মেরি ক্রিসমাসঃ ছোট ছোট মানুষদের বড়দিন

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১২/২০০৭ - ১:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ওয়ারল্যাস - না কোন টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের নাম নয়, ওয়ারল্যাস আমার প্রাত্যহিক কর্মের সহকারী । গারো সম্প্রদায়ের, বাবার ওয়ারল্যাস নিয়ে আগ্রহ আর পচ্ছন্দের কারণেই হয়তো তার নাম রেখেছে বাবা ওয়ারল্যাস । খ্রিষ্টান মিশনারী স্কুলে যাতায়াত ছিল কিছূদিন, কোনভাবেই সেদিকে মন বসাতে পারেনি এই গারো ছেলেটি । গারো সম্প্রদায়ের হবার কারণে ভবিষ্যত নিয়েও সে খুব একটা চিন্তিত নয়, মাতৃপ্রধান সম্প্রদায় গারোরা । বিয়েল পর ওয়ারল্যাস তাই চলে যাবে স্ত্রী-র ঘরে, স্ত্রীই হবে তার অভিভাবক । এখনও সে রেওয়াজই চলছে এই গারোরা । তাই ওয়ারল্যাস এর পড়ালেখার চেয়ে মনোযোগী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিপাটি হয়ে থাকা আর এধার কা মাল ওধার, মানে চোরচালান । ওয়ারলেস থাকে হালুয়াঘাটের ও ভিতরের গ্রামে বর্ডারের পাশে । ভারতীয় মাল কিনে বাংলাদেশে এনে বেশী দামে বিক্রি করা কিংবা বাংলাদেশী মাল ভারতে নিয়ে বিক্রি করাকে কোনভাবেই চোরচালানী কিংবা অবৈধ মনে করেনা সে । এর মাঝে কোন অন্যায় কিংবা খারাপ সে লক্ষ্য করেনা । তাকে বুঝালাম, কেন এটা অবৈধ্য কিংবা চোরচালানী, তার সহজ উত্তর এই কয়েকটা জিনিস নিয়ে গেলে কিংবা আনলে দেশের কোন ক্ষতি হয়না , কেননা দেশতো অনেক বড়। সেটাও বুঝালাম, কি করে একজন থেকে একলক্ষ কিংবা পাচ লক্ষ হয় । তখন নিশ্চুপ হয়ে যায় । মৃদু ভাবে বলে আমরা সবাই তো এটা করি, বর্ডারের মানুষের আয়ের পথ তো এটাই নইলে তারা কি করে খাবে? ? তার উত্তর আমার জানা নাই, তাই আমিও নিশ্চুপ হয়ে যাই ।
ধর্মে ওয়ারল্যাসরা গারোখ্রিষ্টান যদিও ওয়ারল্যাসদের নিজস্ব ধর্ম ছিল কিন্তু তা আজ বিলুপ্ত প্রায় । দারিদ্রের কষাঘাতে তারা সবাই ধর্মান্তরিত, সবাই খ্রিষ্টান হয়ে গেছে হয়তো সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে । মিশনারীরা এভাবেই এই সকল দরিদ্র মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে তাদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে, তাই ধর্মে সে খ্রিষ্টান, তার নাম রাখা হয়েছে খ্রিষ্টানদের নামেই । পুরো নাম জন ওয়ারল্যাস সাংমা বা ডিব্রা । সাংমা ক্ষুদ্রার্থে অর্থাৎ সমাজের নাম । আর ডিব্রা বলতে তাদের সম্প্রদায়কে বুঝায় । বিষয়টা এররকমই বা এরচেয়েও জটিল । আমি এতোটুকুই বুঝেছি ।

গত বছর থেকে ওয়ারল্যাস আমার সাথে , এরমাঝে দুটি বড়দিন এলা । আজ আর গত বছর । বড়দিন এইসব ধর্মান্তরিত গারোদের কাছেও তাৎপর্যপূর্ণ । ধর্মের দিক থেকে হয়তো ততোটা নয় যার থেকেও বেশী সামাজিক কারণ । এই বড়দিনকে ঘিরেই তাদের মেলা, পুর্ণমিলনী অর্থাৎ উৎসব জমে ওঠে । প্রায় একমাস আগে ওয়ারল্যাস একটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছে । গ্রামে দশ টাকা করে বিক্রি হবে । তাদের ক্লবের নামে । ১ম পুরস্কার সম্ভবত একটি ছোট সাদাকলো টিভি । এবং এমন নানারকম পুরস্কার । সহজ করে রাফল ড্র টাইপের । আর আছে নানরকম উৎসব । গ্রামের সবাই মিলে ভোজ, একটু পানীয় নিজেদের তৈরী আর নাচ-গান । সারা বছর ধরে এইসকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনও বড়দিনের প্রতীক্ষায় থাকে । ধর্মান্তরিত এই মানুষ গুলোর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব রীতিনীতি আর সংস্কৃতি । ধীরে ধীরে সময়ের প্রবাহে তারা তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে, যেভাবে একসময় হারিয়ে ফেলেছে নিজেদের ধর্ম । আজ এই ছোট ছোট মানুষ গুলো খোজে বড়দিনের বড় কোনো আর্শীবাদ, যদি ঈশ্বরের একটু কৃপা হয় !

আমরা চাই সবাই তার নিজস্বতা-স্বকীয়তা নিয়ে অটুট থাকুক ।
সবাইকে বড় দিনের এক ফালি ছোট শুভেচ্ছা (সবাইরে দিতে গিয়ে একটু ছোট হয়ে গেল, কি আর করা!!!)


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

না রে ভাই এসব জিনিস সবাইকে দিলেও ছোট হয়না। সবাইকে আমার তরফ থেকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। আর আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

Happy Christmas
আজ খুশির দিনে আর ধর্মের অরিজিন খুজে কি হবে?......এখন যাষ্ট ফেস্টিভ্যালটা বেছেঁ আছে (এটাই বেছেঁ থাকুক চিরকাল)! আশা করি এই উতসবই আমাদের মাঝে আনবে সৌহার্দ আর সম্প্রিতি। সবাইকে Happy Christmas......have fun, Cheers everyone!

কনফুসিয়াস এর ছবি

সুন্দর লাগলো পড়ে। আপনারেও বড়দিনের শুভেচ্ছা। সাথে ওয়্যারলেসকেও।
আপনার আরেক সহকর্মীর খবর কি? আপনার কর্মস্থলের কথা অনেক শুনেছি, দেশে থাকলে নির্ঘাৎ ঐখানে গিয়ে আপনাদের দুইটারে ভালই জ্বালানো হইত।
বেঁচে গেলেন। হাসি
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

রাহা এর ছবি

আমি তো কর্মহীন, আমার আবার কর্মস্থল!! এলিফ্যান্ট রোডে আর নেই , এখন বিগবাইটের উপরে..... দেশে আসলে দেখা করিস ।
আরেকটা ঘটনা শীঘ্রই ঘটতে যাচ্ছে..... শেষ রক্ষা পাওয়া গেল না, গলায় ফাস দিতে হচ্ছে !!

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

সৌরভ এর ছবি

ধর্ম জিনিষটা নিয়া আমার ধারণা - একটা ধর্ম থাকলেই হয়।
যেটা আপনারে একটু বাইন্ধা রাখবে, অনেকটা গৃহপালিত পশু যাতে বেশিদূর যাইতে না পারে, সেইজন্যে একটা রেস্ট্রিকশনের ব্যবস্থা করা, সেইরকম।

তবে, সংস্কৃতি জিনিষটা হারায় গেলে আর ফিরায় আনা যায় না। সেইটা দুঃখজনক।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুভকামনা

অনিন্দ্য এর ছবি

ভালো লাগল....

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।