অদ্ভুত আঁধারের কুশীলবরা

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৩/২০১৫ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)

ছোটবেলায় আমাদের কে পরিবার আর স্কুলে শেখানো হয় বেশি প্রশ্ন করা যাবে না, বেশি প্রশ্ন করা বেয়াদবি। আর ঠিক তাই বেয়াদবির পথে না গিয়ে আমরা শান্ত, শিষ্ট, ভদ্র হতে শুরু করি আর বাবা-মার বাবা মায়ের মুখ দিন দিন উজ্জ্বল করতে থাকি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড় হতে-হতে আমরা যা কিছু শুনি, যা কিছু পড়ি, সবকিছুকেই অপরিবর্তনীয় আসমানী কিতাব মনে করি। স্কুলের স্যার বলেছেন পাকিস্থান মুসলমান, আমরাও মুসলমান আর মুসলমান-মুসলমান ভাই-ভাই। আর এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে কি করে আরেক ভাইকে সাপোর্ট না দেই? পরিবার আর ছোটবেলার এমন অসংখ্য শিক্ষা, বিশ্বাস আমরা আর বড় হয়ে বদলাতে পারি না। নিজে কষ্ট করে কিছু জানার, বুঝার চেষ্টা তাই আমরা ছোটবেলা থেকেই বাতিল করি। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র আমাদের জন্যে বিশ্বাসের পোশাক তৈরি করে রাখে আর আমরা বিনা প্রশ্নে সেই পোশাকে ঢুকে তাদের চাপিয়ে দেওয়া জীবন কাটাতে শুরু করি। ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পাশ দিয়ে বড় সার্টিফিকেট অর্জিত হলেও আমরা আর মৌলিক মানুষ হয়ে উঠতে পারি না। তাই বড় সার্টিফিকেট থাকাই মানেই সে প্রকৃত জ্ঞানী নয়। বড় সার্টিফিকেট মানুষকে মানুষে পরিণত করে না সব সময়। ড. সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির পন্ডিত হয়েও দীক্ষা নিয়েছিলেন রাজাকারের, দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন মানবতার বিপক্ষে। ড. সাজ্জাদের মতো এমন অসংখ্য উদাহারণ রয়েছে।

প্রশ্ন করাকে এখানে বেয়াদবি বলে মনে করা হয় অার মুক্তজ্ঞান চর্চা কে হত্যা করে জানিয়ে দেওয়া হয় মুক্তচিন্তা এখানে প্রাণনাশক এবং অবশ্যই নিষিদ্ধ। প্রশ্ন আসবে মুক্তজ্ঞান চর্চার সাথে প্রাণনাশের সম্পর্ক কোথায়? মুক্তজ্ঞান চর্চা প্রথাগত কোন কিছু কে প্রশ্নহীন-যুক্তিহীন-প্রমাণহীন হিসেবে মেনে নিতে শিখায় না। এখানেই মৌলবাদের সাথে মুক্তচিন্তার বিরোধ। মৌলবাদ মানেই পুরানো প্রথাকে আকঁড়ে ধরে থাকা। এই পুরানো প্রথাকে যখন মুক্তচিন্তার মানুষেরা যুক্তি আর প্রমাণের ভিত্তিতে বাতিল করে দেয় ঠিক তখনি মৌলবাদীরা, মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে। মৌলবাদের শুরু যেখান থেকে সেই ধর্ম ও সেই প্রথাগত একটি বদ্ধ ধারা। যেখানে বলা হয় দুনিয়ার তাবৎ সমস্যার সমাধান দেওয়া আছে একটি কিংবা অল্প কিছু সংখ্যক পুস্তকে। অথচ আমরা জানি জ্ঞানের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। একটি মাত্র পুস্তকে জ্ঞানের সীমারেখা টেনে দেওয়া যায় না। যদি পৃথিবীর সব মানুষ-ই একটি মাত্র পুস্তক কে দুনিয়ার সকল সমস্যার সমাধান ধরে নিতো তাহলে মানুষ এখনো গুহাবাসী হয়ে থাকতো, থাকতো বনে জঙ্গলে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যেতো রোগে-শোকে-মহামারীতে। গুহাবাসী মানুষ থেকে আজকের সভ্য মানুষে পৌছে দিয়েছে মুক্তজ্ঞান চর্চা তথা বিজ্ঞান। মানুষের আধুনিক সভ্যতার সকল কিছুই তাই বিজ্ঞানের দান।

আমরা জানি ধর্ম একপ্রকার অন্ধ বিশ্বাস। এখন কেউ যদি ধর্ম পালন করে নিজের জীবন কাটাতে চায় সেটি একান্ত তার ব্যাক্তিগত বিষয়। তেমনি কেউ যদি কোন প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসী না হয়ে নিজের অবিশ্বাস নিয়ে জীবন কাটাতে চায় সেটিও তার ব্যাক্তিগত বিষয়। কিন্তু কোনটির চর্চা শেষ পর্যন্ত আর ব্যাক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ থাকে না। বৃক্ষ যেমন তার শাখা-প্রশাখা দিয়ে বিকাশিত হতে চায় তেমনি প্রতিটি মানুষ তার বিশ্বাস আর জ্ঞান দিয়ে তার মতবাদকে জনে জনে ছড়িয়ে দিতে চায়। সেই সহজাত বৈশিষ্ট্যেই একজন ধার্মিক মানুষ চাইবে তার মতবাদ, তার বিশ্বাস প্রচার করতে, তেমনি একজন নাস্তিক ও চাইবে তার অবিশ্বাস প্রচার করতে। শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের জন্যে সেই মতবাদ প্রচার হতে হবে অবশ্যই অন্য মতবাদ/বিশ্বাসকে দমন কিংবা খতম করে নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। প্রথগত ধর্ম অবিশ্বাসীদের মতবাদ প্রচারের জবাব এখানে চুরি দিয়ে দেওয়া হয়, অস্ত্র দিয়ে দেওয়া হয়। আর যেই অজুহাতে এটি করা হয় তার নাম ধর্মানুভূতি।

মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর আত্নঘাতী আবিষ্কারটির নাম হলো ধর্মানুভূতিতে আঘাত। ঠিক কোথায় কতটুকু ধর্মের বিপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ সহ বললে/লিখলে/প্রচার করলে ধর্মানুভূতিতে আঘাত আসবে তা খোদ ধর্মের হর্তা কর্তারাও বোধহয় জানে না। তারপরও আমাদের এখানে ধর্মের অসাড়তার বিপক্ষে লেখা নিরীশ্বরবাদী দের নানান ভাগে ভাগ করা হয়। উগ্র-মধ্যম-শান্তিপ্রিয় নাস্তিক সহ নানান শ্রেণী বিভাজন চলে। একজন সত্যিকার ধার্মিক মানুষের কাছে সৃষ্টিকর্তার বিপক্ষে প্রশ্ন করাই অনুভূতি তে চরম আঘাত হতে পারে আবার একজন মডারেট ধার্মিকের কাছে সেটি স্বাভাবিক মনে হতে পারে। তাই ধর্মানুভূতিতে আঘাতের পরিমান, পরিমাপ করা সহজ কাজ নয়। তবে অনুভূতির এত মারপ্যাঁচে একটি বিষয় সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় পৃথিবীতে আর কোন অনুভূতিই এতটা কোমল, ভঙ্গুর আর নড়বড়ে নয় নয় যতটা না ধর্মানুভূতি। কোমল-ভঙ্গুর অনুভূতিকে মজবুত করতেই বোধহয় বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে ৫৭ ধারার।

(২)

একটি আধুনিক প্রগতিশীল রাষ্ট্রে সব ধরনের মতবাদ প্রচারের সমান সুযোগ থাকা উচিত। আগেই বলেছি অামাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। তারপরও যারা নানান চোখ রাঙানোকে পেছনে ফেলে অন্ধকার দূর করে মানুষের মাঝে আলো জ্বেলে দিতে মুক্তজ্ঞান চর্চা করে, তাদের কে নানান সময় নানান ভাবে হয়রানি করা হয়। এমনকি হত্যা করে জানিয়ে দেওয়া হয় তোমাদের অধিকার নেই প্রশ্ন করার, মত প্রচার করার। মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা কিংবা নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন কোন ঘটনা নয়। সারা বিশ্বে মৌলবাদীরা তা করে এসেছে যুগে যুগে।

মৌলবাদী ব্যতিত ও আরেকটি শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে যারা এদের থেকে কম ক্ষতিকর নয়। এর একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি ভন্ড প্রগতিশীল মানুষজন। এই সমস্ত ভন্ড প্রগতিশীল মানুষেরা দাবি করে তারা মৌলবাদী দের ঘৃনা করে, মুক্তচিন্তার মানুষের উপর আক্রমন কে নিন্দা করে। কিন্তু সেই নিন্দা জ্ঞাপনে তারা যুক্ত করে দেয় অসংখ্য অব্যয় মূলক শব্দ। যেমন বলে ‘আমিও বিচার চাই এমন বর্বতার কিন্তু নাস্তিকদের এভাবে লেখা ঠিক নয়’ কিংবা ’এমন হত্যাকান্ড অপরাধ তবে নাস্তিকদেরও দোষ আছে, একজন না ঘাটলে অন্যজন তো ক্ষেপবে না। আপতত দৃষ্টিতে এমন সাম্য তে ভরা গোল গোল কথা থেকে আপনি অনেক প্রগতিশীলতার রস খুঁজে পেতে পারেন কিন্তু একটু গভীরে গেলে তাদের ভন্ডামিটা চোখে পড়বে। তাদের কথা মতো শুধু মাত্র নাস্তিকরা খোঁচা দিলেই আস্তিকরা ক্ষেপে যায়। তো ভাইজান আস্তিকরা যখন নানান জায়গায় অন্যকে বাতিল করে/আঘাত করে তখন কি সেটি নাস্তিক কে খোঁচা দেওয়া হয় না ? নাস্তিক কে যখন কোপানো হয় তখন কি নাস্তিকদের অনুভূতিতে আঘাত করে না? তারা কি অনুভূতিশীল মানুষ না? সেই আঘাতে নাস্তিকেরা কি দু-চারজন আস্তিকের কল্লা নামিয়ে ফেলে? না নামিয়ে ফেলে না, তবে নাস্তিকরাও আঘাত প্রাপ্ত হয়, তারা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কোনদিন চুরি হাতে তুলে নেয় না, তাদের শক্তি কলম আর সেই কলম দিয়েই তারা প্রতিবাদ করে। তাহলে নাস্তিকেরা এত খারাপ হয়েও যেখানে খুন করে না সেখানে আস্তিকেরা এত ভালু হয়ে কেন রক্তের পথে যায়? হ্যাঁ ঠিক এই প্রশ্নের জন্যে আপনার উত্তর খানা যে কি হবে সেটাও সবার জানা। এই দায়ভার লুকাতে আপনি নিয়ে আসবেন ‘সহি তত্ত্ব’। খুনী সহি ধার্মিক নয় বলে দায় এড়িয়ে যাবেন সেই পুরোনো কৌশলে।

আপনার অনুভূতি আঘাত পেলে আপনি মামলা করেন, রাষ্ট্র আপনার জন্যে আইন তৈরি করেছে। কিন্তু অনুভূতির দোহাই দিয়ে কাউকে হত্যা করার কথা বাংলাদেশের কোথা ও বলা নেই। একটি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে বা যারা নাস্তিকতার নানান তত্ত্ব দিয়ে হত্যাকান্ডটি কে হালকা করতে চায় তারা মৌলবাদী দের চেয়েও ভয়ংকর। এরাই ভন্ড, এরাই ষড়যন্ত্রকারী, এরাই দলকানা। আর এই ভন্ড দলকানা মানুষজন আমাদের সমাজে মৌলবাদী দের চেয়েও বেশি।

(৩)
যারা মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি-কিন্তু-তবে যুক্ত করে তাদের ভন্ড-দলকানা কেন বলছি? অভিজিতদার হত্যাকান্ডের কথাই ধরা যাক। এই হত্যাকান্ড আমাদের কে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেটা কিভাবে? অভিজিতদা কে হত্যার আগেও এ দেশে এমন হত্যাকান্ড ঘটেছে। হুমায়ুন আজাদ কে এই বইমেলাতে কুপিয়েছে প্রায় এগার বছর হয়ে গেলো অথচ কোন আসামীর সাজা হয়নি এখন পর্যন্ত। সাজা হয়নি রামুতে বৌদ্ধ মন্দির আক্রমনকারীদের, বিচার হয়নি নির্বাচনের পর যত ধরনের নির্যাতন হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপর। আজ পর্যন্ত কোন সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে একজন মানুষকে ও অপরাধী করে শাস্তি দিতে পারেনি এই দেশের কোন সরকার। এমনকি বর্তমান সরকার ও নয়। আমরা জানি একটি হত্যাকান্ডের বিচার শুধু সেই অপরাধের শাস্তি নয়। এক হত্যাকান্ডের বিচারের মাধ্যমে সমাজে-রাষ্ট্রের অপরাধীদের কাছে একটি বার্তা দেওয়া হয় যে অপরাধ করলে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। আর এই দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বার্তাটি-ই পরবর্তী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটি করা হয়নি বলেই মুক্তমনা লেখক/ব্লগারদের হত্যা প্রতিনিয়ত ঘটছে।

আর সেই কারণে অভিজিত হত্যার দায় তাই বর্তমান সরকারও এড়াতে পারে না। অভিজিতদা কে হত্যার হুমকি দেওয়া মানুষদের কেন আগে গ্রেফতার করা হলো না? একটা সভ্য দেশে প্রকাশ্যে কাউকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পরও কি করে সে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে? এটা কি সরকারের উদাসীনতা প্রমাণ করে না? হ্যাঁ ঠিক এই বিষয়গুলো যখন উঠে এসেছে নানা আলোচনা আর প্রতিবাদী কন্ঠস্বরে তখনি দলকানা প্রগতিশীলদের আবির্ভাব হয়েছে। তেমনি এক প্রগতিশীলের একখান পোষ্টে সেদিন দেখলাম। তিনি লিখেছেন

লেখক অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যার পর যত প্রতিবাদ হচ্ছে, প্রতিরোধের ঘোষণা আসছে আর ক্ষোভে জ্বলছে মানুষ, তার সিকিভাগও গত দু'মাসে পেট্রোল বোমার আগুনে কয়লা হয়ে মরা মানুষগুলোর জন্য দেখা যায়নি।’

অর্থাৎ তিনি দুটো ভিন্ন ঘটনার তুলনা টেনেছেন। দুটো ঘটনা কখনো এক নয়। অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ড অন্য দশটি হত্যাকান্ডের মতো নেহাত একটি হত্যাকান্ড নয়। এই হত্যার মাধ্যমে অসংখ্য নতুন-পুরাতন মুক্তমনা লেখক কে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে ’যদি তুমিও অভিজিতের মতো প্রথা বিরোধী লেখালেখি করো তবে তোমার ও পরিণতি তাই হবে। তাই অভিজিত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শুধু ক্ষোভ আর ঘৃনা নয় অস্থিমজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ভয়! আমি নিশ্চিত এর মাধ্যমে অসংখ্য মুক্তমনা লেখক নিজেকে গুটিয়ে নিবেন লেখালেখি থেকে। কারণ দিনশেষে আমরা সবাই পারিবারিক-সামাজিক প্রাণী। আমাদের কে পরিবারের কথা শুনতে হয়, পরিবারের মানুষগুলোর আপদ-বিপদের কথা ভাবতে হয়। প্রত্যেক লেখক জানে পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া লেখালেখি সম্ভব না। আর এই নরকে মৌলবাদীর চুরির তলে দাঁড়িয়ে কোন পরিবারি কাউকে লেখালেখির সাহস আর অনুপ্রেরণা টুকু দিবে না। তাই এ বড় অদ্ভুত আঁধারে ঘেরা সময়।

মহান প্রগতিশীল ব্যাক্তিটি অভিজিৎ হত্যার প্রতিবাদ যারা করেছেন তাদের উপর ব্লেম করছেন, তারা কেন পেট্রোল বোমায় হত্যাকারীদের বিষয়ে চুপ ছিলেন। ধরে নিলাম এরা চুপ ছিলো (যদিও অভিজিত হত্যার বিষয়ে যারা আজ প্রতিবাদ করছে তাদের বেশি ভাগি পেট্রোল বোামর বিষয়ে চুপ ছিলো না) তো ভাইজান কে যদি তার মতো তুলনা দিয়ে করে প্রশ্ন করি, ভাইজান আপনি কোথায় ছিলেন যখন লঞ্চ ডুুবে শত শত মানুষ মারা গেলো? কয়টার প্রতিবাদ করেছেন? সুন্দরবনে যখন তেলের জাহাজ ডুবে পরিবেশ বিপর্যয় করলো তখন মন্ত্রি শাহজাহানের কথার কি প্রতিবাদ করেছিলেন আপনি আর আপনার গ্রুপ? প্রতিদিন যে বিএসএফ মানুষ মারছে সীমান্তে তার কয়টার প্রতিবাদ করছেন আপনি? পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার কি কি প্রতিবাদ করেছেন? এগুলো অন্যায় ছিলো না?

এমন শত শত প্রশ্ন করা যায়? সত্যি কথা হলো একটা মানুষ রাষ্ট্রের সব অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার বিষয়ে কথা বলতে পারে না। কারণ সব বিষয়ে বলার মতো জ্ঞান আর সময় তার থাকে না। যেসব রাষ্ট্রীয় বড় অপরাধ-অন্যায় তাকে গভীর ভাবায়, আহত করে তাকে সেটির প্রতিবাদ করে, মতামত দেয়। এটাই স্বাভাবিক। মৌলিক বিষয় ছাড়া তাই মতামত আর প্রতিবাদে ভিন্নতা থাকতে পারে। ন্যায়-অন্যায় বিবেচনাবোধ থেকে দূরে থেকে শুধুমাত্র দলকাণা কিংবা ব্যাক্তিপূজারীরা তাদের দল আর ব্যাক্তির বাইরে কথা বলে না। কিন্তু সেই দলকানারা যখন অন্যরা কে কি বিষয়ে কথা বলবে আর বলবে না সেটা নির্ধারণ করে দিতে চেষ্টা করে তখন তাদের মাঝেও মৌলবাদের প্রকাশ ঘটে। আপনি দুটো অন্যায়ের একটি অন্যায়ে চুপ থাকবেন আর অন্যরা আপনার অপছন্দের অন্যায়টির প্রতিবাদ করবে তখন সেই প্রতিবাদের সাথে অন্য আরো দশটি ইস্যু যোগ করে সেটিকে দোষারপ করবেন এটি কেমন কথা? ঠিক এমনটা হতে দেখেছিলাম শাহবাগের গনজাগরণ মঞ্চে রাজাকারের ফাঁসির দাবি যখন উঠেছে। রাজাকারের ফাঁসির সাথে সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ, হলমার্ক সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। এখানে ও যখনি আওয়ামি লিগের উপর দোষ পড়ছে তখন-ই তিনি এই মহান প্রতিবাদ তত্ত্বের জন্ম দিলেন। তিনি পোষ্টে বলছেন

”উগ্র নাস্তিকতার জন্যে নাস্তিকরা অশিক্ষিত আস্তিকদের কোপ খাচ্ছে

। বাহ বেশ সুন্দর কথা, উনার এই কথাকেও সত্য বলে মেনে নিলাম। ভাইজানের কাছে এখন প্রশ্ন চ্যানেল আই এর ইসলামিক অনুষ্ঠান 'কাফেলা' উপস্থাপক মাওলানা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী কি উগ্র নাস্তিক ছিলেন? তিনি তো আস্তিক ছিলেন, তাহলে তিনি কেন খুন হলেন? কাল যদি মৌলবাদীরা বলে টিভি দেখা নাস্তিকের কাজ, ফেসবুক-ব্লগ চালানো নাস্তিকের কাজ আর সেই কাজের জন্যে যদি আমাকে আপনাকে হত্যা করে তখনও কি দিয়ে যাবেন উগ্র নাস্তিক-শান্ত নাস্তিক তত্ত্ব?

দলকানা দের আরেকটি কথা বলতে খুব শুনা যায় সেটি হলো দেশের বেশি ভাগ মানুষ যেখানে ধর্মান্ধ সেখানে এইসব বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। কথা বলে সরকার কে বিপদে ফেলার কোন মানে নেই। অর্থাৎ সবকিছু সরকার কে রক্ষার্থে! যদি তাদের এই কথাই সঠিক হতো তাহলে ব্রুনো’র কোন দরকার ছিলো না বেশিভাগ ধর্মান্ধদের বিপক্ষে কথা বলে আগুনে পুড়ে মরার, সমাজের শান্তি রক্ষার্থে ডারউইনের কোন প্রয়োজন ছিলো না ধার্মিকদের বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করে বিবর্তন তত্ত্ব পেশ করার। ডারউইন-গ্যালিলিও-ব্রুনোর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের এই দেশকে দিয়েই উদাহারণ দেই। সবকিছু যারা খুব সহজে জনগনের উপর চাপিয়ে দেয় তাদের স্মরণ রাখা উচিত সাতচল্লিশে যে রাষ্ট্র টি ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছে ঠিক সেই রাষ্ট্র’ই মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছিলো? যাদুর মতো সেটি কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো? চব্বিশ-পঁচিশ বছরের ব্যবধানে কি সব ধর্মান্ধ মানুষ প্রগতিশীল মুক্তমনা হয়ে গেলো? না কোন যাদুতে দেশের মানুষ বদলে যায়নি। কিন্তু একজন অতুলনীয় সাহসী যাদুকর নেতা থাকলে স্থান-কাল-পাত্র ও যে বড় মিয়ম্রান হয়ে যেতে পারে তার নেতৃ্ত্ব গুণে, জন্ম হতে নতুন একটি মানচিত্রের, স্রোতের বিপরীতে দেশকে চালিত করে সেই দেশের চেহারা বদলে দিতে পারেন এমন একজন যাদুকর আমাদের ছিলেন। আমরা জানি সেই যাদুকরের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার এক তর্জনীতে শত ষড়যন্ত্রের জাল বিদীর্ণ করে এই বাঙলায় স্বাধীনতা সূর্য উদিত হয়েছিলো, জন্ম হয়েছিলো ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের।

আরেক দলকানা প্রগতিশীল ছেলিব্রেটি অঞ্জন রায় কে দেখলাম ’সহি প্রগতিশীলতার তত্ত্ব দিতে’। তিনার মতে

ফেসবুক-ব্লগে ধর্মকে আক্রমন করে যারা লেখে তারাই নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

এরা নাকি সহি প্রগতিশীল নয়! মুগ্ধ হলাম এমন সহি তত্ত্বে। চারিদিকে এখন সহি তত্ত্ব। সহি মসুলমান তত্ত্ব, সহি সাম্য তত্ত্ব, সহি মানুষ তত্ত্ব, সহি দেশপ্রেম তত্ত্ব। অসংখ্য ছেলিব্রেটির অসংখ্য সহি তত্ত্বের নিচে প্রতিদিন চাপা পড়ছে বাংলাদেশ। তার চোখে রাজাকার-খুন-সন্ত্রাস-দুর্নিতি-মৌলবাদ-অপ-শাসনকারী-পেট্রোলবোমাকারী-লুটপাট-দখলদারি-মিথ্যাচারকারী এগুলো কোনটাই দেশের জন্যে ক্ষতিকর নয়, সব ক্ষতি নাস্তিকরা করে। এমন সহি কপাট মুর্খ প্রগতিশীল মানুষে চারপাশ ভরে উঠছে দেখতে খারাপ লাগে না।

ছেলিব্রেটি জগতের অন্যতম সাম্যবাদী পিনাকী যেমন বলেছেন

’ হেফাজতের রক্ত লাল, অভিজিতের রক্ত লাল ‘

। কবি নজরুল বেঁচে থাকলে পিনাকী কে নিয়ে আরেকখান সাম্যের গান নিশ্চিয় লিখে ফেলতেন। দু-কূল রক্ষাকারী পিনাকী কে বলতে ইচ্ছে হয়

’পাকিস্থানী জানোয়ারদের রক্তও লাল, আর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও লাল। তাহলে দুটো কি সমান?

কোনদিন সমান নয়।

কিন্তু তারপরও তিনি বলেছেন। কারন এমন দুই পক্ষ কে খুশি রেখে কথা বলে অনেক লাভ এটা পিনাকীর মতো ভন্ড প্রগতিশীলরা জানে। ঠিক মতো দুই কূল রক্ষা করতে পারলেই এতো বিশাল ছাগুগোষ্ঠির সমর্থন পাওয়া যায়।

(৪)

খুন যে কোন সমাজে, যে কোন রাষ্ট্রেই হতে পারে, হয়। সেটি সরকারের চরম ব্যর্থততা মাপার একমাত্র পরিমাপক নয়। সরকার তখন ব্যর্থ হয় যখন খুনীরা খুনের সাজা পায় না, অপরাধের যখন বিচার হয় না এবং একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে। অপরদিকে পিনাকী-অঞ্জন রায়-হাসিব হকের মতো মানুষেরা যতই সব হত্যাকান্ডের সাথে অভিজিত-আজাদদের হত্যাকান্ডকে মিলিয়ে ফেলুক আমরা জানি এটি এক প্রকার মূর্খতা আর সরলীকরণ। হেফাজত কর্মীরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে মারা গেছে আর আজাদ/অভিজিত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে গিয়ে খুন হয়েছেন। সুতরাং দুটো ঘটনা কখনো এক নয়। মৌলবাদিদের দ্বারা হত্যাকান্ডের বিচারে গড়িমসি কিংবা আপোষ করলে অবহেলাকারী সরকারের সমালোচনা অবশ্যই হওয়া উচিত। সঠিক সমালোচনাকারী দের আপনারা যখন নানান ট্যাগ দিয়ে আসলে আপনারা নিজের অন্ধ দলপ্রেম-ই প্রমাণ করছেন। মৌলবাদীরা অন্ধ ধর্মান্ধতায় আর আপনারা অন্ধ দলপনায়। এই অদ্ভুত আঁধারে ঘেরা সময়ে অন্ধ প্রগতিশীল দলকানা কুশীলবদের জঞ্জাল ঠেলে বাংলাদেশ জেগে উঠুক সাহসী-সত্যভাষী মুক্তমনাদের পদচারণায়।


মন্তব্য

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরা লেখাটি খুবই মনে ধরেছে।
আমাদের দেশের সরকারের অবস্থা লেজ দ্বারা নাড়িত কুকুরের মত। আর সে শক্তিশালী লেজ হ’ল তাদের মোটা মাথায় করা ভোটের হিসেব। তারা ভাবে কাঠ মোল্লা আর উগ্র ধার্মিকদের সজ্ঞানুসারে ‘নাস্তিক’ ঘোষিত রাজিব, হুমায়ুন আজাদ বা অভিজিৎদের হত্যার বা হামলার অভিযোগে কারও ফাঁসি দিলে সে ধুয়ো তুলে তাদের ভোট কমানো হবে। তাই সরকার কখনও সোজা আঙ্গুলে ঘি তোলার সমতুল্য কোন চাপে এদের ফাঁসি দিবে না। যখন বাঁকা আঙ্গুলে ঘি তোলার সমতুল্য কোন চাপ আসবে তখনই সক্রিয় হবে। আমি নিশ্চিৎ, যদি কোন কারণে অভিজিতের সাম্প্রতিকতম পাসপোর্টের বরাতে কোন চাপ আসে তবেই সরকার হত্যাকারীদের বিচার করবে অন্যথায় কোনদিনই এ হত্যার বিচার করবে না। ঐ রকম চাপ আসলে তারা ভোটের মূলার লোভ পরিহার করতে বাঁধ্য হবে।
আর ধর্মানুভূতি তো সর্বাধিক বেশী মাত্রায় ব্যবহৃদ ধর্ম-মিথ্যাস্ত্র । যারা প্রকৃত ধার্মিক তাদের ধর্মানুভূতিতে অন্যের কৃত কর্মের জন্য কখনই আঘাত লাগে না। আমার গ্রামের মৌলভী চাচা ‍যিনি শর্তহীন ধার্মিক, তার ধর্মানুভূতিতে কোন কিছুতেই আঘাত লাগতে দেখিনি। মতলববাজরা তাকে যখন বলে, চাচা, ওমুক ধর্মের তুমুক স্তম্ভের ব্যাপারে তুমুক বাজে কথা বলেছে। আপনি এর একটা বিহিত করুন। চাচা নির্বিকার থাকেন। কিছুক্ষণ চিন্তা করেন। তারপর বলেন, তোমরা-আমরা সবাই যদি ঐ স্থম্ভ সম্বন্ধে সঠিক কথা বলি তবে ওমুক একা বাজে কথা বলে কিছু করতে পারবে না। তারপরও যদি তোমরা সত্যিই এ বিষয়ে কিছু করতে চাও তবে আল্লাহ’র কাছে ওর জন্য দোয় চাও যাতে তিনি ওর মন পরিবর্তন করে দেন। ধর্মানভূতির দরকার হয় তাদের যারা এটাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বা ইহজাগতিক ফায়দা লুটতে চায়। এসব ধর্মনুভূতি ব্যবসায়ীদের রোধ করার জন্যই যুগেযুগে আজাদ-রাজিব-অভিজিৎরা আসে। উগ্রবাদীরা তাদেরকে শেষ করতে চাইলেও পারে না। তারা শুধু পারে তাদের রূপান্তর ঘটাতে। তাইতো নিহত আজাদ-অভিজিৎরা মারা যাবার পর আরও শতগুন শক্তিশালী আজাদ-অভিজিতে রূপান্তরিক হয়।

- পামাআলে

মাসুদ সজীব এর ছবি

আমার এক দুলাভাই আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিলো অভিজিতদা হত্যার দুই-চারদিন আগে। তিনি অত্যান্ত ধার্মিক মানুষ। অভিজিতদা খুন হওয়ার খবর যখন প্রকাশ পেল তখন আমার অনেক পরিচিত মানুষজন, এমনকি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি করা কাছের মানুষজন ও বলেছে ’কি এমন লিখেছেন যে খুন করে ফেললো’। অর্থাৎ লেখার মাত্রা দিয়ে খুনের অপরাধ মাপার যে সিস্টেম আমাদের সমাজে চালু আছে তার পূ্র্ণ প্রতিফলন। আর তিনি বলেছেন “মানুষ খুন করার কোন বৈধ কারণ থাকতে পারে না”। কি লিখেছে আর না লিখেছে সেটা পড়ে দেখার কোন প্রয়োজন নেই, খুন করাই অপরাধ। খুন করা মানা যায় না।

শুধু দুলাভাই নয়, বিদেশে থাকা অন্য আরো অনেকের সাথে কথা হয়েছে এটা নিয়ে। কেউ’ই এই হত্যাকান্ডর নিন্দা করার আগে প্রশ্ন করেনি উনি কি লিখেছেন। এখন দু-দেশের দু-ঘরনার মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলেই অামাদের দেশের প্রগতিশীলতা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সহজে বুঝা যায়। আমাদের দেশের সত্যিকার ধার্মিকরা তো দূরের কথা তথাকথিত প্রগতিশীলরাও যেখানে একটা অন্যায়কে অন্যায় বলা আগে আরো কতগুলো অন্যায় কে টেনে আনে সেখানে বিদেশে বসবাসকারী ধার্মিক মানুষ সরাসরি সেটাকে অন্যায় বলে। এমনটা হয়েছে আসলে পরিবেশের জন্যে। মুক্ত পরিবেশে বড় হলে মানুষের মনের দরজা-জানালাগুলোও বড় হতে থাকে, মানুষের ধার্মিকের চেয়েও বেশি মানবিক হয়ে ওঠে। অন্যায়কে সরাসরি অন্যায় বলতে না পারার প্রগতিশীল মানুষ আমাদের দরকার নেই, অন্যায়কে সরাসরি অন্যায় বলতে পারে এমন ধার্মিক মানবিক মানুষ আমাদের প্রয়োজন।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

"আসবে পথে আধার নেমে,
তাই বলে কি রইবি থেমে--
ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি,
হয়তো বাতি জ্বলবে না।।"

আমি সন্দিহান পৃথিবীতে কয়টা মানুষ আস্তিক, সবাই , হ্যা সবাই কোন না কোন দিক থেকে নাস্তিক, আর এ নাস্তিকতার বড় কারন হলো মানুষ যুক্তি দিয়ে কোন কিছুকে বিচার করতে জানেনা।
-------------------
রাধাকান্ত

মাসুদ সজীব এর ছবি

কোন না কোন দিক থেকে মানুষ নাস্তিক হয় না। নাস্তিক-আস্তিকের মাঝামাঝি কোন পর্যায় নেই, যে কোন দিকে নাস্তিক হবে আর কোন দিকে আস্তিক হবে।

নাস্তিকতার বড় কারন হলো মানুষ যুক্তি দিয়ে কোন কিছুকে বিচার করতে জানেনা।

বুঝলাম না? নাস্তিকতরা যুক্তি দিয়ে বিচার করে না?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে বলি, তুমি আমার মতকে ধারন না করলে বা বিশ্বাস না করলে আমি তোমাকে নাস্তিক বলবো বা একই ঘটনার জন্য তুমিও আমাকে নাস্তিক বলতে পার। যদি শুধু ধর্মের বিচারে বলি, সনাতনীদের কাছে মুসলমানরা যবন ,বিধর্মী ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার ইসলামিস্টদের কাছে অন্য ধর্মের মানুষরা মালাউন, নাস্তিক । আর নাস্তিক দর্শনে বা চার্বাক দর্শনে বিশ্বাসী হলে উপাধি পাবে কাফের!

তাহলে পারস্পরিক ভাবে বিশ্বাসী না হলে বা একই মতের মতাবলম্বী না হলেই এখন নাস্তিক উপাধি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এবার আসি ওরা(ছাগুরা/ফারাবিয়রা) কেন অভিজিত দা দের মতো মানুষকে নাস্তিক বলে ?কারন অভিজিত দা দের যুক্তি কোন দিন ওরা বুঝতে পারেনা।আসলে নাস্তিক কিন্তু হুমায়ুন, অভিজিতরা নয়। নাস্তিক ওরাই, যারা অবলীলায় অন্যকে জখম করে । কেননা ওদের অস্তিত্বের উপর ওদেরই যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।মানুষ যদি যুক্তিতে বিচার করতো তাহলে নাস্তিকতার প্রশ্নই আসতো না।

আমার উপরের মন্তব্যটা একটু এডিট করে দিলাম!

মাসুদ সজীব এর ছবি

এটা নাস্তিকতার সংজ্ঞা নয়। তুমি যেটা বলেছো সেটা বাতিল তত্ত্ব, এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষ কে বাতিল করে যেভাবে। অার নাস্তিকতা হলো প্রথাগত কোন ধর্মের উপর’ই যার কোন বিশ্বাস নেই। নাস্তিক কোন দিন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান হয় না।

ধর্ম একটা অন্ধ বিশ্বাস, আর অন্ধ বিশ্বাসের সাথে যুক্তি চলে না। সুতরাং ধার্মিকরা যুক্তির পথে হাঁটবে না এটাই স্বাভাবিক। তোমার অবজারভেশান ভুল, ফারাবিরা আস্তিকতার সঠিক পথেই আছে, ওটাই ওদের ধর্ম। মানুষ যুক্তির বিচার করে বলেই নাস্তিকতার জন্ম। বরং যুক্তির বিচার না করলে নাস্তিকতার জন্ম হতো না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাতিল করতে গিয়ে একজন আরেকজন কে নাস্তিক বলছে।তাই কি এখন হচ্ছে না? উগ্র্রবাদী পক্ষটাই নাস্তিক উপাধি বেশী দিচ্ছে। আমি বলছি সহমতে না চললে তুমি বাতিল করতে পার কিন্তু নাস্তিক উপাধি দিয়ে খুন করতে পার না। দেখা যাক, ধর্মীয় ব্যপারগুলোতে আঙ্গুল তোলার কারনে একটা আখ্যানে এসে তোমাকে জখম করা হলো কিসের দর্শনে ?বাতিল করার মন মানষিকতা যখন উগ্ররুপ ধারন করে তখনই শুরু হয় উন্মাদনা যে উন্মাদনাটা ফারাবিরা করছে।নাস্তিকরা একটা ধর্ম বহন করে চলে , ধর্মহীন কোন কিছু কি আছে? প্রথাগত ধর্ম যদি প্রবর্তিত ধর্মগুলোকে বোঝায় তাহলে সংস্কারের অভাবে তা অন্যদিকে মোর নেয় । “পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম এই রকম একটা দর্শন নিয়েই গীতা রচিত” তাহলে প্রথাগত ব্যপারকে সংস্কার ও যুক্তির মাধ্যমে ভেঙ্গে নতুন রুপ দিতে হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু বেসিকটা একই থাকবে।
“আর ধর্ম একটা অন্ধ বিশ্বাস”--- এটার সাথে সহমত নই।
ধর্ম একটা বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস নয়।অন্ধ বিশ্বাস তখনই হয় যখন সুসংস্কারকে তুমি স্থান দেবে না ও প্রথাগত ব্যপারকে মজ্জাগত করে মেনে চলবে ।
যেমন ধরো রামমোহন ও বিদ্যাসাগর , বিবেকানন্দের হাত দিয়ে সনাতন ধর্মের কিছু সংস্কার এসেছে।মুক্তমনায় বিপ্লবদা বিবেকানন্দকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন আমার খুব ভাল লেগেছিল । একবারে নির্মোহ বিশ্লেষন কিন্ত আমি তো বিবেকান্দের শিষ্য তাই বলে কি বিপ্লবদার লেখা বাতিল করে দিয়েছি?কিন্তু উগ্রবাদীরা বিপ্লব দাকে অনেক কিছুই বলতো ।
কাজেই ধার্মিকরা যুক্তির পথে হাটবে না এটাও বোধহয় ভুল । তবে এক্ষেত্রে যুক্তিবাদী ধার্মিক খুব কম হয়তো পাওয়া যাবে। চরম দার বাবা কিন্তু ধার্মিক আবার যুক্তিবাদী ।
ফারাবিরা ওদের পথে হাটবে ঠিক আছে তবে কতটুকু আস্তিক তা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার ।
নাস্তিকতা একটা দর্শন । তাই যুক্তি বিচারেও এটাকে কেউ অতিক্রম করতে পারবে না । কিন্তু উগ্রবাদী মানুষগুলো এটাকে বাতিল করে দিতে চাইছে । তাই যুক্তির বিচার করে বলেই নাস্তিকতার জন্ম এটার সাথে সহমত নই ।

---------------
রাধাকান্ত

মাসুদ সজীব এর ছবি

তোমার বক্তব্যের মূল বিষয়ের সাথে একমত হলেও নাস্তিকতা বিষয়ে তোমার ধারনার সাথে একমত নই।

নাস্তিকরা একটা ধর্ম বহন করে চলে , ধর্মহীন কোন কিছু কি আছে?

প্রথম কথা নাস্তিকেরা কোন ধর্ম বহন করে না, ধর্মকে বাতিল করে দিয়ে আবার আরেকটা ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করার নাম নাস্তিকতা নয়। সাধরাণ অর্থে ধর্ম বলতে ঈশ্বর বিশ্বাসী বুঝায়। যারা ঈশ্বর বিশ্বাস করে না তারা তো ধর্মহীন তাই না?

ধর্ম একটা বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস নয়।অন্ধ বিশ্বাস তখনই হয় যখন সুসংস্কারকে তুমি স্থান দেবে না ও প্রথাগত ব্যপারকে মজ্জাগত করে মেনে চলবে ।

বিশ্বাস বিষয়টাই অন্ধ। যা কিছু অ-প্রমাণিত তার উপর আস্থা রাখার নাম-ই বিশ্বাস। তুমি কোন দিন’ই বলো না আমি বাতাসে বিশ্বাস করি, আকাশ কে বিশ্বাস করি। এগুলো প্রমাণিত। কিন্তু তোমাকে বলতে হয় আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস করি, কারণ এগুলোর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই।

যুক্তির বিচার করে বলেই নাস্তিকতার জন্ম এটার সাথে সহমত নই

যুক্তিবাদী কি? যুক্তি মেনে নিজের ভুল হলে সেটি স্বীকার করে ভুলটা কে শুধরে নেওয়া। এখন কোন মানুষ যদি যুক্তি শুনে নিজের ভুল শুধরে না নেয় এবং যুক্তিবাদীর প্রতি কোন ক্ষোভ না পুষে তাহলে তাকে যুক্তিবাদী মানুষ বলা হয় না, তাকে বলা হয় সহনশীল মানুষ। তুমি এ সহনশীল আর যুক্তিগ্রহনকারী দুটোকে এক করে ফেলেছো। যুক্তির সাথে প্রমাণের সম্পর্ক থাকে, আর এ দুটো থেকেই বিজ্ঞান আর নাস্তিকতার জন্ম।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়নামতি এর ছবি

একটা কথা আছে জানেন তো, মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দিরও ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ‘ধার্মিক’! আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা আপনার কথামতো ‘অতিমাত্রায় নাস্তিক’। তারপরেও যত দোষ নাকি এই নাস্তিকদেরই, আর কৃষ্ণের বেলায় বরবাবরই ‘লীলা’। মজা না?

এটা অভিজিৎ'দা তার কোন একটা ব্লগপোস্টের মন্তব্যে বলেছিলেন।
কথায় ১০০% সত্যতা আছে। কিন্তু সেটা জোর গলায় স্বীকারেই যত কুন্ঠা। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যতই অস্প্রদায়িক, পরধর্ম/মত সহিষ্ণু রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলা হোক না কেন। কাজের ক্ষেত্রে সেটা প্রমাণে ব্যর্থ।

মাসুদ সজীব এর ছবি

সহমত।বাংলাদেশে দিনদিন সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে চারিদিকে বিস্তার লাভ করছে। আদর্শ আর নীতি বর্জিত রাজনীতির নানা হিসেব নিকেষে এই শক্তি দিন দিন প্রকান্ড আকার ধারণ করছে। যারা আজ তাদেরকে নানান জায়গায় ছাড় দিচ্ছে একদিন তাদের কে’ই একদিন এরা ছোবল দিবে আমি নিশ্চিত। সেই ছোবলের বিষ আমাদের কেও ছুঁয়ে যাবে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

রাসিক রেজা নাহিয়েন

মাসুদ সজীব এর ছবি

পড়ার জন্যে ধন্যবাদ হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।