আমার হল না যাওয়া- তেমন সুদূরে

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: শুক্র, ১০/০৯/২০১০ - ২:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈদের তিনচার দিন আগ থেকেই চ্যানেলগুলোতে দিনরাত যে সংবাদটি প্রচার হতে থাকে তা হল বাস-ট্রেন-লঞ্চে উপচে পড়া মানুষের ভীড়। সবাই ঢাকা ছাড়ছে। যে যেভাবে পারছে। উদ্দেশ্য বাড়িতে প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন। চ্যানেলগুলোতে সংবাদ পরিবেশনের অপরিপক্কতা আর দৈন্য ছাপিয়ে যে সত্য প্রতিফলিত হয় তা হল- সবাই চায় বাড়িতে ঈদ করতে। আমি এই সীমাহীন দুর্ভোগের পৌনপুনিক পরিবেশনে বিপন্ন বোধ করি। এভাবে ঘরে ফেরার উত্তেজনা আমার কখনো হল না বলে হতাশ হই না, তবে তীব্র এক আনন্দের দিকে ছুটে যাওয়া মানুষগুলোর চোখমুখ থেকে ঠিকরে পড়া শিহরণ টের পাই, উপলব্ধির চেষ্টা করি কখনো কখনো, অজানা আনন্দের চিত্রকল্পে নিজেকেও যুক্ত করি। তবু কোন এক অপারগতা আমাকে ছিটকে ফেলে কবন্ধ-নাগরিকতার আস্তাকুঁড় ঢাকা শহরের কালো রাস্তায়, ইট-সুড়কির বস্তিতে, ধোঁয়া-ধুলা-দূষণের বাতাসে। স্বার্থপরের মত জনান্তিকে উচ্চারণ করি- এবার একটু নিঃশ্বাস নেয়া যাবে, হাঁটা যাবে ফুটপাতে, গন্তব্যে যাওয়া যাবে নির্দিষ্ট সময়ে । প্রতি ঈদে ঘরে ফেরার এ দৃশ্যে আমার স্মৃতি খানিকটা আলোড়িত হয়, মনে পড়ে খুব ছোটবেলায় দু-একবার ট্রেনে চড়ে আমার আম্মার নানাবাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার আবছা স্মৃতি। ব্যস ওই পর্যন্তই। প্রথম ট্রেনে চড়ার আনন্দ, প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে নানার কোটের পকেট থেকে টাকা-পয়সা পকেটমার হওয়া, সমস্ত মালপত্র চুরি যাওয়া এবং অবশেষে নতুন কাপড় ছাড়াই ঈদ- এটুকুই শুধু মনে পড়ে। এ ছাড়া সেই স্মৃতি থেকে তেমন কিছুই উদ্ধার করতে পারি না।

ছোটবেলার ঈদ বলতে মনে পড়ে রেলওয়ের মাঠে মেলা, রেললাইনে যাওয়ার স্বাধীনতা, রিকশায় চড়ে এদিকে ওদিকে যাওয়া, লোহার ছাচেঁ বানানো কুলফি খাওয়ার কথা । পাড়ার মামারা আদর করে এটা ওটা কিনে দিতেন সেটাও আনন্দের বড় উপলক্ষ ছিল। আরো কত স্মৃতি। তখনো মানুষ বাড়ি যেত ঈদ করতে এখনও যায়। শুধু 'উড়ে গেল হাওয়া,আমার হল না যাওয়া- তেমন সুদূরে'।

তারপরও ভাবি, পনর কোটি মানুষের দেশে ঈদ কি শুধু ঢাকা শহর ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোই করে ? আমার মত যারা তারা কি ঈদ করে না ? ঢাকা থেকে যারা চট্টগ্রাম যায় তারাই শুধু ঈদ করে, চট্টগ্রামের মানুষ কি ঈদ করে না ? এ প্রশ্ন কাকে করছি? চ্যানেলগুলোর হয়রান রিপোর্টারদেরকে নাকি আমার ভাগ্যকে ?


মন্তব্য

হরফ এর ছবি

ঈদ মোবারক। প্রশ্ন হল আপনি ঢাকায় নিজের বাসায় ঈদ উপভোগ করেন কিনা? যদি করেন তাহলে তো এর ওপর আর কথাই চলে না। আমি যতদিন কলকাতায় বসবাস করেছি ভাবতেই পারতাম না, নিজের পাড়া ছেড়ে/কলকাতা ছেড়ে পূজোয় বেড়াতে যাওয়ার কথা। মা-বাবার খুব ইচ্ছে থাকলেও পূজোয় কখনো বেড়াতে যেতে পারেন নি আমাদের আব্দারে। আমাদের পাড়ার অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পুজো আর পাড়ার হইচই-ই ছিল আমার কাছে "হামিন অস্ত" পূজোর দিনে, এখনো তাই আছে। থাকতে পারিনা বলে হাড়ে হাড়ে টের পাই প্রতি বছর। আপনার ঈদ ভাল কাটুক।

------------------------------------------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

মাহবুবুল হক এর ছবি

আনন্দতো অবশ্যই পাই। কারণ আমি তো প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন নই। তবে কিনা বারবার অসংখ্যবার সেই একই খবর গিলতে গিলতে মনে হয় এ আনন্দ মেকী, আসল আনন্দ বোধ হয় যারা বাড়ি ফিরছে তাদের। একটু শিশুসুলভ চিন্তা হয়ে যায় কিন্তু কি আর করা আমাদের উর্বর মস্তিষ্কের চ্যানেলগুলো তো ছাড়ছে না। আজকেও ঘন্টায় ঘন্টায় একই নিউজ দিচ্ছে।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

তিথীডোর এর ছবি

চোখ বুলাতে শুরু করার আগেই তো শেষ হয়ে গেল... অ্যাঁ
ঈদ শুভেচ্ছা!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

বাউলিয়ানা এর ছবি

হে হে...ঈদে কোথাও যাইতেই হবে এমন কথা নেই। আমিও বহু বছর নাড়ি ছেড়া। যেখানেই থাকিনা কেন, ঈদের আনন্দটা সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চেষ্টা করি।

ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

দরকারি প্রশ্ন উত্থাপন করসেন।

ঈদ আসলে আমাদের সকল প্রকার 'গ্রাম্যতা'র প্রকাশ ঘটে। 'গ্রাম্যতা' - শব্দটার ভালো খারাপ সম্ভাব্য সকল অর্থে। টেলেভিশনের ছ্যাবলামি নিয়া নতুন কইরা কী বলব মন খারাপ


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।