রঙ্গীন দুনিয়া # ৩

অভ্রনীল এর ছবি
লিখেছেন অভ্রনীল (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৯/২০০৮ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাসি কয় ধরনের? বাঙ্গালী হিসেবে আমি মাত্র চার ধরনের হাসি জানতাম – লাজুক হাসি, মুচকি হাসি, অট্টহাসি আর বাঁকা হাসি। (এর মধ্যে আবার চার নম্বরটা কেবল শুনেই এসেছি কখনো দেখলাম না!) এর বাইরে কি হাসি হয়না? হয় হয়, না হলে হাসি নিয়ে এই বেলা হাঁসফাঁস করতামনা। ইউরোপে পুরো সমাজ ব্যবস্থাটা চলে হাসি’র উপর। গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে পাশের গাড়িতে লেগে গেল তাহলে দিতে হবে অপরাধবোধ হাসি। এলিভেটরে কারো সাথে দেখা হলে আসবে সৌজন্যমূলক হাসি। ব্যাঙ্কে গেলে রিসিপশনের মানুষটি দিবে সম্ভাষনসূচক হাসি, এর উত্তরে তখন প্রত্যুত্তরমূলক হাসি দেবার নিয়ম। এভাবে আরো আছে অনুরোধমূলক হাসি, ভদ্রতামূলক হাসি, অনুযোগমূলক হাসি, অবুঝ হাসি, বঞ্চনামূলক হাসি, ভুল শোধরানোর হাসি, অপরাধমূলোক হাসি, ভয়ের হাসি (যদিও এই হাসি আমি কখনো দেখি নাই), সম্মানসূচক হাসি, দুঃখমূলক হাসি, ভালোবাসার হাসি (এখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি), এমনি এমনি হাসি; আরো কত ধরনের হাসি! এখনো সব খুঁজে বের করতে পারিনি। তবে এমন অনেকে আছে হাসতে হাসতে যাদের মুখের কাটিংটাই পারমানেন্টটলি হাসি হাসি হয়ে গেছে। এই প্রজাতির হাসিগুলো হয় বেশ বিভ্রান্তিমূলক। কারন এরা মুখ সামান্য ফাঁক করলেই মনে হয় এরা হাসি দিচ্ছে, হাসিটা কোন ক্যাটাগরির সেটা সহজে বোঝা যায়না।

নেদারল্যান্ডসে একটা প্রবাদ আছে “Be aware of four Ws: Wine, Wealth, Women and Weather!”. এখানকার আবহাওয়াকে মোটেই বিশ্বাস করা যায়না। এই হয়তো ফক্‌ফকা নীল আকাশ, হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই পুরো আকাশ কালো হয়ে ঝপ করে বৃষ্টি নেমে গেল। পুরো ব্যপারটা হয়তো বড়জোড় তিন মিনিটে ঘটে গেল! এর কিছুক্ষণ পরই আকাশ আবার পরিষ্কার। তবে আকাশ যখন পরিষ্কার থাকে তখন পুরোপুরি নীল আকাশ। নীল আকাশ তার মাঝে সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। ঢাকায় শেষ কবে নীল আকাশ দেখেছি মনে করতে পারিনা, দেশ ছেড়ে আসার আগেও যে আকাশ দেখে এসেছিলাম সেটা ছিল ধোঁয়া আর ধূলায় ঢাকা ছাই-রঙ্গা ম্যাটম্যাটে একটা আকাশ। বিকেল হলেই দেখা যায় ঝাঁক বেঁধে পাখিরা সব নীড়ে ফিরছে। এখানে বক, হাঁস আর গাংচিলই বেশি চোখে পড়ে। কাকও যে নাই তা না, কাক আছে তবে এদের সাইজ ঢাকার কাকের সাইজের প্রায় অর্ধেক। আমাদের দেশের ডাহুকের মত দেখতে এক ধরনের পাখি দেখা যায় আর দেখা যায় টিয়া পাখি। বিকেল হলেই কোত্থেকে যেন শত শত টিয়া পাখি গাছগুলোতে এসে ভীড় জমায়। ঢাকায় কখনো এমন দেখেছি বলে মনে পড়েনা।

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় নেদারল্যান্ডস অনেকটা সমতল। ফলে দেখা যায় এখানকার বেশিরভাগ (অথবা সবাই) মানুষই সাইকেল ব্যবহার করে। এই দেশের প্রত্যেকটা রাস্তায় সাইকেলের জন্য আলাদা আলাদা লেইন আছে। এরা আবার সাইকেলকে বলে “ফিয়েটস”। সাইকেলের রাস্তাগুলো এত চমৎকার যে কেউ ইচ্ছে করলেই বেশ সহজেই সাইকেল নিয়ে পুরো নেদারল্যান্ডস ঘুরে আসতে পারে। এদের ট্রেন স্টেশনগুলোতে সাইকেল পার্ক করার আলাদা জায়গা আছে। সে সব জায়গায় দশ-বিশটা না, শত শত সাইকেল পার্ক করা থাকে। অনেক সময়ই দেখা যায় যে সাইকেলের সংখ্যা পার্কিং প্লেস ছাড়িয়ে পাশের রাস্তায় গিয়ে পড়ে!

বাংলাদেশে সম্ভবত দামের দিক থেকে সবচেয়ে সস্তা (মানের দিক দিয়েও মনে হয়) খবরের কাগজ মনে হয় “আমাদের সময়”। যতদূর মনে পড়ে এর দাম ছিল দুই টাকা। আমার এক কলিগ প্রায়ই বাসের সীট পরিস্কার করার জন্য এই পেপার খানা কিনত! অন্যদিকে “প্রথম আলো” বা এই টাইপের কাগজগুলো কিছুদিন পর পরই তাদের দাম বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু এইখানে নেদারল্যান্ডস-এ কাহিনী পুরোপুরি ভিন্ন। স্টেশনে প্রথমবার যখন গেলাম, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি, সময় আর কাটেনা। দেখি পাশে একটা স্ট্যান্ডে অনেকগুলো পেপার পড়ে আছে। কিন্তু পেপার কিনে দাম দেবার কোন ব্যবস্থা চোখে পড়লনা (অবশ্য টাকা খরচ করে পেপার কিনার ইচ্ছাও নাই)। বাংলাদেশে হলে একটা তুলে নিতাম, পরে যা হবার হত। কিন্তু এইখানে এইসব করে ধরা পড়লে বহুত হ্যাপা। চুপচাপ বসে আছি, এমন সময় দেখি একজন এসে একটা পেপার তুলে নিল। কী আজব কোন কিছু পে করলনা। কিছুটা অবাক হলাম। দেখলাম আরো কয়েকজন এসে একইভাবে তুলে নিল কয়েকটা কিন্তু কেউই কোন দাম দিলোনা। বাঙ্গালী নাদান মানুষ আমি। ততক্ষনে আমিও একটা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম একটা। নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিলো যেন এখনই কেউ এসে দাম দিয়ে পেপার না নেবার জন্য ফাইন করে বসবে। নাহ্‌ তেমন কিছুই হলনা। ব্যাপারটা ধরতে একটু সময় লাগলো। নাদান বলে এই সময়টুকু লাগলো, নাহলে আরো আগেই বুঝতে পারতাম। এইখানে খবরের কাগজ একেবারে ফ্রী! পেপার স্ট্যান্ডে পেপার থাকে, যার খুশি যেটা খুশি সেটা নিয়ে যায়। এ্যাডভারটাইসিং থেকে এদের সব খরচ উঠে যায় বলে এরা পেপারের কোন দাম রাখেনা। বাংলাদেশে একেকটা পেপারে যেই এ্যাড থাকে আমার মনে হয় এরাও ইচ্ছা করলে ফ্রী না হোক অন্তত আরো কম দামে দিতে পারে।

ডাচ জাতি কুত্তা নিয়ে তাফালিং করতে বেশ পছন্দ করে। এদের ঘরে মা, বাবা, ভাই, বোন, বউ, স্বামী, বাচ্চা না থাকলেও একটা কুকুর বা বিড়াল অবশ্যই থাকবে। এরা জীবন দিয়ে নিজের কুকুরকে ভালবাসে। বিড়াল-কুকুরের জন্য এরা যেই বিছানাপত্র ব্যবহার করে আমাদের দেশে অবস্থাপন্ন লোকজনও তাদের বাচ্চা কাচ্চার জন্য সেটা ব্যবহার করেনা। এদের মধ্যে যারা বড়লোক, তারা আবার কুকুরের জন্য আলাদা বাড়ি তৈরি করে। এদের লজিক হচ্ছে – বড় হলে বাচ্চারা চলে যাবে কিন্তু কুকুর কখনোই যাবেনা। এমনও দেখা গেছে যে আনন্দে কুকুর মালিকের গাল চাটছে আবার মালিকও কুকুরের গাল চাটছে! কিছু কিছু কুকুরের সাইজ এত ছোট যে আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে এরা মালিককে পাহারা দেয় নাকি মালিক এদের পাহারা দেয়!

যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন কৃষ্ণাংগদের উপর একটা আলাদা মায়া কাজ করত। সবখানেই পড়তাম যে এরা নিগৃহিত নিপীড়িত। আমার এই মায়া পুরোপুরি ঘৃনায় পালটে যায় যখন আমি আইইউটিতে পড়ি। এদের মধ্যে এখনো এক ধরনের হিংস্রভাব কাজ করে। যখন দু’জন আফ্রিকান কথা বলত মনে হত যেন তারা দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি করছে! এরা অত্যন্ত অভদ্র আর মারামারিতে এদের বিকল্প কিছু নেই। সেই থেকে আমি আফ্রিকান মানুষ দেখলে দূরে থাকি। নেদারল্যান্ডসে এসেও দেখি, এই জাতিএ আচরনে কোন পরিবর্তন নাই। বাড়তি ব্যাপার হল, এরা সম্ভবত সবাই নিজেকে এক একজন র্যারপার ভাবে। কথা আর হাতপা ছোঁড়াছুড়ি দেখলে মনে হয় এরা সবাই র্যা প করতে করতে ঝগড়া করছে! এখানকার যত বেআইনী কাজ আছে সব এরা করে। এদের বেশিরভাগকেই দেখা যায় বেন্টলী বা ল্যাম্বারগিনি হাঁকাতে। সেই সাথে এরা প্রচুর গহনা পড়ে, সেটা ছেলে হক বা মেয়েই হোক। অনেকে আবার গহনা পড়ার জন্য দাঁতকে বেছে নেয়। যারা দাঁতকে বেছে নেয় তারা খামাখা পুরা দাঁতকে সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে ফেলে। এই ক্ষেত্রে তারা একটা দুটা দাঁত না বাধিয়ে পুরো এক পাটি দাঁত বাধিয়ে ফেলে। সেই সোনায় আবার কারুকাজ করা থাকে। হাসি দিলেই পুরা নিখাঁদ সোনার ঝিলিক!

গত উইকেন্ডে গিয়েছিলাম “বারলেনাসু”তে। বারলেনাসু একটা শহর যার উপর দিয়ে নেদারল্যান্ডস আর বেলজিয়ামের বর্ডার চলে গিয়েছে। হেগ থেকে প্রায় দেড় ঘন্টার ড্রাইভ। এই শহরের সব কিছুই দুইটা করে- পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল মায় মিউনিসিপ্যাল ও। বারলেনাসুতে আমার সঙ্গী ছিলো মামা আর খালামনির প্রতিবেশী পরিবার জুয়ায়ের-এনেকা। কিছু কিছু লোক আছে যাদেরকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়, জুয়ায়ের-এনেকা ঠিক সেরকম লোক। বারলেনাসুতে পৌঁছানোর পর এনেকা দৌড় দিলো মার্কেটিং করতে, মেয়েদের যেই স্বভাব আরকি! তারুপর আবার বেলজিয়ামে জিনিসপত্রের দাম আবার কম। আর এদিকে জুয়ায়ের আমার মত নাদান পেয়ে পুরোদস্তুর গাইড বনে গেল। পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখাতে লাওগলো ও। ওর কাছেই শুনলাম, এইখানে কেউ যদি এ্যাক্সিডেন্ট করে বর্ডার লাইনের উপর পড়ে তাহলে নাকি দুই দেশের কোন পুলিশ বা হাসপাতালই এগিয়ে আসবেনা। এইখানে এমন সব বাড়ি আছে যাদের একটা দরজা পড়েছে নেদারল্যান্ডসে আরেকটা বেলজিয়ামে! নীচে দুইটা ছবিও দিয়ে দিলাম। প্রথমটাতে দেখা যাচ্ছে বর্ডার লাইন গেছে ফুটপাথের উপর দিয়ে। দ্বিতীয়টা আরো মজার, এইবার বর্ডার গেছে একটা কফি শপের ভেতর দিয়ে!

auto

auto

একটু আগে খবর পেলাম কালকে ঈদ। সকাল ১০টায় ঈদের জামাত। জীবনে এই প্রথম ঈদের জন্য দুঃখ লাগছে। দেশ ছেড়ে প্রথম বারের মত বাইরে ঈদ... পরিচিত সবাইকে ছেড়ে ঈদ... বেশ কষ্ট লাগছে। ঈদের দিন নানীর পা ধরে সালাম করা হবেনা... আব্বুর সাথে ঈদ্গাহে যাওয়া হবেনা... পরিচিতদের সাথে কোলাকুলি করা হবেনা... আম্মুর হাতের ঈদের খাবার খাওয়া হবেনা... নতুন জামা পেয়ে ছোট বোনের খুশি খুশি চেহারাটা দেখা হবেনা... দীপু, মিফতাহ, নাফিস, মারুফদের সাথে ঈদের পরদিন আর মুক্তমঞ্চে বসা হবেনা... খুব মিস করছি। কালকের ঈদটা একেবারে বোঝার মত লাগছে। সকালে খালু আর মামার সাথে ঈদ্গাহে যাব। খালামনি ঈদের খাবার রান্না করবে। সেই খাবার খেয়েই দৌড় দিতে হবে ভার্সিটিতে নাহলে দুপুরের এডহক নেটওয়ার্কের ক্লাসটা মিস হবে। নামাজের জন্য এমনিতেই সকালের এডভান্সড ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক ওয়েভের ক্লাসটা মিস যাবে। কী কপাল! ঈদের দিনও ক্লাস! আর লিখতে ইচ্ছা করছেনা... আজকে অনেক লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঈদের কথাটা শুনেই আসলে মন খারাপ হয়ে গেছে। পুরনো সব স্মৃতি ভেসে উঠছে... হয়তো এক সময় মন শক্ত হয়ে যাবে... দেশের পরিচিত পরিবেশের জন্য হয়তো আর খারাপ লাগবেনা... কিন্তু সেটাতো পরের ব্যাপার... এই বেলার কষ্টটা কই রাখি!


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

(১) হাসি নিয়ে তো দেখি বেশ রিসার্চ কইরা ফেলসো। ব্যাপার না, আরো কিছুদিন যাক, আরো শিখে ফেলবা। তবে আমার কাছে ওদের এই দিকটা ভাল লাগে। যে কোন কিছুতেই একটা হাসি। আর হাসিমুখ দেখতে পাওয়া কিন্তু অনেক ভাল একটা ব্যাপার, অনেক কিছুই অনেক ইজি হয়ে যায়।

(২) চার ডব্লিউ-য়ের তো খালি একটা লিখলা, বাকিগুলা কই? চিন্তিত বিশেষ করে তিন নাম্বারে উল্লেখ করা টা দেঁতো হাসি

(৩) হ্যাঁ, আমিও জানতাম ডাচদের এই সাইকেল ব্যবস্থার কথা। এটা তো সবদিক দিয়েই অনেক ভাল। ভাল একটা এক্সারসাইজ, ফুয়েল কস্ট নাই, পলুশন নাই। আমাদের দেশেও এই ব্যবস্থা চালু করতে পারলে ভাল হইতো। তুমিও একটা সাইকেল কিনে ফেলো। তাইলে দেশে মাস্টারি করতে করতে যেটুকু মেদ জমাইসিলা, তা কমাইতে পারবা খাইছে

(৪) খাইছে! ফ্রী পেপার! জানতাম না তো এইটা! খুব ইন্টারেস্টিং লাগল ব্যাপারটা। আমাদের দেশে পেপার দিবে ফ্রী! হাহ্, কাজ হইছে তাইলে! দেখবা বলবে, ঈদ উপলক্ষ্যে দুইটা পেপার কিনলে একটা 'লিজান মেহেদী' ফ্রী! চোখ টিপি

(৫) শুধু ডাচ কেন, আমি তো জানতাম পুরা ইউরোপ-আমেরিকাতেই এইসব কুকুর-বিড়াল পোষা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। ছোটবেলাতেই একটা কুকুর বা বিড়াললছানা দেওয়া হয় ওদের। পাহারার জন্য না মনে হয়, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। ভাল লাগে যেটা, তা হল, এভাবে কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির উপর একটা মমত্ববোধ বেড়ে ওঠে। এই চর্চাটার খুবই দরকার। তবে কুকুর চাটাচাটি আমার কাছে খুবই নোংরা লাগে! ইয়াক!

(৬) তুমি মিয়া তাইলে চাইনিজদের দেখ নাই। ওরা একটা সাধারণ কথা বললেও মনে হবে যেন দাঁতমুখ খিচিয়ে ঝগড়া করছে! তবে ঢালাওভাবে কি কালোদের খারাপ বলা যায়? 'ঘৃণা' কিন্তু খুব স্ট্রং একটা শব্দ। অপছন্দের সাথে এর বহুত তফাৎ। ঘৃণা করে থাকলে, তোমার তো তাইলে আসলেই অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে কালোদের ব্যাপারে। তবে সব জাতির মধ্যেই তো ভাল-খারাপ আছেই। আমি কিন্তু এখনো মনে করি, কালোদের মধ্যে যথেষ্ট মায়া আছে (সেনেগালের অ্যামাথ তো আমার বেশ ভাল বন্ধুই ছিল!)। আর দাঁত বাঁধানোর কাহিনী খুব মজার তো!

(৭) বেলজিয়াম গেলা, ব্রুঝ (Bruge) গেসিলা? বর্ডারের ব্যাপারটাতে খুবই মজা পাইলাম। ফেইসবুকে আরো ছবি আপলোড কইরো, দেইখা নিবোনে হাসি

(৮) ঈদ নিয়ে মন খারাপ কইরো না। কি আর করা। বাস্তবতার সাথে মানায়া নাও নিজেকে, সেটাই ভাল। আর তাও তো তোমার আত্মীয়-স্বজন আছেন ওখানে, অনেকে তো বিদেশে পুরা একলা আছে। ওদের কথা চিন্তা কর! ঈদে কি কিনলা? ঈদের দিনেও ক্লাস! মন খারাপ

লেখা ভাল লাগল, লিখতে থাকো আরো। বিশাল কমেন্ট কইরা ফেললাম। খাইছে

ঈদ মোবারক ম্যাক হাসি
__________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

অভ্রনীল এর ছবি

উরে বাপ্‌রে ... যে বিশাল কমেন্ট! তুমিতো এইটাকে একটা পোস্ট বানাইতে পারতা হাসি

চার ডব্লিউ'র তিন নম্বরটা লিখলে তো অনেক বড় হবে... পুরা একটা পোস্ট খেয়ে ফেলবে... দেখি পরের পোস্টে লিখব (যদি মনে থাকে দেঁতো হাসি)

আফ্রিকান্দের ব্যাপারে আসলে "বেশিরভাগ আফ্রিকান" কথাটা লেখা দরকার ছিলো। তুমি বলার পর আমারো আমাথের কথা মনে পড়ল... বেচারা আসলেই ভালো ছিলো... তবে এইখানে এদের চলাফেরা দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়... সেদিন ট্রেনে যাচ্ছি, হঠাৎ এক আফ্রিকান মহিলা হাতির মোবাইল বেজে উঠলো... তার পর ঐ মহিলার কথাবার্তার (বলা উচিৎ চিল্লাচিল্লি) চোটে কানে তালা লেগে যাবার দশা... আমার বগি ছিলো পুরোপুরি আলাদা, মানে ভেতর দিয়ে পাশের বগিতে যাবার কোন উপায় ছিলোনা... তাই পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই সাথে সাথে নেমে পাশের বগিতে গিয়ে কান দুইটারে বাঁচাইসি... আর এদের গায়ে থেকে যে কি উৎকট গন্ধ বের হয়, একটা বগিকে ভরপুর করে দেবার জন্য যথেস্ট... তবে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এদের মধ্যেও ভালো মানুষ আছে...

_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

লেখা ভালো হইছে, সিরিজটাও ভালো হইতেছে, ছবি দেখে মজা পাইছি, কিন্তু কালোদের পার্টটায় একমত না ...

আইইউটিতে কিছু কালোরে ঝামেলা করতে দেখছি, কিন্তু ইন জেনারেল কালো ছেলেগুলিরে আমার ভালোই লাগতো ... আমি যেটা দেখছি কালো ছেলেগুলি অনেস্ট, ওরা যদি তোমারে হেই ফ্রেন্ড বলে ডাক দেয় তার মানে আসলেই ওরা তোমাকে বন্ধু ভাবতেছে, আবার রাগ করলে সেটাও সোজাসুজি প্রকাশ করে, কোন ঘোরপ্যাচ নাই ... তুমি ফোফানা বা সাংকারেহকে চিনতা? এই ছেলেদুইটার মত ভালো ছেলে কিন্তু আমি খুব কম দেখছি ... এখনো ফেসবুকে কথা হয় ... সাংকারেহ এখনো আগের মতই বাংলা বলে "hello bondhu kemon acho" ... ণোভা স্কশিয়াতেও আমার বেশ কয়েকটা কালো ছেলের সাথে পরিচয় হইছে এবং কাউকেই খারাপ মনে হয় নাই ...

আমি বরং সেই তুলনায় পাকিস্তানী আর প্যালেস্টাইনি ছেলেদের একটু অপছন্দ করি ... পাকিগুলি মুখে সবসময় "আবে ইয়ার" কিন্তু মনে পুরা অন্য ভাব ... আর প্যলেস্টাইনিগুলি সবসময়ই ঝগড়াটে মুডে থাকে, আমরা বলতাম ছোটবেলা থেকে ট্যাংকে ইট মারতে মারতে এই স্বভাব হয়ে গেছে ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

রানা মেহের এর ছবি

পাকিস্তানীদের যা ইচ্ছে বলুন।
অন্য জাতি সম্পর্কে কথা বলার সময় একটু
সহনশীল এবং বর্ণবিদ্বেষি না হবার অনুরোধ জানাচ্ছি।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমাদের এখানে কিছু দৈনিক পেপার ফ্রি আছে কিন্তু সাপ্তাহিক গুলোর দাম লাগে। আর সিডনীর ওয়েদার যে কি পরিমান আন-প্রেডিকটেবল সেটা বলে বোঝানো যাবেনা। কোন কিছুর ঠিক নাই। মাঝে মাঝে এই গ্রীস্ম এই শীত খাইছে
লেখা খুব ভাল লাগল চলুক আপনাকে অগ্রীম ঈদ মোবারক হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ইফতেখার এর ছবি

কী কপাল! ঈদের দিনও ক্লাস!
আমারও ক্লাস আছে, এক্সপেরিমেন্টও সেট করেছি। বাসায় বললাম এবার ঈদ হচ্ছেনা আমাদের এখানে।

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা...

আবু রেজা এর ছবি

ছেলেবেলায় পড়া একটি কবিতার কয়েকটি লাইন এরকম--

হাসতে নাকি জানে কেউ কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই।
খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে।
কাজল বিলের হাসি দেখে
হাসেন পাঁতি হাঁস......................

কেউ পুরো কবিতাটি পোস্ট দিতে পারেন কি?

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

স্নিগ্ধা এর ছবি

যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন কৃষ্ণাংগদের উপর একটা আলাদা মায়া কাজ করত। সবখানেই পড়তাম যে এরা নিগৃহিত নিপীড়িত। আমার এই মায়া পুরোপুরি ঘৃনায় পালটে যায় যখন আমি আইইউটিতে পড়ি। এদের মধ্যে এখনো এক ধরনের হিংস্রভাব কাজ করে। যখন দু’জন আফ্রিকান কথা বলত মনে হত যেন তারা দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি করছে! এরা অত্যন্ত অভদ্র আর মারামারিতে এদের বিকল্প কিছু নেই। সেই থেকে আমি আফ্রিকান মানুষ দেখলে দূরে থাকি। নেদারল্যান্ডসে এসেও দেখি, এই জাতিএ আচরনে কোন পরিবর্তন নাই। বাড়তি ব্যাপার হল, এরা সম্ভবত সবাই নিজেকে এক একজন র্যারপার ভাবে। কথা আর হাতপা ছোঁড়াছুড়ি দেখলে মনে হয় এরা সবাই র্যা প করতে করতে ঝগড়া করছে! এখানকার যত বেআইনী কাজ আছে সব এরা করে। এদের বেশিরভাগকেই দেখা যায় বেন্টলী বা ল্যাম্বারগিনি হাঁকাতে। সেই সাথে এরা প্রচুর গহনা পড়ে, সেটা ছেলে হক বা মেয়েই হোক।

যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন বাংলাদেশীদের উপর একটা আলাদা মায়া কাজ করত। অনেকখানেই পড়েছি যে এরা পাকিস্তানীদের হাতে অনেক নিগৃহিত নিপীড়িত হয়েছে। আমার এই মায়া পুরোপুরি ঘৃনায় পালটে যায় যখন আমি .........তে পড়ি। এদের মধ্যে এখনো এক ধরনের ঝগড়াটেভাব কাজ করে। যখন দু’জন বাংলাদেশী কথা বলত মনে হত যেন তারা দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি করছে! এরা অত্যন্ত অলস আর অন্যের পেছনে লাগায় এদের বিকল্প কিছু নেই। সেই থেকে আমি বাংলাদেশী মানুষ দেখলে দূরে থাকি। নেদারল্যান্ডসে এসেও দেখি, এই জাতিএ আচরনে কোন পরিবর্তন নাই। বাড়তি ব্যাপার হল, এরা সম্ভবত সবাই নিজেকে এক একজন রাজা উজির ভাবে। বড় বড় কথা শুনলে মনে হয় এরা সবাই এক তুড়িতে বিশ্বজয় করে ফেলতে পারে। এখানকার যত বেআইনী কাজ আছে সব এরা করে। এদের বেশিরভাগকেই দেখা যায় ধার করা পয়সায় ফুটানি করতে! সেই সাথে এদের মেয়েরা প্রচুর গহনা পড়ে, এত গরীব একটা দেশের মানুষ গয়নার পেছনে ব্যয় করার মত এত পয়সা পায় কোত্থেকে?!

শুধু বোল্ড করা অংশগুলো মূল প্যারা থেকে আলাদা। খুব কি বেমানান বা অপরিচিত ঠেকছে? বিভিন্ন সময়ে আমরা বাংলাদেশীদের সম্পর্কে অন্যদেশী কারো কাছ থেকে এসব কথা কি শুনিনি? আবার কেউ বাংলাদেশীদের নিয়ে কিছু বললে বোধহয় আমাদের প্রতিবাদ না করে, অপমানিত বোধ না করে, বর্ণবৈষম্য বা জাতিবৈষম্যের কথা না তুলে - একটি সুমিষ্ট হাসি উপহার দেয়া উচিত!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

সবজান্তা এর ছবি

সচলায়তনে আমার এই যাবৎ কালে পড়া সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কমেন্টের মধ্যে এটা অন্যতম। জাঝা।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখাটা দারুণ, কিন্তু অসম্পূর্ণ। স্নিগ্ধার কমেণ্টতো লেখাকেও চেজ করে গেছে ! হা হা হা !

তবে হাসি বহু প্রকারের। আপনার চারটি বাদ দিয়েও যেমন আঁতেল হাসি, পাকনা হাসি, ফাটা হাসি, গোমড়া হাসি, মদনা হাসি, বদনা হাসি, বেবাট হাসি, উটকো হাসি, কপট হাসি, দাঁতাল হাসি, চিমটা হাসি, ছেবলা হাসি, কেবলা হাসি, ধাউড়া হাসি, কাউয়া হাসি, ফিচকা হাসি, মিচকা হাসি...বহু বহু ধরনের।
মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠের সাথে হাসির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এ ব্যাপারে শুনেছি হাসি বিশারদ মনোবিজ্ঞানী ড.খান্ডাকার ব্যাপক গবেষণাও করছেন। রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সে বিষয়ে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে পারবো হয়তো।

সে যাক্ । আপনার আকর্ষণীয় লেখার পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানবীরা এর ছবি

এইখানে খবরের কাগজ একেবারে ফ্রী! পেপার স্ট্যান্ডে পেপার থাকে, যার খুশি যেটা খুশি সেটা নিয়ে যায়। এ্যাডভারটাইসিং থেকে এদের সব খরচ উঠে যায় বলে এরা পেপারের কোন দাম রাখেনা।

অভ্রনীল, সব পেপার টান দিয়েন না ভাই, ফ্রীর পেপার ফ্রী, সব কিন্তু ফ্রী না।

এই ক্ষেত্রে তারা একটা দুটা দাঁত না বাধিয়ে পুরো এক পাটি দাঁত বাধিয়ে ফেলে।

আমাদের নিজেদের দিয়ে বিচার করেন। কার কতো ভরি সোনা আছে, যেমন আমাদের স্ট্যাটাস সিম্বল, আফ্রিকানদের মধ্যে সোনা দিয়ে দাত বাধানোটাও সেরকম স্ট্যাটাস সিম্বল ভাইয়া।

আশাকরছি আপনার নেদারল্যান্ডসে বসবাস আনন্দদায়ক হবে, ওয়েদার সহ্য করার শক্তি আপনি অর্জন করে ফেলবেন, এখনওতো ঘন কালো দিন শুরু হয় নাই, আন্ধারে অফিসে রওয়ানা হবেন আবার জীবনানন্দের অন্ধকারেই বাড়ি ফিরবেন।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।