মানবাধিকার : লন্ডনের কিস্সা,বাংলাদেশের বাস্তবতা

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০২/২০০৯ - ১২:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথা হচ্ছিল মানবাধিকার নিয়ে। বিলাত-ফেরত প্রৌঢ় ডাক্তার সাহেবের কথাই আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। আমাদের কাছে যারা মানবাধিকারের রোল-মডেল হিসেবে পরিচিত তাদের মানবাধিকার চর্চা এমন এক যায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, সেটাই এখন গলায় ফাঁস হওয়ার উপক্রম। রাত তিনটায় ফাঁকা রাস্তায় লাল সিগনাল দেখে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির আইন মানার মত উদাহরণ প্রায়ই আমরা দেই কিন্তু আজকাল পাশ্চাত্যেও এতটা বাধ্যবাধকতাকে বাঁকা চোখে দেখছে অনেকে, অনাবশ্যকও মনে করছে। মাঝে মাঝে আইনের এমন ছোটখাট ব্যত্যয় হলে ক্ষতি কি !! লন্ডনে এক প্যালেস্টাইনি রিফুজি পরিবারকে মহা সমাদরে সরকারি খরচে বসবাসের ব্যবস্থা করার পর শোরগোল উঠলো চারদিকে। মাসপ্রতি প্রায় ৫০০০ পাউন্ড খরচ করে বিলাস বহুল বাড়িতে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠলো, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এহেন পরোপকারের ক্ষমতা সরকারকে কে দিয়েছে? আচ্ছা তাও না হয় মানা গেল, তাই বলে রীতিমত জামাই আদরে রাখতে হবে তাদের ? হোয়াট দ্য হেল ইয গভর্নমেন্ট ডুইং ? বিতর্ক হলো হাউস অব কমন্স-এ। অবশেষে পিছু হটতে হল সরকারকে। প্যালেস্টানি সেই পরিবারকে ঠাঁই নিতে হল সাধারণ ফ্লাটে, রবাদ্দ কমানো হল। আজকাল পূর্ব ইউরোপসহ ইউরোপের অনেক দেশ থেকে অভিবাসী হচ্ছে ইংল্যান্ডে। সামাজিক সুরক্ষা ও মানবাধিকার সংরক্ষণের নির্ভরতাই নাকি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে সেদিকে পাড়ি জমাতে। এক জর্মান পরিবার চার সন্তানসহ অভিবাসী হয়েছে ইংল্যান্ডে কারণ তার চার সন্তানের পড়ালেখা ও স্বাস্থ্য সেবার যাবতীয় দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র। এতটা নিশ্চয়তা অনেক দেশই দেয় না। তবে একটা পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা সরকার বহন করে। কিন্তু এতটা সামাজিক নিশ্চয়তা মানুষকে পরিশ্রম বিমুখ করতে পারে এমন উদাহরণও আছে প্রচুর। একবার শুনেছিলাম বাংলাদেশি অনেক পরিবার বংশ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে শুধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে ভাতা বাড়ানোর জন্য। সরকারের ভাতা নিচ্ছে আবার ছিনতাই-চুরি-ডাকাতিও করে যাচ্ছে এমন মানুষও কম নয়। কারণ কি ? কারণ তুমি যে মডেলের গাড়ি চালাও তেমন গাড়ি আমারও চাই। আমার গাড়িটা একেবারেই ওল্ড মডেলের। মানবাধিকার সম্পর্কে রাষ্ট্র এতটাই সচেতন যে, নিগারকে ‘নিগার‘ বলা মারাত্মক অপরাধ। ভুল করে কেউ বলে ফেললেও রক্ষা নেই। ওটা এখন বাংলাদেশের ‘রাজাকার’ শব্দের মতই গালির পর্যায়ভুক্ত। কিন্তু জাতিবাচক ‘নিগ্রো’ শব্দটিকে এমনভাবে পতিত হতে দিল কেন কালোরা সেটা আমি আজো মানতে পারি না। ‘বাঙালি’ শব্দটি নিন্দার্থে বা গালি হিসেবে ব্যবহৃত হলে আমরা কি মেনে নেব?

ডাক্তার সাহেবের ক্লিনিকে একবার চুরি হলো। যথারীতি পুলিশ এলো, তদন্ত হলো। কিন্তু পুলিশ পরামর্শ দিলো, ক্লিনিকের চার পাশের দেয়াল উঁচু করে তাতে কাঁটাতারের বেড়া দিতে। ডাক্তার সাহেবতো রেগেমেগে আগুন- তোমরা চোর ধরার সুরাহা করতে পারছো না অথচ আমাকে বলছো হাসপাতালটাকে জেলখানা বানাতে ? শেষমেশ চোর ধরা পড়লো বটে কিন্তু ফল হলো ভিন্নরকম, কারণ চোরের জন্য রাষ্ট্রের মানবাধিকারবোধ জেগে উঠলো। তাকে পাঠানো হল, শুদ্ধিকেন্দ্রে। তাকে মানসিক ডাক্তারের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করিয়ে সৎপথে ফেরানো হবে। সাধু.... সাধু । এ না হলে উন্নত বিশ্ব, উন্নত দেশ, সভ্য জগত। এবার ভাবি , আমরা কোথায় আছি ? মানবাধিকার নিয়ে আমাদের দেশে নানা মহলে নানা আলোচনা, সুধিসমাজ সভা-সেমিনার করতে করতে হয়রান। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে নিন্দাপ্রকাশ । জাতিসংঘের উদ্বেগ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দৌড়-ঝাঁপ। সবই আমরা দেখছি। মানবাধিকারের মৌলিক বিষয়গুলোই যেখানে আমাদের দেশে সুদূরপরাহত সেখানে ‘চোর পিটিয়ে জেলে যাওয়া’র মত মানবাধিকার চর্চা কতটুকু মানানসই তা ভেবে দেখার বিষয় নয় কি? অর্থাৎ মানবাধিকার কতটুকু পর্যন্ত গৃহিত হলে আমাদের দেশের মত দরিদ্র- অর্ধশিক্ষিত-অপরাধপ্রবণ দেশের সামাজিক সুরক্ষা হবে তার সীমারেখা বোধহয় টানা উচিত। একটা উদাহরণ দেই-
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সারাদেশের হাট-বাজার উচ্ছেদ করে দরিদ্র মানুষকে পথে বসিয়েছে, একারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এমন অভিযোগ বেশ জোরেশোরে উঠছে এখন। আমাদের মনে আছে, বিভিন্ন সময় হকার ও বস্তি উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়েছে। একবার তো হাইকোর্টের নির্দেশে বস্তি উচ্ছেদ করার সূত্র ধরে রসিক আইনজীবী বা মানবাধিকার নেতৃবৃন্দের ইন্ধনে উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসীরা হাইকোর্টের মাঠে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু হাট-বাজারগুলো যদি নানা অবৈধ পন্থায় জমি দখলের মাধ্যমে হয়ে থাকে ( এবং আমরা জানি অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে থাকে) তাহলে আইনের শাসন থাকবে নাকি মানবাধিকার থাকবে এ প্রশ্ন কি করা যায় না? কিংবা বস্তি উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও যদি এমন কারণ থাকে সেক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন ওঠা কি স্বাভাবিক নয় ? রাস্তা বা ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন আসে, পথচারী বা নগরবাসীর জন্য কি তাহলে অধিকার রক্ষিত হবে না ? জনসংখ্যার বিপুল চাপে বিপর্যস্ত ঢাকা মহানগর আবর্জনা, অপরাধ আর যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগের উৎসব থেকে কখনও রক্ষা পাবে না যদি-না কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকারের রাশ টেনে ধরা হয়। সারা ঢাকা শহর রাস্তা-পার্ক-মাঠ-অলিগলি সবকিছুই হাট-বাজার-পণ্যের পসরায় ভরে গেছে। যানজটের অন্যতম কারণ বলেও এটিকে সনাক্ত করা হয়েছে ইতোমধ্যে কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কায়। যতবারই এসব ব্যপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ততবারই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে আগে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার। এভাবে সংগঠিত আন্দোলনের মাধ্যমে ফুটপাতের হকাররা পেয়েছে একাধিক হকার্স মার্কেট। খোদ ঢাকার কেন্দ্রে একের পর এক গড়ে উঠেছে এসব মার্কেট, বন্ধ হয়েছে নিঃশ্বাস নেয়ার মত উন্মুক্ত জায়গা। অবশ্য এসব মার্কেটের কোনটাই কথিত অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠেনি। ঢাকার বড় বড় রাস্তা থেকে রিকশা তুলে দেয়ার একাধিক উদ্যোগ একই কারণে ভেস্তে গেছে কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে আমরা কোনটাকে প্রাধান্য দেব ? জনগণের স্বস্তি নাকি কিছু লোকের মানবাধিকার ? প্রশ্ন উঠেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে; ইঙ্গিতটি যে র‌্যাব কর্তৃক বহুল আলোচিত ক্রস ফায়ারের দিকে তা স্পষ্ট। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তো সন্ত্রাসীদের দ্বারাও সংগঠিত হচ্ছে হরহামেশা। সন্ত্রাসীদের কাছে মানবাধিকারের বুলি অর্থহীন। সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা কতটুকু পায় তা আমরা জানি। তাহলে গুটিকয় অপরাধীর মানবাধিকার স্থগিত করেও যদি ব্যপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে আমরা কোনটাকে বেছে নেব ? জানি, এমন কথা বলা শোভন নয়, যথোচিতও নয়। কিন্তু আমরা কি একটি যথার্থ সমাজে বেড়ে উঠতে পারছি ? ইউরোপ বা আমেরিকাও একসময় মাৎসন্যায়ের সমাজ দেখেছে। সেই প্রজন্মের ওপর ভর দিয়েই আজ তারা মানবাধিকারের ধ্বজা তুলে বিশ্ববাসীকে নসিহত করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে থাকবে। সেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় ‘নির্যাতন’ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী

( পরি-১,ধারা-১ : ‘নির্যাতন’ শব্দটির অর্থ যে কোন কাজ যা দৈহিক বা মানসিক ব্যথা বা দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে এবং যা অন্য কোন মানুষ বা তৃতীয় কারো কাছ থেকে কোন তথ্য বের করার কাজে বা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয় ; নির্যাতিত ব্যক্তি বা তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে কোন অপরাধ করে থাকলে বা করেছে বলে সন্দেহবশত শাস্তি প্রদান করা হলে ; অথবা ভয় দেখানোর জন্য বা মানবিক আতংক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে, সম্মাতিক্রমে বা অন্য কোন পন্থায় এ ধরণের যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নির্যাতন যে কোন যুক্তিতে বা যে কোন ধরণের বৈষম্যের কারণে চাপিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য আইনগতভাবে কার্যকর কোন দণ্ডজনিত যন্ত্রণা বা দুর্ভোগ এর আওতায় পড়বে না। )
আচরণ করতে গেলে আমাদের সর্বক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত এই দেশ থেকে অন্যায়-অব্যবস্থা-অপরাধ দূর করা স্বপ্নই থেকে যাবে। আবার মানবাধিকারের ধ্বজা না তুলে ধরলে নিজেকে সভ্য মানুষই বা বলি কি করে?

বিলেত-প্রবাসী ডাক্তার সাহেবের কথায় কিছুক্ষণ পরপরই উষ্মা প্রকাশ পাচ্ছিল- “আমার কষ্টের কামাই থেকে অর্ধেক টাকা তুমি ট্যাক্স হিসেবে কেটে রাখ কি মানবাধিকারের নামে এইসব পরগাছা-আগাছার গুষ্টি উদ্ধারের জন্য ? তা না হলে আমি তো আরো একটু ভালো থাকতে পারতাম ! ” তার কথায় আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাই, কার মানবাধিকার রক্ষিত হল আর কার লঙ্ঘিত হল ভেবে পাই না।


মন্তব্য

সোয়াদ [অতিথি] এর ছবি

"একবার শুনেছিলাম বাংলাদেশি অনেক পরিবার বংশ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে শুধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে ভাতা বাড়ানোর জন্য" - তো দোষ কার হলো? সরকারের না পরিবারগুলোর?

"মানবাধিকার সম্পর্কে রাষ্ট্র এতটাই সচেতন যে, নিগারকে ‘নিগার‘ বলা মারাত্মক অপরাধ। ভুল করে কেউ বলে ফেললেও রক্ষা নেই"
- নিগার / নিগ্রো শব্দটি বর্ণবাদীদের বহুল ব্যবহারের ফলে বর্ণবাদের সাথে এতো জড়িয়ে গেছে য়ে একে শুধু জাতিবাচক হিশেবে দেখা অসম্ভব। যাকে "ব্ল্যাক" বলে বর্ণনা করা য়ায তাকে "নিগার" বলার কারণ বর্ণবাদ ছাড়া আর কিছুই না। (বর্তমানে "রেড ইন্ডিয়ান" শব্দটি "নিগার" এর মতোই আপত্তিকর, বদলে "ফার্স্ট নেশন" ব্যবহৃত হয় বলে শুনেছি)।

"কিন্তু জাতিবাচক ‘নিগ্রো’ শব্দটিকে এমনভাবে পতিত হতে দিল কেন কালোরা সেটা আমি আজো মানতে পারি না"- মানে বুঝলাম না। এখানে কালোদের কি দোষ আপনি দেখলেন? বরং কালোরাই "নিগার" শব্দটিকে ক্রমশ নখদন্তহীন করে ফেলছে একে অন্যকে "নিগার" বলে বলে। (একই কথা প্রযোজ্য "ফ্যাগ" শব্দটির ক্ষেত্রে)।

"শেষমেশ চোর ধরা পড়লো বটে কিন্তু ফল হলো ভিন্নরকম, কারণ চোরের জন্য রাষ্ট্রের মানবাধিকারবোধ জেগে উঠলো। তাকে পাঠানো হল, শুদ্ধিকেন্দ্রে।" - অপরাধের অভিয়োগ পেয়ে অপরাধীকে ধরাটা ভুক্তভোগীর মানবাধিকারের যথেষ্ট সংরক্ষন নয়? অপরাধীর শাস্তি কি হবে সে সিদ্ধান্ত রাস্ট্রের হাতে ছেড়ে দেয়াই তো ভালো। যদি শুদ্ধিকেন্দ্রে গিয়ে কেউ শুদ্ধ হতে পারে তো ক্ষতি কী? শুদ্ধিকেন্দ্র মানে তো এ হবার কথা নয় যে অপরাধী জামাই আদরে কাউন্সিলিং গ্রহন করবে; অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী জেল, জরিমানা, কমিউনিটি সার্ভিস এসবের ব্যবস্থাও তো থাকার কথা। বিস্তারিত জানাবেন।

"জনগণের স্বস্তি নাকি কিছু লোকের মানবাধিকার" - বাঙলাদেশের প্রেক্ষিতে আপনার বলা কথা গুলো নিয়ে কিছু বলি: সরকারকে করতে হবে দুটোই- নগর পরিকল্পনাতা যেমন ভালোভাবে করতে হবে তেমন নিশ্চিত করতে হবে বাসস্থানহীন নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক চাহিদাটির পুর্তি।

"ড়্যাব" ‌ এর বিপক্ষে পুরোনো য়ুক্তিটাই দেই- বিচার বহির্ভুত হত্যা হলে আমরা জানছি কিভাবে যে নিহত ব্যাক্তি দোষী না নির্দোষ ছিলেন? "ড়্যাব" যদি প্রমান সাপেক্ষে জেনেই থাকে য়ে অমুক সত্যই অপরাধী তো বিচার করলেই হয়। কথা প্রসঙ্গে বলি- কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে তে বিনা বিচারে মানুষকে আটকে রাখা ও তাদের ওপর অত্যাচার করার পক্ষেও কিন্তু একই ধরণের য়ুক্তি দেয়া হতো।

বাঙলাদেশের আর্থ‌-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্য়ন্ত কিছু লোক মানবাধিকার পাবে আর কিছু পাবে না এই যুক্তি হাস্যকর। ইউরোপ বা আমেরিকার অতীত যতো ভয়াবহই হোক, আমাদের মনে রাখতে হবে সে অতীত আমাদের সামনে উপস্থিত উদাহরণ হিসেবে, অনতিক্রম্য ধাপ হিসেবে নয়।

এর পরিবর্তন নিজেরা করতে না পারলে অন্য কোনো দেশের কাছে দেশের মাটি কাঠা হিসেবে বিক্রি করে দেয়াই উত্তম।

“আমার কষ্টের কামাই থেকে অর্ধেক টাকা তুমি ট্যাক্স হিসেবে কেটে রাখ কি মানবাধিকারের নামে এইসব পরগাছা-আগাছার গুষ্টি উদ্ধারের জন্য ? তা না হলে আমি তো আরো একটু ভালো থাকতে পারতাম ! " - এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমি কানাডায় থাকি এবং ফ্যাক্টরীতে কাজ করি। এখানে বাঙালীদের মুখে এমন কথা হরদম শুনছি। ট্যাক্সের টাকার সুবিধা যে শুধু অন্যে পায় না এটা বাঙালী কবে বুঝবে কে জানে।

জামিল, টরন্টো

মাহবুবুল হক এর ছবি

কথাগুলো আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেই লিখেছি। লন্ডনের প্রেক্ষিতে নয়। আপনি বাংলাদেশের বাস্তবতা যদি ভুলে গিয়ে না থাকেন তাহলে নিশ্চই মানবেন 'আইন না-মানার' এই অভয়ারণ্যে মানবাধিকারের যুক্তি দিয়ে আশপাশের অনেক অধিকারকেই খর্ব করা হচ্ছে। নগরবাসীর এমন দুএকটা দুর্ভোগের উদাহরণ আমি দিয়েছি।

আমি কানাডায় থাকি এবং ফ্যাক্টরীতে কাজ করি। এখানে বাঙালীদের মুখে এমন কথা হরদম শুনছি। ট্যাক্সের টাকার সুবিধা যে শুধু অন্যে পায় না এটা বাঙালী কবে বুঝবে কে জানে।

আমি চারবছর দেশের বাইরে ছিলাম। কেবল বাঙালি নয়, নেটিভদের মুখেও এমন কথা হর হামেশাই শুনেছি। ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রে তারা অনেক সচেতন ঠিকই তবে আপনি নিশ্চই জানে, হাসিহাসি মুখে সেটা কোন দেশের জনগণই দেয় না। ট্যাক্সের পয়সার চুলচেরা হিসাব নিতে তারা অভ্যস্ত।

"
কিন্তু জাতিবাচক ‘নিগ্রো’ শব্দটিকে এমনভাবে পতিত হতে দিল কেন কালোরা সেটা আমি আজো মানতে পারি না"- মানে বুঝলাম না। এখানে কালোদের কি দোষ আপনি দেখলেন?

কালোদের দোষ নয়। আমি বলতে চাচ্ছিলাম, নিগ্রো শব্দটি জাতিবাচক। কিন্তু এটির অর্থের এমন পতন কেন হল ? বাঙালি শব্দটিরও যদি এমন পতন হয় আমাদের কি ভালো লাগবে ? 'বাঙালি' উচ্চারণ করে গাল দেয়া বা কোন অপবাদ জুড়ে দেয়ার সর্বনাশা চর্চা আমরা অনেক সময় করি। আমি এমন আত্মবিধ্বংসী চর্চার ঘোর বিরোধী।
.................................................................................................................

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।