নেতারা জিতে নিলো সাতচল্লিশ, হেরে গেল মানুষ

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: রবি, ০৮/০৮/২০১০ - ২:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাতচল্লিশের দেশ বিভাগ আজকের বাস্তবতায় প্রায় অপ্রাসঙ্গিক একটি বিষয়।এমনিতেই এই অভিযোগটা আমার নিজের, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গত ছয় দশকে কিছুই করেনি, ইতিহাসের চর্বিত চর্বনে সময় নষ্ট করেছে। সব কিছুর পিছেই অন্যের শত্রুতা খুঁজে আমরা এড়িয়ে যাই আজ এবং আগামীকাল। নীরোদ সি চৌধুরী প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায় বলেছেন আমরা অতীত নিয়ে কেঁদে আর ভবিষ্যত নিয়ে আশংকা করে বর্তমানটা হারিয়ে ফেলি।পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় পড়ায় মনোযোগ না দিতে পারার মতোই। আবার অনেক অভিভাবক আছেন যারা তাদের সন্তানের পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের জন্য শিক্ষককে দায়ী করেন। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষেরাও ঐ সিরিয়াস গার্জেনের মতোই।

আমি নিজেই সমুদয় জাতিগত ব্যর্থ তার জন্য বৃটিশদের টেনে আনি।নিজেরা কিছুই না করে অন্যকে দোষারোপ করে ভালই সময় কাটে।বৃটিশেরা আমাদের প্রিয় পিনকুশান বা ডোর ম্যাট।

অধিকাংশ মেল শভিনিস্ট যেমন কন্যাসন্তান জন্মানোর জন্য স্ত্রীকে দায়ী করে থাকে।

 

সাতচল্লিশ সম্পর্কে বই-পুস্তক বেশ বিভ্রান্ত করে থাকে। কেউ গান্ধীকে নায়ক বানায়, কেউ নেহেরুকে, কেউ বা জিন্নাহকে।ঢাকায়  বা কলকাতায় আমার বন্ধুরা অনেকে গান্ধীরোমান্টিকতায় , দিল্লীতে নেহেরুর গুণগান, করাচীতে জিন্নাহ। সবাই তাদের ভাবনার পক্ষে বই সরবরাহ করে আমার কনফিউশন তৈরি করেছেন।অভ্যাসবশত নিজের কনফিউশনের জন্য অন্যদের দায়ী করলাম। তবে এই কনফিউশন থেকে বের হবার কাজটা তাই জরুরী হয়ে পড়েছে।

 

৪৭এর অডিও ভিজুয়াল ফুটেজ আর স্থির চিত্র সম্বল করে চেষ্টা করলাম ঐ স্পেস এবং টাইমকে কিছুটা অনুধাবন করতে। তবে ইতিহাস সম্পর্কে রায় ঘোষণার নির্বুদ্ধিতাকে আমি খুব আউটডেটেড মনে করি।সেটা সবজান্তা শমশের সিনড্রোম।অডিও-ভিজুয়াল ফুটেজ আর ছবির সুবিধা হলো তা প্রামাণিক অথচ ওকালতি করেনা কারো পক্ষে।

 

যে গান্ধীকে নিয়ে ব্লগে কিছুদিন আগে আদিখ্যেতা করলাম, তার কর্মকান্ডকে ফুটেজে অবাস্তব নাটক মনে হলো।দুই হাতে দুই তরুণী যষ্ঠী খুব থিয়েটার বান্ধব, কিন্তু রাজনীতিতে তার প্রভাব নেতিবাচক মনে হয়েছে। রক্ষণশীল মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য সেটা ছিলো কালচারাল শক।বিশেষ করে নোয়াখালীতে যেখানে ওয়ালীউল্লাহ শস্যের চেয়ে টুপি বেশী-ধর্মের আগাছা বেশী দেখেছেন।অথবা মাউন্ট ব্যাটেনের সামনে মৌনব্রত, কাগজে লিখে প্রশ্ন করা,কথার রোজা রেখে অনেক জরুরী মুহূর্তকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া।৪৭এ গান্ধী যা ক্ষতি করেছেন, তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু বুদ্ধিজীবী আজ অব্দি গান্ধী থিয়েটার চালিয়ে যাওয়ায়।গান্ধীর সত্যাগ্রহ বা অহিংসনীতি ঐসময় ইতিহাসের অলংকার হিসেবে রয়ে গেছে। ভূমিতে এর কোন চর্চা দেখিনি। তাই গান্ধীকে প্রত্যাখান করে আজকের হিংস্র-ক্যানিবাল সমাজের নরখাদকতাকে প্রতিহিংস্রতা দিয়ে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং গান্ধীর কাছ থেকে এইটুকু শেখা গেলো, ঈর্ষাপ্রবণ সমাজে অহিংসনীতি বেমানান।

 

নেহেরুকে সবচেয়ে ঝানু রাজনীতিবিদ মনে হয়েছে। সম্ভবত একমাত্র বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন লোক ওই সময়ের।তবে ক্ষমতার লোভ বা আত্মকেন্দ্রিকতা তার সহজাত চরিত্র ছিল, যেটাকে তিনি শিল্পে পরিণত করেছিলেন। যে সময় তার মাউন্ট ব্যাটেনের প্রতিটি পদক্ষেপ আর ভাবনা জানার দরকার, তখন লেডী মাউন্ট ব্যাডেনসূত্রে পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেলেন তিনি, এর চেয়ে স্মার্ট মুভ আর কী হতে পারে। রাজনীতিতে নিসঙ্গ জিন্নাহ ভারতকে হিন্দুস্থান বলে অপমান করেছেন নেহেরুকে, কিন্তু তিনি মাথা ঠান্ডা রেখে লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন।জিন্নাহ কনফেডারেশনের রোড ম্যাপে রাজী থাকলেও নেহেরু তা নাকচ করেছেন, কারণ তাতে পরবর্তীতে একান্নবর্তী পরিবারের স্টার প্লাস ড্রামা শুরু হয়ে যেতো। তাই কষ্ট হলেও জিন্নাহর পাকিস্তান বানানোর রোডম্যাপ মেনে নিয়েছেন।

 

মুসলমানেরা ভারতবর্ষে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকায় ভবিষ্যতে নির্বাচনী সাফল্য তাদের আসবেনা, মুসলমানদের এই অনিশ্চয়তার কারণে জিন্নাহ পশ্চিমা পোশাক খুলে টুপি মাথায় পরলেন।নোয়াখালী-কলকাতার মুসলমানেরা লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান শ্লোগানে দাঙ্গার শুভসূচনা করে। পাঞ্জাবেও শিখদের সঙ্গে দাঙ্গার শুরুটা মুসলমানদের হাতে। গর্বে বুকটা ভরে গেল। শিক্ষায়-পরিশ্রমে-রাজনৈতিক বুদ্ধিতে পিছিয়ে থাকলেও আল্লাহ আমাদের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসা দিয়েছেন।তাই দিয়ে করে কম্মে খাচ্ছি এতোকাল।শিখদের কিছু রিচুয়াল মুসলমানদের কাছ থেকে পাওয়া। সুতরাং ট্রেন টু পাকিস্তানে তার শো-ডাউন দেখা গেল। হিন্দুরা কিন্তু আলোচনার টেবিলে সমাধান খুঁজেছিল।দাঙ্গায় বাধ্য না করলে যায়নি।তবে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে দলিতদের মতো আচরণ করে ঐতিহাসিক শত্রুতাকে বেগবান করেছিল বরাবরি।

 

মাউন্ট ব্যাটেন খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে কাজ করেছেন।টাকাপয়সা হাতে তেমন ছিলনা। তাড়াহুড়া করে বৃটিশ সেনা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আগে ভাগেই। তাই দাঙ্গা থামানোর জন্য প্রশাসনের হাতে কিছুই ছিলনা, উপদেশ ছাড়া।র‌্যাডক্লিফ সাহেব জীবনে প্রথম ভারতে এলেন পেন্সিল দিয়ে ভারতের হার্ট অপারেশনে।উনি জানতেন সবাই তাকে ঘৃণা করবে।টিপিক্যাল ব্যুরোক্র্যাট,ভারত-পাকিস্তান পতাকা ওড়ানোর আগে পর্যন্ত গোপন রেখেছিলেন ভারত বিভাজনের মানচিত্রটি।এই ঢাক ঢাক গুড় গুড় ছিল, নিরাপদে বৃটিশ পলায়ন নিশ্চিত করতে।

 

সবচেয়ে অবাক ব্যাপার মাউন্টব্যাটেন-নেহেরু বিমান থেকে শরণার্থীদের বেহাল অবস্থা দেখে প্রথম সম্বিত ফিরে পেলেন, কী ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার শিকার ভারত-পাকিস্তান গামী আমজনতার উদবাস্তু মিছিল।মাউন্টব্যাটেনের এই অদক্ষতা খুবই ক্ষুব্ধ করেছে আমজনতাকে। আর জিন্নাহ তখন রাষ্ট্রপ্রধান হবার ইউফোরিয়ায় মৃত্যুউপত্যকার ট্র্যাজেডীকে পায় দেখতেই পাননি। এতো অভিজ্ঞ নেতাদের দেশ বিভাগ পরিকল্পনার পরী ডানা মেলে উড়ে গিয়েছিলো সম্ভবত। আর নেটিভ সৈনিকেরা যেসময় নিজেদের পোস্টিং নিয়ে, নতুন জায়গায় যোগদানের ছুটিতে, তখন লাহোরে মাত্র শখানেক সেনা নিয়ে এক বৃটিশ সার্জেন্ট চার্লিচ্যাপলিন হয়ে ঘুরছিলেন। সুতরাং দেশ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় নেহেরু জিন্নাহ পাশ মার্কস পান বলে মনে হয়না। আর গান্ধী তার অনশন আর মৌনব্রত নিয়ে সাক্ষী গোপাল হয়ে রইলেন। ফলে তিনি পরীক্ষাকে ভয় পেয়ে ঘরে বসে দর্শন চর্চা করলেন।

 

বৃটিশেরা রুয়ান্ডা-বুরুন্ডিতে হুতুদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তুতসিদের যেমন ক্ষমতায়িত করেছিলেন, ভারতে তেমনি মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে হিন্দুদের এগিয়ে দিয়েছেন। বুশ ইরাকে যেমন সুন্নীদের ক্ষমতাচ্যুত করে শিয়াদের দিয়েছিলেন, যুদ্ধ এবং দেশ দখলের এটা সনাতন কৌশল। এটা আজো সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। কিন্তু ভারতের মানুষ বিভাজনের জন্য উন্মুখ ছিলো।আমরা বৌদ্ধ-হিন্দু-মুসলমান-বৃটিশ-পাকিস্তান সব দখলদার শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করে দক্ষিণ এশিয়াকে লাল বাতি এলাকা করেছি।আমাদের একটি অংশ সবসময় দখলদারদের চাটুকার হয়েছে।বাড়ি-জমিদখল-ঠিকাদারি-চাকরী-ব্যবসা-ইগো-ঈর্ষা আমাদের মজ্জাগত। ধর্ম ৪৭ এর অজুহাত। আবেগে নীতিহীন (ইমোশনালি ডিজ অনেস্ট) আত্মকেন্দ্রিক দক্ষিণ এশীয়রা আজো সম্পদ এবং আদিম ইগোর কারণে যে কোন বিভাজনে রাজী।ভারত-পাকিস্তান কামড়া কামড়ি চলছেই। বিএনপির পাকিস্তান তোষণ, আওয়ামীলীগের ভারত তোষণ আমাদের দখলদার তোষণের জীনসঞ্জাত কু অভ্যাস।আর বিভাজন আমাদের অস্থিগত।বাংলাদেশের ভেতরেই যে রাজনৈতিক বিভাজন তা দেখে ঠাহর করা যায়। আমরা টাকাপয়সার জন্য মায়ের কিডনীও বেচে দিতে পারি।যেখানে ছাত্রদল নেই সেখানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষই যথেষ্ট ভাগ-বাটোয়ারার দাঙ্গায়।তাই নিজেকে হুতু বা তুতসি ভাবতে আজ আর আমি আড়ষ্ঠ নই।  

 

 


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

নীরোদ সি চৌধুরী প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায় বলেছেন আমরা অতীত নিয়ে কেঁদে আর ভবিষ্যত নিয়ে আশংকা করে বর্তমানটা হারিয়ে ফেলি।

বলতে পারেন নীরোদ সি চৌধুরী কী কারণে গুরুত্বপূর্ন কোন আলোচনায় আসতে পারে?
অডিও-ভিজুয়াল ফুটেজ আর ছবির সুবিধা হলো তা প্রামাণিক অথচ ওকালতি করেনা কারো পক্ষে।

এটা অবশ্যই ওকালতি করতে পারে। কারণ এই জিনিসগুলো জিতে যাওয়া পক্ষই তৈরী করে। ইতিহাসে এর প্রমান ভুরি ভুরি। আমরা নাৎসিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কথা জানি। জাপানিদের জন্য তৈরী করা আমেরিকান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কথা কয়জন জানি। তাদের ডিজ্যুয়াল কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায় কোথাও? এই সপ্তায় একজনের ছবি ছাপা হয়েছে টাইম ম্যাগাজিনে। নাপাম বোমায় নিহত কোন শিশুর লাশ কি টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদে ছাপাবে? ছাপাবে না। অতএব আজ থেকে ৫০ বছর পর যখন একজন এই ছবিগুলো নিয়ে কিছু ভাবতে বসবে তখন সে একটা খন্ডিত চিত্র, যা জিতে যাওয়া পক্ষ তৈরী করে গিয়েছে, দেখতে পাবে।
বৃটিশেরা রুয়ান্ডা-বুরুন্ডিতে হুতুদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তুতসিদের যেমন ক্ষমতায়িত করেছিলেন, ভারতে তেমনি মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে হিন্দুদের এগিয়ে দিয়েছেন।

মুসলিম সমাজের গোয়ার্তুমিও কিন্তু এজন্য দায়ি। রেফারেন্সটা মনে করতে পারছি না। মনে করতে পারলে মন্তব্যটা আরো একটু আগাতে পারতাম।
বিএনপির পাকিস্তান তোষণ, আওয়ামীলীগের ভারত তোষণ আমাদের দখলদার তোষণের জীনসঞ্জাত কু অভ্যাস।

বিষয়টা খুব সরলীকরণ হয়ে গেলো না? আপনি দেখবেন প্রায় সবগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রের আশেপাশের ছোট দেশগুলোতে এই জিনিসটা আছে। মেক্সিকো, ইউক্রেন, আফ্রিকার ছোট দেশগুলোতে এই জিনিস দেখা যায়। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী শ্রীলংকা, নেপালেও এই জিনিস আছে। এসব ছোট ছোট এসব দেশে প্রো-বড় দেশ, এবং এ্যান্টি বড়দেশ রাজনীতি চলে।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

নীরোদ সি একজন বুড়ো মানুষ যিনি তার পর্যবেক্ষণ আমাদের পাঠকদের জানিয়েছেন, আমি বুড়োর ওই পর্যবেক্ষণকে প্রবচন হিসেবে বলেছি।

অডিওভিজ্যুয়াল ফূটেজে কিছু অভিব্যক্তি পাওয়া যায় নেতাদের মুখমন্ডলে, যেটা বইতে পাইনি। জিতে যাওয়াদের ফুটেজ থেকে সত্য পাওয়া কঠিন। তবে এরকম একটা ছবি আমি পেয়েছি,ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ।

সরলীকরণ করা তাহলে ভুলি হয়েছে। ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দেশভাগের ফলে কত মৃত্যু আর কত মানুষ উদ্বাস্ত হয়েছিলো তার কোনো পরিসংখ্যান কি হয়েছে? পাওয়া যায়?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি

খুঁজলে কিছু নাম্বার হয়তো পাওয়া যায়। তবে সেগুলোর ভিত্তি নিয়ে সন্দেহ আছে। ঐ সময় কোন গ্রহণযোগ্য জরীপ হয়েছিলো বলে জানা নেই। কাগজে ওয়েবে যা লেখা থাকে সবকিছু বিশ্বাস করতে নাই।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

পরিসংখ্যান সম্পর্কে হাসিবের পর্যবেক্ষণে সহমত। তবে বিবিসি সূত্র বলছে ১০লাখ নিহত, ১কোটি ৫০ লাখ শরণার্থী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

প্রাকৃত জন [অতিথি] এর ছবি

৪৭, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় আর করুন জয়।ধর্ম আর লোভ কে রক্ষা করতে গিয়ে আমরা বলি দেই মনুষ্যত্বকে।
দীপা মেহতার Earth এ সেই ভয়াবহ সময়ের খানিকটা আভাস পাই।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সত্যিই তাই।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'৪৬ এর কলকাতা দাঙ্গা(আসলে এগুলোকে দাঙ্গা না বলে গনহত্যাই বলা উচিত)য় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকাকে কিভাবে মুল্যায়ন করেন মাসকাওয়াথ ভাই?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

বাস্তবে হিন্দু-মুসলমান যে বিভাজন দেখি তাতে সোরোয়ার্দীর অখন্ড বাংলা সম্ভব ছিল কীনা। তাজউদ্দীনের মতোই আরেকজন নেতা রাজনীতির বাজী হেরেছেন। সোরোয়ার্দী জিন্নাহ-নেহেরুর দাদাগিরির কাছে হেরে গেছেন। ফলে বড় সম্ভাবনার অপচয় হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি সুনির্দিষ্টভাবে কলকাতা দাঙ্গার সময় তার ভূমিকা জানতে চাইছিলাম, যেহেতু প্রশাসনিক দায়িত্বে তিনি ছিলেন। সাধারনভাবে হিন্দুদের মধ্যে তার প্রতি ক্ষোভ দেখেছি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

There were hundreds of occasions when Suhrawardy himself, often clandestinely clad in the uniform of a European military officer, drove through the affected localities to save the lives of the defenceless victims, Muslims and Hindus alike. Suhrawardy's critic, Hassan Ispahani, while giving a pen-picture of this carnage, praises his role in bringing the riot under control. He says: "I have not seen a man work so hard and act so swiftly to try and control a conflagration as Suhrawardy did." During the riots he arranged free lodging and food for many Hindu families, including ninety-five Hindustani milkmen, his own Hindu haircutter Nogen Sheel and Hindu washerman Kunja Dhopa. Among Suhrawardy's trusted personal attendants was Shibu, also a Hindu from Orissa, who served him most faithfully even during those troubled years. Peace soon returned to the riot-torn city.

Memoirs of Huseyn দেখতে পারেন গুগল ক্লিক করে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি এই পয়েন্টটাই ফোকাস করতে চেয়েছিলাম। সাধারন হিন্দু এবং প্রগতিশীল মুসলমানদের অনেকেও সোহরাওয়ার্দীকে দায়ী করেন। একজন প্রাজ্ঞ কমিউনিষ্ট শেখ মুজিবে আমার মুগ্ধতা জেনে বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন- 'সুরাবর্দীর চেলারে ধর্ম নিরপেক্ষ মানো কেমন?'
কথা ঠিক, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও সোহরাওয়ার্দী ব্যর্থ হয়েছিলেন দাঙ্গা ঠেকাতে, তবে বিবেচনা করতে হবে ঠিক কতোটুকু ক্ষমতা আসলে তার ছিলো, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা কি ছিলো? পুলিশে কারা ছিলো?
আরএসএস এর মতো সংগঠনগুলো সোহরাওয়ার্দীকে দাঙ্গার পরিকল্পক হিসাবে প্রচার করতে ও দ্বিধা করেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রানা মেহের এর ছবি

৪৭ এর দাঙ্গা নিয়ে কিছু বই সাজেস্ট করবেন কি?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ইউটিউবে গিয়ে বিবিসির তৈরী ডকুমেন্টারী দেখতে পারেন। বই হাসান মোরশেদ সাজেস্ট করতে পারেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

মনযোগ দিয়ে লেখাটি পড়লাম এবং যথারীতি ভালো লাগলো...

মূর্তালা রামাত

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কিছু জায়গায় আরো আলোচনার জায়গা রয়েই গেল।

মুসলমানেরা ভারতবর্ষে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকায় ভবিষ্যতে নির্বাচনী সাফল্য তাদের আসবেনা, মুসলমানদের এই অনিশ্চয়তার কারণে জিন্নাহ পশ্চিমা পোশাক খুলে টুপি মাথায় পরলেন।নোয়াখালী-কলকাতার মুসলমানেরা লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান শ্লোগানে দাঙ্গার শুভসূচনা করে। পাঞ্জাবেও শিখদের সঙ্গে দাঙ্গার শুরুটা মুসলমানদের হাতে।

এই অংশে বিশদ মন্তব্য ও আলোচনার প্রয়োজন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন যোগ দিতে পারছি না, তবে আলোচনা হয়তো এগুবে ভবিষ্যতে।

আমার ব্যক্তিগত একটা ধারণা হচ্ছে, জিন্নাহকে ধর্মনিরপেক্ষতার অবস্থান থেকে ধর্মের অবস্থানে পৌঁছে দেবার দায় যতটা না মুসলমানদের, তার চাইতে অনেক বেশি সেসময়ের 'অসাম্প্রদায়িক' হিন্দু নেতৃবৃন্দের।
প্রচারণার জোরে ব্রাম্মনের কাঁধের পাঠা কে কুকুর বানিয়ে ফেলা সম্ভব।

একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে, গান্ধী লন্ডন থেকে এসে পৌঁছালেন, কংগ্রেস আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করছেন তরুণ জিন্নাহ। গান্ধী তার ভাষনে উঠে প্রথম কথাই বললেন,' আজকের সংবর্ধনা সভায় একজন মুসলমানের সভাপতিত্ব দেখে আমি আনন্দিত।' এভাবেই জিন্নাহ মঞ্চে উঠেন একজন ধর্মনিরেপক্ষ তরুণ নেতা হিসেবে, কিন্তু মঞ্চে বসেই মুসলমান হয়ে যান, তাঁকে মুসলমান বানিয়ে দেয়া হয়। জিন্নাহ কংগ্রেসে কোনঠাসা হতে হতে মুসলিম লীগের খাতায় নাম লেখান।

গান্ধী নিয়ে আপনার মূল্যায়নের সঙ্গে একমত।
যতোই দিন যাবে গান্ধীকে পুনর্মূল্যায়ন করবে ইতিহাস, আর সেই মূল্যায়ন গান্ধীর জন্য সুখকর হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আলোচনার শুরু বলা যায় একে।জিন্নাহ নেহেরু রেস সম্পর্কে কিছুই লেখা হয়নি।ব্যাপারটা অস্পষ্ট আমার কাছে এখনো। আমি ঐ দুই নেতার শরণার্থী বিনিময়ের কোন পরিকল্পনা না থাকায় অবাক। আলোচনা জারী থাকবে আশা করছি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সংসপ্তক এর ছবি

অনেক কনফিউশনে ভরা সময় ও ঘটনাবলী নিয়ে লেখাটা, যার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি না। ভালো লাগলো তাই। কিন্তু আরো অনেক অনেক পড়তে চাই জানতে যাই এই ব্যাপারে তাই লিখে জান।
গান্ধী নিয়ে আমার সবসময়ই একটু ত্যাড়ছা ধারনা ছিল, ভগত সিং এবং অন্যান্য অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের প্রতি তাঁর আচরণ আমার কাছে তাঁর 'দেবতা' ইমেজ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট মনে হয়েছে।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আত্মসমালোচনার ভঙ্গিতে কলোনিয়ালিজমের তোষণ দেখতে পেলাম। ভালো লাগে নাই। ১ দিলাম।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

অনিন্দ্য এই লেখাগুলো ভ্যানটেজ পয়েন্ট ছবির প্রেসিডেন্টের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে আসল ঘটনার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টার অনুসরণ। তোষণ ফোষণ অপ্রাসঙ্গিক। ব্লগের বিভিন্ন আলোচনা থেকে নতুন দৃষ্টিকোণ পেলে, সেটা খোঁজার ধারাবাহিক চেষ্টা। ভালো থাকবেন। আর আপনার তীব্র দেশপ্রেম আর দখলদারদের প্রতি অপছন্দ দেখে খুব ভালো লাগলো। আর লেখালেখি যখন ব্লগে তখন আর এসব নম্বর টম্বরের ব্যাপারটাও গৌণ। চলুন ভিন্নমত পোষণে সহমতের সুস্থ রাস্তাটা খোলা রাখি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

তীব্র দেশপ্রেম দেখতে পাইলেন নাকি? ভালো।

'তথাকথিত' নীরদ সি চৌধুরিও চিরকাল ব্রিটিশের তোষণ করসেন। আত্মসমালোচনার ভঙ্গীতে। আপনার পোস্টের প্রথম প্যারায় তার নাম দেইখা মনে বিরূপ ভাব জাগ্রত হইল। কথা এইমাত্র।

রেটিং দেয়াকে ভিন্নমত পোষণের সুস্থ রাস্তা মনে না হইলে, সে ভিন্ন আলোচনা। এই পোস্টের মূল আলোচনাকে বাইপাস করার ইচ্ছা নাই।

ভালো থাকবেন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

নীরোদসির এই উদ্ধৃতিটি অনেকটা আয়নার সামনে দাঁড়ানোর মতো। আবার ওয়ালীউল্লার চোখে অন্ধকার রক্ষণশীল ধর্মান্ধ দেশটাকে দেখা যায়। তাই তাদের নামগুলো এসে পড়ে আড্ডায়, সামনা সামনি আড্ডাতেও তো কত নাম কত উদ্ধৃতি আসে। এইতো।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশভাগ বললেই সবাই বলেন ভারত-পাকিস্তান ভাগ। ভারত বা পাকিস্তান রাষ্ট্র নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমার কষ্ট বাংলা ভাগ নিয়ে। আমার পিতামহ কলকাতায় মানুষ, আর আমার কলকাতায় যেতে ভারতীয় ভিসা লাগে। আমি অবিভক্ত বাংলায় বিশ্বাস করি, ভারত ভাগে আমার কিছু যায় আসে না!

--- থাবা বাবা!

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ভিসাটা না লাগলেই মিটে যায়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কথাটা পড়ে এটা বলাই স্বাভাবিক... তবে আমার জন্য ব্যাপারটা এতো সরল না। ভিসাটা না থাকলেই ব্যাপারটা আমার জন্য এতো সহজে মিটবে বলে মনে হয় না।

ব্যাক্তিগত আড্ডায় ঢাকায় বসে কলকাতার এক বন্ধু যখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করে তখন আড্ডাবাজদের কয়েকজন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে তার এটা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। ভাবি '৪৭ এর আগ পর্যন্ত তো ছিল... কেবল একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আমাদের অধিকারের সীমানা ঠিক করে দিয়ে দিল। বেনাপোল সীমান্ত পারুনোর পর ধন্ধে পড়ে গিয়েছিলাম প্রথমবার। এটা কিভাবে সম্ভব যে আমি বাংলাদেশে নেই? আর কলকাতায় দাঁড়িয়ে যখন আবিষ্কার করি যে সেখানে আমি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একজন বিদেশী, দুঃখ বাড়ে বৈ কমে না!

দুঃখ আরো বেড়ে যায় যখন কলকাতার বাংলা টেলিভিশানের বিভিন্ন সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে "বাংলাদেশী" অতিথীদের জিজ্ঞেস করা হয় "রবীন্দ্রনাথ আপনাদের মুক্তিযুদ্ধে কতোটা প্রেরণা যুগিয়েছেন?" শুনে মনে হয় একজন "ভারতীয় কবির" আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগানোটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার। নিজের মধ্যেই মনে হয় রবীন্দ্রনাথেও আমার কোন অধীকার নেই।

--- থাবা বাবা!

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রসঙ্গতঃ মাউন্টব্যাটেন সাহেবের একটা ঐতিহাসিক অপকর্মের কথা না বলে পারছি না। ৪৭'এ ভেগে যাওয়ার আগে তিনি আজকের বিশ্বের জন্যে অন্যতম বড় একটা প্যানিকের গোড়াপত্তন করে রেখে যান খাইবার পাস সমস্যার সমাধান না করে। যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের ঔরসে আজকের তালিবানের জন্ম।

আর লেডি মাউন্টব্যাটেন, নেহেরু আর জিন্নার থিসম .......................... আসলেই মরতে মরন সানাইদারের, আর পাবলিক হলো সেই সানাইদার।

রাতঃস্মরণীয়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।