প্রোজেক্ট : কালচারাল আইডেন্টিটি

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: শনি, ২৬/০৯/২০০৯ - ৩:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রেডিও ফুর্তি – এফ এম রীতি অনুযায়ী চলছে অর্থহীন কথার সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে বেঁধে দেয়া “অন-এয়ার” সময় পার করার চেষ্টা। “মরা গরুর হাড্ডির কারবারিরা” যথারীতি টেনে আনলেন সদ্যপ্রয়াত শাহ আবদুল করিমকে।

হঠাৎ এক আর জে গদগদ কণ্ঠে বলে উঠলো “আমরা শাহ আবদুল করিমকে মিস করছি”।

একটি নির্দিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের কিছু স্থির বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। “লোকজ” বলতে আমরা যা বুঝি তা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনাচার, সুদূর অতীতের লক্ষণ নয়। পূর্ণমাত্রায় বর্তমান ও অস্তিত্বশীল এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা কেবলই একটি নির্মিত অতীতের বাক্সে বন্দী করে ফেলার চেষ্টা করি।

এর কারণ আর কিছুই নয় – কারবার।

হাবিবের সিন্থেসাইজারে তাই সিন্থেসাইজ্ড হন শাহ আবদুল করিম। দশকের পর দশক মানুষের মুখে মুখে ফেরা তার গানগুলো হঠাৎ অতীত হয়ে যায়। জীবিত আবদুল করিমকে অতীত ঐতিহ্যের কাফনে ঢেকে শুরু হয় ভিক্ষাবৃত্তি।

বিক্রিটা ভালোই হয়।

যে কোনো উপনিবেশ পত্তনের প্রধান শর্ত যে অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপিত হচ্ছে ঐ অঞ্চলের মানুষের সঞ্চিত জ্ঞান সমূলে উৎপাটনে উপনিবেশসহায়ক তথ্যের প্রতিস্থাপন। যার ফলে ঘটে শাসিতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির পাইকারি উচ্ছেদ। বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর একটি জাতীয় পরিচয় গঠনের নিমিত্ত শুরু হয় হৃত ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধারের অভিযান। সেই অভিযান ক্রমে অতীত নির্মাণের প্রকল্পে রূপ নেয় [এইগুলা কিছুই আমার কথা না। ফানোঁ, স্টুয়ার্ট হল প্রমূখ বিজ্ঞজনেরা এ কথা বলে গেছেন]। আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এ প্রকল্পের ফায়দা তুলবেনা তা কি হয়? কাজেই মিনিপ্যাকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিচয় বিক্রি। নতুন মোড়কে, নতুন সুগন্ধ ও নতুন ফ্লেভারে। বসুন্ধরা সিটিতে হঠাৎ দেখি কাচের বাক্সে পুতুল নয় তাতে জামদানী শাড়ি বুনছেন একটি আস্ত রক্ত-মাংসের তাঁতী।

দেশী-দশের পোশাক কিনে আপনিও “দেশী” হয়েছেন তো?


মন্তব্য

ফকির লালন এর ছবি

খুব জরুরী কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। বার বার না বললে একথা কানে ঢুকবে না।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তবে এটাও সত্যি-- আধুনিক গায়করা বাউল গান তুলে না আনলে আমার মত শ্রোতার কাছে সে গান কোনদিনই হয়তো পৌঁছাতো না। আমি এটাকে আমার সীমাবদ্ধতা হয়তো বলবো না। কোনটা টিকে থাকবে আর কোনটা থাকবেনা সময়ই তার নির্ধারক।

শিরোনামহীন [অতিথি] এর ছবি

বাউল গান "আপনার মতো শ্রোতার" কাছে পৌছানোতেও বাউল গানের কোনোও লাভ ক্ষতি হয় নাই। সে তার জায়গাতেই আছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহারে, রাগ করেন কেন?

আমার মত শ্রোতা বলতে বুঝিয়েছি যারা গান টান একটু কম শোনে। বাউল গানের হয়তো কোন লাভ ক্ষতি হয়নি, তবে আমি বলতে চাইছিলাম আধুনিক ভাবে গাওয়ার ফলে বা ঐ গানগুলো নতুন করে গাওয়ার ফলেই শোনা হয়েছিল। না হলে কোনদিন কি শোনা হতো? মনে হয়না।

ব্লগার এর ছবি

"“লোকজ” বলতে আমরা যা বুঝি তা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনাচার, সুদূর অতীতের লক্ষণ নয়। পূর্ণমাত্রায় বর্তমান ও অস্তিত্বশীল এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা কেবলই একটি নির্মিত অতীতের বাক্সে বন্দী করে ফেলার চেষ্টা করি।"

- সব 'উন্নত' দেশেও এধরনের কারবার হয় কারন

১ শহুরে আর গ্রামীণ মানুষের জীবনধারার পার্থক্য
২ ছোটবেলায় গ্রামে বড় হওয়া কিন্তু স্বাভাবিক প্রয়োজনে শহুরে জনগনের নষ্টালজিয়াকে উগ্রে দেয়া
৩ নতুন প্রজন্মের বৈচিত্রের প্রতি আগ্রহ এবং গর্ব করার মত 'শেকড়ের' সন্ধান।

"হাবিবের সিন্থেসাইজারে তাই সিন্থেসাইজ্ড হন শাহ আবদুল করিম। দশকের পর দশক মানুষের মুখে মুখে ফেরা তার গানগুলো হঠাৎ অতীত হয়ে যায়।"

ভুল! দশকের পর দশক "গ্রামীণ" মানুষের মুখে মুখে ফিরতে পারে, "শহুরে" মানুষের মুখে মুখে ফিরতে হাবিব কে প্রয়োজন। এখানে অসততার কিছু নেই।

বিক্রিটা ভালোই হয়। - - ভুল! অনেকেই তার গান নিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছিলো , কিন্তু হাবিব বা ফুয়াদ ছাড়া অন্য কেউ পারেনি এবং হাবিব/ ফুয়াদের সর্ব সাকুল্যে ১৫ টা গানও নেই শাহ আব্দুল করিমের, তাদের মৌলিক গানের সংখ্যা ১০০ -এর উপরে এবং সেগুলার ব্যবসা শাহ আব্দুল করিমের গানের থেকেও বেশী, সে জন্য হাবিব আর ফোক গনের রিমিক্স করে না, ২০০২ সালে করা 'কৃষ্ণ' তার প্রথম/শেষ ফোক রিমিক্স এলবাম। তবে মাঝে মাঝে ১/২ টা ফোক রিমিক্স গান করে।

বেনসন এন্ড হেজেস আর লিপটন চা -এর আড্ডায় বসে পুঁজিবাদ সমাজকে ঢালাও ভাবে গালিগালাজ করার পাশাপাশি অন্য পার্সপেক্টিভে দেখলেও মনে হয় চিন্তাধারনার আরও কিছু খোরাক পাওয়া যায়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমার মনে হয় 'অসততা' বিষয়ে লেখক কিছু বলেন নাই। বলেছেন অতীন নির্মাণের একটি সুনির্দিষ্ট টেন্ডেন্সি সম্পর্কে। 'নতুন প্রজন্মের বৈচিত্রের প্রতি আগ্রহ এবং গর্ব করার মত 'শেকড়ের' সন্ধান।' বলে আপনি কি বুঝিয়েছেন জানি না। কিন্তু শেকড় শেকড়ই। এর আগে 'গর্ব করার মত' ফ্রেজ টা লাগিয়ে আপনি এক ধরণের কমপ্লেক্সের প্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে সন্দেহ করতে পারি। পুঁজিবাদী সমাজকে ঢালাও গালিগালাজও এখানে করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে আপনি ব্যক্তিগত আক্রমণে গিয়ে থাকতে পারেন। ডায়াসপোরা বা কালচারাল আইডেন্টিটির মতো প্রসঙ্গগুলো খুবই প্রব্লেমেটাইজড। কেবল অর্থনীতিক ব্যবস্থা দিয়ে এর ব্যাখ্যা চলে না।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ব্লগার এর ছবি

শেকড় শেকড়ই কথা সত্য কিন্তু সব শেকড়ের প্রতি আমরা আগ্রহী হই না, আমরা ডাইনিং টেবিল সরিয়ে মাদুর পেতে বসি না তবে মাদুর/নকশী কাঁথাকে আপন করেও নেই আমাদের মত করে। এ পরিবর্তন স্বাভাবিক। পপ কালচার / রুচি নির্মাণ / নন্দনতত্ব শুধুমাত্র পুঁজিবাদ মেনে চলেনা, সেটার নিজেস্ব ডাইনামিক্স আছে। কোন কিছু ‌ব্যাক্ষ্যা করতে হলে সেটার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী মনে করি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

"পপ কালচার / রুচি নির্মাণ / নন্দনতত্ব শুধুমাত্র পুঁজিবাদ মেনে চলেনা, সেটার নিজেস্ব ডাইনামিক্স আছে।" আমিও তো তাই বললাম । কিন্তু 'সম্যক ধারণা' বিষয়টা খুবই আপেক্ষিক। আমার ধারণা ডাইনিং টেবিল আর মাদুরের ডাইকটমির চেয়ে কালচারাল আইডেন্টেটি আরো কম্প্লেক্স বিষয়। আমার ধারণা ভুল হতে পারে না। কারণ ভুল ধারণা বলে জগতে কিছু নাই, এটাই আমার ধারণা।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শিরোনামহীন [অতিথি] এর ছবি

ভুল! দশকের পর দশক "গ্রামীণ" মানুষের মুখে মুখে ফিরতে পারে, "শহুরে" মানুষের মুখে মুখে ফিরতে হাবিব কে প্রয়োজন। এখানে অসততার কিছু নেই।

বাউল গান শহুরে লোককে এতো জোর জবরদস্তি (রিমিক্স) করে শোনাবার কি প্রয়োজন? আরে ভাই শহরে থাকে কয়টা লোক?

প্রশ্নটি যতোটা না অসততার, তার চেয়ে বেশী মৌলিকতার।

ব্লগার এর ছবি

আপনি মৌলিকতা পছন্দ করুন। সমস্যা নেই। সমস্যা ঘটে তখন যখন আপনি আপনার ইম্যাচিউরড অপ-দর্শন চাপিয়ে ফিউশন-প্রেমিকদের হেয় করেন! ১৯৫০ সালে রেকর্ড করা ফিরোজা বেগম শুনে শান্তি পেলে আমার কিছু করার নাই, আমি পাই না। আমার স্টয়িক ব্লিস এর ব্যাংলিশ র‌্যাপ পোষায়।

আলমগীর এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

লেখাটা বুঝলাম কিনা ঠিক বুঝলাম না।

বিদেশী সংস্কৃতির তোষণ করা যদি খারাপই হয়, যেমন “আমরা শাহ আবদুল করিমকে মিস করছি”, তাহলে লেখার শিরোনামটা নিয়েই প্রশ্ন জাগে: তিনটা শব্দের তিনটাই ইংরেজী। বাংলায় কি উপযুক্ত শব্দ নেই?

উপনিবেশিকতার কথাও এসছে, এবং ফানোঁ, স্টুয়ার্ট -এদের মুখ দিয়ে। এরা কারা?
কাচের ঘরে যে তাত বুনছে তার নিজের যদি সমস্যা না হয়, তবে আমাদের কার কি। হতে পারে তার নিজের ঘরে তাত বুনে পেটে ভাত জুগে না।

আরও লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

রণদীপম বসু এর ছবি

বিষয়টা আসলে বড়ই জটিল।

শাহ আবদুল করিম যখন আক্ষেপ করেন- মেডেল দিয়া কী হইবো, দিরাই বাজারে এই মেডেল দিয়া এক কেজি চাউলও পাওয়া যায় না, তখন সব তত্ত্বকথাই অসার হয়ে যায়।

আমাদের লোকজ উপাদানগুলোকে নগরে তুলে আনলে হয় সেই উপাদানের নয়তো নগরের কৌলিন্য নষ্ট হয়ে যায়, আবার লোকজগুলো লোকজ অবস্থানে পড়ে থাকলে আমরা ভদ্রলোকরা এর খোঁজও পাই না, পরিচর্যা করবো কী, এতোসব জটিল-কুটিল সমস্যার আবর্তে আমরা আরো অনেকদিন হয়তো ঘুরপাক খেতে থাকবো।

প্রকৃতিকে টবে তুলে আনলে যেমন প্রকৃতিকে তার মতো করে পাওয়া যায় না, তেমনি অযত্নে অবহেলায় বিরোধ পরিবেশে ফেলে রাখলে এর পরিচর্যা হয় না।

ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিৎ, লোকজ উপাদানগুলোকে তার অবস্থানে রেখে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার পরিবেশ ও সক্ষমতা সৃষ্টি করে দেয়া। এটা কিভাবে করা যেতে পারে, তা নিয়ে ভাবা দরকার মনে হয়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

শাহ আবদুল করিম যখন আক্ষেপ করেন- মেডেল দিয়া কী হইবো, দিরাই বাজারে এই মেডেল দিয়া এক কেজি চাউলও পাওয়া যায় না....

এই আক্ষেপ শুধু শাহ আবদুল করিমের নয় অনেকের। বেশীরভাগক্ষেত্রেই আমাদের শ্রদ্ধেয় মানুষেরা এদেশে উপেক্ষিত।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রণদা দ্বিমত করি একটু

আম খাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে সে আম আঁটির গাছে হলো না কলমের গাছে হলো তা নিয়ে কি আদৌ বিতর্কের কোনো দরকার আছে?

আঁটির গাছে আম ধরে আটদশ বছরে
আর কলমের গাছে ধরে ছয় মাসে
কিন্তু কলমের গাছের আম কি কোনো অংশে খারাপ?

এটা সত্যি যে কলমের গাছ থেকে হয়তো কাঠ হয় না
কিন্তু কাঠের জন্য না হয় আলাদা কাঠের গাছ লাগালাম
অথবা বানিয়ে নিলাম প্লাস্টিকের গাছ

তাই বলে আমাও হবে কাঠও হবে এই যুক্তিতে দশ বছর পরে আম খাবার কথা আমি কিন্তু মানতে পারি না

আমাদেরকে এটা বিশ্বাস করতেই হবে যে টবেও গাছ হয়
আম হয় জাম হয় লিচু হয় পেয়ারা হয়

সুতরাং নিজের গাছের আমজাম খেতে হলে এখন আর বিঘা বিঘা জমির কথা ভাবার কোনো দরকার নেই

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সচলে স্বাগত মনামী

আমি সম্ভবত বিষয়টা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত করব

০২

আমি যদি ড্রাম/সিন্থেসাইজার বাজানো ছেলেকে আমার পরিবারের সদস্য হিসেবে মানতে আপত্তি না থাকে তাহলে সেই ছেলে/মেয়ে যদি ড্রাম বাজিয়ে কীর্তন ঠুমরি বাউল গায় তাহলে আপত্তিটা কোথায় আমি বুঝি না

০৩

হাবিব সিন্থেসাইজারই বাজায়
তাকে আমরা শিল্পী হিসেবে গ্রহণ করেছি সিন্থেসাইজারসহই
তাহলে সে কি এখন লালন গাইতে হলে একতারা দিয়ে গাইতে হবে?
কেন?
শাহ আব্দুল করিম গাইতে হলে বেহাল একতারা ডপকি দিয়ে গাইতে হবে তার? কেন?

নাকি আমরা জেমসকে গিয়ে বলব তুমি রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারবে না কিংবা গাইলে তোমাকে মাদুরের উপর আসন পেতে সেতার ধরে চোখ বন্ধ করে গাইতে হবে?

০৪

আমার হিসাবে এখানে জটিলতা দুই ধরনের
এবং জটিলতাগুলো অনেকটা প্রথাগত
আমরা গীতিকার হিসেবে দেড়শো বছর আগের রবীন্দ্র লালন আর শ খানেক বছর আগের আব্দুল করিমকে গ্রহণ করেছি তাদের ভাষা আর বাণীর জন্য
আবার আমরা গ্রহণ করেছি বর্তমানের জেমস হাবিবকে শিল্পী হিসেবে

কিন্তু আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি যে; যে হাবিব জেমসকে আমরা তাদের স্টাইলের জন্য শিল্পী হিসেবে গ্রহণ করেছি সেই হাবিব জেমস রবীন্দ্র লালন করিম গাইলে তার মতো করেই গাইবে
আমরা আশা করি গৃহীত শিল্পী জেমস হাবিব গান গাইবে বাতিল হয়ে যাওয়া পুরোনো সুরে...

এটা কি উচিত?

০৫

সংস্কৃতি ধর্ম গ্রন্থ নয় যে ওটা পড়তে হলে সেই প্রাচীন নিয়ম মেনে ওজু করেই পড়তে হবে
সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বরাবরই সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল
এবং এডজাস্টএবল
যেটা এডজাস্ট করতে পারে না সেটা বাদ পড়ে যায়

০৬

আমি লালনের মাজারে গিয়ে শুনেছি ছেউড়িয়ার বাইরে কারোই অধিকার নাই লালনের গান গাওয়ার
কারণ তারা লালনের সুর বোঝে না
শব্দের উচ্চারণ জানে না
কথাটা আমি মানতে নারাজ
লালনের গান কেন আমাকে শুধুই ছেউড়িয়ার উচ্চারণেই গাইতে হবে?
ছেউড়িয়ার উচ্চারণ ছাড়াই যদি আমি লালনের গানকে উপলব্ধি করতে পারি তবে ছেউড়িয়ার উচ্চারণের দরকারটা কী?
আর সবচে বড়ো প্রশ্ন লালন কি গান লিখেছিলেন গানের বাণীর জন্য না ছেউড়িয়ার উচ্চারণ শিক্ষার জন্য?

সত্তর আশি বছর আগের রবীন্দ্রসংগীত শুনেছেন?
কত ফারাক আজকের সাথে ভাবতে পারেন?
আর আজকে যারা বাড়িতে বসে কিংবা আড্ডায় টেবিল থাবড়ে হাত তালি দিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গায় তাদেরকে কি আপনি নিষেধ করবেন যে ওভাবে এটা গাওয়ার অধিকার নেই তাদের?

যারা সিন্থেসাইজার বাজায়। ব্যান্ড গায় তাদেরকে কি আপনি নিষেধ করবেন যে তাদের অধিকার নেই রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার কিংবা তাদের যে শ্রোতারা ফাস্ট বিটের মিউজিকে অভ্যস্থ আপনি কি বলবেন যে তাদেরকে রবীন্দ্র সংগীত শুনতে হলে সেতারেই শুনতে হবে?

০৭

হেমাঙ্গ বিশ্বাস একটা সমীকরণ টেনেছিলেন উচ্চাঙ্গ আর লোক সংস্কৃতির মধ্যে
তিনি বলেছিলেন- উচ্চাঙ্গের আছে ঘরাণা আর লোকসংগীতের আছে বাহিরানা
মানে লোক সংগীত জন্মসূত্রেই জনগণের
মানে মানুষের
মানে যে গায় তার
এর সুরের কোনো মালিকানা নাই
গান বাঁধার সময় গীতিকার কোনো সুরও তৈরি করেন না
প্রচলিত যে কোনো একটা সুরে বাণীটাকে ফেলে দেন
তারপর যে গায় সে তার মতো করে সুর বসায়

০৮

এই বিষয়টাতে শাহ আবদুল করিমকে আমি নিজে দেখেছি
তার একই গান তিনি এরকম গাচ্ছেন। তার শিষ্যরা গাচ্ছে অন্য রকম
অন্যরা আবার গাচ্ছে আরেক রকম করে
তিনি সবই শুনছেন
একবারও বলেননি সুর পাল্টে গেছে
বরং বলেছেন যার যেভাবে ভালো লাগে সে সেভাবেই গাক
আমার গানটা তার পছন্দ হয়েছে। কিংবা তার মনে দাগ কেটেছে সেটাই বড়ো কথা। সে যেভাবে পারে সেভাবে গাবে
শ্রোতারা ঠিক করবে কোনটা নেবে আর কোনটা নেবে না
তার- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গানটার যে সুর আমরা শুনি তা বিদিতলাল চক্রবর্তীর (পটল বাবু)

শাহ আব্দুল করিম নিজেও কিন্তু বহুবার নিজের সুর বাদ দিয়ে পটলবাবুর সুরে গেয়েছেন গানটা
তাকে জিজ্ঞেস করারয় বলেছিলেন- স্রোতারা পটলবাবুর সুরটাকেই যেহেতু নিয়েছেন সেহেতু খামাখা কেন তাদের আবার টানাটানি করা...

০৯

যে জেনারেশন কথা বলার সময় মিস করছি শব্দটা ব্যবহার করে
যে যেহেতু তার বাপ মরলেও বলে- বাপিকে মিস করছি
বিদেশে এসে ইদের নামাজ মিস করছি। পূজা মিস করছি
সে অবশ্যই সেভাবেই বলবে আব্দুল করিমকে মিস করি
বিদেশে এসে ন্যাশনাল এন্থিমকে মিস করি

এতে সমস্যা কোথায়?

১০

মানি বা না মানি
ভাষা বদলাচ্ছে
কিংবা একটা বড়ো অংশের মানুষ আমাদের প্রথাগত ভাষায় কথা বলছে না
কিংবা আমাদের পরিবারের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে একাধিক ভাষা
ভাষা বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন এটা কবে আলাদা একটা ভাষা হয়ে উঠবে
কিংবা আদৌ হবে কি না

কিন্তু তার আগে আমি মনে করি না কারো অধিকার আছে এটা বলা যে তারা তাদের ভাষায় পল্লীগিতি কিংবা রবীন্দ্র কিংবা লালন গাইতে পারবে না
কিংবা আলোচনা করতে পারবে না তাদের ফোরামে
বুড়োদের ফোরাম বিটিভি তো আছেই
প্রাচীন প্রাচীন বাংলায় ওখানে প্রাচীন এবং আধুনিক বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়
যাদের নতুনদের ভাষা শুনতে আপত্তি তারা ওগুলো শুনলেই পারে

১১

হাড্ডির কারবারি
কথাটা শাহ করিমের ক্ষোভ
এটা থাকতেই পারে এবং এটা বলার অধিকার তার আছেই
তিনি যে গানগুলো দিয়ে গেছেন সেগুলো আমরা গাইব- বিক্রি করব এবং সেগুলো দিয়ে নিজেদের বিখ্যাত করব এটাই স্বাভাবিক
এবং এটাও স্বাভাবিক যে এইসবের কানাকড়িও তার কোনো কাজে আসবে না

কাজে লাগেও নি

কিন্তু এটাই বোধহয় চিরন্তন নিয়ম?
না খেতে পাওয়া সক্রেটিস কি জানতেন তার নামের বই কত টাকায় বিক্রি হবে?
লালন কি জানতেন শুধু তার গান থেকে প্রতিদিন কতটাকা আয় হয়?
রবীন্দ্রনাথ কি জানতেন প্রতি বছর তাকে নিয়ে বই লিখে কত লোক রীতিমতো লেখক হয়ে উঠে?

জানলেও এগুলো নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার ছিল
আছে
কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে বোধহয় তাদেরকে এগুলোর ভাগ দেবার কোনো সিস্টেম নাই

সিস্টেমটাই এরকম যে আমরা বাপের ধানী জমি ইন্ড্রাস্টিওয়ালাদের দিয়ে কোটিপতি হবো

যে বাপ হয়তো ওই জমিতে ঠিকঠাক মতো ধান ফলাতে না পেরে না খেয়ে মারা গেছে
যে বাপের কিন্তু আর কোনো সুযোগ নেই তার সেই আফসলা জমিতে দাঁড়ানো কারখানার লাভের পয়সায় হাসপাতালে যাওয়ার

১২

এইবার একটা নিষ্ঠুর সিলি কথা বলি
এমনও হতে পারতো শাহ আবদুল করিম জীবিত অবস্থায় প্রাচুর্যে পড়লে হয়তো আর গানই লিখতেন না

আমরা নজরুলের ইতিহাস জানি
গাড়িবাড়ি দারোয়ান সহ একবার নিশ্চিন্ত হয়ে তিনি গান লেখার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন
পুরো বছরে লিখেছিলেন বোধহয় মাত্র দুটো গান

আমি একজন শিল্পী কুদ্দুস বয়াতিকে চিনি
ভাটি বাংলা থেকে যখন সে ঢাকায় আসে তখন থেকেই তাকে চিনি
তার দারিদ্র তার গান তার ধার সবগুলোই চিনি

ঢাকায় আসার পরে আস্তে আস্তে তার পরিবর্তন এবং প্রচুর্য দু্টোই একেবারে চোখের সামনে

এবং মজার বিষয় হলো কুদ্দুস বয়াতি এখন আর গান গাইতে পারে না
হয় না তার গান
সে এখন টিভিতে ভাঁড়ামি করে

১৩

মানুষ তো
শাহ আবদুল করিমও মানুষ
এসিতেও তার আরাম লাগতে পারতো
বেশি খাওয়ায় তার আলসেমি আসতে পারতো
তারও সময় নষ্ট হতে পারতো সোনারগা শেরাটনে সেজেগুজে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে

কিন্তু সবই হতো
আর মাঝখান থেকে মিস করা নয়
শাহ আবদুল করিমই হয়ে যেতেন মিসিং...

রণদীপম বসু এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

চলুকচলুকচলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

জি.এম.তানিম এর ছবি

চলুক
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ভুতুম এর ছবি

সম্পূর্ণ সহমত!!!

----------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

স্নিগ্ধা এর ছবি

মাহবুব লীলেনের বক্তব্যের সাথে ভীষণভাবে একমত (যদিও জ্ঞানীলেনের কথার সাথে 'সহমত জ্ঞাপন' করতে আমি বিশেষ ভালু পাই না মন খারাপ ) !!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মুই কিন্তুক দেইক্যালাইছি আন্নে মোর সাতে একমতাইছেন

শিরোনামহীন [অতিথি] এর ছবি

ভাই, কালচার আর ফ্যাশন এর মধ্যে পার্থক্য বুঝেন?

শিরোনামহীন [অতিথি] এর ছবি

ভাই, কালচার আর ফ্যাশন এর মধ্যে পার্থক্য বুঝেন?

তাহলে সে কি এখন লালন গাইতে হলে একতারা দিয়ে গাইতে হবে?
কেন?
শাহ আব্দুল করিম গাইতে হলে বেহালা একতারা ডপকি দিয়ে গাইতে হবে তার? কেন?

নাকি আমরা জেমসকে গিয়ে বলব তুমি রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারবে না কিংবা গাইলে তোমাকে মাদুরের উপর আসন পেতে সেতার ধরে চোখ বন্ধ করে গাইতে হবে?

আজকে আপনি আমি ছিড়া জিন্স পড়ি ফ্যাশনে আর আমাগো বাপ দাদায় লুঙ্গি পড়ে কালচারে। জেমস একদিন গিটার হাতে রবীন্দ্র সংগীত গাইলে (বা বাজাইলে) সেইটা হয় ফ্যাশন, আর বছরের পর বছর লোকজন যেভাবে গেয়ে আসছে সেটা কালচার। আমাগো জেমস ভাই ১০-১৫ বছর গিটারে রবীন্দ্র সংগীত গাউক, এরপরে পাব্লিক হেইডারে কালচার কইলে কোনোও সমস্যা নাই।

আজকে জেমস গিটার হাতে নামলো রবীন্দ্র সংগীত গাইতে, কালকে ফুয়াদ ভাই অর্কেস্ট্রা বাজাইয়া গাইলো, পরশু হৃদয় খান সেইটার রিমিক্স বাইর করলো, সবটাই ঠিক। বেঠিক বলবেন কোনটা আর ২০ বছর পরে নিজের কালচার বলবেন কোন্ টারে ?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাই, কালচার আর ফ্যাশন এর মধ্যে পার্থক্য বুঝেন?

বেশি বুঝি না
বুঝি খুবই সামান্য
এইটুকু বুঝি যে গাজরের সালাদটা কালচার
আর গাজরের টুকরোর চারপাশ কেটে সুন্দর ফুলের মতো বানানোটা ফ্যাশন

কালচার হচ্ছে গড় অভ্যাস
আর ফ্যাশন হচ্ছে গড় অভ্যাসটার বেসিকটাকে নিজের মতো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের পছন্দমতো করা

০২

আজকে আপনি আমি ছিড়া জিন্স পড়ি ফ্যাশনে আর আমাগো বাপ দাদায় লুঙ্গি পড়ে কালচারে।

মানতে পারলাম না

বাপদাদা লুঙ্গি পরা শুরু করেছিল কারণ তখন জিন্স ছিল না
আর এখন পরে না অভ্যাস নাই বলে

আর আজ জিন্স আছে বলেই গ্রামের কৃষক জিন্সের শর্টস পরে জমিতে হাল বায়

কারখানার শ্রমিক জিন্স পরে কাজ করে
কারণ সে জানে একটা লুঙ্গির চেয়ে জিন্স কত বেশি টেকসই
কতটা সস্তা
এবং কাজ করার জন্য কতটা উপযোগী

আর আমি লুঙ্গি পরি না কারণ লুঙ্গির চেয়ে বেশি কমর্ফটএবল পোশাক এখন আমার হাতে নাগালে

এবং এই কারণেই গিটঠু দিয়ে মানইজ্জত রক্ষা করার লুঙ্গির প্রতি আমার আকার্ষণ কম

০৩


জেমস একদিন গিটার হাতে রবীন্দ্র সংগীত গাইলে (বা বাজাইলে) সেইটা হয় ফ্যাশন, আর বছরের পর বছর লোকজন যেভাবে গেয়ে আসছে সেটা কালচার। আমাগো জেমস ভাই ১০-১৫ বছর গিটারে রবীন্দ্র সংগীত গাউক, এরপরে পাব্লিক হেইডারে কালচার কইলে কোনোও সমস্যা নাই।

জেমস একদিন গাইলে সেটা ফ্যাশন না
সেটা কালচারাল এডভান্সমেন্ট স্যার
কালচার কোনো স্থবির মরা জিনিস না
ওইটা গতিশীল
ব্যাক্ত মানুষ স্থবির হয়ে এক জায়গায় বসে গতানুগতিক হয়ে যেতে পারে
কিন্তু কালচার পারে না
আর যে কালচারের এডাপ্টএবিলিটি নেই সেই কালচার পৃথিবীর কোথাও টিকে থাকেনি
থাকার কারণও নেই

বছরের পর বছর লোকজন কোনোকিছুই এমনি এমনি গাইতে পারে না
এর মধ্যে কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়
এর পর অন্যরা ধরে
তারপরই না সেটা বছরের পর বছর গড়ায়

০২


আজকে জেমস গিটার হাতে নামলো রবীন্দ্র সংগীত গাইতে, কালকে ফুয়াদ ভাই অর্কেস্ট্রা বাজাইয়া গাইলো, পরশু হৃদয় খান সেইটার রিমিক্স বাইর করলো, সবটাই ঠিক। বেঠিক বলবেন কোনটা আর ২০ বছর পরে নিজের কালচার বলবেন কোন্ টারে ?

স্যার পুরোনো জিনিসরে কিন্তু কালচার বলে না
বলে ইতিহাস
কালচার সবসময়ই বর্তমান অভ্যাসের নাম

আর কালচার সব সময়ই তৈরি হয় গ্রহণ আর বর্জনের মধ্য দিয়ে

০৩

ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় কালচারের বাংলা শব্দ 'সংস্কৃতি' প্রচলন করেন
এর আগে কালচারের বাংলা করা হতো কৃষ্টি

তিনি সংস্কৃতির যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তা হলো:
যা সংস্কার করে গ্রহণ করা হয়েছে তাই সংস্কৃতি

সংস্কৃতি শব্দটার এই ব্যাখ্যার মধ্যেই কিন্তু তার সবগুলো বৈশিষ্ট্য আছে

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

বর্ষা [অতিথি] এর ছবি

মাহবুব লীলেনের বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত। আলাদা পোষ্ট আশা করছি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নারে ভাই
ওইটা বোধহয় আমাকে দিয়ে হবে না
আমি আড্ডাবাজ মানুষ
আড্ডার মুডে কথা বলতে পারি প্রচুর
কিন্তু কিছু গুছিয়ে বলতে গেলে গুলিয়ে ফেলি

০২

আপনে লেখেন
আমি কিছু লবণ দিমুনে

বর্ষা এর ছবি

ভাইজান, আমার এতো জ্ঞান থাকলে তো হইতোই। ক্রেডিট কার্ডের বিল দিয়াই কূল পাইনা। আপনি এইখানে যা লিখছেন, এক্তু কপি পেষ্ট মারেন না আলাদা কইরা। আমি এইটারে আপনার কমেন্ট এর জন্যই পছন্দের তালিকায় রাখসি। বেহুদা প্যাচাল এর যুক্তিযুক্ত উত্তর।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

অনুপম শহীদ এর ছবি

আমাদের উপমহাদেশে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংকটে উপনিবেশবাদ এবং পুঁজিবাদী নয়া-উপনিবেশবাদবকেই আমার প্রধান/মূল কারণ বলে মনে হয়। তবে এই বিষয়দুটোর কোনটাই শুধুমাত্র দুটো অর্থনৈতিক কাঠামো তা নয় বরং এদের নিজস্ব দর্শন এবং উদ্দেশ্য আছে।

আলমগীর ভাই কিছু মনে করেন না, আপনার মন্তব্য থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি! আপনি যখন লিখছেন "কাচের ঘরে যে তাত বুনছে তার নিজের যদি সমস্যা না হয়, তবে আমাদের কার কি। হতে পারে তার নিজের ঘরে তাত বুনে পেটে ভাত জুগে না।" তখন তাদের সেই উদ্দেশ্যের সাফল্যই সামনে আসে।

ছড়িয়ে যাওয়া বৈশ্বিক সংস্কৃতিতে, আমরা বাংলায় কথা বলা মানুষেরা, কতটা ভূমিকা রাখতে পারব তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, তবে বিশ্ব শাসনকারী দেশগুলোর সংস্কৃতির প্রাধান্য যে থাকবে এ বিষয়টা অস্বীকার করা যাবে না। আর সব সময়ই মানুষ সভ্যতার কেন্দ্রের দিকেই ছুটেছে। তবে এই দৌড়ে যারা নিজের সংস্কৃতিকে ছেড়ে দিয়ে অন্য খোলসে নিজেদের ঢাকতে চেয়েছেন তারা খুব বেশী ক্ষেত্রে সফল হননি।

পরিচয়ের সংকট নিয়ে চিন্তাটা ভাল লাগল। এখন সংকট মোচনের চিন্তাও শুরু করা দরকার বোধহয়!

শুভকামনা....

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনুপম শহীদ,

তখন তাদের সেই উদ্দেশ্যের সাফল্যই সামনে আসে।
একইভাবে কিন্তু এই উদাহরণটাও ঐ (তথাকথিত) সাফল্যের দিকেই নির্দেশ করে যখন আপনি বলেন
আর সব সময়ই মানুষ সভ্যতার কেন্দ্রের দিকেই ছুটেছে।
- কারণ এখানে আপনি 'সভ্যতার কেন্দ্র' বলতে পশ্চিমা বিশ্ব/বিশ্ব শাসনকারী দেশগুলোকে বুঝিয়েছেন হাসি

পরিচয়/পরিচয় সংকট এগুলো পূঁজিবাদি উপনিবেশবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ ইত্যাদি প্রজেক্ট বা ডিসকোর্স এর চাইতে আমার মতে বিশ্বায়নের সাথে বেশি জড়িত - কারণ এই মুহূর্তে ঐ প্রজেক্টটাই সবচাইতে শক্তিশালী বা কর্মরত।

অনুপম শহীদ এর ছবি

"সব সময়ই মানুষ সভ্যতার কেন্দ্রের দিকেই ছুটেছে।"
এই কথাটা আমি অবশ্য শুধু এখনকার সভ্যতার কথা চিন্তা করে বলিনি। এর আগেও ঘটনাটা এরকমই ছিল। তবে হ্যা, এটা তাদের সাফল্য (তথাকথিত তো না!আসলেই।), এটা মেনে নিচ্ছি। হাসি

বিষয় বর্হিভূত তবু, সাথে এটাও স্মরণ করছি যে তাদের এই সাফল্যের পেছনে আমাদেরকে শোষনও একটা মস্ত বড় ভূমিকা রেখেছে। ১৭৫০ সালে বিশ্বে উৎপাদিত সর্বমোট শিল্প পণ্যের প্রায় ২৫% উৎপাদিত হত ভারতবর্ষে, প্রায় ৩৩% উৎপাদিত হত চীনে আর সমগ্র পশ্চিম-এর এতে অংশ ছিল ১৮% এর কিছু বেশী। এর পরবর্তি সূচক এটাই দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করে যে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব বাংলার শোষনেই হয়েছিল।

আর আমি যতটুকু বুঝি 'বিশ্বায়ন' শ্লোগানটা পূঁজির প্রয়োজনেই উঠেছে। বাজার সম্প্রসারণের দরকার তো আছেই... তবে মতামত ভিন্ন হতেই পারে...

ব্লগার এর ছবি

"তবে এই দৌড়ে যারা নিজের সংস্কৃতিকে ছেড়ে দিয়ে অন্য খোলসে নিজেদের ঢাকতে চেয়েছেন তারা খুব বেশী ক্ষেত্রে সফল হননি।"

উদাহরণ দেখতে পারলে ভালো লাগত, এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাকপ্যাকের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সবখানেই দেখেছি জেনারেশন গ্যাপ, দেখেছি গ্রাম থেকে আসা প্রজন্ম আর শহুরে নতুন প্রজন্মের মধ্য মানসিক ব্যবধান, ভাষা/সংগীত/সিনেমা রুচির আকাশ পাতাল পার্থক্য। শুধু তাই নয় ৫-৭ বছরের ব্যবধানে জন্ম নেয়া তরুন যুবকদের মাঝেও আছে অনেক সাবকালচার/ডায়ালেক্ট/কোড ল্যাংগুয়েজ। সব কিছু সহই কসমোপলিটান শহর আপন করে নেয় নাগরিকদের/পর্যটকদের।

অনুপম শহীদ এর ছবি

এখানে আমি যাদের কথা বলেছি তাদের উদাহরণ আপনি নিজেই পাবেন, আমার মনে হয়। আর আমি নাম করলেও আপনার পরিচিত হবে না, কারণ সে নামগুলো নামকরা নয়। নাম, নাম-এর সাথে অমিত সম্ভবনা এবং সম্ভবনাতেই শেষ।

ধরেন বাংলাদেশে বসে ইংরেজি গান চর্চা করছেন যারা বা চেষ্টা করছেন ইংরেজিতে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান সমাজ আঁকতে; তারা। তারা কি সফল হচ্ছেন বৈশ্বিক পরিমন্ডলে নিজেদের ছাপটা রাখতে? কিন্তু সফল কাজ করছেন তারা যারা ইংরেজি ভাষাটাকে বেছে নিয়েছেন নিজের, নিজের সমাজের, ইতিহাসের গল্পটা বলার জন্য।

আমার মনে হচ্ছে আপনি ধরে নিয়েছেন, আমি লেখকের হাবিব বিষয়ক বা দেশী দশ বিষয়ক মতামতের সাথে সম্মতি প্রকাশ করছি। এখানে এই সুযোগে বলে রাখি নিজের চিন্তার কথাটা - আমি হাবিবের ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতির শক্তিটাকেই বরং বেশী দেখতে পাই। কারণ তার যথেষ্ট সুযোগ এবং সম্ভবনা ছিল ইউরোপীয় সুর নিয়ে কাজ করার। কিন্তু তার মধ্যে আমাদের মাটির সুরটা থেকে গেছে। সেজন্যই যখন কাজ করতে গিয়েছে তখন কিন্তু বেছে নিয়েছে এই দেশের সুর, সাথে মিশিয়েছে নিজের মননশীলতা। হ্যা, এটা ঠিক বাংলাদেশের সুরের জগতে প্রবেশের জন্য তাকে শাহ আব্দুল করিমের গান বেছে নিতে হয়েছে। এতে আমার মনে হয় সুরের উপকার হয়েছে। কারণ যতক্ষণ না কাজগুলো হচ্ছিল ততক্ষণ কিন্তু সুরগুলো এখনকার প্রজন্মের কাছে অপরিচিত ছিল। আজকে আমরা আলোচনা করছি সে কি যথেষ্ট সম্মান করেছে কিনা গান গুলোর প্রতি... এটা তো সামনে এগোন! এই আলোচনায় যেতে গেলে নিশ্চয়ই আমাকে আদি সুরটা জানতে হয়েছে। আর একটা বিষয় যেটা পজেটিভ হাবিবের সেটা হল তার পাশাপাশি আরও কিছু মানুষ কিন্তু একই ধরনের কাজ করা শুরু করল; ১-২টা গানও কিন্তু জনপ্রিয় হল। কিন্তু তাদের কিন্তু আর পরে দেখা যাচ্ছেনা। তো হাবিবের নিশ্চয়ই কিছু গুণ আছে যার কারনে এখনও মানুষ শুনছে তার সুর।

যাক! আর আপনি যে কথা বলেছেন প্রজন্মে প্রজন্মে মানসিক, ভাষা, রুচির পার্থক্য, তা তো থাকবেই। না হলে আর সমাজ সামনে এগোবে কি করে?!

যেমন এখন, আমি এখানে লিখতে বসেছি বলে চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলা শব্দ খঁুজে বের করে লিখতে। আপনি যেভাবে লিখেছেন আমি সচেতন ভাবে সেটা এড়িয়ে যাচ্ছি। ল্যাংগুয়েজের জায়গায় লিখছি ভাষা বা জেনারেশন-এর জায়গায় লিখছি প্রজন্ম। এই কথাটা বলছি কারণ প্রমিতের একটা প্রয়োজন আছে। আজকে যদি আমি আমার আদি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি তাহলে আপনি সেই অঞ্চলের মানুষ না হলে হয়ত বুঝতেই পারবেন না!

আশা করি আপনি যা জানতে চেয়েছেন তার উত্তরটা এর মধ্যে দিতে পেরেছি।

ব্লগার এর ছবি

কোন কিছু আরোপিত হলে সেটা হয়ত বেশীদিন টেকে না, কালচারের নিজেস্ব সংযোজন-বিয়োজন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক। ১৯৫০ সালে আর ২০০০ সালের আমরিকার সংগীত মূলধারার বিবর্তন যেমন স্বাভাবিক তেমন স্বাভাবিক তেহরান/কুয়ালালামপুর বা ঢাকার পপ কালচার সচেতন সংগীত শ্রোতার ফিউশন মিউজিকের প্রতি আগ্রহ, শুধু পোস্ট কলনাইলিজম আর ক্যপিটালিজম এর ধোঁয়া তুলে তার রুচির বিবর্তন সম্ভব না। এ আর রহমান এর অস্কার পাবার পেছনে ক্যাপিটালিজম এর কিছু প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে তবে মূল কারন হিসাবে তাঁর প্রতিভাকেই আমি সামনে রাখব। ভারতে প্রচুর লেখক আছেন ইংরেজীতে লেখেন এবং (গুটি কয়েক লেখক বাদ দিলে)মূল পাঠক গোষ্ঠিও ভারতীয়, মূলত মধ্যবিত্ত ভারতীয়, সেটা তাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা। আরো মজার বিষয় লক্ষ্য করুন এম টি ভি ইন্ডিয়া-এর ভাষার বিবর্তনে। প্রথম দিকে প্রায় সবই ইংলিশ অথবা হিংলিশ (হিন্দি প্লাস ইংলিশ) কথা বলত। কিন্তু মার্কেট রিসার্চের পর দেখা গেলো দর্শক ধরতে ইংলিশ ব্যবহার কমাতে হবে। এখন একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন অংশগ্রহনকারী সবাইকে কষ্ট করে হলেও হিন্দিতে কথা বলতে হচ্ছে, যদিও তাদের কথাবার্তায় স্পষ্ট তারা হিংলিশে অভ্যস্ত। একই বিবর্তন মনে হয় আমাদের এফ এম রেডিও-তেও আসবে। নাকি এসে গেছে? ট্রান্সকম গ্রুপের রেডিও এ বি সি তে তো শুনলাম "কথাবন্ধু"-রা একেবারিই ব্যাংলিশ ব্যবহার করেন না। এখন মার্কেট রিসার্চ-এ যদি দেখা যায় ২ সেগমেন্টের শ্রোতা ২ চ্যানেল শোনে তাহলে আপনার কী করার আছে? রেডিও ফুর্তি যদি স্ব-ইচ্ছায় ব্যাংলিশ ব‌্যবহার করে শ্রোতা টানতে পারে সেটাকে অগ্রাহ্য করে আপনার দর্শন কপচিয়ে তাকে হেয় করার কোন ফন্দি কি কাজে লাগবে?

মনামী এর ছবি

হাবিব কিংবা শাহ আবদুল করিম কিংবা "সাংস্কৃতিক অবক্ষয়" কোনোটাই আমার লেখার বিষয়বস্তু ছিলনা। সাংস্কৃতিক পরিচয় কিভাবে ম্যানুফ্যাকচার্ড হয় সেটা বলাই উদ্দেশ্য ছিল। সফল হই নাই। দুঃখ পাইলাম। পরবর্তীতে আরো ভাঙিয়া লিখিবার চেষ্টা করিব। সবাইকে ধন্যবাদ।

অনুপম শহীদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও!

তবে ব্যর্থতার দায়ভার আমদের, পাঠকদের ওপরেও কিছুটা তো বর্তায়! তাই বলছিলাম দুঃখের ভারটা কিছুটা নামিয়ে রেখে ভাঙিয়া লিখিবার কাজটা শুরু করে দিলেই বেশী লাভবান হতাম।

একবার এক গণিত বিষয়ক সভায় বক্তৃতাকারী অধ্যাপক শ্রোতাদের বোঝার সুবিধার জন্য অনেক বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করছিলেন, যদিও বিষয়টা ছিল একেবারেই তাত্ত্বিক। উদাহরণ হিসেবে এক অংশে উনি সংগীতের সাথে গণিতের সমন্বয় করে দেখালেন। এরপরে শ্রোতাদের ভেতর থেকে এক ব্যক্তি বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলেন সংগীত-গণিত সমন্বয়ের অংশটা যেন দীর্ঘায়িত করেন। আমি নিজে সেদিন কিছু বুঝিনি বলতে দ্বিধা নেই(!), তবে ঐ ভদ্রলোক যে বক্তৃতার ঐ অংশটুকুই বুঝেছিলেন সেটা বুঝেছি।

সবক্ষেত্রেই যে লেখকের ব্যর্থতা থাকে তা কিন্তু না! আর এ ধরনের আলোচনা ঠিক কিভাবে যে 'জিন্স-লুঙ্গি' দন্দ্ব পর্যন্ত যায় সবসময়, এটা আমি বুঝে উঠতে পারলাম না! এটা আমার ব্যর্থতা।

মঙ্গল হোক...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পোস্ট পইড়া কিছু বুঝি নাই। মন্তব্য পড়তে গিয়ে লীলেন্দা পর্যন্ত পড়ে থেমে গেলাম। তারপর আর পড়ি নাই। আমার মনে হয় আর পড়ার দরকার নাই। লীলেন্দাই যা বলার বলে দিছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হাবিবের সিন্থেসাইজারে তাই সিন্থেসাইজ্ড হন শাহ আবদুল করিম। দশকের পর দশক মানুষের মুখে মুখে ফেরা তার গানগুলো হঠাৎ অতীত হয়ে যায়। জীবিত আবদুল করিমকে অতীত ঐতিহ্যের কাফনে ঢেকে শুরু হয় ভিক্ষাবৃত্তি।

বিক্রিটা ভালোই হয়।

লীলেন ভাইয়ের দীর্ঘ মন্তব্যে বিতর্ক না করেই বলছি, আমাদের দুর্ভাগ্য শাহ আব্দুল করিমকে আমাদের চিনতে হয়েছে, ওই হাবিবকে দিয়েই!

যেমনটা বাউল সম্রাট তার গানেই বলেন:

যা হবার তা হয়ে গেছে
আব্দুল করিম ভাবিতেছে
এমন একদিন সামনে আছে
একেবারে করবে সই...
---
মনামীকে সচলে স্বাগতম। চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।