ব্রিক (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া আর চায়না) হবে পৃথিবীর নতুন শক্তি।

কৌস্তুভ এর ছবি

২০৫০-এর প্রেডিকশন সম্পর্কে আমার সন্দেহ আছে। ততদিনে চীনের এই বুম বাস্ট হয়ে যেতে পারে। হয়ত কমিউনিস্ট পার্টিও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। আর একবার গণতন্ত্র এসে গেলে বৃদ্ধির হার কমে যাবেই। ভারতে কোনো কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে আন্দোলন জনঅসন্তোষ ইত্যাদি হাজার ঝামেলা। চীন সরকার এগুলোকে মসৃণভাবে কাটিয়ে দিতে পারে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কৌস্তুভের সাথে সহমত। গণচীনে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়ে গেছে। অলরেডি তারা পরিবেশ রক্ষা, উন্নত জীবন ব্যবস্থা ইত্যাদির নামে বিভিন্ন কায়দায় তাদের মতামত জানানো ও কিছু সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ শুরু করে দিয়েছে। এই শ্রেণীটার শক্তি আরো বাড়লে 'লাল কার্পেট', 'সবুজ ভেলভেট', 'হলুদ টিউলিপ' জাতীয় বিপ্লব শুরু হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু হবে না। এরমধ্যেই শ্রমিক শ্রেণীর তরুণতর অংশ নির্মাণ, খনিজ উত্তোলন জাতীয় কাজে তাদের অনাগ্রহ দেখানো শুরু করেছে, অন্যরা এর জন্য বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছে।

ভারতকে প্রতিদিন বিচ্ছিন্নতাবাদ-উগ্রপন্থা-সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির নামে যা কিছু হ্যান্ডেল করতে হয় তার সিকি ভাগও যদি গণচীনকে হ্যান্ডেল করতে হতো তাহলে তার প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ইত্যাদির ঊর্ধ্বমূখী সূচকের দিক ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যেত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই "ব্রিক" এজাম্পশনের ব্যপারটা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়, বাস্তব অবস্থা দেখলে এই ব্রিক দেশগুলোর সুপারপাওয়ার হয়ে ওঠার ব্যপারটা আমার কাছে অতিশয়োক্তি বলেই মনে হয়, শুধু জিডিপি দিয়ে র‍্যাংক করলে ব্রিক দেশগুলি হয়ত ইউরোপের অনেক দেশ (যেমন জার্মানী, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড) এবং দূরপ্রাচ্যের জাপান বা কোরিয়া থেকে এগিয়ে থাকতে পারে -- কিন্তু সত্যিকারের অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে যাওয়াটা শুধু জিডিপি র‍্যাংকিং এর ভিত্তিতে করলে মনে হয় ভুল হবে।

জিডিপি অনেকাংশে একটা দেশের মোট জনসংখ্যা/আয়তন ইত্যাদির উপর নির্ভর পরে, আর এই ব্রিক দেশেগুলোতে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সাধারণ গরীব জনগণের অবদান আর তার বিনিময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে তাদের যে সেবা পাওয়ার কথা তার অনুপাত খুবই কম, যেমন চীনে যা হচ্ছে তা পুরাটাই ক্লেপ্টোক্রেসি (যেমন ক্ষমতা আর অর্থ শুধু পার্টি মেম্বারদের হাতে), ভারতের জিডিপি যদি পিপিপি দিয়ে এডজাস্টেড করা হয় দেখা যাবে বাংলাদেশের কাছাকাছি, ব্রাজিলের ব্যপারেও একই, আর রাশিয়ার ইকোনমিতে মাফিয়াতন্ত্রের চরম প্রভাব। হয়ত এসব দেশগুলোতে গুটিকয় ধনীক শ্রেণীর হাতে সমস্ত টাকা -- আর দেখা যাবে ঐখানে সাধারণ জনগণের জীবনের মান বাংলাদেশের মতই, বিশেষ করে (ভারত ও ব্রাজিলে), বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার মনে হয় বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের চেয়ে ভাল

-- রামগরুড়

দিগন্ত এর ছবি

দেশগুলো "সুপার-পাওয়ার" হলেই যে দেশের জনগণের গড় অবস্থা ভাল হবে এমন খুব একটা মানে নেই। আমেরিকার থেকে মাথাপিছু গড় আয়ে এগিয়ে আছে এমন দশ-বারোটা দেশ আছে। শিশুমৃত্যুর হারে আমেরিকার থেকে অর্ধেক আয়ের পোল্যান্ডও এগিয়ে আছে। সুতরাং নাগরিকদের গড় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অনেক জটিল বিষয়। ওপর থেকে কিছু ফিগার থেকে বিশেষ একটা কিছু বলা সম্ভব না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসিব এর ছবি

কথাটা পোস্টে বইয়ের বরাতে এসেছে, মন্তব্যেও এসেছে। আমরা কেন ভাবি যে উতপাদন ছাড়া অর্থনীতি টেকে না?

স্পর্শ এর ছবি

পুরোপুরি মধ্যস্বত্তভোগী অর্থনীতি টিকবে না বলে মনে হয়। ব্যাপারটা তড়িৎ বর্তনির মত, কোথাও না কোথাও শক্তির উৎস (উৎপাদন) লাগবেই। আর পুরোপুরি শোষক রাষ্ট (অর্থনীতি) সাস্টেইনেবল না বলেই মনে হয়।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দিগন্ত এর ছবি

ব্যাপারটা আসলে একটু ভুলভাবে উপস্থাপিত হয় সর্বত্র। শুধু মাত্র ম্যানুফাকচারিং বা চাষবাস মানেই উৎপাদন আর বাকি সব কিছু টাকার হাত-বদল সেটা সঠিক না। সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি ভ্যালু অ্যাড করে প্রচলিত পদ্ধতির ওপর। শুধু ভ্যালু অ্যাড করেই বেঁচেবর্তে আছে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি - নিকট ভবিষ্যতে তার পতনের কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না। আমেরিকায় অসংখ্য মনোপলি ব্যাঙের ছাতার মত আসছে যাচ্ছে যারা ভ্যালু অ্যাড না করেই (বা স্বল্প ভ্যালু অ্যাড করে) শুধুই টাকা আয় করে যাচ্ছে। স্টিগলিজ এদের বলছেন রেন্ট-সিকিং কোম্পানী। ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতিতে একসময়ে এদের উত্থান অনিবার্য। এদের দাপট অব্যাহত থাকলে অর্থনীতি টিঁকবে না। এইটা আমার দু-পয়সা, পরে বিস্তারে পোস্ট দিতে পারি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

"দিস ইজ হোয়ার আই লিভ ইউ" উপন্যাসের মূল পুরুষ চরিত্রটিকে প্রথমে খুব দুর্বল মনে হয়েছিল।
তারপর তার অসহায়ত্ব বিবেচনা করে, আবার নতুন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে না যেয়ে, পুরনো প্রিয় মানুষটিকে ক্ষমা করে দিয়ে, নতুন আশায় সংসার বাঁধার বিষয়টি ভাল লেগেছিল।

-- জ্যোতিস্কর দাদু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।