যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমজনতার পক্ষের আইনজীবীরা প্রস্তুত তো?

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: বুধ, ১১/০৮/২০১০ - ৬:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখুনি, নইলে কোনদিন নয়, এই একদফা দাবীটি ২০১০ এর প্রধান দাবী। এর পক্ষে-বিপক্ষে আর বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। এখন সময় আছে তিনবছ্রর।এই তিনবছরের মধ্যে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে বাংলাদেশ আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয়না।

 

আমজনতা বনাম যুদ্ধাপরাধী মামলা আমজনতার পক্ষে আইনীলড়াইয়ের স্কোয়াডটির জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।তাদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভাগ্য।যতদূর জানি খুব ভালো একটা আইনজীবী টিম আছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের আইনজীবীদের স্কোয়াডটি এখন লন্ডনে টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছে।তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণে অনলাইন চর্চা রয়েছে। সেটা টের পাওয়া যায়। সম্প্রতি এদের একজন ব্লগে এসে আমার একটা এলোমেলো পোস্টের মন্তব্যে যে মেধার ছাপ রেখেছেন তাতে এই আশংকা নিশ্চিত হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যুদ্ধটা ২০১০এর আরেক মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখানে ৭১র চেয়ে অনেক মেধাবী শত্রুর মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আসিফ নজরুল বনাম হাসান মোরশেদ ও শুভাশীষ তর্কে দুই পক্ষের মেধার লড়াই প্রত্যক্ষ করা গেলো।

 

জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটা আইনী থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্রুপ তৈরী হয়েছে মুলত লন্ডন ক্লাবে।তারা আধুনিক পোশাক আশাক পরে , কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব রক্ষণশীল।এদের সঙ্গে লিবারেলদের দেখা সাক্ষাত হয় কিন্তু বন্ধু হওয়া কঠিন কারণ এরা দুই মেরুর মানুষ।

 

কারণ এদের সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে একবার দুবার দেখা হয়েছে। হাই হ্যালোতে একজন মানুষের কিছুই বোঝা যায়না। তবে এরা দক্ষতার সাথে বিএনপির হাওয়াদূর্গ সামলে দিয়েছে,যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরেও এই রক্ষণশীল থিঙ্কট্যাংক গ্রুপ বিএনপির পক্ষে কাজ করবে সেটাও একটা বাস্তবতা। কারণ অন্তত দুটো দল থাকবেই, আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি।

 

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের আইনজীবী দলটিকে মোকাবেলার জন্য আমজনতার পক্ষের আইনজীবীরা কতটা প্রস্তুত তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। ৭১র মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পক্ষে খুন-ধর্ষন-লুন্ঠন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘন করেছে,তাদের মাস্টার মাইন্ডদের বিচারে ৭১সালে প্রকাশিত রাজাকার মুখপাত্র পত্র পত্রিকায় অপরাধীরা নিজেরাই তাদের অপরাধের প্রমাণ রেখে দিয়েছে।মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার মুখপাত্র পত্র-পত্রিকায় রাজাকারেরা তাদের গণহত্যার প্রমাণ রেখে দিয়েছেন। জামাতের (টপটেনের) যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শুধু পেপার কাটিং দিয়েই প্রমাণ করে দেয়া যায় তাদের যুদ্ধাপরাধ। কারণ অপরাধী যেখানে নিজেই তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের রোজনামচাটা দিয়ে দিচ্ছে, তখন আপনাকে নিশ্চয়ই তা প্রমাণের জন্য এভারেস্টে উঠতে হবে বলে মনে হয়না।

 

তবে সরকারী দপ্তরের নথি প্রস্তুতের গতি ও আধুনিকতার ওপর আমার আস্থা নেই।হাসান মোরশেদের মতো যারা মেধাবী, সরকারি চাকরীতে তাদের গত বিএনপি-জামাত শাসনামলে রাজনীতির পরিভাষায় সাইজ করা হয়েছে। আসলে ডাউনসাইজ করা হয়েছে।কাজেই আমজনতার পক্ষের নথিপত্র ব্লগের মতো সুলিখিত হবে না আমি এটা চোখ বন্ধ করে বলে দিচ্ছি। কারণ এই নথি প্রস্তুতের অচলায়তনে আমি সাড়ে ছয় বছর কাটিয়েছি।পিএটিসি ট্রেনিং এ যেসব মেধাবী কর্মকর্তার দেখা পেয়েছি, তাদের অধিকাংশকেই সাইজ করা হয়েছে। সেক্যুলার কর্মকর্তাদের আওয়ামীলীগ ট্যাগিং করে নানারকম অপমানজনক পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে। আমার সামনে এক চাকমা ব্যাচমেট এবং এক হিন্দু জুনিয়র কর্মকর্তাকে রক্ষণশীল বিএনপি থিংকট্যাংক কলতলীয় ভাষায় মালাউন বলে গালি দিয়েছে ২০০২ এর মে মাসে,সরকারি চাকরিতে আমার মেন্টররা যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা এবং বাম ঘেষা লোকজন,বিএনপি থিংকট্যাংকরা আমার সামনে তাদের আওয়ামীলীগ ট্যাগিং করে শাস্তিমুলক পোস্টিং দিয়েছে।এরকম পরিবেশে এখন পর্যন্ত উদার মনের মেধাবি সরকারি কর্মকর্তাদের ঠিক কয়জন এই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য নিজেদের হালনাগাদ রাখতে পেরেছেন জানিনা, বা সরকারি আইনজীবী নিয়োগে আওয়ামীলীগ কতোটুকু ট্যালেন্টহান্টিং করেছে বা কতোটুকু দলীয় নির্বোধ পুনর্বাসন করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তার এসিড টেস্ট।তবে এই টেস্টে আমজনতার মর্যাদা রাখতে গেলে আইনকর্মীদের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিমের মত টিমওয়ার্ক দরকার হবে। আবেগ-উত্তেজনার চেয়ে ঠান্ডামাথায় ডকুমেন্টেশন করা দরকার। কারণ শত্রু পক্ষের মাথা শীতল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলেই মনে হয়। যেসব লিবারেল আইনজীবী এই টিমের বাইরে আছেন তারা যদি ভলানটিয়ার করেন তাহলে সরকারী আইনজীবিরা ইমেইলে যোগাযোগ রেখে আইনী পরামর্শ,ডকুমেন্ট বিশ্লেষণে সাহায্য নিতে পারেন।

 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে তথ্যমুক্তিযুদ্ধের আদলে, আমার ধারণা। বলপ্রয়োগের চেয়ে বুদ্ধিপ্রয়োগ এখানে বেশী দরকার।বলপ্রয়োগ দরকার হলে সুপারী দিয়ে মার্সি কিলিং করাতে বাহাত্তর ঘন্টা সময় লাগে। বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলপ্রয়োগের সুপারী অপশন নাকচ করে দিয়েছিলেন।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তিনি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আইনি পথে যেতে চেয়েছেন।এই আন্তর্জাতিক মান আবার অনেকটা গোলক রাজনীতির ছায়ানর্তকদের রংমহল।গরীব দেশগুলোর জন্য ইন্টেলেকচুয়াল ফাঁদ।বাভারিয়ার বাদেন বাদেনের অবকাশ প্রাসাদে বা সেন্ট পিটার্সবার্গের পাহাড় প্রাসাদে বসে রয়টার্সের মালিকপক্ষ আফঘানিস্তান,প্যালেস্টাইন,পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অপারেটিভদের রক্ষাকবচের ঘোষণাটি মানবাধিকারের মোড়কে চূড়ান্ত করে থাকে। তাই পশ্চিমা মানবাধিকার মোড়লদের বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নাকগলাতে দেখে ঢাকার আইনমন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন, একাত্তুরে তিরিশ লাখ গণহত্যা,ধর্ষণ,লুন্ঠনসঞ্জাত মানবাধিকার লংঘনের সময় মানবাধিকারের এই এলিট মোড়লেরা কোথায় ছিলেন।বলে রাখা দরকার, এই রয়টার্স মালিকপক্ষ চার্চিল এবং হিটলার দুজনকেই যুদ্ধের হাতখরচা দিয়েছিলেন।

 

তাই যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবীদের মধ্যে যুদ্ধবাজ সিন্ডিকেটের ইঙ্গ-মার্কিন আইনজীবী রয়েছে, আশা করছি সেটা লন্ডনের ব্লগাররা খোঁজ নিয়ে আরো নিশ্চিত হতে পারেন।তবে যে কোন ম্যাচের আগে একটা গাট ফিলিং সমর্থকদের থাকে, যেমন ছিল স্পেনের সমর্থকদের মধ্যে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হবে এটা সমর্থকরা নিশ্চিত।আদালত কক্ষে আমজনতার আইনজীবীরা যদি স্পেনের মতো বল পজেশনে রেখে জিততে পারেন তাহলে তারা তাদের অমরতার আয়োজন করবেন। কারণ আমজনতার চোখে তারা ২০১০এর মুক্তিযোদ্ধা।  

 

 


মন্তব্য

কুলদা রায় এর ছবি

বাংলাদেশের আইনজীবীদের তো কোন চরিত্র নাই। তারা পয়সা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। আর পাকমনারা সব সময়ই তাদের লাইনেই যায়।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বড় বড় যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবিী ছিলে আতাউর রহমান খান, মাহফুজ আনাম খানের বাপে প্রমুখ।
আবার দেখেন--বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামী পক্ষের উকিলও সেই পাকি অধুনা বিন্পির আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগের সমস্যা হল--তারা তাদের খয়ের খা ছাড়া অন্যদের ডাকবে না।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

দাদা আমি একটা সাধারণ প্রশ্ন করতে চাই। ন্যয় বিচার কেন ভালো আইনজীবী ভাড়া করার ওপর নির্ভরশীল? ন্যয় বিচার কি অধিকার নয়? বিচারবিভাগ আর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এরা ১০০ ভাগ ঠিক মতো কাজ করলে, মধ্যস্বত্বভোগী আইনজীবীটির কাজ কী? এটা সাধারণ বোকাটাইপ প্রশ্ন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনিন্দ্য, অধমের এই পোস্টের দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি লক্ষ করুন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ঠিক এই প্রশ্নগুলোই তুলতে চেয়েছিলাম। লিঙ্ক শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

খয়ের খাঁদের সময়টা চলে গেছে। এখন কাজটা পারে এমন আস্থাভাজন আইনজীবী প্রয়োজন। এই বিচার প্রক্রিয়ায় শৌখিন দলীয় আইনজ্ঞ দিয়ে চলবে না মনে হয়। তবে প্রামাণিক তথ্য খুঁজে বের করা আছে, শুধু পেশাদারী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের লোক দরকার।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এই পোস্টের স্পিরিটকে সমর্থন জানাচ্ছি। তৈরি হতে হবে। তৈরি থাকতে হবে।

(এছাড়াও ওপরে আরেকটি প্রশ্ন করেছি, সে-বিষয়েও লেখক মন্তব্য করতে পারেন।)
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

১। সঠিক লোক দিয়ে মামলা করানো।

২। দ্রুত তদন্ত ও অভিযোগ গঠন।

৩। কেসভিত্তিক প্রামাণিক তথ্য ডাটাবেজ তৈরি।

৪।শুনানীতে উপযুক্ত সাক্ষী হাজির রাখা।

৫।দক্ষতার সাথে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন।

৬। আসামী পক্ষের যুক্তি খন্ডন।

এই কাজগুলো দুবছরে শীর্ষ অপরাধীদের ক্ষেত্রে শেষ করে, রায় অনুযায়ী বাকি একবছরের মধ্যে ঘোষিত দন্ড কার্যকর করা। সেটা খুব সহজ না তবে সম্ভব। তাই ন্যায় বিচার কথাটার প্রায়োগিক বাস্তবতা খুব পরিশ্রম ও মেধা সাধ্য। সেই জন্যই এই সাবধানতা। কারণ এই বিচারে আমজনতা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মাসকাওয়াথ ভাই,
আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টে আমার নাম যেভাবে এসেছে বিব্রত বোধ করছি।
আসলে আলাদা ভাবে আমরা কেউই কিছু নই। সবাই সম্মিলিতভাবে হয়তো কিছুটা দাগ কাটতে পারি।
২০০৬ থেকে নেটমিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিকৃতি এবং ঘাতকদালালদের প্রচারপ্রচারনার বিরুদ্ধে যে স্বতস্ফুর্ত ভার্চুয়াল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে- তার গুরুত্ব হয়তো এখনই বুঝা যাবেনা, হয়তো কখনোই এর মুল্যায়ন হবেনা কিন্তু এই প্রতিরোধ যদি গড়ে না উঠতো এতোদিনে মিথ্যে তথ্য আর প্রপাগান্ডায় ওয়েব দুনিয়া ভরে উঠতো।

আপনার আশংকা ও সতর্কতা জরুরী। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বিচারের ভার যাদের উপর ন্যাস্ত হয়েছে রাজনৈতিক ভাবে তাদের কোন দীর্ঘমেয়াদী ভিশন নেই, চুরি-চামারি-ছ্যাচড়ামি করতে করতে তাদের ভেতরে ইস্পাতটুকু ক্ষয়ে গেছে। তবু শেষপর্যন্ত এরাই ভাঙ্গা কুলা।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা কৌতুহল। আমাদের দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের এই বিচারের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কি ? তারা কি প্রসিকিউশনে অংশগ্রহন করতে বা সাহায্য করতে আগ্রহী ? নাকি তারা ইতিমধ্যে বিক্রিত হয়ে গেছেন, বা ভীত, বা যথেষ্ট পারিশ্রমিক পাবেন না বলে অনাগ্রহী, কিম্বা সরকার তাদের ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে তারাও অনাগ্রহী ?

টিভির নিউজ বা টক-শো গুলিতে অন্য সব বিষয়ে যাদের (আওয়ামী বা 'মুক্তিযুদ্ধপন্থী') প্রচন্ড সরব, কখনো কখনো প্রায় বিপ্লবী (!), উপস্থিতি দেখা যায় -- এই বিষয়ে তাদের ঠিক একই রকম ভাবে প্রচন্ড নিরব মনে হচ্ছে না কি ?

এটা কেন ?!

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

তিরিশ লাখ মৃত মানুষের উকিলেরা কী করছেন কে খোঁজ রাখে। তাদের সন্তান বা নাতি নাতকুর জীবন সংগ্রামে বা উদযাপনে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের দক্ষতা সম্পর্কে মিডিয়ায় কোন রিপোর্ট বা তাদের সুকৃতির প্রমাণ নেট মিডিয়ায় দেখছি না। তবে যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী স্কোয়াডটি প্রফেশনাল মেথডে কাজ করছে। আবেগ বনাম প্রফেশনালিজম চলেনা। প্রফেশনালিজম বনাম প্রফেশনালিজম হলে তখন মৃত মানুষেরা জেগে ঊঠবে সাক্ষী দিতে। এটা হতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি, নইলে কোন দিন নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

ফারুক হাসান এর ছবি

আমজনতার পক্ষের আইনজীবীরা আসলে কারা সেটা জানার কোনো উপায় আছে?

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আমার সময় লাগবে। আদালত বিট করে এমন কোন রিপোর্টার (ডেস্কের লোক হলেও চলে)কে মেইল করে জানতে পারেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে যে তরুণেরা ফেসবুক প্রচারণা চালায় তাদেরো তো সার্কুলেট করার কথা। দেখা যাক।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাদীপক্ষের আইনজীবি প্যানেলে আছেনঃ

গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ রেজাউর রহমান, গোলাম হাসনাইন, জহির আহমেদ, রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সৈয়দ হায়দার আলী, খোন্দকার আবদুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন কাজল, নুরুল ইসলাম সুজন, সানজিদা খানম ও সুলতান মাহমুদ শিমন।

বিস্তারিত এখানে দেখা যাবে-
WCSF এর লিংক
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই প্যানেলে এক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ছাড়া আর কেউইতো হেভিওয়েট আইনজীবি নন্‌, হয়তো তাঁরা মেধাবী। আমাদের হেভিওয়েট আইনজীবিরা কোথায় গেলেন? নাকি তাঁদেরকে এই প্যানেলে ডাকা হয়নি?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

'আওয়ামী আইনজীবি পরিষদে'ও তো অনেক হেভিওয়েট আছেন - তারা কোথায় ? তারা কেন ডাক পান না বা আসেন না ?

আরেকটা কথা, 'আইওয়াশ' করতে না চাইলে শুধু 'হেভিওয়েট' আইনজীবি দিয়েও হবে না - একটা অত্যন্ত শক্তিশালী আধুনিক ইনভেস্টিগেশন টীম লাগবে। এখানে আমাদের সনাতনি পুলিশের প্রাক্তন কর্তাব্যক্তি বা তাদের চিরাচরিত ডান্ডাবাজি-পদ্ধতি কোন কাজে লাগবে না। চল্লিশ বছর আগে ঘটা ক্রাইম (যার অনেককিছুই হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে বা মুছে ফেলার চেশটা হয়েছে - স্মৃতি/সাক্ষী/প্রত্যক্ষদর্শী/ফিজিকাল এভিডেন্স ইত্যাদি) তদন্ত করে আদালতে আন্তর্জাতিকমাপে ব্যবহারযোগ্য করা তোলা মনে হয় না খুব সহজ কাজ হবে। আমি এব্যাপারে বিশদ জানি না, তবে মনে হয় আধুনিক তদন্ত পদ্ধতির জ্ঞান - বিশেষ করে হলোকস্ট-কম্বোডিয়া-সেব্রেনিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে তদন্তে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত তদন্তকারী, বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ (যেমনঃ ফোরেনসিক আর্কিওলজিস্ট ও এন্থ্রপলজিস্ট ), মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গনহত্যা বিষয়ে দীর্ঘকাল/ব্যাপক গবেষনাকারী প্রথমসারির ইতিহাসবিদ - এমন অনেককেই এই টীমে রাখতে হবে। এবং তাদের হাইলি মোটিভেটেড হতে হবে। সারা জীবন কেবলমাত্র হুকুম তামিল করা আর কলম বা ডান্ডা পিষার চাকরি করার অভিজ্ঞতা দিয়ে হবে না। সরকারি আমলাদের (বিরল ব্যতিক্রমীদের প্রতি যথাবিহিত-সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক) যোগ্যতা সম্পর্কে আমার প্রভূত সংশয় রয়ে গেছে।

আরেকটা ব্যাপার বোধহয় গুরুত্বপূর্ন, ন্যায়বিচার শুধু হলেই হবে না - বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে - সমগ্র জাতির সামনে এই অপরাধ ও অপরাধীর গুরুত্ব ও ভয়াবহতা এবং ন্যায়বিচারের যথাযথতা নিঃসংশয়ে ও বিতর্কাতীতভাবে সর্বজনদৃশ্যমান-ও-বোধগম্য হতে হবে। যেনতেনপ্রকারেন কিছু একটা করলেই চলবে না। এটা স্রেফ কয়েকটা বুইড়া ড্রাকুলারে গারদে বা দড়িতে পাঠানোর বিষয় না - এর বৃহত্তর ও কাঙ্খিত
সুদুরপ্রসারী লক্ষ্য/প্রভাবটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন। সেজন্য এই বিচারের একটা সুবিশাল এডুকেশনাল ভ্যাল্যুও আছে। ঠিকমতো না করলে সেটা ভেস্তে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সহমত, প্লিজ এই বিষয়ে একটা পোস্ট দেবেন। খুব খুশী হব।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

লালন এর ছবি

সময় গেলে সাধন হবে না ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।