এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রধান আইরিন খান ও জঙ্গীবাদের প্রসার

Fallen Leaf এর ছবি
লিখেছেন Fallen Leaf [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৬/২০১৩ - ৭:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রধান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইরিন খান। শাহবাগের আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যানশনালের মনোভাব বিষয়ে ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুঁজি করছিলাম দিন কয়েক আগে। এই সুত্রেই জানতে পারলাম যে ২০০৯ এর শেষে আইরিন খান কে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টি ছিল গোয়ান্টানা মোবে তে যেসব মুসলিম বন্দী ছিল তাদের উপর অত্যাচারের ব্যাপারটি অতিরিক্ত একপেশে ভাবে বিশ্বের সামনে আনা যেখানে ওই টেরোরিস্ট বন্দীরা যে কি পরিমান নাশকতা ও নৃশংসতা ঘটিয়েছে সে বিষয়টি এ্যমনেস্টি অতটা সামনে আনেনি। অর্থাৎ আইরিন খান গোয়ান্টানা মোবে তে আটক থাকা বন্দীদের মানবাধিকার রক্ষায় যে পরিমান সোচ্চার ছিলেন তার কিয়দাংশও ছিলেন না ওই বন্দীরা যে সব মানবতা বিরোধী কাজ করেছে সেগুলোর প্রতিকার করা বা অন্তত সেগুলোকে বিশ্বের কাছে জানানোর ব্যাপারে। এই অভিযোগে আইরিন খান কে সরাসরি অভিযুক্ত করা না হলেও জঙ্গীবাদের উত্থান ও বিস্তারের প্রতি নমনীয় মনোভাবাপন্ন বলে মন্তব্য করে তাকে সরে যেতে বলা হয়। মনে করা হচ্ছিল যে জঙ্গীবাদের জন্যে "অতি" মানবতা দেখানো আইরিন খান সরে গেলে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রন সহজ হবে। আইরিন খান সরতে রাজি না থাকায় তাঁকে বিপুল অর্থের প্রস্তাব দেয়া হয় এবং আইরিন খান তাঁর বার্ষিক বেতনের চাইতে প্রায় পাঁচ গুন বেশী অর্থ নিয়ে নীরবে রফা করে সরে যান। এই বিপুল পরিমান অর্থ কেন আইরিন খান কে দেয়া হল এ নিয়ে এ্যমনেস্টির নিজেদের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধান বলেন যে যেহেতু আইরিনের ভুমিকা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিল তাই অর্থের বিনিময়ে তাকে সরে যেতে বলা ছিল একটি আপোষ এবং একে "Least Worst Outcome" উল্ল্যেখ করে বলেন এব্যাপারে যেন এ্যমনেস্টি বা আইরিন কোন পক্ষই আর কথা না বলে তার জন্যেই এব্যাবস্থা।

এই ব্যাপারটি আমাকে আইরিন খান সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী করে তোলে। একটি এতবড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার যদি অর্থের বিনিময়ে আপোষ করে সরে যায় তা রীতিমত আতংক জাগানোর মত বৈকি। আরও জানার চেষ্টা করলাম আইরিন খান সম্পর্কে বিশেষ করে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রশ্নে তার ভূমিকা বিষয়ে। ২০০১ এ আইরিন খান এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশ্নালের প্রধান হওয়ার প্রায় একই সময় বাংলাদেশ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আর বিএনপি ক্ষমতা নেয়ার সাথে সাথেই বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে সংখ্যা লঘু নির্যাতন, রাজনৈতিক হত্যা, ক্রস ফায়ারে খুন সহ বিভিন্ন ধারার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা শুরু হয়। এসময় আইরিন খান কয়েকবার বাংলাদেশে আসেন কিন্তু তার এসময়ে অবস্থান নিয়ে তদানীন্তন বিএনপি সরকার তেমন কোন উচ্চবাচ্চ্য করেনি। পরে জানা যায় সেগুলো ছিল পারিবারিক ভ্রমন। যাইহোক দুই একবার ডেইলি স্টার পত্রিকা সহ অন্যান্য মিডিয়াতে দুএকটি সাক্ষাৎকার দিলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বিএনপি সরকারের উপর তেমন কোন জড়ালো চাপ সৃষ্টি করেনি। এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তেই থাকে।

২০০৩ সালের শেষের দিকে চিটাগাঙের বাঁশখালি এলাকায় বিমল কান্তি শীল নামের একজন তার পুরো পরিবারের ১১ জন সদস্য কে দাহ্য বস্তুর ব্যাবহারে নির্মম ভাবে পুড়িয়ে মারার মত একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের মামলা করেন। এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় কিন্তু এ্যমনেসটি প্রায় নীরব থাকে। এর একমাস পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আইরিন খান আবার বাংলাদেশে পারিবারিক সফরে আসলে বাঁশখালির ঘটনা নিয়ে একটি বিবৃত দেন মাত্র এবং বলেন যে অনুসন্ধান চলছে। ওই রকম একটি উদ্বেগ জনক সময়ে যখন নোয়াখালী, কুমিল্লা সহ সাড়া দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উৎসব চলছে তখন আইরিন খানের দেশে এসেও বিষয় গুলকে গুরুত্বের সাথে মকাবেলার জন্য বিএনপি সরকারকে চাপ না দেয়া তাই ছিল খুবই আশ্চর্যজনক। শুধু তাইই, না আইরিন খানের বাংলাদেশে অবস্থানের ব্যাপারটিতে সরকার যেন নির্বিকার ... জোর করে দৃষ্টি সরিয়ে রাখার মত অবস্থা। এরমধ্যে বাংলাদেশে উত্থান ঘটল বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, জামায়াতুল মুজাহিদিন সহ নানান জঙ্গী সংগঠনের। সংবাদ পত্র, রেডিও, টেলিভিশন সর্বত্র জঙ্গীবাদের উত্থান নিয়ে ব্যাপক প্রচার হলেও এ্যমনেস্টি ছিল প্রায় নীরব ও নিষ্ক্রিয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তদানীন্তন বিরোধী দলীয় নেত্রী গুরুতর আহত ও জাতীয় নেতা নেত্রী সহ ২০ জনের প্রান হানি ঘটলেও এ্যমনেস্টি কে তেমন কোন কোঠর অবস্থানে যেতে দেখা যায় নি। এ্যমনেস্টি ইন্টার ন্যাশানালের প্রথম বাঙ্গালী প্রধান হবার পরেও এবং কয়েকবার বাংলাদেশে বেড়াতে আসার পড়েও বিএনপি সরকারের আমলে তাঁর বাংলাদেশ সফরকে তিনি আনুষ্ঠানিক সফর বলেন নি এবং সরকারী ভাবে বিএনপি প্রধানের সাথে মিলিত হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, জঙ্গীবাদ দমন কিম্বা রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধের বিষয় গুলো নিয়ে সামনা সামনি চাপ দেন নি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেমন বলছে যে আইরিন খানের সময় সারা বিশ্বে জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটেছে মানবাধিকারের নামে জঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোতে ঠিক তেমনি অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশেও।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে "প্রথমবারের" মত আইরিন খান এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান হিসাবে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফরে আসেন। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা বিষয়ে আইরিন খান ২০০৮ সালে এসে মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীন সরকারের প্রধানের সাথে সামনাসামনি কথা বলতে পারলেন। এপ্রসঙ্গে এটি মাথায় রাখা বোধহয় দরকার যে সাবেক এই এ্যমনেস্টি প্রধান আইরিন খান হলেন তারেক জিয়ার স্ত্রী যুবায়দা রহমানের (বিয়ের আগে যুবায়দা খান) আপন চাচাত বোন। সুতরাং পারিবারিক সফরেই যদি সব বিষয়ে মধ্যস্ততা হয়ে যায় তাহলে আর সরকারী সফরের কি দরকার !!!

হতে পারে যোগাযোগ গুলো কাকতালীয়। কিন্তু পুরো ব্যাপারটির অবতারণা করলাম এজন্য যে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা্র কর্ণ ধারদের দিকে আমরা আঙ্গুল তুলি না বা তাদের কাজের ব্যাপারে আমরা কোন প্রশ্ন করি না। উল্টো আমাদের ব্যাপারে তাদের যে কোন মন্তব্যই অতি গুরুত্বের সাথে মাথা পেতে নিই। কিন্তু তাদের দিকেও যে আঙ্গুল তোলা হয়, তারাও যে অর্থ পকেটে ভরে আপোষ করে আর তাদের পারিবারিক সম্পর্ক ও স্বজনপ্রীতি দ্বারা যে তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে তা যেন আমরা ভুলে না যাই।


মন্তব্য

রিয়াজ এর ছবি

অ্যমনেস্টি থেকে যে আইরিন খান ৫ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন,এই খবরের লিংকটা পেলে ভালো হয়।

রাব্বানী এর ছবি

আইরিন খান এর উইকি পেজ এ দেখতে পারেন (লিন্ক যোগ করতে পারছি না - এরর দেখায়)

Emran  এর ছবি

মুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত নাশকতা এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব লঘুকরনের (minimization) ব্যাপারে আইরিন খানের বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগী অনেকেই আছেন (উদাহরনঃ কারেন আর্মস্ট্রং, তারিক আলী, অরুন্ধতি রায়, ফরহাদ মগবাজার, প্রমুখ)। ওসামা বিন লাদেন-কে যখন হত্যা করা হল, তখন তারা আইনের শাসন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু আত্মঘাতী সন্ত্রাসীরা যখন হাটে, বাজারে, মসজিদে, মাজারে, মেলায় বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, তখন এদের জোরগলা শোনা যায় না। তখন মিনমিন করে এরা যুক্তি দেন যে drone হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এসব আত্মঘাতী বোমা হামলা করা হচ্ছে।

একটা লিঙ্ক দিলাম। এই নিবন্ধের লেখক একজন পাকিস্তানি কলামিস্ট। তার অনেক যুক্তির সঙ্গেই আমি একমত নই; বিশেষতঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার অজ্ঞানতা হাস্যকর। কিন্তু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ এবং এর apologist-দের নিয়ে লেখা এই নিবন্ধটি আমার কাছে বেশ যুক্তিপূর্ণ মনে হয়েছে।
http://x.dawn.com/2013/02/24/smokers-corner-petro-games/

হিমু এর ছবি

এমরান, আপনি সচলায়তনে নিবন্ধন করে ফেলুন। আপনাকে একজন নিয়মিত লেখক হিসেবে দেখার আগ্রহ জানিয়ে গেলাম।

Emran এর ছবি

হিমু ভাই, আমি নিজেকে সব সময়েই মনে করে এসেছি একজন reactive conversationalist হিসেবে। সচলায়তনে নিবন্ধন করে যে কি লিখব, সেটাই মাথায় আসে না। আর নিয়মিত লেখকদের লেখার পাশাপাশি নিজেকে দাঁড় করালে নিজেই লজ্জা পাই। হাসি তবে আমার মন্তব্যগুলি যে আপনার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে, সেটা জানতে পেরে ভাল লাগছে।

Fallen Leaf এর ছবি

সহমত ।

রণদীপম বসু এর ছবি

আমিও সহমত জানালাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রণদীপম বসু এর ছবি

বিষয়টা নিয়ে আরেকটু বেশি করে জানতে ইচ্ছে করছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

Fallen Leaf এর ছবি

গুরু গুরু

আসলেই এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আরও লেখা দরকার। ধন্যবাদ আপনাকে |

ফাহিম হাসান এর ছবি

@Emran: অরুন্ধতি রায় কিভাবে আইরিন খানের সহযোগী হলেন এ ব্যাপারটা নিয়ে জানতে আগ্রহী। রেফারেন্স দিলে ভালো হয়। আপনি কি মুম্বাই হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ওনার বক্তব্য নিয়ে বলছেন?

Emran  এর ছবি

ফাহিম, আমি বলেছিলাম বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগী। আর আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি মুম্বাই হামলার প্রেক্ষিতে The Guardian-এ প্রকাশিত অরুন্ধতি রায়ের আর্টিকেলের কথা বলেছিলাম, যেখানে তিনি কনটেক্সট দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে বিচার করার কথা বলেছেন। কনটেক্সট দিয়ে প্রায় সবকিছুরই জাসটিফিকেসন করা সম্ভব। আর আমার মন্তব্যের মূলে ছিল মানবাধিকার নিয়ে কিছু বুদ্ধিজীবীর সিলেক্টিভ মাথাব্যথা। এটাকে আমার কাছে কপটতা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।

পুনশ্চঃ অরুন্ধতি রায়ের The Guardian আর্টিকেল এবং তারিক আলির একটি বক্তৃতার লিঙ্ক দিতে চেয়েছিলাম। "সংরক্ষণ"-এ ক্লিক করলে একটা ক্যাপচা ফিলাপ করার কথা বলছে, কিন্তু ক্যাপচাটা কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। এ কারণে লিঙ্ক ছাড়াই মন্তব্য করলাম।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার লেখার সাথে উইকিপিডিয়ার আইরিন খান এন্ট্রির Controversy অংশের বেশ মিল খুঁজে পেলাম। এছাড়া তেমন কোন রেফারেন্স পাই নাই। উইকির রেফারেন্স সেকশানে গিয়ে দেখি The Sunday Times, Daily Express, mail online এর সূত্র দেওয়া। এই ট্যাবলয়েডগুলো তেমন একটা নির্ভরযোগ্য না। ব্রিটিশ রাজপরিবারের কেচ্ছা, গোয়েন্দাগিরি আর উদ্ভট কন্সপিরেসি থিওরিসহ নানা চানাচুর মার্কা খবর ছাপার জন্য এগুলো কুখ্যাত। (সূত্র: , , )

অ্যামনেস্টির/আইরিন খানের বিরুদ্ধে বক্তব্য আসলে সেগুলোর একটা যৌক্তিক বিন্যাস থাকা উচিত। আপনার যুক্তির টোনটা হল-

আইরিন খান তো অমুক বিষয়ে বহুৎ কিছু বলে, কই তমুক বিষয়ে তো কিছু বলেন নাই।

ওই ঘটনায় সে চুপ ছিল কেন? এই নির্বিকার থাকার পিছনে কারণ কী? নিশ্চয়ই একটা ব্যাপার আছে। দুইয়ে দুইয়ে মিলিয়ে দেখলাম

আইরিন খান, অ্যামনেস্টিরে ধরতে চান ভালো কথা, হাতে একটু ছাই মেখে নিলে ভালো হয়। উদাহরণ: সচলে শর্মিলা বসুকে তুলাধুনা করে শুভাশীষ দাশের লেখা আছে - পর্যাপ্ত রেফারেন্স নিয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট রিবাটল করা।

Fallen Leaf এর ছবি

হাতে ছাই আমার ঘষার কি দরকার? এ্যমনেস্টি তো নিজের ওয়েব সাইটেই বলছে যে আইরিন খান নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন...এত বেশী টাকা দেয়ার কোনই যুক্তি ছিল না। অন্যদিকে এ্যমনেস্টির ম্যানেজমেন্ট আর গভরন্যান্স কেও ঢেলে সাজাতে বলা হয়েছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশান রিপোর্টে। তার মানে গণ্ডগোল তো কিছু ছিলই।

(http://www.amnesty.org/en/library/asset/ORG10/029/2011/en/575ae29a-5f50-4531-abae-fa06d18d61d7/org100292011en.html)

এক পেশে কাজের কারণেই মানুষ কে নিয়ে প্রশ্ন উঠে। একদিকে মানবতার কথা বলে কোটি কোটি টাকা বেতন নিব আর নিজের বাসায় কাজ করে যে মেয়েটি তার উপর বাসার অন্য কেউ নির্যাতন করলে তার প্রতিকারে শক্ত হব না...এটা কি গ্রহন যোগ্য? তাহলে তো কথা উঠবেই যে হয়ত আমারও ওই নির্যাতনে পরোক্ষ সায় আছে কিম্বা অন্য কোন স্বার্থ আছে।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার কিছু বক্তব্যের সাথে সহমত নই। অ্যামনেস্টির কাজই হল সরকারের ও রাষ্ট্রপক্ষের সমালোচনা। ধরা যাক আপনার পাড়ায় ডাকাতি হচ্ছে, পুলিশ এসে ক্রসফায়ারে ডাকাতদের মেরে ফেলল। আপনি বাসিন্দা হিসাবে খুশী কিন্তু অ্যামনেস্টির বক্তব্য হবে পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ডাকাতদের কেন ক্রস-ফায়ারে ফেলা হল বা এর ফলে কি কি দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা হতে পারে তা তুলে ধরা। আপনার চোখে সেই সমস্যাগুলো তুচ্ছ হতে পারে কিন্তু সামগ্রিক-ভাবে তার গুরুত্ব অন্যরকম হতেই পারে। এই খানে আরেকটা ব্যাপার ভেবে দেখুন, আমরা যে দুনিয়াতে বাস করি তাতে রাষ্ট্রপক্ষের ক্ষমতা অসীমের কাছাকাছি, শক্তিধর রাষ্ট্র হলে তো কথাই নেই। তাই রাষ্ট্রপক্ষের সমালোচনা করাটা বেশী প্রয়োজনীয়, কিছু বিচ্ছিন্ন জঙ্গীর তুলনায়। অ্যামনেস্টি সেই কাজই করে থাকে।

বাংলাদেশে বি-এন-পি-আওয়ামী লিগের ক্ষেত্রে তারা কি এক-চোখা নীতি নিয়েছে না সামগ্রিক-ভাবেই বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়েই তারা এরকম করে যাচ্ছে সেটাও দেখা দরকার।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

Fallen Leaf এর ছবি

আমি তো সেই কথাই বলেছি আমার লেখাতে। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির আমলে এত হাজার হাজার হত্যা গুম খুন হল আর সেই সময় কয়েকবার আইরিন খান বাংলাদেশ "পারিবারিক" সফরে আস্তে পারলেন অথচ তারই আপন চাচাত বোনের শাশুড়ির খালেদা জিয়ার সাথে "অফিসিয়াল" মিটিং করে এ নিয়ে শক্ত কিছু বলতে পারলেন না বিমল কান্তি শীল ও অন্যান্য সঙ্খ্যালঘুদের উপর নির্যাতন আর বিচার বহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে...এটা কি খটকা লাগার মত না? আইরিন খান তখন মিটিং করলেন না খালেদা জিয়ার সাথে আর তারেক-যুবায়দা রহমান দেশ ছাড়ার পর পরই অফিসিয়াল সফরে এসে ২০০১-২০০৬ ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে চাপ দেয়াকে কি বলবেন আপনি?

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন যেন কেমন যেন লাগল! টাইটেলের মানুষের সাথে জঙ্গিবাদের কি সম্পর্ক তা তেমন বোঝা গেল না। কি জানি বাপু।

ডিম পোচ

Fallen Leaf এর ছবি

আমার ও কেমন যেন কেমন যেনই লেগেছিল তাই লেখাটা লিখলাম। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির আমলে এত হাজার হাজার হত্যা গুম খুন হল আর সেই সময় কয়েকবার আইরিন খান বাংলাদেশ "পারিবারিক" সফরে আসতে পারলেন অথচ তারই আপন চাচাত বোনের শাশুড়ির খালেদা জিয়ার সাথে "অফিসিয়াল" মিটিং করে এ নিয়ে শক্ত কিছু বলতে পারলেন না বিমল কান্তি শীল ও অন্যান্য সঙ্খ্যালঘুদের উপর নির্যাতন আর বিচার বহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে...এটা কি খটকা লাগার মত না?
আরও আছে...আইরিন খানের পুরো পরিবার জিয়ার রাজনীতি দ্বারা সুবিধা লাভকারী। যুবায়দার বাবা মানে আইরিন খানের চাচা মাহবুব আলি খান ছিলেন জিয়ার উপদেষ্টা ও পরবর্তীতে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী। জিয়া যে জামাতকে পুনর্বাসন করে গেছেন তাতে মাহবুব আলী খানের যে সায় ছিল এটা তো বলাই বাহুল্য। এবং পারিবারিক ভাবে পুরো খান পরিবার খুব ই ঘনিষ্ঠ ছিলেন একে অপরের। সুতরাং যুবায়দার সাথে তারেকের বিয়ের অনেক আগে থেকেই চাচার সুত্রে জিয়া পরিবারের সাথে আইরিনের সম্পর্ক। তারেক জিয়ার সাথে জামাত লিঙ্ক, দাউদ ইব্রাহিমের যোগাযোগ, বাংলাদেশে বাংলা ভাই সহ জঙ্গীবাদের উত্থানের ব্যাপারে তাই আইরিন খানের না জানার কোন কারন ই নাই। তার পরও চুপ থাকা কি উদ্দেশ্য প্রনদিত মনে হয় না?
যেনতেন কোন সংস্থা তো নয় রে ভাই, এ্যনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলে কথা যারা বেতন ই গোনেন জঙ্গীবাদ রোধ আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে whistle blow করার জন্যে। সেটাই যদি তাঁরা ঠিক মত না করেন তাহলে আমাদের কি প্রশ্ন আসবে না?

rubaiat এর ছবি

সহমত @ দিগন্ত ।

Onamika এর ছবি

মূল বক্তবে্র সাথে একমত/
The facts are simple and raises some simple questions:

Fact 1: There was a large number of gross human rights violation in Bangladesh between 2001 and 2006. There was also an alarming rise of militancy in the country in the shape of Bangla bhai, HUJI, grenade attacks, nationwide blasts etc.

Fact 2: Amnesty International was conspicuously silent throughout this period.

Fact 3: The head of Amnesty International during this time was a Bangladeshi Individual, Irene Khan, who has close connections with the family in power at that time.

Fact 4: Irene khan has visited Bangladesh a number of times during that period meeting the powerful people in the top of the government through her family connections. None of the visits was official. Amnesty International remained silent about the human rights situation in Bangladesh.

Fact 5: After the Fall of the BNP government and during the Caretaker government of Fakhruddin, Irene Khan finally makes an official visit to Bangladesh and sternly criticizes the government for failing to uphold human rights in the country.

Fact 6: Due to different factors, Irene Khan was forced to resign as the head of Amnesty International. However, as her term had not finished, she took a huge amount of money as part of that resignation compromise.

Fact 7: Amnesty International is broadly seen as doing its job properly again at least as far as watching the human rights violation in Bangladesh is concerned.

Now I think the readers can conclude on their own about the role of Amnesty International during the 2001 - 2006 period in Bangladesh and the potential reason behind that role.

রানা মেহের এর ছবি

আপনার লেখাটা কাজের কিন্তু এভিডেন্সিয়াল নয়।
বাংলাদেশ নিয়ে আইরিন খানের কাজকর্ম খুবই সন্দেহজনক। কিন্তু তিনি এরকম বৈপরিত্য আর কোথাও দেখিয়েছেন কি না সেটা লেখায় আনলে ভাল হত। আব্বাস ফৈয়াজ সাহেবকে নিয়েও একটু জানতে চাই

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আইরিন খানের কর্মকান্ড এবং ২০০১-২০০৬ পরবর্তী তার এক কথায় নিশ্চুপ থাকা সবসময়ই সন্দেহের ব্যাপার ছিল! আর তার পারিবারিক পরিচয়টা ভুলে গেলেও কিন্তু চলছে না!

বটতলার উকিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

২০০১-২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবধিকার লঙ্গনের অন্যতম শাসন আমল।বিশেষ করে হিন্দুদের উপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিলো তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না হয়তো কারো।আমি দেখেছি,আমার মফস্বলের শহরে হাজার হাজার মানুষ হঠাৎ করে বেড়ে গেল।যাকেই জিজ্ঞেস করি সেই বলে এসেছে গ্রাম থেকে ভয়ে,যার বেশি ভাগি ছিলো হিন্দু।মানবতার এমন বিপর্যয় আমি আর দেখিনি।অথচ সেই সব নিয়ে মানবতাবাদীদের কোন উচ্চবাচ্চ ছিলোনা।বিশেষ করে এ্যনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মুখে তালা দিয়ে ছিলো,তারও পরে যখন সারা দেশে জঙ্গিদের উথ্থান হলো,বাংলা ভাইয়ের গাছে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের নিত্য নতুন কাহিনী রচিত হতে থাকলে পত্রিকার পাতাগুলোতে তখনও চুপ ছিলো এ্যনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আর তার প্রধাণ আইরিন খান।আপনার লেখায় পড়ে সেটাকে আবারো অনুধাবন করলাম,আর আরো একবার জেনে নিলাম যতই পুথিগত শিক্ষিত হোক বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই ”মানুষ তার শিকড়ের মতো বৈশিষ্ট্য ধারন করে,যতই যত্ন করা হোক জাম গাছ থেকে কখনো আম পাওয়া যাবে না।

মাসুদ সজীভ

Fallen Leaf এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাঝে মাঝে কষ্ট হয় এই ভেবে যে বাংলাদেশ টা কিভাবে যেন এই লম্পট গোষ্ঠীর আয়ত্তে চলে গেছে। মুক্তির পথ খুঁজি। জানি না সামনে কি আছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।